‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ সুন্নাহ অনুসরণে ইমাম মালিক (রাহি.) এর অবস্থান

ইমামু দারিল হিজরাহ- মদীনার ইমাম মালিক বিন আনাস (৯৩-১৮৭ হিঃ) (রহ.)। হাদীসের জগতে প্রথমের দিকে উল্লেখযোগ্য সংকলণ "মুয়াত্তা" গ্রন্থের সংকলক ইমাম মালিক (রহ.)। সুন্নাহ অনুসরণে ইমাম মালিক (রহ.) এর অবস্থান এত দৃঢ় যে তিনি সুন্নাহর সংকলক, শিক্ষক এবং সুন্নাহর আহবায়ক। তিনিও অন্ধ অনুসরণের কোঠর প্রতিবাদ করেছেন এবং কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুসরণ অপরিহার্য করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ইমামের কিছু মূল্যবান বক্তব্য নিন্মে প্রদত্ত হল।

১। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন :
"إنما أنا بشر أخطئ وأصيب، فانظروا في رأيي، فكـل مـا وافـق الكتاب والسنة فخذوه، وكل ما لم يوافق الكتاب والسنة فائر كوه"​

“আমি একজন মানুষ মাত্র। চিন্তা গবেষণায় ভুলও হয় আবার সঠিকও হয়। সুতরাং তোমরা আমার অভিমত পরীক্ষা করে দেখ, আমার যে অভিমত কুরআন ও সুন্নাহর অনুকূলে পাও তা গ্রহণ কর। আর যে অভিমত কুরআন ও সুন্নাহর অনুকূলে নেই তা প্রত্যাখ্যান কর।"

ইমাম সাহেবের এ বক্তব্যে প্রমাণিত হয় যে, পালনীয় বিষয় হলো একমাত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস, কোন ব্যক্তির মত, পথ, মাযহাব ও তরীকাহ নয়। কারো ফাওয়া যদি কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী হয় তাহলে গ্রহণ যোগ্য হবে, তিনি যেই হন এবং যে মাযহাবেরই হন না কেন। আর যদি কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী না হয় তাহলে তিনি যত বড়ই ইমাম ও মুজতাহিদ হন না কেন তার ফাওয়া প্রত্যাখ্যান যোগ্য। ইহা শুধু ইমাম মালিক (রহ.) এর কথা নয় বরং ইমামে আযম, সাইয়্যেদুল মুরসালীন রাসূল মুহাম্মাদ এর অমীয় বাণী, তিনি বলেন :
من أحدث في أمرنا هذا ما ليس فيه فهو رد​

“যে ব্যক্তি ইসলামে এমন নতুন কিছুর আগমণ ঘাটাবে যা ইসলামে (কুরআন ও সহীহ হাদীসে) ছিল না তা প্রত্যাখ্যান যোগ্য।"

২। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন :
ليس أحد بعد النبي ﷺ إلا ويؤخذ من قول ويترك إلا النبي ﷺ​

“সকল ব্যক্তির কথা হয় গ্রহণীয় অথবা বর্জনীয়, শুধু নাবী (সঃ)এর সকল কথাই গ্রহনীয়, কোন বর্জনীয় নয়।' এর অর্থাৎ শুধুমাত্র নাবী এর সকল দীনী কথা ওয়াহী ভিত্তিক হওয়ায় গ্রহণযোগ্য, আর সাহাবী, তাবেঈ, ও কোন ইমাম বা আলিম সমাজের কথা যদি কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী হয় তাহলে গ্রহণযোগ্য, আর যদি কুরআন ও সহীহ হাদীস বিরোধী হয় তাহলে অবশ্যই বর্জনীয়। সুতরাং কোন ইমাম বা আলিমের কথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে যাচাই ছাড়াই অন্ধ অনুকরণ করা সংগত কাজ নয়।

৩। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন :
قال ابن وهب : سمعت مالكا سئل عن تخليل أصابع السرجلين في حف النـاس الوضوء؟ فقال : ليس ذلك على الناس. قال : فتركته حتى - فقلت له : عندنا في ذلك سنة، فقال : وما هي؟ قلت: حدثنا الليث بن سعد وابن لهيعة وعمرو بن الحارث عن يزيد بن عمرو المعافري عـن أبي عبد الرحمن الحبلي عن المستورد بن شداد القرشي قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يدلك يختصره ما بين أصابع رجليه، فقال : إن هـذا الحديث حسن، وما سمعته قط إلا الساعة ثم سمعته بعد ذلك يسأل، فيأمر يتخليل الأصابع.​

“ইবনু ওয়াহাব হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি শুনেছি ইমাম মালিক (রহ.) কে জিজ্ঞাসা করা হল ওযুর সময় পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা সম্পর্কে? তিনি উত্তরে বললেন: ওযূর মধ্যে এমন কোন নিয়ম নেই। ইবনু ওয়াহাব বলেন: আমি একটু অপেক্ষা করলাম মানুষ চলেগেলে ইমাম সাহেবকে বললাম পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার ব্যাপারে আমাদের কাছে হাদীস রয়েছে।

ইমাম বললেন: তা কি? আমি বললাম: লাইছ বিন সা'দ মুসতাওরিদ বিন শাদ্দাদ আল কুরাশী বলেন: “আমি রাসূল কে হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলের মাঝে খেলাল করতে বা ভাল ভাবে ডলতে দেখেছি।” ইমাম (রহ.) বলেন : এ হাদীসটি হাসান, তবে আমি এখন ছাড়া এর পূর্বে কখনও এ হাদীস শুনিনি। ইবনু ওয়াহাব বলেন: এর পরবর্তীকালে ইমাম সাহেবকে ঐপ্রশ্ন করা হলে তিনি উক্ত হাদীসের আলোকে আঙ্গুল খেলাল করার নির্দেশ দিতেন।

উল্লেখ্য যে, ইমাম মালিক (রহ.) এর ফাওয়া হাদীস বিরোধী ছিল, কিন্তু তখন তিনি ঐ হাদীসটি জানতেন না। যখনই হাদীস জানলেন এবং তা হাসান বা সহীহ নিশ্চিত হলেন সাথে সাথে নিজের পূর্ব অভিমত বৰ্জন করে হাদীস অনুযায়ী ফাওয়া প্রদান শুরু করলেন। সহীহ হাদীস পাওয়ার পর নিজের মতের উপর কোন গোঁড়ামি প্রকাশ করলেন না। এরূপই হবে আল্লাহভীরু ও তাঁর রাসূলের অনুসারীর অবস্থান, তারা কখনও আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মতের উপর কোন ব্যক্তি এমনকি নিজের মতকেও প্রাধন্য দিতে পারে না।

পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মতের উপর নিজের বা কোন ব্যাক্তি ও দলের মতকে প্রধান্য দিবে তারা আসলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি পূর্ণ ঈমানদার ও আনুগত্যশীল হতে পারে না।

৪। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন :
من ابتدع بدعة يراها حسنة، فقد زعم أن محمدا ﷺ خان الرسالة، واليوم أكملت لكم دينكم وأتممت عليكم نعمتي ورضــت لكم الاسلام ديناً ..​

“যে ব্যক্তি কোন বিদআত চালু করে এবং মনে করে ইহা ভাল কাজ, সে যেন দাবী করে যে, মুহাম্মাদ রিসালাতের খিয়ানাত করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। কেননা আল্লাহ তা'আলা রাসূলের জীবদ্দশায় বলেন : “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ন করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করে নিলাম।" [মায়িদা-৩]

রাসূলের জীবদ্দশায় যা দ্বীন বলে গন্য হয়নি আজও তা দ্বীন বলে গণ্য হবে না।”

অর্থাৎ রাসূল এর জীবদ্দশায় আল্লাহ তা'আলা ইসলামকে পূর্ণতা রূপদান করেছেন এবং তিনি তাঁর পূর্ণ ইসলামের রিসালাত সঠিক ভাবে প্রচার করেছেন এর পরও যদি কেউ নতুন ইবাদাত আবিস্কার করে যা রাসূল এর যুগে ছিলনা এতে প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের এ ইবাদাত রাসূল এ প্রচার করেন নি। তাই তিনি রিসালাতের খিয়ানত করেছেন, (নাউযুবিল্লাহ)। ইমাম সাহেব এ বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চান যে, ইসলামের সব কিছু রাসূল ৯ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অতএব একমাত্র তাঁর অনুসরণ করেই ইসলাম পালন করতে হবে। অন্য কোন ইমাম, দরবেশ, পীর বা মাযহাব ও তরীকা নয়। আল্লাহ আমাদের এ তাওফীক দান করুন, আমীন!

কিতাব: সুন্নাতে রাসূল ও চার ইমামের অবস্থান
আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী​
 

Share this page