‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

সালাত সালাতের সঠিক সময় ও বিভ্রান্তি নিরসন (২য় কিস্তি)

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,544
Credits
2,602

বিলম্বে জামা‘আতে সালাত আদায় করার চেয়ে আউয়াল ওয়াক্তে একাকি সালাত আদায় করা বেশী গুরুত্বপূর্ণ


শাসক (দায়িত্বশীল) ও আলিমগণ যখন সালাত পিছিয়ে দেবে তখন একাকী সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা জরুরী। সম্ভব হলে পরে জামা‘আতে শরীক হওয়া যাবে। তবে এটা বাধ্যতামূলক নয়। এভাবে একাকী সালাত আদায় করলে সেটাকে সালাতের হেফাযত বলে গণ্য করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ رضى الله عنه قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَيْفَ أَنْتَ إِذَا كَانَتْ عَلَيْكَ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُوْنَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا أَوْ يُمِيْتُوْنَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا قَالَ قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِىْ قَالَ صَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكْتَهَا مَعَهُمْ فَصَلِّ فَإِنَّهَا لَكَ نَافِلَةٌ. وَفِىْ رِوَايَةٍ -وَإِلَّا كُنْتَ قَدْ أَحْرَزْتَ​

আবূ যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, আমীরগণ যখন সালাতের ওয়াক্ত থেকে সরিয়ে সালাত দেরী করে পড়বে বা সালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে মেরে ফেলবে, তখন তুমি কী করবে? আমি তখন বললাম, আপনি আমাকে কী করতে বলছেন? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সালাতের সময়েই সালাত আদায় করে নাও। অতঃপর তাদের সাথে যদি আদায় করতে পার, তাহলে আদায় কর। তবে তা তোমার জন্য নফল হবে।[১] অন্য বর্ণনায় রয়েছে- আর যদি তা না হয়, তাহলে তুমি অন্তত তোমার সালাত রক্ষা করতে সক্ষম হলে।[২]

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّهَا سَتَكُوْنُ عَلَيْكُمْ بَعْدِي أُمَرَاءُ تَشْغَلُهُمْ أَشْيَاءُ عَنِ الصَّلَاةِ لِوَقْتِهَا حَتَّى يَذْهَبَ وَقْتُهَا فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أُصَلِّي مَعَهُمْ؟ قَالَ نَعَمْ إِنْ شِئْتَ وَقَالَ سُفْيَانُ إِنْ أَدْرَكْتُهَا مَعَهُمْ أُصَلِّي مَعَهُمْ؟ قَالَ نَعَمْ إِنْ شِئْتَ​

উবাদাহ ইবনু ছামিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, অচিরেই আমার পরে তোমাদের উপর এমন শাসকদের আগমন ঘটবে কর্মব্যস্ততা যাদেরকে নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় হতে বিরত রাখবে, এমনকি সালাতের ওয়াক্ত চলে যাবে। অতএব তখন তোমরা নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করে নিবে। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি ঐ সালাত পুনরায় তাদের সাথেও আদায় করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার। সুফিয়ান (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, লোকটি বলল, আমি তাদের সাথে ঐ সালাত পেলে তাদের সাথেও আদায় করব কি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ; ইচ্ছে হলে আদায় করতে পার।[৩] আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

إِنَّهُ سَيَكُوْنُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُوْنَ الصَّلَاةَ عَنْ وَقْتِهَا وَيَخْنُقُوْنَهَا إِلَى شَرَقِ الْمَوْتَى فَإِذَا رَأَيْتُمُوْهُمْ قَدْ فَعَلُوْا ذَلِكَ فَصَلُّوا فِيْ بُيُوْتِكُمْ ثُمَّ اجْعَلُوا صَلَاتَكُمْ سُبْحَةً​

‘অচিরেই তোমাদের উপর এমন আমীর হবে যারা সালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে পিছিয়ে দেবে এবং এর সময়কে এমনভাবে গলা চেপে ধরবে যে, পূর্ব দিকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটবে (সূর্য বেশি হলুদ হবে)। সুতরাং তোমরা যদি এটা দেখ তবে তোমাদের ঘরে সালাত আদায় করবে। অতঃপর তাদের সাথে (সালাত) আদায় করবে নফল হিসাবে’।[৪]

সহীহ মুসলিমে فَصَلُّوْا فِيْ بُيُوْتِكُمْ (তোমাদের ঘরে সালাত আদায় করবে) শব্দ ছাড়া এসেছে এভাবে-

عَنِ الْأَسْوَدِ وَعَلْقَمَةَ قَالَا أَتَيْنَا عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُوْدٍ فِيْ دَارِهِ فَقَالَ أَصَلَّى هَؤُلَاءِ خَلْفَكُمْ؟ فَقُلْنَا لَا قَالَ فَقُوْمُوْا فَصَلُّوْا فَلَمْ يَأْمُرْنَا بِأَذَانٍ وَلَا إِقَامَةٍ قَالَ وَذَهَبْنَا لِنَقُوْمَ خَلْفَهُ فَأَخَذَ بِأَيْدِيْنَا فَجَعَلَ أَحَدَنَا عَنْ يَمِيْنِهِ وَالْآخَرَ عَنْ شِمَالِهِ قَالَ فَلَمَّا رَكَعَ وَضَعْنَا أَيْدِيَنَا عَلَى رُكَبِنَا قَالَ فَضَرَبَ أَيْدِيَنَا وَطَبَّقَ بَيْنَ كَفَّيْهِ ثُمَّ أَدْخَلَهُمَا بَيْنَ فَخِذَيْهِ قَالَ فَلَمَّا صَلَّى قَالَ إِنَّهُ سَتَكُوْنُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يُؤَخِّرُوْنَ الصَّلَاةَ عَنْ مِيْقَاتِهَا وَيَخْنُقُوْنَهَا إِلَى شَرَقِ الْمَوْتَى فَإِذَا رَأَيْتُمُوْهُمْ قَدْ فَعَلُوا ذَلِكَ فَصَلُّوا الصَّلَاةَ لِمِيْقَاتِهَا وَاجْعَلُوْا صَلَاتَكُمْ مَعَهُمْ سُبْحَةً وَإِذَا كُنْتُمْ ثَلَاثَةً فَصَلُّوْا جَمِيْعًا وَإِذَا كُنْتُمْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ فَلْيَؤُمَّكُمْ أَحَدُكُمْ​

আসওয়াদ ও ‘আলক্বামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত। তারা (উভয়ে) বলেছেন, আমরা আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর বাড়ীতে তার কাছে গেলাম। তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এসব আমীর-উমারাহ এবং তাদের অনুসারীগণ যারা তোমাদের পেছনে রয়েছে তারা কি সালাত আদায় করেছে? জবাবে আমরা বললাম, না। তখন তিনি বললেন, তাহলে উঠে সালাত আদায় করে নাও। (কারণ সালাতের সময় হয়ে গিয়েছে)। কিন্তু তিনি আমাদেরকে আযান কিংবা ইক্বামাত দিতে বললেন না।[৫] বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন যে, সালাত আদায়ের জন্য আমরা তার পিছনে দাঁড়াতে গেলে তিনি আমাদের একজনকে ধরে তার ডানপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং অপরজনকে বামপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন।[৬] তিনি রুকূ‘তে গেলে আমরাও রুকূ‘তে গিয়ে হাঁটুর উপর আমাদের হাত রাখলাম। তখন তিনি আমাদের হাত ধরলেন এবং হাতের দু’তালু একত্রিত করে দু’ উরুর মধ্যখানে স্থাপন করলেন। পরে সালাত শেষে বললেন, অচিরেই এমন সব আমীর-উমারাহ ও ধনাট্য ব্যক্তিবর্গের আবির্ভাব ঘটবে যারা সময়মত সালাত না পড়ে বিলম্ব করবে এবং সালাতের সময় এত সংকীর্ণ করে ফেলবে যে, সূর্য অস্তমিত প্রায় হয়ে যাবে। তাদেরকে এরূপ করতে দেখলে তোমরা সময়মত সালাত আদায় করে নিবে। আর তাদের সাথে পুনরায় নফল হিসাবে পড়ে নিবে (ইমামকে মাঝখানে রেখে)। তিনের অধিকজন থাকলে একজন ইমাম হবে (সামনে দাঁড়াবে)…..।[৭]

অন্যত্র ইবনু মাস‘উদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন, ‘তুমি ঐ যামানাতে আছ যখন তাদের খত্বীবদের সংখ্যা কম, তাদের অনেক আলিম আছেন, তাদের সালাত দীর্ঘ হয় এবং তাদের খুৎবা ছোট হয়। তোমার উপর এমন যামানা আসবে যখন তাদের অনেক খতীব হবে। তাদের অল্প আলিম হবে, তাদের খুৎবা হবে দীর্ঘ, আর তাদের সালাত হবে দেরিতে। এমনকি তারা বলবে, এই পূর্ব মারা গেছে। (রাবী) বলেন, আমি তাকে বললাম, পূর্ব মারা যাওয়াটা কী? তিনি বললেন, যখন সূর্য খুব হলুদ হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন (যামানা) পাবে, সে যেন তার ওয়াক্তে সালাত পড়ে। অতঃপর যদি বাধ্য করা হয় তবে তাদের সাথে সালাত আদায় করে নেবে। তার একক সালাতটি ফরয হিসাবে গণ্য হবে এবং তাদের সাথে আদায়কৃত সালাত নফল হিসাবে গণ্য হবে।[৮]

শাসক সালাতের সময় পিছালে সঠিক ওয়াক্তে সালাত আদায়কারী এটা বলবে না যে, আমি সালাত আদায় করে নিয়েছি তাই এখন সালাত আদায় করব না।

সাহাবী আবূ যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

صَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَإِنْ أَدْرَكَتْكَ الصَّلَاةُ مَعَهُمْ فَصَلِّ وَلَا تَقُلْ إِنِّي قَدْ صَلَّيْتُ فَلَا أُصَلِّي​

‘তুমি সময়মত (প্রথম ওয়াক্তে) সালাত আদায় করে নেবে। তবে সবার সাথে জামা‘আতে যদি সালাত আদায় করার সুযাগে হয় তাহলে তাদের সাথেও সালাত আদায় করে নেবে। এ ক্ষেত্রে বলবে না যে, আমি সালাত আদায় করেছি, তাই এখন আমি সালাত আদায় করব না।[৯]

সালাতের ওয়াক্ত পিছিয়ে দেয়া ইমাম বা শাসক বিদ‘আতী হলে তার অনুসরণ করা নিষিদ্ধ

সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

سَيَلِيْ أُمُوْرَكُمْ بَعْدِي رِجَالٌ يُطْفِئُوْنَ السُّنَّةَ وَيَعْمَلُوْنَ بِالْبِدْعَةِ وَيُؤَخِّرُوْنَ الصَّلَاةَ عَنْ مَوَاقِيْتِهَا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنْ أَدْرَكْتُهُمْ كَيْفَ أَفْعَلُ؟ قَالَ تَسْأَلُنِيْ يَا ابْنَ أُمِّ عَبْدٍ كَيْفَ تَفْعَلُ؟ لَا طَاعَةَ لِمَنْ عَصَى اللهَ​

‘অচিরেই আমার পরে এমন সব লোক তোমাদের আমীর হবে, যারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে, বিদ‘আতের অনুসরণ করবে এবং সালাত নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে পড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি যদি তাদের (যুগ) পাই, তবে কী করব? তিনি বলেন, হে উম্মু আবদের পুত্র! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছ যে, তুমি কী করবে? যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যাচরণ করে, তার আনুগত্য করা যাবে না’।[১০]

সালাতের ওয়াক্ত পিছিয়ে দেয়া ইমাম বা শাসকের অধীনে যেসব চাকুরি নিষিদ্ধ

সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَيَأْتِيَنَّ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يُقَرِّبُوْنَ شِرَارَ النَّاسِ وَيُؤَخِّرُوْنَ الصَّلَاةَ عَنْ مَوَاقِيْتِهَا فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلَا يَكُوْنَنَّ عَرِيْفًا وَلَا شُرْطِيًا وَلَا جَابِيًا وَلَا خَازِنًا​

‘অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই তোমাদের উপর এমন আমীর (শাসক) হবে, যারা সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোকদের নিজের কাছ টেনে নেবে এবং তারা সালাতের ওয়াক্ত গড়িয়ে যাওয়ার পর তা আদায় করবে। এই সময় তোমাদের কেউ জীবিত থাকলে সে যেন তত্ত্বাবধায়ক, পুলিশ, যাকাতের স¤পদ আদায়কারী ও কোষাধ্যক্ষ নিযুক্ত না হয়’।[১১]

আবু ক্বাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, নিশ্চয় আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি এবং আমার কাছে একটি অঙ্গীকার রেখেছি যে, যে ব্যক্তি ওয়াক্তমত সেই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে ক্বিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে, আমি তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে ব্যক্তি সেগুলোর সংরক্ষণ করবে না তার জন্য আমার নিকট কোন অঙ্গীকার নেই’।[১২]

‘উক্ববা ইবনু ‘আমির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের প্রতিপালক আনন্দিত হন ঐ ছাগলের রাখালের প্রতি, যে একা পর্বত শিখরে দাঁড়িয়ে সালাতের আযান দেয় এবং সালাত আদায় করে। আল্লাহ তা‘আলা তখন ফেরেশতাগণকে লক্ষ্য করে বলেন, তোমরা আমার বান্দার প্রতি লক্ষ্য কর! সে আমার ভয়ে আযান দিচ্ছে এবং সালাত আদায় করছে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম।[১৩]

সুধী পাঠক! উপরিউক্ত আলোচনায় আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায়ের গুরুত্ব পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। এমনকি জামা‘আতে সালাত আদায়ের চেয়ে ওয়াক্তকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ওয়াক্ত অনুযায়ী সালাত আদায় করলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোরও অঙ্গীকার করেছেন। এমনকি কোন রাখালও যদি ওয়াক্ত অনুযায়ী একাকী সালাত আদায় করে, তবুও তাকে ক্ষমা করে দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান।

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের নির্ধারিত সময়সীমা

যোহরের সালাত


الظهر অর্থ হল সূর্য ঢলে যাওয়ার সময়। সূর্য আসমানের মধ্যভাগ থেকে সূর্যাস্তের দিকে ঢলে যাওয়া।[১৪] যোহরের সালাত যোহরের সময় শুরু হওয়ার মাধ্যমে ওয়াজিব হয়। যোহরের সালাতকে الأولى (প্রথম)ও বলা হয়। কারণ জিবরীল (আলাইহিস সালাম) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ সালাতই সর্বপ্রথম পড়িয়েছেন। যোহরের সালাতকে হাজীরা (اَلْهَجِيرَةُ)ও বলা হয়। আবূ বুরযাতা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ يُصَلِّي الْهَجِيْرَةَ الَّتِي تَدْعُوْنَهَا الأُوْلَى حِيْنَ تَدْحَضُ الشَّمْسُ​

‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাত আদায় করতেন (যাকে প্রথমে হাজীরা বলা হত) এমন সময়, যখন সূর্য ঢলে যায়’।[১৫]

যোহরের প্রথম সময়

যোহরের প্রথম সময় হয়, সূর্য ঢলে যাওয়ার সময়। অর্থাৎ সূর্য আকাশের মধ্য হতে পশ্চিম দিকে ধাবিত হওয়ার সময়। সকল আলিমের ঐকমত্যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাত সূর্য ঢলে যাওয়ার সময় পড়েছেন, যা একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন পূর্বের আবূ বুরযাতার হাদীস।

অন্য হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যোহরের সালাতের সময় আরম্ভ হয় যখন সূর্য ঢলে যায় এবং মানুষের ছায়া যখন তার দৈর্ঘ্যরে সমান হয়। যে পর্যন্ত না আছরের সময় উপস্থিত হয়। আছরের সময় হল, যে পর্যন্ত সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। মাগরিব সালাতের সময় হল, যে পর্যন্ত শাফাক্ব তথা পশ্চিম আকাশের সান্ধ্য লালিমা দূরীভূত না হয়। এশার সালাতের সময় হল, ঠিক মধ্য রাত্রি পর্যন্ত এবং ফজর সালাতের সময় হল, ফজর সময় উদয় হওয়া থেকে যতক্ষণ না সূর্যোদয় আরম্ভ হয়। আর যখন সূর্যোদয় আরম্ভ হবে, তখন সালাত হতে বিরত থাকবে। কেননা তা শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্যে উদয় হয়।[১৬]

উল্লেখ্য, ঘণ্টা বা ঘড়ির মাধ্যমে গণনা করে যোহরের সময় নির্ধারণ করা সম্ভব। অর্থাৎ সূর্যউদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত-এর ঠিক মধ্যভাগ সময়টিই হচ্ছে যোহরের সালাতের সময়। যেমন- যদি সূর্য সকাল ৬টায় উঠে, আর সন্ধ্যা ৬টায় ডুবে, তাহলে মধ্যাকাশ থেকে সূর্য হেলে পড়ার সময়টা হল ঠিক ১২টা। এমনিভাবে, যদি ৭টায় উঠে, আর সন্ধ্যা ৭টায় ডুবে, তাহলে মধ্যাকাশ থেকে হেলে পড়া শুরু হওয়ার সময় হল দুপুর ১টা।[১৭]


[১]. সহীহ মুসলিম, হা/১৪৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৫২৮।
[২]. সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৮।
[৩]. আবূ দাঊদ, হা/৪৩৩।
[৪]. মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, হা/৭৬৭৩; সনদ সহীহ।
[৫]. একাকী ফরজ সালাত আদায় কালে আযান ও ইক্বামাতের বিধান স¤পর্কে ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আলেমগণ মত দিয়েছেন যে, এক্ষেত্রে ইক্বামত বলা সুন্নাত, বড় জামা‘আতের ইক্বামতে এটা যথেষ্ট হবে না। আর আযানের ব্যাপারে আমাদের সঠিক মত হল জামা‘আতের আযান শুনা না গেলে আযান দিয়ে নিতে হবে। (শারহু মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০২)।
[৬]. ইবনু মাস‘উদ ও তার সাথিদ্বয় ব্যতীত সাহাবীগণের সকলেই এবং অদ্যাবধি বর্তমানের সকল ‘আলিমের মতে, ইমামের সাথে দু’জন থাকলেই তারা ইমামের পিছনে দাঁড়াবে। এ মর্মে জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) … থেকে সহীহ মুসলিমের অন্যত্র হাদীস বর্ণিত হয়েছে (শারহু মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০২)।
[৭]. সহীহ মুসলিম, হা/১০৭৮।
[৮]. মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হা/৩৭৮৭, মুহাল্লা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৪। সনদে আবু ইসহাক মুদাল্লিস। আবুল আহওয়াস থেকে তারা শানে উল্লেখ হয়নি। তা ছাড়া ইখতিলাত (বর্ণনাতে হেরফের) হত। ইখতিলাতের পূর্বে বা পরে তার থেকে মুআম্মার শুনে বর্ণনা করেছেন-এমনটিও কেউ বলেননি (আনিসুস সারী- তাহক্বীক ওয়া তাখরীজ ফাতল বারী ৬/৪২৮১ পৃ, হা/৩০০৭) পূর্ববর্তী ও পরবর্তী হাদীসে সাক্ষ্য থাকায় তাদলীসের ক্রটি দূর হয়, ফলে হাদীসটি সহীহ বা হাসান। ইমাম হায়সামী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, বর্ণনাকারীগণ ছিক্বাহ (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, হা/৩১৬০)।
[৯]. সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৮।
[১০]. ইবনু মাজাহ, হা/২৮৬৫; সনদ সহীহ।
[১১]. সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৪৫৮৬, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৭৯০।
[১২]. আবূ দাঊদ, হা/৪৩০, সনদ হাসান, ‘সালাত’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত হেফাযত করা’ অনুচ্ছেদ।
[১৩]. আবূ দাঊদ, হা/১২০৩, সনদ সহীহ।
[১৪]. আল মাজমূ‘, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৪, আল মুগনী, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৭২।
[১৫]. সহীহ বুখারী, হা/৫৪৭, নাসাঈ, হা/৫২৫।
[১৬]. সহীহ মুসলিম, হা/৬১২।
[১৭]. আশ-শারহুল মুমতি, ২য় খণ্ড, পৃ. ৯৬।



সূত্র: আল-ইখলাছ।​
 
Last edited:
COMMENTS ARE BELOW

Share this page