আল্লাহ তা‘আলা কিছু মাস, দিন ও রাতকে ফযীলতপূর্ণ করেছেন। যেমন রামাযান মাসকে অন্য সকল মাসের উপর মহিমান্বিত করেছেন। আরাফাতের দিন ও ঈদের দিনকে অন্য দিনের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। ক্বদরের রাতকে অন্যান্য রাতের চেয়ে মর্যাদামন্ডিত করেছেন। আসন্ন যিলহজ্জ মাস অনুরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মাস। যে মাসে হজ্জ ও কুরবানী করা হয়ে থাকে। এই মাসের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে বিস্তর আলোচনা এসেছে। আলোচ্য প্রবন্ধে যিলহজ্জ মাসের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা পেশ করা হ’ল।-
যিলহজ্জ মাসের ফযীলত : উম্মতে মুহাম্মাদীর বয়স ষাট থেকে সত্তর বছর। এত্থেকে অধিক বয়স কম লোকেরই হয়।[1] তাই অল্প সময়ে অধিক নেকী উপার্জনের জন্য মহান আল্লাহ বিভিন্ন মাস ও দিবসকে ফযীলতপূর্ণ করেছেন। অনুরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস হচ্ছে যিলহজ্জ মাস। এ মাসেরও অনেক ফযীলত রয়েছে।
১. এটা হারাম মাস : চারটি হারাম তথা সম্মানিত মাসের মধ্যে অন্যতম হ’ল যিলহজ্জ মাস। মহান আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয়ই মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন’ (তওবা ৯/৩৬)।
আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন,
‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন হ’তে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যুল-কা‘দাহ, যুল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। তিনটি মাস পর পর রয়েছে। আর একটি মাস হ’ল রজব-ই মুযার,[2] যা জুমাদা ও শা‘বান মাসের মাঝে অবস্থিত’।[3]
২. এটা হজ্জের মাস : ওমরার জন্য সারা বছর সুযোগ থাকলেও হজ্জের জন্য শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত মাস রয়েছে। হজ্জের মাস সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
‘হজ্জ হয় সুবিদিত মাসগুলিতে। তারপর যে কেউ এ মাসগুলিতে হজ্জ করা স্থির করে সে হজ্জের সময় স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ করবে না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, হজ্জের সুবিদিত মাসগুলি হ’ল শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জ। আল্লাহ এ মাসগুলি হজ্জের জন্য নির্ধারণ করেছেন। আর ওমরা সারা বছর আদায় করা যায়। এ মাসগুলি ব্যতীত হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলে হজ্জ হবে না।[4]
৩. এটা কুরবানীর মাস : কুরবানীর একমাত্র মাস হ’ল যিলহজ্জ মাস। এই মাসের ১০ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত মোট চারদিন কুরবানী করার সময়। প্রথম দিন তথা ১০ই যিলহজ্জ সালাতুল ঈদের পর কুরবানী করতে হবে। ঈদের সালাতের আগে কুরবানী করলে কুরবানী হবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে যবহ করেছে, সে যেন তদস্থলে আরেকটি যবহ করে নেয়। আর যে ব্যক্তি আমাদের সালাত আদায় করা পর্যন্ত যবহ করেনি, সে যেন এখন আল্লাহর নাম নিয়ে যবহ্ করে’।[5]
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের ফযীলত :
যিলহজ্জ মাস পুরোটাই ফযীলতপূর্ণ হ’লেও প্রথম দশ দিনের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। যেমন-
এক. আল্লাহ এই দিনগুলির কসম করেছেন : মহান আল্লাহ কুরআনে বিভিন্ন বিষয়ের কসম করেছেন। যিলহজ্জ মাসের দশ দিনের কসম করে আল্লাহ বলেন,
‘শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির, শপথ জোড় ও বেজোড়ের’ (ফজর ৮৯/১-৩)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘দশম হ’ল ঈদুল আযহার দিন, বেজোড় হ’ল আরাফার দিন আর জোড় হ’ল কুরবানী দিন’।[6]
দুই. বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন : জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘দুনিয়ার দিন সমূহের মধ্যে যিলহজ্জের প্রথম দশদিন সর্বোত্তম দিন’।[7]
তিন. এই দিনগুলির আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘এমন কোন দিন নেই যে দিনসমূহের নেক আমল আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ মাসের এই দশ দিনের নেক আমল অপেক্ষা বেশি প্রিয়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি নয়? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, জিহাদও নয়। তবে জান-মাল নিয়ে যদি কোন লোক জিহাদে বের হয় এবং এ দু’টির কোনটি নিয়েই আর ফিরে না আসে তার কথা ভিন্ন।[8] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘যেসব আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সর্বোত্তম মর্যাদা লাভ করা যায় যিলহজ্জ মাসের দশদিনের আমল তার অনুরূপ’।[9]
চার. এই দশ দিনে সকল মৌলিক ইবাদত একত্রিত হয় : এই দশদিন আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রায় সকল ইবাদত একত্রিত হয়, যা অন্য কোন সময়ে একত্রিত হওয়া সম্ভব নয়। যেমন হজ্জ, কুরবানী, সালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বাসহ সকল ইবাদত এই দশ দিন একত্রিত করা যায়। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,
‘এ কথা স্পষ্ট হয় যে, যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের বিশেষ গুরুত্বের কারণ; যেহেতু ঐ দিনগুলিতে মৌলিক ইবাদতসমূহ একত্রিত হয়েছে। যেমন সালাত, ছিয়াম, ছাদাক্বাহ এবং হজ্জ, যা অন্যান্য দিনগুলিতে এভাবে একত্রিত হয় না’।[10]
পাঁচ. দ্বীনের নিদর্শনসমূহের সম্মানের সময় : এই দশ দিনে যেহেতু ইসলামের মৌলিক ইবাদত একত্রিত হয়, সেহেতু আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শন সমূহও সম্মান করা সহজ হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
‘এটাই হ’ল আল্লাহর বিধান, যে আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাক্বওয়া থেকেই’ (হজ্জ ২২/৩২)।
আল্লাহর শি‘আর বা নিদর্শন বলতে বুঝায় এমন প্রতিটি বিষয় যাতে আল্লাহর কোন নির্দেশের চিহ্ন দেয়া আছে (কুরতুবী)। এগুলি আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্ন। বিশেষ করে হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি, যেমন হজ্জের যাবতীয় কর্মকান্ড (কুরতুবী; সা‘দী)। হাদীর জন্য হাজীদের সঙ্গে নেয়া উট ইত্যাদি (ইবনে কাছীর)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এখানে আল্লাহর নিদর্শন সম্মান করার দ্বারা হাদীর জন্তুটি মোটাতাযা ও সুন্দর হওয়া বোঝানো হয়েছে (ইবনে কাছীর)।[11]
আরাফার দিনের ফযীলত :
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হ’ল আরাফার দিন। এ দিনেরও বিশেষ ফযীলত রয়েছে।-
১. আল্লাহর দ্বীন ও নে‘মত পরিপূর্ণ হওয়ার দিন : মহানবী (ﷺ)-এর নবুঅতের শেষদিকে বিদায় হজ্জের সময় আরাফার দিন শুক্রবার আল্লাহ ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে ঘোষণা করেন। আল্লাহ বলেন,
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)।
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক ইহূদী তাঁকে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন। তা যদি আমাদের ইহুদী জাতির উপর অবতীর্ণ হ’ত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন আয়াত? সে বলল, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নে‘মত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)। ওমর (রাঃ) বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নবী করীম (ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি। তিনি সেদিন আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুম‘আর দিন’।[12]
২. কুরআন ও হাদীসকে চূড়ান্ত সংবিধান ঘোষণার দিন : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত্যুর অল্প কিছু দিন আগে বিদায় হজ্জের ভাষণে ক্বিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আগত সকল মানুষের সকল সমস্যার সমাধান হিসাবে একমাত্র কুরআন ও হাদীসের কথা ঘোষণা করেন। ভাষণের এক পর্যায়ে তিনি বলেন,
‘আমি তোমাদের মাঝে এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা অাঁকড়ে ধরো, তবে তোমরা আমার মৃত্যুর পর
কখনো বিপথগামী হবে না, তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব’।[13]
মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’।[14]
৩. আল্লাহ এই দিনের কসম করেছেন : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘আল-ইয়াউমুল মাও‘ঊদ’ (বুরূজ ৮৫/২) অর্থ-ক্বিয়ামতের দিন; ‘আল-ইয়াউমুল মাশ্হূদ’ (হূদ ১১/১০৩) অর্থ আরাফাতে (উপস্থিতির) দিন এবং ‘আশ্-শাহিদ’ (বুরূজ ৮৫/৩) অর্থ- জুম‘আর দিন’।[15] আল্লাহ বলেন, ‘শপথ জোড় ও বেজোড়ের’ (ফজর ৮৯/৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘বেজোড়-এর অর্থ আরাফা দিবস এবং জোড়-এর অর্থ ইয়াওমুন্নাহর (কুরবানী দিন)’।[16]
৪. আরাফাত ময়দানের সন্নিকটে আল্লাহ মানব জাতি থেকে ওয়াদা নিয়েছেন : ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা আরাফার ময়দানের সন্নিকটে না‘মান নামক স্থানে আদম (আঃ)-এর মেরুদন্ড হ’তে তাঁর সন্তানদের বের করে শপথ নিয়েছিলেন। তাদেরকে পিঁপড়ার মত আদম (আঃ)-এর সামনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের সম্মুখে কথা বলেছিলেন,
‘আমি কি তোমাদের প্রভু নই? আদম সন্তানরা উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক। এতে আমি সাক্ষী থাকলাম। যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন এ কথা বলতে না পার, আমরা জানতাম না কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পার, আমাদের পিতৃ-পুরুষগণ আমাদের পূর্বে মুশরিক হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা তাদের পরবর্তী বংশধর। তুমি কি বাতিলধর্মী (পিতৃ-পুরুষ)-গণ যা করেছে সে আমলের কারণে আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে’ (আ‘রাফ ৭/১৭২-১৭৩)।[17]
৫. এই দিন সবচেয়ে বেশী মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় : আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘এমন কোন দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, এরা কি চায়? (অর্থাৎ তারা যা চায় আমি তাই দেব)।[18]
৬. এই দিন আল্লাহ ফেরেশতাদের কাছে তাঁর বান্দাদের নিয়ে গর্ব করেন : নবী করীম (ﷺ) বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিন বিকেলে আরাফায় অবস্থানকারী ব্যক্তিদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। অতঃপর বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে লক্ষ্য কর, তারা আমার কাছে এসেছে মাথায় এলোমেলো চুল নিয়ে ধুলি মলিন অবস্থায়’।[19]
৭. এই দিন মুসলমান (হাজী)দের ঈদ : এই মর্যাদাপূর্ণ দিন প্রত্যেক বছর মুসলমানদের মাঝে ফিরে আসে। এই দিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘আমাদের মুসলিম জনগণের ঈদের দিন হচ্ছে আরাফার দিন, কুরবানীর দিন ও তাশ্রীকের দিন। এ দিনগুলি হচ্ছে পানাহারের দিন’।[20]
৮. আরাফার দো‘আ সবচেয়ে উত্তম দো‘আ : নবী করীম (ﷺ) বলেন,
‘সকল দো‘আর শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল আরাফার দিনের দো‘আ। আর শ্রেষ্ঠ কালিমাহ (যিকর) যা আমি পাঠ করেছি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ পাঠ করেছেন তা হ’ল, ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’। অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শারীক নেই। তাঁরই রাজত্ব। তার জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি সব কিছুর উপরে ক্ষমতাবান’।[21]
৯. এই দিনের ছিয়াম দুই বছরের গুনাহের কাফফারা : কাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে আরাফা দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন,
‘আরাফা দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আমি আশা করি যে, তা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গোনাহের কাফফারা হবে’।[22] সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন ছিয়াম রাখে তার পরপর দুই বৎসরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়’।[23]
১০. হজ্জের মূল কাজ হ’ল আরাফায় অবস্থান করা : হজ্জের অন্যতম ফরয হ’ল আরাফায় ময়দানে অবস্থান করা। সুতরাং ‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বেই আরাফায় পৌঁছে গেল সে হজ্জ পেয়ে গেল।[24] পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে আরাফায় অবস্থান করল না, তার হজ্জ বিনষ্ট হয়ে গেল।[25] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান, হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান, হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান। মিনার জন্য নির্ধারিত আছে তিন দিন। কোন ব্যক্তি যদি দুই দিন থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসে, তবে তার কোন গুনাহ হবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি বিলম্ব করে, তারও কোন গুনাহ হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২০৩)। ফজর উদয়ের পূর্বেই যে ব্যক্তি আরাফায় পৌঁছে যায়, সে হজ্জ পেয়ে গেল’।[26]
কুরবানীর দিনের ফযীলত :
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের শেষ দিন হ’ল ইয়ামুন নাহার বা কুরবানীর দিন। এই দিনের বিশেষ ফযীলত ও গুরুত্ব রয়েছে। যেমন-
১. এটা হজ্জের বড় দিন : ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (যিলহজ্জের ১০ তারিখ) নহরের দিন তিনটি জামরার মধ্যস্থলে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন, এটি কোন দিন? লোকেরা বলল, আজ কুরবানীর দিন। তিনি বললেন, আজ হজ্জের বড় দিন’।[27]
২. এটি আল্লাহর নিকট মহান দিন : নবী করীম (ﷺ) বলেন,
‘অবশ্যই কুরবানীর দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মহান দিন। অতঃপর ‘ক্বার্র’-এর দিন। ছাওর বলেন, তা কুরবানীর দ্বিতীয় দিন’।[28]
উল্লেখ্য যে, অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে এই দশক উত্তম নাকি রামাযানের শেষ দশক উত্তম। এই প্রশ্নের জবাবে ইবনু তায়মিয়া (৬৬১-৭২৮ হিঃ) (রহঃ) বলেন,
‘যিলহজ্জের প্রথম দশকের দিনগুলি রামাযানের শেষ দশকের দিনগুলি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর রামাযানের শেষ দশকের রাতগুলি যিলহজ্জের প্রথম দশকের রাতগুলি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’।[29]
ইবনু তাইমিয়া (রহঃ)-এর উক্তি প্রসঙ্গে ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘এ উত্তর নিয়ে যদি কোন যোগ্য ও জ্ঞানী ব্যক্তি গভীরভাবে চিন্তা করেন, তাহ’লে তা সন্তোষজনক ও যথেষ্টরূপে পাবেন। যেহেতু দশ দিন ছাড়া অন্য কোন দিন নেই যার মধ্যে কৃত নেক আমল আল্লাহর নিকট অধিক পসন্দনীয় হ’তে পারে। তাছাড়া এতে রয়েছে আরাফার দিন, কুরবানী ও তারবিয়া (৮ই যিলহজ্জে)র দিন। পক্ষান্তরে রামাযানের শেষ দশকের রাত্রিগুলি হ’ল জাগরণের রাত্রি। যে রাত্রিগুলিতে রাসূল (ﷺ) রাত জেগে ইবাদত করতেন। আর তাতে রয়েছে এমন একটি রাত, যা হাযার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’।[30]
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের আমল :
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের আমলগুলিকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমতঃ আম বা সাধারণ ইবাদত। অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন বছরের অন্যান্য দিনের ন্যায় সকল নেক আমল করা। যেমন সালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বাহ, তাসবীহ-তাহলীল, রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ, পাপ থেকে তওবা করা, কারো হক নষ্ট হ’লে তার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া ইত্যাদি। পাশাপাশি মুনকার বা নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে বিরত থাকা।
দ্বিতীয়তঃ খাছ বা বিশেষ ইবাদত। যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের কিছু বিশেষ আমল রয়েছে। যেমন-
১. হজ্জ পালন করা : সামর্থ্যবান সকল মুসলিমের উপর হজ্জ ফরয (আলে ইমরান ৩/৯৭)। হজ্জ পালনের জন্য প্রস্ত্ততি মূলক কয়েকটি মাস থাকলেও একমাত্র হজ্জের কার্যক্রম সম্পাদন করা হয় যিলহজ্জ মাসে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘হজ্জের মাস ছাড়া কারো হজ্জের ইহরাম বাঁধা উচিত নয়’।[31] আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন,
‘হজ্জের মাসগুলি ছাড়া ইহরাম বাঁধা উচিত নয়। কারণ হজ্জের মাসগুলিতে ইহরাম বাঁধা হজ্জের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।[32]
মহান আল্লাহ বলেন,
‘হজ্জ হয় সুনির্দিষ্ট মাসসমূহে। অতএব এই মাসসমূহে যে হজ্জ করা স্থির করে নিল, তার জন্য হজ্জের সময় অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)।
যারা হজ্জ পালন করবেন তাদের জন্য এই মাসে নিমেণর কাজগুলি ধারাবাহিকভাবে করতে হবে।
(ক) ইহরাম বাঁধা ও ওমরা পালন : হজ্জ ও ওমরার প্রথম কাজ হ’ল সঠিক নিয়মে ইহরাম বাঁধা। বিশে^র যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন হজ্জ বা ওমরাকারী যখনই মক্কায় প্রবেশ করবেন তখনই মীকাত হ’তে ইহরাম বাঁধবেন। হজ্জের মাস সমূহের মধ্যে যদি কোন মুসলিম হজ্জ করার ইচ্ছা পোষণ করেন তাহ’লে প্রথমে ওমরার জন্য ইহরাম বেঁধে মক্কায় প্রবেশ করে ওমরাহ আদায় করে তামাত্তু‘ হজ্জ পালনকারীগণ হালাল হয়ে যাবেন। আর ক্বিরান হজ্জ পালনকারীগণ ইহরাম সহ থাকবেন এবং ৮ই যিলহজ্জের জন্য অপেক্ষা করবেন। এ সময় তারা কা‘বা ঘর তাওয়াফ, বায়তুল্লায় সালাত আদায়, বেশী বেশী দো‘আ, যিকর, তাসবীহ-তাহলীল ও অন্যান্য ভাল কাজ করতে থাকবেন।
(খ) ৮ই যিলহজ্জের আমল : ৮ই যিলহজ্জ থেকেই মূলতঃ হজ্জের কার্যক্রম শুরু হয়। এই দিন তামাত্তু‘ হজ্জ পালনকারীগণ হজ্জের নিয়তে ওযূ-গোসল করে সুগন্ধি মেখে[33] ইহরাম বেঁধে তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে নিজ অবাসস্থল থেকে কা‘বা ঘরের ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। সকল হজ্জ পালনকারীগণ যোহরের পূর্বে মিনায় পৌঁছে সেখানে রাত্রি যাপন করবেন ও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তথা যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা যথা সময়ে ক্বছর করে জমা না করে শুধু ফরয সালাত আদায় করবেন।[34] তবে ফজরের দুই রাক‘আত সুন্নাত, বিতর সালাত ও সম্ভব হ’লে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করবে।[35]
(গ) ৯ই যিলহজ্জের আমল : এই দিন হজ্জ পালনকারীগণ সূর্য উদয়ের পর তালবিয়া পাঠ করতে করতে মিনা থেকে ১৪.৪ কিলোমিটার দূরে আরাফা ময়দানের দিকে রওয়ানা হবেন।[36] আর সেখানে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করবেন এবং যোহরের সময় এক আযানে দুই ইক্বামতে যোহর ও আছর সালাত ক্বছর ও জমা করে আদায় করবেন।[37] সূর্যাস্তের পর হজ্জ পালনকারীগণ আরাফার ময়দানে মাগরিব সালাত আদায় না করে ৯ কিলোমিটার দূরে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হবেন ও সেখানে মাগরিব ও এশার সালাত জমা ও ক্বছর করে আদায় করবেন এবং রাত্রি যাপন করবেন।[38]
(ঘ) ১০ই যিলহজ্জের আমল : এই দিন সকালে মুদালিফায় ফজরের সালাত আদায় করে ৫ কিলোমিটার দূরে মিনার দিকে রওয়ানা হবেন এবং বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।[39] কঙ্কর নিক্ষেপের পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবেন এবং স্ত্রী সহবাস ব্যতীত প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে যাবেন।[40] তারপর কুরবানী করবেন এবং পুরুষরা মাথা মুন্ডন করবেন। আর মহিলাগণ চুলের আগা থেকে একটু ছেটে ফেলবেন।[41] তারপর ফরয তাওয়াফ বা তাওয়াফে ইফাযা ও ছাফা-মারওয়ায় সাঈ করে পূর্ণ হালাল হয়ে যাবেন এবং মিনায় গিয়ে রাত্রি যাপন করবেন।[42]
(ঙ) ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহজ্জের আমল : এই তিন দিন হজ্জ পালনকারীগণ মিনায় অবস্থান করবেন এবং সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিন জামারায়[43] আল্লাহু আকবার বলে ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।[44]
২. ঈদের সালাত আদায় করা : এই দশ দিনের অন্যতম আমল হ’ল ঈদুল আযহার সালাত আদায় করা। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘রাসূল (ﷺ) ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যেতেন এবং সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ করতেন তাহ’ল সালাত আদায়। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাঁদের নছীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন তবে তা জারী করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে যেতেন’।[45]
উল্লেখ্য, মহিলারাও ঈদের সালাতে পুরুষদের সাথে পর্দা সহকারে গমন করে সালাত আদায় করবেন। এমনকি ঋতুবর্তীরাও ঈদগাহে যাবেন এবং দো‘আয় অংশগ্রহণ করবেন তথা খুৎবা শ্রবণ করবেন।
৩. কুরবানী করা : যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের বিশেষ আরেকটি আমল হ’ল কুরবানী করা। পৃথিবীর প্রত্যেক মুসলমান চাই সে হজ্জ পালনকারী হন বা হজ্জের বাইরে থাকুন সকলেই এই দিনে কুরবানী করে আল্লাহর আদেশ পালন করেন। হজ্জে তামাত্তু‘ ও হজ্জে ক্বিরানকারীগণ মিনা ও তার আশপাশ হারাম এলাকায় আর হজ্জের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মুসলমানরা তাদের স্ব স্ব অবস্থানস্থলে কুরবানী করেন। কুরবানীর নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,
‘তুমি তোমার রবের জন্য সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’ (কাওছার ১০৮/২)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে’।[46] তবে কুরবানী করা ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আবুবকর ছিদ্দীক, ওমর ফারূক, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস, বেলাল, আবূ মাসঊদ আনছারী (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণ কখনো কখনো কুরবানী করতেন না।[47] প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক বছর একটি পশু দ্বারা কুরবানী করাই যখেষ্ট।[48] তবে তাক্বওয়া সহকারে (হজ্জ ২২/৩৭) যে যত বেশী করবে তার তত ছওয়াব হবে।[49]
৪. ছিয়াম পালন করা : যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের বিশেষ আমল হ’ল ছিয়াম পালন করা। নবী করীম (ﷺ)-এর কোন স্ত্রী থেকে বর্ণিত যে,
‘রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যিলহজ্জ মাসের নয় দিন, আশূরার দিন এবং প্রত্যেক মাসের তিন দিন, মাসের দুই সোমবার এবং বৃহস্পতিবার
ছিয়াম পালন করতেন’ ।[50]
যিলহজ্জ মাসের প্রথম নয় দিন ছিয়াম পালন করার গুরুত্ব থাকলেও আরাফাতের দিন ছিয়াম পালনের আলাদা ফযীলত রয়েছেন। আর তা হ’ল বিগত ও আগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা।[51]
রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন ছিয়াম রাখে তার পরপর দুই বৎসরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়’।[52]
৫. যিকর করা : এই দশ দিনের অন্যতম আমল হ’ল আল্লাহর বেশী বেশী যিকর করা তথা তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীল পাঠ করা। মহান আল্লাহ বলেন,
‘যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হ’তে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুস্পদ জন্তু থেকে যে রিযিক দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে’ (হজ্জ ২২/২৮)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘এই দিনসূহ আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাপূর্ণ এবং এই দশদিনের মধ্যে সম্পাদিত আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। সুতরাং এই দিনগুলিতে তোমরা বেশী বেশী তাহলীল, তাকবীর ও তাহমীদ পাঠ কর’।[53]
যারা হজ্জে থাকবে তাদেরকেও আল্লাহ এই দিনগুলিতে যিকরের নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে আরাফার ময়দান থেকে ফিরে আসার পর। যেমন আল্লাহ বলেন,
‘সুতরাং যখন তোমরা আরাফাত হ’তে ফিরে আসবে, তখন মাশ‘আরুল হারামের কাছে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন ঠিক সেভাবে তাঁকে স্মরণ করবে’ (বাক্বারাহ ২/১৯৮)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হজ্জের অবস্থা সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,
‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে সকালে মিনা থেকে আরাফার দিকে রওয়ানা হই। তখন আমাদের মধ্যে কেউ তালবিয়া পাঠ করেছেন এবং কেউ তাকবীর পাঠ করেছেন’।[54]
হজ্জের কাজ শেষ করার পর আল্লাহকে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,
‘অতঃপর যখন তোমরা হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করবে তখন আল্লাহকে এভাবে স্মরণ করবে যেভাবে তোমরা তোমাদের পিতৃ পুরুষদের স্মরণ করে থাক, অথবা তারচেয়েও অধিক’ (বাক্বারাহ ২/২০০)।
৬. তাকবীর পাঠ করা : তাকবীর তথা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করা এই দিনগুলির অন্যতম আমল। তাকবীর পাঠের সময়সীমা দুই ধরনের হ’তে পারে।
প্রথমতঃ আম বা ব্যাপাক তাকবীর : যিলহজ্জ মাসের প্রথম তারিখ থেকে তের তারিখ পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَاذْكُرُوا اللهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ، ‘আর তোমরা গণনাকৃত দিনগুলিতে আল্লাহকে স্মরণ করবে’ (বাক্বারাহ ২/২০৩)।
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
(বাক্বারাহ ২/২০৩) দ্বারা (যিলহজ্জ মাসের) দশ দিন বুঝায় এবং والأَيَّامٍ المَعْدُودَات দ্বারা ‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বুঝায়। ইবনু ওমর ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) এই দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাযারের দিকে যেতেন এবং তাদের তাকবীরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবীর বলত। মুহাম্মাদ ইবনু আলী (রহঃ) নফল সালাতের পরেও তাকবীর বলতেন।[55]
দ্বিতীয়তঃ নির্দিষ্ট দিনে তাকবীর : যিলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয সালাতের শেষ তাকবীর বলবে।[56] আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) আরাফার দিন ফজর থেকে কুরবানীর দিন আছর পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন।[57] তাকবীরের শব্দাবলী নিমণরূপ-
উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আক্বার আল্লাহু আক্বার লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার আল্লাহু আক্বার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’।[58] হাজীগণ ইহরাম বাঁধার পর তাকবীর দিবেন। তবে হজ্জের দিনগুলি তথা ৮-১২ ই যিলহজ্জ বেশী বেশী নিম্নোক্ত তালবিয়া পাঠ করবেন।
‘আমি হাযির হে আল্লাহ, আমি হাযির। আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সাম্রাজ্য সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই’।[59] এই দিনগুলিতে তাকবীর উচ্চস্বরে পাঠ করবেন।[60]
৭. চুল ও নখ কর্তন না করা : যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের আরেকটি আমল হ’ল যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী পর্যন্ত চুল ও নখ কর্তন না করা। রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা রাখলে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক শুরু হয়ে গেলে সে যেন নিজের চুল ও চামড়ার কোন কিছু স্পর্শ না করে (না কাটে)। অন্য এক বর্ণনায় আছে, সে যেন কেশ না ধরে ও নখ না কাটে। অপর এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের নব চাঁদ দেখবে ও কুরবানী করার নিয়ত করবে, সে যেন নিজের চুল ও নিজের নখগুলি না কাটে।[61] ঈদের সালাতের পর কুরবানী করে নখ ও চুল কাটতে পারবে। রাসূল (ﷺ) বলেন, যার কুরবানীর পশু রয়েছে, সে যেন যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।[62]
কুরবানী দিতে অক্ষম ব্যক্তি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইখলাছের সাথে এ আমল করে তাহ’লে ঐ ব্যক্তি কুরবানীর পূর্ণ ছওয়াব পাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা কুরবানীর দিনকে এ উম্মতের জন্য ঈদ হিসাবে পরিগণিত করেছেন। এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি যদি দুগ্ধবতী ছাগল ছাড়া অন্য কোন পশু না পাই তবে কি তা দিয়েই কুরবানী করব? তিনি বললেন,
‘না, তবে তুমি এ দিন তোমার চুল ও নখ কাটবে। তোমার গোঁফ কাটবে। নাভির নিচের পশম কাটবে। এটাই আল্লাহর নিকট তোমার পরিপূর্ণ কুরবানী’।[63]
পরিশেষে বলব, উপরে বর্ণিত আমলগুলি সম্পাদনের মাধ্যমে যিলহজ্জ মাসের ফযীলত লাভ করা যায় এবং অশেষ ছওয়াব হাছিল করা যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উক্ত আমলগুলি সঠিকভাবে পালন করে পরিপূর্ণ ছওয়াব লাভের তাওফীক দান করুন-আমীন!
[1]. তিরমিযী হা/৩৫৫০; ইবনু মাজাহ হা/৪২৩৬; সহীহুল জামে‘ হা/৪০৯৪।
[2]. আরবের মুযার সম্প্রদায় অন্যান্য সম্প্রদায় অপেক্ষা রজব মাসকে অধিক সম্মান করত। তাই এ মাসটিকে তাদের দিকে সম্বন্ধিত করে হাদীসে ‘রজবে-মুযার’ বলা হয়েছে।
[3]. বুখারী হা/৩১৯৭; মুসলিম হা/১৬৭৯; আবুদাঊদহা/১৯৪৭।
[4]. তাফসীরে তাবারী, সূরা বাক্বারাহ ১৯৭ নং আয়াতে তাফসীর দ্রঃ।
[5]. বুখারী হা/৫৫০০; নাসাঈ হা/৪৪১০
[6]. আহমাদ হা/১৪১০২; বাযযার হা/২২৮৬। হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন। শু‘আইব আরনাঊত এটিকে সহীহ বলেছেন। দ্র. আহমাদ হা/১৪৫১১; আলবানী (রহঃ) একে যঈফ বলেছেন। দ্র. যঈফুল জামে‘ হা/১৫০৮।
[7]. সহীহুল জামে‘ হা/১১৩৩; সহীহুত তারগীব হা/১১৫০।
[8]. বুখারী হা/৯৬৯; তিরমিযী হা/৭৫৭; মিশকাত হা/১৪৬০।
[9]. সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১১৪৮; ইরওয়া ৩/৩৯৮।
[10]. ফাতহুল বারী ২/৪৬০।
[11]. কুরআনুল কারীম (সঊদী আরব: বাদশাহ ফাহদ কুরআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স ১৪৪০ হিঃ) ২/১৭৬৭-১৭৬৮।
[12]. বুখারী হা/৪৫; মুসলিম হা/৩০১৭।
[13]. মুসলিম হা/১২১৮; আবুদাঊদ হা/১৯০৫; মিশকাত হা/২৫৫৫।
[14]. মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/১৫৯৪; মিশকাত হা/১৮৬।
[15]. তিরমিযী হা/৩৩৩৯; সহীহুল জামে‘ হা/৮২০১।
[16]. আহমাদ হা/১৪৫৫১; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা ফজর ৩ আয়াত।
[17]. আহমাদ হা/২৪৫১; সহীহুল জামে‘ হা/১৭০১; মিশকাত হা/১২১।
[18]. মুসলিম হা/১৩৪৮; ইবনু মাজাহ ৩০১৪; সহীহাহ হা/২৫৫১।
[19]. আহমাদ হা/৮০৩৩; সহীহুত তারগীব হা/১১৫৩; সহীহুল জামে‘ হা/১৮৬৮।
[20]. আবুদাঊদ হা/২৪১৯; তিরমিযী হা/৭৭৩; নাসাঈ হা/২০০৪।
[21]. তিরমিযী হা/৩৫৮৫; সহীহাহ হা/১৫০৩; মিশকাত হা/২৫৯৮।
[22]. মুসলিম হা/১১৬২; আবুদাঊদহা/২৪২৫; মিশকাত হা/২০৪৪।
[23]. ত্বাবারাণী হা/৫৭৯০; সহীহুত তারগীব হা/১০১২
[24]. তিরমিযী হা/২৯৭৫; সহীহ ইবনু হিববান হা/৩৮৯২।
[25]. তিরমিযী হা/৮৯০। ত্বাবারাণী
[26]. তিরমিযী হা/২৯৭৫; নাসাঈ হা/৩০৪৪; ইবনু মাজাহ হা/৩০১৫।
[27]. আবুদাঊদ হা/১৯৪৫; ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৮, সনদ সহীহ।
[28]. আবুদাঊদ হা/১৭৬৫; আহমাদ হা/১৯০৭৫; ইরওয়া হা/১৯৫৮।
[29]. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া (মদীনা: সঊদী আরব, বাদশাহ ফাহদ কুরআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স, ১৪২৫ হিঃ/২০০৪ খ্রিঃ) ২৫/২৮৭।
[30]. যা-দুল মা‘আদ ১/৫৭।
[31]. তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা বাক্বারাহ ১৯৭ আয়াতের তাফসীর দ্রঃ।
[32]. সহীহ ইবনু খুযাইমা হা/২৫৯৬; তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা বাক্বারাহ ১৯৭ নং আয়াতের তাফসীর দ্রঃ।
[33]. মুসলিম হা/১২৩২, ১২৫১।
[34]. বুখারী হা/১০৮২-৮৩; মুসলিম হা/৬৯৪; মিশকাত হা/১৩৪৭।
[35]. বুখারী হা/১০০০, ১১৫৯; মুসলিম হা/১৫৯৩; মিশকাত হা/১৩৪০।
[36]. বুখারী হা/৯৭০; মুসলিম হা/১২১৮, ১২৮৪।
[37]. বুখারী হা/১৬৬২।
[38]. বুখারী হা/১৬৭৩; মুসলিম হা/১২১৮; মিশকাত হা/২৫৫৫, ২৬০৭।
[39]. বুখারী হা/১৬৮৬; আবুদাঊদ হা/১৯৪০; মিশকাত হা/২৬১৩।
[40]. বুখারী হা/১৬৮৫; নাসাঈ হা/৩০৮৪; মিশকাত হা/২৬৭৫।
[41]. বুখারী হা/১৭২৭, ৪৪১০; আবুদাঊদ হা/১৯৮৪; মিশকাত হা/২৬৪৮।
[42]. আবুদাঊদ হা/১৯৭৩; মিশকাত হা/২৬৭৬।
[43]. বুখারী হা/১৭৪৬; মুসলিম হা/১২৯৯; মিশকাত হা/২৬২০।
[44]. বুখারী হা/১৭৪১, ১৭৫২, ১৭৫৩।
[45]. বুখারী হা/৯৫৬।
[46]. ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩; সহীহুল জামে‘ হা/৬৪৯০।
[47]. বায়হাক্বী ৯/২৬৪ পৃ. হা/১৯৫০৬; ইরওয়া হা/১১৩৯, ৪/৩৫৪; মির‘আত ৫/৭২-৭৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১০। গৃহীত: মুহাম্মাদ আসাদুললাহ আল-গালিব, মাসায়েলে কুরবানী, পৃ: ১১।
[48]. আবুদাঊদ হা/২৭৮৮; তিরমিযী হা/১৫১৮; মিশকাত হা/১৪৭৮।
[49]. বুখারী হা/১৭১৪, মুসলিম হা/১৩১৯।
[50]. নাসাঈ হা/২৪১৭, হাদীস সহীহ।
[51]. মুসলিম হা/২৮০৩; আবুদাউদ হা/২৪২৫; মিশকাত হা/২০৪৪।
[52]. ত্বাবারাণী হা/৫৭৯০; সহীহুত তারগীব হা/১০১২।
[53]. আহমাদ হা/৫৪৪৬; সহীহুত তারগীব হা/১২৪৮।
[54]. মুসলিম হা/১২৮৪; আবুদাঊদ হা/১৮১৬; নাসাঈ হা/২৯৯৮।
[55]. বুখারী হা/৯৬৯-এর অনুচ্ছেদ দ্র.।
[56]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৪/২২০।
[57]. শু‘আয়েব আরনাঊত্ব, যাদুল মা‘আদ ২/৩৬০।
[58]. দারাকুৎণী হা/১৭৫৬; ইরওয়াউল গালীল ৩/১২৫ হা/৬৫৪।
[59]. বুখারী হা/১৫৪৯; মুসলিম হা/১১৮৪; আবুদাঊদ হা/১৮১২।
[60]. বুখারী হা/২৬৯৭; আবুদাঊদ হা/৪৬০৬; ইবনু মাজাহ হা/১৪।
[61]. মুসলিম হা/১৯৭৭; নাসাঈ হা/৪৩৬৪; মিশকাত হা/১৪৫৯।
[62]. মুসলিম হা/১৯৭৭; আবু দাউদ হা/২৭৯১; তিরমিযী হা/১৫২৩।
[63]. আবুদাঊদ হা/২৭৮৯; নাসাঈ ৪৩৬৫। আলবানী একে যঈফ বলছেন। হাকেম একে সহীহ বলেছেন ও যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন। শু‘আয়েব আরনাঊত্ব ‘হাসান’ বলেছেন। আর এটাই অগ্রাধিকারযোগ্য। সম্ভবতঃ শায়েখ আলবানী রাবী ঈসা বিন হেলাল সম্পর্কে ইয়াকূব আল-সাখাভীর ‘তাওছীক্ব’ লক্ষ্য করেননি। এছাড়াও তিনি হাদীসটির মতনে যে অসংগতির কথা বলেছেন সেটি কোন মৌলিক ত্রুটি নয়। দ্রঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা ১৬ পৃ.; মাসিক আত-তাহরীক, ডিসেম্বর ২০১৭, প্রশ্নোত্তর ১৯/৯৯।
যিলহজ্জ মাসের ফযীলত : উম্মতে মুহাম্মাদীর বয়স ষাট থেকে সত্তর বছর। এত্থেকে অধিক বয়স কম লোকেরই হয়।[1] তাই অল্প সময়ে অধিক নেকী উপার্জনের জন্য মহান আল্লাহ বিভিন্ন মাস ও দিবসকে ফযীলতপূর্ণ করেছেন। অনুরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস হচ্ছে যিলহজ্জ মাস। এ মাসেরও অনেক ফযীলত রয়েছে।
১. এটা হারাম মাস : চারটি হারাম তথা সম্মানিত মাসের মধ্যে অন্যতম হ’ল যিলহজ্জ মাস। মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ،.
‘নিশ্চয়ই মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন’ (তওবা ৯/৩৬)।
আবূ বাকরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন,
الزَّمَانُ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِى بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ،
‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, সেদিন হ’তে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যুল-কা‘দাহ, যুল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। তিনটি মাস পর পর রয়েছে। আর একটি মাস হ’ল রজব-ই মুযার,[2] যা জুমাদা ও শা‘বান মাসের মাঝে অবস্থিত’।[3]
২. এটা হজ্জের মাস : ওমরার জন্য সারা বছর সুযোগ থাকলেও হজ্জের জন্য শরী‘আত কর্তৃক নির্ধারিত মাস রয়েছে। হজ্জের মাস সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ،
‘হজ্জ হয় সুবিদিত মাসগুলিতে। তারপর যে কেউ এ মাসগুলিতে হজ্জ করা স্থির করে সে হজ্জের সময় স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ করবে না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, হজ্জের সুবিদিত মাসগুলি হ’ল শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জ। আল্লাহ এ মাসগুলি হজ্জের জন্য নির্ধারণ করেছেন। আর ওমরা সারা বছর আদায় করা যায়। এ মাসগুলি ব্যতীত হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলে হজ্জ হবে না।[4]
৩. এটা কুরবানীর মাস : কুরবানীর একমাত্র মাস হ’ল যিলহজ্জ মাস। এই মাসের ১০ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত মোট চারদিন কুরবানী করার সময়। প্রথম দিন তথা ১০ই যিলহজ্জ সালাতুল ঈদের পর কুরবানী করতে হবে। ঈদের সালাতের আগে কুরবানী করলে কুরবানী হবে না। রাসূল (ﷺ) বলেন,
مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلاَةِ فَلْيَذْبَحْ مَكَانَهَا أُخْرَى، وَمَنْ كَانَ لَمْ يَذْبَحْ حَتَّى صَلَّيْنَا فَلْيَذْبَحْ عَلَى اسْمِ اللهِ.
‘যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে যবহ করেছে, সে যেন তদস্থলে আরেকটি যবহ করে নেয়। আর যে ব্যক্তি আমাদের সালাত আদায় করা পর্যন্ত যবহ করেনি, সে যেন এখন আল্লাহর নাম নিয়ে যবহ্ করে’।[5]
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের ফযীলত :
যিলহজ্জ মাস পুরোটাই ফযীলতপূর্ণ হ’লেও প্রথম দশ দিনের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। যেমন-
এক. আল্লাহ এই দিনগুলির কসম করেছেন : মহান আল্লাহ কুরআনে বিভিন্ন বিষয়ের কসম করেছেন। যিলহজ্জ মাসের দশ দিনের কসম করে আল্লাহ বলেন,
وَالْفَجْرِ، وَلَيَالٍ عَشْرٍ، وَالشَّفْعِ وَالْوَتْرِ
‘শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির, শপথ জোড় ও বেজোড়ের’ (ফজর ৮৯/১-৩)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
إِنَّ الْعَشْرَ عَشْرُ الأَضْحَى وَالْوِتْرَ يَوْمُ عَرَفَةَ وَالشَّفْعَ يَوْمُ النَّحْرِ،
‘দশম হ’ল ঈদুল আযহার দিন, বেজোড় হ’ল আরাফার দিন আর জোড় হ’ল কুরবানী দিন’।[6]
দুই. বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন : জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
أَفْضَلُ أَيَّامِ الدُّنْيَا أَيَّامُ الْعَشْرِ،
‘দুনিয়ার দিন সমূহের মধ্যে যিলহজ্জের প্রথম দশদিন সর্বোত্তম দিন’।[7]
তিন. এই দিনগুলির আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
مَا الْعَمَلُ فِى أَيَّامِ الْعَشْرِ أَفْضَلَ مِنَ الْعَمَلِ فِى هَذِهِ. قَالُوا وَلاَ الْجِهَادُ قَالَ وَلاَ الْجِهَادُ، إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَىْءٍ-
‘এমন কোন দিন নেই যে দিনসমূহের নেক আমল আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ মাসের এই দশ দিনের নেক আমল অপেক্ষা বেশি প্রিয়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি নয়? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, জিহাদও নয়। তবে জান-মাল নিয়ে যদি কোন লোক জিহাদে বের হয় এবং এ দু’টির কোনটি নিয়েই আর ফিরে না আসে তার কথা ভিন্ন।[8] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
مَا مِنْ عَمَلٍ أَزْكَى عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلاَ أَعْظَمَ أَجْراً مِنْ خَيْرٍ يَّعْمَلُهُ فِى عَشْرِ الأَضْحَى-
‘যেসব আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সর্বোত্তম মর্যাদা লাভ করা যায় যিলহজ্জ মাসের দশদিনের আমল তার অনুরূপ’।[9]
চার. এই দশ দিনে সকল মৌলিক ইবাদত একত্রিত হয় : এই দশদিন আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত প্রায় সকল ইবাদত একত্রিত হয়, যা অন্য কোন সময়ে একত্রিত হওয়া সম্ভব নয়। যেমন হজ্জ, কুরবানী, সালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বাসহ সকল ইবাদত এই দশ দিন একত্রিত করা যায়। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,
وَالَّذِي يَظْهَرُ أَنَّ السَّبَبَ فِي امْتِيَازِ عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ لِمَكَانِ اجْتِمَاعِ أُمَّهَاتِ الْعِبَادَةِ فِيهِ وَهِيَ الصَّلَاةُ وَالصِّيَامُ وَالصَّدَقَةُ وَالْحَجُّ وَلَا يَتَأَتَّى ذَلِكَ فِي غَيْرِهِ،
‘এ কথা স্পষ্ট হয় যে, যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের বিশেষ গুরুত্বের কারণ; যেহেতু ঐ দিনগুলিতে মৌলিক ইবাদতসমূহ একত্রিত হয়েছে। যেমন সালাত, ছিয়াম, ছাদাক্বাহ এবং হজ্জ, যা অন্যান্য দিনগুলিতে এভাবে একত্রিত হয় না’।[10]
পাঁচ. দ্বীনের নিদর্শনসমূহের সম্মানের সময় : এই দশ দিনে যেহেতু ইসলামের মৌলিক ইবাদত একত্রিত হয়, সেহেতু আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শন সমূহও সম্মান করা সহজ হয়। মহান আল্লাহ বলেন,
ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ،
‘এটাই হ’ল আল্লাহর বিধান, যে আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাক্বওয়া থেকেই’ (হজ্জ ২২/৩২)।
আল্লাহর শি‘আর বা নিদর্শন বলতে বুঝায় এমন প্রতিটি বিষয় যাতে আল্লাহর কোন নির্দেশের চিহ্ন দেয়া আছে (কুরতুবী)। এগুলি আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্ন। বিশেষ করে হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি, যেমন হজ্জের যাবতীয় কর্মকান্ড (কুরতুবী; সা‘দী)। হাদীর জন্য হাজীদের সঙ্গে নেয়া উট ইত্যাদি (ইবনে কাছীর)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এখানে আল্লাহর নিদর্শন সম্মান করার দ্বারা হাদীর জন্তুটি মোটাতাযা ও সুন্দর হওয়া বোঝানো হয়েছে (ইবনে কাছীর)।[11]
আরাফার দিনের ফযীলত :
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হ’ল আরাফার দিন। এ দিনেরও বিশেষ ফযীলত রয়েছে।-
১. আল্লাহর দ্বীন ও নে‘মত পরিপূর্ণ হওয়ার দিন : মহানবী (ﷺ)-এর নবুঅতের শেষদিকে বিদায় হজ্জের সময় আরাফার দিন শুক্রবার আল্লাহ ইসলামকে পরিপূর্ণ দ্বীন হিসাবে ঘোষণা করেন। আল্লাহ বলেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا،
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)।
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক ইহূদী তাঁকে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন। তা যদি আমাদের ইহুদী জাতির উপর অবতীর্ণ হ’ত, তবে অবশ্যই আমরা সে দিনকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করতাম। তিনি বললেন, কোন আয়াত? সে বলল, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার নে‘মত সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)। ওমর (রাঃ) বললেন, এটি যে দিনে এবং যে স্থানে নবী করীম (ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা জানি। তিনি সেদিন আরাফায় দাঁড়িয়েছিলেন আর সেটা ছিল জুম‘আর দিন’।[12]
২. কুরআন ও হাদীসকে চূড়ান্ত সংবিধান ঘোষণার দিন : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত্যুর অল্প কিছু দিন আগে বিদায় হজ্জের ভাষণে ক্বিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত আগত সকল মানুষের সকল সমস্যার সমাধান হিসাবে একমাত্র কুরআন ও হাদীসের কথা ঘোষণা করেন। ভাষণের এক পর্যায়ে তিনি বলেন,
وَقَدْ تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا لَنْ تَضِلُّوا بَعْدَهُ إِنِ اعْتَصَمْتُمْ بِهِ كِتَابَ اللهِ.
‘আমি তোমাদের মাঝে এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি যদি তোমরা তা অাঁকড়ে ধরো, তবে তোমরা আমার মৃত্যুর পর
কখনো বিপথগামী হবে না, তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব’।[13]
মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ
‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। যতক্ষণ তোমরা সে দু’টি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত’।[14]
৩. আল্লাহ এই দিনের কসম করেছেন : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
الْيَوْمُ الْمَوْعُودُ يَوْمُ الْقِيَامَةِ وَالْيَوْمُ الْمَشْهُودُ يَوْمُ عَرَفَةَ وَالشَّاهِدُ يَوْمُ الْجُمُعَةِ،
‘আল-ইয়াউমুল মাও‘ঊদ’ (বুরূজ ৮৫/২) অর্থ-ক্বিয়ামতের দিন; ‘আল-ইয়াউমুল মাশ্হূদ’ (হূদ ১১/১০৩) অর্থ আরাফাতে (উপস্থিতির) দিন এবং ‘আশ্-শাহিদ’ (বুরূজ ৮৫/৩) অর্থ- জুম‘আর দিন’।[15] আল্লাহ বলেন, ‘শপথ জোড় ও বেজোড়ের’ (ফজর ৮৯/৩)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘বেজোড়-এর অর্থ আরাফা দিবস এবং জোড়-এর অর্থ ইয়াওমুন্নাহর (কুরবানী দিন)’।[16]
৪. আরাফাত ময়দানের সন্নিকটে আল্লাহ মানব জাতি থেকে ওয়াদা নিয়েছেন : ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা আরাফার ময়দানের সন্নিকটে না‘মান নামক স্থানে আদম (আঃ)-এর মেরুদন্ড হ’তে তাঁর সন্তানদের বের করে শপথ নিয়েছিলেন। তাদেরকে পিঁপড়ার মত আদম (আঃ)-এর সামনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের সম্মুখে কথা বলেছিলেন,
أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوْا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِيْنَ، أَوْ تَقُولُوْا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِنْ بَعْدِهِمْ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُوْنَ-
‘আমি কি তোমাদের প্রভু নই? আদম সন্তানরা উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ, অবশ্যই আপনি আমাদের প্রতিপালক। এতে আমি সাক্ষী থাকলাম। যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন এ কথা বলতে না পার, আমরা জানতাম না কিংবা তোমরা এ কথাও বলতে না পার, আমাদের পিতৃ-পুরুষগণ আমাদের পূর্বে মুশরিক হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা তাদের পরবর্তী বংশধর। তুমি কি বাতিলধর্মী (পিতৃ-পুরুষ)-গণ যা করেছে সে আমলের কারণে আমাদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে দিবে’ (আ‘রাফ ৭/১৭২-১৭৩)।[17]
৫. এই দিন সবচেয়ে বেশী মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় : আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِى بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُولُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ،
‘এমন কোন দিন নেই, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে আরাফার দিনের চেয়ে জাহান্নাম থেকে বেশি মুক্তি দিয়ে থাকেন। তিনি সেদিন বান্দাদের খুব নিকটবর্তী হন, তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, এরা কি চায়? (অর্থাৎ তারা যা চায় আমি তাই দেব)।[18]
৬. এই দিন আল্লাহ ফেরেশতাদের কাছে তাঁর বান্দাদের নিয়ে গর্ব করেন : নবী করীম (ﷺ) বলেন,
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبَاهِى مَلاَئِكَتَهُ عَشِيَّةَ عَرَفَةَ بِأَهْلِ عَرَفَةَ فَيَقُولُ انْظُرُوا إِلَى عِبَادِى أَتَوْنِى شُعْثاً غُبْراً.
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আরাফার দিন বিকেলে আরাফায় অবস্থানকারী ব্যক্তিদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। অতঃপর বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে লক্ষ্য কর, তারা আমার কাছে এসেছে মাথায় এলোমেলো চুল নিয়ে ধুলি মলিন অবস্থায়’।[19]
৭. এই দিন মুসলমান (হাজী)দের ঈদ : এই মর্যাদাপূর্ণ দিন প্রত্যেক বছর মুসলমানদের মাঝে ফিরে আসে। এই দিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
يَوْمُ عَرَفَةَ وَيَوْمُ النَّحْرِ وَأَيَّامُ التَّشْرِيقِ عِيدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ وَهِىَ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ-
‘আমাদের মুসলিম জনগণের ঈদের দিন হচ্ছে আরাফার দিন, কুরবানীর দিন ও তাশ্রীকের দিন। এ দিনগুলি হচ্ছে পানাহারের দিন’।[20]
৮. আরাফার দো‘আ সবচেয়ে উত্তম দো‘আ : নবী করীম (ﷺ) বলেন,
خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِى لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ.
‘সকল দো‘আর শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল আরাফার দিনের দো‘আ। আর শ্রেষ্ঠ কালিমাহ (যিকর) যা আমি পাঠ করেছি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ পাঠ করেছেন তা হ’ল, ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর’। অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শারীক নেই। তাঁরই রাজত্ব। তার জন্যই সকল প্রশংসা। তিনি সব কিছুর উপরে ক্ষমতাবান’।[21]
৯. এই দিনের ছিয়াম দুই বছরের গুনাহের কাফফারা : কাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে আরাফা দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি বলেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهُ،
‘আরাফা দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আমি আশা করি যে, তা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গোনাহের কাফফারা হবে’।[22] সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ صَامَ عَرَفَةَ غُفِرَ لَهُ سَنَتَيْنِ مُتَتَابِعَتَيْنِ-
‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন ছিয়াম রাখে তার পরপর দুই বৎসরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়’।[23]
১০. হজ্জের মূল কাজ হ’ল আরাফায় অবস্থান করা : হজ্জের অন্যতম ফরয হ’ল আরাফায় ময়দানে অবস্থান করা। সুতরাং ‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বেই আরাফায় পৌঁছে গেল সে হজ্জ পেয়ে গেল।[24] পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ফজরের পূর্বে আরাফায় অবস্থান করল না, তার হজ্জ বিনষ্ট হয়ে গেল।[25] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
الْحَجُّ عَرَفَاتٌ الْحَجُّ عَرَفَاتٌ الْحَجُّ عَرَفَاتٌ أَيَّامُ مِنًى ثَلاَثٌ (فَمَنْ تَعَجَّلَ فِى يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ) وَمَنْ أَدْرَكَ عَرَفَةَ قَبْلَ أَنْ يَطْلُعَ الْفَجْرُ فَقَدْ أَدْرَكَ الْحَجَّ،
‘হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান, হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান, হজ্জ হচ্ছে আরাফায় অবস্থান। মিনার জন্য নির্ধারিত আছে তিন দিন। কোন ব্যক্তি যদি দুই দিন থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসে, তবে তার কোন গুনাহ হবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি বিলম্ব করে, তারও কোন গুনাহ হবে না’ (বাক্বারাহ ২/২০৩)। ফজর উদয়ের পূর্বেই যে ব্যক্তি আরাফায় পৌঁছে যায়, সে হজ্জ পেয়ে গেল’।[26]
কুরবানীর দিনের ফযীলত :
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের শেষ দিন হ’ল ইয়ামুন নাহার বা কুরবানীর দিন। এই দিনের বিশেষ ফযীলত ও গুরুত্ব রয়েছে। যেমন-
১. এটা হজ্জের বড় দিন : ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَقَفَ يَوْمَ النَّحْرِ بَيْنَ الْجَمَرَاتِ فِى الْحَجَّةِ الَّتِى حَجَّ فَقَالَ أَىُّ يَوْمٍ هَذَا قَالُوا يَوْمُ النَّحْرِ قَالَ هَذَا يَوْمُ الْحَجِّ الأَكْبَر-
‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (যিলহজ্জের ১০ তারিখ) নহরের দিন তিনটি জামরার মধ্যস্থলে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন, এটি কোন দিন? লোকেরা বলল, আজ কুরবানীর দিন। তিনি বললেন, আজ হজ্জের বড় দিন’।[27]
২. এটি আল্লাহর নিকট মহান দিন : নবী করীম (ﷺ) বলেন,
إِنَّ أَعْظَمَ الأَيَّامِ عِنْدَ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَوْمُ النَّحْرِ ثُمَّ يَوْمُ الْقَرِّ قَالَ ثَوْرٌ وَهُوَ الْيَوْمُ الثَّانِى-
‘অবশ্যই কুরবানীর দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মহান দিন। অতঃপর ‘ক্বার্র’-এর দিন। ছাওর বলেন, তা কুরবানীর দ্বিতীয় দিন’।[28]
উল্লেখ্য যে, অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন যে এই দশক উত্তম নাকি রামাযানের শেষ দশক উত্তম। এই প্রশ্নের জবাবে ইবনু তায়মিয়া (৬৬১-৭২৮ হিঃ) (রহঃ) বলেন,
أَيَّامُ عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ أَفْضَلُ مِنْ أَيَّامِ الْعَشْرِ مِنْ رَمَضَانَ وَاللَّيَالِي الْعَشْرُ الْأَوَاخِرُ مِنْ رَمَضَانَ أَفْضَلُ مِنْ لَيَالِي عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ،
‘যিলহজ্জের প্রথম দশকের দিনগুলি রামাযানের শেষ দশকের দিনগুলি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর রামাযানের শেষ দশকের রাতগুলি যিলহজ্জের প্রথম দশকের রাতগুলি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’।[29]
ইবনু তাইমিয়া (রহঃ)-এর উক্তি প্রসঙ্গে ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘এ উত্তর নিয়ে যদি কোন যোগ্য ও জ্ঞানী ব্যক্তি গভীরভাবে চিন্তা করেন, তাহ’লে তা সন্তোষজনক ও যথেষ্টরূপে পাবেন। যেহেতু দশ দিন ছাড়া অন্য কোন দিন নেই যার মধ্যে কৃত নেক আমল আল্লাহর নিকট অধিক পসন্দনীয় হ’তে পারে। তাছাড়া এতে রয়েছে আরাফার দিন, কুরবানী ও তারবিয়া (৮ই যিলহজ্জে)র দিন। পক্ষান্তরে রামাযানের শেষ দশকের রাত্রিগুলি হ’ল জাগরণের রাত্রি। যে রাত্রিগুলিতে রাসূল (ﷺ) রাত জেগে ইবাদত করতেন। আর তাতে রয়েছে এমন একটি রাত, যা হাযার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’।[30]
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের আমল :
যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের আমলগুলিকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমতঃ আম বা সাধারণ ইবাদত। অর্থাৎ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন বছরের অন্যান্য দিনের ন্যায় সকল নেক আমল করা। যেমন সালাত, ছিয়াম, দান-ছাদাক্বাহ, তাসবীহ-তাহলীল, রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ, পাপ থেকে তওবা করা, কারো হক নষ্ট হ’লে তার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়া ইত্যাদি। পাশাপাশি মুনকার বা নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে বিরত থাকা।
দ্বিতীয়তঃ খাছ বা বিশেষ ইবাদত। যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের কিছু বিশেষ আমল রয়েছে। যেমন-
১. হজ্জ পালন করা : সামর্থ্যবান সকল মুসলিমের উপর হজ্জ ফরয (আলে ইমরান ৩/৯৭)। হজ্জ পালনের জন্য প্রস্ত্ততি মূলক কয়েকটি মাস থাকলেও একমাত্র হজ্জের কার্যক্রম সম্পাদন করা হয় যিলহজ্জ মাসে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
لا ينبغي لأحد أن يحرم بالحج إلا في أشهر الحج،
‘হজ্জের মাস ছাড়া কারো হজ্জের ইহরাম বাঁধা উচিত নয়’।[31] আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন,
لاَ يُحْرَمُ بِالْحَجِّ إِلاَّ فِى أَشْهُرِ الْحَجِّ. فَإِنَّ مِنْ سُنَّةِ الْحَجِّ أَنْ يُحَرَمَ بِالْحَجِّ فِى أَشْهُرِ الْحَجِّ.
‘হজ্জের মাসগুলি ছাড়া ইহরাম বাঁধা উচিত নয়। কারণ হজ্জের মাসগুলিতে ইহরাম বাঁধা হজ্জের সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।[32]
মহান আল্লাহ বলেন,
الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ،
‘হজ্জ হয় সুনির্দিষ্ট মাসসমূহে। অতএব এই মাসসমূহে যে হজ্জ করা স্থির করে নিল, তার জন্য হজ্জের সময় অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)।
যারা হজ্জ পালন করবেন তাদের জন্য এই মাসে নিমেণর কাজগুলি ধারাবাহিকভাবে করতে হবে।
(ক) ইহরাম বাঁধা ও ওমরা পালন : হজ্জ ও ওমরার প্রথম কাজ হ’ল সঠিক নিয়মে ইহরাম বাঁধা। বিশে^র যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন হজ্জ বা ওমরাকারী যখনই মক্কায় প্রবেশ করবেন তখনই মীকাত হ’তে ইহরাম বাঁধবেন। হজ্জের মাস সমূহের মধ্যে যদি কোন মুসলিম হজ্জ করার ইচ্ছা পোষণ করেন তাহ’লে প্রথমে ওমরার জন্য ইহরাম বেঁধে মক্কায় প্রবেশ করে ওমরাহ আদায় করে তামাত্তু‘ হজ্জ পালনকারীগণ হালাল হয়ে যাবেন। আর ক্বিরান হজ্জ পালনকারীগণ ইহরাম সহ থাকবেন এবং ৮ই যিলহজ্জের জন্য অপেক্ষা করবেন। এ সময় তারা কা‘বা ঘর তাওয়াফ, বায়তুল্লায় সালাত আদায়, বেশী বেশী দো‘আ, যিকর, তাসবীহ-তাহলীল ও অন্যান্য ভাল কাজ করতে থাকবেন।
(খ) ৮ই যিলহজ্জের আমল : ৮ই যিলহজ্জ থেকেই মূলতঃ হজ্জের কার্যক্রম শুরু হয়। এই দিন তামাত্তু‘ হজ্জ পালনকারীগণ হজ্জের নিয়তে ওযূ-গোসল করে সুগন্ধি মেখে[33] ইহরাম বেঁধে তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে নিজ অবাসস্থল থেকে কা‘বা ঘরের ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। সকল হজ্জ পালনকারীগণ যোহরের পূর্বে মিনায় পৌঁছে সেখানে রাত্রি যাপন করবেন ও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তথা যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা যথা সময়ে ক্বছর করে জমা না করে শুধু ফরয সালাত আদায় করবেন।[34] তবে ফজরের দুই রাক‘আত সুন্নাত, বিতর সালাত ও সম্ভব হ’লে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করবে।[35]
(গ) ৯ই যিলহজ্জের আমল : এই দিন হজ্জ পালনকারীগণ সূর্য উদয়ের পর তালবিয়া পাঠ করতে করতে মিনা থেকে ১৪.৪ কিলোমিটার দূরে আরাফা ময়দানের দিকে রওয়ানা হবেন।[36] আর সেখানে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান করবেন এবং যোহরের সময় এক আযানে দুই ইক্বামতে যোহর ও আছর সালাত ক্বছর ও জমা করে আদায় করবেন।[37] সূর্যাস্তের পর হজ্জ পালনকারীগণ আরাফার ময়দানে মাগরিব সালাত আদায় না করে ৯ কিলোমিটার দূরে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হবেন ও সেখানে মাগরিব ও এশার সালাত জমা ও ক্বছর করে আদায় করবেন এবং রাত্রি যাপন করবেন।[38]
(ঘ) ১০ই যিলহজ্জের আমল : এই দিন সকালে মুদালিফায় ফজরের সালাত আদায় করে ৫ কিলোমিটার দূরে মিনার দিকে রওয়ানা হবেন এবং বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।[39] কঙ্কর নিক্ষেপের পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ করবেন এবং স্ত্রী সহবাস ব্যতীত প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে যাবেন।[40] তারপর কুরবানী করবেন এবং পুরুষরা মাথা মুন্ডন করবেন। আর মহিলাগণ চুলের আগা থেকে একটু ছেটে ফেলবেন।[41] তারপর ফরয তাওয়াফ বা তাওয়াফে ইফাযা ও ছাফা-মারওয়ায় সাঈ করে পূর্ণ হালাল হয়ে যাবেন এবং মিনায় গিয়ে রাত্রি যাপন করবেন।[42]
(ঙ) ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহজ্জের আমল : এই তিন দিন হজ্জ পালনকারীগণ মিনায় অবস্থান করবেন এবং সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তিন জামারায়[43] আল্লাহু আকবার বলে ৭টি করে কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।[44]
২. ঈদের সালাত আদায় করা : এই দশ দিনের অন্যতম আমল হ’ল ঈদুল আযহার সালাত আদায় করা। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَالأَضْحَى إِلَى الْمُصَلَّى، فَأَوَّلُ شَىْءٍ يَبْدَأُ بِهِ الصَّلاَةُ ثُمَّ يَنْصَرِفُ، فَيَقُومُ مُقَابِلَ النَّاسِ، وَالنَّاسُ جُلُوسٌ عَلَى صُفُوفِهِمْ، فَيَعِظُهُمْ وَيُوصِيهِمْ وَيَأْمُرُهُمْ، فَإِنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَقْطَعَ بَعْثًا قَطَعَهُ، أَوْ يَأْمُرَ بِشَىْءٍ أَمَرَ بِهِ، ثُمَّ يَنْصَرِفُ.
‘রাসূল (ﷺ) ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যেতেন এবং সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ করতেন তাহ’ল সালাত আদায়। আর সালাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তাঁরা কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাঁদের নছীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন তবে তা জারী করতেন। অতঃপর তিনি ফিরে যেতেন’।[45]
উল্লেখ্য, মহিলারাও ঈদের সালাতে পুরুষদের সাথে পর্দা সহকারে গমন করে সালাত আদায় করবেন। এমনকি ঋতুবর্তীরাও ঈদগাহে যাবেন এবং দো‘আয় অংশগ্রহণ করবেন তথা খুৎবা শ্রবণ করবেন।
৩. কুরবানী করা : যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের বিশেষ আরেকটি আমল হ’ল কুরবানী করা। পৃথিবীর প্রত্যেক মুসলমান চাই সে হজ্জ পালনকারী হন বা হজ্জের বাইরে থাকুন সকলেই এই দিনে কুরবানী করে আল্লাহর আদেশ পালন করেন। হজ্জে তামাত্তু‘ ও হজ্জে ক্বিরানকারীগণ মিনা ও তার আশপাশ হারাম এলাকায় আর হজ্জের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মুসলমানরা তাদের স্ব স্ব অবস্থানস্থলে কুরবানী করেন। কুরবানীর নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
‘তুমি তোমার রবের জন্য সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’ (কাওছার ১০৮/২)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مُصَلاَّنَا،
‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে’।[46] তবে কুরবানী করা ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। লোকেরা যাতে এটাকে ওয়াজিব মনে না করে, সেজন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আবুবকর ছিদ্দীক, ওমর ফারূক, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস, বেলাল, আবূ মাসঊদ আনছারী (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণ কখনো কখনো কুরবানী করতেন না।[47] প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে প্রত্যেক বছর একটি পশু দ্বারা কুরবানী করাই যখেষ্ট।[48] তবে তাক্বওয়া সহকারে (হজ্জ ২২/৩৭) যে যত বেশী করবে তার তত ছওয়াব হবে।[49]
৪. ছিয়াম পালন করা : যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের বিশেষ আমল হ’ল ছিয়াম পালন করা। নবী করীম (ﷺ)-এর কোন স্ত্রী থেকে বর্ণিত যে,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَصُومُ تِسْعًا مِنْ ذِى الْحِجَّةِ وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ وَثَلاَثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ أَوَّلَ اثْنَيْنِ مِنَ الشَّهْرِ وَخَمِيسَيْنِ-
‘রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যিলহজ্জ মাসের নয় দিন, আশূরার দিন এবং প্রত্যেক মাসের তিন দিন, মাসের দুই সোমবার এবং বৃহস্পতিবার
ছিয়াম পালন করতেন’ ।[50]
যিলহজ্জ মাসের প্রথম নয় দিন ছিয়াম পালন করার গুরুত্ব থাকলেও আরাফাতের দিন ছিয়াম পালনের আলাদা ফযীলত রয়েছেন। আর তা হ’ল বিগত ও আগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা।[51]
রাসূল (ﷺ) বলেন,
مَنْ صَامَ يَوْمَ عَرَفَةَ غُفِرَ لَهُ ذَنْبَ سَنَتَيْنِ مُتَتَابِعَتَيْنِ
‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন ছিয়াম রাখে তার পরপর দুই বৎসরের পাপরাশি মাফ হয়ে যায়’।[52]
৫. যিকর করা : এই দশ দিনের অন্যতম আমল হ’ল আল্লাহর বেশী বেশী যিকর করা তথা তাকবীর, তাহমীদ ও তাহলীল পাঠ করা। মহান আল্লাহ বলেন,
لِيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ عَلَى مَا رَزَقَهُمْ مِنْ بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ،
‘যেন তারা নিজেদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হ’তে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুস্পদ জন্তু থেকে যে রিযিক দিয়েছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে’ (হজ্জ ২২/২৮)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
مَا مِنْ أَيَّامٍ أَعْظَمَ عِنْدَ اللهِ وَلاَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الْعَمَلِ فِيْهِنَّ مِنْ هَذِهِ الأَيَّامِ الْعَشْرِ فَأَكْثِرُوْا فِيْهِنَّ مِنَ التَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ وَالتَّحْمِيْدِ-
‘এই দিনসূহ আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাপূর্ণ এবং এই দশদিনের মধ্যে সম্পাদিত আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। সুতরাং এই দিনগুলিতে তোমরা বেশী বেশী তাহলীল, তাকবীর ও তাহমীদ পাঠ কর’।[53]
যারা হজ্জে থাকবে তাদেরকেও আল্লাহ এই দিনগুলিতে যিকরের নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে আরাফার ময়দান থেকে ফিরে আসার পর। যেমন আল্লাহ বলেন,
فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ
‘সুতরাং যখন তোমরা আরাফাত হ’তে ফিরে আসবে, তখন মাশ‘আরুল হারামের কাছে পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং তিনি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন ঠিক সেভাবে তাঁকে স্মরণ করবে’ (বাক্বারাহ ২/১৯৮)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হজ্জের অবস্থা সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,
غَدَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ مِنًى إِلَى عَرَفَاتٍ مِنَّا الْمُلَبِّى وَمِنَّا الْمُكَبِّرُ-
‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে সকালে মিনা থেকে আরাফার দিকে রওয়ানা হই। তখন আমাদের মধ্যে কেউ তালবিয়া পাঠ করেছেন এবং কেউ তাকবীর পাঠ করেছেন’।[54]
হজ্জের কাজ শেষ করার পর আল্লাহকে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,
فَإِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَذِكْرِكُمْ آبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا-
‘অতঃপর যখন তোমরা হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করবে তখন আল্লাহকে এভাবে স্মরণ করবে যেভাবে তোমরা তোমাদের পিতৃ পুরুষদের স্মরণ করে থাক, অথবা তারচেয়েও অধিক’ (বাক্বারাহ ২/২০০)।
৬. তাকবীর পাঠ করা : তাকবীর তথা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করা এই দিনগুলির অন্যতম আমল। তাকবীর পাঠের সময়সীমা দুই ধরনের হ’তে পারে।
প্রথমতঃ আম বা ব্যাপাক তাকবীর : যিলহজ্জ মাসের প্রথম তারিখ থেকে তের তারিখ পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَاذْكُرُوا اللهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ، ‘আর তোমরা গণনাকৃত দিনগুলিতে আল্লাহকে স্মরণ করবে’ (বাক্বারাহ ২/২০৩)।
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
وَاذْكُرُوا اللهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ
(বাক্বারাহ ২/২০৩) দ্বারা (যিলহজ্জ মাসের) দশ দিন বুঝায় এবং والأَيَّامٍ المَعْدُودَات দ্বারা ‘আইয়ামুত-তাশরীক’ বুঝায়। ইবনু ওমর ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) এই দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাযারের দিকে যেতেন এবং তাদের তাকবীরের সঙ্গে অন্যরাও তাকবীর বলত। মুহাম্মাদ ইবনু আলী (রহঃ) নফল সালাতের পরেও তাকবীর বলতেন।[55]
দ্বিতীয়তঃ নির্দিষ্ট দিনে তাকবীর : যিলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয সালাতের শেষ তাকবীর বলবে।[56] আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) আরাফার দিন ফজর থেকে কুরবানীর দিন আছর পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন।[57] তাকবীরের শব্দাবলী নিমণরূপ-
اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আক্বার আল্লাহু আক্বার লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার আল্লাহু আক্বার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’।[58] হাজীগণ ইহরাম বাঁধার পর তাকবীর দিবেন। তবে হজ্জের দিনগুলি তথা ৮-১২ ই যিলহজ্জ বেশী বেশী নিম্নোক্ত তালবিয়া পাঠ করবেন।
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ-
‘আমি হাযির হে আল্লাহ, আমি হাযির। আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সাম্রাজ্য সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই’।[59] এই দিনগুলিতে তাকবীর উচ্চস্বরে পাঠ করবেন।[60]
৭. চুল ও নখ কর্তন না করা : যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের আরেকটি আমল হ’ল যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী পর্যন্ত চুল ও নখ কর্তন না করা। রাসূল (ﷺ) বলেন,
إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّىَ فَلاَ يَمَسَّ مِنْ شَعَرِهِ وَلاَ بَشَرِهِ شَيْئًا، وَفِي رِوَايَةٍ فَلاَ يَأْخُذَنَّ شَعْرًا وَلاَ يَقْلِمَنَّ ظُفُرًا، وَفِي رِوَايَةٍ مَنْ رَأَى هِلاَلَ ذِى الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَنْ يُضَحِّىَ فَلاَ يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلاَ مِنْ أَظْفَارِهِ،
‘তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা রাখলে, যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক শুরু হয়ে গেলে সে যেন নিজের চুল ও চামড়ার কোন কিছু স্পর্শ না করে (না কাটে)। অন্য এক বর্ণনায় আছে, সে যেন কেশ না ধরে ও নখ না কাটে। অপর এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের নব চাঁদ দেখবে ও কুরবানী করার নিয়ত করবে, সে যেন নিজের চুল ও নিজের নখগুলি না কাটে।[61] ঈদের সালাতের পর কুরবানী করে নখ ও চুল কাটতে পারবে। রাসূল (ﷺ) বলেন, যার কুরবানীর পশু রয়েছে, সে যেন যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।[62]
কুরবানী দিতে অক্ষম ব্যক্তি যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইখলাছের সাথে এ আমল করে তাহ’লে ঐ ব্যক্তি কুরবানীর পূর্ণ ছওয়াব পাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা কুরবানীর দিনকে এ উম্মতের জন্য ঈদ হিসাবে পরিগণিত করেছেন। এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি যদি দুগ্ধবতী ছাগল ছাড়া অন্য কোন পশু না পাই তবে কি তা দিয়েই কুরবানী করব? তিনি বললেন,
لا وَلَكِنْ خُذ مِنْ شَعْرِكَ وَأَظْفَارِكَ وَتَقُصُّ شَارِبَكَ وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ فَتِلْكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللهِ،
‘না, তবে তুমি এ দিন তোমার চুল ও নখ কাটবে। তোমার গোঁফ কাটবে। নাভির নিচের পশম কাটবে। এটাই আল্লাহর নিকট তোমার পরিপূর্ণ কুরবানী’।[63]
পরিশেষে বলব, উপরে বর্ণিত আমলগুলি সম্পাদনের মাধ্যমে যিলহজ্জ মাসের ফযীলত লাভ করা যায় এবং অশেষ ছওয়াব হাছিল করা যায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উক্ত আমলগুলি সঠিকভাবে পালন করে পরিপূর্ণ ছওয়াব লাভের তাওফীক দান করুন-আমীন!
[1]. তিরমিযী হা/৩৫৫০; ইবনু মাজাহ হা/৪২৩৬; সহীহুল জামে‘ হা/৪০৯৪।
[2]. আরবের মুযার সম্প্রদায় অন্যান্য সম্প্রদায় অপেক্ষা রজব মাসকে অধিক সম্মান করত। তাই এ মাসটিকে তাদের দিকে সম্বন্ধিত করে হাদীসে ‘রজবে-মুযার’ বলা হয়েছে।
[3]. বুখারী হা/৩১৯৭; মুসলিম হা/১৬৭৯; আবুদাঊদহা/১৯৪৭।
[4]. তাফসীরে তাবারী, সূরা বাক্বারাহ ১৯৭ নং আয়াতে তাফসীর দ্রঃ।
[5]. বুখারী হা/৫৫০০; নাসাঈ হা/৪৪১০
[6]. আহমাদ হা/১৪১০২; বাযযার হা/২২৮৬। হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন। শু‘আইব আরনাঊত এটিকে সহীহ বলেছেন। দ্র. আহমাদ হা/১৪৫১১; আলবানী (রহঃ) একে যঈফ বলেছেন। দ্র. যঈফুল জামে‘ হা/১৫০৮।
[7]. সহীহুল জামে‘ হা/১১৩৩; সহীহুত তারগীব হা/১১৫০।
[8]. বুখারী হা/৯৬৯; তিরমিযী হা/৭৫৭; মিশকাত হা/১৪৬০।
[9]. সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১১৪৮; ইরওয়া ৩/৩৯৮।
[10]. ফাতহুল বারী ২/৪৬০।
[11]. কুরআনুল কারীম (সঊদী আরব: বাদশাহ ফাহদ কুরআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স ১৪৪০ হিঃ) ২/১৭৬৭-১৭৬৮।
[12]. বুখারী হা/৪৫; মুসলিম হা/৩০১৭।
[13]. মুসলিম হা/১২১৮; আবুদাঊদ হা/১৯০৫; মিশকাত হা/২৫৫৫।
[14]. মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/১৫৯৪; মিশকাত হা/১৮৬।
[15]. তিরমিযী হা/৩৩৩৯; সহীহুল জামে‘ হা/৮২০১।
[16]. আহমাদ হা/১৪৫৫১; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা ফজর ৩ আয়াত।
[17]. আহমাদ হা/২৪৫১; সহীহুল জামে‘ হা/১৭০১; মিশকাত হা/১২১।
[18]. মুসলিম হা/১৩৪৮; ইবনু মাজাহ ৩০১৪; সহীহাহ হা/২৫৫১।
[19]. আহমাদ হা/৮০৩৩; সহীহুত তারগীব হা/১১৫৩; সহীহুল জামে‘ হা/১৮৬৮।
[20]. আবুদাঊদ হা/২৪১৯; তিরমিযী হা/৭৭৩; নাসাঈ হা/২০০৪।
[21]. তিরমিযী হা/৩৫৮৫; সহীহাহ হা/১৫০৩; মিশকাত হা/২৫৯৮।
[22]. মুসলিম হা/১১৬২; আবুদাঊদহা/২৪২৫; মিশকাত হা/২০৪৪।
[23]. ত্বাবারাণী হা/৫৭৯০; সহীহুত তারগীব হা/১০১২
[24]. তিরমিযী হা/২৯৭৫; সহীহ ইবনু হিববান হা/৩৮৯২।
[25]. তিরমিযী হা/৮৯০। ত্বাবারাণী
[26]. তিরমিযী হা/২৯৭৫; নাসাঈ হা/৩০৪৪; ইবনু মাজাহ হা/৩০১৫।
[27]. আবুদাঊদ হা/১৯৪৫; ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৮, সনদ সহীহ।
[28]. আবুদাঊদ হা/১৭৬৫; আহমাদ হা/১৯০৭৫; ইরওয়া হা/১৯৫৮।
[29]. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া (মদীনা: সঊদী আরব, বাদশাহ ফাহদ কুরআন মুদ্রণ কমপ্লেক্স, ১৪২৫ হিঃ/২০০৪ খ্রিঃ) ২৫/২৮৭।
[30]. যা-দুল মা‘আদ ১/৫৭।
[31]. তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা বাক্বারাহ ১৯৭ আয়াতের তাফসীর দ্রঃ।
[32]. সহীহ ইবনু খুযাইমা হা/২৫৯৬; তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা বাক্বারাহ ১৯৭ নং আয়াতের তাফসীর দ্রঃ।
[33]. মুসলিম হা/১২৩২, ১২৫১।
[34]. বুখারী হা/১০৮২-৮৩; মুসলিম হা/৬৯৪; মিশকাত হা/১৩৪৭।
[35]. বুখারী হা/১০০০, ১১৫৯; মুসলিম হা/১৫৯৩; মিশকাত হা/১৩৪০।
[36]. বুখারী হা/৯৭০; মুসলিম হা/১২১৮, ১২৮৪।
[37]. বুখারী হা/১৬৬২।
[38]. বুখারী হা/১৬৭৩; মুসলিম হা/১২১৮; মিশকাত হা/২৫৫৫, ২৬০৭।
[39]. বুখারী হা/১৬৮৬; আবুদাঊদ হা/১৯৪০; মিশকাত হা/২৬১৩।
[40]. বুখারী হা/১৬৮৫; নাসাঈ হা/৩০৮৪; মিশকাত হা/২৬৭৫।
[41]. বুখারী হা/১৭২৭, ৪৪১০; আবুদাঊদ হা/১৯৮৪; মিশকাত হা/২৬৪৮।
[42]. আবুদাঊদ হা/১৯৭৩; মিশকাত হা/২৬৭৬।
[43]. বুখারী হা/১৭৪৬; মুসলিম হা/১২৯৯; মিশকাত হা/২৬২০।
[44]. বুখারী হা/১৭৪১, ১৭৫২, ১৭৫৩।
[45]. বুখারী হা/৯৫৬।
[46]. ইবনু মাজাহ হা/৩১২৩; সহীহুল জামে‘ হা/৬৪৯০।
[47]. বায়হাক্বী ৯/২৬৪ পৃ. হা/১৯৫০৬; ইরওয়া হা/১১৩৯, ৪/৩৫৪; মির‘আত ৫/৭২-৭৩; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/১০। গৃহীত: মুহাম্মাদ আসাদুললাহ আল-গালিব, মাসায়েলে কুরবানী, পৃ: ১১।
[48]. আবুদাঊদ হা/২৭৮৮; তিরমিযী হা/১৫১৮; মিশকাত হা/১৪৭৮।
[49]. বুখারী হা/১৭১৪, মুসলিম হা/১৩১৯।
[50]. নাসাঈ হা/২৪১৭, হাদীস সহীহ।
[51]. মুসলিম হা/২৮০৩; আবুদাউদ হা/২৪২৫; মিশকাত হা/২০৪৪।
[52]. ত্বাবারাণী হা/৫৭৯০; সহীহুত তারগীব হা/১০১২।
[53]. আহমাদ হা/৫৪৪৬; সহীহুত তারগীব হা/১২৪৮।
[54]. মুসলিম হা/১২৮৪; আবুদাঊদ হা/১৮১৬; নাসাঈ হা/২৯৯৮।
[55]. বুখারী হা/৯৬৯-এর অনুচ্ছেদ দ্র.।
[56]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৪/২২০।
[57]. শু‘আয়েব আরনাঊত্ব, যাদুল মা‘আদ ২/৩৬০।
[58]. দারাকুৎণী হা/১৭৫৬; ইরওয়াউল গালীল ৩/১২৫ হা/৬৫৪।
[59]. বুখারী হা/১৫৪৯; মুসলিম হা/১১৮৪; আবুদাঊদ হা/১৮১২।
[60]. বুখারী হা/২৬৯৭; আবুদাঊদ হা/৪৬০৬; ইবনু মাজাহ হা/১৪।
[61]. মুসলিম হা/১৯৭৭; নাসাঈ হা/৪৩৬৪; মিশকাত হা/১৪৫৯।
[62]. মুসলিম হা/১৯৭৭; আবু দাউদ হা/২৭৯১; তিরমিযী হা/১৫২৩।
[63]. আবুদাঊদ হা/২৭৮৯; নাসাঈ ৪৩৬৫। আলবানী একে যঈফ বলছেন। হাকেম একে সহীহ বলেছেন ও যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন। শু‘আয়েব আরনাঊত্ব ‘হাসান’ বলেছেন। আর এটাই অগ্রাধিকারযোগ্য। সম্ভবতঃ শায়েখ আলবানী রাবী ঈসা বিন হেলাল সম্পর্কে ইয়াকূব আল-সাখাভীর ‘তাওছীক্ব’ লক্ষ্য করেননি। এছাড়াও তিনি হাদীসটির মতনে যে অসংগতির কথা বলেছেন সেটি কোন মৌলিক ত্রুটি নয়। দ্রঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা ১৬ পৃ.; মাসিক আত-তাহরীক, ডিসেম্বর ২০১৭, প্রশ্নোত্তর ১৯/৯৯।
মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
সহকারী শিক্ষক, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল, খিলগাঁও, ঢাকা।
সহকারী শিক্ষক, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল, খিলগাঁও, ঢাকা।
Last edited: