সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Habib Bin Tofajjal

সিয়াম যদি কেউ রোজা রেখে অন্য দেশে সফর করে, যেখানে রোজা দেরিতে শুরু হয়েছে, এক্ষেত্রে কি তাকে ৩১ দিন রোজা পালন করতে হবে?

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
688
Comments
1,213
Solutions
17
Reactions
6,618
Credits
5,415
প্রশ্ন: আমি যদি কোনো দেশে সাওম পালন করি এবং রমাদান মাসের মাঝে অন্য দেশে ভ্রমণ করি, যেখানে রমাদান এক দিন পর শুরু হয়েছে এবং তারা ৩০ দিন সাওম পালন করেছে, তবে কি আমাকে তাদের সাথে সিয়াম পালন করতে হবে? যদিও বা আমার ৩১ দিন সিয়াম পালন করতে হয়?

উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য ।

যদি কোনো ব্যক্তি এক দেশে রমাদান শুরু করার পর অন্য দেশে যায় যেখানে ‘ঈদুল ফিতর এক দিন দেরিতে আসে তাহলে সে সিয়াম পালন চালিয়ে যাবে যতদিন না দ্বিতীয় দেশের লোকেরা সিয়াম পালন শেষ করে।

শাইখ ইবন বায রহ.-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ‘আমি পূর্ব এশিয়ার দেশ থেকে এসেছি যেখানে হিজরী মাস সউদী আরবের চেয়ে একদিন দেরিতে শুরু হয়। রমাদান মাসে আমি আমার দেশে যাব। আমি যদি সউদী আরবে সিয়াম পালন শুরু করি এবং আমার দেশে গিয়ে শেষ করি তাহলে আমার ৩১ দিন সাওম পালন করা হবে। আমাদের সিয়ামের ব্যাপারে হুকুম কী? আমি কতদিন সাওম পালন করব?

তিনি উত্তরে বলেন, ‘আপনি যদি সউদী আরব বা অন্য কোনো দেশে সিয়াম পালন শুরু করেন, কিন্তু নিজের দেশে গিয়ে বাকিটা পালন করেন তাহলে আপনাদের দেশের লোকদের সাথেই সিয়াম ভঙ্গ করবেন যদিও বা তা ৩০ দিনের বেশি হয়। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«الصوم يوم تصومون ، والفطر يوم تفطرون»
“সাওম হলো সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে) সাওম পালন কর, আর ‘ঈদুল ফিতর হলো সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে) সাওম ভঙ্গ কর।[1]”

কিন্তু আপনি যদি তা করতে গিয়ে ২৯ দিনের কম সাওম পালন করেন, তাহলে আপনাকে পরে এক দিন সাওম এর কাযা আদায় করে নিতে হবে। কারণ, রমাদান মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না।’[2]

শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-উসাইমীন রহ.-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এক মুসলিম দেশ থেকে যদি আরেক দেশে যাওয়া হয় যেখানে লোকজন প্রথম দেশের চেয়ে এক দিন দেরিতে রমাদান আরম্ভ করেছে, তবে সিয়াম পালনের বিধান কি হবে যখন দ্বিতীয় দেশের লোকজনকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি সিয়াম পালন করতে হয়? এবং এর বিপরীত ক্ষেত্রে কী হবে?

তিনি উত্তরে বলেন, “যদি কেউ এক মুসলিম দেশ থেকে আরেক মুসলিম দেশে ভ্রমণ করে এবং সেই দেশে রমাদান দেরিতে শুরু হয়, তবে তিনি ওই দেশের লোকরা সিয়াম ভঙ্গ না করা পর্যন্ত সিয়াম পালন করে যাবেন কারণ সাওম হলো সেদিন যেদিন লোকেরা (সকলে) সিয়াম পালন করে, আর ‘ঈদুল ফিতর হলো সেদিন যেদিন লোকেরা (সকলে) ইফতার করে অর্থাৎ ঈদুল ফিতর পালন করে, আর ‘ঈদুল আযহা হলো সেদিন যেদিন লোকেরা পশু যবেহ করে।

সে এই কাজ করবে যদিও বা এজন্য তাকে এক বা এর বেশি দিন সিয়াম পালন করতে হয়।

এটি সেই পরিস্থিতির অনুরূপ যখন সে এমন দেশে যায় যেখানে সূর্যাস্ত দেরীতে হয়, তবে সে সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত সাওম পালন করবে যদিও বা এর ফলে দুই বা তিন বা ততোধিক ঘণ্টা স্বাভাবিক দিন (চব্বিশ ঘণ্টা) থেকে বেড়ে যায়।

একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে যদি সে এমন কোনো দেশে যায় যেখানে নতুন চাঁদ এখনও দেখা যায় নি। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাওম শুরু করতে বা ইফতার করতে নিষেধ করেছেন যতক্ষণ না আমরা তা দেখি। তিনি বলেছেন,
«صوموا لرؤيته وأفطروا لرؤيته»
“তোমরা তা (নতুন চাঁদ) দেখে সাওম শুরু কর এবং তা (নতুন চাঁদ) দেখে ইফতার তথা সাওম সমাপ্ত কর।”

আর বিপরীত অবস্থার ক্ষেত্রে, যখন একজন ব্যক্তি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় যেখানে রমাদান মাস প্রথম দেশের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে, তবে তিনি তাদের সাথেই সাওম ভঙ্গ করবেন এবং যে কয়দিনের সাওম বাদ পড়েছে সেগুলো পরে কাযা করে নিবেন। যদি একদিন বাদ পড়ে, তবে একদিনের কাযা করবেন, যদি দুই দিন বাদ পড়ে, তবে দুই দিনের। তিনি ২৮ দিন পর সাওম ভঙ্গ করলে, তাহলে দুই দিনের কাযা করবেন, যদি উভয় দেশেই মাস ৩০ দিনে শেষ হয়, আর এক দিনের কাযা করবেন যদি উভয় দেশে বা যে কোনো একটি দেশে ২৯ দিনে মাস শেষ হয়।”[3]

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীনের কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেউ হয়ত বলবে যে, কেন আপনি বলছেন যে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি সাওম পালন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সাওমের কাযা পালন করতে হবে?

তিনি উত্তরে বলেন, “দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সাওমের কাযা সাওম পালন করতে হবে। কারণ, মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না আর সে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি সাওম পালন করবে। কারণ, তখনও নতুন চাঁদ দেখা যায় নি।

প্রথম ক্ষেত্রে আমরা তাকে বলব সাওম ভঙ্গ কর, যদিও তোমার ২৯ দিন পূর্ণ হয় নি। কারণ, নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে আর নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার পর সাওম ভঙ্গ করা বাধ্যতামূলক, শাউওয়াল মাসের প্রথম দিন সাওম পালন করা নিষিদ্ধ। আর কেউ যদি ২৯ দিনের কম সাওম পালন করে থাকে, তাহলে তাকে ২৯ দিন পূরণ করতে হবে। এটি দ্বিতীয় অবস্থা হতে ভিন্ন। কারণ, যে দেশে আসা হয়েছে সেখানে তখন রমাদান চলছে, নতুন চাঁদ দেখা যায় নি। যেখানে এখনও রমাদান চলছে সেখানে কীভাবে সাওম ভঙ্গ করা যেতে পারে? তাই আপনাকে সাওম পালন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি তাতে মাস বেড়ে যায়, তাহলে তা দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার মতো।”[4]

আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

ইসলাম কিউ.এ ফাতওয়া নং ৪৫৫৪৫

[1] তিরমিযী, হাদীস নং ৬৯৭ । (সম্পাদক)
[2] মাজমূ‘ ফাতাওয়া শাইখ ইবন বায, (১৫/১৫৫)।
[3] মাজমূ‘ ফাতাওয়া শাইখ ইবন উসাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৪)।
[4] মাজমূ‘ ফাতাওয়া শাইখ ইবন উসাইমীন (১৯/প্রশ্ন নং ২৫)।
 
Top