সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রবন্ধ মাহে রামাযানে শিশু-কিশোর প্রতিপালন

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,445
Credits
2,602
ভূমিকা

মানব কল্যাণের জন্য অফুরন্ত নে‘মতে ভরপুর এক অনন্য মাস ‘রামাযান’। এ মাস রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের বিশাল বার্তা নিয়ে প্রতি বছর মুসলিমের মাঝে আগমন করে। মুমিন-মুসলিম মাত্রই এ মাসে তাদের জীবনের যাবতীয় পাপকে মাফ করিয়ে নিতে পারে। আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দায়িত্ব-কর্তব্য ও কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে বৃহৎ বৃহৎ নেকীও অর্জন করতে পারে। বৃহৎ নেকী অর্জনের এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বা দায়িত্ব হল, সন্তান প্রতিপালন করা। কেননা সন্তানকে সুন্দরভাবে প্রতিপালনের মাধ্যমেও মানুষ ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করতে পারে। পারে রামাযানের বদৌলতে সন্তানকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে। তাই আমরা অত্র প্রবন্ধে রামাযান মাসে সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

শিশু-কিশোর প্রতিপালনের শারঈ গুরুত্ব

ইসলামে শিশু-কিশোর প্রতিপালনের গুরুত্ব অপরিসীম। গর্ভধারিণী মাতা, জন্মদাতা পিতা কিংবা অন্যান্য অভিভাবক তাকে আদর-স্নেহ ও সেবা-যত্ন দিয়ে প্রতিপালন করবে এটাই ইসলামের শাশ্বত সত্য বিধান। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন,

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِيْ عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِيْ وَلِوَالِدَيْكَ​

‘আমরা মানুষকে তাঁর পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে, আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। কাজেই আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও’ (সূরা লুক্বমান : ১৪)।

সন্তানদের জীবনে পিতা-মাতা ও অভিভাবকের স্বভাব-চরিত্র ও লালিত চিন্তা-চেতনার একটা প্রভাব রয়েছে। যে প্রভাবে শিশু-কিশোররা প্রভাবিত হয়। তাদের আক্বীদা, আমল ও আদর্শেই তারা আদর্শবান হয়। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ إِلَّا يُوْلَدُ عَلٰى الْفِطْرَةِ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ​

‘প্রত্যেক শিশুই ফিত্বরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, নাছারা বা অগ্নিপূজক রূপে গড়ে তোলে...’।[১] তাইতো তাদের অবহেলায় সন্তানরা যদি পথভ্রষ্ট হয়, তাহলে তার জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘প্রত্যেক পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। আর স্ত্রী তার স্বামীর ঘর-সংসার ও সন্তান-সন্ততির ওপর দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে’।[২]

সন্তানদেরকে ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির সম্পদরূপে গড়ে তোলার জন্য প্রত্যেক বাবা-মাকে সচেষ্ট হওয়া যরূরী। এক্ষেত্রে সন্তানের মা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া সন্তানকে সঠিকভাবে লালন-পালনের ক্ষেত্রে পিতার ভূমিকাও অগ্রগামী। কেননা পিতা যেমন যাবতীয় খরচ-খরচার আঞ্জাম দিয়ে থাকে, তেমনি অন্যান্য ব্যস্ততার মাঝে মায়ের কাজের একান্ত সহযোগি হয়ে ওঠে। এতদ্ব্যতীত শিশু-কিশোররা যে পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এ বিষয়টি মূল্যায়ন করা উচিত। কেননা কোন কারণে যদি সন্তানরা পাপাচার ও অন্যায় কাজ তথা জাহান্নামের দিকে ধাপিত হয়, তাহলে তার সকল দায়ভার পিতা-মাতার উপরই বর্তায়। সুতরাং তাদেরকে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে মুক্ত করার গুরু দায়িত্ব পিতা-মাতার উপরেই ন্যস্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَہۡلِیۡکُمۡ نَارًا وَّ قُوۡدُہَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ​

‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। যার জ্বালানী হবে মানুষ এবং পাথর’ (সূরা আত-তাহরীম : ৬)।

শিশু-কিশোর প্রতিপালনের ফযীলত


মায়ের গর্ভধারণের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট, অসাধারণ ত্যাগ স্বীকার, জন্মদানের অসহ্যকর ব্যথা-বেদনা, স্তন্যদানের কঠিন ঝামেলা এবং লালন-পালন ও সেবা-যতেœর জন্য দিন-রাত কঠোর পরিশ্রমের পশ্চাতে রয়েছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিরাট হিকমত। রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মহাপুরস্কার। সীমাহীন কষ্ট স্বীকার ও মহা এম কর্মযজ্ঞের কারণেই ইসলামী শরী‘আতে মায়ের স্থান, সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার পিতাসহ সবার শীর্ষে। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার নিকট হতে সর্বোত্তম ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক হক্বদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি আবারও বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা। অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমার মা, অতঃপর তোমার মা, অতঃপর তোমার পিতা, তারপর তোমার নিকটাত্মীয়রা’।[৩]

পরকালে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَنْ عَالَ ابْنَتَيْنِ أَوْ ثَلَاثَا أَوْ أُخْتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا حَتَّى يَبِنَّ أَوْ يَمُوْتَ عَنْهُنَّ كُنْتُ أَنَا وَهُوَ فِيْ الْجنَّة كَهَاتَيْنِ وَأَشَارَ بِأُصْبُعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالَّتِيْ تَلِيْهَا​

‘যে ব্যক্তি ২ বা ৩ মেয়ে অথবা ২ বা ৩ বোনকে মৃত্যু পর্যন্ত লালন-পালন করবে, আমি এবং সেই ব্যক্তি জান্নাতে এভাবে অবস্থান করব। অতঃপর তিনি তার শাহাদত এবং বৃদ্ধাঙ্গুলের ব্যবধানের প্রতি ইশারা করলেন।[৪] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘কারো তিনটি কন্যা সন্তান থাকলে এবং সে তাদের ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করলে, যথাসাধ্য তাদের পানাহার করালে ও পোশাক-আশাক দিলে, তারা ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী প্রতিবন্ধক হবে’।[৫]

রামাযানে শিশু প্রতিপালনে ইসলামী দিক-নির্দেশনা

১). গর্ভস্থ শিশুর যত্ন নেয়া

শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন তার শারীরিক সুন্দর গঠন ও সুষ্ঠু বিকাশের জন্য গর্ভবতী মাকেই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এজন্য তাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পুষ্টিকর, ভিটামিনযুক্ত খাদ্য ও পথ্য গ্রহণ করা যরূরী। কিন্তু যে সকল গর্ভধারিণী মা রামাযান মাসে সিয়াম পালনের কারণে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা করে তাদের জন্য ইসলাম অত্যন্ত সতর্ক ও সূক্ষ্ম দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে। তাদেরকে সিয়াম পালনের ব্যাপারে ইখতিয়ার ও ছাড় দিয়ে হলেও গর্ভস্থ শিশুর প্রতি যত্ন নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّ اللهَ وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ نِصْفَ الصَّلَاةِ وَالصَّوْمَ وَعَنِ الْحُبْلَى وَالْمُرْضِعِ​

‘আল্লাহ তা‘আলা মুসাফিরকে সিয়াম পালনের ব্যাপারে ছাড় দিয়েছেন এবং সালাত অর্ধেক করে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও বাচ্চাকে দুধপানকারিণী মহিলাকে সিয়াম পালন করার ব্যাপারে ছাড় দিয়েছেন’।[৬] তবে সিয়াম ছেড়ে দেয়ার কারণে ফিদইয়া স্বরূপ অন্যকে খাদ্য খাওয়াতে হবে।[৭]

২). দুগ্ধপোষ্য শিশুর সেবা ও পরিচর্যা করা

মায়ের বুকের দুধ শিশুর প্রধান খাবার। শিশুর জন্মের পর মা সিয়াম রাখুক চাই না রাখুক তাকে তার বুকের দুধ পান করাতেই হয়। তাই যদি কোন দুগ্ধদানকারিণী মা সিয়াম রাখার কারণে দুগ্ধপোষ্য শিশুর দুধের ঘাটতি পড়ে এবং তার কোন ধরণের ক্ষতি হওয়ার বা জীবন নাশের আশঙ্কা থাকে, তাহলে ইসলাম মাকে সিয়াম ভঙ্গ করে হলেও সন্তানের খাদ্য যোগানোর অনুমতি দিয়েছে। তবে পরবর্তীতে তাদেরকে উক্ত সিয়ামের ক্বাযা করতে হবে।[৮] আর যদি ক্বাযা করতে অক্ষম হয়, তবে ফিদইয়া স্বরূপ প্রত্যেক সিয়ামের বিনিময়ে একজন মিসকীন খাওয়াবে।[৯]

৩). শিশুর মল-মূত্র থেকে পবিত্রতা অর্জন প্রসঙ্গে

রামাযান অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ মাস। এ মাসের ফযীলত অর্জনের জন্য অধিকাংশ মুসলিম নর-নারী নিজেকে পূত-পবিত্র রেখে ইবাদত ও যিকির-আযকারে মশগুল থাকতে চায়। কিন্তু শিশুকে লালন-পালন, দুধপান ও সেবা-যত্ন করার সময় মাঝে-মধ্যেই তার মল-মূত্র প্রতিপালনকারিণীদের কোলে, শরীরে কিংবা কাপড়ে লেগে যায়। ফলে এ ব্যাপারে শারঈ সুনির্দিষ্ট বিধান সম্পর্কে অবহিত না থাকায় তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। তাই ইসলাম এক্ষেত্রে অত্যন্ত সহজ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে। আবূ সামহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

يُغْسَلُ مِنْ بَوْلِ الْجَارِيَةِ وَيُرَشُّ مِنْ بَوْلِ الْغُلَامِ​

‘মেয়ে শিশুর পেশাব ধৌত করতে হবে। বাচ্চা ছেলের পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে’।[১০] উল্লেখ্য যে, এ সম্পর্কে ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘ছেলে শিশুর পেশাব পানি এবং মাটি হতে তৈরি হয় আর মেয়ে শিশুর পেশাব গোশত এবং রক্ত থেকে তৈরি হয়’। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আদমকে মাটি ও পানি দিয়ে সৃষ্টি করেন। আর হাওয়াকে সৃষ্টি করেন আদমের বাঁকা পাজর থেকে। ফলে ছেলের পেশাব হয় পানি ও মাটি থেকে এবং মেয়ের পেশাব হয় গোশত ও রক্ত থেকে’।[১১]

৪). শিশুকে দুধ পান করিয়ে পুনরায় ওযূ করা প্রসঙ্গ

অধিকাংশ দুগ্ধদানকারিণী মায়ের ধারণা হল, শিশুকে দুধ পান করালে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রামাযানে কুরআন তেলাওয়াত সহ বিভিন্ন ইবাদত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বারবার ওযূ করার কষ্ট স্বীকার করে থাকে। অথচ দুগ্ধদানকারিণী মায়েরা ওযূ করে নির্দি¦ধায় শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে পারে। এতে তাদের ওযূও নষ্ট হবে না এবং দুধ পান করানোর কারণে পুনরায় ওযূও করতে হবে না। কেননা এটা ওযূ ভঙ্গের কোন কারণ নয়। বরং ওযূ ভঙ্গ হয় পেশাব-পাখয়ানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু নির্গত হলে[১২] এবং শুয়ে নিদ্রা গেলে।[১৩]

৫). সিয়ামের বিধি-বিধান সম্পর্কে অবহিত করা

ইবাদতসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ একটি ইবাদত হল- রামাযানে সিয়াম পালন করা। শিশু-কিশোরদের সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে সালাত বা অন্যান্য ইবাদতের মত সুনির্দিষ্ট কোন বয়স শর্ত না থাকলেও এর গুরুত্ব বিবেচনায় তাদেরকে সিয়াম পালনে উদ্বুদ্ধ করা এবং এতদ্বিষয়ে বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা যরূরী। কেননা যেকোন শিশু বা কিশোর সক্ষম হলেই সিয়াম রাখতে পারে। এক্ষেত্রে শারঈ কোন বাধা নেই। এক্ষেত্রে অভিভাবকের দায়িত্ব হল- শিশুরা যাতে করে সিয়ামের ব্যাপারে যথেষ্ঠ ধারণা অর্জন করতে পারে সেজন্য এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধানগুলো তাদেরকে অবগত করানো উচিত। এর ফল হবে- শৈশবকাল থেকেই তারা সঠিক উপায়ে সিয়াম পালনে অভ্যস্ত হবে। যেমন, সাহারী খাওয়া[১৪], সকল ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা[১৫], বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্যের সাথে মিথ্যা বলা, দ্বন্দ্ব-ফাসাদে লিপ্ত হওয়া ও যাবতীয় অন্যায় অশ্লীল কাজ-কর্ম থেকে বিরত থাকা,[১৬] কুরআন তেলাওয়াত করা ও দান-ছাদাক্বাহ করা[১৭], ভুলবশতঃ কিছু খেয়ে ফেললে সিয়াম ছেড়ে না দিয়ে বরং তা পূর্ণ করা,[১৮] সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা[১৯] এবং তারাবীহ কিংবা তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা ইত্যাদি।[২০]

৬). সিয়াম পালনে উদ্বুদ্ধ করা ও সিয়ামের প্রশিক্ষণ দেয়া

সন্তানকে ছোট থেকেই সিয়াম পালনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে এবং তাকে সিয়ামের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সাহাবায়ে কেরাম ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে সিয়ামের প্রশিক্ষণ দিতেন। রুবা‘ই বিনতে মু‘আব্বিয (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আশূরার দিন সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনছারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন যে, ‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সিয়াম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সিয়াম পূর্ণ করে’। তিনি (রুবা‘ই বিনতে মু‘আব্বিয (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

فَكُنَّا نَصُوْمُهُ بَعْدُ وَنُصَوِّمُ صِبْيَانَنَا وَنَجْعَلُ لَهُمُ اللُّعْبَةَ مِنَ الْعِهْنِ فَإِذَا بَكَى أَحَدُهُمْ عَلَى الطَّعَامِ أَعْطَيْنَاهُ ذَاكَ حَتَّى يَكُوْنَ عِنْدَ الْإِفْطَارِ​

‘পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন (আশূরার) সিয়াম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের সিয়াম পালন করাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত’।[২১]

রামাযানে দিনের বেলায় সিয়াম না থাকার কারণে এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) প্রহার করেন ও বলেন, আমাদের বাচ্চারা পর্যন্ত সিয়াম পালন করছে। তোমার সর্বনাশ হোক!।[২২] ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) প্রমুখ বলেন, ‘উক্ত হাদীসে শিশুদের জন্য সিয়াম রাখা শরী‘আতসম্মত হওয়ার এবং তাদেরকে ইবাদতে অভ্যস্ত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রমাণ মেলে। তবে এটি তাদের জন্য আবশ্যক নয়’।[২৩]

৭). সালাত আদায়ের প্রতি যত্নশীল করে গড়ে তোলা

যে সকল শিশু-কিশোরের বয়স দশ বছর পূর্ণ হয়েছে তারা সিয়াম পালন করুক চাই না করুক তাদেরকে সালাত আদায়ে বাধ্য করতে হবে। আর যাদের বয়স সাত বছরে উপনীত হয়েছে তাদেরকে সালাতের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اۡمُرۡ اَہۡلَکَ بِالصَّلٰوۃِ وَ اصۡطَبِرۡ عَلَیۡہَا ‘আর আপনি আপনার পরিবারকে সালাতের আদেশ দিন এবং আপনি এর উপর অবিচল থাকুন’ (সূরা ত্বো-হা : ১৩২)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

مُرُوْا أَوْلَادَكُمْ بِالصَّلَاةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِيْنَ وَاضْرِبُوْهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِيْنَ وَفَرِّقُوْا بَيْنَهُمْ فِى الْمَضَاجِعِ​

‘তোমাদের সন্তান যখন সাত বছর বয়সে পদার্পণ করে তখন তাকে সালাতের প্রশিক্ষণ দাও। আর দশ বছর হলে তাকে সালাতের জন্য শাসন কর এবং তাদের পরস্পরের বিছানা আলাদা করে দাও’।[২৪]

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ইয়াতীম বালককে নিয়ে তার বাড়ীতে সালাত আদায় করেছেন।[২৫] আবূ ক্বাতাদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লোকজনদের নিয়ে সালাত পড়াতে দেখেছি। এমতাবস্থায় নাতনী উমামা বিনতু আবিল ‘আছ তাঁর কাঁধে থাকত। তিনি যখন রুকূতে যেতেন উমামাকে নিচে নামিয়ে রাখতেন। আবার যখন তিনি সিজদা হতে মাথা উঠাতেন, তাকে আবার কাঁধে উঠিয়ে নিতেন।[২৬]

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে তারাবীহর সালাতের জন্য রাত্রিতে জাগতেন এবং পরিবার-পরিজনদেরকেও তা আদায় করার জন্য জাগিয়ে দিতেন।[২৭] শিশু-কিশোররা যেহেতু পরিবারের সদস্য সেহেতু প্রত্যেক পিতা-মাতা বা অভিভাবক তাদেরকেও সামর্থ্যানুযায়ী রাত্রি জাগরণে অভ্যস্ত করবে।

৮). কুরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা

রামাযান কুরআন নাযিলের মাস। এ মাসে কুরআন তেলাওয়াত করে কুরআনের শাফা‘আত লাভ করা যায়।[২৮]
তাই সন্তানদেরকে এ মাসে কুরআন তেলাওয়াতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতে হবে। কেননা কুরআন শিক্ষা করা ও তেলাওয়াত করা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ​

‘তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে তা শিখায়’।[২৯]

কুরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি তাদেরকে কুরআন মুখস্থ করাতে হবে। কেননা অল্প বয়সে কোন বিদ্যা মুখস্থ করা অধিক সহজসাধ্য ও নির্ভরযোগ্য হয় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়।[৩০]
এছাড়া কুরআন মুখস্থকারী বা হাফেযগণ পরকালে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন কুরআনের হাফেযকে বলা হবে কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকো এবং জান্নাতের উপরের দিকে আরোহণ করতে থাকো। অক্ষর ও শব্দ স্পষ্ট করে তেলাওয়াত করতে থাকো, যেভাবে দুনিয়াতে তেলাওয়াত করতে। তোমার তেলাওয়াতের সর্বশেষ স্তর হবে তোমার বসবাসের সর্বোচ্চ স্থান’।[৩১]

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘নিশ্চয় মানুষের মধ্যে দুই শ্রেণীর মানুষ আল্লাহর পরিবারভুক্ত হবেন। একজন হলেন কুরআনের অধিকারী এবং অন্যজন হলেন তার খাছ বন্ধুবর্গ’।[৩২]

৯). শিশুর পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা

রামাযানে পিতা-মাতা বা অভিভাবকের উপরে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল, প্রত্যেক শিশুর পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন, পুরুষ-নারী উপর এক ছা‘ করে খেজুর অথবা এক ছা‘ করে যব ফিতরা স্বরূপ ওয়াজিব করেছেন’।[৩৩]
অন্যত্র খাদ্য দ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।[৩৪] রাফে‘ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) ছোট-বড় সকলের পক্ষ থেকে ছাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করতেন, এমনকি আমার সন্তানদের পক্ষ হতেও ছাদাক্বার দ্রব্য গ্রহীতাদেরকে দিয়ে দিতেন এবং ঈদের এক-দু’দিন পূর্বেই আদায় করে দিতেন।[৩৫] শিশুর পক্ষ থেকে ফিতরা প্রদানের বিষয়টি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, ঈদুল ফিতরের সালাতের পূর্বে যদি কোনো শিশু জন্ম গ্রহণ করে তবুও তার ফিতরা আদায় করতে হবে। পক্ষান্তরে সালাতের পূর্বে কেউ মারা গেলে তার ফিতরা আদায় করতে হবে না।[৩৬]

উল্লেখ্য, সমাজে প্রচলিত আছে যে, যারা সিয়াম পালন করে না তাদের ফিতরা আদায় করতে হবে না। যেহেতু শিশুদের প্রতি সিয়াম ফরয নয় সেহেতু তাদেরও ফিতরা আদায় করতে হবে না। প্রচলিত এই ধারণা সঠিক নয়। কারণ ফিতরা আদায়ের জন্য সিয়াম পালন করা বা না করাকে শর্ত করা হয়নি। বরং মুসলিম হওয়াকে শর্ত করা হয়েছে।[৩৭]

১০). সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করা ও অসৎ কর্মাদী থেকে বিরত রাখা

মাহে রামাযানে প্রতিটি সৎকর্মের বিনিময়ে কর্মসম্পাদনকারী দশ থেকে সাতশ’গুণ পর্যন্ত নেকী লাভ করে থাকে।[৩৮]
সৎকর্ম সম্পাদন ও অসৎকর্ম থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে উক্ত নেকী অর্জনের জন্য কোন ব্যক্তি বা শ্রেণীকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। তাই অন্যান্য মাসের চেয়ে এ মাসে শিশু-কিশোরদেরকে বেশি বেশি সৎকর্মের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং অসৎ কর্মাদী থেকে বিরত রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাহলে দু’দিক থেকে নেকী অর্জনের পথ উন্মুক্ত হবে। (এক) নিজে সৎকর্ম সম্পাদন ও অসৎকর্ম হতে বিরত থাকার নেকী। (দুই) অন্যকে সেদিকে আহ্বান করার নেকী।[৩৯]

১১). সাহারীতে জাগরণের শরী‘আত বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে সন্তানদেরকে বিরত রাখা

রামাযান আগমন করলেই বিভিন্ন এলাকায় কিশোর-তরুণ ও যুবকরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, নেচে-গেয়ে, সাইরেন বাজিয়ে ও মাইকিং করে মানুষকে সাহারীর সময় ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার কাজে মেতে উঠে। নেকীর উদ্দেশ্যে কাজটি করলেও শরী‘আতে তার কোন অনুমোদন নেই। বরং সাহারীর সময় মানুষকে জাগানোর জন্য সাহারীর আযান [৪০] ব্যতীত মাইকে গজল গাওয়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, বক্তব্য দেওয়া, সাইরেন বাজানো, ঢাক-ঢোল পিটানো ইত্যাদির সবই বিদ‘আতী কার্যক্রম।[৪১]
ফলে এক শ্রেণীর কিশোর ও তরুণরা নেকী অর্জন করতে যেয়ে পাপার্জন করে ঘরে ফিরছে। তাই প্রচলিত এই পাপ ও বিদ‘আত থেকে কিশোরদেরকে বিরত রাখা ও নিজেরা বিরত থাকা প্রত্যেক অভিভাবকের নৈতিক দায়িত্ব। অন্যথা সকলকেই পাপের অংশীদার হতে হবে।[৪২]

১২). ইয়াতীম, মিসকীন ও অসহায় শিশুদের সাহায্য করা

রামাযান মাসে ইয়াতীম, মিসকীন, অসহায় ও গরীব শিশু-কিশোরদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে ইসলাম কয়েকটি সুযোগ করে দিয়েছে। যেমন,

ক). অসুস্থ ব্যক্তি, চিররোগী, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী ব্যক্তিগণ সিয়াম পালনে অক্ষম ও অসুবিধা হলে প্রতিদিন ফিদইয়া স্বরূপ একজন মিসকীনকে অর্ধ ছা‘ বা সোয়া এক কেজি খাদ্যবস্তু প্রদান করবে।[৪৩]

খ). ফিতরা, যাকাত, দান ও ছাদাক্বা প্রদান করা।[৪৪]

১৩). অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালিকা ঋতুবতী হলে তাকে সিয়াম পালন করা থেকে বিরত রাখা

ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে স্বপ্নদোষ, ঋতু, হায়েয, নিফাস ইত্যাদির বিধান সম্পর্কে মানুষের ধারণা একেবারে শূন্যের কোঠায়। ফলে কোন কিশোরী বা অল্প বয়স্ক বালিকা সর্বপ্রথম যখন ঋতুবতী হয়, তখন সে এর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে পূর্ণাজ্ঞ ধারণা না থাকায় সালাত বা সিয়াম অব্যাহত রাখে। তাই এরূপ পরিস্থিতিতে যদি কোন কিশোরী বা বালিকার ক্ষেত্রে রামাযান মাসে সংঘটিত হয় এবং তা অভিভাকদের কর্ণগোচর বা দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে সালাত ও সিয়াম পালন করা থেকে বিরত রাখতে হবে। কেননা এমন পরিস্থিতে সিয়াম রাখা নিষিদ্ধ। তবে তারা পরবর্তীতে ঐ সিয়ামের ক্বাযা আদায় করবে (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৫)। যদিও মেয়েরা ঋতুবতী হলেই শরী‘আতের বিধানাবলী পালন করা তার উপর ফরয হয়ে যায়।[৪৫]

১৪). শিশু-কিশোরদেরকে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করানো

ঈদ এলেই শিশুরা নতুন নতুন পোশাক পরিধান, ঈদ পরবী আদায়, ফিরনী-সেমাই খাওয়া, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের বাড়ীতে বাড়ীতে ঘোরা-ফেরা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করতে আনন্দ পায়। শিশু মনের এ আনন্দকে ধরে রাখার জন্য অভিভাবকের দায়িত্ব তাদেরকে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করিয়ে ও সুসজ্জিত করে ঈদের আনন্দে শরীক করা।[৪৬] তবে নায়ক-নায়িকা, খেলোয়াড় ও জনপ্রিয় তারকাদের নামে-বেনামে বিভিন্ন ফ্যাশান ও ডিজাইনের অমার্জিত ও অরুচিশীল পোশাক থেকে তাদেরকে অবশ্যই দূরে রাখতে হবে।

১৫). চাঁদ দেখায় অভ্যস্ত করা ও দু‘আ শিক্ষা দেয়া

রামাযানের সিয়াম পালন ও ঈদ উদ্যাপন দু’টিই মূলত চন্দ্রোদয়ের উপর নির্ভরশীল। সহীহ হাদীসের বর্ণনানুযায়ী চাঁদ দেখেই সিয়াম ছাড়তে হবে ও ঈদ পালন করতে হবে।[৪৭] কিন্তু আধুনিক সমাজ অত্যধিক প্রযুক্তি নির্ভরশীল হওয়ায় স্ব-চক্ষে চন্দ্র পর্যবেক্ষণের বিষয়টি যথেষ্ট অবহেলিত। তাই শিশু-কিশোরদেরকে তাদের অল্প বয়স থেকেই রামাযান ও ঈদের চাঁদ দেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করাতে হবে। সাথে সাথে চাঁদ দেখে দু‘আ পড়ায় অভ্যস্ত করাতে হবে। চাঁদ দেখার দু‘আটি হল,

أَللهُ أَكْبَرُ أَللهم أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ وَالتَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَتَرْضَي رَبِّيْ وَرَبُّكَ اللهُ​

‘আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের উপরে চাঁদকে উদিত করুন শান্তি ও ঈমানের সাথে, নিরাপত্তা ও ইসলামের সাথে এবং আমাদেরকে ঐ সকল কাজের ক্ষমতা দানের সাথে, যা আপনি ভালোবাসেন ও যাতে আপনি খুশী হন। (হে চন্দ্র!) আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ’।[৪৮]

১৬). শিশু-কিশোরদেরকে ঈদের মাঠে নিয়ে যাওয়া

পরিবারের সকলে মিলে ঈদের মাঠে যাবে এবং ঈদের তাকবীর, সালাত, খুৎবা ও দু‘আয় শরীক হয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করবে। এক্ষেত্রে শিশু-কিশোররাও পিছিয়ে থাকবে না। বরং বাবা-মায়েরা ঈদের মাঠে যাওয়ার সময় অন্যান্য সন্তানের মত কোলের শিশুকেও সাথে নিয়ে যাবে। এতে শারঈ কোন বাধা নেই। কেননা ঋতুবতী, গর্ভবতী, দুগ্ধদানকারিণীসহ সকল শ্রেণীর পর্দানশীল মহিলাদেরকে ঈদের মাঠে যাওয়ার জন্য তাকীদ দেয়া হয়েছে।[৪৯] আর সাধারণত তাদের কোলে শিশু থাকেই। শিশু-কিশোরদেরকে ঈদের মাঠে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে মাহাত্ম্য এই যে, চাঁদ উঠার পর থেকে ঈদের মাঠে যেতে-আসতে, সালাতের পূর্বে ও পরে এবং খুৎবার সময়ে যে সকল দু‘আ ও তাকবীর ধ্বনি পাঠ করা হয় তা শ্রবণান্তে শিশু মনের ঈমানী চেতনাকে জাগ্রত করে। সেগুলো আমল করার প্রতি এবং তা বাস্তবায়নের প্রতি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে।

১৭). সুন্নাতী পদ্ধতিতে কুশল বিনিময়ে উৎসাহিত করা

ঈদে পারস্পরিক কুশল বিনিময় করা ঈদ আনন্দের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। ইসলাম ঈদের দিন পারস্পরিক কুশল বিনিময়েরর সুন্দর পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছে। যা শিশু-কিশোরসহ সাধারণ সকল মুসলিমের মাঝে বাস্তবায়নের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। ঈদের দিন সাহাবায়ে কেরাম পারস্পরিক সাক্ষাতে বলতেন, تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكَ (তাক্বাব্বালাল্লা-হু মিন্না ওয়া মিংকা)। ‘আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ হতে কবুল করুন!’।[৫০] উল্লেখ্য, ঈদ মাঠে বা ঈদের দিন পরস্পর কোলাকুলি শরী‘আতসম্মত নয়। তবে সফর থেকে বা বাইর থেকে আগন্তুকের সাথে কোলাকুলি করা যায়।[৫১]

১৮). নির্দোষ খেলাধূলা ও অনুষ্ঠানাদিতে শরীক করা

ইসলামী শরী‘আতে যে সকল খেলাধূলার অনুমতি আছে শিশু-কিশোরদেরকে ঈদ উপলক্ষে সে সকল নির্দোষ খেলাধুলা এবং ইসলামী সাং®কৃতিক ও প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা যায়। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আযহার দিনে তার কাছে এলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নিকটেই অবস্থান করছিলেন। এ সময় দু’জন অল্প বয়স্কা বালিকা (ঐ) গান গাইছিল, যা আনছারীগণ বু‘আছ যুদ্ধে আবৃত্তি করেছিল। তখন আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দু’বার বললেন, এ হল শয়তানী বাদ্যযন্ত্র (দফ্)! নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,

دَعْهُمَا يَا أَبَا بَكْرٍ إِنَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا وَإِنَّ عِيدَنَا هَذَا الْيَوْمُ​

‘হে আবূ বাকর! ওদেরকে ছাড়। প্রত্যেক জাতির জন্য আনন্দ-উৎসব আছে। আর আজ হল আমাদের আনন্দ-উৎসবের দিন’।[৫২] সুতরাং দফ বাজানো, শারীরিক কসরত বা অনুশীলনমূলক খেলাধূলা,[৫৩] পাখি নিয়ে খেলা,[৫৪] তীরন্দাজী, উট অথবা ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা[৫৫] ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করিয়ে ঈদের আনন্দ দেয়া যায়। তাছাড়া এ দিন পরস্পরের বাড়ীতে খানাপিনা করা যায়।[৫৬]

তবে ঈদের খুশীতে গান-বাজনা এবং খেলাধূলার নামে নারী-পুরুষের অবাধ সমাবেশ থেকে তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে দূরে রাখতে হবে। সাথে সাথে ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে সন্তানদেরকে শরী‘আত বিরোধী অনুষ্ঠানাদী থেকে দূরে রাখা আবশ্যক। যেমন, আতশবাজি, ক্যাসেটবাজি, গান-বাজনা, চরিত্র বিধ্বংসী ভিডিও-সিডি এবং সিনেমা প্রদর্শনীতে লিপ্ত হওয়া, যাত্রা, নাটক, গোল্লাছুট, ঘোড়াছুট, নৌকাবায়েজ ও লটারীসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া ঈদ পূর্ণমিলনীর নামে আয়োজিত হয় নর-নারীর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। আনন্দের নামে অনৈতিক কার্যক্রম বেশি পরিচালিত হয়ে থাকে। অথচ ইসলামে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী ও নারী-পুরুষের এমন অবাধ সমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

উপসংহার

পরিশেষে বলব, রামাযানের প্রতিটি কর্ম মুসলিম জীবনের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইবাদতের নিয়তে সন্তানের সুন্দর গঠন, সেবা-শশ্রƒষা এবং রামাযান, সিয়াম ও ঈদের দিনগুলোতে তাদের যে সকল হক্ব রয়েছে সেগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য প্রত্যেক মুসলিম উম্মাহর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা উচিত। তবেই অদূর ভবিষ্যতে মহাকল্যাণের অধিকারী হওয়া সম্ভব। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে তা বাস্তবায়নের তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!


তথ্যসূত্র :
[১]. সহীহ বুখারী, হা/১৩৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৮; মিশকাত, হা/৯০।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/৭১৩৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৯; মিশকাত হা/৩৬৮৫।
[৩]. সহীহ বুখারী, হা/৫৯৭১; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৪৮; মিশকাত, হা/৪৯১১।
[৪]. সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, ২/২০৫ পৃ. হা/১৯৭০।
[৫]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৬৬৯; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৭৬।
[৬]. আবূ দাঊদ, হা/২৪০৮; তিরমিযী, হা/৭১৫; মিশকাত, হা/২০২৫, সনদ সহীহ
[৭]. আবূ দাঊদ, হা/২৩১৮।
[৮]. তিরমিযী, হা/৭১৫, সনদ সহীহ।
[৯]. দারাকুৎনী, হা/২৪০৬, সনদ সহীহ; ইরওয়াউল গালীল, হা/৯১২।
[১০]. আবূ দাঊদ, হা/৩৭৬; নাসাঈ, হা/৩০৪; মিশকাত, হা/৫০২।
[১১]. সহীহ ইবনু মাজাহ, হা/৫২৫।
[১২]. সহীহ মুসলিম, হা/৩৬২; মিশকাত, হা/৩০৬।
[১৩]. আবূ দাঊদ, হা/২০৩; ইবনু মাজাহ, হা/৪৭৭; ইরওয়াউল গালীল, হা/১১৩; মিশকাত, হা/৩১৬, সনদ সহীহ।
[১৪]. সহীহ বুখারী, হা/১৯২৩; সহীহ মুসলিম, হা/১০৯৫, তিরমিযী, হা/৭০৮।
[১৫]. সূরা আল-বাক্বারাহ, ১৮৫ ও ১৮৭।
[১৬]. মুসতাদরাকে হাকেম, হা/১৫৭০; বায়হাক্বী, হা/৮০৯৬; সহীহ ইবনে খুযায়মাহ, হা/১৯৯৬; সহীহুল জামে‘, হা/৫৩৭৬।
[১৭]. সহীহ বুখারী, হা/৬; সহীহ মুসলিম, হা/২৩০৮; মিশকাত, হ/২০৯৮।
[১৮]. সহীহ বুখারী, হা/১৯৩৩ ও হা/৬৬৬৯; মিশকাত, হা/২০০৩।
[১৯]. সহীহ বুখারী, হা/১৯৫৪; মিশকাত, হা/১৯৮৫; মিশকাত, হা/১৯৯৫।
[২০]. সহীহ মুসলিম, হা/১১৬৩; আবূ দাঊদ, হা/২৪২৯; মিশকাত, হা/২০৩৯।
[২১]. সহীহ বুখারী, হা/১৯৬০; সহীহ মুসলিম, হা/১১৩৬।
[২২]. সহীহ বুখারী, ‘বাচ্চাদের সিয়াম পালন করা’ পরিচ্ছেদ।
[২৩]. শারহুন নববী ‘আলা মুসলিম, ৮/১৪ পৃ.; ফৎহুল বারী, ৪/২০১ পৃ.।
[২৪]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৩০৫৩; আবূ দাঊদ, হা/৪৯৫; সহীহুল জামে‘, হা/৪০২৬; মিশকাত, হা/৫৭২।
[২৫]. সহীহ বুখারী, হা/৭২৭; সহীহ মুসলিম, হা/৬৫৯; মিশকাত, হা/১১০৮।
[২৬]. সহীহ বুখারী, হা/৫৯৯৬; সহীহ মুসলিম, হা/৫৪৩; মিশকাত হা/৯৮৪।
[২৭]. তিরমিযী, হা/৮০৬; আবূ দাঊদ, হা/১৩৭৫; ইবনু আবী শায়বাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৮৬; সালাতুত তারাবীহ, পৃ. ১৪।
[২৮]. মুসতাদারাকে হাকেম, হা/২০৩৬; বায়হাক্বী, শু‘আবূল ঈমান, হা/১৮৩৯; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হা/৯৭৩; মিশকাত, হা/১৯৬৩।
[২৯]. সহীহ বুখারী, হা/৫০২৭; আবূ দাঊদ, হা/১৪৫২; মিশকাত, হা/২১০৯।
[৩০]. মুহাম্মাদ বিন ছালেহ বিন মুহাম্মাদ উছাইমীন, লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৩৬।
[৩১]. আবূ দাঊদ, হা/১৪৬৪; তিরমিযী, হা/২৯১৪; সনদ সহীহ, মিশকাত, হা/২১৩৪; সিলসিলা সহীহাহ, হা/২২৪০।
[৩২]. ইবনু মাজাহ, হা/২১৫, সনদ সহীহ।
[৩৩]. নাসাঈ, হা/২৫০২, সনদ সহীহ।
[৩৪]. সহীহ বুখারী, হা/১৫০৮; সহীহ মুসলিম, হা/৯৮৫।
[৩৫]. সহীহ বুখারী, হা/১৫১১।
[৩৬]. মির‘আতুল মাফাতীহ, ৬/১৮৫ পৃ.।
[৩৭]. সহীহ বুখারী, হা/১৫০৩; সহীহ মুসলিম, হা/৯৮৪; নাসাঈ, হা/২৫০৪; ইবনু হিব্বান, হা/৩৩০৩; দারাকুত্বনী, হা/২০৭২।
[৩৮]. সহীহ বুখারী, হা/১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হা/১১৫১; ইবনু মাজাহ, হা/১৬৩৮; মিশকাত, হা/১৯৫৯।
[৩৯]. সূরা আল-মায়িদাহ : ২; সূরা আলে ইমরান : ১১০; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৪; আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৯; মিশকাত, হা/১৫৮।
[৪০]. সহীহ বুখারী, হা/৭২৪৮।
[৪১]. ফাৎহুল বারী, হা/৬২২-৬২৩-এর ব্যাখ্যা দ্র., ২/১২৩ পৃ.।
[৪২]. সহীহ মুসলিম, হা/১০১৭; ২৬৭৪; আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৯; ইবনু মাজাহ, হা/২০৬; তিরমিযী, হা/২৬৭৪; মিশকাত, হা/১৫৮, ২১০।
[৪৩]. দারাকুৎনী, হা/২৪০৬; সনদ সহীহ, ইরওয়াউল গালীল, ৪/১৭ পৃ., হা/৯১২।
[৪৪]. সূরা আল-বাক্বারাহ, ১৭৭; সূরা দাহর ৮-১০; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৩১১৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৪৯; মিশকাত, হা/৪৯৯১; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাঈল, ২১/২৮ পৃ.।
[৪৫]. ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, প্রশ্ন নং-৩৯৬।
[৪৬]. সহীহ বুখারী, হা/৮৮৩; আবূ দাঊদ, হা/৩৪৩; মিশকাত হা/১৩৮১, ১৩৮৭।
[৪৭]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত, হা/১৯০৯।
[৪৮]. তিরমিযী, হা/৩৪৫১; মিশকাত, হা/২৪২৮, সনদ সহীহ।
[৪৯]. সহীহ বুখারী, হা/৩৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৮৯০; মিশকাত, হা/১৪৩১।
[৫০]. তামামুল মিন্নাহ, ১ম খ-, পৃ. ৩৫৪, সনদ হাসান।
[৫১]. সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৬০।
[৫২]. সহীহ বুখারী, হা/৯৫২।
[৫৩]. সহীহ বুখারী, হা/৩৫৪২; মিশকাত হা/৬১৬৯।
[৫৪]. সহীহ বুখারী, হা/৬১২৯, ৬২০৩; সহীহ মুসলিম, হা/২১৫০; আবূ দাঊদ, হা/৪৯৬৯; মিশকাত, হা/৪৮৮৪।
[৫৫]. আবূ দাঊদ, হা/২৫৭৪; নাসাঈ, হা/৩৫৮৫; তিরমিযী, হা/১৭০০; ইবনু মাজাহ, হা/২৮৭৮; মিশকাত, হা/৩৮৭৪, সনদ সহীহ।
[৫৬]. ফিক্বহুস সুন্নাহ, ১/৩২২ পৃ.; ঐ, ১/২৪১-৪৩ পৃ.।



সূত্র: আল-ইখলাছ।​
 
Last edited:
COMMENTS ARE BELOW

omor faruk

Well-known member

Threads
2
Comments
59
Reactions
26
Credits
60
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে রহম করুন।
 
Top