"যে ব্যক্তি হজ থেকে ফিরে আসবে সে ৪০ দিন বাড়ি থেকে বের হবে না" এমন কোন কথা কুরআন ও হাদিসে নেই। সুতরাং তা নিঃসন্দেহে ভ্রান্ত কথা। যুক্তির নিরিখেও তা অগ্রহণযোগ্য। কারণ নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই তাদের নিজস্ব গণ্ডীর মধ্যে বিভিন্ন কারণে বাড়ির বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে হজের দীর্ঘ সফর শেষে।
যেমন—হজ সফর থেকে ফিরে এসে একজন নারী শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে তার পিতা-মাতার বাড়িতে যাবেন, তার প্রতিবেশী, নিকটাত্মীয় ও প্রিয়জনদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করবেন, তাদের তাদের খোঁজ-খবর নিবেন
আর পুরুষ মানুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা মতান্তরে ওয়াজিব), জুমার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়া ফরজ, কোন মুসলিম মারা গেলে তার জানাজা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করা ফরজে কেফায়া, রোগী দেখতে যাওয়া, কেউ দাওয়াত দিলে তাতে অংশগ্রহণ ইত্যাদি মুসলিমের হক, অর্থ উপার্জনের জন্য চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ ইত্যাদি মানুষের মৌলিক প্রয়োজন, নিজের অথবা পরিবারের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে আলেমের বক্তৃতা শোনা বা পড়াশোনা করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গমন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, হজের শিক্ষা ও ইসলামের সৌন্দর্য মণ্ডিত বিভিন্ন দিক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং আল্লাহ পথে মানুষকে আহ্বান করার জন্য বাইরে যাওয়া দরকার। এ ছাড়াও সমাজ ও দেশের বিভিন্ন দায়-দায়িত্ব তার কাঁধে ন্যস্ত থাকতে পারে সে জন্য তাকে বাইরে যেতে হতে পারে। কিন্তু এত কিছু দায়-দায়িত্ব ও প্রয়োজন বাদ দিয়ে দীর্ঘ ৪০ দিন ঘরে বসে থাকা কিভাবে শরিয়ত সম্মত হতে পারে?
তবে হজের পরে মানুষের আরও নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা উচিত। যথাসম্ভব চেষ্টা করবে, তার দ্বারা যেন কোনও ধরণের গুনাহ সংঘটিত না হয়, কারো হক নষ্ট না হয়, কাউকে কষ্ট দেওয়া না হয়, অনর্থক কাজে সময়, শ্রম ও অর্থ অপচয় না করা হয়। বরং আরও অধিক পরিমাণে আল্লাহ মুখী হওয়ার এবং ঈমান ও তাকওয়া ভিত্তিক জীবন পরিচালনার চেষ্টা করতে হবে। সেই সাথে মানুষের সাথে কথাবার্তা, লেনদেন ও আচার-আচরণ আরও সুন্দর করতে হবে।
সতর্ক হতে হবে যেন, হজের আগের জীবন এবং পরের জীবন এক না হয়ে যায়। বরং হজের পরের জীবন যেন আরও সুন্দর, শৃঙ্খল, নিয়ন্ত্রিত, আল্লাহর পথে নিবেদিত এবং মানব কল্যাণে অবদান রাখা সহ অনুকরণীয় আদর্শ জীবন গঠিত হয়-সে চেষ্টা করতে হবে।
মোটকথা, একজন হাজি সাহেব হজ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দ্বীনের পথে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে পরিচালিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম ডক্টর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ)-কে NTV-এর “আপনার জিজ্ঞাসা” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হয় যে, হজ করে আসার পর, বিশেষ করে মহিলা হাজিরা নাকি ৪০ দিন বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না?
তিনি উত্তরে বলেন, “না, এ ধরনের কোনও বিধান ইসলামের মধ্যে নেই। মহিলা হোক বা পুরুষ হাজি হোক, হজ করে আসার পর ৪০ দিন পর্যন্ত ঘরেই থাকতে হবে, বাইরে যেতে পারবেন না—এ বক্তব্য সঠিক নয়। কুসংস্কারের মতো আমরা নিজেরা এটি আবিষ্কার করেছি।
যিনি হজ করে ফিরেছেন, তিনি তো হজের বার্তা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। তিনি আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, কথা বলবেন, যা শিখেছেন সেটি ভাগাভাগি করবেন এবং ইসলামের সৌন্দর্যের বিষয়টি তাদের কাছে তুলে ধরবেন। যদি জ্ঞানের বিষয় থাকে, তাহলে মানুষকেও সে বিষয়ে জানাবেন।” [উৎস: ntvbd]
মহান আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
উত্তর প্রদানে আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
যেমন—হজ সফর থেকে ফিরে এসে একজন নারী শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে তার পিতা-মাতার বাড়িতে যাবেন, তার প্রতিবেশী, নিকটাত্মীয় ও প্রিয়জনদের সাথে দেখা-সাক্ষাত করবেন, তাদের তাদের খোঁজ-খবর নিবেন
আর পুরুষ মানুষের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা মতান্তরে ওয়াজিব), জুমার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়া ফরজ, কোন মুসলিম মারা গেলে তার জানাজা ও কাফন-দাফনে অংশগ্রহণ করা ফরজে কেফায়া, রোগী দেখতে যাওয়া, কেউ দাওয়াত দিলে তাতে অংশগ্রহণ ইত্যাদি মুসলিমের হক, অর্থ উপার্জনের জন্য চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ ইত্যাদি মানুষের মৌলিক প্রয়োজন, নিজের অথবা পরিবারের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে আলেমের বক্তৃতা শোনা বা পড়াশোনা করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গমন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, হজের শিক্ষা ও ইসলামের সৌন্দর্য মণ্ডিত বিভিন্ন দিক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং আল্লাহ পথে মানুষকে আহ্বান করার জন্য বাইরে যাওয়া দরকার। এ ছাড়াও সমাজ ও দেশের বিভিন্ন দায়-দায়িত্ব তার কাঁধে ন্যস্ত থাকতে পারে সে জন্য তাকে বাইরে যেতে হতে পারে। কিন্তু এত কিছু দায়-দায়িত্ব ও প্রয়োজন বাদ দিয়ে দীর্ঘ ৪০ দিন ঘরে বসে থাকা কিভাবে শরিয়ত সম্মত হতে পারে?
তবে হজের পরে মানুষের আরও নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা উচিত। যথাসম্ভব চেষ্টা করবে, তার দ্বারা যেন কোনও ধরণের গুনাহ সংঘটিত না হয়, কারো হক নষ্ট না হয়, কাউকে কষ্ট দেওয়া না হয়, অনর্থক কাজে সময়, শ্রম ও অর্থ অপচয় না করা হয়। বরং আরও অধিক পরিমাণে আল্লাহ মুখী হওয়ার এবং ঈমান ও তাকওয়া ভিত্তিক জীবন পরিচালনার চেষ্টা করতে হবে। সেই সাথে মানুষের সাথে কথাবার্তা, লেনদেন ও আচার-আচরণ আরও সুন্দর করতে হবে।
সতর্ক হতে হবে যেন, হজের আগের জীবন এবং পরের জীবন এক না হয়ে যায়। বরং হজের পরের জীবন যেন আরও সুন্দর, শৃঙ্খল, নিয়ন্ত্রিত, আল্লাহর পথে নিবেদিত এবং মানব কল্যাণে অবদান রাখা সহ অনুকরণীয় আদর্শ জীবন গঠিত হয়-সে চেষ্টা করতে হবে।
মোটকথা, একজন হাজি সাহেব হজ থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দ্বীনের পথে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে পরিচালিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম ডক্টর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ (হাফিযাহুল্লাহ)-কে NTV-এর “আপনার জিজ্ঞাসা” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করা হয় যে, হজ করে আসার পর, বিশেষ করে মহিলা হাজিরা নাকি ৪০ দিন বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না?
তিনি উত্তরে বলেন, “না, এ ধরনের কোনও বিধান ইসলামের মধ্যে নেই। মহিলা হোক বা পুরুষ হাজি হোক, হজ করে আসার পর ৪০ দিন পর্যন্ত ঘরেই থাকতে হবে, বাইরে যেতে পারবেন না—এ বক্তব্য সঠিক নয়। কুসংস্কারের মতো আমরা নিজেরা এটি আবিষ্কার করেছি।
যিনি হজ করে ফিরেছেন, তিনি তো হজের বার্তা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। তিনি আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, কথা বলবেন, যা শিখেছেন সেটি ভাগাভাগি করবেন এবং ইসলামের সৌন্দর্যের বিষয়টি তাদের কাছে তুলে ধরবেন। যদি জ্ঞানের বিষয় থাকে, তাহলে মানুষকেও সে বিষয়ে জানাবেন।” [উৎস: ntvbd]
মহান আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুন। আমিন।
উত্তর প্রদানে আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল