প্রথমত: সর্বনিম্ন জান্নাতীর মর্যাদা:
আব্দুল্লাহ্ ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সর্বশেষ যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হবে এবং সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তার সম্পর্কে আমি জানি। এক ব্যক্তি অধোবদন অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং সে ফিরে আসবে ও বলবে, হে প্রভু! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। পুনরায় আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
তাই সে ফিরে এসে বলবে, হে প্রভু! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমার জন্য দুনিয়ার সমতুল্য এবং তার দশগুণ বরাদ্দ দেয়া হল, অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার দশ গুণ তোমাকে দেয়া হল। তখন লোকটি বলবে, প্রভু! তুমি কি আমার সাথে বিদ্রুপ বা হাসি ঠাট্টা করছ? (রাবী বলেন) আমি তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে হাসতে দেখলাম যে তাঁর দন্তরাজি প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি বললেন, এটা জান্নাতীদের নিম্নতম মর্যাদা।” [1]
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছে, যে ব্যক্তি সবচেয়ে কম মযার্দার জান্নাতী হবে তার মুখখানি আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে জান্নাতের দিকে করে দেবেন এবং তার জন্যে একটি ছায়াযুক্ত বৃক্ষ দাঁড় করাবেন। সে বলবে, হে আমার প্রভু, আমাকে ঐ গাছের নিকটে পৌঁছে দিন। আমি এর ছায়ায় আশ্রয় নেব। এ হাদীসের অবশিষ্ট অংশ, ইবনে মাস্উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসের অনু্রূপ। তবে আল্লাহ তা’আলা বলবেন, “হে আদম সন্তান, আমার নিকট তোমার চাওয়া কবে নাগাদ শেষ হবে?”.........শেষ পর্যন্ত এ বাক্যটি উল্লেখ করেন নি। অবশ্য এ বণর্নায় আরো আছে: এটা ওটা চাওয়ার জন্যে আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দেবেন।
আর যখন তার সমস্ত আকাংখা শেষ হয়ে যাবে, তখন তাকে বলবেন: তুমি যা কামনা করেছো তা এবং আরো দশগুণ বেশী তোমাকে দেয়া হলো। অতঃপর সে ব্যক্তি তার জান্নাতের গৃহে প্রবেশ করবে এবং প্রবেশ করবে তার কাছে টানা টানা চোখ বিশিষ্ট দু’জন হুর তার স্ত্রী হিসাবে। তারা বলবে, সেই আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা যিনি তোমাকে আমাদের জন্যে এবং আমাদেরকে তোমার জন্যে নির্ধারিত করেছেন। তিনি বলেন, অতঃপর সে ব্যক্তি বলবে, আমাকে যা কিছু দান করা হয়েছে, অনুরূপ আর কাউকে প্রদান করা হয়নি। [2]
মুগীরা ইবনে শো’বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সনদে বর্ণিত, মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর রবকে জিজ্ঞেস করলেন, “একজন নিম্ন শ্রেণীর জান্নাতীর কিরূপ মযার্দা হবে? আল্লাহ তা’আলা বললেন, সমস্ত জান্নাতবাসীকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে বলা হবে, যাও, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলবে, হে প্রভু, এখন ওখানে গিয়ে কি করবো? প্রত্যেক ব্যক্তিই তো স্ব স্ব স্থান ও যা যা নেয়ার তা নিয়ে ফেলেছে। আমি ওখানে গিয়ে কিছুই তো পাবো না। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে যে, দুনিয়ার যে কোন বাদশার রাজ্যের সম পরিমাণ এক রাজত্ব তোমাকে দেয়া হবে?
সে বলবে, আমি সন্তুষ্ট, হে আমার প্রভু, তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমাকে তা দেয়া হল এবং তার দ্বিগুণ, তার দ্বিগুণ, তার দ্বিগুণ দেয়া হল। পঞ্চম বারে সে ব্যক্তি বলবে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, হে আমার রব। অতঃপর তিনি বলবেন, তোমাকে তা দেয়া হলো এবং তার দশগুণ পরিমাণ দেয়া হলো। আর তোমাকে তাও দেয়া হলো, যা তোমার মন চায় ও চোখে ভাল লাগে। সে ব্যক্তি বলবে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।” [3]
দ্বিতীয়ত: সর্বনিম্ন জাহান্নামীর শাস্তি, কঠিন উষ্ণতা ও আযাবের তারতম্য:
নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “কিয়ামতের দিন সর্বাধিক হালকা আযাব যাকে দেয়া হবে, সে হল, ঐ ব্যক্তি যাকে আগুনের কয়লার দুটি জুতো পরানো হবে। তার মগজ এরকম টগবগ করতে থাকবে যেমনটি টগবগ করতে থাকে পিতলের পাতিলের গরম পানি।” [4]
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, “অথচ সে তার মত এত কষ্ট বা শাস্তি আর কাউকে দিচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে পারবে না।”[5]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের এ অগ্নি যা আদম সন্তানগণ প্রজ্জলিত করে তা জাহান্নামের অগ্নির তাপমাত্রার সত্তর ভাগের একভাগ। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহর কসম! এ আগুন কি যথেষ্ট ছিল না? তিনি বললেন, সে আগুন তো এ আগুনের তুলনায় উনসত্তর গুন বেশী তাপমাত্রা সম্পন্ন। এ উনসত্তরের প্রতিটি গুন দুনিয়ার আগুনের সমমানের।” [6]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জাহান্নাম তাঁর রবের নিকট অভিযোগ করে বলেছে, হে রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন তিনি তাঁকে দু’টি নিঃশ্বাস ছাড়ার অনুমতি প্রদান করেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে আর একটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে। অতএব তোমরা যে গ্রীষ্মের উষ্ণতা ও শীতের তীব্রতা পেয়ে থাক (তা নিঃশ্বাসের প্রভাব)।” [7]
শাকীক রহ. আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে আনা হবে। সেদিন এর মধ্যে সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ফিরিশতা। তারা তা টেনে নিয়ে যাবে।” [8]
সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামক বলেছেন, “জাহান্নামীদের কাউকে তো অগ্নি তার উভয় টাখনূ পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে, আবার কাউকে তার কোমর পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে এবং কাউকে তার গর্দান পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে।” [9]
এ হাদীসে জাহান্নামীদের আযাবের তারতম্য বুঝানো হয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি, আরো পানাহ চাচ্ছি সে সব কথা ও কাজ থেকে যা জাহান্নামের নিকটবর্তী করে। [10]
[1] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৭১, মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬।
[2] মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮।
[3] মুসলিম, হাদীস নং ১৮৯।
[4] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৬২, মুসলিম, হাদীস নং ২১৩।
[5] মুসলিম, হাদীস নং ২১৩।
[6] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৩।
[7] বুখারী, হাদীস নং ৩২৬০।
[8] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪২।
[9] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৫।
[10] শরহে নাওয়াওয়ী ‘আলা সহীহ মুসলিম: ৯/২৮৭।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنِّي لَأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْهَا، وَآخِرَ أَهْلِ الجَنَّةِ دُخُولًا، رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنَ النَّارِ كَبْوًا، فَيَقُولُ اللَّهُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأْتِيهَا، فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَيَأْتِيهَا فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ: اذْهَبْ فَادْخُلِ الجَنَّةَ، فَإِنَّ لَكَ مِثْلَ الدُّنْيَا وَعَشَرَةَ أَمْثَالِهَا - أَوْ: إِنَّ لَكَ مِثْلَ عَشَرَةِ أَمْثَالِ الدُّنْيَا - فَيَقُولُ: تَسْخَرُ مِنِّي - أَوْ: تَضْحَكُ مِنِّي - وَأَنْتَ المَلِكُ " فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، وَكَانَ يَقُولُ: «ذَاكَ أَدْنَى أَهْلِ الجَنَّةِ مَنْزِلَةً»
আব্দুল্লাহ্ ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সর্বশেষ যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হবে এবং সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে তার সম্পর্কে আমি জানি। এক ব্যক্তি অধোবদন অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং সে ফিরে আসবে ও বলবে, হে প্রভু! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। পুনরায় আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
তাই সে ফিরে এসে বলবে, হে প্রভু! জান্নাত তো ভরপুর দেখতে পেলাম। তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমার জন্য দুনিয়ার সমতুল্য এবং তার দশগুণ বরাদ্দ দেয়া হল, অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়ার দশ গুণ তোমাকে দেয়া হল। তখন লোকটি বলবে, প্রভু! তুমি কি আমার সাথে বিদ্রুপ বা হাসি ঠাট্টা করছ? (রাবী বলেন) আমি তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এভাবে হাসতে দেখলাম যে তাঁর দন্তরাজি প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি বললেন, এটা জান্নাতীদের নিম্নতম মর্যাদা।” [1]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً، رَجُلٌ صَرَفَ اللهُ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ قِبَلَ الْجَنَّةِ، وَمَثَّلَ لَهُ شَجَرَةً ذَاتَ ظِلٍّ، فَقَالَ: أَيْ رَبِّ، قَدِّمْنِي إِلَى هَذِهِ الشَّجَرَةِ أَكُونُ فِي ظِلِّهَا " وَسَاقَ الْحَدِيثَ بِنَحْوِ حَدِيثِ ابْنِ مَسْعُودٍ، وَلَمْ يَذْكُرْ: فَيَقُولُ: «يَا ابْنَ آدَمَ مَا يَصْرِينِي مِنْكَ؟» إِلَى آخِرِ الْحَدِيثِ، وَزَادَ فِيهِ: " وَيُذَكِّرُهُ اللهُ، سَلْ كَذَا وَكَذَا، فَإِذَا انْقَطَعَتْ بِهِ الْأَمَانِيُّ، قَالَ اللهُ: هُوَ لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ "، قَالَ: " ثُمَّ يَدْخُلُ بَيْتَهُ، فَتَدْخُلُ عَلَيْهِ زَوْجَتَاهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ، فَتَقُولَانِ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَاكَ لَنَا، وَأَحْيَانَا لَكَ "، قَالَ: " فَيَقُولُ: مَا أُعْطِيَ أَحَدٌ مِثْلَ مَا أُعْطِيتُ»
আবু সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছে, যে ব্যক্তি সবচেয়ে কম মযার্দার জান্নাতী হবে তার মুখখানি আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে জান্নাতের দিকে করে দেবেন এবং তার জন্যে একটি ছায়াযুক্ত বৃক্ষ দাঁড় করাবেন। সে বলবে, হে আমার প্রভু, আমাকে ঐ গাছের নিকটে পৌঁছে দিন। আমি এর ছায়ায় আশ্রয় নেব। এ হাদীসের অবশিষ্ট অংশ, ইবনে মাস্উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসের অনু্রূপ। তবে আল্লাহ তা’আলা বলবেন, “হে আদম সন্তান, আমার নিকট তোমার চাওয়া কবে নাগাদ শেষ হবে?”.........শেষ পর্যন্ত এ বাক্যটি উল্লেখ করেন নি। অবশ্য এ বণর্নায় আরো আছে: এটা ওটা চাওয়ার জন্যে আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দেবেন।
আর যখন তার সমস্ত আকাংখা শেষ হয়ে যাবে, তখন তাকে বলবেন: তুমি যা কামনা করেছো তা এবং আরো দশগুণ বেশী তোমাকে দেয়া হলো। অতঃপর সে ব্যক্তি তার জান্নাতের গৃহে প্রবেশ করবে এবং প্রবেশ করবে তার কাছে টানা টানা চোখ বিশিষ্ট দু’জন হুর তার স্ত্রী হিসাবে। তারা বলবে, সেই আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা যিনি তোমাকে আমাদের জন্যে এবং আমাদেরকে তোমার জন্যে নির্ধারিত করেছেন। তিনি বলেন, অতঃপর সে ব্যক্তি বলবে, আমাকে যা কিছু দান করা হয়েছে, অনুরূপ আর কাউকে প্রদান করা হয়নি। [2]
وعن المغيرة بن شعبة يرفعه: "سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ، مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً، قَالَ: هُوَ رَجُلٌ يَجِيءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، فَيُقَالُ لَهُ: ادْخُلِ الْجَنَّةَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ، وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ، فَيُقَالُ لَهُ: أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا؟ فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ: لَكَ ذَلِكَ، وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ، فَقَالَ فِي الْخَامِسَةِ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ: هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ، وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ، وَلَذَّتْ عَيْنُكَ، فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، قَالَ: رَبِّ
মুগীরা ইবনে শো’বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সনদে বর্ণিত, মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর রবকে জিজ্ঞেস করলেন, “একজন নিম্ন শ্রেণীর জান্নাতীর কিরূপ মযার্দা হবে? আল্লাহ তা’আলা বললেন, সমস্ত জান্নাতবাসীকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে বলা হবে, যাও, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলবে, হে প্রভু, এখন ওখানে গিয়ে কি করবো? প্রত্যেক ব্যক্তিই তো স্ব স্ব স্থান ও যা যা নেয়ার তা নিয়ে ফেলেছে। আমি ওখানে গিয়ে কিছুই তো পাবো না। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে যে, দুনিয়ার যে কোন বাদশার রাজ্যের সম পরিমাণ এক রাজত্ব তোমাকে দেয়া হবে?
সে বলবে, আমি সন্তুষ্ট, হে আমার প্রভু, তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমাকে তা দেয়া হল এবং তার দ্বিগুণ, তার দ্বিগুণ, তার দ্বিগুণ দেয়া হল। পঞ্চম বারে সে ব্যক্তি বলবে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, হে আমার রব। অতঃপর তিনি বলবেন, তোমাকে তা দেয়া হলো এবং তার দশগুণ পরিমাণ দেয়া হলো। আর তোমাকে তাও দেয়া হলো, যা তোমার মন চায় ও চোখে ভাল লাগে। সে ব্যক্তি বলবে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।” [3]
দ্বিতীয়ত: সর্বনিম্ন জাহান্নামীর শাস্তি, কঠিন উষ্ণতা ও আযাবের তারতম্য:
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ أَهْوَنَ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا يَوْمَ القِيَامَةِ رَجُلٌ، عَلَى أَخْمَصِ قَدَمَيْهِ جَمْرَتَانِ، يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ كَمَا يَغْلِي المِرْجَلُ وَالقُمْقُمُ»
وفي رواية لمسلم: « مَا يَرَى أَنَّ أَحَدًا أَشَدُّ مِنْهُ عَذَابًا وَإِنَّهُ لَأَهْوَنُهُمْ عَذَابًا»
وفي رواية لمسلم: « مَا يَرَى أَنَّ أَحَدًا أَشَدُّ مِنْهُ عَذَابًا وَإِنَّهُ لَأَهْوَنُهُمْ عَذَابًا»
নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “কিয়ামতের দিন সর্বাধিক হালকা আযাব যাকে দেয়া হবে, সে হল, ঐ ব্যক্তি যাকে আগুনের কয়লার দুটি জুতো পরানো হবে। তার মগজ এরকম টগবগ করতে থাকবে যেমনটি টগবগ করতে থাকে পিতলের পাতিলের গরম পানি।” [4]
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, “অথচ সে তার মত এত কষ্ট বা শাস্তি আর কাউকে দিচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে পারবে না।”[5]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «نَارُكُمْ هَذِهِ الَّتِي يُوقِدُ ابْنُ آدَمَ جُزْءٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزْءًا، مِنْ حَرِّ جَهَنَّمَ» قَالُوا: وَاللهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً، يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «فَإِنَّهَا فُضِّلَتْ عَلَيْهَا بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا، كُلُّهَا مِثْلُ حَرِّهَا»
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের এ অগ্নি যা আদম সন্তানগণ প্রজ্জলিত করে তা জাহান্নামের অগ্নির তাপমাত্রার সত্তর ভাগের একভাগ। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহর কসম! এ আগুন কি যথেষ্ট ছিল না? তিনি বললেন, সে আগুন তো এ আগুনের তুলনায় উনসত্তর গুন বেশী তাপমাত্রা সম্পন্ন। এ উনসত্তরের প্রতিটি গুন দুনিয়ার আগুনের সমমানের।” [6]
وعن أبي هُرَيْرَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ "اشْتَكَتِ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ: رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا، فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ: نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ، فَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الحَرِّ، وَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنَ الزَّمْهَرِيرِ ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জাহান্নাম তাঁর রবের নিকট অভিযোগ করে বলেছে, হে রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে। তখন তিনি তাঁকে দু’টি নিঃশ্বাস ছাড়ার অনুমতি প্রদান করেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে আর একটি নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে। অতএব তোমরা যে গ্রীষ্মের উষ্ণতা ও শীতের তীব্রতা পেয়ে থাক (তা নিঃশ্বাসের প্রভাব)।” [7]
عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُونَ أَلْفَ زِمَامٍ، مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ يَجُرُّونَهَا»
শাকীক রহ. আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে আনা হবে। সেদিন এর মধ্যে সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ফিরিশতা। তারা তা টেনে নিয়ে যাবে।” [8]
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى كَعْبَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى حُجْزَتِهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأْخُذُهُ النَّارُ إِلَى تَرْقُوَتِهِ»
সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামক বলেছেন, “জাহান্নামীদের কাউকে তো অগ্নি তার উভয় টাখনূ পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে, আবার কাউকে তার কোমর পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে এবং কাউকে তার গর্দান পর্যন্ত গ্রাস করে নিবে।” [9]
এ হাদীসে জাহান্নামীদের আযাবের তারতম্য বুঝানো হয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি, আরো পানাহ চাচ্ছি সে সব কথা ও কাজ থেকে যা জাহান্নামের নিকটবর্তী করে। [10]
লেখক : সা‘ঈদ ইবন আলী ইবন ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ আল-মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ আল-মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
[1] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৭১, মুসলিম, হাদীস নং ১৮৬।
[2] মুসলিম, হাদীস নং ১৮৮।
[3] মুসলিম, হাদীস নং ১৮৯।
[4] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৬২, মুসলিম, হাদীস নং ২১৩।
[5] মুসলিম, হাদীস নং ২১৩।
[6] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৩।
[7] বুখারী, হাদীস নং ৩২৬০।
[8] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪২।
[9] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৪৫।
[10] শরহে নাওয়াওয়ী ‘আলা সহীহ মুসলিম: ৯/২৮৭।