সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

জীবনী যদি মুহাম্মাদ (সঃ) কবর থেকে তাঁর সাহাবীদের (রঃ) কোন উপকার করতে না পারেন, তবে পৃথিবীতে আর কোন ব্যক্তি আছে যে কবর থেকে মানুষের উপকার করতে পারবে!

রসূলুল্লাহর (সঃ) ইন্তিকাল পরবর্তী জীবন সম্পর্কে হাদীস​
ما مِنْ أَحَدٍ يُسَلَّمَ عَلَيَّ إِلَّا رَدَّ اللهُ عَلَى رُوحِي حَتَّى أَردَ عَلَيْهِ السَّلَامَ مَا
“যখনই কোনো মানুষ আমাকে সালাম করে তখনই আল্লাহ আমার রূহকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন, যেন আমি তার সালামের প্রতিউত্তর দিতে পারি।”
(আবূ দাউদ,আস-সুনান ২/২১৮ হাদীসটির সনদ গ্রহণযোগ্য )।

আব্দুল হাই লাখনবী বলেন, প্রচলিত যে সকল বানোয়াট ও মিথ্যা কথা রসুলুল্লাহ (সঃ)-এর নামে বলা হয় তার মধ্যে রয়েছে:​
إِنَّهُ يَسْمَعُ صَلَاةَ مَنْ يُصَلِّي عَلَيْهِ وَإِنْ كَانَ نَانِيًّا مِنْ قَبْرِهِ بِلا وَاسِطَةٍ
“যদি কেউ রসূলুল্লাহ (স)-এর উপর দরুদ পাঠ করে, তবে সেই ব্যক্তি যত দূরেই থাক, তিনি কারো মাধ্যম ছাড়াই তা শুনতে পান। (আব্দুল হাই লাখনবী, আল-আসার, পৃ. ৪৬)।

এই কথাটি শুধু সনদবিহীন, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা কথাই নয়; উপরন্তু তা উপরের সহীহ হাদীস বিরোধী ।

এ সকল বানোয়াট কথার মধ্যে অন্যতম হলো, রসূলুল্লাহ (সঃ) ও নবীগণের ইন্তিকাল পরবর্তী এই বারযাখী জীবনকে পার্থিব বা জাগতিক জীবনের মতই মনে করা। এই ধারণাটি ভুল এবং তা কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীগণের রীতির পরিপন্থী। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও সূফী মুহাম্মাদ ইবনুস সাইয়িদ দরবেশ হূত ও অন্যান্য মুহাদ্দিস এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ইন্তিকালের পরের ঘটনাগুলি বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে পাঠ করলেই আমরা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, সাহাবীগণ রসূলুল্লাহ (সঃ)-কে কখনোই জাগতিক জীবনের অধিকারী বলে মনে করেন নি। খলীফা নির্বাচনের বিষয়, গোসলের বিষয়, দাফনের বিষয়, পরবর্তী সকল ঘটনার মধ্যেই আমরা তা দেখতে পাই। রসূলুল্লাহর (সঃ) জীবদ্দশায় তাঁর পরামর্শ, দোয়া ও অনুমতি ছাড়া তাঁরা কিছুই করতেন না। কিন্তু তাঁর ইন্তিকালের পরে কখনো কোনো সাহাবী তাঁর রাওযায় দোয়া, পরামর্শ বা অনুমতি গ্রহণের জন্য আসেন নি। সাহাবীগণ বিভিন্ন সমস্যায় পড়েছেন, যুদ্ধবিগ্রহ করেছেন বা বিপদগ্রস্ত হয়েছেন। কখনোই খুলাফায়ে রাশেদীন বা সাহাবীগণ দলবেঁধে বা একাকী রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রাওযা মুবারাকে যেয়ে তাঁর কাছে দোয়া-পরামর্শ চাননি ।

আবু বকরের (রা) খিলাফত গ্রহণের পরেই কঠিনতম বিপদে নিপতিত হয় মুসলিম উম্মাহ। একদিকে বাইরের শত্রু, অপরদিকে মুসলিম সমাজের মধ্যে বিদ্রোহ, সর্বোপরি প্রায় আধা ডজন ভণ্ড নবী। মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্বের সংকট। কিন্তু একটি দিনের জন্যও আবু বকর (রা) সাহাবীগণকে নিয়ে বা নিজে রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রাওযায় যেয়ে তাঁর কাছে দোয়া চাননি।

এমনকি আল্লাহর · কাছে দোয়া করার জন্যও রাওযা শরীফে সমবেত হয়ে কোনো অনুষ্ঠান করেননি । কী কঠিন বিপদ ও যুদ্ধের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন আলী (রা)। অথচ তাঁর সবচেয়ে আপনজন রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রাওযায় যেয়ে তাঁর কাছে দোয়া চাননি বা আল্লাহর কাছে দোয়ার জন্য রাওযা শরীফে কোনো অনুষ্ঠান করেন নি।

রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ইন্তিকালের পরে ফাতিমা, আলী ও আব্বাস (রা) খলীফা আবূ বাকর (রা)-এর নিকট রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পরিত্যক্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার চেয়েছেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে অনেক মতভেদ ও মনোমালিন্য হয়েছে। উম্মুল মুমিনীন আয়েশার (রা) সাথে আমীরুল মুমিনীন আলীর (রা) কঠিন যুদ্ধ হয়েছে, আমীর মুয়াবিয়ার (রা) সাথেও তাঁর যুদ্ধ হয়েছে। এসকল যুদ্ধে অনেক সাহাবী সহ অসংখ্য মুসলিম নিহত হয়েছেন। কিন্তু এসকল কঠিন সময়ে তাঁদের কেউ কখনো রসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এসে পরামর্শ চান নি । তিনি নিজেও কখনো এসকল কঠিন মুহুর্তে তাঁর কন্যা, জামাতা, চাচা, খলীফা কাউকে কোনো পরামর্শ দেন নি । এমনকি কারো কাছে রূহানীভাবেও প্রকাশিত হয়ে কিছু বলেন নি । আরো লক্ষণীয় যে, প্রথম শতাব্দীগুলির জালিয়াতগণ এ সকল মহান সাহাবীর পক্ষে ও বিপক্ষে অনেক জাল হাদীস বানিয়েছে, কিন্তু কোনো জালিয়াতও প্রচার করে নি যে, রসূলুল্লাহ (সঃ) ইন্তিকালের পরে রাওয়া শরীফ থেকে বা সাহাবীগণের মাজলিসে এসে অমুক সাহাবীর পক্ষে বা বিপক্ষে যুদ্ধ করতে বা কর্ম করতে নির্দেশ দিয়েছেন (দরবেশ হূত, আসনাল মাতালিব, পৃ. ২৯৮-২৯৯ )।​

হাদীসের নামে জালিয়াতি: প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
পি-এইচ. ডি. (রিয়াদ), এম. এ. (রিয়াদ), এম.এম (ঢাকা) সহযোগী অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া​
 
Last edited:
Top