- Views: 311
- Replies: 1
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্যতম ইমাম, সর্ববৃহত ও উল্লেখ যোগ্য হাদীসের গ্রন্থ "মুসনাদ ইমাম আহমাদ” এর সংকলক ইমাম আহমাদ বিন মুহাম্মদ বিন হাম্বাল (১৬৪-২৪১ হিঃ) রহঃ। তিনি চার ইমামের মধ্যে হাদীস শাস্ত্রে সবচেয়ে বেশী অবদান রেখেছেন। আব্বাসীয় যুগে মুতাযিলাদের খালকে কুরআন ফিতনার সম্মুখীন হয়ে সর্বশেষে তিনি একায় জেল-যুলুম সহ্য করে হকের উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সুন্নাহ অনুসরণে ইমাম সাহেবের কিছু মূল্যবান বক্তব্য উপস্থাপন করা হল ।
“আমি আশ্চর্য হই তাদের আচরণে যারা সহীহ হাদীস জানা সত্ত্বেও ইমাম সুফইয়ানের অভিমত গ্রহণ করতে চায়, অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেন:
“তুমি তোমার দ্বীনের বিষয়ে (নাবী-রাসূল ছাড়া) কোন ব্যক্তির অন্ধ অনুসরণ কর না, কারণ তারা কক্ষণও ত্রুটি মুক্ত নয়।
মানুষের মাঝে ত্রুটি মুক্ত শুধু নাবী-রাসূলগণ, তাই তাঁদের ওয়াহী ভিত্তিক সকল দীনি বিষয় অনুসরণ করা উম্মাতের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। কিন্তু নাবী-রাসূল ছাড়া অন্যরা এমন কি সাহাবারাও মাসূম বা ত্রুটি মুক্ত নয় তাই তাদের তাকলীদ বা অন্ধানুসরণ বৈধ নয়, বরং তাঁদের কথা যদি সহীহ হাদীসের সাথে মিলে যায় তাহলে অনুসরণে কোন বাঁধা নেই । আর হাদীসের সাথে বিরোধ পূর্ণ হলে অবশ্যই বর্জনীয়।
সুন্নাহ অনুসরণে চার ইমামের অবস্থান সম্পর্কে আমরা মহামতি ইমামদের বক্তব্য হতে সরাসরি অবগত হতে পারলাম যে, তাঁরা সুন্নাহর একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। সেচ্ছায় ও জেনে শুনে কখনও সুন্নাহ পরিপন্থী কোন কথা ও কাজ প্রকাশ করেননি। এমনকি অজ্ঞতাবসত কিছু প্রকাশ পেয়ে থাকলে সে জন্য অগ্রীম সতর্ক করে দিয়েছেন, সহীহ হাদীস বর্জন করে তাদের ফাওয়া মানা হারাম করে দিয়েছেন এবং যে যুগে ও যে স্থানে সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে তা পালন করা অপরিহার্য করে দিয়েছেন আল্লাহ তা'আলা তাঁদের অবদানকে কবুল করে নিন এবং তাঁদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউসে সুউচ্চ আসন দান করুন। আমীন! আর মাযহাবী ও তরীকাপন্থী অন্ধদের সহীহ হাদীস দর্শনের ও পালনের তাওফিক দান করুন। আমীন!
১। ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন :
لا تُقَلدْنى وَلَا تُقلّدْ مَالِكًا وَلَا الشَّافِعِيُّ وَلَا الْأَوْزَاعِيُّ وَلَا السوري، وَحَدٌ مِنْ حَيْثُ أَحَدُوا
“তুমি আমার অন্ধ অনুসরণ কর না এবং ইমাম মালিক, শাফেয়ী, আওয়াঈ ও ছাওরী প্রমুখের অন্ধ অনুসরণ কর না, বরং তাঁরা যেখান হতে গ্রহণ করেছেন তুমিও সেখান হতে গ্রহণ কর।
মানুষ অনুসরণ করবে কুরআন এবং সুন্নাহর, কোন ব্যক্তির চিন্তা- চেতনা নয়। তিনি যতবড়ই বিদ্যান, দার্শনিক ও ইমাম হোন না কেন? এ বিষয়টিই তুলে ধরেছেন ইমাম আহমাদ (রহ.)। তিনি কোন পক্ষ পাতিত্বও করেননি বরং সর্বপ্রথম নিজেকে দিয়েই শুরু করেছেন। নিষেধ করলেন তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণের এবং নিদের্শ দিলেন কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণের। ইমামগণ যেখান হতে দ্বীন গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ কুরআন ও সহীহ হাদীস হতে তোমরাও সেই কুরআন ও সহীহ হাদীস হতে গ্রহণ কর কোন ইমামের চিন্তা প্রসুত ফাতওয়া হতে নয় ।
অন্য বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেন:মানুষ অনুসরণ করবে কুরআন এবং সুন্নাহর, কোন ব্যক্তির চিন্তা- চেতনা নয়। তিনি যতবড়ই বিদ্যান, দার্শনিক ও ইমাম হোন না কেন? এ বিষয়টিই তুলে ধরেছেন ইমাম আহমাদ (রহ.)। তিনি কোন পক্ষ পাতিত্বও করেননি বরং সর্বপ্রথম নিজেকে দিয়েই শুরু করেছেন। নিষেধ করলেন তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণের এবং নিদের্শ দিলেন কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণের। ইমামগণ যেখান হতে দ্বীন গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ কুরআন ও সহীহ হাদীস হতে তোমরাও সেই কুরআন ও সহীহ হাদীস হতে গ্রহণ কর কোন ইমামের চিন্তা প্রসুত ফাতওয়া হতে নয় ।
لا تقلدُ دِينَكَ أَحَدًا مِنْ هؤلاء، مَا جَاء عَنِ النَّبِي صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابِهِ فَخُذْ بِه، ثُمَّ التَّابِعِينَ بَعْدَ الرَّجُلُ فِيهِ مُخيَّرٌ، وَقَالَ مَرَّةً: الإِنْبَاعُ أَنْ يَتَّبِعَ الرَّجُلُ مَا جَاءَ عَنِ النَّبِيِّ وَعَنْ أَصْحَابهِ، ثُمَّ هُوَ مِنْ بَعْدِ التَّابِعِينَ مُخَيَّرُ
“তোমার দীনের ব্যাপারে ঐসব ইমামদের কাউকে অন্ধ অনুসরণ কর না, বরং রাসূল এবং তাঁর সাহাবীদের হতে যা এসেছে তা গ্রহণ কর। তাবেঈদের ক্ষেত্রে তুমি সাধীন। আবার কখনও বলেন : অনুসরণ শুধুমাত্র রাসূল এবং সাহাবীদের হতে যা প্রমাণিত হয়েছে তাহাই। এরপর তাবেঈদের ক্ষেত্রে তুমি সাধীন।” ১৭৪ অর্থাৎ তাদের কথা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হলে অনুসরণ করবে আর না হলে করবে না।
২। ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন :
২। ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন :
رَأَيُّ الْأَوْزَاعِي وَرَأَيُّ مَالِكِ، وَرَأَيُ أَبِي حَنِيْفَةَ كُلَّهُ رَأَيِّ، وَهُوَ عِنْدِي سَوَاءٌ، وَإِنَّمَا الْحُجَّةُ فِي الْآثَارِ
“ইমাম আওযাঈ এর অভিমত, ইমাম মালিক এর অভিমত এবং ইমাম আবূ হানীফা এর অভিমত সবই আমার কাছে অভিমত হিসাবে সমান অর্থাৎ একটাও শরীয়তের দলীল হতে পারে না। শরীয়তের দলীল শুধুমাত্র রাসূল এবং সাহাবীদের হাদীস থেকেই হবে।”১৭৫
৩। ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন :
৩। ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন :
عَجِبْتُ لِقَوْمٍ عَرَفُوا الْإِسْنَادِ وَصِحْنَهُ يَذْهَبُونَ إِلَى رَأي سُفْيَانَ، وَاللهُ يَقُولُ : فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“আমি আশ্চর্য হই তাদের আচরণে যারা সহীহ হাদীস জানা সত্ত্বেও ইমাম সুফইয়ানের অভিমত গ্রহণ করতে চায়, অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেন:
“অতএব যারা তাঁর আদেশের (রাসূলের হাদীসের) বিরুদ্ধাচারণ করে, তারা যেন সতর্ক হয় যে, তাদের কে ফিনা পেয়ে যাবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব তাদেরকে গ্রাস করবে। [সূরা নূর-৬৩]"
শুধু ইমাম সুফইয়ানের অনুসারীদের অবস্থা এরূপ নয়, বরং ইমাম আবূ হানীফা, মালিক, শাফিয়ী ও আহমাদ (রাহেমাহুমুল্লাহ) প্রভৃতি সকল ইমামের ও পীর-দরবেশের অনুসারীদের অবস্থা একই। সহীহ হাদীস জানা সত্ত্বেও তা বর্জন করে ইমামের মতামতের অন্ধ অনুসরণে অবশ্যই আয়াতে বর্ণিত শাস্তি প্রাপ্য হবে ।
৪। ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন :
শুধু ইমাম সুফইয়ানের অনুসারীদের অবস্থা এরূপ নয়, বরং ইমাম আবূ হানীফা, মালিক, শাফিয়ী ও আহমাদ (রাহেমাহুমুল্লাহ) প্রভৃতি সকল ইমামের ও পীর-দরবেশের অনুসারীদের অবস্থা একই। সহীহ হাদীস জানা সত্ত্বেও তা বর্জন করে ইমামের মতামতের অন্ধ অনুসরণে অবশ্যই আয়াতে বর্ণিত শাস্তি প্রাপ্য হবে ।
৪। ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন :
لا تقلد دِينَكَ الرِّجَالَ ، فَإِنَّهُمْ لَن يَسْلِمُوا مِنْ أَن يُعْلِطُوا
“তুমি তোমার দ্বীনের বিষয়ে (নাবী-রাসূল ছাড়া) কোন ব্যক্তির অন্ধ অনুসরণ কর না, কারণ তারা কক্ষণও ত্রুটি মুক্ত নয়।
মানুষের মাঝে ত্রুটি মুক্ত শুধু নাবী-রাসূলগণ, তাই তাঁদের ওয়াহী ভিত্তিক সকল দীনি বিষয় অনুসরণ করা উম্মাতের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। কিন্তু নাবী-রাসূল ছাড়া অন্যরা এমন কি সাহাবারাও মাসূম বা ত্রুটি মুক্ত নয় তাই তাদের তাকলীদ বা অন্ধানুসরণ বৈধ নয়, বরং তাঁদের কথা যদি সহীহ হাদীসের সাথে মিলে যায় তাহলে অনুসরণে কোন বাঁধা নেই । আর হাদীসের সাথে বিরোধ পূর্ণ হলে অবশ্যই বর্জনীয়।
সুন্নাহ অনুসরণে চার ইমামের অবস্থান সম্পর্কে আমরা মহামতি ইমামদের বক্তব্য হতে সরাসরি অবগত হতে পারলাম যে, তাঁরা সুন্নাহর একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। সেচ্ছায় ও জেনে শুনে কখনও সুন্নাহ পরিপন্থী কোন কথা ও কাজ প্রকাশ করেননি। এমনকি অজ্ঞতাবসত কিছু প্রকাশ পেয়ে থাকলে সে জন্য অগ্রীম সতর্ক করে দিয়েছেন, সহীহ হাদীস বর্জন করে তাদের ফাওয়া মানা হারাম করে দিয়েছেন এবং যে যুগে ও যে স্থানে সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে তা পালন করা অপরিহার্য করে দিয়েছেন আল্লাহ তা'আলা তাঁদের অবদানকে কবুল করে নিন এবং তাঁদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউসে সুউচ্চ আসন দান করুন। আমীন! আর মাযহাবী ও তরীকাপন্থী অন্ধদের সহীহ হাদীস দর্শনের ও পালনের তাওফিক দান করুন। আমীন!
কিতাব: সুন্নতে রাসুল ও চার ইমামের অবস্থান
আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী