‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

মোটিভেশন রাসূল (ﷺ)-এর উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী ও উম্মতের জন্য সবচেয়ে বেশি কল্যাণকামী

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
688
Comments
1,217
Solutions
17
Reactions
6,634
Credits
5,440
মুমিনদের নিকট জ্ঞাত যে, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হিদায়াত ও সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন যাতে তিনি সকল দীনের ওপর বিজয়ী করতে পারেন। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। আর তিনি মানুষদেরকে আল্লাহ ও শেষ দিনের ওপর ঈমানের জন্য যেসব বিষয় সংবাদ দিয়েছেন সেগুলো অবশ্যই তাদেরকে স্পষ্ট বর্ণনা করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হচ্ছে, সৃষ্টির সূচনা ও সমাপ্তির ওপর ঈমান। আর সেটা হচ্ছে সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের ওপর ঈমান, যেমনটি উভয়কে একত্রিত করেছেন আল্লাহ তাঁর এই বাণীতে​
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ
“আর মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসে ঈমান এনেছি', অথচ তারা মুমিন নয়।” [সূরা আল-বাকারাহ: ০৮] এবং​
مَّا خَلْقُكُمْ وَلَا بَعْتُكُمْ إِلَّا كَنَفْسٍ وَاحِدَةٍ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
“তোমাদের সবার সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই অনুরূপ। নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।” [সূরা লোকমান: ২৮]​
وَهُوَ الَّذِي يَبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ
“আর তিনি-ই, যিনি সৃষ্টিকে শুরুতে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, তারপর তিনি সেটা পুনরাবৃত্তি করবেন।” [সূরা আর-রূম: ২৭]

আর আল্লাহ স্বীয় রাসূলের জবানে আল্লাহ ও শেষ দিনের ওপর ঈমানের বিষয়ে বর্ণনা দিয়েছেন যা দ্বারা তিনি তাঁর বান্দাদেরকে পথ দেখিয়েছেন এবং তার মাধ্যমে তাঁর কী উদ্দেশ্য সেটা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।

আর মুমিনদের জানা যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যাপারে সকলের চেয়ে অধিক অবগত, সকলের চেয়ে অধিক উম্মতের কল্যাণকামী, বক্তব্য প্রদান ও বর্ণনা করে দেয়ার ক্ষেত্রে সকলের চেয়ে বিশুদ্ধভাষী বরং সকল সৃষ্টির মধ্যে অধিকতর জ্ঞানী, কল্যাণকামী ও স্পষ্টভাষী, তাঁর ক্ষেত্রে জ্ঞান, ক্ষমতা ও ইচ্ছার পরিপূর্ণতা একত্রিত হয়েছিল।

আর এটা জ্ঞাত যে, বক্তা বা কর্তার জ্ঞান, ক্ষমতা ও ইচ্ছা যখন পূর্ণতা লাভ করে তখন তার বক্তব্য ও কর্ম তেমনি পূর্ণতা লাভ করে, আর অপূর্ণতা তখন আসে যখন তার জ্ঞান অপূর্ণ থাকে কিংবা জ্ঞান প্রকাশ করতে অক্ষম হয়, নতুবা সেটা প্রকাশের ইচ্ছা তার না থাকে।(১)

আর রাসূল তো জ্ঞানের পূর্ণতার ক্ষেত্রে সবার শীর্ষে, স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়ার পরিপূর্ণ ইচ্ছা থাকার ক্ষেত্রেও শীর্ষে। আর স্পষ্টভাবে পৌঁছানোর ক্ষমতা থাকার ক্ষেত্রেও শীর্ষে। আর পূর্ণ ক্ষমতা ও সামর্থ্য এবং দৃঢ় ইচ্ছা থাকা ইচ্ছাকৃত বিষয়ের অস্তিত্ব লাভ হওয়া আবশ্যক করে ।(২)

সুতরাং অকাট্যভাবে জানা গেল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমানের ব্যাপারে যা কিছু বর্ণনা দিয়েছেন তা দিয়ে তিনি যা কিছু সুতরাং বর্ণনা করার ইচ্ছা করেছেন সে উদ্দেশ্য যথাযথভাবে সাধিত হয়েছে। আর তিনি যা বর্ণনা করার ইচ্ছা করেছেন সেটা তার জ্ঞান অনুযায়ীই সম্পন্ন হয়েছে। আর এ ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান তো সকল জ্ঞানের চেয়ে পরিপূর্ণ। সুতরাং যে ব্যক্তি ধারণা করবে যে, এ ব্যাপারে অন্য কেউ রাসূলের থেকে বেশি অবগত, রাসূলের থেকে পূর্ণ বয়ানকারী(৩) অথবা সৃষ্টির হিদায়াতের ব্যাপারে রাসূলের থেকে বেশি আগ্রহী, সে নাস্তিক; সে মুমিন নয়। অপরদিকে সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাদেরকে যারা সুন্দরভাবে অনুসরণ করেছেন আর যারা সালাফদের পথে ছিলেন তারা এ অধ্যায়ে সিরাতুল মুস্তাকীমের পথেই অবস্থান করেছেন।(৪)


১. ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এটা সাব্যস্ত করেছেন যে, ইলম বা জ্ঞান তো সেটাই, যার সঠিক হওয়ার ওপর দলীল রয়েছে। আর উপকারী ইলম তখনই হবে যখন তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে নিয়ে আসা জ্ঞান হবে। তিনি আরও বলেন, কখনও কখনও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ ছাড়াও ইলম পাওয়া যেতে পারে তবে তা অবশ্যই দুনিয়াবী ইলম হবে, যেমন ডাক্তারী বিদ্যা, অঙ্কশাস্ত্র, কৃষিকাজ, ব্যবসা ।

কিন্তু ইলাহী বিদ্যা, দীনী জ্ঞান, এসব জ্ঞানের কেবল একমাত্র উৎস হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সকল সৃষ্টির মাঝে রাসূলই এ বিষয় সবচেয়ে বেশি জানেন। সৃষ্টিকে তা শিক্ষা দেয়ার জন্য তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহ প্রচণ্ড, সৃষ্টির সবার চেয়ে তা বর্ণনা করতে ও পরিচিতি তুলে ধরতেও তিনি বেশি সক্ষম। সুতরাং তিনি জ্ঞান, কুদরত, ইরাদা এ তিনটিতে সকলের উপরে। আর এ তিনটির মাধ্যমেই উদ্দেশ্য পূর্ণতা লাভ করে। রাসূল ব্যতীত অন্যরা হয় তার জ্ঞানে সমস্যা বা বিকৃতি থাকবে, অথবা সে তা শিক্ষা দিতে আগ্রহের ঘাটতি থাকবে, ফলে সে শিক্ষা দিবে না, কোনো অনুরাগ কিংবা বিরাগের কারণে, ভয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে, অথবা সে তার বর্ণনার ক্ষমতায় ত্রুটি থাকবে। তার বর্ণনা অন্তরে যা উপলব্ধি করেছে তা বলতে অক্ষম। [দেখুন, মাজমু ফাতাওয়া (১৩/১৩৬)]

২. এ কায়েদা বা নীতিটি ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ অনেক ক্ষেত্রেই উল্লেখ করে থাকেন। প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করে থাকেন। কারণ, দৃঢ় ইচ্ছার সাথে পূর্ণ ক্ষমতা উদ্দেশ্য বিষয়টির অস্তিত্ব বাস্তবে রূপ নেয়। যেমন, ভালোবাসা যখন প্রবল হবে তখন যদি কোনো বাঁধা ও ক্ষমতার ঘাটতি না থাকবে তখন সেটার প্রভাব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পড়বেই। তদ্রূপ অন্তরে ঈমান থাকলে তার প্রভাব মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রকাশ পাবেই।

ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ এ নীতিটি সাব্যস্ত করেছেন যে, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অবস্থার মাঝে সমন্বয় হলে অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যায়। [ফাতাওয়া (৭/৩৭০)] তিনি এ নীতিটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বলেন, কোনো কাজ করার দৃঢ় ইচ্ছা আর তার সাথে যদি পূর্ণ ক্ষমতার সংমিশ্রণ ঘটে তবে তাতে নির্ধারিত বিষয়টি ঘটা আবশ্যক হয়ে পড়ে। [ফাতাওয়া (৭/৬৪৫)]

৩. অন্যত্র শাইখুল ইসলাম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক যে বর্ণনা এসেছে তা দু'ভাবে পেশ করা হয়েছে: এক. তিনি এ বর্ণনার ক্ষেত্রে বিবেকের যুক্তি সম্পন্ন আক্কলী দলীল উল্লেখ করেছেনা। আর কুরআনে

কারীম সেসব আক্বলী দলীল ও দৃঢ় বিশ্বাস আনয়নকারী প্রমাণাদিতে পরিপূর্ণ, যার মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় লাভ করা যায়, দীনের উদ্দেশ্যসমূহ স্পষ্ট হয়। দুই. তিনি শুধু বিভিন্ন বিষয়ের সংবাদ প্রদান করেছেন; কারণ তিনি স্পষ্ট নিদর্শন ও দৃঢ় প্রমাণাদি প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছেন যে, তিনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রচারক। তিনি সত্য ব্যতীত আর কিছু বলেন না। আল্লাহ তা'আলাও তাঁর সত্যতার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তিনি তাঁর বান্দাদেরকে জানিয়েছেন, তাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, রাসূল আল্লাহর কাছ থেকে যা বর্ণনা করেন ও প্রচার করেন তাতে সত্য ও সত্যয়ণকৃত। [ইবন তাইমিয়্যাহ, ফাতাওয়া (১৩/১৩৬-১৩৭)]

৪. কারণ তারা কখনো মনে করেনি যে, রাসূলের চেয়ে অন্য কেউ বেশি জ্ঞানী, বেশি বর্ণনার অধিকারী, উম্মতের প্রতি বেশি যত্নবান হতে পারবেন। সুতরাং তাদের পথই সঠিক পথ ও হক্ব পথ। যারা এ মত থেকে আলাদা হয়ে গেছে তারা কয়েক শ্রেণিতে বিভক্ত। আগত অংশে ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ পথভ্রষ্টদের শ্রেণিবিভাগ করছেন। তাদের কমন ভুল হচ্ছে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর উপরোক্ত কোনো এক বিষয়ে অপর কাউকে অধিক অগ্রগণ্য মনে করেছে।​

 

Share this page