এ জন্য ইবনুল মুনযির বলেন, এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফার মতের সমর্থন করেছেন এরকম কারো নাম আমি জানি না ।''১
১.ফিকহুস্ সুন্নাহ, বিতর নামাযের আলোচনা ১/১৮১।
ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, “বিতর নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা। এব্যাপারে মুসলমানগণ ঐকমত্য। কোন মানুষ যদি বিতর নামায পরিত্যাগ করার ব্যাপারে দৃঢ় থাকে বা অবিরাম বিতর নামায না পড়ে, তবে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না ।”২
২.মাজমূ ফাতাওয়া ২৩/৮৮ বুগ্ইয়াতুল মুতাত্বওয়ে' ফী ছালাতিল মুতাত্বওয়ে' ৪৮ পৃঃ।
২.মাজমূ ফাতাওয়া ২৩/৮৮ বুগ্ইয়াতুল মুতাত্বওয়ে' ফী ছালাতিল মুতাত্বওয়ে' ৪৮ পৃঃ।
বিতর নামায যে ওয়াজিব নয় তার পক্ষে স্পষ্ট দলীলঃ
১) আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ
১) আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ
الوثرُ لَيْسَ بِحَلْمٍ كَصَلاتِكُمُ المَكْتُوبَةِ وَلَكِنْ سَنَّ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ إِنَّ اللهَ وثرٌ يُحِبُّ الوثرَ فَأُوتِرُوا يَا أَهْلَ الْقُرْآن
“বিতর নামায ফরজ নামাযের মত লাযেম ও আবশ্যক নয়; বরং সে নামায রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নত করেছেন। তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা বেজোড় বা একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তিনি বিতর তথা বেজোড় নামায পছন্দ করেন এবং তাতে প্রচুর ছওয়াব দিয়ে থাকেন। সুতরাং হে কুরআনের অনুসারীগণ তোমরা বিতরের নামায পড়।”১
১ তিরমিযী, অধ্যায়: ছালাত হা/৪১৫। ইবনে মাজাহ্, অধ্যায় নামায কায়েম করা ও তার মধ্যে সুন্নত, হা/১১৫৯। শায়খ আলবানী বলেন, হাদীছটি ছহীহ দ্রঃ ছহীহ তারগীব তারহীব হা/৫৯২।
১ তিরমিযী, অধ্যায়: ছালাত হা/৪১৫। ইবনে মাজাহ্, অধ্যায় নামায কায়েম করা ও তার মধ্যে সুন্নত, হা/১১৫৯। শায়খ আলবানী বলেন, হাদীছটি ছহীহ দ্রঃ ছহীহ তারগীব তারহীব হা/৫৯২।
এই হাদীছটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিতর নামায সুন্নাত। কারণ সেই সময় আলী (রাঃ)এর উল্লেখিত কথার কোন প্রতিবাদ কোন ছাহাবী থেকে পাওয়া যায় না। আর তিনি কথাটি তাঁদের উপস্থিতিতেই বলেছেন । সুতরাং বলা যায়, ইহা ছাহাবায়ে কেরামের ‘এজমা সুকৃতী' বা নীরব ঐকমত্য।''২
২.বুগ্ইয়াতুল মুতাত্বাওয়ে' পৃঃ ৫০ ৷
২.বুগ্ইয়াতুল মুতাত্বাওয়ে' পৃঃ ৫০ ৷
হাদীছ শাস্ত্রে একথা সকলের জানা যে, কোন ছাহাবী যদি বলেন, “সুন্নাত হচ্ছে এই রকম .... '' তবে উহা মারফূ''৩ হাদীছ হিসেবে গণ্য ।
৩ যে হাদীছকে রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দিকে সম্বধিত করা হয়েছে তাকে মারফূ হাদীছ বলা হয় ।
৩ যে হাদীছকে রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দিকে সম্বধিত করা হয়েছে তাকে মারফূ হাদীছ বলা হয় ।
২) কেনানা গোত্রের মুখদাজী নামক এক ব্যক্তি শামে বসবাসকারী আবু মুহাম্মাদ নামে পরিচিত জনৈক ব্যক্তির নিকট থেকে শুনলেন, তিনি বলছেন যে, বিতর নামায ওয়াজিব। মুখদাজী বলেন, কথাটি শুনে আমি ছাহাবী উবাদা বিন ছামেতের (রাঃ) নিকট গেলাম। তিনি তখন মসজিদে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে আবু মুহাম্মাদের কথাটি বললাম ।
তিনি বললেন, আবু মুহাম্মাদ ভুল কথা বলেছে। কেননা আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামায বান্দাদের উপর লিখে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এই নামাযগুলোকে হালকা মনে করে তার অধিকার ক্ষুন্ন করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে অঙ্গিকার। তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি এই নামাযগুলো আদায় করবে না তার জন্যে আল্লাহর কাছে কোন অঙ্গিকার নাই। আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দিবেন, চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন।''১
১ . আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ ছালাত হা/ ১২১০। মুসনাদে আহমাদ, হা/ ২১৬৩৫। হাদীছটি ছহীহ (দ্রঃ ছহীহ তারগীব তারহীব আলবানী হা/৩৭০।
তিনি বললেন, আবু মুহাম্মাদ ভুল কথা বলেছে। কেননা আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামায বান্দাদের উপর লিখে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এই নামাযগুলোকে হালকা মনে করে তার অধিকার ক্ষুন্ন করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে অঙ্গিকার। তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি এই নামাযগুলো আদায় করবে না তার জন্যে আল্লাহর কাছে কোন অঙ্গিকার নাই। আল্লাহ চাইলে তাকে শাস্তি দিবেন, চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন।''১
১ . আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ ছালাত হা/ ১২১০। মুসনাদে আহমাদ, হা/ ২১৬৩৫। হাদীছটি ছহীহ (দ্রঃ ছহীহ তারগীব তারহীব আলবানী হা/৩৭০।
৩) ত্বলহা ইবনে উবাউদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُول اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ نَّائِرُ الرَّأْس نَسْمَعُ دَوِيَّ صَوْتِهِ وَلَا نَفْقَهُ مَا يَقُولُ حَتَّى دَنَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا هُوَ يَسْأَلُ عَن الإِسْلامِ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمْسُ صَلَوَاتٍ فِي الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ فَقَالَ هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُنَّ قَالَ لَا إِلا أَنْ تَطَوَّعَ وَصِيَامُ شَهْرٍ رَمَضَانَ فَقَالَ هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُ فَقَالَ لَا إلا أَنْ تَطَوَّعَ وَذَكَرَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الزَّكَاةَ فَقَالَ هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهَا قَالَ لا إِلا أَنْ تَطَوَّعَ قَالَ فَأَدْبَرَ الرَّجُلُ وَهُوَ يَقُولُ وَاللَّهِ لا أزيدُ عَلى هَذَا وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُفَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ
একদা নজদের অধিবাসী এক বেদুঈন (ছাহাবী রাঃ) মাথার চুল উস্কু-খুস্কু অবস্থায় গুনগুন করে দুর্বধ্য কিছু কথা বলতে বলতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দরবারে এলো। নবীজীর নিকটবর্তী হয়ে ইসলাম সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করল। তিনি (ছাঃ) বললেনঃ রাত ও দিনে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায আদায় করতে হবে। সে বলল: এ পাঁচ নামায ছাড়া আমার উপর অন্য কোন নামায আবশ্যক আছে কি? তিনি বললেন না, তবে তুমি যদি অতিরিক্ত কোন নামায পড়তে চাও তো পড়তে পারবে। রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করতে হবে। সে বলল, এ ছাড়া অন্য কি ছিয়াম আমার উপর আবশ্যক কি? তিনি বললেন, না, তবে তুমি যদি নফল আদায় করে থাক। এভাবে রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট যাকাতের কথা উল্লেখ করলেন। সে বলল, এ ছাড়া অন্য কিছু আমার উপর আবশ্যক কি? তিনি বললেন, না, তবে তুমি যদি নফল আদায় করে থাক। তখন লোকটি সেখান থেকে উঠে গেল এবং বলতে লাগল, আল্লাহর শপথ আমার উপর যা ফরয করা হয়েছে আমি তার চাইতে বেশী কিছু করবনা এবং এর থেকে কমও কিছু করব না। লোকটি যখন চলে গেল তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, "এ লোক তার কথায় যদি সত্যবাদী হয় তবে সে মুক্তি পেয়ে যাবে।” অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, “সে যদি সত্যবাদী হয়, তবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”১
১ . বুখারী, অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুচ্ছেদঃ যাকাতের ইসলামের অন্তর্ভূক্ত, হা/৪৪। মুসলিম,
এ হাদীসে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বিতর নামায ওয়াজিব নয় । কেননা যদি ওয়াজিব হত তবে লোকটি যখন প্রশ্ন করল যে, “এছাড়া আমার উপর আর কোন নামায আছে কি না” তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ‘না’ বলতেন না; বরং তাকে বিতর নামাযও আবশ্যক এ কথা বলতেন। তাছাড়া বিতর নামায যদি ওয়াজিব হয় তাহলে উহা না পড়লে নিঃসন্দেহে গুনাহগার হওয়ার কথা ।
কিন্তু এ হাদীছে দেখা যায় লোকটি যখন আল্লাহর কসম করে বলল আমি আমার উপর ফরযের অতিরিক্ত কিছু করব না, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মুক্তির গ্যারান্টি দিয়ে বললেন, ‘বাস্তবিকই লোকটি যদি সত্যবাদী হয়, ফরয ইবাদত সঠিকভাবে আদায় করে তবে সে মুক্তি পেয়ে যাবে' । কিভাবে একজন মানুষ ওয়াজিব কাজ পরিত্যাগ করে মুক্তি পেয়ে যায়? তাহলে এ হাদীছ থেকে স্পষ্টভাবে একথা কি প্রমাণিত হয় না যে, বিতর নামায ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাত বা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ?
৪) ইবনু আব্বাস (রাঃ)এর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুআ'য বিন জাবাল (রাঃ)কে (গভর্ণর করে) ইয়ামান প্রেরণ করেন তখন বলেন,
কিন্তু এ হাদীছে দেখা যায় লোকটি যখন আল্লাহর কসম করে বলল আমি আমার উপর ফরযের অতিরিক্ত কিছু করব না, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মুক্তির গ্যারান্টি দিয়ে বললেন, ‘বাস্তবিকই লোকটি যদি সত্যবাদী হয়, ফরয ইবাদত সঠিকভাবে আদায় করে তবে সে মুক্তি পেয়ে যাবে' । কিভাবে একজন মানুষ ওয়াজিব কাজ পরিত্যাগ করে মুক্তি পেয়ে যায়? তাহলে এ হাদীছ থেকে স্পষ্টভাবে একথা কি প্রমাণিত হয় না যে, বিতর নামায ওয়াজিব নয় বরং সুন্নাত বা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ?
৪) ইবনু আব্বাস (রাঃ)এর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুআ'য বিন জাবাল (রাঃ)কে (গভর্ণর করে) ইয়ামান প্রেরণ করেন তখন বলেন,
فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدِ اقْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّيَوْمٍ وَلَيْلة
অধ্যায়ঃ ঈমান, অনুচ্ছেদঃ নামায সমূহ ইসলামের অন্যতম রুকন, হা১২।
'' ... তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তা'আলা তাদের উপর ফরয করেছেন দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায।”
এ হাদীছেও প্রমাণিত হয় যে, বিতর নামায যদি ফরযের মত অতি আবশ্যক হত, তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহা জানানোর জন্য মুআ'য (রাঃ)কে অবশ্যই নির্দেশ দিতেন । ইবনু হিব্বান বলেন, মুআ’যের ইয়ামান গমণ রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবনের শেষ লগ্নে মৃত্যুর অল্প কিছু দিন পূর্বে ছিল ।''১
১ . বিস্তারিত দেখুন নসবুর রায়া- ইমাম যায়লাঈ ২/১১৩পৃঃ।
এ হাদীছেও প্রমাণিত হয় যে, বিতর নামায যদি ফরযের মত অতি আবশ্যক হত, তবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহা জানানোর জন্য মুআ'য (রাঃ)কে অবশ্যই নির্দেশ দিতেন । ইবনু হিব্বান বলেন, মুআ’যের ইয়ামান গমণ রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবনের শেষ লগ্নে মৃত্যুর অল্প কিছু দিন পূর্বে ছিল ।''১
১ . বিস্তারিত দেখুন নসবুর রায়া- ইমাম যায়লাঈ ২/১১৩পৃঃ।
যারা বিতর নামাযকে ওয়াজিব বলেন, তাদের দলীলগুলো তো অবশ্যই যঈফ- যেমন এর বিস্তারিত বিবরণ অচিরেই উল্লেখ করা হবে- যদি ছহীহ ধরেও নেয়া হয়, তবে তার জবাবে বলা যায় যে, উহার বিধান ছিল পূর্বে। মুআ’যের (রাঃ) এই হাদীছ দ্বারা তা রহিত হয়ে যায় । (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত) এই জন্য একটি যঈফ হাদীছে বলা হয়েছেঃ “তিনটি বিষয় আমার জন্য ফরয কিন্তু তোমাদের জন্য নফল। তম্মধ্যে একটি হচ্ছেঃ বিতর নামায।”২
২.ইবনু আব্বাস (রাঃ)এর বরাতে মুসনাদে আহমাদ হা/১৯৪৬। ত্ববরানী, দারাকুতনী, বায়হাকী ও হাকেম । এর সনদে ‘আবু জনাব আল কালবী' নামক জনৈক বর্ণনাকারী আছে, মুহাদ্দীছগণ যাকে যঈফ বলেছেন। এই জন্য এই হাদীছ দলীল হিসেবে প্রযোজ্য নয়।
২.ইবনু আব্বাস (রাঃ)এর বরাতে মুসনাদে আহমাদ হা/১৯৪৬। ত্ববরানী, দারাকুতনী, বায়হাকী ও হাকেম । এর সনদে ‘আবু জনাব আল কালবী' নামক জনৈক বর্ণনাকারী আছে, মুহাদ্দীছগণ যাকে যঈফ বলেছেন। এই জন্য এই হাদীছ দলীল হিসেবে প্রযোজ্য নয়।
অন্য আরেকটি হাদীছে ইবনু আব্বাসের (রাঃ) বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ
أمِرْتُ بالأضحِيَّةِ وَالوَتْرِ وَلَمْ تُكتَبْ
“আমাকে কুরবানী এবং বিতর নামাযের আদেশ করা হয়েছে। কিন্তু উহা ফরয হিসেবে লিখে দেয়া হয়নি।”১ কিন্তু হাদীছটির সনদে ‘জাবের’ নামক বর্ণনাকারী যঈফ।
১. মুসনাদে আহমাদ হা/১৯৭৭।
১. মুসনাদে আহমাদ হা/১৯৭৭।
এই যঈফ হাদীছ দু'টি বাদ দিলেও যে দলীল সমূহ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, তা দ্বারা একথা প্রমাণ হওয়া যথেষ্ট যে, বিতর নামায ওয়াজিব নয়; বরং উহা সুন্নাত ।
তাছাড়া পূর্বে উল্লেখিত ইবনে ওমর ও জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ দু'টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বিতর নামায ফরযের মত নয় বরং উহা সুন্নাত। ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছেঃ
৫) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় ফরয নামায ব্যতীত রাতের নফল নামায ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ বাহনের উপর বসে- বাহন যে দিকে যায় সেদিকেই- পড়তেন। তিনি বিতর নামায আরোহীর উপর পড়তেন ।”২
২ . বুখারী, অধ্যায়ঃ জুমআর নামায, অনুচ্ছেদঃ সফরে বিতর পড়া, হা/৯৪৫।
তাছাড়া পূর্বে উল্লেখিত ইবনে ওমর ও জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ দু'টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বিতর নামায ফরযের মত নয় বরং উহা সুন্নাত। ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছেঃ
৫) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় ফরয নামায ব্যতীত রাতের নফল নামায ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ বাহনের উপর বসে- বাহন যে দিকে যায় সেদিকেই- পড়তেন। তিনি বিতর নামায আরোহীর উপর পড়তেন ।”২
২ . বুখারী, অধ্যায়ঃ জুমআর নামায, অনুচ্ছেদঃ সফরে বিতর পড়া, হা/৯৪৫।
আর জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আরোহী যে দিকেই যাক না কেন রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে দিকেই মুখ করে তার উপর বসে নফল নামায আদায় করতেন। কিন্তু ফরয নামায আদায়ের ইচ্ছা করলে অবতরণ করতেন এবং কিবলা মুখী হয়ে নামায আদায় করতেন।”১
১. বুখারী, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ যেখানেই থাক ক্বিবলার দিক মুখ ফেরাবে। হা/৩৮৫।
১. বুখারী, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ যেখানেই থাক ক্বিবলার দিক মুখ ফেরাবে। হা/৩৮৫।
সুতরাং বিতর নামায যদি ফরয বা ওয়াজিব হত তবে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনই তা আরোহীর উপর বসে পড়তেন না ।
৬) অনুরূপভাবে কোন ফরয বা ওয়াজিব নামাযের রাকাত সংখ্যায় মুছল্লীকে এমন কোন স্বাধীনতা দেয়া হয়নি যে, মনে চাইলে এত রাকাত পড়বে বা পড়বে না। কিন্তু সুন্নাত-নফল নামাযের রাকাতের ক্ষেত্রে এই স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যেমন বিতর নামাযের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
৬) অনুরূপভাবে কোন ফরয বা ওয়াজিব নামাযের রাকাত সংখ্যায় মুছল্লীকে এমন কোন স্বাধীনতা দেয়া হয়নি যে, মনে চাইলে এত রাকাত পড়বে বা পড়বে না। কিন্তু সুন্নাত-নফল নামাযের রাকাতের ক্ষেত্রে এই স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যেমন বিতর নামাযের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
عَن أبي أيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الوثرُ حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِخَمْسٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِثَلاثٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أن يُوتِرَ بِوَاحِدَةٍ فَلْيَفْعَلْ
আবু আইয়্যুব আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলামনের উপর হক হচ্ছে বিতর নামায আদায় করা। অতএব যে পাঁচ রাকাত বিতর পড়তে চায় সে পাঁচ, যে তিন রাকাত পড়তে চায় সে তিন এবং এক রাকাত বিতর পড়তে চায় সে এক রাকাত পড়তে পারে ।”১
১.আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ বিতর কত রাকাত, হা/১২১২, ইবনু মাজাহ, অধ্যায়ঃ নামায প্রতিষ্ঠা করা, অনুচ্ছেদঃ বিতর নামায তিন, পাঁচ, সাত ও নয় রাকাতের বর্ণনা হা/১১৮০।
১.আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ নামায, অনুচ্ছেদঃ বিতর কত রাকাত, হা/১২১২, ইবনু মাজাহ, অধ্যায়ঃ নামায প্রতিষ্ঠা করা, অনুচ্ছেদঃ বিতর নামায তিন, পাঁচ, সাত ও নয় রাকাতের বর্ণনা হা/১১৮০।
এই হাদীছ থেকে বুঝা যায়, যদি বিতর নামায ফরযের মত অবশ্যই পড়তে হবে এমন নামায হত, তবে নির্দিষ্ট করে তার রাকাত সংখ্যা বেঁধে দেয়া হত এবং কখনই তা মুছল্লীর ইচ্ছা- স্বাধীনতার উপর ছেড়ে দেয়া হত না ।
অবশ্য বিতর নামায ওয়াজিব না হলেও তা বিনা কারণে ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। এতে ব্যক্তি বিপুল পরিমাণ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। সুতরাং এ ব্যাপারে অলসতা করা কোন মু'মিন ব্যক্তির উচিত নয়। কেননা উহা একটি লাল উট তথা মূল্যবান সম্পদের চাইতে বেশী উত্তম।
বিতর নামাযকে ওয়াজিব বলার পক্ষে দলীল এবং তার জবাবঃ
নিম্নে ওয়াজিবের অর্থ বহণ করে এমন দলীল সমূহ উল্লেখ করে তার জবাব প্রদান করা হচ্ছেঃ
১) আমর বিন আস (রাঃ) একদা জুমআর খুতবা প্রদান কালে বলেন, আবু বাছরা (রাঃ) আমার কাছে হাদীছ বর্ণনা করেছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
অবশ্য বিতর নামায ওয়াজিব না হলেও তা বিনা কারণে ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। এতে ব্যক্তি বিপুল পরিমাণ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। সুতরাং এ ব্যাপারে অলসতা করা কোন মু'মিন ব্যক্তির উচিত নয়। কেননা উহা একটি লাল উট তথা মূল্যবান সম্পদের চাইতে বেশী উত্তম।
বিতর নামাযকে ওয়াজিব বলার পক্ষে দলীল এবং তার জবাবঃ
নিম্নে ওয়াজিবের অর্থ বহণ করে এমন দলীল সমূহ উল্লেখ করে তার জবাব প্রদান করা হচ্ছেঃ
১) আমর বিন আস (রাঃ) একদা জুমআর খুতবা প্রদান কালে বলেন, আবু বাছরা (রাঃ) আমার কাছে হাদীছ বর্ণনা করেছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ زَادَكُمْصَلاةَ فَحَافِظُوا عَلَيْهَا وَهِيَ الْوَتْرُ
“নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের জন্য একটি নামায বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। উহা হচ্ছে বিতর নামায। তোমরা উহা ফজর ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে আদায় কর।''১
১ . মুসনাদে আহমাদ হা/২২৭৩১, শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, (দ্রঃ সিলসিলা ছহীহা হা/১০৮, ইরউয়া গালীল হা/ ৪২৩, ছহীহ ইবনু মাজাহ্ হা/৯৫৮।)
১ . মুসনাদে আহমাদ হা/২২৭৩১, শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, (দ্রঃ সিলসিলা ছহীহা হা/১০৮, ইরউয়া গালীল হা/ ৪২৩, ছহীহ ইবনু মাজাহ্ হা/৯৫৮।)
বর্তমান যুগের শ্রেষ্ট মুহাদ্দিছ ও আলেম আল্লামা শায়খ আলবানী তাঁর বিখ্যাত হাদীছের সংকলন ‘সিলসিলা ছহীহা’ (১/২২২) গ্রন্থে এই হাদীছটি উল্লেখ করে বলেন,
‘এই হাদীছের বাহ্যিক অর্থ অনুযায়ী বিতর নামায ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। হানাফী আলেমগণ একথাই বলেন। কিন্তু ইহা জমহূর তথা অধিকাংশ বিদ্বানের বিপরীত মত । অকাট্য দলীল প্রমাণ দ্বারা যদি একথা প্রমাণিত না হত যে, দিন-রাতে শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই ফরয এর বেশী নয়, তবে হানাফী ভাইদের কথা অধিক বিশুদ্ধ প্রমাণিত হত।' তিনি আরো বলেন, ‘হানাফী বিদ্বানগণ তাদের দাবীর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন, বিতর নামায হুবহু পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মত ফরয নয়। উহা ফরয ও সুন্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি আবশ্যকীয় আমল। এই আমলটি প্রমাণের দিক থেকে ফরযের চাইতে নিম্নে কিন্তু তাগিদের দিক থেকে সুন্নাতের চাইতে অধিক শক্তিশালী ।
জেনে রাখা আবশ্যক যে, হানাফী মাযহাবের এই পরিভাষাটি তাদের নিজস্ব এবং সম্পূর্ণ নতুন। ছাহাবায়ে কেরাম বা পূর্ববর্তী বিদ্বানগণ তার সাথে পরিচিত ছিলেন না। এই পরিভাষা মতে ওয়াজিব বিষয় মর্যাদা, গুরুত্ব ও প্রতিদানের ক্ষেত্রে ফরযের চাইতে কম ।তাদের এই কথানুযায়ী এর অর্থ দাঁড়ায়: ক্বিয়ামত দিবসে বিতর নামায পরিত্যাগকারীর শাস্তি হবে ফরয নামায পরিত্যাগকারীর চাইতে কম। এই সময় তাদেরকে আমরা বলবঃ যে লোক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের অতিরিক্ত কোন নামায আদায় না করার ব্যাপারে দৃঢ় কথা বলে, কিভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে বলতে পারেন, “লোকটি মুক্তি পেয়ে যাবে ।”?১
১. এই হাদীছটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্রঃ পূঃ ১৭-১৮।
‘এই হাদীছের বাহ্যিক অর্থ অনুযায়ী বিতর নামায ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। হানাফী আলেমগণ একথাই বলেন। কিন্তু ইহা জমহূর তথা অধিকাংশ বিদ্বানের বিপরীত মত । অকাট্য দলীল প্রমাণ দ্বারা যদি একথা প্রমাণিত না হত যে, দিন-রাতে শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই ফরয এর বেশী নয়, তবে হানাফী ভাইদের কথা অধিক বিশুদ্ধ প্রমাণিত হত।' তিনি আরো বলেন, ‘হানাফী বিদ্বানগণ তাদের দাবীর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন, বিতর নামায হুবহু পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মত ফরয নয়। উহা ফরয ও সুন্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে একটি আবশ্যকীয় আমল। এই আমলটি প্রমাণের দিক থেকে ফরযের চাইতে নিম্নে কিন্তু তাগিদের দিক থেকে সুন্নাতের চাইতে অধিক শক্তিশালী ।
জেনে রাখা আবশ্যক যে, হানাফী মাযহাবের এই পরিভাষাটি তাদের নিজস্ব এবং সম্পূর্ণ নতুন। ছাহাবায়ে কেরাম বা পূর্ববর্তী বিদ্বানগণ তার সাথে পরিচিত ছিলেন না। এই পরিভাষা মতে ওয়াজিব বিষয় মর্যাদা, গুরুত্ব ও প্রতিদানের ক্ষেত্রে ফরযের চাইতে কম ।তাদের এই কথানুযায়ী এর অর্থ দাঁড়ায়: ক্বিয়ামত দিবসে বিতর নামায পরিত্যাগকারীর শাস্তি হবে ফরয নামায পরিত্যাগকারীর চাইতে কম। এই সময় তাদেরকে আমরা বলবঃ যে লোক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের অতিরিক্ত কোন নামায আদায় না করার ব্যাপারে দৃঢ় কথা বলে, কিভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সম্পর্কে বলতে পারেন, “লোকটি মুক্তি পেয়ে যাবে ।”?১
১. এই হাদীছটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্রঃ পূঃ ১৭-১৮।
কিভাবে শাস্তির সাথে মুক্তি একত্রিত হতে পারে? কোন সন্দেহ নেই যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উক্ত বাণীই এটা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে, বিতর নামায ওয়াজিব নয়। আর এ জন্যই অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম ঐকমত্য হয়েছেন যে, বিতর নামায সুন্নাত; উহা ওয়াজিব নয়। আর এটাই হক ও ধ্রুব সত্য ।”২
২. আল মাওসূআ আল ফেকুহিয়্যাহ্, ২/১১৪-১১৫পৃঃ।
২. আল মাওসূআ আল ফেকুহিয়্যাহ্, ২/১১৪-১১৫পৃঃ।
২) আমর বিন শুআইব থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা থেকে তিনি তাঁর দাদা আবদুল্লাহ্ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ
أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ زَادَكُمْصَلاةَ فَحَافِظُوا عَلَيْهَا وَهِيَ الْوَتْرُ
রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের জন্য একটি নামায বৃদ্ধি করেছেন। তোমরা উহার সংরক্ষণ কর। উহা হচ্ছে বিতর নামায । ”১
১.মুসনাদে আহমাদ হা/ ৬৬২৫। (শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, দ্রঃ তারতীব ছহীহুল জামে' হা/১৪৪৪।)
১.মুসনাদে আহমাদ হা/ ৬৬২৫। (শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেন, দ্রঃ তারতীব ছহীহুল জামে' হা/১৪৪৪।)
এই হাদীছ দ্বারা বিতর নামায ওয়াজিব একথা সাব্যস্ত হয় না । এখানে বৃদ্ধি করার অর্থ ইহসান ও অনুগ্রহের দিক থেকে- তথা আল্লাহ্ আমাদের প্রতি একটি অনুগ্রহ বৃদ্ধি করেছেন। অথবা অর্থ হবে গুরুত্ব ও ফযীলতের দিক থেকে- তথা একটি ফযীলতপূর্ণ আমল আল্লাহ আমাদের জন্য বৃদ্ধি করেছেন।এই জন্য মুনাবী বলেন, বৃদ্ধিকৃত নামায যে মূল (ফরয) নামাযের মধ্যেই শামিল হতে হবে এটা আবশ্যক নয়। একথার পক্ষে দলীল হচ্ছে, মারফূ' সূত্রে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ, তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “নিশ্চয় তোমাদের নামাযের সাথে আরেকটি নামায আল্লাহ্ বৃদ্ধি করেছেন। উহা তোমাদের জন্য একটি লাল উটের চাইতে উত্তম। আর তা হচ্ছে ফজর নামাযের পূর্বে দু'রাকাত নামায ।”১
১.হাদীছটি বর্ণনা করেন বায়হাক্বী সুনানে কুবরায়
১.হাদীছটি বর্ণনা করেন বায়হাক্বী সুনানে কুবরায়
“তানক্বীহুত্ তাহক্কীক” গ্রন্থের লিখক বলেন, “হাদীছটি বাইহাক্বী ছহীহ সনদে বর্ণনা করেন।' ইমাম যায়লাঈ বলেন, হাদীছটি ইমাম হাকেম মুস্তাদরাকে স্বীয় সনদে বর্ণনা করে বলেন, হাদীছটি ছহীহ। অতঃপর তিনি ইবনু খুযায়মা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যদি এই হাদীছের জন্য সফর করা আমার জন্য সম্ভব হত, তবে আমি সফর করতাম।''২
২.দেখুন নাসবুর্ রায়া- ইমাম যায়লাঈ হানাফী ২/১১১ পৃঃ।
২.দেখুন নাসবুর্ রায়া- ইমাম যায়লাঈ হানাফী ২/১১১ পৃঃ।
৩) আবদুল্লাহ্ বিন বুরায়দা থেকে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
الوثرُ حَقٌّ فَمَنْ لَّمْ يُوتِرُ فَلَيْسَ مِنَّا الوِتْرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَليْسَ مِنَّا الوثرُ حَقٌّ فَمَنْ لَمْ يُوتِرْ فَلَيْسَ مِنَّا
“বিতর নামায হক বা আবশ্যক। যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়। বিতর নামায হক বা আবশ্যক। যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় । বিতর নামায হক বা আবশ্যক। যে বিতর পড়বে না সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় ৷”৩
৩.আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ ছালাত, অনুচ্ছেদঃ যে বিতর পড়ে না তার বিধান, হা/১২০৯।
৩.আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ ছালাত, অনুচ্ছেদঃ যে বিতর পড়ে না তার বিধান, হা/১২০৯।
এই হাদীছটি যঈফ। কেননা এর সনদে উবাইদুল্লাহ্ বিন আবদুল্লাহ্ আল আতাক্বী আল মারওয়াযী যঈফ।''১ এই কারণে এই হাদীছ দলীল হওয়ার উপযুক্ত নয় ।
১. দ্রঃ মেশকাত- আলবানী ১/৩৯৯ পৃঃ হা/ ১২৭৮।
১. দ্রঃ মেশকাত- আলবানী ১/৩৯৯ পৃঃ হা/ ১২৭৮।
৪) আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
الوثر واحِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ
“বিতর নামায আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ওয়াজিব ।”২
২. হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বায্যার ।
মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ ২/২৪০পৃঃ।
২. হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বায্যার ।
মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ ২/২৪০পৃঃ।
এর সনদে জাবের জু'ফী নামক জনৈক বর্ণনাকারী আছে, অধিকাংশ মুহাদ্দেছীনের মতে সে যঈফ বা দুর্বল।''৩ অতএব এই হাদীছ দ্বারাও দলীল গ্রহণ করা সঠিক হবে না ।
৩.নায়লুল আওতার, শাওকানী, ৩/৩২।
৩.নায়লুল আওতার, শাওকানী, ৩/৩২।
৫) মুআ'য বিন জাবাল (রাঃ) একদা শাম গমণ করে দেখেন সেখানকার লোকেরা বিতর নামায পড়েনা। তিনি মুআ’বিয়া (রাঃ)কে বললেন, কি ব্যাপার এদেশের লোকেরা দেখছি বিতর নামায পড়ে না? মুআ’বিয়া বললেন, এ নামায কি ওয়াজিব নাকি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আমার পালনকর্তা আমার জন্য একটি নামায বৃদ্ধি করেছেন। উহা হচ্ছে বিতর নামায। এর সময় হচ্ছে এশা থেকে নিয়ে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ।”১
১.মুসনাদে আহমাদ হা/২১০৮১।
১.মুসনাদে আহমাদ হা/২১০৮১।
এই হাদীছটি যঈফ। কেননা উহা যঈফ হওয়ার পিছনে তিনটি কারণ ক্রিয়াশীল রয়েছে। ১) হাদীছের বর্ণনাকারী ‘উবাইদুল্লাহ্ বিন যাহার' সম্পর্কে ইবনুল জাওযী বলেন, ইবনু মাঈন বলেছেন: সে কিছুই নয়। ইবনু হিব্বান তার সম্পর্কে বলেন, সে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের বরাত দিয়ে জাল হাদীছ বর্ণনা করত। ২) আরেক বর্ণনাকারী আবদুর রহমান বিন রাফে' তানূখী যঈফ। ইমাম বুখারী তার সম্পর্কে বলেন, তার হাদীছে অনেক মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য বিষয় রয়েছে। ৩) হাদীছটি মুনকাত্বা”২
২. যে হাদীছের সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে- তথা সনদের কোন এক স্থানে এক বা একাধিক বর্ণনাকারীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুনকাতা হাদীছ বলে। আর মুনকাতা’ হাদীছ যঈফ হাদীছের অন্তর্ভূক্ত ।
২. যে হাদীছের সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে- তথা সনদের কোন এক স্থানে এক বা একাধিক বর্ণনাকারীর নাম বাদ পড়েছে তাকে মুনকাতা হাদীছ বলে। আর মুনকাতা’ হাদীছ যঈফ হাদীছের অন্তর্ভূক্ত ।
কেননা আবদুর রহমান বিন রাফে' মুআ’যের (রাঃ) সাক্ষাত পাননি ।''৩
৩.বিস্তারিত দেখুন নসবুর রায়া- ইমাম যায়লাঈ ২/১১২পৃঃ।
৩.বিস্তারিত দেখুন নসবুর রায়া- ইমাম যায়লাঈ ২/১১২পৃঃ।
ছহীহ্ সুন্নাহ্ আলোকে
বিতর নামায
সংকলন ও গ্রন্থনাঃ
মুহা: আবদুল্লাহ্ আল কাফী
বিতর নামায
সংকলন ও গ্রন্থনাঃ
মুহা: আবদুল্লাহ্ আল কাফী
Last edited: