• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

রাসূল (ﷺ)-এর বিস্ময়কর মু‘জিযা

মুহাম্মাদ (ﷺ) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর অনেক মু‘জিযা বা অলৌকিক ঘটনা ছিল। যা হাদীছের কিতাবে সংকলিত হয়েছে। এখানে ঐসব ঘটনার কয়েকটি পেশ করা হ’ল। -

ইয়া‘লা ইবনু মুররাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) থেকে এমন কিছু দেখেছি যা আমার পূর্বে ও পরে অন্য কেউ দেখেনি। একদা আমি রাসূল (ﷺ)-এর সাথে কোন এক সফরে বের হ’লাম। কিছু পথ চলার পর আমরা রাস্তায় বসে থাকা এক মহিলাকে অতিক্রম করলাম। তার সাথে তার ছোট শিশু ছিল। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এই যে আমার সন্তান, তাকে বিপদ পেয়ে বসেছে। তার কারণে আমরাও বিপদে নিমজ্জিত। আমার জানা নেই, তাকে দিনে কত বার আক্রমণ করে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এই যে আমার সন্তান, তার পাগলামী রয়েছে। সাত বছর ধরে শয়তান তাকে প্রত্যহ দু’বার করে আক্রমণ করে। তিনি বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে নিয়ে এসে তাঁর বাহন বরাবর উঁচু করে ধরলাম। তিনি তার দু’হাত ধরে তিনবার ফুঁক দিয়ে বললেন, (بِسْمِ اللهِ أَنَا عَبْدُ اللهِ اخْسَأْ عَدُوَّ اللهِ) ‘আমি শুরু করছি আল্লাহর নামে, আমি আল্লাহর বান্দা, হে আল্লাহর শত্রু দূর হও’। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমি আল্লাহর রাসূল বলছি, হে আল্লাহর শত্রু দূর হও’। অতঃপর তিনি তাকে তার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ফিরে আসার পথে এই স্থানে তুমি আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে তার কর্মকান্ডের সংবাদ দিবে। (অন্য বর্ণনায় আছে, তোমার সন্তান গ্রহণ কর, এখন তার কোন রোগ নেই। আর যেটা তার হচ্ছিল তা আর ফিরে আসবে না (মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৪১৬৫)

বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সেখান থেকে চলে গেলাম। আমরা ফিরে আসার সময় তাকে সে স্থানে তিনটি ছাগল (অন্য বর্ণনায়) ঘি ও পনির সহ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, তোমার ছেলের কী অবস্থা? সে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ করে বলছি, এ পর্যন্ত আমরা তার থেকে আর কোন কিছু অনুভব করিনি। অতএব আপনি এ ছাগলগুলো মজুরী হিসাবে গ্রহণ করুন। রাসূল (ﷺ) আমাকে বললেন, যাও ঘি, পনির এবং একটি ছাগল গ্রহণ করে বাকীগুলো ফেরত দাও।

রাবী বলেন, একদা আমরা রাসূল (ﷺ)-এর সাথে জাববানাহ এলাকায় বের হ’লাম। সেখানে পৌঁছলে আমরা প্রাকৃতিক হাজত সম্পন্ন করার প্রয়োজন অনুভব করলাম। রাসূল (ﷺ) আমাকে বললেন, লক্ষ্য করে দেখো এমন কিছু আছে কি যা আমাকে পর্দা করবে? আমি বললাম, আমি একটি গাছ ব্যতীত এমন কিছু দেখছি না, যা দ্বারা আপনি নিজেকে পর্দা করবেন। তিনি বললেন, সেটির নিকটে কি আছে? আমি বললাম, তার মতো বা অনুরূপ একটি গাছ আছে। তিনি বললেন, তুমি সেটির কাছে গিয়ে বল যে, রাসূল (ﷺ) তোমাদেরকে আল্লাহর অনুমতিক্রমে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর গাছ দু’টি একত্রিত হয়ে গেল। তিনি সেখানে গিয়ে তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করে ফিরে আসলেন। এরপর তিনি আমাকে বললেন, ঐ গাছ দু’টির নিকট গিয়ে বল যে, রাসূল (ﷺ) তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তোমাদের স্বস্থানে ফিরে যাবে। আমি তাই করলাম। সেগুলো স্বস্থানে ফিরে গেল।

একদা আমরা রাসূল (ﷺ)-এর নিকট বসেছিলাম। হঠাৎ করে একটি উট দ্রুত গতিতে রাসূল (ﷺ)-এর সামনে এসে তার ঘাড়ের সামনের অংশ ঝুঁকাতে থাকল। তখন এটির চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল। রাসূল (ﷺ) আমাকে বললেন, এর মালিককে খুঁজে বের কর। কারণ এর সাথে বিশেষ ঘটনা জড়িত। আমি তার মালিককে খুঁজতে বের হ’লাম। খুঁজে দেখলাম যে, এর মালিক একজন আনছার ছাহাবী। আমি তাকে রাসূল (ﷺ)-এর নিকট ডেকে নিয়ে আসলে তিনি বললেন, তোমার এই উটটির ঘটনা কি? সে বলল, আল্লাহর কসম আমি তার কোন কিছু জানি না। আমরা তাকে কাজ করিয়েছি, পানি বহন করিয়ে নিয়েছি। এখন এটি পানি বহন করা থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই আমরা গত রাতে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, তাকে যবেহ করে নিজেদের মাঝে গোশত ভাগ করে নিব। রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা এটা কর না। এটি আমাকে দান করে দাও। অন্যথা আমার কাছে বিক্রয় করে দাও। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! বরং এটি আপনার জন্য। অতঃপর সেটিকে ছাদাকার উটের আলামত লাগিয়ে মদীনায় পাঠিয়ে দেওয়া হ’ল (আহমাদ হা/১৭৫৮৩)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ﷺ) উটের মালিককে বললেন, তোমার উটের কি হয়েছে যে, সে তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে? সে বলছে যে, তুমি তাকে দিয়ে বিশ বছর পানি বহন করিয়ে নিয়েছ, আর এখন সে বার্ধ্যকে উপনীত হয়েছে। অথচ তোমরা তাকে এখন যবেহ করার সংকল্প করেছ। মালিক বলল, আপনি সত্যই বলেছেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি তা করার সংকল্প করেছিলাম। আল্লাহর কসম! আমি তা করব না (মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৪১৫৭)। অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূল বললেন, তোমরা কি জান এই উটটি কি বলছে? সে বলছে, যে তার মালিক তাকে যবেহ করতে চায়।

বর্ণনাকারী বলেন, একদা আমরা রাসূল (ﷺ)-এর সাথে পথ চলছিলাম। অতঃপর আমরা এক স্থানে অবতরণ করলাম। নবী করীম (ﷺ) ঘুমিয়ে পড়লেন। এরই মধ্যে একটি বৃক্ষ যমীন ফেড়ে তাঁর নিকট এসে তাঁকে আচ্ছাদন করে ফেলল। কিছুক্ষণ পর সেটি স্বস্থানে ফিরে গেল। তিনি জাগ্রত হ’লে আমি তাঁর কাছে বৃক্ষের ঘটনা শুনালাম। তখন তিনি বললেন, এটি একটি গাছ সে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে সালাম দেওয়ার জন্য তার রবের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেছিল। অতঃপর আল্লাহ তাকে অনুমতি দিলে সে এখানে এসেছিল (আহমাদ হা/১৭৫৮৩; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩২৪১২; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৪১৫৬, ১৪১৫৭, ১৪১৫৮; মিশকাত হা/৫৯২২; ছহীহাহ হা/৪৮৫)

উপরোক্ত মু‘জিযা সমূহে অকৃত্রিম বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন-আমীন!

সংকলনে : মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম​
 

Share this page