Joynal Bin Tofajjal
Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
- Joined
- Nov 25, 2022
- Threads
- 344
- Comments
- 475
- Reactions
- 5,289
- Thread Author
- #1
আমরা আবু ত্বহা আদনান ইস্যুতে বাদশাহ ফায়সাল সম্পর্কে স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনানের খারেজিপনা সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি। গণহারে আরব বিশ্বের শাসকদেরকে সে কাফির ফতোয়া দেয়। কাফির ফতোয়া কপচানো এমনই এক বক্তব্যে আবু ত্বহা আদনান সাহেব বলেছে, “যারা পেট্রোডলার সিস্টেম চালু করেছে, এসব ভোগবিলাসী আরবদেরকে আমরা বলি, এরা হচ্ছে আমিরুল মুমিনিন। নাউজুবিল্লাহ। সুবহানাল্লাহ! কত অন্ধ হলে মানুষ এদেরকে আমিরুল মুমিনিন মনে করতে পারে! যারা মুসলিমদের প্রোপার্টি সব অ্যামেরিকার হাতে তুলে দিয়েছে। আর সেই প্রোপার্টি দিয়ে এরা বোম্বিং করে করে সারা বিশ্বে মুসলিমদেরকে হত্যা করছে। আল্লাহ পাক সেই যে বলেছেন, সুরা মায়িদার মধ্যে, ৫১ নং আয়াতে, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ইহুদি এবং ক্রিশ্চিয়ানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কোরো না।’ কে বলেছেন? আল্লাহর চেয়ে কি আমি জিও-পলিটিক্স ভালো বুঝি? আল্লাহর চেয়ে আমি আমার ভালোমন্দ ভালো বুঝি? কাদেরকে? بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ – ‘যারা একে অপরের বন্ধু।’ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ – ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এদের দিকে মুখ ফেরায়, তারা এদের অন্তর্ভুক্ত।’ এই উম্মাহর কেউ না তারা। সে যেই হোক। বিশ্বের এসব নামধারী মুসলিম কান্ট্রিদের চাইতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অনেক ভালো আছে।” [দেখুন: https://youtu.be/xHWkxNkJnpM (৩৬:২৭ মিনিট থেকে ৩৭:৪০ মিনিট পর্যন্ত)]
আমরা বলেছিলাম, তার কথা থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পেট্রোডলার চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার কারণে আরব বিশ্বের নেতারা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে। আর যারা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বন্ধু বানাবে, তারা কাফির! সুতরাং পেট্রোডলার চুক্তির পরে মুহাম্মাদ বিন সালমান-সহ ইতঃপূর্বে আরব বিশ্বে যত মুসলিম নেতা ছিলেন, সবাই কাফির! কী জলবত-তরলং হিসাব!
প্রিয় ভাইয়েরা, পেট্রোডলার চুক্তি কে করেছিলেন, সেটার কথা আবু ত্বহা আদনান সাহেব বলেনি। পেট্রোডলার চুক্তি করেছিলেন বাদশাহ ফায়সাল বিন আব্দুল আজিজ রাহিমাহুল্লাহ। বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ের মূর্খ খারেজি বক্তা আবু ত্বহা আদনানের ফতোয়া অনুযায়ী বাদশাহ ফায়সাল রাহিমাহুল্লাহ ভোগবিলাসী আরব, যিনি পেট্রোডলার চুক্তি করে কাফিরদের সাথে হাত মিলিয়েছেন, এজন্য তিনি কাফির! আমরা আলোচ্য পরিচ্ছেদে সংক্ষেপে আলোকপাত করব, বাদশাহ ফায়সালের কাছ থেকে মুসলিম উম্মাহ কী পেয়েছে, আর হম্বিতম্বি করা খারেজি বক্তা আবু ত্বহা আদনান উম্মতকে কী দিয়েছে।
বাদশাহ ফায়সালের অসংখ্য কৃতিত্বের মধ্যে আমি তিনটি গুরুত্ববহ কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করব।
এক. ১৯৬২ সালে স্থাপিত মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সময় অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করেন বাদশাহ ফায়সাল। সেসময় তিনি ছিলেন যুবরাজ এবং দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী। [দেখুন: King Faisal bin Abdulaziz Al Saud] মদিনা ভার্সিটির মাধ্যমে মহান আল্লাহ ইসলামের যে কী পরিমাণ উপকার করেছেন, তা বলে শেষ করার মতো না। এই ভার্সিটি সম্পর্কে জানেন এমন প্রত্যেক ন্যায়পন্থি মানুষ সাক্ষ্য দেবেন, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে মুসলিম বিশ্বের অভাবনীয় কল্যাণ সাধিত হয়েছে।
দুই. বাদশাহ ফায়সাল ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থা রাবেতায়ে আলাম আল-ইসলামি প্রতিষ্ঠা করেন। যেই সংস্থাটি ১৯৬৫ সালে বাদশাহ ফায়সালের আমলে অফিসিয়ালি কার্যক্রম শুরু করে। সংস্থাটির প্রধান লক্ষ্য ইসলামি আদর্শ প্রচার করা এবং ইসলামবিরোধী যাবতীয় মতাদর্শের অপনোদন করা। ইসলামবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে এরকম মুসলিম জোট তখন মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। [দেখুন: ড. আব্দুর রহমান আল-হুসাইন কৃত ফায়সাল ইবনু আব্দিল আজিজ আলু সৌদ ওয়া জুহুদুহু ফিল কাদায়াল আরাবিয়্যাতি ওয়াল ইসলামিয়্যা, পৃষ্ঠা: ৩০৯-৩১৮]
তিন. দখলদার ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় মার্কিনিরা ইসরাইলকে সামরিক সাহায্য দিচ্ছিল। তখন বাদশাহ ফায়সাল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কাছে বার্তা পাঠান, ‘যদি ইসরাইলকে কোনোরকম সাহায্য আমেরিকা করে, তাহলে পেট্রোল তেলের রপ্তানি বন্ধ করা হবে আমেরিকায়।’ নিক্সন বাদশাহ ফায়সালের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ফলে ১৩৯৩ হিজরির ২১শে রমজান মোতাবেক ১৯৭৩ সালের ১৭ই অক্টোবর তারিখে বাদশাহ ফায়সাল আমেরিকাকে তেল অবরোধের নির্দেশ দেন। নিকৃষ্ট ফিরিঙ্গি জাতির কল্পনাতেও ছিল না, এমন অভিনব কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে। [দেখুন: Hoag Levins, op. cit, p. 51-53; গৃহীত: ফায়সাল ইবনু আব্দিল আজিজ আলু সৌদ ওয়া জুহুদুহু ফিল কাদায়াল আরাবিয়্যাতি ওয়াল ইসলামিয়্যা, পৃষ্ঠা: ৩৬৫]
সেসময় তেলের দাম কয়েকগুণ তেল সংকটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু পেট্রোলপাম্প এবং অসংখ্য গাড়ির চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে বাদশাহ ফায়সালের সাথে নেগোশিয়েট করার জন্য মার্কিন ফরেন মিনিস্টার হেনরি কিসিঞ্জারকে পাঠানো হয়। কথিত আছে, বাদশাহ ফায়সাল রিয়াদের মরুভূমিতে চলে গিয়েছিলেন এবং তপ্ত মরুতে এক তাবুর মধ্যে সাক্ষাৎ করেছিলেন কিসিঞ্জারের সাথে। পশ্চিমাদের বোঝানোর জন্য যে, আমরা পেট্রোল বিসর্জন দিয়ে পুনরায় বেদুইন হওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি!
কিসিঞ্জার পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য বলে, “ফুয়েলের অভাবে আমার বিমান এয়ারপোর্টে নিশ্চল অবস্থায় পড়ে আছে। হিজ রয়েল হাইনেস কি ফুয়েল সরবরাহের নির্দেশ দেবেন? আমি চড়া মূল্য দিতে প্রস্তত আছি।” কিসিঞ্জার ইঙ্গিতে জানিয়ে দিল, আমরা বড্ড তেল সংকটে পড়েছি, বাঁচান আমাদের। ১৯৭৩ সালের ‘ম্যান অফ দ্য ইয়ার’ খ্যাত মানুষটি মুখে হাসির লেশটুকুও না এনে জবাব দিলেন, “আমার বয়স হয়েছে অনেক। আমার খুব ইচ্ছে— মৃত্যুর আগে মাসজিদুল আকসায় দু রাকাত নামাজ পড়ব। আপনি কি আমাকে এই ইচ্ছে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন?” বাদশাহ ইঙ্গিতে জানিয়ে দিলেন, ফিলিস্তিন স্বাধীন করার ব্যাপারে তিনি এখনও দৃঢ় মনোবাসনা রাখেন। অতএব পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে না। [দেখুন: www.okaz.com.sa/article/182606]
যদিও তিনি পাঁচ মাস পরে তেল অবরোধ উঠিয়ে নেন এবং আমেরিকার সাথে পেট্রোডলার চুক্তি করেন, তবুও তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইহুদিবাদীদের বিরোধিতা করে গেছেন। পশ্চিমা সাংবাদিকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘মধ্যপ্রাচ্যের কোন ঘটনাকে আপনি দেখতে পছন্দ করবেন?’ তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘সবকিছুর আগে চাই ইসরাইলের নিশ্চিহ্নতা।’ [সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো দেখুন: https://youtu.be/lWPb7uaLbLM]
ইসরাইল-বিরোধী এমন দৃঢ় মনোবল ও কঠোর পদক্ষেপের জন্যই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। বাদশাহ ফায়সাল তাঁর মৃত্যুর পূর্বে প্রদত্ত বিখ্যাত বক্তব্যে বলেছিলেন, “ভাইয়েরা আমার, কীসের প্রহর গুনব আমরা? আমরা কি বিশ্ব বিবেকের অপেক্ষায় থাকব? কিন্তু কোথায় সেই বিশ্ব বিবেক? ভাইয়েরা আমার, মহান কুদস (জেরুজালেম) তোমাদের ডাকছে, ফরিয়াদ করছে তোমাদের কাছে, এই সংকট ও দুর্যোগ থেকে তাকে উদ্ধার করতে। আমাদের ভয় কীসের? আমরা কি মৃত্যুকে ভয় করব? আল্লাহর পথে জিহাদরত মানুষের মৃত্যুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মহান মৃত্যু কি আর আছে?...
ভাইয়েরা আমার, আমি শিহরিত হলে আমাকে মার্জনা করবেন। কারণ আমার যখন মনে পড়ে, আমাদের হারাম শরিফ ও পবিত্র ভূমিগুলোর মানহানি করা হচ্ছে, দখল করে নেওয়া হচ্ছে, সেসবে সম্পাদিত হচ্ছে পাপাচার, অনৈতিক কর্ম ও মানহানিকর বিষয়; তখন আমি একনিষ্ঠচিত্তে আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যদি আমাদের জন্য জিহাদ না লিখে থাকেন, পবিত্র ভূমির উদ্ধারকার্য না লিখে থাকেন, তাহলে জীবনের এই বাঁধনে তিনি যেন এক মুহূর্তও আমাকে আটকে না রাখেন!” [বক্তব্যের ভিডিয়ো দেখুন: https://youtu.be/X2yzuulB9fw]
বাদশাহ ফায়সালের বায়োগ্রাফি স্টাডি করলে বোঝা যায়, ইনি এমন একজন মুসলিম বীর ছিলেন, যিনি ক্ষমতা পেয়ে সারাটা জীবন চেষ্টা করে গেছেন বায়তুল মাকদিস পুনরুদ্ধারের। এজন্য তিনি বলেছিলেন, “খোদ ফিলিস্তিনিরাও যদি ইসরাইলিদের মেনে নেয়, তবুও আমরা তাদের মেনে নেব না।” [মিন শিয়ামিল মালিক আব্দিল আজিজ, পৃষ্ঠা: ৪৩৪; গৃহীত: ফায়সাল ইবনু আব্দিল আজিজ আলু সৌদ ওয়া জুহুদুহু ফিল কাদায়াল আরাবিয়্যাতি ওয়াল ইসলামিয়্যা, পৃষ্ঠা: ২৭৫]
জায়নবাদীদের এমন কট্টর বিরোধিতার জন্য মনে করা হয়, মোসাদ ও সিআইএর সম্মিলিত চক্রান্তে ১৯৭৫ সালের ২৫শে মার্চে বাদশাহ ফায়সালকে হত্যা করা হয়। মহান আল্লাহ এই ইসলামদরদী আজন্ম বাদশাহকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন। আমিন।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ের উগ্রবাদী মূর্খ বক্তা আবু ত্বহা আদনানকে দেখেন, কী পরিমাণ কুটিলতা নিয়ে পেট্রোডলার চালুকারী আরব নেতাদের ভোগবিলাসী বলছে! যেই পেট্রোডলার চুক্তি করেছিলেন বাদশাহ ফায়সাল রাহিমাহুল্লাহ। আপনি তাঁর সিচুয়েশনে যান কিংবা তাঁকে বোঝার চেষ্টা করেন, তখন বুঝবেন, উনি কেন চুক্তি করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর দেশগুলোকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা আমেরিকার পক্ষে থাকতে হতো। বাদশাহ ফায়সাল কট্টর কমিউনিস্ট-বিরোধী ছিলেন। এজন্য স্বভাবতই তিনি সোভিয়েত ইউনিউয়নের পক্ষাবলম্বন না করে আমেরিকার পক্ষে ছিলেন।
আর সেসময় মনে করা হতো, দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্রের পেছনে সোভিয়েত ইউনিয়নের পূর্ণ মদদ আছে। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রচুর ইহুদি এসেছিল ইসরাইলে। উপরন্তু মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হলো, আরব বিশ্বের অনেক দেশে রাজতন্ত্রের জায়গা দখল করছিল কুফরি কমিউনিজম। বাথপার্টি-সহ আরবের কমিউনিস্টদের আধিপত্যকে বাদশাহ ফায়সাল ভয় পেতেন। ধারণা করা হয়, এজন্যই তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। যখন নিক্সন বলেছিল, সৌদি আরব যেন কেবল ডলারের বিনিময়ে তেল বিক্রি করে; এর বিনিময়ে সৌদি আরবকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হবে এবং যে কোনো ধরনের রাজবিরোধী অভ্যুত্থান ঠেকিয়ে দেওয়া হবে।
বাদশাহ ফায়সাল ফেরেশতা ছিলেন না। অবশ্যই তাঁর ভুলত্রুটি ছিল। কিন্তু বায়তুল মাকদিস পুনরুদ্ধারের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং উম্মাহদরদী পরহেজগার বীরপুরুষ ছিলেন; যাঁর জন্য দু ফোঁটা অশ্রু ফেলে দোয়া করা যায়। বাংলাদেশের মসজিদগুলোর মিম্বারে কিংবা জালসার প্যান্ডেলে বসে তাঁকে কাফির ফতোয়া হাঁকানো তো দূরের কথা, তাঁকে ‘ভোগবিলাসী’ বলাও জঘন্যতম বেয়াদবি। অথচ দুটো কাজই করেছেন উগ্রবাদী পথভ্রষ্ট আবু ত্বহা আদনান। দেশে বসে বড়ো বড়ো বুলি আওড়ানো, আর আরব দেশের মুসলিম নেতাদের কাফির ফতোয়া দিয়ে ফিলিস্তিন বিজয়ের স্বপ্ন দেখানো সহজ, কিন্তু একজন ফায়সালের মতো কাজ করা সহজ নয়। যিনি রীতিমতো জিহাদ করে গেছেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে এবং প্রয়োজনের সময় শ্রেষ্ঠ সমরাস্ত্রও ব্যবহার করেছেন।
অপরদিকে বিপথগামিতার নয়া-আহ্বায়ক আবু ত্বহা আদনান মুসলিম যুবসম্প্রদায়কে খারেজিপনার দারস দিয়েছে, হাদিসের নামে জালিয়াতি করেছে এবং তরুণদের শিখিয়েছে— ‘যুগোপযোগী ব্যাখ্যার’ নামে কীভাবে শরিয়তের অপব্যাখ্যা করতে হয়। প্রিয় ভাইয়েরা, জনমানুষের ভুল ভাঙানোর জন্যই এতগুলো কথা বলা। অন্যথায় বাদশাহ ফায়সালের মতো জগদ্বিখ্যাত তাওহিদপন্থি বীরপুরুষের সাথে বাংলাদেশের নিম্নশ্রেণির খারেজি বক্তাকে তুলনা করার প্রশ্নই আসে না। জনৈক আরব কবি বলেছেন, ‘তুমি কি জান না, তরবারির মান ক্ষুণ্ন হয়, যখন কেউ বলে বসে, তরবারি তো লাঠির চেয়েও ধারালো?’
আমরা বলেছিলাম, তার কথা থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পেট্রোডলার চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার কারণে আরব বিশ্বের নেতারা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে। আর যারা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বন্ধু বানাবে, তারা কাফির! সুতরাং পেট্রোডলার চুক্তির পরে মুহাম্মাদ বিন সালমান-সহ ইতঃপূর্বে আরব বিশ্বে যত মুসলিম নেতা ছিলেন, সবাই কাফির! কী জলবত-তরলং হিসাব!
প্রিয় ভাইয়েরা, পেট্রোডলার চুক্তি কে করেছিলেন, সেটার কথা আবু ত্বহা আদনান সাহেব বলেনি। পেট্রোডলার চুক্তি করেছিলেন বাদশাহ ফায়সাল বিন আব্দুল আজিজ রাহিমাহুল্লাহ। বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ের মূর্খ খারেজি বক্তা আবু ত্বহা আদনানের ফতোয়া অনুযায়ী বাদশাহ ফায়সাল রাহিমাহুল্লাহ ভোগবিলাসী আরব, যিনি পেট্রোডলার চুক্তি করে কাফিরদের সাথে হাত মিলিয়েছেন, এজন্য তিনি কাফির! আমরা আলোচ্য পরিচ্ছেদে সংক্ষেপে আলোকপাত করব, বাদশাহ ফায়সালের কাছ থেকে মুসলিম উম্মাহ কী পেয়েছে, আর হম্বিতম্বি করা খারেজি বক্তা আবু ত্বহা আদনান উম্মতকে কী দিয়েছে।
বাদশাহ ফায়সালের অসংখ্য কৃতিত্বের মধ্যে আমি তিনটি গুরুত্ববহ কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করব।
এক. ১৯৬২ সালে স্থাপিত মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সময় অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করেন বাদশাহ ফায়সাল। সেসময় তিনি ছিলেন যুবরাজ এবং দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী। [দেখুন: King Faisal bin Abdulaziz Al Saud] মদিনা ভার্সিটির মাধ্যমে মহান আল্লাহ ইসলামের যে কী পরিমাণ উপকার করেছেন, তা বলে শেষ করার মতো না। এই ভার্সিটি সম্পর্কে জানেন এমন প্রত্যেক ন্যায়পন্থি মানুষ সাক্ষ্য দেবেন, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে মুসলিম বিশ্বের অভাবনীয় কল্যাণ সাধিত হয়েছে।
দুই. বাদশাহ ফায়সাল ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থা রাবেতায়ে আলাম আল-ইসলামি প্রতিষ্ঠা করেন। যেই সংস্থাটি ১৯৬৫ সালে বাদশাহ ফায়সালের আমলে অফিসিয়ালি কার্যক্রম শুরু করে। সংস্থাটির প্রধান লক্ষ্য ইসলামি আদর্শ প্রচার করা এবং ইসলামবিরোধী যাবতীয় মতাদর্শের অপনোদন করা। ইসলামবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে এরকম মুসলিম জোট তখন মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। [দেখুন: ড. আব্দুর রহমান আল-হুসাইন কৃত ফায়সাল ইবনু আব্দিল আজিজ আলু সৌদ ওয়া জুহুদুহু ফিল কাদায়াল আরাবিয়্যাতি ওয়াল ইসলামিয়্যা, পৃষ্ঠা: ৩০৯-৩১৮]
তিন. দখলদার ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় মার্কিনিরা ইসরাইলকে সামরিক সাহায্য দিচ্ছিল। তখন বাদশাহ ফায়সাল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কাছে বার্তা পাঠান, ‘যদি ইসরাইলকে কোনোরকম সাহায্য আমেরিকা করে, তাহলে পেট্রোল তেলের রপ্তানি বন্ধ করা হবে আমেরিকায়।’ নিক্সন বাদশাহ ফায়সালের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ফলে ১৩৯৩ হিজরির ২১শে রমজান মোতাবেক ১৯৭৩ সালের ১৭ই অক্টোবর তারিখে বাদশাহ ফায়সাল আমেরিকাকে তেল অবরোধের নির্দেশ দেন। নিকৃষ্ট ফিরিঙ্গি জাতির কল্পনাতেও ছিল না, এমন অভিনব কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে। [দেখুন: Hoag Levins, op. cit, p. 51-53; গৃহীত: ফায়সাল ইবনু আব্দিল আজিজ আলু সৌদ ওয়া জুহুদুহু ফিল কাদায়াল আরাবিয়্যাতি ওয়াল ইসলামিয়্যা, পৃষ্ঠা: ৩৬৫]
সেসময় তেলের দাম কয়েকগুণ তেল সংকটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বহু পেট্রোলপাম্প এবং অসংখ্য গাড়ির চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে বাদশাহ ফায়সালের সাথে নেগোশিয়েট করার জন্য মার্কিন ফরেন মিনিস্টার হেনরি কিসিঞ্জারকে পাঠানো হয়। কথিত আছে, বাদশাহ ফায়সাল রিয়াদের মরুভূমিতে চলে গিয়েছিলেন এবং তপ্ত মরুতে এক তাবুর মধ্যে সাক্ষাৎ করেছিলেন কিসিঞ্জারের সাথে। পশ্চিমাদের বোঝানোর জন্য যে, আমরা পেট্রোল বিসর্জন দিয়ে পুনরায় বেদুইন হওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি!
কিসিঞ্জার পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য বলে, “ফুয়েলের অভাবে আমার বিমান এয়ারপোর্টে নিশ্চল অবস্থায় পড়ে আছে। হিজ রয়েল হাইনেস কি ফুয়েল সরবরাহের নির্দেশ দেবেন? আমি চড়া মূল্য দিতে প্রস্তত আছি।” কিসিঞ্জার ইঙ্গিতে জানিয়ে দিল, আমরা বড্ড তেল সংকটে পড়েছি, বাঁচান আমাদের। ১৯৭৩ সালের ‘ম্যান অফ দ্য ইয়ার’ খ্যাত মানুষটি মুখে হাসির লেশটুকুও না এনে জবাব দিলেন, “আমার বয়স হয়েছে অনেক। আমার খুব ইচ্ছে— মৃত্যুর আগে মাসজিদুল আকসায় দু রাকাত নামাজ পড়ব। আপনি কি আমাকে এই ইচ্ছে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন?” বাদশাহ ইঙ্গিতে জানিয়ে দিলেন, ফিলিস্তিন স্বাধীন করার ব্যাপারে তিনি এখনও দৃঢ় মনোবাসনা রাখেন। অতএব পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে না। [দেখুন: www.okaz.com.sa/article/182606]
যদিও তিনি পাঁচ মাস পরে তেল অবরোধ উঠিয়ে নেন এবং আমেরিকার সাথে পেট্রোডলার চুক্তি করেন, তবুও তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইহুদিবাদীদের বিরোধিতা করে গেছেন। পশ্চিমা সাংবাদিকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘মধ্যপ্রাচ্যের কোন ঘটনাকে আপনি দেখতে পছন্দ করবেন?’ তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘সবকিছুর আগে চাই ইসরাইলের নিশ্চিহ্নতা।’ [সাক্ষাৎকারের ভিডিয়ো দেখুন: https://youtu.be/lWPb7uaLbLM]
ইসরাইল-বিরোধী এমন দৃঢ় মনোবল ও কঠোর পদক্ষেপের জন্যই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। বাদশাহ ফায়সাল তাঁর মৃত্যুর পূর্বে প্রদত্ত বিখ্যাত বক্তব্যে বলেছিলেন, “ভাইয়েরা আমার, কীসের প্রহর গুনব আমরা? আমরা কি বিশ্ব বিবেকের অপেক্ষায় থাকব? কিন্তু কোথায় সেই বিশ্ব বিবেক? ভাইয়েরা আমার, মহান কুদস (জেরুজালেম) তোমাদের ডাকছে, ফরিয়াদ করছে তোমাদের কাছে, এই সংকট ও দুর্যোগ থেকে তাকে উদ্ধার করতে। আমাদের ভয় কীসের? আমরা কি মৃত্যুকে ভয় করব? আল্লাহর পথে জিহাদরত মানুষের মৃত্যুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মহান মৃত্যু কি আর আছে?...
ভাইয়েরা আমার, আমি শিহরিত হলে আমাকে মার্জনা করবেন। কারণ আমার যখন মনে পড়ে, আমাদের হারাম শরিফ ও পবিত্র ভূমিগুলোর মানহানি করা হচ্ছে, দখল করে নেওয়া হচ্ছে, সেসবে সম্পাদিত হচ্ছে পাপাচার, অনৈতিক কর্ম ও মানহানিকর বিষয়; তখন আমি একনিষ্ঠচিত্তে আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যদি আমাদের জন্য জিহাদ না লিখে থাকেন, পবিত্র ভূমির উদ্ধারকার্য না লিখে থাকেন, তাহলে জীবনের এই বাঁধনে তিনি যেন এক মুহূর্তও আমাকে আটকে না রাখেন!” [বক্তব্যের ভিডিয়ো দেখুন: https://youtu.be/X2yzuulB9fw]
বাদশাহ ফায়সালের বায়োগ্রাফি স্টাডি করলে বোঝা যায়, ইনি এমন একজন মুসলিম বীর ছিলেন, যিনি ক্ষমতা পেয়ে সারাটা জীবন চেষ্টা করে গেছেন বায়তুল মাকদিস পুনরুদ্ধারের। এজন্য তিনি বলেছিলেন, “খোদ ফিলিস্তিনিরাও যদি ইসরাইলিদের মেনে নেয়, তবুও আমরা তাদের মেনে নেব না।” [মিন শিয়ামিল মালিক আব্দিল আজিজ, পৃষ্ঠা: ৪৩৪; গৃহীত: ফায়সাল ইবনু আব্দিল আজিজ আলু সৌদ ওয়া জুহুদুহু ফিল কাদায়াল আরাবিয়্যাতি ওয়াল ইসলামিয়্যা, পৃষ্ঠা: ২৭৫]
জায়নবাদীদের এমন কট্টর বিরোধিতার জন্য মনে করা হয়, মোসাদ ও সিআইএর সম্মিলিত চক্রান্তে ১৯৭৫ সালের ২৫শে মার্চে বাদশাহ ফায়সালকে হত্যা করা হয়। মহান আল্লাহ এই ইসলামদরদী আজন্ম বাদশাহকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন। আমিন।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁয়ের উগ্রবাদী মূর্খ বক্তা আবু ত্বহা আদনানকে দেখেন, কী পরিমাণ কুটিলতা নিয়ে পেট্রোডলার চালুকারী আরব নেতাদের ভোগবিলাসী বলছে! যেই পেট্রোডলার চুক্তি করেছিলেন বাদশাহ ফায়সাল রাহিমাহুল্লাহ। আপনি তাঁর সিচুয়েশনে যান কিংবা তাঁকে বোঝার চেষ্টা করেন, তখন বুঝবেন, উনি কেন চুক্তি করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর দেশগুলোকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা আমেরিকার পক্ষে থাকতে হতো। বাদশাহ ফায়সাল কট্টর কমিউনিস্ট-বিরোধী ছিলেন। এজন্য স্বভাবতই তিনি সোভিয়েত ইউনিউয়নের পক্ষাবলম্বন না করে আমেরিকার পক্ষে ছিলেন।
আর সেসময় মনে করা হতো, দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্রের পেছনে সোভিয়েত ইউনিয়নের পূর্ণ মদদ আছে। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রচুর ইহুদি এসেছিল ইসরাইলে। উপরন্তু মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হলো, আরব বিশ্বের অনেক দেশে রাজতন্ত্রের জায়গা দখল করছিল কুফরি কমিউনিজম। বাথপার্টি-সহ আরবের কমিউনিস্টদের আধিপত্যকে বাদশাহ ফায়সাল ভয় পেতেন। ধারণা করা হয়, এজন্যই তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। যখন নিক্সন বলেছিল, সৌদি আরব যেন কেবল ডলারের বিনিময়ে তেল বিক্রি করে; এর বিনিময়ে সৌদি আরবকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হবে এবং যে কোনো ধরনের রাজবিরোধী অভ্যুত্থান ঠেকিয়ে দেওয়া হবে।
বাদশাহ ফায়সাল ফেরেশতা ছিলেন না। অবশ্যই তাঁর ভুলত্রুটি ছিল। কিন্তু বায়তুল মাকদিস পুনরুদ্ধারের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং উম্মাহদরদী পরহেজগার বীরপুরুষ ছিলেন; যাঁর জন্য দু ফোঁটা অশ্রু ফেলে দোয়া করা যায়। বাংলাদেশের মসজিদগুলোর মিম্বারে কিংবা জালসার প্যান্ডেলে বসে তাঁকে কাফির ফতোয়া হাঁকানো তো দূরের কথা, তাঁকে ‘ভোগবিলাসী’ বলাও জঘন্যতম বেয়াদবি। অথচ দুটো কাজই করেছেন উগ্রবাদী পথভ্রষ্ট আবু ত্বহা আদনান। দেশে বসে বড়ো বড়ো বুলি আওড়ানো, আর আরব দেশের মুসলিম নেতাদের কাফির ফতোয়া দিয়ে ফিলিস্তিন বিজয়ের স্বপ্ন দেখানো সহজ, কিন্তু একজন ফায়সালের মতো কাজ করা সহজ নয়। যিনি রীতিমতো জিহাদ করে গেছেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে এবং প্রয়োজনের সময় শ্রেষ্ঠ সমরাস্ত্রও ব্যবহার করেছেন।
অপরদিকে বিপথগামিতার নয়া-আহ্বায়ক আবু ত্বহা আদনান মুসলিম যুবসম্প্রদায়কে খারেজিপনার দারস দিয়েছে, হাদিসের নামে জালিয়াতি করেছে এবং তরুণদের শিখিয়েছে— ‘যুগোপযোগী ব্যাখ্যার’ নামে কীভাবে শরিয়তের অপব্যাখ্যা করতে হয়। প্রিয় ভাইয়েরা, জনমানুষের ভুল ভাঙানোর জন্যই এতগুলো কথা বলা। অন্যথায় বাদশাহ ফায়সালের মতো জগদ্বিখ্যাত তাওহিদপন্থি বীরপুরুষের সাথে বাংলাদেশের নিম্নশ্রেণির খারেজি বক্তাকে তুলনা করার প্রশ্নই আসে না। জনৈক আরব কবি বলেছেন, ‘তুমি কি জান না, তরবারির মান ক্ষুণ্ন হয়, যখন কেউ বলে বসে, তরবারি তো লাঠির চেয়েও ধারালো?’
লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।
Last edited: