‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ শিয়াদের সম্পর্কে জানুন

Farhad Molla

Susceptible

Exposer
Q&A Master
Reporter
Salafi User
Threads
149
Comments
228
Solutions
1
Reactions
1,492
Credits
1,385
শিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে সঠীক জেনে নিন

হযরত আলী রা. এর মোট ছেলে ছিল ১১ জন। তাদের নাম নিম্নরূপ:

১) হাসান বিন আলী বিন আবু তালিব

২) হুসাইন বিন আলী বিন আবু তালিব

৩) মুহসিন বিন আলী বিন আবু তালিব

৪) আব্বাস বিন আলী বিন আবু তালিব

৫) হেলাল বিন আলী বিন আবু তালিব

৬) আব্দুল্লাহ বিন আলী বিন আবু তালিব

৭) জাফর বিন আলী বিন আবু তালিব

৮) উসমান বিন আলী বিন আবু তালিব

৯) উবায়দুল্লাহ বিন আলী বিন আবু তালিব

১০) আবু বকর বিন আলী বিন আবু তালিব

১১) উমর বিন আলী বিন আবু তালিব

কেন হুসাইন রা. শিয়ারা হাসান রা. বা আলী রা. এর অন্য সকল ছেলেকে বাদ দিয়ে কেন হুসাইন রা. সম্মান-শ্রদ্ধা ও ভক্তি দেখায়? শিয়া রাফেযীদের কথিত ১২ জন ইমাম সকলেই হুসাইন রা. এর বংশধর।

হুসাইন রা. বিবাহ করেছিলেন এক ইরানী পারস্য নারীকে। যিনি ছিলেন পারস্য রাজা ইয়াযদেগেরদ (Yazdegerd, শাসনকাল: ৬৩১-৬৫১ খৃষ্টাব্দ) এর কন্যা। তার নাম শাহযানা। মুসলিম সেনাদের হাতে পারস্য রাজ্যের পতন ঘটলে রাজা ইয়াযদেগেরদ নিহত হল। অত:পর তার মেয়েদেরকে বন্দি করে নিয়ে আসা হল। খলীফা উমর রা. পারস্যের রাজকুমারীদের মধ্যে এই শাহযানাকে উপহার হিসেবে দেন হুসাইন রা.কে। অত:পর তিনি তাকে বিয়ে করেন। ১২ ইমামরা সকলেই পারস্যকন্যা শাহযানা এর ঔরসজাত। হুসাইন রা. এর প্রতি তাদের এই ভালবাসা

'আলে বাইত' তথা নবী পরিবারের প্রতি ভালবাসার কারণে নয়-যেমনটি তারা দাবি করে। সুতরাং বাস্তব কথা হল, তারা আলে বাইতে কেসরা তথা পারস্য রাজা ইয়াযদেগেরদ এর পরিবারকে ভালবাসে। যে কেসরা ছিল ১২ ইমামের নানা। কেননা এদের সকলের মা হল পারস্যের রাজকন্যা।

ইমাম ইবনে কাসীর রহ. 'আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া' গ্রন্থের ৯ম খণ্ডে ৬১ হিজরি সনের ঘটনাবলী উল্লেখ করতে গিয়ে হুসাইন বিন আলী রা. এর জীবনীতে লিখেছেন:

"যামাখশারী 'রাবীউল আবরার' গ্রন্থে উল্লেখ করেন, উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর শাসনামলে পারস্য বাদশাহ ইয়াযদেগিরদ এর তিন কন্যাকে বন্দি করে আনা হয়েছিল।

তাদের মধ্যে একজনকে পেয়েছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.। তার মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সালেম। আরেকজন পেয়েছিলেনে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর সিদ্দীক রা.। তার মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কাসেম। আর আরেকজন পেয়েছিলেন হুসাইন বিন আলী রা.। তার মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যাইনুল আবেদীন।

সুতরাং সালেম রহ., কাসেম রহ. এবং যাইনুল আবেদীন রহ. এই তিনজন খালাতো ভাই।”

হুসাইন এবং ইমামদেরকে শিয়াদের ভালবাসার কারণ হল, ইমামদের সাথে শিয়াদের রক্ত সম্পর্ক রয়েছে। কেননা তাদের ইমামরা কেসরা তথা পারস্য শাসকগোষ্ঠীর বংশধর।

* শিয়াদের বারো ইমাম

শিয়াদের বারো ইমামের নাম-

১- আলি ইবন আবি তালিব ৬০০- ৬৬১

২- হাসান ইবনে আলি ৬২৫ – ৬৬৯

৩- হুসাইন ইবনে আলি ৬২৬ ৬৮০

৪- জয়নাল আবেদিন ৬৫৮ ৭১৩ ৫- মুহাম্মদ আল বাকির ৬৭৬ - ৭৪৩

৬- জাফর আল সাদিক ৭০৩ ৭৬৫

৭- মুসা আল কাদিম ৭৪৫ – ৭৯৯

৮- আলি আর-রিজা ৭৬৫- ৮১৮

৯- মুহাম্মদ আল তকি ৮১০ – ৮৩৫

১০- আলি আল হাদি ৮২৭- ৮৬৮

১১- হাসান আল আসকারি ৮৪৬ - ৮৭৪

১২- মুহাম্মাদ আল মাহদি ৮৬৯

.বারো ইমাম সম্পর্কে হাদিস

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত কয়েকটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাঃ বারো জন সত্যপন্থী খলিফার কথা বলেছেন।

জাবির বিন সামুরা রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, "পৃথিবীর বুকে জীবনের ধ্বংস ততক্ষণ হবে না, যতক্ষণ বারোজন খলিফাহ অতিক্রান্ত না হয়”। এরপর তিনি একটি বাক্য বললেন (যা আমি শুনিনি)। আমি তখন আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম যে রাসুলুল্লাহ সাঃ কি বলেছেন। তিনি বললেন, "তিনি বলেছেন তারা সবাই হবে কুরাইশ থেকে”।

একইভাবে আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, "দ্বীন হিসাবে ইসলাম শেষ দিন পর্যন্ত টিকে থাকবে, এর ভেতর আসবে বারোজন (সত্যপন্থী) খলিফাহ, যারা সবাই হবে কুরাইশ থেকে”। (মুসলিম)

মুসলিমে বর্ণিত বারো খলিফাহ কিংবা শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী বারো ইমামের এই হাদিস নিয়ে শিয়া এবং সুন্নী দু'দলেই রয়েছে অনেক মত। তবে শিয়াদের মতপার্থক্য এ ব্যাপারে এতো বেশী যে এর দ্বারা তাদের নিজেদের বিশ্বাসই টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।

বর্ণিত হাদিসটির সকল বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে বারো জন সত্যপন্থী নেতা হবে কুরাইশ থেকে, কিন্তু শিয়াদের বিশ্বাস হলো এরা সবাই হবে আহলে বাইত বা আলী রাঃ এর বংশধরদের মধ্য থেকে (এরা আলী ও ফাতিমা রাঃ এর বাইরে অন্য কোন স্ত্রী বা কন্যার কাউকে আহলে বাইত হিসাবে ধরেনা)। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে রাসুলুল্লাহ সাঃ কোন বক্রতা ছাড়াই কুরাইশ না বলে সরাসরি আহলে বাইত উল্লেখ করতেন।

একইভাবে যদি তারা সবাই আহলে বাইত থেকে এসে থাকেন তাহলে প্রথমে আলী রাঃ, এরপর তাঁর সন্তান হাসান রাঃ, এরপর হুসাইন রাঃ, এরপর তাঁর সন্তান, এরপর তার সন্তান এভাবে যদি ধরা যায় তাহলে বারোজনের এই হিসাব হিজরী তৃতীয় শতকেই শেষ হয়ে যায়। তাহলে পরবর্তি আহলে বাইতদের কি হবে? আর এই যায়গা থেকেই উৎপত্তি হতে শুরু করেছে শিয়াদের নানা অবাস্তব বিশ্বাসের। কেউ কেউ আবার তাদের পছন্দের লোককে ইমাম মাহদি বলে আখ্যা দিয়ে তার সম্বন্ধে নানা বানোয়াট বিশ্বাসের অবতরণা করেছে। আসুন দেখে নেয়া যাক এ সংক্রান্ত কিছু শি'ঈ বিশ্বাস।

• হুসাইন বিন আলী রাঃ এর শাহাদাতের পর অধিকাংশ শিয়া ইমাম হিসাবে মেনে নেয় তাঁর পুত্র আলী বিন হুসাইন বা যাইনুল আবিদিনকে। তবে একটি শিয়া গোষ্ঠী তাঁকে না মেনে আলীর পুত্র এবং হাসান-হুসাইনের বৈমাত্রেয় ভাই মুহাম্মাদ বিন আলী বা মুহাম্মাদ বিন আল হানাফিয়্যাহকে ইমাম হিসাবে ঘোষণা করে এবং তাঁকে প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদি হিসাবে ঘোষণা করে। তারা বিশ্বাস করে আল হানাফিয়্যাহ পাহাড়ের আড়ালে অজানা গন্তব্যে চলে গেছেন এবং কিয়ামাতের আগে তিনি আবার আবির্ভূত হবেন মাহদি হিসাবে। এই সেক্টটির নাম 'আল কিসানিয়্যাহ'।

• যাইনুল আবিদিনের মৃত্যুর পর অধিকাংশ শিয়া তাঁর পুত্র মুহাম্মাদ আল বাকিরকে ইমাম হিসাবে মেনে নেয়। তবে একটি গ্রুপ তাঁকে না মেনে যাইনুল আবিদিনের আরেক পুত্র যাইদ আল শহীদকে ইমাম হিসাবে নেয়। এদের 'যাইদি' বলা হয়।

মুহাম্মাদ আল বাকিরের পর তাঁর পুত্র জাফর সাদিক এবং জাফর সাদিকের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুসা আল কাজিমকে ইমাম হিসাবে অধিকাংশ মেনে নেয়। কিন্তু একটি গ্রুপ জাফর সাদিকের জীবীত অবস্থায় প্রয়াত পুত্র ইসমাইলকে ইমাম হিসাবে ঘোষণা করে। এদের বলা হয় 'ইসমাইলি'।

অনেকে মুসা আল কাজিমকে না মেনে ষষ্ঠ ইমামের অন্য দুই পুত্র আব্দুল্লাহ আল আলতাফ এবং মুহাম্মাদ এই দুজনকেই ইমাম হিসাবে মেনে নেয়। তবে অনেকে এদেরকে না মেনে এবং এরপর আর কোন ইমামকেই না মেনে ইমামতের শেষ হয়েছে বলে দাবী করে এবং ইমামত থেকে তাদের বিশ্বাস প্রত্যাহার করে।

• মুসা আল কাজিমকে হত্যা করা হয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর অনেকে মুসার পুত্র আলী আর রিদাকে ইমাম হিসাবে মেনে নেয়। কিন্তু এবার অনেক শিয়া আলী আর রিদাকে ইমাম হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং ইমামকে মেনে নেয়া থেকে তাদের বিশ্বাস প্রত্যাহার করে। এদের বলা হয় 'আল ওয়াক্বিফিয়া' বা সাত ইমামের অনুসারী।

• অষ্টম ইমাম হিসাবে আলী আর রিদার পর আকস্মিকভাবে আহলে বাইত থেকে আর কোন ইমামকে না মেনে বাকী চার ইমাম কিয়ামাতের আগের প্রতিশ্রুত মাহদি বলে তাদের পুরানো ধারা থেকে সরে আসে।

বারো ইমামের এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না যদি তারা রাসুলুল্লাহ সাঃ বর্ণিত হাদিসের মূল কথাটাকে মেনে নিত যেখানে তিনি সকল সত্যপন্থী খলিফাহকে আহলে বাইতের সদস্য না বলে কুরাইশ বলেছিলেন। এখন দেখে নেয়া যাক সুন্নী স্কলারগণ এই বারো নেতা সম্পর্কে কি বলেছেন।

অধিকাংশ সুন্নী স্কলার বলেছেন এই বারোজনের পরিচয় রাসুলুল্লাহ সাঃ কুরাইশ হিসাবে বলে দিলেও তাদের সময়কাল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। সকলেই এই ব্যাপারে একমত যে ইসলামের প্রথম চার খলিফা আবু বকর, উমার, উসমান ও আলী রাঃ এই বারোজনের প্রথম চার জন যা 'খুলাফায়ে রাশিদা' হিসাবে আসা অন্য হাদিসের আলোকে পরিস্কার হয়। এর বাইরে বিখ্যাত নিষ্ঠাবান ও তাক্বওয়াবান উমাইয়্যা খলিফা উমার বিন আবদুল আজিজকে সকলেই পঞ্চম হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ আলীর পর হাসান রাঃ কে পঞ্চম উল্লেখ করে উমার বিন আবদুল আজিজকে ষষ্ঠ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। সকলেই একমত যে এই চেইনের বারোতম খলিফা হলেন প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদি। বাকী কারা? সকলেই বলেছেন এই জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে। আবু বকর থেকে শুরু করে মাহদি পর্যন্ত বাকী সময়ে তাদেরই মতো নিজের জীবনের চেয়ে আল্লাহ্ ও ইসলামকে বেশী ভালোবাসা তাক্বওয়াবান সেই খলিফাহদের তালিকা হয়তো মানুষ চেষ্টা করে কিয়ামাতের আগেই করতে পারবে, তার আগে নয়।

কুরআনের বিকৃতিঃ

আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন "নিশ্চয়ই আমি নিজে এ কুরআন নাজিল করেছি এবং আমি নিজেই এর হিফাজত করবো” (সুরা আল হিজর ১৫/৯)।

এ আয়াত বাহ্যিকভাবে বিশ্বাস করার পরও শিয়ারা কুরআনের বিকৃতির এক ভয়াবহ নজির তৈরী করেছে। তাদের একটি অংশের (আল্লাহ্ ভালো জানেন পুরো শিয়া জাতির কিনা) বিশ্বাস যে, বর্তমানের যে কুরআন পৃথিবীতে আছে, তা সম্পূর্ণ নয়। বরং আবু বকর ও উসমান রাঃ সহ সাহাবাগণ কুরআনের দুটি সুরা গোপন করেছেন। এই দুটি সুরা হলো-

'সুরা আল বিলায়াত বা বিলায়াহ (বাংলায় 'ব' দিয়ে শুরু হলেও আরবীতে 'ওয়াও' দিয়ে শুরু যার ইংরেজিতে উচ্চারণ সঠিক হবে Wilayyah)' এবং 'সুরা আন নূরাইন'।

বিখ্যাত শিয়া আ'লিম মির্জা মুহাম্মাদ তাক্বী আল নূরী ১২৯৮ হিজরীতে ইরান থেকে প্রকাশিত তার 'ফাজল আল কিতাব ফি ইসবাত তাহরিফ কিতাব রাব্বিল আরবাব' বইতে একথা উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য অনেক শিয়া আ'লিমও একই কথা লিখেছে তাদের বিভিন্ন বইতে। যেমন মুহসিন ফা'নি আল কাশ্মিরি রচিত 'দাবস্তান মাজহাহিব', মির্জা হাবিবুল্লাহ আল হাশিমি আল খো'ই রচিত 'মানহাজ আল বারাহ আল শরহ নজহ আল বালাঘ', মুহাম্মাদ বাকির আল মাজলিসি রচিত 'তাদক্বিরাত আল আ'ইম্মাহ' ইত্যাদি। মূলতঃ শিয়াদের ভিতরে এ বিশ্বাস প্রকট এবং আত তাকিয়াহ নামের একটি গোপন বিশ্বাসের কারণে তারা তা প্রকাশ করতে চায় না।

'আল কাফি' নামের একটি শিয়া বইয়ে ইমাম জাফর সাদিকের (হজরত হুসাইন রাঃ এর প্রপৌত্র ও তাঁর পুত্র ইমাম জাইনুল আবিদিনের পুত্র) ভাষ্য উল্লেখ করা হয়েছে যা আরো ভয়াবহ। সেখানে লেখা হয়েছে, একটি লোককে কুরআন প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, "তোমাদের কাছে যে কুরআন আছে তা ফাতিমা'র কুরআন থেকে অনেক আলাদা"। লোকটি জিজ্ঞেস করলো, “ফাতিমার কুরআনটা কি”? তিনি বললেন, "তা হলো তোমাদের কুরআনের তিনগুন এবং তোমাদের কুরআনের একটি শব্দও ওর ভিতরে নেই"।

লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো এই যে নানাভাবে কুরআনের এই বিকৃতির কথা প্রকাশ করলেও একান্তে নিজেদের ভিতর ছাড়া কুরআনের ওই দুটো বানোয়াট সুরা সম্বলিত কুরআন তারা কখনোই সকলের সামনে প্রকাশ করে না।

গাদীর খুম

হুজাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) এর বরাতে সহীহ মুসলিমের ফিতনাহ অধ্যায়ে একটি হাদীস এসেছে যেখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, "ফিতনার দরজা এক সময় ভেঙে ফেলা হবে (খুলে দেয়া নয়, একেবারে ভেঙে ফেলা, যা আর কখনো থামানো যাবে না)"। তিনি এই দরজাটির কথাও বলে গিয়েছিলেন। এই দরজা ছিলেন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)। অর্থাৎ উমার রাঃ এর জীবনকাল পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর

ভেতরে কোন ফিতনা থাকবে না। উম্মাহ হবে একক ও ঐক্যবদ্ধ। উমার রাঃ মৃত্যুর পর উসমান ইবন আফফান (রাঃ) যখন খলিফা, সে সময় কুফায় এসে একজন লোক ঘাঁটি গাড়লো যার নাম আবদুল্লাহ বিন সাবাহ। দুহাতে দান করা থেকে শুরু করে মানুষের মন জয় করার জন্য যা যা করা দরকার তার কিছুই করতে এই লোকটি বাদ রাখেনি।

অল্পদিনেই কুফার অগণিত মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় তার আসন নিশ্চিত হলো। তার নামটি মুসলিমের মতো শোনালেও প্রকৃতপক্ষে সে ছিলো একজন ইয়াহুদী গুপ্তচর (তখনকার সময়ে আরবীয় অঞ্চলের মুসলিম, খৃষ্টান, ইয়াহুদী কিংবা মুশরিক সকলের নামই এমন ছিলো)।

এক সময় যখন ইবন সাবাহ তার আসন সম্পর্কে নিশ্চিত হলো, তখন সে ধীরে ধীরে মানুষকে উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে লাগলো। তার মূল এজেন্ডা ছিলো এই যে, উসমান রাঃ অন্যায়ভাবে আলী রাঃ এর প্রাপ্য খিলাফত নিজের অধিকারে নিয়ে নিয়েছেন। রাসুলের পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসাবে মূলতঃ আলীরই খলিফা হওয়া উচিৎ। আহলে বাইত বা রাসুল পরিবারের মতো এমন একটি স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে সে অল্পদিনের ভেতর মানুষকে উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে সক্ষম হলো। আর এরই ভিতর দিয়ে যেন ভেঙে গেলো ফিতনার দরজা, চিরতরে।

শিয়া মতবাদের পত্তন হলো পৃথিবীর বুকে।

মুসলিম খিলাফতের রাজধানী মদীনায় পৌঁছে গেলো এ খবর, পৌঁছালো স্বয়ং খলিফা উসমান রাঃ এর কানেও। মজলিশে শুরার সদস্য সাহাবাগণ এগিয়ে এলেন যার ভিতরে স্বয়ং আলী রাঃ ও ছিলেন। তারা উসমান রাঃ কে তৎক্ষণাৎ বাহিনী পাঠিয়ে ইবন সাবাহকে শায়েস্তা করার পরামর্শ দিলেন। কোমল হৃদয় উসমান প্রত্যাখ্যান করলেন তা। অল্পদিনের ভিতরই আবদুল্লাহ বিন সাবাহ বাহিনী সশস্ত্র অবস্থায় মদীনা প্রবেশ করলো। খলিফার কাছ থেকে এবারো কোন বাধা না পেয়ে এক সময় তারা হত্যাই করে বসলো রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দুই কন্যার স্বামী এবং পৃথিবীতে বসে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া সাহাবী উসমান রাঃ কে। মুসলিম উম্মাহ দেখতে শুরু করলো ফিতনার কদর্য রূপকে।

এরপর পেরিয়ে গেছে বছরের পর বছর, শতাব্দীর পর শতাব্দী। মুসলিম নাম ধারণ করে আবদুল্লাহ বিন সাবাহর অনুসারী একদল লোক ইসলামকে ধ্বংসকারীদের সাথেই চিরকাল হাত মিলিয়ে চলেছে শিয়া সেক্ট হিসাবে। এদের বিধ্বংসী বিশ্বাস হতবাক করেছে অগণিত মুসলিমকে। তবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ঘোষণা মতো অন্য অনেক ফিতনার মতো এই ফিতনাও কখনো নির্মূল করা যায়নি।

'গাদীর খুম' এর হাদীস এবং এর বিকৃতি- শিয়া বিশ্বাসের অন্যতম ভিত্তিঃ

গাদীর খুম হলো সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য কয়েকটি হাদীস গ্রন্থে উল্লেখিত একটি কুপ বা কুয়ার নাম। এখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ আলী রাঃ এর ব্যাপারে কিছু কথা বলেছিলেন। এই হাদীস না শুনে থাকলেও তা দোষের কিছু নয়। তবে শিয়া স্টান্টবাজির অন্যতম হলো যে, তাদের সাথে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করলে সাধারণ মুসলিমদের এই বিষয়ে অজ্ঞতার সুযোগে তারা কিছুটা বিকৃত করে এই হাদীস শুনিয়ে আপনাকে বোকা বানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। এমনকি কোন শিয়াকে যদি তার স্বপক্ষে একটি দলীল দেবার কথা বলা হয় তাহলে সে এ হাদীসকে উল্লেখ করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। এজন্য সবার এ বিষয়ে সতর্ক থাকাটা উচিৎ। হাদীসটি আলোচনা করার আগে এই হাদীসের পূর্বকার প্রেক্ষাপট আলোচনাও জরুরী। এর প্রেক্ষাপট অনেক হাদীস গ্রন্থ এমনকি শিয়াদের লেখা কিছু গ্রন্থেও এসেছে।

রাসুলুল্লাহ সাঃ তিনশ যোদ্ধার এক বাহিনী আলী রাঃ এর নেতৃত্বে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে সে দলটি বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ করে। আলী রাঃ গণিমতের অংশ থেকে খুমুস (পাঁচভাগের এক অংশ) আলাদা করে রাখেন যার ভিতরে বিপুল পরিমাণ লিলেনের কাপড়ও ছিলো। সাহাবাদের ভেতর থেকে অনেকে সেই কাপড় থেকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তাদের কিছুটা ধার দেয়ার জন্য আলী রাঃ কে অনুরোধ করেন। এর কারণ হলো দলটি সেখানে তিনমাস অবস্থান করছিলো এবং তাদের ব্যবহার্য কাপড়ও যথেষ্ট ছিলো না। কিন্তু আলী রাঃ তা দিতে অস্বীকার করেন এবং তা সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হাতে তুলে দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এর কিছুদিন পরে আলী রাঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে হজ্জে যোগদানের জন্য তাঁর ডেপুটিকে কমান্ড হস্তান্তর করে মক্কার উদ্দেশ্যে চলে যান। আলী রাঃ চলে যাবার পর সেই ডেপুটি কমান্ডার সবদিক বিবেচনা করে সৈন্যদলকে লিলেনের কাপড় ধার দেবার সিদ্ধান্ত নেন। অল্পদিন পরে পুরো দলটিও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে যোগ দেয়ার জন্য রওয়ানা করে। দলটির আগমনের খবর পেয়ে আলী রাঃ মক্কা থেকে বেরিয়ে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে আসেন। কাছে এসে তিনি দেখতে পান তাদের গায়ে সেই লিলেনের পোষাক। আলী রাঃ অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন এবং তাদের নির্দেশ দেন তৎক্ষণাৎ সে পোষাক খুলে পুরাতন পোষাক পরার জন্য। আলীর নির্দেশ মান্য করলেও দলটির নেতা সহ সকলেই খুব ক্ষুব্ধ হয়।

খবরটি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কানে গিয়েও পৌঁছায়। শুনে তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, "তোমরা আলীর উপর রাগ করোনা। সে আল্লাহর পথে এতোটাই নিবেদিত একজন লোক যে, এ ব্যাপারে তাকে দোষ দেয়া যায় না"। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর এই বাণীও দলটির অনেক সদস্যের রাগ প্রশমন করতে পারলো না (হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী বুরাইদাহ রাঃ ও এর ভেতর একজন)। দোষারোপ চলতেই থাকলো। মক্কা থেকে মদীনা ফেরার পথে এ দলটি গাদির খুম নামের এক কুপের কাছে যাত্রাবিরতি করলো। সেখানে আলীর নামে আবার অভিযোগ তোলা হলো। এবার রাসুলুল্লাহ সাঃও ক্ষুব্ধ হলেন ও লোকদের ডেকে আলী সম্পর্কে বললেন। মোটামুটি এই হলো গাদির খুম হাদীসের প্রেক্ষাপট। এবার আসা যাক সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত গাদির খুম হাদিসের বর্ণনাতে। হাদিসের বর্ণনাকারী হলেন বুরাইদাহ রাঃ যিনি ইয়েমেনে পাঠানো দলটির একজন সদস্য ছিলেন।

বুরাইদাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ আলী কে খালিদের (বিন ওয়ালিদ) কাছে পাঠালেন খুমুসের (যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ) অংশ আনার জন্য, এবং আলীকে আমি অপছন্দ করতাম। আলী খুমুসের অংশের একজন যুদ্ধবন্দীর (যা তাকে রাসুল দিয়েছিলেন) সাথে মিলনের পর গোসল সেরেছিলেন। তা দেখে আমি খালিদকে বললাম, "তুমি কি দেখছো না (যে আলী খুমুস থেকে অংশ নিয়ে ব্যবহার করছে)"? আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে পৌঁছালাম তখন আমরা তাঁকে এ ব্যাপারটা বললাম। তিনি আমাকে বললেন, “ওহে বুরাইদাহ, তুমি কি আলীকে ঘৃণা করো"? আমি বললাম “হ্যাঁ”। তিনি বললেন, "তুমি তাকে এজন্য ঘৃণা করছো, অথচ খুমুস থেকে এর চেয়ে বেশীই তার প্রাপ্য"।

এইটুকু হলো বুখারী ও মুসলিমের হাদীস। এর অতিরিক্ত কিছু অংশ নানা বর্ণনায় অন্য হাদীস গ্রন্থে এসেছে যার ভিতরে দুটি ভাষ্য সহীহ বলে অল্প কয়েকজন স্কলার বলেছেন, যদিও ইবন তাইমিয়াহ সহ সকল প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস এর বাইরের কোন বর্ণনাকে সহীহ বলেননি। এখানে আলোচনার স্বার্থে আমরা দুটি অতিরিক্ত বর্ণনাকে সহীহ ধরে নিচ্ছি যে দুটি হলো-

১। এরপর রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, "মান কুনতু মাওলা ফী আলী মাওলা (যার মাওলা আমি, আলীও তার মাওলা)"

২। রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, “আল্লাহুম্মা ওয়ালী মান ওয়ালাহ ওয়া আদি মান আদাহ (ও আল্লাহ্, আএ তার (আলী) বন্ধু, তুমি তার বন্ধু হও আর যে তার প্রতি শত্রুতা রাখে তুমি তার শত্রু হও)"।

এই দুটি অতিরিক্ত বর্ণনার বাইরেও এই হাদীসের আরো অনেক বাড়তি বর্ণনা রয়েছে যার সবই শিয়াদের তৈরী বা জাল করা। অধিকাংশ শিয়া স্কলার রেফারেন্স হিসাবে এই দুই বর্ণনার অতিরিক্ত অতিরঞ্জিত বর্ণনাগুলো বলেন না। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো যে, গাদির খুমের হাদীসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে তারা বুখারী ও মুসলিমের রেফারেন্স উল্লেখ করলেও প্রায় সকল ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বর্ণনাগুলি একই সাথে চালিয়ে দেয় যদিও সেগুলো বুখারী-মুসলিমে নেই।

যাহোক, অতিরিক্ত দুটি বর্ণনার মূল আলোচ্য অংশ হলো 'মাওলা' শব্দটি। আরবী ভাষায় অনেক শব্দেরই একাধিক অর্থ থাকে যার কোন কোনটির থাকে অনেক অর্থ। মাওলা হলো এমনই একটি শব্দ যার রয়েছে বেশ কয়েকটি অর্থ। আর এই বহু অর্থেরই সুযোগ গ্রহণ করেছে শিয়ারা অন্যায়ভাবে। যেমন 'মাওলা' এর অর্থ হতে পারে কর্তা, মালিক, বন্ধু, ভালোবাসার মানুষ, আযাদকৃত দাস, দাস, কাজিন ইত্যাদি। মাওলা দিয়ে যেমন বন্ধু বুঝায় একই শব্দ দিয়ে এমনকি আল্লাহকেও বুঝায় বাক্যের গতি অনুসারে। এখানে মাওলা শব্দের অর্থ 'ভালোবাসার মানুষ' হিসাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ ব্যবহার করেছেন, যা শিয়ারা না মেনে বরং 'ইমাম', 'খলিফা' কিংবা 'ক্ষমতার উত্তরাধিকারী' হিসাবে এর অর্থ করে। তবে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো এই যে, পরের অংশটিতে মাওলা শব্দের অর্থ পরিস্কার হয়ে যায়। আসুন আবার দেখে নেয়া যাক। রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, "আল্লাহুম্মা ওয়ালী মান ওয়ালাহ ওয়া আদি মান আদাহ (ও আল্লাহ্, যে তার (আলী) বন্ধু, তুমি তার বন্ধু হও আর যে তার প্রতি শত্রুতা রাখে তুমি তার শত্রু হও)"।

গাদির খুমের হাদীস নিয়ে শিয়া বাড়াবাড়ির ভয়াবহতা সত্য থেকে তাদের অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। খিলাফতের উত্তরাধিকারের মতো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার রাসুলুল্লাহ সাঃ এমন কুয়াশাচ্ছন্ন কথা দিয়ে মুড়িয়ে রাখবেন তা হতে পারে না এবং তা রাসুল সাঃ এর ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না। গাদির খুমের ঘটনাটি যখন ঘটেছে তখন সেখানে ছিলো মদীনাবাসী সাহাবাগণ। এর সামান্য কিছুদিন আগে বিদায় হজ্জে তিনি মক্কা, মদীনা নির্বিশেষে সকল সাহাবাকে কাছে পেয়েছেন। সে হিসাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণার জন্য বিদায় হজ্জের ভাষণ ছিলো সেরা সময়, কিন্তু তিনি তখন এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি। এই সময়ের আগে কিংবা পরে অসংখ্যবার মুহাজির ও আনসার শীর্ষস্থানীয় সাহাবগণ রাসুলের সাথে বিভিন্ন সময় বসেছেন এবং পরামর্শ করেছেন। আলী রাঃ'র খলিফা বা তাঁর সাক্সেসর হবার মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা রাসুল সাঃ কাউকে বলেননি।

গাদির খুমের ঘটনায় রাসুল সাঃ আলী সম্পর্কে যেভাবে বলেছেন, একইভাবে কিংবা এর চেয়ে জোরালোভাবে তিনি অন্য সাহাবাদের প্রসঙ্গেও অনেকবার বলেছেন। আবু বকরের কথা সরাসরি কুরআনে এসেছে। উমার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “আল্লাহর শপথ উমার, তুমি যে পথে হাঁটো, শয়তান সে পথে আসেনা" (বুখারী)। উমার রাঃ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেছেন, "আমার পর যদি কোন নবী হতো তা হতো উমার"। তিনি আরো বলেছেন, "উমারের সাথে যদি কেউ রাগান্বিত হলো সে যেন আমার উপর রাগান্বিত হলো এবং উমারকে যে ভালোবাসলো, সে যেনো আমাকেই ভালোবাসলো"। উমার রাঃ এই হাদিসগুলো জানার পরও এগুলোকে তার প্রথম খলিফা হিসাবে মনোনয়নের জন্য ব্যবহার করেননি বা করতে দেননি।

আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, "প্রত্যেক নবীর উম্মাহর মধ্যে একজন থাকে যে হয় ওই উম্মাহর সবচেয়ে বিশ্বস্ত। আমার উম্মাতের ভেতর সেই লোকটি হলো আবু উবাইদাহ”। মুয়াজ ইবন জাবাল রাঃকে তিনি বলেছেন, “ওহে মুয়াজ, তুমি হলে আমার ভালোবাসার একজন”। আবু জর আল গিফারী রাঃ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, "আকাশের নীচে এবং মাটির উপর আবু জরের চেয়ে সত্যবাদী আর কেউ নেই"।

এভাবে রয়েছে অসংখ্য উদাহরণ। সুতরাং চাইলে এমন প্রতিজন সাহাবাকে কেন্দ্র করে এক একটি শিয়ার মতো মতবাদ তৈরী করা যাবে। বুখারী-মুসলিমে উল্লেখিত গাদির খুমের এই হাদীসকে শিয়ারা এতো গুরুত্ব দেয় যে, তারা হাদীসের ঘটনার দিন-ক্ষণ বের করে প্রতি চান্দ্র বছরের ওই দিনটিকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করে যার নাম 'ঈদে গাদির'। অসংখ্য শিয়া ইনোভেশন বা বিদ'আতের ভেতর ঈদে গাদিরও একটি।

গাদির খুম আলোচনার শেষে একটি কথা না বলে পারছিনা। বুখারী, মুসলিম হলো হাদীস গ্রন্থের ভিতর সবচেয়ে বিশুদ্ধ যা শিয়ারা পুরোপুরি বিশ্বাস করে না। তারা তাদের রচিত জাল ও বানোয়াট হাদীস ভরা কিছু বই ও এর হাদীস সহীহ বলে ঘোষণা দেয়। সেসব হাদীসে আলী রাঃ কে সরাসরি খলিফা হিসাবে উল্লেখ করে অনেক হাদীস আছে। তাহলে তারা কেনো সেসব হাদীসের দিন-ক্ষণ বের করে সেগুলোর একটাকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করেনা? এতে করে তাদের তৈরী করা হাদিসের প্রতি বিশ্বাসের ভেতরটা পরিস্কার বোঝা যায়।

শিয়াদের ব্যাপারে হযরত আলী (রা) এর সতর্কবার্তা

৩৪ হিজরি সালে ইবনে সাবা'র অনুসারীরা ইরাক, মিশর থেকে দলে দলে বিদ্রোহী বাহিনী নিয়ে জমা হয় এবং উসমান (রা)কে ঘেরাও করে; কোন একফাঁকে ঘরে ঢুকে শহীদ করে দেয়। এরপরে পরিস্থিতির প্রবাহে আলী (রা) খিলাফত গ্রহণ করেন। তখন থেকে সাবাঈ কাফেররা তাঁকে ঘিরে রাখে, ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে এবং আলি (রা) এর খিলাফত ফরজ- এই কুফরি আকিদার জন্ম দিয়ে শিয়া ধর্ম সৃষ্টি করে।

সাহাবাদের ব্যাপারে কুৎসা এবং পূর্ববর্তী খলিফা- আবু

বকর (রা) ও উমর (রা) এর খিলাফতকে বাতিল দাবি করাও শুরু হয় এই সময় থেকেই। বিশেষ করে ইরাকের কুফা শহর থেকে এই ধরণের কুৎসিত কিচ্ছা বাতিল আকিদা ছড়াতে থাকে। এক পর্যায়ে অনেকের মনে হতে থাকে যে আলি (রা)ও বুঝি এসবের অনুমোদন দিয়েছেন! কিন্তু আলী (রা) আমৃত্যু কাফের-মুশরিকদের এইসব ইমামি আকিদা, সাহাবীদের কুৎসা করার চরম বিরোধিতা করে গিয়েছেন। কখনো ইবনে সাবা'র অনুসারীদের আগুনে জ্বালিয়েছেন, কাউকে নির্বাসনে দিয়েছেন, যখনই কাউকে পূর্বের সাহাবীদের খারাপ বলতে শুনেছেন তাকে তিরষ্কার করেছেন।

একজন সাহাবী'র জিজ্ঞাসার জবাবে আলী (রা) কি বলেছেন, তা দেখিঃ-

সুওয়াইদ বিন গাফলাহ (রা) হতে বর্ণিত, “ আমি কুফার কোন এক পথে যাওয়ার সময় শুনলাম কিছু লোক আবু বকর ও উমর (রা) সম্পর্কে বিরূপ সমালোচনা করছে। আমি তা আলী (রা) এর নিকট গিয়ে বললাম- আমিরুল মু'মিনীণ! আপনার সেনাবাহিনীর কিছুলোক আবু বকর (রা), উমর (রা) প্রভৃতি উচ্চস্থানীয় সাহাবাদের সম্পর্কে এমন কথা বলছে যা তাদের বলা উচিত না। আমার মনে হয় আপনিও তাদের সম্বন্ধে এমন ধারণা পোষণ করেন, তা না হলে তারা এমন কথা বলার সাহস পেল কোথায়?

হযরত আলী (রা) বললেন- নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! তাদের প্রতি আমার মনে কোন প্রকার খারাপ ধারণা পোষণ করা থেকে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তাদের ভালবাসায় তো আমার অন্তর পরিপূর্ণ। যে ব্যক্তি তাদের প্রতি ভাল ব্যতীত মন্দ ভাব পোষণ করে তাদের প্রতি আল্লাহ্ লা'নত। তাঁরা তো রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর সাহাবা, বন্ধু এবং পরামর্শদাতা ছিলেন।

তারপর তিনি অঝোর নয়নে কাঁদতে কাঁদতে মসজিদের মিম্বরে গিয়ে বসলেন এবং সাদা দাড়ি নাড়াচাড়া করতে করতে তার দিকে লক্ষ্য করছিলেন। লোকজন সমবেত হলে الله তিনি দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর প্রশংসা করে বললেন-

কিছু লোকের এ কেমন ব্যবহার যে তারা কুরাইশ মুহাজিরদের নেতা আবু বকর ও উমর সম্পর্কে এমন সব উক্তি করে যা আমার মতে খুবই অপছন্দনীয় এবং আমি এসব থেকে মুক্ত। তাদের এইসব উক্তির জন্য আমি তাদেরকে শাস্তি দিব।

বীজ পরিস্ফুটনকারী ও জীবনদাতার কসম! আবু বকর ও উমরকে কেবল মু'মিন মুত্তাকীরাই ভালবাসবে; আর ফাসেক ও দ্বীনের ব্যাপারে সন্দেহকারীরাই তাঁদের ঘৃণা করবে।

তাঁরা পূর্ণ সততা এবং আনুগত্যের সাথে হযরত রাসূল (ﷺ) এর সাহচর্যের হক্ক আদায় করেছেন। তাঁরা কখনো রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর আদেশ-নিষেধের বিরোধিতা করেন নাই। তাঁরা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা রাগান্বিত হতেন, শাস্তি দিতেন কিন্তু নবী(ﷺ) এর রায়ের সীমালঙ্ঘন করতেন না। রাসূল (ﷺ) ও তাঁদের রায়ের উপরে কারো রায়কে প্রাধান্য দিতেন না, অন্য সবার চেয়ে তাঁদেরকে বেশি স্নেহ করতেন। তাঁদের উপরে সন্তুষ্ট অবস্থায়ই রাসূলুল্লাহ )ﷺ( ইন্তেকাল করেন। তাঁরাও সকল মুসলমানের সন্তুষ্টির উপর এই পৃথিবী ত্যাগ করেন। রাসূলুল্লাহ )ﷺ( মৃত্যুশয্যায় শায়িত থেকে আবু বকর (রা) কে ইমামতি করার আদেশ দেন। নবী(ﷺ) এর জীবদ্দশায় আবু বকর (রা) নয় দিন নামাজে ইমামতি করেন।

রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর ইন্তেকালের পর মু'মিনগণ আবু বকরকে নিজেদের মুতাওয়াল্লী এবং আল্লাহ্র রাসূলের খলিফা নিযুক্ত করেন। বনী আব্দুল মুত্তালিব পরিবারের মধ্যে আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে আবু বকরের আনুগত্য স্বীকার করে।

এ সত্ত্বেও আবু বকর (রা) খিলাফতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। কারণ তার ইচ্ছা ছিল আমাদের (বনু হাশিম) মধ্যে কেউ যেন খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর ইন্তেকালের পর যারা জীবিত ছিলেন আবু বকর ছিলেন তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তিনি সকলের চেয়ে দয়ালু ছিলেন, সকলের চেয়ে নিষ্ঠাবান ও আল্লাহীরু ছিলেন। করুণার দিক থেকে রাসূল(ﷺ) তাঁকে মিকাঈলের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি সকল কাজে রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভ করেছেন।

এরপরে উমর (রা) বিষয়সমূহের ওয়ালী হলেন; প্রথমে যারা তাঁর খিলাফতে রাজী ছিলেন আমিও তাঁদের মধ্যে একজন ছিলাম। উটনীর পিছনে যেমন তার বাচ্চা চলে, তেমনি উমর রাসূলুল্লাহ(ﷺ) ও আবু বকর (রা)'র পদাঙ্ক অনুসরণ করে গিয়েছেন।

উমর ছিলেন মু'মিন ও দুর্বলদের প্রতি মেহেরবান, উৎপীড়িতের জন্য বন্ধু এবং অত্যাচারীর প্রতি কঠোর হস্ত। আল্লাহ্র কোন কাজে তিনি কাউকে ভয় পেতেন না। আল্লাহ্ তাআলা সত্যকে তাঁর জিহবায় স্থান দিয়েছিলেন, তাঁর প্রত্যেক কাজেই সততা প্রকাশ পেত। আল্লাহ্র শপথ এমনকি আমাদের মনে হত যে আল্লাহ্ যেন তাঁর কোন ফেরেশতা মারফত উমরের জিহবা দ্বারা সব কিছু বলছেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ দ্বারা আল্লাহ্ ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন, তাঁর হিজরতে দ্বীনের স্তম্ভ এতটাই মজবুত হয়েছে যে, মুনাফিকরা সদা ভীতসন্ত্রস্ত থাকত। রাসূলুল্লাহ(ﷺ) তাঁকে জিবরাঈলের সাথে তুলনা করেছেন যে- আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র রাসূলের(ﷺ) শত্রুর উপর তিনি ছিলেন খড়গহস্ত। আল্লাহ্ তাআলা এই সাহাবদ্বয়ের প্রতি করুণা বর্ষণ করুন এবং আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে তাঁদের অনুসরণ করার তাউফিক দান করুন।

নিশ্চয়ই যে আমাকে ভালবাসে সে তাঁদেরকেও ভালবাসবে। যারা তাঁদেরকে (আবু বকর ও উমর রা.) ভালবাসে না তারা আমার শত্রু, আমি তাদের থেকে দায়মুক্ত। আমি যদি আগেই একথা তোমাদের বলে রাখতাম তবে আজকে যারা তাঁদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলে তাদের শাস্তি দিতাম। আজকের দিনের পর যারা তাঁদের (আবু বকর ও উমর রা.) সম্পর্কে কোন খারাপ কথা বলবে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিব।

নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এর পরে এই উম্মতের মধ্যে আবু বকর এবং উমরই ছিলেন শ্রেষ্ঠস্থানীয়। এরপরে কোথাকার পানি কোথায় গড়ায় তা আল্লাহই ভাল জানেন। আমি আল্লাহ্র কাছে আমার ও তোমাদের জন্য ক্ষমা চাইছি।

[শরহে উসুলুল ই'তিকাদ-আলকাঈ, রি-২৪৫৬; তারিখে বাগদাদ ১৭৯/১০; আশ শারিয়াহ লি-আজুরি, রি-১২০৮; আসাদুল গাবা ১৫৬/৪; তারিখে দামেশক ৩৬৬/৪৪]
 

Attachments

  • FB_IMG_1719394866311.webp
    42.4 KB · Views: 20
COMMENTS ARE BELOW

Abdul Noor Nassif

New member

Threads
1
Comments
3
Solutions
1
Reactions
9
Credits
224
এই লাইনটা বুঝিনি। ঠিক করে দিন।
 

Farhad Molla

Susceptible

Exposer
Q&A Master
Reporter
Salafi User
Threads
149
Comments
228
Solutions
1
Reactions
1,492
Credits
1,385
এই লাইনটা বুঝিনি। ঠিক করে দিন।
লাইনটা এরকম হবে লিখতে ভুল হয়েছে |

" কেন শিয়ারা হাসান রা ও আলী রা এর সকল ছেলেকে বাদ দিয়ে কেন হোসাইন রা এর প্রতি সম্মান শ্রদ্ধা ও ভক্তি দেখায় ? এর কারণ শিয়া রাফিজিদের কথিত ১২ জন ইমাম সকলেই হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু এর বংশধর | "

আশাকরি বুঝতে পেরেছেন
 

Share this page