সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

ভ্রান্তি নিরসন সালাফি ওলামাগণঃ তথাকথিত ঐক্যের নামে কিংবা কারো জনপ্রিয়তার তোড়ে সত্য প্রকাশে দ্বিধা করেনা।

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Threads
344
Comments
479
Reactions
5,229
Credits
3,533


1673602344998.webp

বাংলাদেশের তরুণ সমাজের দ্বীনের প্রতি অগ্রসর হওয়া নিয়ে যতটা আশাবাদী হই, ততটাই মাঝে মাঝে হতাশ হতে হয় তাদের মধ্যকার বিবেকহীন অদ্ভুত আবেগের জোয়ার দেখে। এর আগে আমরা তালেবান ক্রেজ দেখেছি, আইএস ক্রেজ দেখেছি, দেখেছি বাংলা ভাই-আব্দুর রহমান থেকে শুরু করে আনওয়ার আওলাকী, জসীমুদ্দীন রহমানী, তামীম আদনানী প্রভৃতি থেকে হালের আদনান ক্রেজ। উঠতি বয়সের তরুণদের চোখে জিহাদ যতটা না ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক দায়িত্ববোধের বিষয়, তার চেয়ে বেশী যেন ফ্রি-ফায়ার, পাবজী গেমের মত রঙিন এ্যাডভেঞ্চারের বিষয়বস্তু করে তুলেছে ভুইফোঁড় এসব ক্রেজ।

বছরের পর বছর আক্বীদা-আমল-আখলাকের উপদেশ যাদের কাছে নিরামিষ লাগে, তারাই আজ হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালাদের পিছনের কী অদ্ভুত আবেগ নিয়ে ছুটে চলেছে! আরো অবাক লাগে, বড় বড় সুপরিচিত আলেমগণ যখন মিথ্যা অপরাধে গ্রেফতার হন, সরকারী নির্যাতনের শিকার হন, তখন মিডিয়াগুলো থাকে নিশ্চুপ- অথচ অর্বাচিন এক কৈশোরোত্তীর্ণ যুবকের জন্য দেশের সমস্ত মিডিয়া কেবল নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো পর্যন্ত আওয়াজ তুলছে! কেমন যেন সব রহস্যজনক, মাথাঘোলানো পরিস্থিতি। হিসাব মিলানো কঠিন।

যাহোক যে কথা বলছিলাম, সদ্য তরুণ আদনান ছেলেটি সম্পর্কে। নবীন বয়সী টগবগে এই তরুণের বক্তব্যে দ্বীনের প্রতি আবেগ-ভালোবাসাটার প্রকাশ খুব ভাল। সেই সাথে নিজেকে আখিরুজ্জামান গবেষক হিসাবে উপস্থাপন করে তথাকথিত জেওপলিটিক্স, দাজ্জাল, ইমাম মাহদী, মালহামা, কাগজের টাকা ইত্যাদি চটকদার ইস্যুর সাথে ইমরান নজরের মত প্রাচীন পুঁথিসাহিত্যিক আজগুবী সব ষড়যন্ত্রতত্ত্ব আওড়িয়ে আবেগী তরুণদের মধ্যে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে। এটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকলে এড়িয়ে যাওয়ার হয়ত সুযোগ থাকত, কিন্তু এসব টপকিয়ে সঊদী আরব থেকে শুরু করে বিশ্বের সমস্ত মুসলিম সরকারকে নাম ধরে ধরে যখন সে কোন তাবীল ছাড়াই তাগুত সরকার বলা শুরু করল, ইহুদী-নাছারাদের এজেন্ট ও মুনাফিক আখ্যা দিল এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রচ্ছন্নভাবে জিহাদ ঘোষণা করা অপরিহার্য দাবী করল, সকল ওলামায়ে কেরামকে জেওপলিটিক্স সম্পর্কে অজ্ঞ ঘোষণা করে দরবারী ঘোষণা করল, তখন তার বিভ্রান্ত খারেজী আক্বীদার বিষয়ে দায়িত্বশীল ওলামায়ে কেরাম স্বভাবতঃই সতর্ক করেছেন। কিন্তু এই সতর্কতার প্রতি সে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি। বরং বিনয়ের বাতাবরণে প্রচণ্ড ঔদ্ধত্ব বজায় রেখে সে তার বিভ্রান্ত আক্বীদা অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রচার করেছে। সেই সাথে তৈরী হয়েছে তার একদল উগ্র অনুসারীও।

আজকে চারিদিকে যখন ইসলামের নামে মহাফেৎনার বিস্তৃতি, সে যুগে যখন তরুণদের সর্বদা নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য সতর্ক থাকা উচিৎ, সেখানে বার বার কেন তরুণরা একই নর্দমার পথে বার বার হাটে! বিশেষ করে জ্বলজ্যান্ত ঘাত-প্রতিঘাত বার বার দেখার পরও জঙ্গীবাদ ও চরমপন্থার ফেৎনা থেকে তারা কেন এত অসচেতন, তা বড়ই বিস্ময়কর। আর কত দৃষ্টান্ত সামনে এলে তারা সতর্ক হবে! রাসূল (ছাঃ)-এর এত সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎবাণী থাকতে কেন উঠতি বয়সী, অকালপক্ক, অর্বাচিন যুবকরা তাদের আদর্শ হয়ে উঠবে? রাসূল (ছাঃ) বলেন, سَيَخْرُجُ فِى آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ أَحْدَاثُ الْأَسْنَانِ سُفَهَاءُ الْأَحْلاَمِ يَقُولُونَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ وَلاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاقْتُلُوهُمْ فَإِنَّ فِى قَتْلِهِمْ أَجْرًا لِمَنْ قَتَلَهُمْ عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘আখেরী যামানায় তরুণ বয়সী একদল বোকা লোক বের হবে, যারা পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর কথা বলবে। তারা কুরআন তেলাওয়াত করবে। কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাবে, যেমন শিকার হ’তে তীর বের হয়ে যায়। যখন তোমরা তাদের পাবে, তখন তাদের হত্যা করবে। কেননা এদের হত্যাকারীর জন্য আল্লাহর নিকটে ক্বিয়ামতের দিন বিশেষ পুরস্কার রয়েছে’ (মুসলিম হা/১০৬৬)।

আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আহলে হাদিস ওলামায়ে কেরাম কখনও তথাকথিত ঐক্যের নামে কিংবা কারো জনপ্রিয়তার তোড়ে সত্য প্রকাশে দ্বিধা করে না। যত চটকদার বক্তাই হোক, দ্বীনের নামে পথভ্রষ্টতার প্রচার-প্রসারকে কখনই তারা চ্যালেঞ্জহীন ছেড়ে দিতে পারে না। এটাই আহলে হাদিসদের চিরন্তন মূলনীতি। তাতে কে অনুরাগী হল আর বিরাগী হল সে হিসাব তারা করেন না। অন্যান্য সকল ধর্মীয় কুসংস্কারের মত এদেশে খারেজী আক্বীদার বিরুদ্ধে আহলে হাদিসরাই সবচেয়ে বেশী সোচ্চারকণ্ঠ ছিল, আজও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কোন অবস্থাতেই তারা হক্বের আওয়াজকে গোপন রাখবে না। আদনানরা আসবে, যাবে; কিন্তু তাদের মূলনীতির কোন ব্যত্যায় ঘটবে না ইনশাআল্লাহ।

আমরা আরো দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আদনান যে গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলছে, তারা কখনই ইসলামের বন্ধু নয়; বরং শত্রু। যদি তারা সংশোধন না হয় এবং তাদের বিভ্রান্ত আক্বীদা প্রচার অব্যাহত রাখে, তবে অবশ্যই প্রশাসনের কর্তব্য হবে দেশ ও জাতির সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে তাদেরকে নিবৃত্ত করা। তবে সেটা যেন হয় অবশ্যই আইনসঙ্গতভাবে। তথাকথিত গুম, খুন, ক্রসফায়ারের মাধ্যমে নয়। সেই সাথে সচেতন যুবসমাজের প্রতিও আমাদের যরূরী আহ্বান থাকবে, সংকটকালে আবেগসর্বস্ব হয়ে আমরা যেন অপরিণামদর্শী না হয়ে পড়ি। আমাদের সামনে বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম এখনও জীবিত রয়েছেন, তাদেরকে ছেড়ে জাহেলদের পিছনের ছুটে নিজের ঈমান-আমল যেন না হারাই। সেই সাথে এদেশের মাটিতে পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিস ভিত্তিক হক্বপন্থী সমাজ গঠনের যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা গড়ে উঠছে, তা যেন এদের কারণে কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন। আমীন!
▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃▃‎‎▃▃▃

— [ "আব্দুল্লাহ সাকিব ইবন আসাদুল্লাহ আল-গালিব " ] •​
 
Last edited by a moderator:
Top