If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
প্রথমত: ছুটে যাওয়া সালাতের ক্ষেত্রে তিনটি অবস্থা হতে পারে। যেমন,
প্রথম অবস্থা: ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে সালাত ছুটে যাওয়া। এ অবস্থায় তার ওপর কাযা করা ওয়াজিব। এর দলীল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«من نسي صلاة أو نام عنها فكفارتها أن يصليها إذا ذكرها».
“যে সালাত আদায় করতে ভুলে যায় বা সে সময় ঘুমিয়ে থাকায় তা ছুটে যায়, তার কাফফারা হলো সে যখনই তা মনে করবে তখনই (সাথে সাথে) সালাত আদায় করে নিবে।”[1]
এবং সে তা ধারাবাহিকভাবে আদায় করবে যেমনটি তার ওপর ফরয হয়েছে, প্রথমটি প্রথমে করবে। এর দলীল জাবির ইবন আবদুল্লাহ-এর হাদীস:
«أن عمر بن الخطاب رضي الله عنه جاء يوم الخندق بعد ما غربت الشمس فجعل يسب كفار قريش قال: يا رسول الله ما كدت أصلي العصر حتى كادت الشمس تغرب، قال النبي صلى الله عليه وسلم: والله ما صليتها، فقمنا إلى بطحان فتوضأ للصلاة وتوضأنا لها فصلَّى العصر بعد ما غربت الشمس، ثم صلى بعدها المغرب».
“উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খানদাকের যুদ্ধের দিন সূর্যাস্তের পর এসে ক্বুরাইশ কাফিরদের গালি দিতে লাগলেন, তিনি বললেন: “হে রাসূলুল্লাহ, আমি আসরের সালাত আদায় করতে যেতে যেতে সূর্য ডুবে যেতে লাগল!” নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমিও এর (আসরের) সালাত আদায় করি নি।’ এরপর আমরা বাত্বহান-এ দাঁড়ালাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের জন্য অযু করলেন, আমরাও সালাতের জন্য অযু করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আসরের সালাত আদায় করলেন, এরপর মাগরিব এর সালাত আদায় করলেন।”[2]
দ্বিতীয় অবস্থা: এমন ওযরের কারণে সালাত ছুটে যাওয়া, যে সময় কোনো হুঁশ থাকে না। যেমন, কোমা। এ অবস্থার ক্ষেত্রে তার ওপর থেকে সালাত (আদায়ের দায়িত্ব) উঠে যায় এবং তার ওপর তা কাযা করা ওয়াজিব হয় না।
ফাতওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল:
আমার এক গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটেছিল, ফলে তিন মাস হাসপাতালে শুয়ে ছিলাম, এ সময়ে আমার কোনো হুঁশ ছিল না। এ পুরো সময় আমি কোনো সালাত আদায় করি নি। আমার ওপর থেকে কি তা (সালাত আদায়ের দায়িত্ব) উঠে যাবে নাকি পূর্বের সব (ছুটে যাওয়া) সালাত পুনরায় আদায় করব?
তারা উত্তরে বললেন:
“উল্লিখিত সময়ের সালাত (কাযা আদায়ের দায়িত্ব) আপনার থেকে ছুটে যাবে। কারণ, আপনার তখন কোনো হুঁশ ছিল না।”
তাদেরকে আরও প্রশ্ন করা হয়েছিল:
যদি কেউ এক মাস অজ্ঞান অবস্থায় থাকে আর এ পুরো মাস কোনো সালাত আদায় না করে, তবে সে কীভাবে ছুটে যাওয়া সালাত পুনরায় আদায় করবে?
তারা উত্তরে বলেন:
“এ সময়ে যে সালাতসমূহ বাদ গিয়েছে তা কাযা করবে না। কারণ, সে উল্লিখিত অবস্থায় পাগলের হুকুমের মধ্যে পড়ে। আর পাগল ব্যক্তির জন্য কলম উঠানো হয়েছে (অর্থাৎ তার ওপর শরী‘আতের বিধি-বিধান প্রযোজ্য নয়)।”[3]
তৃতীয় অবস্থা: ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ওযর (অজুহাত) ছাড়া সালাত ত্যাগ করা, আর তা কেবল দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে:
এক. সে যদি সালাতকে অস্বীকার করে, এর ফরয হওয়াকে মেনে না নেয়, তবে সে লোকের কুফুরীর ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ, সে ইসলামের ভিতরে নেই। তাকে (আগে) ইসলামে প্রবেশ করতে হবে, এরপর এর আরকান ও ওয়াজিবসমূহ পালন করতে হবে। আর কাফির থাকা অবস্থায় যে সালাত ত্যাগ করেছে তার কাযা করা তার ওপর ওয়াজিব নয়।
দুই. সে যদি অবহেলা বা অলসতাবশত সালাত ত্যাগ করে, তবে তার কাযা শুদ্ধ হবে না। কারণ সে যখন তা ত্যাগ করেছিল, তখন তার কোনো গ্রহণযোগ্য ওযর (অজুহাত) ছিল না। আর আল্লাহ সালাতকে সুনির্ধারিত, সুনির্দিষ্ট এক সময়ে ফরয করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا ١٠٣ ﴾ [النساء: ١٠٣]
“নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]
অর্থাৎ এর সুনির্দিষ্ট সময় আছে। এর দলীল হলো রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী:
«مَنْ عَمِلَ عَمَلا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
“যে এমন কোনো কাজ করে যা আমাদের (শরী‘আতের) অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।”[4]
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি ২৪ বছর বয়সের আগে সালাত আদায় করি নি। এখন আমি প্রতি ফরয সালাতের সাথে আরেকবার ফরয সালাত আদায় করি। আমার জন্য কি তা করা জায়েয? আমি কি এভাবেই চালিয়ে যাব নাকি আমার ওপর অন্য কোনো করণীয় আছে?
তিনি বলেন: “যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে, সঠিক মতানুসারে তার ওপর কোনো কাযা নেই; বরং তাকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাওবা করতে হবে। কারণ, সালাত ইসলামের স্তম্ভ, তা ত্যাগ করা ভয়াবহ অপরাধসমূহের একটি; বরং ইচ্ছাকৃতভাবে তা (সালাত) ত্যাগ করা ‘বড় কুফর’ যা আলেমগণের দু’টি মতের মধ্যে সবচেয়ে সঠিকটি, কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন,
«العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر»
“আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে চুক্তি হলো সালাত। তাই যে তা ত্যাগ করে, সে কাফের হয়ে গেলো।”[5]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«بين الرجل وبين الشرك والكفر ترك الصلاة »
“একজন ব্যক্তি এবং শির্ক ও কুফুরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।”[6]
এক্ষেত্রে ভাই আপনার ওপর কর্তব্য হলো আল্লাহর নিকট সত্যিকার অর্থে তাওবা করা। আর তা হলো (১) পূর্বে যা গত হয়েছে তার ব্যাপারে অনুতপ্ত হওয়া (২) সালাত ত্যাগ একেবারে ছেড়ে দেওয়া এবং (৩) এ মর্মে দৃঢ় সংকল্প করা যে, এ কাজে আপনি আর কখনও ফিরে যাবেন না।
আর আপনাকে প্রতি সালাতের সাথে বা অন্য সালাতের সাথে কাযা করতে হবে না, বরং আপনাকে শুধু তাওবা করতে হবে। আর সকল প্রশংসা আল্লাহর। যে তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]
“হে মুমিনগণ তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«التائب من الذنب كمن لا ذنب له»
“পাপ থেকে তাওবাকারী এমন ব্যক্তির ন্যায় যার কোনো পাপই নেই”।[7]
তাই আপনাকে সত্যিকার অর্থে তাওবা করতে হবে, নিজের নাফসের সাথে হিসাব-নিকাশ করতে হবে, সঠিক সময়ে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সদা-সচেষ্ট থাকতে হবে, আপনার দ্বারা যা যা হয়েছে সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে এবং বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে। আর আপনাকে কল্যাণের সুসংবাদ জানাই, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢ ﴾ [طه: ٨٢]
“আর যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং হিদায়াতের পথ অবলম্বন করে, নিশ্চয় আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল।” [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৮২]
সূরা আল-ফুরক্বান-এ শির্ক, হত্যা, যিনা (ব্যভিচার) উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَئَِّاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠ ﴾ [الفرقان: ٦٧-٦٩]
“আর যে তা করল সে পাপ করল, কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে এবং সে সেখানে অপমানিত অবস্থায় চিরকাল অবস্থান করবে, তবে সে ছাড়া যে তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে। আল্লাহ তাদের খারাপ কাজসমূহকে ভালো কাজে পরিবর্তন করে দিবেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।” [সূরা আল-ফুরক্বান, আয়াত: ৬৯-৭০]
আমরা আল্লাহর কাছে চাই আমাদের ও আপনার জন্য তাওফীক, বিশুদ্ধ তাওবা ও কল্যাণের পথে অবিচলতা।”[8]
দ্বিতীয়ত: আর সিয়াম কাযা করার ক্ষেত্রে, আপনার সিয়াম ত্যাগ করা যদি আপনার সালাত ত্যাগ করা অবস্থায় হয়, তবে আপনার ওপর সে সব দিনের, যে সব দিনে আপনি সাওম ভঙ্গ করেছেন তার কাযা করা ওয়াজিব নয়, কারণ যে সালাত ত্যাগ করে, সে বড় কুফর সংঘটনকারী কাফির (যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়) যেমনটি পূর্বে উল্লেখ হয়েছে। আর কোনো কাফির যদি ইসলাম কবুল করে, কুফর অবস্থায় সে যে ইবাদাতগুলো ত্যাগ করেছিল, তা কাযা করা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
আর যদি আপনার সিয়াম ত্যাগ সালাত আদায় করা অবস্থায় হয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রে শুধু দুটো সম্ভাব্য ব্যাপারই ঘটতে পারে:
প্রথমত: আপনি রাতে সিয়ামের নিয়্যাত করেন নি, বরং সাওম ভঙ্গের ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এক্ষেত্রে আপনার পক্ষ থেকে কাযা শুদ্ধ হবে না। কারণ আপনি কোনো ওযর (গ্রহণযোগ্য অজুহাত) ছাড়া শরী‘আতে নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করণীয় ইবাদাত ত্যাগ করেছেন।
দ্বিতীয়ত: আপনি সিয়াম শুরু করার পর সেই দিনে তা ভঙ্গ করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার ওপর কাযা করা ফরয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রমযান মাসে দিনের বেলায় (যৌন) মিলনকারী ব্যক্তিকে কাফফারা আদায় করার আদেশ দিলেন, তখন বললেন: «صم يوماً مكانه» “তুমি সে দিনের পরিবর্তে একদিন সাওম পালন কর।”[9]
আর শাইখ ইবন উসাইমীনকে রমযান মাসে দিনের বেলা কোনো ওযর (সঙ্গতকারণ) ছাড়া সাওম ভঙ্গ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি উত্তরে বলেন: “রমযান মাসে দিনের বেলা কোনো ওযর ছাড়া সাওম ভঙ্গ করা সবচেয়ে বড় (কবীরা) গুনাহসমূহের একটি, এ দ্বারা সে ব্যক্তি ফাসিক্ব হয়ে যাবে। তার ওপর ওয়াজিব হবে আল্লাহর কাছে তাওবা করা, যেদিন সাওম ভঙ্গ করেছিল সেদিনের কাযা করা, অর্থাৎ সে যদি সাওম পালন শুরু করে দিনের মাঝে কোনো ওযর ছাড়া সাওম ভঙ্গ করেছে তার কাযা করতে হবে। কারণ যেহেতু সে সাওম শুরু করেছে, তার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল এবং তা ফরয এই বিশ্বাসে তাতে প্রবেশ করেছে, তাই তার ওপর এর কাযা করা বাধ্যতামূলক। নাযর (মান্নতের) এর ন্যায়।
আর যদি কোনো ওযর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে শুরু থেকেই সাওম ত্যাগ করে, তবে অধিক শক্তিশালী মতানুসারে তাকে তার কাযা আদায় করতে হবে না, কারণ সে এর দ্বারা কোনো উপকার পাবে না। এটি এজন্য যে, তা তার থেকে কবুল করা হবে না। এক্ষেত্রে মূলনীতিটি হলো সকল ইবাদাত যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত, তা কোনো ওযর (গ্রহণযোগ্য কারণ) ছাড়া সেই নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্বে করা হলে, তা তার থেকে কবুল করা হবে না। এর দলীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: «مَنْ عَمِلَ عَمَلا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
“যে এমন কোনো কাজ করে যা আমাদের (শারী‘আতের) অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।”[10]
কারণ, তা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করার মধ্যে পড়ে আর আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করা যুলুম (অবিচার)। আর যালিম ব্যক্তির কাছ থেকে সেই যুলুম কবুল করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٢٩ ﴾ [البقرة: ٢٢٩]
“আর যারা আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করে তারা হলো যালিম”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৯]
আর এটি এজন্য যে, সে যদি এই ইবাদাত নির্ধারিত সময় হবার আগে অর্থাৎ তা করার সময় শুরু হবার আগেই করত, তবে তা তার কাছ থেকে কবুল হত না। একই ভাবে সে যদি তা (সেই ইবাদাতের) সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে করে, তবে তাও তার কাছ থেকে কবুল হবে না যদি না সে মা‘যূর (অপারগ বা সঙ্গত কারণ বিশিষ্ট) হয়।”[11]
আর তার ওপর কর্তব্য হলো সকল পাপ কাজ থেকে (আল্লাহর কাছে) সত্যিকার অর্থে তাওবা করা (ইবন বাযের উল্লিখিত ফাতওয়ায় তাওবার তিনটি শর্তসহ), ফরয কাজসমূহ সময়মত অব্যাহত রাখা, খারাপ কাজ ত্যাগ করা, বেশি বেশি নফল ও নৈকট্য লাভ হয় এমন কাজ করা।
আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৮৪। শব্দ চয়ন সহীহ মুসলিমের।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৩১।
[3] ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ (৬/২১)।
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।
[5] ইমাম আহমাদ ও সুনানের সংকলকগণ সহীহ ইসনাদ সূত্রে বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[6] ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে জাবির ইবন আব্দিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে এ ব্যাপারে আরও অনেক হাদীস রয়েছে, যাতে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
[7] ইবন মাজাহ: হাদীস নং ৪২৫০। [সম্পাদক]
[8] মাজমূ‘ ফাতাওয়া শাইখ ইবন বায (১০/৩২৯, ৩৩০)।
[9] আবু দাঊদ, হাদীস নং ২৩৯৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৬৭১ এবং আল-আলবানী “ইরওয়াউল গালীল”-এ (৯৪০) একে সহীহ বলেছেন।
[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।
[11] মাজমূ‘ ফাতাওয়া শাইখ ইবন উসাইমীন (১৯/প্রশ্ন নং ৪৫)।
প্রথমত: ছুটে যাওয়া সালাতের ক্ষেত্রে তিনটি অবস্থা হতে পারে। যেমন,
প্রথম অবস্থা: ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে সালাত ছুটে যাওয়া। এ অবস্থায় তার ওপর কাযা করা ওয়াজিব। এর দলীল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«من نسي صلاة أو نام عنها فكفارتها أن يصليها إذا ذكرها».
“যে সালাত আদায় করতে ভুলে যায় বা সে সময় ঘুমিয়ে থাকায় তা ছুটে যায়, তার কাফফারা হলো সে যখনই তা মনে করবে তখনই (সাথে সাথে) সালাত আদায় করে নিবে।”[1]
এবং সে তা ধারাবাহিকভাবে আদায় করবে যেমনটি তার ওপর ফরয হয়েছে, প্রথমটি প্রথমে করবে। এর দলীল জাবির ইবন আবদুল্লাহ-এর হাদীস:
«أن عمر بن الخطاب رضي الله عنه جاء يوم الخندق بعد ما غربت الشمس فجعل يسب كفار قريش قال: يا رسول الله ما كدت أصلي العصر حتى كادت الشمس تغرب، قال النبي صلى الله عليه وسلم: والله ما صليتها، فقمنا إلى بطحان فتوضأ للصلاة وتوضأنا لها فصلَّى العصر بعد ما غربت الشمس، ثم صلى بعدها المغرب».
“উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খানদাকের যুদ্ধের দিন সূর্যাস্তের পর এসে ক্বুরাইশ কাফিরদের গালি দিতে লাগলেন, তিনি বললেন: “হে রাসূলুল্লাহ, আমি আসরের সালাত আদায় করতে যেতে যেতে সূর্য ডুবে যেতে লাগল!” নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, আমিও এর (আসরের) সালাত আদায় করি নি।’ এরপর আমরা বাত্বহান-এ দাঁড়ালাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের জন্য অযু করলেন, আমরাও সালাতের জন্য অযু করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আসরের সালাত আদায় করলেন, এরপর মাগরিব এর সালাত আদায় করলেন।”[2]
দ্বিতীয় অবস্থা: এমন ওযরের কারণে সালাত ছুটে যাওয়া, যে সময় কোনো হুঁশ থাকে না। যেমন, কোমা। এ অবস্থার ক্ষেত্রে তার ওপর থেকে সালাত (আদায়ের দায়িত্ব) উঠে যায় এবং তার ওপর তা কাযা করা ওয়াজিব হয় না।
ফাতওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল:
আমার এক গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটেছিল, ফলে তিন মাস হাসপাতালে শুয়ে ছিলাম, এ সময়ে আমার কোনো হুঁশ ছিল না। এ পুরো সময় আমি কোনো সালাত আদায় করি নি। আমার ওপর থেকে কি তা (সালাত আদায়ের দায়িত্ব) উঠে যাবে নাকি পূর্বের সব (ছুটে যাওয়া) সালাত পুনরায় আদায় করব?
তারা উত্তরে বললেন:
“উল্লিখিত সময়ের সালাত (কাযা আদায়ের দায়িত্ব) আপনার থেকে ছুটে যাবে। কারণ, আপনার তখন কোনো হুঁশ ছিল না।”
তাদেরকে আরও প্রশ্ন করা হয়েছিল:
যদি কেউ এক মাস অজ্ঞান অবস্থায় থাকে আর এ পুরো মাস কোনো সালাত আদায় না করে, তবে সে কীভাবে ছুটে যাওয়া সালাত পুনরায় আদায় করবে?
তারা উত্তরে বলেন:
“এ সময়ে যে সালাতসমূহ বাদ গিয়েছে তা কাযা করবে না। কারণ, সে উল্লিখিত অবস্থায় পাগলের হুকুমের মধ্যে পড়ে। আর পাগল ব্যক্তির জন্য কলম উঠানো হয়েছে (অর্থাৎ তার ওপর শরী‘আতের বিধি-বিধান প্রযোজ্য নয়)।”[3]
তৃতীয় অবস্থা: ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ওযর (অজুহাত) ছাড়া সালাত ত্যাগ করা, আর তা কেবল দুই ক্ষেত্রেই হতে পারে:
এক. সে যদি সালাতকে অস্বীকার করে, এর ফরয হওয়াকে মেনে না নেয়, তবে সে লোকের কুফুরীর ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। কারণ, সে ইসলামের ভিতরে নেই। তাকে (আগে) ইসলামে প্রবেশ করতে হবে, এরপর এর আরকান ও ওয়াজিবসমূহ পালন করতে হবে। আর কাফির থাকা অবস্থায় যে সালাত ত্যাগ করেছে তার কাযা করা তার ওপর ওয়াজিব নয়।
দুই. সে যদি অবহেলা বা অলসতাবশত সালাত ত্যাগ করে, তবে তার কাযা শুদ্ধ হবে না। কারণ সে যখন তা ত্যাগ করেছিল, তখন তার কোনো গ্রহণযোগ্য ওযর (অজুহাত) ছিল না। আর আল্লাহ সালাতকে সুনির্ধারিত, সুনির্দিষ্ট এক সময়ে ফরয করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ كَانَتۡ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ كِتَٰبٗا مَّوۡقُوتٗا ١٠٣ ﴾ [النساء: ١٠٣]
“নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০৩]
অর্থাৎ এর সুনির্দিষ্ট সময় আছে। এর দলীল হলো রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী:
«مَنْ عَمِلَ عَمَلا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
“যে এমন কোনো কাজ করে যা আমাদের (শরী‘আতের) অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।”[4]
শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল: আমি ২৪ বছর বয়সের আগে সালাত আদায় করি নি। এখন আমি প্রতি ফরয সালাতের সাথে আরেকবার ফরয সালাত আদায় করি। আমার জন্য কি তা করা জায়েয? আমি কি এভাবেই চালিয়ে যাব নাকি আমার ওপর অন্য কোনো করণীয় আছে?
তিনি বলেন: “যে ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করে, সঠিক মতানুসারে তার ওপর কোনো কাযা নেই; বরং তাকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাওবা করতে হবে। কারণ, সালাত ইসলামের স্তম্ভ, তা ত্যাগ করা ভয়াবহ অপরাধসমূহের একটি; বরং ইচ্ছাকৃতভাবে তা (সালাত) ত্যাগ করা ‘বড় কুফর’ যা আলেমগণের দু’টি মতের মধ্যে সবচেয়ে সঠিকটি, কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন,
«العهد الذي بيننا وبينهم الصلاة فمن تركها فقد كفر»
“আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে চুক্তি হলো সালাত। তাই যে তা ত্যাগ করে, সে কাফের হয়ে গেলো।”[5]
আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«بين الرجل وبين الشرك والكفر ترك الصلاة »
“একজন ব্যক্তি এবং শির্ক ও কুফুরীর মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।”[6]
এক্ষেত্রে ভাই আপনার ওপর কর্তব্য হলো আল্লাহর নিকট সত্যিকার অর্থে তাওবা করা। আর তা হলো (১) পূর্বে যা গত হয়েছে তার ব্যাপারে অনুতপ্ত হওয়া (২) সালাত ত্যাগ একেবারে ছেড়ে দেওয়া এবং (৩) এ মর্মে দৃঢ় সংকল্প করা যে, এ কাজে আপনি আর কখনও ফিরে যাবেন না।
আর আপনাকে প্রতি সালাতের সাথে বা অন্য সালাতের সাথে কাযা করতে হবে না, বরং আপনাকে শুধু তাওবা করতে হবে। আর সকল প্রশংসা আল্লাহর। যে তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١ ﴾ [النور: ٣١]
“হে মুমিনগণ তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«التائب من الذنب كمن لا ذنب له»
“পাপ থেকে তাওবাকারী এমন ব্যক্তির ন্যায় যার কোনো পাপই নেই”।[7]
তাই আপনাকে সত্যিকার অর্থে তাওবা করতে হবে, নিজের নাফসের সাথে হিসাব-নিকাশ করতে হবে, সঠিক সময়ে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়ের ব্যাপারে সদা-সচেষ্ট থাকতে হবে, আপনার দ্বারা যা যা হয়েছে সে ব্যাপারে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে এবং বেশি বেশি ভালো কাজ করতে হবে। আর আপনাকে কল্যাণের সুসংবাদ জানাই, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢ ﴾ [طه: ٨٢]
“আর যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং হিদায়াতের পথ অবলম্বন করে, নিশ্চয় আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল।” [সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৮২]
সূরা আল-ফুরক্বান-এ শির্ক, হত্যা, যিনা (ব্যভিচার) উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَئَِّاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠ ﴾ [الفرقان: ٦٧-٦٩]
“আর যে তা করল সে পাপ করল, কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে এবং সে সেখানে অপমানিত অবস্থায় চিরকাল অবস্থান করবে, তবে সে ছাড়া যে তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে। আল্লাহ তাদের খারাপ কাজসমূহকে ভালো কাজে পরিবর্তন করে দিবেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।” [সূরা আল-ফুরক্বান, আয়াত: ৬৯-৭০]
আমরা আল্লাহর কাছে চাই আমাদের ও আপনার জন্য তাওফীক, বিশুদ্ধ তাওবা ও কল্যাণের পথে অবিচলতা।”[8]
দ্বিতীয়ত: আর সিয়াম কাযা করার ক্ষেত্রে, আপনার সিয়াম ত্যাগ করা যদি আপনার সালাত ত্যাগ করা অবস্থায় হয়, তবে আপনার ওপর সে সব দিনের, যে সব দিনে আপনি সাওম ভঙ্গ করেছেন তার কাযা করা ওয়াজিব নয়, কারণ যে সালাত ত্যাগ করে, সে বড় কুফর সংঘটনকারী কাফির (যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়) যেমনটি পূর্বে উল্লেখ হয়েছে। আর কোনো কাফির যদি ইসলাম কবুল করে, কুফর অবস্থায় সে যে ইবাদাতগুলো ত্যাগ করেছিল, তা কাযা করা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
আর যদি আপনার সিয়াম ত্যাগ সালাত আদায় করা অবস্থায় হয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রে শুধু দুটো সম্ভাব্য ব্যাপারই ঘটতে পারে:
প্রথমত: আপনি রাতে সিয়ামের নিয়্যাত করেন নি, বরং সাওম ভঙ্গের ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এক্ষেত্রে আপনার পক্ষ থেকে কাযা শুদ্ধ হবে না। কারণ আপনি কোনো ওযর (গ্রহণযোগ্য অজুহাত) ছাড়া শরী‘আতে নির্ধারিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে করণীয় ইবাদাত ত্যাগ করেছেন।
দ্বিতীয়ত: আপনি সিয়াম শুরু করার পর সেই দিনে তা ভঙ্গ করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার ওপর কাযা করা ফরয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রমযান মাসে দিনের বেলায় (যৌন) মিলনকারী ব্যক্তিকে কাফফারা আদায় করার আদেশ দিলেন, তখন বললেন: «صم يوماً مكانه» “তুমি সে দিনের পরিবর্তে একদিন সাওম পালন কর।”[9]
আর শাইখ ইবন উসাইমীনকে রমযান মাসে দিনের বেলা কোনো ওযর (সঙ্গতকারণ) ছাড়া সাওম ভঙ্গ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি উত্তরে বলেন: “রমযান মাসে দিনের বেলা কোনো ওযর ছাড়া সাওম ভঙ্গ করা সবচেয়ে বড় (কবীরা) গুনাহসমূহের একটি, এ দ্বারা সে ব্যক্তি ফাসিক্ব হয়ে যাবে। তার ওপর ওয়াজিব হবে আল্লাহর কাছে তাওবা করা, যেদিন সাওম ভঙ্গ করেছিল সেদিনের কাযা করা, অর্থাৎ সে যদি সাওম পালন শুরু করে দিনের মাঝে কোনো ওযর ছাড়া সাওম ভঙ্গ করেছে তার কাযা করতে হবে। কারণ যেহেতু সে সাওম শুরু করেছে, তার ব্যাপারে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল এবং তা ফরয এই বিশ্বাসে তাতে প্রবেশ করেছে, তাই তার ওপর এর কাযা করা বাধ্যতামূলক। নাযর (মান্নতের) এর ন্যায়।
আর যদি কোনো ওযর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে শুরু থেকেই সাওম ত্যাগ করে, তবে অধিক শক্তিশালী মতানুসারে তাকে তার কাযা আদায় করতে হবে না, কারণ সে এর দ্বারা কোনো উপকার পাবে না। এটি এজন্য যে, তা তার থেকে কবুল করা হবে না। এক্ষেত্রে মূলনীতিটি হলো সকল ইবাদাত যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত, তা কোনো ওযর (গ্রহণযোগ্য কারণ) ছাড়া সেই নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্বে করা হলে, তা তার থেকে কবুল করা হবে না। এর দলীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: «مَنْ عَمِلَ عَمَلا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
“যে এমন কোনো কাজ করে যা আমাদের (শারী‘আতের) অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।”[10]
কারণ, তা আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করার মধ্যে পড়ে আর আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করা যুলুম (অবিচার)। আর যালিম ব্যক্তির কাছ থেকে সেই যুলুম কবুল করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ ٱللَّهِ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٢٩ ﴾ [البقرة: ٢٢٩]
“আর যারা আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করে তারা হলো যালিম”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২২৯]
আর এটি এজন্য যে, সে যদি এই ইবাদাত নির্ধারিত সময় হবার আগে অর্থাৎ তা করার সময় শুরু হবার আগেই করত, তবে তা তার কাছ থেকে কবুল হত না। একই ভাবে সে যদি তা (সেই ইবাদাতের) সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরে করে, তবে তাও তার কাছ থেকে কবুল হবে না যদি না সে মা‘যূর (অপারগ বা সঙ্গত কারণ বিশিষ্ট) হয়।”[11]
আর তার ওপর কর্তব্য হলো সকল পাপ কাজ থেকে (আল্লাহর কাছে) সত্যিকার অর্থে তাওবা করা (ইবন বাযের উল্লিখিত ফাতওয়ায় তাওবার তিনটি শর্তসহ), ফরয কাজসমূহ সময়মত অব্যাহত রাখা, খারাপ কাজ ত্যাগ করা, বেশি বেশি নফল ও নৈকট্য লাভ হয় এমন কাজ করা।
আর আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জানেন।
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৮৪। শব্দ চয়ন সহীহ মুসলিমের।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৩১।
[3] ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ (৬/২১)।
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।
[5] ইমাম আহমাদ ও সুনানের সংকলকগণ সহীহ ইসনাদ সূত্রে বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।
[6] ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে জাবির ইবন আব্দিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে এ ব্যাপারে আরও অনেক হাদীস রয়েছে, যাতে এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
[7] ইবন মাজাহ: হাদীস নং ৪২৫০। [সম্পাদক]
[8] মাজমূ‘ ফাতাওয়া শাইখ ইবন বায (১০/৩২৯, ৩৩০)।
[9] আবু দাঊদ, হাদীস নং ২৩৯৩; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৬৭১ এবং আল-আলবানী “ইরওয়াউল গালীল”-এ (৯৪০) একে সহীহ বলেছেন।
[10] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৮।
[11] মাজমূ‘ ফাতাওয়া শাইখ ইবন উসাইমীন (১৯/প্রশ্ন নং ৪৫)।