সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Mahmud ibn Shahidullah

প্রবন্ধ প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,445
Credits
2,602
ভূমিকা :

নিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তাই আমরা তাঁরই প্রশংসা করছি, তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি, তার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করছি ও তার নিকট আমাদের আত্মার সকল অনিষ্ট এবং আমাদের আমলের সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দেন তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে হেদায়াত করার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই, যিনি একক তাঁর কোন সমকক্ষ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল।

অতঃপর মানুষকে কল্যাণের পথে আহ্বান করা, তাদের মঙ্গল সাধন করা, তাদেরকে সঠিক নির্দেশনা দেয়া এবং তাদেরকে শিক্ষা দান করা নিঃসন্দেহে মহৎ ও সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব। আর তা নবী ও রাসূলগণের মৌলিক দায়িত্ব ছিল।

আর সেই দায়িত্বের সম্মান ও তার উচ্চ মর্যাদার কারণেই সংস্কারকামী অসংখ্য মানুষ নেকী ও কল্যাণ লাভের আশায় এই পথ অবলম্বন করেছেন। তবে জেনে রাখা উচিত যে, মানুষদেরকে কল্যাণের দিকে দাওয়াত দেয়ার উৎসাহ ও উদ্দীপনার প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ ও উৎসাহী হওয়াটাই তাকে এই কাজে অগ্রসর হওয়ার জন্য সাধারণত অনুমতি দিবে না। কারণ মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকা একটি নৈকট্যপূর্ণ কাজ, যার মাধ্যমে বান্দা তার রবের নৈকট্য অর্জন করতে পারে। আর নৈকট্য অর্জনের কাজ যদি শরী‘আতের নিয়ম-নীতি মেনে সম্পাদন না করা যায়, তাহলে তা আহ্বানকারী ও দাওয়াতপ্রাপ্ত উভয়কেই ক্ষতি সাধন করবে। তাছাড়াও আহ্বানকারী না জেনে দাওয়াতী কাজ করার কারণে পাপে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি আরো বিপদজনক।

শুরুতে ফিরে গিয়ে বলা যেতে পারে যে, সংস্কারের জন্য আহ্বানকারী অনেক রয়েছে। তবে ভুল থেকে সঠিক বের করে পৃথক করার মাপযন্ত্র বা উপায় হল, সংস্কারের সকল পদ্ধতি ও পন্থাগুলোকে কুরআন ও সুন্নাহ্র মূল বক্তব্যের উপর উপস্থাপন করে তা যাচাই বাছাই করে নেয়া। এ কথার বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন তার মধ্য থেকে একটি হল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী,

تَرَكْتُ فِيْكُمْ شَيْئَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا بَعْدَهُمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّتِيْ وَلَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَا عَلَيَّ الْحَوْضَ​

‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি। সেই দু’টি অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত। এই দু’টি আমার হাউজে কাওছারের নিকট না আসা আগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হবে না।[১]

উক্তিটি কতইনা চমৎকার! শরী‘আত হল সকল কিছুর মাপযন্ত্র এবং সকল বিষয়ের মূল ও শাখা-প্রশাখার জন্য দলীল। সুতরাং মুসলিমদের মান, অপমান তারা তাদের দ্বীনের শিক্ষাসমূহকে আঁকড়ে ধরার আদর্শের উপর নির্ভরশীল। যে কারণে কতক মুসলিম সমাজে দর্শক এমন কিছু দেখতে পায় যার কারণে তার কপাল সিক্ত হয় ও তার অন্তর ফেটে যায়। তথায় সমস্যা হল শরী‘আতের দলীল গুলোকে আঁকড়ে ধরা থেকে দূরে থাকা। সে কারণে তার ধারাবাহিকতায় বহু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতের বিলুপ্তি ও দুর্গন্ধময় বিদ‘আতের বিস্তার ঘটেছে। বহু মুসলিম দেশে সেই মসজিদগুলোর পাশে বাধাই করা কবর রয়েছে। যার চার পাশ থেকে কবরবাসীদের নিকট দু‘আ মঞ্জুরের আশা করা হয়। বরং কেউ কেউ ঐ কবর বা মাজারগুলোতে যাওয়ার জন্য সফর সামগ্রী ও বাহন প্রস্তুত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। তাই ঐ সমাজগুলোতে বিদ‘আত বিস্তার লাভ করেছে এবং মানুষের আক্বীদা, ইবাদত ও তাদের আচার ব্যবহারে চরম প্রভাব বিস্তার করেছে। এমনও দেখা যায় যে, কতক মুসলিম দেশে ভ্রমণকারী তিনি বিদ‘আত মুক্ত মসজিদ অনুসন্ধানে বহু চেষ্টা করেও তা না পাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়।

এর সবচাইতে বড় কারণ হল সুন্নাতসমূহের বিরোধিতার বিষয়টি অবহেলা করা। আর এই অবহেলার কারণেই বিদ‘আতের প্রকাশ ঘটে ও তার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এমনকি বিদ‘আত প্রসারের তুলনায় সুন্নাতসমূহ অপরিচিত, বিস্ময়কর বস্তু হয়ে যায়। এর উপরই বালক যুবক হয় এবং যুবক বৃদ্ধ হয়ে যায়।

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) উল্লেখ করেছেন যে, ‘অল্প বিদ‘আতী কাজ সম্পাদন করা হলে তা বহু বিদ‘আতী কাজ সম্পাদন করার দিকে ধাবিত করে। তারপর ঐ বিষয়টি প্রসিদ্ধ হয়ে যায়’। তিনি আরো বলেন, ‘অতঃপর যখন কোন কিছু প্রসিদ্ধ হয়ে যায় তখন তার মধ্যে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করে এবং তার মূল বিষয়টি ভুলে যায়। এমনকি পরবর্তী বিষয়টি মানুষের অভ্যাস ও প্রথায় পরিণত হয়।[২]

তিনি অন্যত্র বিদ‘আতের ক্ষতিসমূহ গণনা করতে গিয়ে বলেছেন যে, ‘(বিদ‘আতের ক্ষতিসমূহের মধ্য থেকে একটি ক্ষতি হল) অন্তরসমূহ বিদ‘আতকে সুস্বাদু মিষ্টি মনে করে এবং সে কারণে বহু সুন্নাত থেকে বিমুখ হয়ে যায়। এমনকি বহু সংখ্যক সাধারণ জনতাকে এ রকমও পাওয়া যায় যে, সে বিদ‘আতের প্রতি যতটুকু যতœবান হয় তারাবীহ ও পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রতি ততটুকু যতœবান হয় না। বিদ‘আতের আরেকটি ক্ষতি হল, ‘বিদ‘আতের কারণে বিশেষ শ্রেণী ও জনসাধারণ সকলেরই ফরজ এবং সুন্নাত সমূহের প্রতি গুরুত্ব কমে যায় এবং তাতে আগ্রহের ভাটা পড়ে। তাই আপনি এমনও ব্যক্তি পাবেন যে, সে বিদ‘আতের ব্যাপারে এতো চেষ্টা ও আন্তরিকতার সাথে এমন কিছু কাজ সম্পাদন করে, যা ফরজ ও সুন্নাতসমূহের ক্ষেত্রেও করে না। এমনকি মনে হবে যে, সে এই বিদ‘আতটি ইবাদত হিসাবে সম্পাদন করছে তার ফরজ ও সুন্নাতগুলোকে অভ্যাস ও কর্ম হিসাবে পালন করছে।[৩]

এ ক্ষেত্রে বলা জরুরী যে, ঐ সমস্ত দেশগুলোতে সংস্কারের দিকে আহ্বানকারীদের উপর জবাবদিহিতামূলক একটি বড় দায়িত্ব চেপে বসেছে। কারণ তাদের দাওয়াতী পদ্ধতির মাঝে কথা ও কাজে বড় ধরনের ত্রুটি বিদ্যমান আছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, তাদের কিছু পদ্ধতি ইবাদত করা ও কোমলতা অবলম্বন করার দিকটিকে প্রাধান্য দিয়েছে।

আর এটাই তাদের দাওয়াতের অধিকতর স্পষ্ট বিষয়। বরং তাদের গুরুত্বের বড় বিষয়টি আতাœার প্রশিক্ষণের উপর নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেই প্রশিক্ষণ বেশী ইবাদত করা, দুনিয়া ত্যাগ করা ও পৃথিবীতে বেশী বেশী বিচরণ করার মাধ্যমে অর্জন হবে। এই কারণে তার ধারাবাহিকতায় যা ঘটেছে তাহল বক্র আক্বীদা ও বিদ‘আতী কার্যকলাপকে না দেখে চোখ নিচু করে নেয়া। এমনকি স্বয়ং ঐ দুনিয়া ত্যাগ করা ও ইবাদত করার মাঝেই ত্রুটি ও বক্রতা বিদ্যমান আছে। কারণ উহা শরী‘আতের বহু জ্ঞান থাকার প্রয়োজন বোধ করে।

দাওয়াত তাবলীগের আরেকটি পন্থা হল যে, এর অনুসারীগণ উম্মতের বাস্তবতা অধ্যয়ন করা এবং পুরো জাতির বেষ্টনকারী বিপদকে নির্ণয় করণের গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আর এটাা নিঃসন্দেহে একটি শরী‘আতের উদ্দেশ্য। তবে এদের সমস্যা হল যে, এই দিকটিকে এর চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য দিকগুলোর উপর প্রাধান্য দেয়া। এর সাথে আরেকটু যোগ করা যেতে পারে যে, তারা শরী‘আতের জ্ঞান ছাড়াই প্রচণ্ড আবেগ দ্বারা উম্মাতের কিছু সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। যার ফলে চেষ্টাসমূহ ব্যর্থ হয়েছে। তা ছাড়াও শারঈ দলীলসমূহ থেকে বিমুখ হওয়ার কারণে ঐ আবেগগুলো পাপে জড়িত হওয়ার কারণ হতে পারে।

তাদের আরও কিছু পন্থা হল যে, সুক্ষাœ দৃষ্টি ও যাচাই বাছাই না করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছে। যার কারণে বিকৃত আক্বীদা ও বিদ‘আতী কার্যকলাপ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছে এবং ধারণা করেছে যে, ঐ বিষয়গুলো উদযাপন করলে ও তার অনুসারীদের প্রতিবাদ করলে তা বিচ্ছিন্নতার কারণ হতে পারে।

তাদের আরও কিছু পন্থা হল যে, বিষয়ের সমাধানে তারা তাদের বিবেককে বিচারক বানিয়েছে এবং শরী‘আত সম্মত দলীল এর নির্দেশকে এড়িয়ে চলেছে। যার ফলে দলীল থেকে বিমুখ হওয়ার ভয়াবহতার পরিণতি প্রশংসনীয় হয়নি। এই পন্থার উপর উদ্ভূত নেতিবাচক প্রভাবের কথা কিছু বলার নেই।

ইমাম আস-সিজ্জী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আল্লাহর কিতাবকে যুক্তির মাধ্যমে খণ্ডণ করা জায়েয নয়। এ ব্যাপারে মুসলিমদের মাঝে কোন মতভেদ নেই। বরং যুক্তিই আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ করা ও তার অনুসরণ করার আবশ্যকতার প্রতি প্রমাণ করে। তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুসাব্যস্ত বাণীকেও প্রত্যাখ্যান করা জায়েয নয়। বরং কুরআন সুন্নাহ বা এ দুইয়ের কোন একটির বিরোধী সকল কিছুকে প্রত্যাখ্যান করা ওয়াজিব’।[৪]

আল-বারবাহারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন! আপনার জেনে রাখা দরকার যে, ‘নিশ্চয় দ্বীন ইসলাম আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এসেছে। উহা ব্যক্তির বিবেক ও তাদের মতামতের সিদ্ধান্তের উপর স্থাপন করা হয়নি। দ্বীনের জ্ঞান শুধু আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটেই রয়েছে’।[৫]

উম্মাতের সালাফদের (পূর্বসুরি সৎ ব্যক্তিগণের) পদ্ধতি বিরোধী এই পন্থার অনুসারীগণ তাদের উপর উক্তিকারকের এই উক্তিটি সকল অবস্থায় সঠিক বলে প্রমাণ হয়। আর তা হল,

لا للإسلام نصروا ولا لأعدائه كسروا​

‘তারা ইসলামের সাহায্যও করেনি এবং ইসলামের শত্রুদের ধ্বংসও করেনি’। বরং তারা উম্মাতের সালাফদের পদাঙ্ক অনুকরণকারী সঠিক পন্থার অনুসারীদের উপর কষ্ট ক্লেশ বৃদ্ধি করেছে। আল্লাহ তাদের উপর রহম করুন।

বক্তব্যের প্রমাণ হিসাবে বলা যায় যে, কোন ব্যক্তি সংস্কারের ইচ্ছা পোষণ করলেই তার দু’টি চোখ আল্লাহর এই বাণীর প্রতি খাড়া করা জরুরী। (আল্লাহ তা‘আলা বলেন),

قُلۡ ہٰذِہٖ سَبِیۡلِیۡۤ اَدۡعُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ ۟ؔ عَلٰی بَصِیۡرَۃٍ اَنَا وَ مَنِ اتَّبَعَنِیۡ ؕ وَ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ وَ مَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ​

‘আপনি বলুন! এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীরা স্পষ্ট জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহ্বান করি। আল্লাহ মহান পবিত্র। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ : ১০৮)। সুতরাং যে সকল ব্যক্তি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতি ছাড়া ভিন্ন পন্থায় দাওয়াত দেয়, সে আয়াতে বর্ণিত সুস্পষ্ট জ্ঞানের উপর নেই। যদিও তার জনসংখ্যা অনেক হয় ও তার সুনাম অনেক ছড়িয়ে পড়ে।

পূর্বের আয়াতের উপসংহার ভেবে দেখলে পাওয়া যাবে যে, উক্ত আয়াতটি একটি প্রস্তাবনার ফলাফল হিসাবে এসেছে। তাহল- যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে স্পষ্ট জ্ঞানের মাধ্যমে আহ্বান করবে সে ভ্রষ্টতায় পতিত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। সর্বাধিক বড় গোমরাহী শিরক থেকে রক্ষা পাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি স্পষ্ট জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহর দিকে আহ্বান করবে, সে গোমরাহীতে পতিত হওয়ার উপলক্ষ হয়ে যায় এবং সর্বাধিক বড় গোমরাহী শিরকের মাঝেও পতিত হতে পারে। বিপদ আরও বেড়ে যায় যখন ঐ সমস্ত জ্ঞানহীন আহ্বানকারীরা দাবী করে বসে যে, তারাই সঠিক পন্থার উপর বিদ্যমান রয়েছে।

ইমাম আস-সিজ্জী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যখন ব্যাপারটি এ রকমই। তাই প্রত্যেক সুন্নাতের দাবীদারের নিকট তার কথার পক্ষে সহীহ দলীল তলব করা আবশ্যক। যদি সে দলীল পেশ করতে পারে তাহলে সত্যতা জানা যাবে এবং তার কথা গ্রহণ করা হবে। পক্ষান্তরে তার কথা সালাফদের থেকে প্রমাণ করতে সক্ষম না হলে বুঝা যাবে সে একজন বক্র, বিদ‘আতী। তার কথায় কান দেয়া ও বিতর্ক করার প্রয়োজন নেই।[৬]

অতএব যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা বিষয়ের দায়িত্ব নিবে এবং মানুষ তাকে তাদের জন্য আহ্বানকারী নিয়োগ করবে তার উপর জরুরী কর্তব্য হল, সে যেন নিজের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে এবং তার দাওয়াত যেন শারঈ মানদণ্ডে হয়। যাতে জানা যায় যে, সে আদর্শের পর্যায়ে আছে। সুতরাং সে যদি কল্যাণ করে তাহলে তার ব্যাপারে যে ভাল ধারণা পোষণ করে সেও কল্যাণ করবে। আর সে যদি মন্দ করে তাহলে তার ব্যাপারে যে ভাল ধারণা পোষণ করে সেও মন্দ করবে। তার ফলে সে বিনা জ্ঞানে আমলের প্রতি অগ্রসর হওয়ার কারণে তাকেই তাদের দায়ভার বহন করতে হবে।

ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

فَمَنْ سَوَّدَهُ قَوْمُهُ عَلَى الْفَقْهِ كَانَ حَيَاةً لَهُ وَلَهُمْ وَمَنْ سَوَّدَهُ قَوْمُهُ عَلَى غَيْرِ فِقْهٍ كَانَ هَلَاكًا لَهُ وَلَهُمْ​

‘যে ব্যক্তিকে তার সম্প্রদায় জ্ঞানের ভিত্তিতে নেতা বানাবে, সে তার নিজের জন্য ও তাদের সবার জন্য প্রাণ হবে। পক্ষান্তরে তাকে যদি তার সম্প্রদায় জ্ঞান ছাড়াই নেতা বানায়, তাহলে সে তার নিজের জন্য ও তাদের সবার জন্য সর্বনাশ হবে।[৭]

পরিশেষে বলব, হে আমার পাঠক ভাই! শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক রচিত সুদৃঢ় মীমাংসিত ফৎওয়াকে আপনার সামনে পেশ করার কারণ হল, কিছু কল্যাণকামী ব্যক্তি দাওয়াতের ক্ষেত্রে বর্তমানে যে পন্থা অবলম্বন করেছে তা সঠিক কি-না তার উত্তর জানার জন্য। শাইখুল ইসলাম (রাহিমাহুল্লাহ) প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন। তিনি দলীল পেশ করেছেন, উদাহরণ দিয়েছেন, ক্বায়েদা ও মূলনীতি বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি দয়া করুন এবং তাকে মহা পুুরস্কার দান করুন (আমীন!!)।

শায়খ আব্দুল আযীয আর-রাইস উক্ত ফাতাওয়াগুলো বর্ণনার কাজটি করেছেন। সেগুলোর নীচে কিছু টিকাও উল্লেখ করেছেন, যার মাঝে বেশ কিছু উক্তি ও বহু উপকারী তথ্য রয়েছে। আল্লাহ তাকে এ কাজের নেকী দান করুন। শায়খ আব্দুল আযীয তার এই পুস্তকটি প্রচলিত একটি দাওয়াতী দল সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য নির্ধারণ করেছেন। যে দলটি ‘তাবলীগ (অর্থাৎ তাবলীগ জামা‘আত)’ নামে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। ঐ দাওয়াতের সাথীরা তাদের বাধাসমূহকে উপেক্ষা করে সংস্কার ও সংশোধন করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে তারা তাদের দাওয়াতের মূলনীতিতে শারঈ বহু নিষিদ্ধ বিষয়ে জড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়াও এই দলটির প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে বিভ্রান্তিকর আক্বীদা রয়েছে। তাদের কিছু কিতাবে যা বর্ণনা এসেছে তা এই বিষয়টিকে শক্তিশালী করে, যার বর্ণনা ভূমিকার মাঝে দিয়েছেন। এমনিভাবে যারা তাদের সাথে বছরের কিছু সময় সঙ্গ দিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তি যা প্রত্যক্ষ করেছেন।

এ কারণে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও সঠিক পন্থার পাশাপাশি জ্ঞানের দক্ষতায় উল্লেখযোগ্য বড় বড় আলেমগণের মধ্য হতে অনেকেই তাদের ভুলগুলোর ব্যাপারে অবহিত করেছেন এবং তার থেকে সাবধান করেছেন। তেমনিভাবে কিছু শিক্ষার্থীরাও এমনটি করেছেন। বরং তাদের ব্যাপারে সতন্ত্র বহু পুস্তিকাও পৃথক ভাবে লেখা হয়েছে। আলোচনাকারী পরবর্তীতে যে সকল সুদৃঢ় উক্তিসমূহ উল্লেখ করেছেন তার সব কিছু অতি সত্তর দেখতে পাবেন।

শায়খ আব্দুল আযীয আর-রাইস এর সুন্নাতের প্রতি তার লোভ ও আবেগ থাকায় আল্লাহ তাকে প্রতিদান দান করুন। সত্য, সঠিক বিষয় পরিস্কার বর্ণনা করে দেয়া ও ভুল থেকে সাবধান সতর্ক করা আল্লাহর পথে জিহাদ করার অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَالَّذِیۡنَ جَاہَدُوۡا فِیۡنَا لَنَہۡدِیَنَّہُمۡ سُبُلَنَا وَ اِنَّ اللّٰہَ لَمَعَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ​

‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমরা তাদেরকে অবশ্যই আমাদের পথে পরিচালিত করবো; আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সাথে থাকেন’ (সূরা আল-আনকাবূত : ৬৯)।

উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন,

والذين جاهدوا في طاعتنا لنهدينهم سبل ثوابنا​

‘আর যারা আমার আনুগত্যে সর্বাতাœক চেষ্টা করে তাদেরকে অবশ্যই আমি আমার প্রতিদানের পথ দেখাব’।[৮] আবূ সুলাইমান আদ-দারানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,

ليس الجهاد في الآية قتال الكفار فقط بل هو نصر الدين والرد على المبطلين وقمع الظالمين وعظمه الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر ومنه مجاهدة النفوس في طاعة الله وهو الجهاد الأكبر​

‘আয়াতের মাঝে উল্লেখিত জিহাদ শুধু কাফেরদের সাথে লড়াই করা নয়। বরং তা হল দ্বীনের সাহায্য করা, বাতিল পন্থীদের জবাব দেয়া, যালিমদের দমন করা। আর গুরুত্বপূর্ণ জিহাদ হল- ভাল কাজের আদেশ দেয়া ও মন্দ কাজের নিষেধ করা। আর আল্লাহর আনুগত্যে আতাœার সর্বাত্বক সাধনাও জিহাদেরই শামিল। আর এটা সবচেয়ে বড় জিহাদ’।[৯]

পরিশেষে যে বিষয়টি অবহিত করা উচিত তাহল, প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আতের দিকে আহ্বানকারী মধ্য সঠিক আক্বীদার কিছু শ্রেষ্ঠ মানুষ রয়েছেন। যারা তাদের নিজ সময় ও সম্পদকে ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চান। তারা অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদেরকে উপদেশ দানে আপ্রান চেষ্টা করেন। কল্যাণকর কাজগুলো সম্পাদন করা ও মন্দ কাজগুলো পরিহার করা তাদের নিকট পসন্দনীয় করে দেয়া হয়েছে। সে কারণে তাদের মাধ্যমে বহু সংখ্যক মানুষ সঠিক পথ পেয়েছে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাদের প্রচেষ্টার উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং তাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ বেশী করে দান করুন।

তারা এবং তাদের মত ব্যক্তিদেরকে বলা উচিত, আপনারা নিজেদেরকে এ জামা‘আতের দিকে সম্বন্ধ না করে নির্ভেজাল আক্বীদা ও সঠিক পন্থার দিকে মানুষকে আহ্বান করুন। আপনাদের রবের পক্ষ থেকে প্রতিদানের প্রত্যাশা, কল্যাণের আশা ও সুসংবাদ গ্রহণ করুন।

তাওহীদের উপর গুরুত্ব দেয়া ও আহ্বানকৃত ব্যক্তিদেরকে তাওহীদ বিষয়ে উপদেশ দান করা আপনাদের প্রতি আবশ্যক। বিশেষ করে ঐ সকল সমাজে আরো বেশি যরূরী, যেখানে তাওহীদের বিষয় অপরিচিত হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য উত্তম পদ্ধতিতে বর্ণনা করুন। যারা বিশুদ্ধ আক্বীদা ও সঠিক পথ ও পন্থায় পরিচিত সুদক্ষ আলেমগণের দিকে আপনাদের ফিরে আসা যরূরী। সুতরাং আপনারা তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা ও জটিল বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করাকে অপরিহার্য করে নিন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ اِنۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ​

‘তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৭)।

পূর্বের আলোচনার আলোকে প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও তার দাওয়াতী মূলনীতির আক্বীদাগত বক্রতার বিষয়টি জানা গেল ও সুস্পষ্ট হল। অতএব লিখিত বা মৌখিকভাবে তাদেরকে নছীহত করা ও তাদেরকে সত্য বিষয়ের স্মরণ করানো তোমাদের প্রতি আবশ্যক কর্তব্য। তারা যদি সাড়া দেয় এবং তারা তাদের চলমান নীতি হতে ফিরে আসে তাহলে এটাই যথেষ্ট ও উত্তম হবে। আর যদি তারা সাড়া না দেয়, তাহলে তাদের থেকে দায়মুক্ত হওয়া এবং তাদের মাজলিসে গিয়ে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি না করাই আবশ্যক।

যে ব্যক্তি ইলম ও আমলের দিক থেকে নিজেকে তাদের প্রতি উপদেশ করার প্রতি সক্ষম মনে করে সে যেন উপদেশ ও বয়ান তাবলীগের কাজ সম্পন্ন করে। আর যে নিজেকে সক্ষম মনে করে না, সে যেন পাপে জড়ানো থেকে সাবধান থাকে এবং সে যে ব্যাপারে দুর্বল তা যেন সে বর্জন করে। বিদ্বানগণের মধ্য হতে অনেকেই এমনই উপদেশ দিয়েছেন। এমতবস্থায় ব্যক্তির কর্তব্য হল- যে নিজেকে তাদের দিকে সম্বন্ধ না করে কল্যাণের দিকে আহ্বান করা। ইসলামী শরী‘আতে কল্যাণের বহু প্রবেশ পথ রয়েছে যেগুলোকে গণনা ও পরিসংখ্যান করা যায় না।

পরিশেষে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করছি। তিনি হেদায়াতের আহ্বানকারীদেরকে সকল প্রকার কল্যাণকর কাজ করার তাওফীক্ব দান করুন এবং মুসলিমদের মাঝে যারা বিপথগামী তাদেরকে হেদায়াত দান করুন। আমাদেরকে উপকারী জ্ঞান ও সৎ আমলের নে‘মত দান করুন। তিনিই সুমহান প্রার্থনা শ্রবণকারী, গ্রহণকারী-আমীন!!


তথ্যসূত্র :
[১]. মুসতাদরাক হাকিম, হা/৩১৯; সনদ সহীহ।
[২]. ইবনু তাইমিয়া, ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুস্তাক্বীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৩১।
[৩]. ইক্বতিযাউছ ছিরাতিল মুস্কাক্বীম, ২য় খণ্ড, পৃ. ১১৯।
[৪]. শায়খুল ইমাম হাফিয আবূ নাসর ওবাইদুল্লাহ আস-সিজ্জী, রিসালাতুস সিজ্জী, পৃ. ৯৩।
[৫]. আবূ মুহাম্মাদ আল হাসান ইবনু আলী ইবনু খালফ আল-বারবাহারী, শারহুস সুন্নাহ লিল বারবাহারী, পৃ. ৬৬-৬৭।
[৬]. রিসালাতুস সিজ্জী, পৃ. ১০০।
[৭]. দারেমী, হা/২৫১; হুসাইন সালীম আসাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, উপরিউক্ত হাদীসের সনদে দু’টি ক্রুটি রয়েছে। ১. এ হাদীসের রাবী ‘ছাফওয়ান ইবনু রুসতুম’-এর মধ্যে জাহালাত রয়েছে। ২. হাদীসটি মুনক্বাত্বি। এ হাদীসের রাবী ‘আব্দুর রহমান ইবনু মাইসারাহ’ তামীম আদ্দারীর সাক্ষাৎ পায়নি।
[৮]. তাফসীরে কুরতুবী, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৫৬; তাফসীরে বাগাবী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৫৬।
[৯]. ইগাছাতুল লাহফান, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৪২-১৪৩; ড. ওহবাতু ইবনু মুছত্বফা আয-যুহাইলী, আত-তাফসীরুল মুনীর ফীল আক্বীদাতি ওয়াশ শরী‘আত, ২১তম খণ্ড, পৃ. ৪০।



-মূল : আব্দুল আযীয ইবনু রাইস আল-রাইস​

-অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক্ব বিন আব্দুল ক্বাদির*​

 
Last edited:
Top