আমরা হিজরী সাল অনুযায়ী বর্তমানে চতুর্দশ শতাব্দীতে অবস্থান করছি। সাহাবীগণের মাঝে এবং আমাদের মাঝে অনেকগুলি শতাব্দী গত হয়ে গেছে। নবী করীম (ﷺ)-এর নবুঅত প্রাপ্তির পর থেকেই তারা তাঁর সাথে ছিলেন। সর্বদা তারা তাঁকে সঙ্গ দিতেন এবং তাঁকে সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। সুতরাং মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে তাঁদের সাথে আমাদের কি কোন তুলনা চলে?
তাঁরা ঈমান আনয়ন, দ্বীনের সহযোগিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদেরকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছেন। প্রিয় নবী (ﷺ)-এর সাহচর্য লাভের সুযোগ দিয়ে আল্লাহ তাঁদেরকে যে সম্মানিত করেছেন, সেক্ষেত্রেও তাঁরা আমাদেরকে ছাড়িয়ে গেছেন।
অতএব আপনি তাঁদের জন্য দো‘আ করার সময় তাঁদের অগ্রবর্তিতার কথা স্মরণ করবেন। আয়াতে এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ ‘তারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে আমাদের অগ্রবর্তী ভ্রাতাগণকে ক্ষমা করুন’ (হাশর ১০)।
এই অগ্রবর্তিতার কারণে আপনার প্রতি তাঁদের অধিকার রয়েছে। তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা উপলব্ধির উদ্দেশ্যে আপনি তাঁদের অগ্রবর্তিতার কথা স্মরণ করুন। কারণ এই অগ্রবর্তিতার কারণে আল্লাহ তাঁদের প্রশংসা করেছেন।
যাহোক সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সম্পর্কে হৃদয়কে নিষ্কলুষ রাখার অপরিহার্যতা হ’ল প্রথম বিষয়। দ্বিতীয়তঃ তাঁদের ক্ষেত্রে জিহবাকে মুক্ত রাখতে হবে। গালি-গালাজ, অশ্লীল কথা-বার্তা, অভিশাপ, নিন্দা ইত্যাদি চিরতরে বন্ধ করতে হবে। পক্ষান্তরে তাঁদের জন্য শুধু প্রাণখোলা দো‘আ করতে হবে। যেমনটি সূরা হাশরের ১০ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। মুমিনগণ কি তাঁদেরকে গালি দিবে? তাঁদেরকে ভৎর্সনা করবে? তাঁরা কি তাঁদেরকে নিন্দা করবে? তাঁদের মান-সম্মানে আঘাত করবে? কখনই না, আদৌ এমনটি কোন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হ’তে পারে না। সেজন্য সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সম্পর্কে ঈমানদারগণের ভূমিকা আমরা আবারও পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই :
১. হৃদয়কে কলুষমুক্ত করতে হবে।
২. জিহবাকে গালি-গালাজ, নিন্দা ইত্যাদি থেকে মুক্ত করতে হবে। সত্যিই সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর ক্ষেত্রে প্রয়োজন পরিচ্ছন্ন হৃদয় এবং মার্জিত যবান।
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মর্যাদা এবং তাঁদেরকে গালি দেওয়ার নিষিদ্ধতা :
বুখারী ও মুসলিমের একটি হাদীছে রাসূল (ﷺ) সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে গালমন্দ করা থেকে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন এবং একই সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্যে সাহাবীগণের মর্যাদার কথা তুলে ধরেছেন। রাসূল (ﷺ) বলেন,لاَ تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيْفَهُ- ‘তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালি দিও না। যার হাতে আমার প্রাণ, সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, তোমাদের কেউ যদি ওহোদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তথাপিও সে তাঁদের কোন একজনের পূর্ণ এক মুদ্দ[1] বা অর্ধ মুদ্দ দান সমপরিমাণও পৌঁছতে পারবে না’।[2]
কোন একজন সাহাবী যদি একজন মিসকীনকে এক মুদ্দ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দান করে আর আপনি এক ওহোদ পরিমাণ স্বর্ণ দান করেন, তথাপিও আপনি ঐ সাহাবীর এক মুদ্দ পরিমাণ দানের ধারে কাছেও যেতে পারবেন না। যদিও এটি সম্ভব নয় যে, আমাদের কারো ওহোদ পরিমাণ স্বর্ণ হবে এবং সে তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে। এত বেশী পরিমাণ সম্পদ যদি কারো হয়ও, তবুও হয়তো এই সম্পদ তার জন্য ফেৎনার কারণ হবে এবং সে কৃপণ হয়ে যাবে। ধরা যাক, আমাদের কারো ওহোদ পরিমাণ স্বর্ণ হ’ল এবং সে তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করল, কিন্তু এতদসত্ত্বেও সে একজন সাহাবীর এক মুদ্দ খাদ্যদ্রব্য দানের নেকী পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। তাহ’লে আপনাকে বুঝতে হবে, সাহাবীগণের সম্মান ও মর্যাদা কত বেশী।
‘তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালি দিও না’- এ নির্দেশ স্বয়ং রাসূল (ﷺ)-এর। এটা সাধারণ কোন মানুষ বা আলেমের উক্তি নয়। এখানে তিনি তাঁর উম্মতকে নছীহত করেছেন এবং কোন সাহাবীর সামান্যতম মানহানিকর কোন কাজ থেকে তাদেরকে সতর্ক করেছেন। সাথে সাথে তাঁদের মর্যাদা সম্পর্কেও উম্মতকে সজাগ করেছেন।
রাসূল (ﷺ) থেকে এ বিষয়ে অসংখ্য হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যেগুলিতে তিনি তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর সম্মান ও মর্যাদা তুলে ধরেছেন। এমনকি কতিপয় আলেম সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মর্যাদা বিষয়ে পৃথক গ্রন্থ রচনা করেছেন; কিন্তু এককভাবে অথবা সমষ্টিগতভাবে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর প্রশংসা সম্বলিত হাদীছ অনেক বেশী হওয়ার কারণে এক খন্ডে তা সমাপ্ত করতে সক্ষম হননি। বরং কয়েক খন্ডে দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন পড়েছে।
লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ! কি মহান তাঁদের সম্মান! কি উঁচু তাঁদের মর্যাদা! তাঁদের প্রতি একজন মুসলিমের দায়িত্ব-কর্তব্যই না কত বড়!
মহান আল্লাহ ঈমানদারগণকে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর জন্য দো‘আ এবং ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ করেছেন এবং সত্যিকার মুমিনগণ তা বাস্তবায়নও করেছেন। কিন্তু কতিপয় লোক কুরআন ও হাদীছ নির্দেশিত এই পথ প্রত্যাখ্যান করে চরম ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছে। ক্ষমা প্রার্থনার পরিবর্তে তারা তাঁদেরকে দিয়েছে গালি এবং প্রশংসার পরিবর্তে করেছে নিন্দা। ছহীহ মুসলিমে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) উরওয়া বিন যুবায়ের (রাঃ)-কে বলেন,يَا ابْنَ أُخْتِيْ أُمِرُوْا أَنْ يَسْتَغْفِرُوْا لِأَصْحَابِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَسَبُّوْهُمْ- ‘হে ভাগ্নে! ওদেরকে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা দিয়েছে গালি’।[3]
তবে এর পেছনে আল্লাহর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ইবনুল আছীর (রহঃ) তাঁর প্রণীত ‘জামেউল উছূল’ (جامع الأصول) গ্রন্থে উল্লেখ করেন, জাবের বিন আব্দুল্লাহ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘কিছু মানুষ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ), এমনকি আবু বকর ও ওমর (রা)-এরও নিন্দা-সমালোচনা করে থাকে, (তাদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি)? তিনি বলেছিলেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের নেক আমল বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আল্লাহ চেয়েছেন, তাঁদের নেকীর পথ যেন বন্ধ না হয়ে যায়’।[4]
এটা কিভাবে সম্ভব? হাদীছ থেকে আমরা স্পষ্ট জানতে পারি, যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে কারো নিন্দা-সমালোচনা করবে, ক্বিয়ামত দিবসে ঐ নিন্দাকারীর নেকী বিনা অপরাধে নিন্দিত ব্যক্তিটিকে দেওয়া হবে। হাদীছে এসেছে, একদা রাসূল (ﷺ) সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে বললেন,
তাঁরা ঈমান আনয়ন, দ্বীনের সহযোগিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদেরকে বহুগুণে ছাড়িয়ে গেছেন। প্রিয় নবী (ﷺ)-এর সাহচর্য লাভের সুযোগ দিয়ে আল্লাহ তাঁদেরকে যে সম্মানিত করেছেন, সেক্ষেত্রেও তাঁরা আমাদেরকে ছাড়িয়ে গেছেন।
অতএব আপনি তাঁদের জন্য দো‘আ করার সময় তাঁদের অগ্রবর্তিতার কথা স্মরণ করবেন। আয়াতে এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ ‘তারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে আমাদের অগ্রবর্তী ভ্রাতাগণকে ক্ষমা করুন’ (হাশর ১০)।
এই অগ্রবর্তিতার কারণে আপনার প্রতি তাঁদের অধিকার রয়েছে। তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা উপলব্ধির উদ্দেশ্যে আপনি তাঁদের অগ্রবর্তিতার কথা স্মরণ করুন। কারণ এই অগ্রবর্তিতার কারণে আল্লাহ তাঁদের প্রশংসা করেছেন।
যাহোক সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সম্পর্কে হৃদয়কে নিষ্কলুষ রাখার অপরিহার্যতা হ’ল প্রথম বিষয়। দ্বিতীয়তঃ তাঁদের ক্ষেত্রে জিহবাকে মুক্ত রাখতে হবে। গালি-গালাজ, অশ্লীল কথা-বার্তা, অভিশাপ, নিন্দা ইত্যাদি চিরতরে বন্ধ করতে হবে। পক্ষান্তরে তাঁদের জন্য শুধু প্রাণখোলা দো‘আ করতে হবে। যেমনটি সূরা হাশরের ১০ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। মুমিনগণ কি তাঁদেরকে গালি দিবে? তাঁদেরকে ভৎর্সনা করবে? তাঁরা কি তাঁদেরকে নিন্দা করবে? তাঁদের মান-সম্মানে আঘাত করবে? কখনই না, আদৌ এমনটি কোন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হ’তে পারে না। সেজন্য সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সম্পর্কে ঈমানদারগণের ভূমিকা আমরা আবারও পাঠককে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই :
১. হৃদয়কে কলুষমুক্ত করতে হবে।
২. জিহবাকে গালি-গালাজ, নিন্দা ইত্যাদি থেকে মুক্ত করতে হবে। সত্যিই সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর ক্ষেত্রে প্রয়োজন পরিচ্ছন্ন হৃদয় এবং মার্জিত যবান।
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মর্যাদা এবং তাঁদেরকে গালি দেওয়ার নিষিদ্ধতা :
বুখারী ও মুসলিমের একটি হাদীছে রাসূল (ﷺ) সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে গালমন্দ করা থেকে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন এবং একই সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্যে সাহাবীগণের মর্যাদার কথা তুলে ধরেছেন। রাসূল (ﷺ) বলেন,لاَ تَسُبُّوْا أَصْحَابِيْ فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيْفَهُ- ‘তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালি দিও না। যার হাতে আমার প্রাণ, সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, তোমাদের কেউ যদি ওহোদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তথাপিও সে তাঁদের কোন একজনের পূর্ণ এক মুদ্দ[1] বা অর্ধ মুদ্দ দান সমপরিমাণও পৌঁছতে পারবে না’।[2]
কোন একজন সাহাবী যদি একজন মিসকীনকে এক মুদ্দ পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দান করে আর আপনি এক ওহোদ পরিমাণ স্বর্ণ দান করেন, তথাপিও আপনি ঐ সাহাবীর এক মুদ্দ পরিমাণ দানের ধারে কাছেও যেতে পারবেন না। যদিও এটি সম্ভব নয় যে, আমাদের কারো ওহোদ পরিমাণ স্বর্ণ হবে এবং সে তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে। এত বেশী পরিমাণ সম্পদ যদি কারো হয়ও, তবুও হয়তো এই সম্পদ তার জন্য ফেৎনার কারণ হবে এবং সে কৃপণ হয়ে যাবে। ধরা যাক, আমাদের কারো ওহোদ পরিমাণ স্বর্ণ হ’ল এবং সে তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করল, কিন্তু এতদসত্ত্বেও সে একজন সাহাবীর এক মুদ্দ খাদ্যদ্রব্য দানের নেকী পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। তাহ’লে আপনাকে বুঝতে হবে, সাহাবীগণের সম্মান ও মর্যাদা কত বেশী।
‘তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালি দিও না’- এ নির্দেশ স্বয়ং রাসূল (ﷺ)-এর। এটা সাধারণ কোন মানুষ বা আলেমের উক্তি নয়। এখানে তিনি তাঁর উম্মতকে নছীহত করেছেন এবং কোন সাহাবীর সামান্যতম মানহানিকর কোন কাজ থেকে তাদেরকে সতর্ক করেছেন। সাথে সাথে তাঁদের মর্যাদা সম্পর্কেও উম্মতকে সজাগ করেছেন।
রাসূল (ﷺ) থেকে এ বিষয়ে অসংখ্য হাদীছ বর্ণিত হয়েছে, যেগুলিতে তিনি তাঁর উম্মতের উদ্দেশ্যে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর সম্মান ও মর্যাদা তুলে ধরেছেন। এমনকি কতিপয় আলেম সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মর্যাদা বিষয়ে পৃথক গ্রন্থ রচনা করেছেন; কিন্তু এককভাবে অথবা সমষ্টিগতভাবে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর প্রশংসা সম্বলিত হাদীছ অনেক বেশী হওয়ার কারণে এক খন্ডে তা সমাপ্ত করতে সক্ষম হননি। বরং কয়েক খন্ডে দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন পড়েছে।
লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ! কি মহান তাঁদের সম্মান! কি উঁচু তাঁদের মর্যাদা! তাঁদের প্রতি একজন মুসলিমের দায়িত্ব-কর্তব্যই না কত বড়!
মহান আল্লাহ ঈমানদারগণকে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর জন্য দো‘আ এবং ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ করেছেন এবং সত্যিকার মুমিনগণ তা বাস্তবায়নও করেছেন। কিন্তু কতিপয় লোক কুরআন ও হাদীছ নির্দেশিত এই পথ প্রত্যাখ্যান করে চরম ধৃষ্টতার পরিচয় দিয়েছে। ক্ষমা প্রার্থনার পরিবর্তে তারা তাঁদেরকে দিয়েছে গালি এবং প্রশংসার পরিবর্তে করেছে নিন্দা। ছহীহ মুসলিমে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) উরওয়া বিন যুবায়ের (রাঃ)-কে বলেন,يَا ابْنَ أُخْتِيْ أُمِرُوْا أَنْ يَسْتَغْفِرُوْا لِأَصْحَابِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَسَبُّوْهُمْ- ‘হে ভাগ্নে! ওদেরকে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা দিয়েছে গালি’।[3]
তবে এর পেছনে আল্লাহর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। ইবনুল আছীর (রহঃ) তাঁর প্রণীত ‘জামেউল উছূল’ (جامع الأصول) গ্রন্থে উল্লেখ করেন, জাবের বিন আব্দুল্লাহ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘কিছু মানুষ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ), এমনকি আবু বকর ও ওমর (রা)-এরও নিন্দা-সমালোচনা করে থাকে, (তাদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি)? তিনি বলেছিলেন, এতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে? তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের নেক আমল বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আল্লাহ চেয়েছেন, তাঁদের নেকীর পথ যেন বন্ধ না হয়ে যায়’।[4]
এটা কিভাবে সম্ভব? হাদীছ থেকে আমরা স্পষ্ট জানতে পারি, যে ব্যক্তি বিনা অপরাধে কারো নিন্দা-সমালোচনা করবে, ক্বিয়ামত দিবসে ঐ নিন্দাকারীর নেকী বিনা অপরাধে নিন্দিত ব্যক্তিটিকে দেওয়া হবে। হাদীছে এসেছে, একদা রাসূল (ﷺ) সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে বললেন,
أَتَدْرُوْنَ مَا الْمُفْلِسُ؟ قَالُوا الْمُفْلِسُ فِيْنَا مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلاَ مَتَاعَ. فَقَالَ: إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِىْ يَأْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ وَيَأْتِىْ قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِه،ِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِى النَّارِ-
‘তোমরা কি জান, দরিদ্র কে?’ তাঁরা বললেন, আমাদের মধ্যে যার অর্থকড়ি নেই, সেই তো দরিদ্র। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি দরিদ্র, যে ক্বিয়ামত দিবসে ছালাত, ছিয়াম, যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু সাথে এমন কিছু মানুষকে নিয়ে আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছিল, কাউকে অপবাদ দিয়েছিল, কারো সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করেছিল, কারো রক্ত ঝরিয়েছিল, আবার কাউকে প্রহার করেছিল। অতঃপর তাদেরকে তার নেকী থেকে দেওয়া হবে। কিন্তু তার উপর চাপানো দেনাপাওনা শেষ হওয়ার আগেই যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তাহ’লে ঐ লোকগুলির পাপ নিয়ে তার আমলনামায় দেওয়া হবে। অবশেষে এক পর্যায়ে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে’।[5] জাহান্নামের আগুন থেকে আমরা আল্লাহর কাছে মুক্তি প্রার্থনা করি।
একজন সাধারণ মুসলিমকে গালি দেওয়ার ফল যদি এমন হয়, তাহ’লে যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে গালি দেয়, তার অবস্থা কি হবে?! ক্বিয়ামত দিবসে যখন তার নেকী সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে দিয়ে দেওয়া হবে, তখন কিরূপ ভয়াবহ হবে ঐ ব্যক্তির দশা? অতঃপর গালিদাতার নেকী শেষ হয়ে গেলে যাঁকে সে নিন্দা করেছে, তাঁর মন্দ আমল থেকে তাকে দেওয়া হবে। অতঃপর ঐ গালিদাতাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে গালমন্দ করবে, বিপদাপদের কি ঘনঘটাই না নেমে আসবে তার পারলৌকিক জীবনে? আবুবকর (রাঃ) তার নেকী নিয়ে নিবেন, ওমর (রাঃ) তার নেকী নিয়ে নিবেন, ওছমান (রাঃ) তার নেকী নিয়ে নিবেন, রাসূল (ﷺ)-এর স্ত্রীগণ তার নেকী নিয়ে নিবেন। এমনিভাবে অন্যান্য সাহাবীও তার নেকী নিয়ে নিবেন।
আশ্চর্য হ’লেও সত্য যে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ)ও তাদের নিন্দা থেকে নিষ্কৃতি পাননি। অথচ ইফকের ঘটনায় যেনার অপবাদকারীদের অপবাদ থেকে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তাঁকে নিষ্কলুষ ঘোষণা করেছেন এবং সূরা নূরে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি আয়াতও অবতীর্ণ করেছেন, যেগুলি ক্বিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের মাঝে তেলাওয়াত করা হবে। এতদসত্তেও আজও কিছু মানুষ তাঁকে নিন্দা করে থাকে; তাহ’লে ক্বিয়ামত দিবসে মা আয়েশা (রাঃ)-এর ভাগ্য কতইনা সুপ্রসন্ন হবে। তিনি বিরাট ছওয়াবের ভাগীদার হবেন। কিন্তু এই হতভাগা নিন্দাকারী ক্বিয়ামতের দিন নিঃস্ব হয়ে উঠবে। কারণ সে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে গালি দেওয়ার মত ঘৃণ্য পথ বেছে নিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, কিছু লোক সকাল-সন্ধ্যা সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে গালি দিয়ে থাকে; ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময় এই হতভাগাদের দশা কি হবে!
এমনকি তাদের কারো কারো বাড়াবাড়ি এমন চরমসীমায় পৌঁছেছে যে, তারা আবু বকর ও ওমর (রাঃ)-এর মত মহান ব্যক্তিত্বকে অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় গালি দিতেও পিছপা হয় না। তাদের গালির নোংরা ভাষা এরূপ : ‘হে আল্লাহ! তুমি কুরাইশ বংশের দুই মূর্তি, দুই আল্লাহদ্রোহী, দুই ক্বিবত্বী এবং দুই কন্যা আবু বকর ও ওমরের উপর অভিশাপ বর্ষণ কর’। অথচ রাসূল (ﷺ) মুমিন সম্পর্কে বলেন, ‘নিন্দুক, অভিশাপকারী ও অশ্লীল বাক্যালাপকারী মুমিন নয়’।[6] রাসূল (ﷺ)-কে একদা বলা হয়েছিল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি মুশরিকদের উপর বদদো‘আ করুন। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘বদদো‘আ ও অভিশাপকারী হিসাবে আমি প্রেরিত হইনি’।[7] এতকিছুর পরেও এক শ্রেণীর লাঞ্ছিত মানুষ উম্মতের শ্রেষ্ঠ মানুষগুলিকে লা‘নত করার জন্য বেছে নিয়েছে!
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের তুলনামূলক পার্থক্য :
আলী ইবনে আবু ত্বালেব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আবু বকর ও ওমর নবী-রাসূলগণ ব্যতীত পরিণত বয়সী সকল জান্নাতবাসীর সরদার’।[8] অতএব নবী-রাসূলগণের পরে তাঁরা দু’জন যেমন জান্নাতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, তেমনি দুনিয়াতেও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব।
ছহীহ বুখারীতে এসেছে, ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)-এর যুগে কে বেশী উত্তম, তা বিশ্লেষণ করতাম। আমরা সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসাবে আবু বকর (রাঃ)-কে জানতাম, অতঃপর ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে, অতঃপর ওছমান বিন আফফান (রাঃ) কে।[9] ছহীহ বুখারী ছাড়া অন্যান্য কয়েকটি হাদীছ গ্রন্থে এসেছে, ‘রাসূল (ﷺ)-এর নিকট এমর্মে খবর পৌঁছলে তিনি তা অপসন্দ করতেন না’।[10]
ছহীহ বুখারীতে এসেছে, মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিইয়্যাহ বলেন, আমি আমার পিতা আলী ইবনু আবু ত্বালেব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘রাসূল (ﷺ)-এর পরে সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, আবু বকর। আমি বললাম, তারপর কে? তিনি বললেন, ওমর। আমি ভাবলাম, এবার হয়তো ওছমান (রাঃ)-এর নাম বলবেন। সেজন্য বললাম, তারপর কি আপনি! তিনি বললেন, আমি সাধারণ একজন মুসলিম বৈ আর কেউ নই।[11]
ইবনু আবী আছেম প্রণীত ‘আস-সুন্নাহ’ নামক গ্রন্থে এসেছে, আলী (রাঃ) বলেন,لاَ يَبْلُغُنِيْ عَنْ أَحَدٍ يُفَضِّلُنِيْ عَلَى أَبِيْ بَكْرٍ وَعُمَرَ إِلاَّ جَلَدْتُهُ حَدَّ الْمُفْتَرِيْ- ‘কারো পক্ষ থেকে যদি আমার কাছে এমর্মে খবর আসে যে, সে আমাকে আবু বকর ও ওমরের উপর প্রাধান্য দিচ্ছে, তাহ’লে আমি মিথ্যা অপবাদকারীর হদ্দ স্বরূপ তাকে বেত্রাঘাত করব’।[12] এটা স্বয়ং আমীরুল মুমিনীন আলী বিন আবু ত্বালেব (রাঃ)-এর উক্তি।
আমাদেরকে জানতে হবে যে, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের তুলনামূলক তারতম্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকা তাঁদের প্রতি আমাদের কর্তব্যেরই একটি অংশ। আর এই জ্ঞান থাকলে আমরা তাঁদের প্রত্যেককে তাঁর যথাযথ হক্ব প্রদান করতে পারব। মহান আল্লাহ বলেন, لاَ يَسْتَوِيْ مِنْكُمْ مَّنْ أَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ ۚأُوْلَٰئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِيْنَ أَنفَقُوْا مِنْ بَعْدُ وَقَاتَلُوْا وَكُلاًّ وَّعَدَ اللهُ الْحُسْنَى وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ خَبِيْرٌ- ‘তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে এবং জিহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যাদা তাদের চেয়ে বেশী, যারা পরে ব্যয় করেছে এবং জিহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত’ (হাদীদ ১০)।
এখানে ‘আল-হুসনা’ (الْحُسْنَى) অর্থ জান্নাত এবং ‘আল-ফাতহ’ (اَلْفَتْح) অর্থ মক্কা বিজয় বা হুদায়বিয়ার সন্ধি। আয়াতে বলা হ’ল, যাঁরা হুদায়বিয়ার সন্ধির দিনে গাছের নীচে রাসূল (ﷺ)-এর হাতে হাত রেখে বায়‘আত করেছিলেন আর যাঁরা এ সন্ধির পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করেছিলেন, তাঁরা সবাই ঈমান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে সমান নন। বরং উভয় গ্রুপের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে; যদিও তাঁরা সবাই সাহাবী, সবাই ঈমানদার এবং সবাই জান্নাতী।
বুঝা গেল, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) মর্যাদার ক্ষেত্রে সবাই সমান নন। সেজন্য হুদায়বিয়ার দিনে গাছের নীচে বায়‘আতকারী সাহাবীগণ হ’লেন সর্বোত্তম। বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণ তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু তাঁদের সবার মধ্যে উত্তম হ’লেন, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবী। রাসূল (ﷺ) এক বৈঠকে ঐ দশজন সাহাবীকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেন। ইমাম তিরমিযী ও ইমাম আহমাদ প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, ‘আবু বকর জান্নাতী, ওমর জান্নাতী, ওছমান জান্নাতী, আলী জান্নাতী, ত্বালহা জান্নাতী, যুবায়ের জান্নাতী, আব্দুর রহমান বিন আওফ জান্নাতী, সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ জান্নাতী, সাঈদ বিন যায়েদ বিন আমর বিন নুফাইল জান্নাতী এবং আবু ওবায়দাহ ইবনুল জাররাহ জান্নাতী’।[13]
উল্লিখিত দশজন সাহাবীকে নবী করীম (ﷺ) এক বৈঠকে জান্নাতের সুসংবাদ দিলেন। তাঁরা ভূ-পৃষ্ঠে চলাফেরা করতেন অথচ জানতেন, তাঁরা নিশ্চিত জান্নাতে যাবেন। কি মহা সৌভাগ্যের অধিকারী তাঁরা! দুনিয়ার মাটিতে চলাফেরা করছেন, অথচ জানছেন যে, তাঁরা ক্বিয়ামত দিবসে নিশ্চিত জান্নাতের অধিবাসী।
আবার এই দশজনের মধ্যে সর্বোত্তম হ’লেন চার খলীফা এবং চার খলীফার মধ্যে সর্বোত্তম হ’লেন আবু বকর ও ওমর (রাঃ)। কিন্তু সকল সাহাবীর মধ্যে সর্বোত্তম হ’লেন আবু বকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ)।
আবু বকর (রাঃ)-এর সাহচর্যের কথা সরাসরি পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,إِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهِ لاَ تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا ‘তখন তিনি তাঁর সঙ্গীকে বললেন, চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’ (তওবা ৪০)। তিনি ব্যতীত দ্বিতীয় আর কোন সাহাবীর সাহচর্যের কথা পবিত্র কুরআনে আসেনি। আবু বকর (রাঃ) পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূল (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে তাঁকে যা-ই বলা হ’ত, তিনি বিনা বাক্য ব্যয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা বিশ্বাস করে নিতেন। মি‘রাজ থেকে ফিরে এসে নবী (ﷺ) যখন মুশরিকদেরকে বললেন যে, রাতে তাঁকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তিনি ‘বুরাক্ব’-এ চড়েছিলেন; তখন তারা তা বিশ্বাস করতে না পেরে আবু বকর (রাঃ)-এর নিকটে আসল এবং বলল, তোমার সঙ্গী কি বলছে জানো? সে এমন এমন বলছে...। আবু বকর (রাঃ) বললেন, ‘তিনি যদি একথা বলে থাকেন, তাহ’লে সত্যই বলেছেন’।[14]
সেজন্য তাঁকে এই উম্মতের ‘ছিদ্দীক্ব’ বা সত্যবাদী বলা হয়। নবী (ﷺ)-এর সবকিছুকে বিনা বাক্য ব্যয়ে বিশ্বাস করার মত এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে আর কেউ পৌঁছতে পারেনি। আল্লাহ বলেন,وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا بِاللهِ وَرُسُلِهِ أُولَٰئِكَ هُمُ الصِّدِّيْقُوْنَ- ‘আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তারাই তাদের পালনকর্তার নিকট ছিদ্দীক্ব বলে বিবেচিত’ (হাদীদ ১৯)। আয়াতে উল্লিখিত এই সম্মান এবং বিশেষণে বিশেষিত হওয়ার যোগ্য সর্বপ্রথম ব্যক্তিত্ব হ’লেন আবু বকর (রাঃ)।
নীচের ঘটনাটি মনোযোগ দিয়ে শুনুন। নবী করীম (ﷺ) একদা আবু বকর ও ওমর (রাঃ)-এর অনুপস্থিতিতে ঘটনাটি বর্ণনা করছিলেন। ঘটনাটি ছিল এরূপ: আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা নবী করীম (ﷺ) ফজরের ছালাত শেষে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর দিকে মুখ করে বসলেন। অতঃপর বললেন, (বনী ইসরাঈলের) এক ব্যক্তি একদিন এক গরুর পিঠে আরোহণ করল এবং তাকে প্রহার করল। গরুটি বলল, আমাদেরকে আরোহণ করার কাজে সৃষ্টি করা হয়নি; বরং চাষাবাদের জন্য আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তখন উপস্থিতগণ বলে উঠলেন, সুবহা-নাল্লাহ! গরু কথা বলে! এরপর রাসূল (ﷺ) বললেন, আমি, আবু বকর এবং ওমর এটা বিশ্বাস করি। হাদীছটির বর্ণনাকারী বলেন, ঐদিন তাঁরা দু’জন অনুপস্থিত ছিলেন। (বনী ইসরাঈলের) আরেক ব্যক্তি ছাগল চরাচ্ছিল, এমতাবস্থায় বাঘ এসে একটি ছাগল নিয়ে গেল।
লোকটি পিছু ধাওয়া করে বাঘের হাত থেকে ছাগলটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হ’ল। তখন বাঘটি বলল, এই লোক ছাগলটিকে আমার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিল? যেদিন আমি ছাড়া ওর আর কোন রাখাল থাকবে না, সেদিন ওকে কে রক্ষা করবে? উপস্থিতগণ বলে উঠলেন, সুবহা-নাল্লাহ! বাঘ কথা বলে! রাসূল (ﷺ) বললেন, আমি, আবু বকর এবং ওমর এটা বিশ্বাস করি। বর্ণনাকারী বলছেন, ঐদিন তাঁরা দু’জন অনুপস্থিত ছিলেন।[15]
এখানে ছিদ্দীক্ব এবং তাঁর ঈমানী দৃঢ়তার বিষয়টি লক্ষণীয়। অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর পূর্ণ হেদায়াতপ্রাপ্তির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা যদি কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আবু বকর ও ওমর (রাঃ)-এর মর্যাদার উপর আলোচনা করতে যাই, তাহ’লে ২/১টি বক্তব্যে তা শেষ করা সম্ভব নয়।
মহান আল্লাহ ব্যতীত যেহেতু আর কোন হক্ব মা‘বূদ নেই, সেহেতু তাঁর সুন্দরতম নামসমূহ এবং সুমহান গুণাবলীর মাধ্যমে আমরা তাঁরই নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন কোন সাহাবীর প্রতি অথবা অন্য কোন মুমিনের প্রতি আমাদের হৃদয় সমূহে সামান্যতম বিদ্বেষ না দেন। তিনি আমাদেরকে এবং আমাদের যেসব ভাই ঈমানের সাথে গত হয়ে গেছেন, তাদেরকে যেন ক্ষমা করেন। আমরা আল্লাহর সুন্দরতম নামসমূহ ও সুমহান গুণাবলীর মাধ্যমে তাঁর নিকট আরো প্রার্থনা করি, তিনি যেন ক্বিয়ামত দিবসে নবী (ﷺ) এবং তাঁর সাহাবীগণের সাথে আমাদেরকে হাশর-নাশর করান। আরো প্রার্থনা করি, ক্বিয়ামত দিবসে তিনি যেন আমাদেরকে আবু বকর, ওমর, ওছমান, আলী এবং নবী (ﷺ)-এর স্ত্রীগণের সাথে হাশর-নাশর করান। মহা সম্মান এবং মর্যাদার অধিকারী সকল সাহাবীর সাথে যেন তিনি আমাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন হাশর-নাশর করান।
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর জীবনচরিত অধ্যয়নের প্রতি যত্নশীল হওয়ার নছীহত :
প্রিয় মুসলিম ভাই! আমাদের উচিত, সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর জীবনী, তাঁদের সম্মান, মর্যাদা ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশুনা করা। এক্ষেত্রে কুরআন মাজীদ দিয়ে শুরু করতে হবে। অতঃপর রাসূল (ﷺ)-এর হাদীছ পড়তে হবে। ছহীহ বুখারী, ছহীহ মুসলিম, সুনানে আরবা‘আহ, মাসানীদ, মা‘আজিম[16], আজ্যা ইত্যাদি হাদীছ গ্রন্থে উল্লিখিত আছার এবং ওলামায়ে কেরামের উক্তি পড়তে হবে। সাথে সাথে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর ফযীলত বিষয়ে পৃথকভাবে প্রণীত গ্রন্থসমূহও পড়তে হবে। কারণ এই অধ্যয়ন থেকে আমরা অনেক উপকার লাভে ধন্য হব। তন্মধ্যে-
এক. সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর জীবনী পড়লে তাঁদের প্রতি আমাদের ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে। তাঁদের প্রশংসা, তাঁদের জন্য দো‘আ এবং ক্ষমা প্রার্থনার পথ প্রশস্ত হবে। তাঁদের সম্পর্কে সবসময় ভাল আলোচনার বিষয়টি সহজ হবে।
দুই. সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর জীবনচরিত পড়লে তাঁদের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বনের প্রতি আপনি যত্মশীল হ’তে পারবেন। আর আপনি জীবন চলার পথে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর সাথে যতবেশী সাদৃশ্য বজায় রাখতে পারবেন, কল্যাণের ততবেশী কাছাকাছি থাকতে পারবেন। কেননা মহান আল্লাহ বলেন, كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ ‘তোমরাই হ’লে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে’ (আলে ইমরান ১১০)। নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘সর্বোত্তম মানুষ হ’লেন আমার যুগের মানুষ’।[17] যেহেতু আল্লাহ এবং তদীয় রাসূল (ﷺ) তাঁদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন, সেহেতু যতবেশী তাঁদের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখা যাবে, ততবেশী কল্যাণের কাছাকাছি থাকা সম্ভব হবে।
তিন. সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে গালমন্দ করা, তাঁদেরকে নিন্দা-সমালোচনা করা ইত্যাদি নিকৃষ্ট কাজ থেকে আপনি সর্বোচ্চ দূরত্বে অবস্থান করতে পারবেন। সাহাবীগণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাঁদের প্রশংসা করা, তাঁদেরকে সম্মান করা, তাঁদেরকে ভালবাসা এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করার নির্দেশ আপনাকে দেওয়া হয়েছে। আর তাঁদের জীবনী অধ্যয়ন আপনাকে উপরোক্ত নির্দেশাবলী পালনে উৎসাহিত করে তুলবে।
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মধ্যে বিবাদীয় বিষয়ে একজন মুসলিমের ভূমিকা :
আমাদের আলোচনার এটিই শেষ বিষয়। সাহাবীগণের মধ্যে যেসব মতানৈক্য হয়েছে, তদ্বিষয়ে আমাদের করণীয় কি?
সালাফে ছালেহীনের এক ব্যক্তিকে যখন এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন,تِلْكَ فِتْنَةٌ طَهَّرَ اللهُ مِنْهَا سُيُوْفَنَا، فَلْنُطَهِّرْ مِنْهَا أَلْسِنَتَنَا- ‘এটি ছিল একটি ফেৎনা। আল্লাহ তা থেকে আমাদের তরবারীকে মুক্ত রেখেছেন। অতএব, আমরা তাত্থেকে আমাদের যবানকেও মুক্ত রাখব’।[18]
আরেকজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন, تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُم مَّا كَسَبْتُمْ وَلاَ تُسْأَلُوْنَ عَمَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ- ‘তারা ছিল এক সম্প্রদায়, যারা গত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা তাদেরই জন্য। তারা কি করত, সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না’ (বাক্বারাহ ১৩৪)।[19]
মনে করুন, কোন একজন সাহাবী ভুল করেছেন। কিন্তু আপনার তাতে মাথা ঘামানোর দরকারটা কি! ক্বিয়ামতের দিন কি আল্লাহ এই ভুলের জন্য আপনার কাছে হিসাব চাইবেন? আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি করত, সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না’। আপনি সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর পর্যবেক্ষক নন, তাহ’লে কেন আপনি তাঁদের মধ্যে বিবাদীয় বিষয়ে নিজেকে জড়াবেন। আল্লাহ বলেন, ‘তারা ছিল এক সম্প্রদায়, যারা গত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে, তা তাদেরই জন্য। তারা কি করত, সে সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না’ ।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল, ধরে নিচ্ছি, একজন সাহাবী ভুল করেছেন। কিন্তু তিনি এই ভুলটি ইচ্ছা করে করেননি; বরং ইজতিহাদ করতে গিয়ে ঘটে গেছে। আর রাসূল (ﷺ) বলেছেন,إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ- ‘বিচারক যদি বিচার করতে গিয়ে ইজতিহাদ করেন এবং সঠিক বিচার করতে সক্ষম হন, তাহ’লে তাঁর জন্য রয়েছে দু’টি নেকী। পক্ষান্তরে যদি তিনি বিচার করতে গিয়ে ইজতিহাদ করেন, কিন্তু ভুল বিচার করে ফেলেন, তাহ’লে তার জন্য রয়েছে একটি নেকী’।[20]
সেজন্য সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) সম্পর্কে যেসব মতানৈক্য বা ভুলের কথা উল্লখ করা হয়, সেগুলির দু’টি অবস্থাঃ হয় সেগুলি তাঁদের উপর মিথ্যারোপ। আর তাঁদের সম্পর্কে উল্লিখিত বেশীর ভাগ মতানৈক্য বা ভুল এই শ্রেণীর।
আর নয়তো সেগুলি সঠিক। আর সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত এই ভুলগুলি সম্পর্কে আমরা বলব, তাঁরা ইজতিহাদ করেছেন। যিনি ইজতিহাদ করতে গিয়ে ভুল করেননি, তাঁর দুই নেকী। আর যিনি ভুল করেছেন, তাঁর এক নেকী এবং তাঁর গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে।
অতএব সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর মধ্যে বিবাদীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা কারো উচিত নয়। তবে যদি কেউ তাঁদের পক্ষে লড়াই এবং তাঁদের সম্মান-মর্যাদা তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এসব বিষয়ে কথা বলে, তাহ’লে কোন সমস্যা নেই।
পরিশেষে, আমি নিম্নোক্ত দো‘আগুলির মাধ্যমে এই পুস্তিকাটির ইতি টানতে চাই-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ-
‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীমের উপর এবং ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি মহা প্রশংসিত, মহা সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের উপর, যেমনিভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীমের উপর এবং ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয়ই আপনি মহা প্রশংসিত, মহা সম্মানিত’।
وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَالْأَئِمَّةِ الْمَهْدِيِّيْنَ؛ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ، وَعُمَرَ الْفَارُوْقِ، وَعُثْمَانَ ذِيْ النُّوْرَيْنِ، وَأَبِيْ الْحَسَنَيْنِ عَلِيٍّ، وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنْ بَقِيَّةِ الْعَشَرَةِ الْمُبَشَّرِيْنَ بِالْجَنَّةِ، وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنْ زَوْجَاتِ نَبِيِّكَ، وَارْضَ اللهُمَّ عَنْ صَحَابَةِ نَبِيِّكَ الَّذِيْنَ شَهِدُوْا بَدْرًا، عَنْ صَحَابَةِ نَبِيِّكَ الَّذِيْنَ شَهِدُوْا بَيْعَةَ الرِّضْوَانِ، وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنْ صَحَابَةِ نَبِيِّكَ أَجْمَعِيْنَ، وَارْضَ اللَّهُمَّ عَمَّنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ-
‘হে আল্লাহ! আপনি চার খলীফা আবু বকর, ওমর, ওছমান ও আলী (রাঃ)-এর উপর সন্তুষ্ট হোন। হে আল্লাহ! জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজনের মধ্যে অবশিষ্ট ছয়জনের প্রতিও আপনি সন্তুষ্ট হোন। হে আল্লাহ! আপনি আপনার নবী (ﷺ)-এর স্ত্রীগণের উপর সন্তুষ্ট হোন। হে আল্লাহ! আপনি বদরযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং বায়‘আতে রিযওয়ানে অংশগ্রহণকারী সাহাবীগণের উপর সন্তুষ্ট হোন। হে আল্লাহ! আপনি আপনার নবী (ﷺ)-এর সকল সাহাবীর উপর সন্তুষ্ট হোন। হে আল্লাহ! আপনি তাঁদের পথের প্রকৃত অনুসারীদের উপর সন্তুষ্ট হোন’।
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ وَلاَ تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلًّا لِّلَّذِيْنَ آمَنُوْا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوْفٌ رَّحِيْمٌ-
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এবং ঈমানে আমাদের অগ্রবর্তী ভ্রাতাগণকে ক্ষমা করুন। ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ আপনি রাখবেন না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয়ই আপনি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়’ (হাশর ১০)।
সবশেষে, মহান রববুল আলামীনের প্রশংসা করছি। আল্লাহ তাঁর বান্দা ও রাসূলের উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর দরূদ, সালাম ও বরকত বর্ষণ করুন।[21]
মূল : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল মুহসিন আল-বাদ্র
প্রফেসর, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
অনুবাদ : আব্দুল আলীম বিন কাওছার
প্রফেসর, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
অনুবাদ : আব্দুল আলীম বিন কাওছার
[1]. ‘মুদ্দ’ (مُدّ) হ’ল এক ‘ছা’-এর চার ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ চার মুদ্দে হয় এক ‘ছা’। গ্রামের হিসাবে প্রায় ৬২৫ গ্রাম। -অনুবাদক।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৭৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৪০।
[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩০২২।
[4]. ইবনুল আছীর, জামেউল উছূল, হা/৬৩৬৬।-এ হাদীছটি সনদসহ উল্লেখ করেছেন। অনুরূপভাবে খত্বীব বাগদাদী তাঁর তারীখু বাগদাদ (৫/১৪৭)-এ হাদীছটি নিয়ে এসেছেন।
[5]. মুসলিম, হা/২৫৮১।
[6]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৯৪৯; বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৩১২; তিরমিযী, হা/১৯৭৭; হাকেম, ১/১২। সবাই ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। হাদীছটি বর্ণনার পর ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীছটি হাসান-গারীব। ইমাম হাকেম বলেন, ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীছটি ছহীহ; হাফেয যাহাবী হাকেমের এই মতকে সমর্থন করেছেন। শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন। দ্রঃ সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩১২।
[7]. মুসলিম হা/২৫৯৯।
[8]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৬০২; তিরমিযী, হা/৩৬৬৬; ইবনু মাজাহ, হা/৯৫। এই হাদীছটি আরো কয়েকজন সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং সবগুলি সনদের উপর ভিত্তি করে শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন। দ্রঃ সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৮২৪।
[9]. বুখারী হা/৩৬৫৫।
[10]. ইবনু আবী ‘আছেম, ‘আস-সুন্নাহ’, হা/৯৯৩; আবু ইয়া‘লা, আল-মুসনাদ, হা/৫৬০৪; ত্ববারানী, মুসনাদুশ্ শামিইয়্যিন, হা/১৭৬৪। হাদীছের অতিরিক্ত এই অংশটুকু ছহীহ, শায়খ আলবানী ‘যিলালুল জান্নাহ’ গ্রন্থে একে ছহীহ বলেছেন, হা/১১৯৩।
[11]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৭১।
[12]. হা/১২১৯, ইমাম আহমাদ,পৃঃ ৪৯।
[13]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৭৫; তিরমিযী, হা/৩৭৪৭; নাসাঈ, সুনানে কুবরা, হা/৮১৯৪। দু’জনই হাদীছটিকে আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন। দ্র. ছহীহুল জামে‘ হা/৫০।
[14]. হাকেম, ৩/৬৫; আবু নু‘আইম, ‘মা। দ্র: সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩০৬।
[15]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৭১।
[16]. মা‘আজিম (الْمَعَاجِمُ) মাসানীদের মত। তবে উভয়ের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য হ’ল, মা‘আজিমে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-এর নামসমূহকে শুধুমাত্র আরবী বর্ণের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী সাজানো হয় এবং কখনও কখনও একই বৈঠকে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীর হাদীছ সমূহকে সর্বপ্রথম নিয়ে আসা হয়। কিন্তু মাসানীদে সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-কে সাজানোর কয়েকটি ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।- অনুবাদক
[17]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৫২, ৩৬৫১, ৬৪২৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৩৩।
[18]. ঘটনাটি ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ) থেকে বর্ণনা করা হয়। দ্রঃ হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৯/১১৪; আল-মুজালাসাহ/১৯৬৫। এখানে উক্তিটির শব্দগুলি এভাবে এসেছে, تِلْكَ دِمَاءٌ طَهَّرَ اللهُ يَدِي مِنْهَا، فَمَا لي أُخَضِّبُ لِسَانِي فِيْهَا ‘সেটি ছিল রক্তাক্ত ইতিহাস, আল্লাহ তাত্থেকে আমার হাতকে মুক্ত রেখেছেন। তাহ’লে এ বিষয়ে কথা বলে খামাখা কেন আমি আমার জিহবাকে রঞ্জিত করব?!’
[19]. তিনি হ’লেন ইমাম আহমাদ। দ্রঃ খাল্লাল, আস-সুন্নাহ, ২/৪৮১।
[20]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৫২; মুসলিম, হা/১৭১৬।
[21]. এই পুস্তিকার বিষয়বস্তুটি মূলতঃ মদীনার মসজিদে ক্বুবাতে উপস্থাপিত একটি বক্তব্য। ক্যাসেট থেকে বক্তব্যটি আলাদা করা হয়েছে এবং আমি এখানে কিছু সংশোধনীও এনেছি। তবে বক্তব্যটি বক্তব্য আকারে রেখে দেওয়াই ভাল মনে করেছি। মহান আল্লাহই একক তাওফীক্বদাতা (মূল লেখক)।
Last edited: