Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
আবূ বকর ইবনু আবী মারইয়াম (রাহিমাহুল্লাহ)
উপক্রমিকা রাবী অর্থ বর্ণনাকারী। যারা হাদীছ বা ঘটনা বর্ণনা করেন তাদের রাবী বলা হয়। রাবীদের মধ্যে বিভিন্ন স্তর রয়েছে। কেউ ছহীহ হাদীছ বর্ণনাকারী। কেউ যঈফ হাদীছ বর্ণনাকারী। আবার কেউ কেউ আছেন যারা ইসলামের নামে জাল হাদীছ বানিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার করেছেন। সুতরাং সব রাবীর হুকুম এক নয়। কোনো কোনো রাবীর দ্বারা ইসলামের উপকার হয়েছে। আবার কতিপয় রাবী দ্বারা ব্যাপক ক্ষতিও সাধিত হয়েছে। যঈফ রাবীদের তালিকায় থাকা অন্যতম একজন রাবী হলেন আবূ বকর ইবনু আবী মারইয়াম। নিম্নে তার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো—
নাম ও বিবরণ : أَبُوْ بَكْرِ بْنِ أَبِيْ مَرْيَمَ الْغَسَّانِيُّ ‘আবূ বকর ইবনু আবী মারইয়াম আল-গাসসনী’।[1] তিনি শামের অধিবাসী ছিলেন।[2] তার উপনাম বুকায়র। কারো কারো মতে, আব্দুস সালাম।[3] ব্যক্তিজীবনে তিনি খুব ইবাদতগুজার মানুষ ছিলেন।[4] তার জীবনী সম্পর্কে সঠিকসূত্রে তেমন কিছু জানা যায় না। তার জীবনী বিষয়ক তেমন কোনো তথ্য না থাকলেও তার কিছু উস্তাদ ও ছাত্রের তালিকা পাওয়া যায়।
উস্তাযগণ : তিনি তার পিতা, চাচাতো ভাই ওয়ালীদ ইবনু আবী সুফিয়ান, রাশেদ ইবনু সা‘দ, যামরা ইবনু হাবীব, খালেদ ইবনু মা‘দান, আতিয়্যা ইবনু ক্বায়স প্রমুখ থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন।[5]
ছাত্রগণ : ছাত্রদের মধ্য হতে আবূল ইয়ামান, ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম, ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ, ইবনুল মুবারক, ঈসা ইবনু ইউনুস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।[6]
ইমামগণের মন্তব্য
তাঁর সম্পর্কে ইমামগণ বলেছেন—
(১) ইমাম জাওযাজানী (মৃ. ২৫৯ হি.) বলেছেন, أبو بكر بن أبي مريم ليس بالقوي في الحديث ‘আবূ বকর ইবনু আবূ মারইয়াম হাদীছ বর্ণনায় শক্তিশালী রাবী ছিলেন না’।[7]
(২) ইমাম নাসাঈ (মৃ. ৩০৩ হি.) বলেন, أَبُو بكر بن أبي مَرْيَم ضَعِيف ‘আবূ বকর ইবনু আবী মারইয়াম যঈফ রাবী’।[8]
(৩) ইবনু হাজার (মৃ. ৮৫২ হি.) বলেন,
أبو بكر ابن عبد الله ابن أبي مريم الغساني الشامي وقد ينسب إلى جده قيل اسمه بكير وقيل عبد السلام ضعيف وكان قد سرق بيته فاختلط من السابعة مات سنة ست وخمسين
‘আবূ বকর ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ মারইয়াম আল-গাসসানী আশ-শামী। তাকে তার দাদার দিকে সম্বন্ধ করা হয়। কেউ কেউ বলেছেন, তার নাম হলো বুকায়র। কারো কারো মতে, তার নাম আব্দুস সালাম। তিনি একজন যঈফ রাবী। তার বাড়িতে চুরি হওয়ার ফলে (কিতাবদি হারিয়ে) তার মাঝে ইখতিলাত্ব দেখা দেয়। অর্থাৎ হাদীছগ্রন্থ চুরি হওয়াতে হাদীছ বর্ণনায় ভুল করতে থাকেন)। তিনি ৭ম স্তরভুক্ত রাবী। তিনি ৫৬ হিজরীতে মারা যান’।[9]
(৪) আলবানী (মৃ. ১৯৯৯ ইং) বলেছেন, وأبو بكر بن أبي مريم؛ ضعيف مختلط ‘আবূ বকর ইবনু আবী মারইয়াম একজন যঈফ ও মুখতালিত্ব রাবী’।[10]
প্রায় সকল ইমাম তাকে যঈফ রাবী বলেছেন। সুতরাং তিনি যঈফ রাবী এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তার বর্ণিত হাদীছ : তার বর্ণিত অনেক যঈফ হাদীছ রয়েছে। তন্মধ্যে একটি নিম্নরূপ—
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ …. سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ يَقُولُ : لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَنْفَعُ فِيهِ إِلَّا الدِّينَارُ وَالدِّرْهَمُ.
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এমন একটা সময় আসবে যখন দীনার-দিরহাম ব্যতীত ব্যবহার করার মতো উপকারী আর কিছুই থাকবে না’।
তাখরীজ :
হাদীছটি ইমাম আহমাদ,[11] নুআঈম ইবনু হাম্মাদ বর্ণনা করেছেন।[12] মিশকাতেও হাদীছটি রয়েছে।[13]
তাহক্বীক্ব
হাদীছটি যঈফ। এর রাবী আবূ বকর ইবনু আবী মারইয়াম একজন যঈফ রাবী। কিতাবাদি চুরি হয়ে যাওয়ার ফলে হাদীছ বর্ণনায় তার ভুল হতো, যা উপরে আলোচিত হয়েছে। আবার তিনি এখানে সরাসরি রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। অথচ তিনি ছাহাবী ছিলেন না। অনেকে এই যঈফ হাদীছটি দিয়ে কাগুজে মুদ্রাকে হারাম বলার চেষ্টা করেন,[14] যা মোটেও ঠিক নয়। কেননা আবূ বকর যঈফ রাবী হওয়ার পাশাপাশি তিনি সূত্রবিহীনভাবে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তাবেঈ হয়ে তিনি সরাসরি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, যা মুরসাল হাদীছ। আর মুরসাল হাদীছ সাধারণত যঈফ হয়ে থাকে।
উপসংহার
উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মাণ হলো, আবূ বকর ইবনু মারইয়াম একজন যঈফ রাবী। সুতরাং তার একক বর্ণনা সরাসরি গ্রহণ করা যাবে না। বরং যথাযথ তাহক্বীক্বের পর তা গ্রহণযোগ্য কিংবা পরিত্যাজ্য উভয়ই হতে পারে। -ওয়াল্লাহু আ‘লাম।
[1]. তাহযীবুল কামাল, রাবী নং ৭২৫৪।
[2]. ইবনু হাজার, তাকরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৯৭৪।
[3]. তাহযীবুত তাহযীব, রাবী নং ১৩৯।
[4]. প্রাগুক্ত।
[5]. তাহযীবুত তাহযীব, রাবী নং ১৩৯।
[6]. প্রাগুক্ত।
[7]. আহওয়ালুর রিজাল, রাবী নং ৩০৮।
[8]. আয-যুআফা ওয়াল-মাতরূকূন, রাবী নং ৬৬৮।
[9]. তাকরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৯৭৪।
[10]. যঈফা, হা/২৭২২, হা/৪১৯১।
[11]. আহমাদ, হা/১৭২০১।
[12]. আল-ফিতান, হা/৭১৮।
[13]. মিশকাত, হা/২৭৮৪, ২/১৯২।
[14]. দেখুন : ইমরান নজর হুসাইন, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পৃ. ৩।