সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Habib Bin Tofajjal

অন্যান্য বিজাতীয় সংস্কৃতি আগ্রাসন যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
688
Comments
1,217
Solutions
17
Reactions
6,634
Credits
5,440
বিজাতীয় সংস্কৃতির অগ্রাসন আমাদের যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। কারণ, আজ আমরা আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও তমদ্দুন থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে বিজাতিদের সংস্কৃতির দ্বারস্থ হয়েছি এবং আমরা আমাদের নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে অমুসলিম কাফের ও বিজাতিদের সংস্কৃতির অন্ধানুকরণে ব্যাকুল হয়ে পড়েছি। বর্তমান সময়ে মুসলিম দেশসমূহে ইসলামী সংস্কৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত চর্চা হচ্ছে। এমনকি আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে পাঠ্যসূচী করা হয়েছে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মুসলিমরা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কি তা ভুলেই গেছে। তাদের নিকট পশ্চিমা সংস্কৃতি ছাড়া কোনো কিছুই মনে হয় যেন গ্রহণযোগ্য নয়। একজন মুসলিম কেন যেন মনে করে, পশ্চিমা সংস্কৃতি ছাড়া নিজেকে আধুনিক বা অভিজাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না। ফলে মুসলিমরা তাদের নিজেদের হাজার বছরের আত্মপরিচয়কে ভুলে গিয়ে চোখ ধাঁধানো মরীচিকার পেছনে ছুটছে। তাদের প্রাত্যহিক ব্যাবহারিক জীবনের পশ্চিমাদের অনুকরণ করা একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ইসলামী সভ্যতাই সারা দুনিয়ার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বশ্রেষ্ঠ। ইসলামই মানুষকে মানবতা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি শিখিয়েছে। ইসলামের মহান আদর্শ ও মুসলিম সভ্যতা সংস্কৃতিকে অনুকরণ করে বিজাতিরা সারা দুনিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর আমরা মুসলিমরা তাদের অন্ধ অনুকরণ করে বেড়াচ্ছি এবং সারা দুনিয়ার মধ্যে সব ধরনের অপমান সহ্য করে যাচ্ছি। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের সতর্ক করে বলেন,

﴿وَلَا تَرۡكَنُوٓاْ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنۡ أَوۡلِيَآءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ١١٣ ﴾ [هود: ١١٣]

“তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ো না, অন্যথায় অগ্নি তোমাদেরকে স্পর্শ করবে। আর এই অবস্থায় আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনো বন্ধু থাকবে না এবং তোমরা সাহায্যও পাবে না”।[1]
তাছাড়া সমাজ-বিজ্ঞানী প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من تشبه بقوم فهو منهم»
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত হবে”।[2]

ভালো-মন্দ বাচ-বিচার না করে অন্ধভাবে অপরের ভঙ্গিমা নকল করে চলা, সব কাজে অপরের হুবহু অনুকরণ করা মানুষের জন্য নিন্দনীয়। কারণ, এমন স্বভাব কেবল বানরেরই হয়ে থাক। যে জাতি কোনো প্রকার বিচার-বিশ্লেষণ না করে চোখ বুজে অপরের অনুকরণ করে তৃপ্তি পায়, সে বানরের স্বভাবের অধকিারী বললে ভুল হবে না। কিন্তু মানুষ, বিশেষ করে কোনো মুসলিম পারে না বিজাতির কোনো অসভ্য ভঙ্গিমা নকল করে চলতে। কারণ, মুসলিমের আছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। আর তা বিনাশ করে অপরের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করার মানেই হল, নিজেকে ধ্বংস ও বিলীন করা।

বিজাতিদের সভ্যতা সংস্কৃতিতে মানবতার জন্য অনিবার্য ধ্বংস ও নিশ্চিত অশান্তি। তার প্রমাণ আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই- আজ তাদের দেশে মানবতা কত অসহায়, নারীরা কতনা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। তাদের দেশের মানুষ তাদের বাবা-মায়ের পরিচয় কি তা জানে না। বৃদ্ধ মাতা পিতাদের খোজ খবর নেওয়ার মত কেউ নেই। আবার মা বাবার নিকট তাদের সন্তানেরও কোনো হিসেব নেই। ভাই বোনের কোনো পরিচয় নাই। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো বন্ধন নেই। মানসিক অশান্তি তাদের নিত্য দিনের সাথী। তাদের জীবন যে কত দূর্বিসহ তা দেখলেই বুঝা যাবে। আত্মহত্যা পারিবারিক কলহ তাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। এ কারণেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‌আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উম্মতকে বিজাতিদের অনুকরণ করা থেকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন,

«لتتعن سنن من كان قبلكم حذو القذة بالقذة وشبرا بشبر وذراعا بذراع حتى لو دخلوا جحر ضب لدخلتموه .قالوا اليهود والنصارى؟ قال: فمن !

“অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অনুসরণ করবে বিঘত-বিঘত এবং হাত-হাত (সম) পরিমাণ। এমনকি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তে প্রবেশ করে, তাহলে তোমরাও তাদের পিছনে পিছনে যাবে।” সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ইয়াহুদ ও নাসারার অনুকরণ করার কথা বলছেন?’ তিনি বললেন, “তবে আবার কার?”[3]

সাহাবী হুযাইফা ইবন ইয়ামান বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির পথ অবলম্বন করবে জুতার মাপের মত (সম্পূর্ণভাবে)। তোমরা তাদের পথে চলতে ভুল করবে না এবং তারাও তোমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে চলতে ভুল করবে না। এমন কি তাদের কেউ যদি শুকনো অথবা নরম পায়খানা খায়, তাহলে তোমরাও (তাদের অনুকরণে) তা খেতে লাগবে[4]!’

তিনি মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে বলেন, “সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদেরকে ছেড়ে অন্য কারো সাদৃশ্য অবলম্বন করে। তোমরা ইয়াহুদীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করো না, আর খ্রিষ্টানদেরও সাদৃশ্য অবলম্বন করো না।”[5]

তাছাড়া রাসূল বলেন, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা রোযা রাখে, কিন্তু সেহেরী খায় না। তাই ইসলাম তাদের অন্ধ অনুকরণ করে সেহেরী খাওয়া ত্যাগ করতে নিষেধ করল।[6]

রোযা রাখার পর ওরা ইফতার করে, কিন্তু বড্ড দেরী করে। ইসলাম তাদের অনুকরণ বর্জন করতে নির্দেশ দিয়ে সূর্য ডোবার সাথে সাথে সত্বর ইফতার করতে মুসলিম জাতিকে উদ্বুদ্ধ করল।[7]

সূর্য পূজকরা সূর্যের উদয় ও অস্তের সময় তার পূজা করে থাকে। তাই ঐ সময়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যেও নামায পড়াকে ইসলাম নিষিদ্ধ ঘোষণা করল[8]

যাতে মুশরিকদের সাথে তওহীদ বাদী মুসলিমদের কোনো প্রকার সাদৃশ্য ভাব না ফুটে ওঠে। বৈরাগ্যবাদ বিজাতীয় আচার। ইসলামে তা নিষিদ্ধ হল।[9]
পাশ্চাত্য-সভ্যতার ছোঁয়া লাগা মানুষ হীনমন্যতার শিকার হয়ে পশ্চিমা-বিশ্বের অনুকরণ করে। কাফেরদের বিভিন্নমুখী বিভব ও প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং পার্থিব উন্নয়ন দেখে মুসলিম নিজেদেরকে হেয় ও তুচ্ছজ্ঞান করে বসেছে। ভেবেছে, দুনিয়ায় ওরা যখন এত উন্নত, তখন ওদের সভ্যতাই হলো প্রকৃত সভ্যতা। সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণে এটাই ধরে নিয়েছে যে, ওরা যেটা করে, সেটাই উত্তম ও অনুকরণীয়। ওদের মত করতে পারলে তারাও ঐরূপ উন্নতির পরশমণি হাতে পেয়ে যাবে। মনে করেছে যে, ওদের ঐ ছন্নছাড়া, লাগামছাড়া, বাঁধনহারা যৌন-স্বাধীনতাপূর্ণ জীবনই হলো ওদের উন্নতির মূল কারণ এবং প্রগতির মূল রহস্য।


[1] সূরা হূদ, আয়াত; ১১৩
[2] আহমাদ ২/৫০, আবূ দাঊদ ৪০৩১, সহীহুল জামে’ ৬০২৫ নং
[3] বুখারী, মুসলিম ২৬৬৯, হাকেম, আহমাদ, সহীহুল জামে’ ৫০৬৭ নং
[4] ইবনে ওয়াদ্দাহ, আল-বিদাউ অন্নাহইয়ু ‘আনহা, নং ১৯৩; পৃ. ২/১৩৭।
[5] তিরমিযী, সহীহুল জামে, হাদিস; ২৬৯৫।
[6] মুসলিম, হাদিস: ১০৯৬।
[7] আবূ দাঊদ, হাদিস: ২৩৫৩, ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৬৯৮, হাকেম, হাদিস: ১/৪৩১
[8] মুসলিম, হাদিস: ৮৩২
[9] আবূ দাঊদ, হাদিস: ৪৯০৪
 
Last edited:
Top