পুলছিরাতে কাফের-মুশরিকদের অবস্থা :
ক্বিয়ামতের দিন কাফের ও মুশরিকরা পুলছিরাতে ওঠার আগেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। কারণ পুলছিরাত অতিক্রমের বিষয়টি কেবল তাদের জন্যই প্রযোজ্য হবে যারা মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা কি ক্বিয়ামতের দিন আমাদের রবের দর্শন লাভ করব? তিনি বললেন,هَلْ تُضَارُونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ وَالقَمَرِ إِذَا كَانَتْ صَحْوًا؟ ‘মেঘহীন আকাশে চন্দ্র ও সূর্যকে দেখতে তোমাদের অসুবিধা হয় কি?’ আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, সেদিন তোমাদের রবকে দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না। এতটুকু ব্যতীত যতটুকু সূর্য দেখার সময় পেয়ে থাক। সেদিন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, যারা যে জিনিসের ইবাদত করতে, তারা সে জিনিসের কাছে গমন কর। এরপর যারা ক্রুশপূজারী ছিল, তারা যাবে তাদের ক্রুশের কাছে। মূর্তিপূজারীরা যাবে তাদের মূর্তির সঙ্গে। সকলেই তাদের উপাস্যের সঙ্গে যাবে। বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীরা। নেককার ও বদকার সকলেই এবং আহলে কিতাবের কতক লোকও থাকবে। অতঃপর জাহান্নামকে আনা হবে। সেটি তখন থাকবে মরীচিকার মত। ইহুদীদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা উত্তরে বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র উযায়ের-এর ইবাদত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। কারণ আল্লাহর কোন স্ত্রী নেই এবং তাঁর কোন সন্তানও নেই। এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই, আমাদেরকে পানি পান করান। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা পানি পান কর। এরপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হ’তে থাকবে।
তারপর নাছারাদেরকে বলা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র মসীহের ইবাদত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কোন স্ত্রীও ছিল না, সন্তানও ছিল না। এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমাদের ইচ্ছা আপনি আমাদেরকে পানি পান করতে দিন। তাদেরকে উত্তর দেয়া হবে, তোমরা পান কর। তারপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হ’তে থাকবে। অবশেষে বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীগণ। তাদের নেককার ও বদকার সকলেই। তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে আটকে রেখেছে? অথচ অন্যরা তো চলে গেছে। তারা বলবে, আমরা তো সেদিন তাদের থেকে আলাদা রয়েছি, যেদিন আজকের চেয়ে তাদের অধিক প্রয়োজন ছিল।
আমরা একজন ঘোষণাকারীকে এ ঘোষণাটি দিতে শুনেছি যে, যারা যাদের ইবাদত করত তারা যেন ওদের সঙ্গে যায়। আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের রবের। নবী করীম (ﷺ) বলেন, এরপর মহাক্ষমতাশালী আল্লাহ তাদের কাছে আসবেন। এবার তিনি সেই আকৃতিতে আসবেন না, যেভাবে ঈমানদারগণ তাঁকে প্রথমে দেখেছিল। এসে তিনি ঘোষণা দিবেন, আমি তোমাদের রব, সবাই তখন বলে উঠবে আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আর সেদিন নবীগণ ছাড়া তাঁর সঙ্গে কেউ কথা বলতে পারবে না। আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমাদের এবং তাঁর মাঝখানে পরিচয়ের জন্য কোন আলামত আছে কি? তারা বলবে, পায়ের নলা। তখন আল্লাহ তাঁর পায়ের নলা উন্মুক্ত করে দিবেন। এই দেখে ঈমানদারগণ সবাই সিজদায় পড়ে যাবে। বাকী থাকবে তারা, যারা লোক-দেখানো এবং লোক-শোনানোর জন্য সিজদা করেছিল। তবে তারা সিজদার মনোভাব নিয়ে সিজদা করার জন্য যাবে, কিন্তু তাদের মেরুদন্ড কাঠের তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে। এরপর তাদের জন্য জাহান্নামের উপর পুল স্থাপন করা হবে..’।[1] অত্র হাদীস দ্বারা বোঝা যাচ্ছে পুলছিরাত স্থাপনের আগেই কাফের-মুশরিকরা জাহান্নামে নিপতিত হবে।
ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন, ‘এই হাদীসে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, আহলে কিতাবের মধ্যে যারা আল্লাহ ব্যতীত উযায়ের ও মাসীহকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, তারা পুলছিরাত স্থাপনের আগেই মুশরিকদের সাথে মিলিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর মুশরিকদের মধ্যে যারা মূর্তি, সূর্য, চন্দ্র এবং অন্য কোন কিছুর পূজা করত, তারা দুনিয়ায় পূজিত তাদের উপাস্যদের (?) সাথে প্রথমেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘ক্বিয়ামতের দিন সে তার সম্প্রদায়ের লোকদের আগে আগে থাকবে ও তাদেরকে জাহান্নামে পৌঁছে দিবে। আর সেটা হবে অতীব নিকৃষ্ট স্থান যেখানে তারা উপনীত হবে’ (হূদ ১১/৯)।[2]
শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-ওছায়মীন (রহঃ) বলেন,
‘যারা প্রকৃত কাফের তারা পুলছিরাতে উঠবে না এবং তা অতিক্রমও করবে না; বরং পুলছিরাতে ওঠার আগেই তাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা জাহান্নামের দিকে ধাবিত হবে দলে দলে। কেবল মুমিনরাই পুলছিরাতে আরোহণ করবে। তবে যার পাপরাশি ক্ষমা করা হয়নি, সে জাহান্নামের আগুনে পড়ে যাবে এবং তাকে তার কর্ম অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে’।[3]
তবে একদল আলেম মত প্রকাশ করেছেন যে, কাফের-মুশরিকরাও পুলছিরাত পার হওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা এটা পার হ’তে পারবে না; বরং সেখান থেকে জাহান্নামে পতিত হবে। যেহেতু আল্লাহ বলেছেন,
‘আর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে সেখানে পৌঁছবে না। এটা তোমার পালনকর্তার অমোঘ সিদ্ধান্ত। অতঃপর আমরা মুত্তাক্বীদের মুক্তি দেব এবং সীমালংঘনকারীদের তার মধ্যে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব’ (মারিয়াম ১৯/৭১-৭২)।
ইমাম ত্বাবারী (রহঃ) সহ কতিপয় মুফাস্সিরের মতে, অত্র আয়াতে ‘যালিম’ বলতে মুশরিকদের বুঝানো হয়েছে।[4] তবে ইমাম কুরতুবী সহ অন্যান্য মুফাসসিরের মতে, ‘যালেম’ বলতে কবীরা গোনাহগার মুসলিমদের বুঝানো হয়েছে।[5] সুতরাং উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা হাদীস থেকে গ্রহণ করলে প্রথম মতটিই সঠিক ও অগ্রগণ্য হিসাবে প্রতিভাত হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিভিন্ন হাদীসে প্রায় ত্রিশটির মত কবীরা গুনাহের বর্ণনা এসেছে, যে পাপগুলোর কারণে সেই পাপী ব্যক্তি পুলছিরাত থেকে পিছলে জাহান্নামে পড়ে যাবে। তবে এ ব্যাপারে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
পুলছিরাতে মুনাফিকদের অবস্থা :
পুলছিরাতে মুনাফিকদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ বলেছেন,
‘যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং পরিবর্তিত হবে আকাশমন্ডলী। আর মানুষ মহা পরাক্রমশালী একক আল্লাহর সম্মুখে দন্ডায়মান হবে’ (ইবরাহীম ১৪/৪৮)। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, মানুষ তখন কোথায় থাকবে? উত্তরে তিনি বললেন, عَلَى الصِّرَاطِ ‘পুলছিরাতের উপর থাকবে’।[6] এক ইহুদী ঠিক একই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে করেছিল, কিন্তু তার জবাবে তিনি বলেছিলেন,
‘তারা অন্ধকারের মধ্যে থাকবে, পুলছিরাতে নয়’।[7]
দুইভাবে অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রথমত, দুনিয়ার আকাশ-যমীন ধবংসের পর মহান আল্লাহ ভিন্নভাবে নতুন আকাশ-যমীন সৃষ্টি করবেন। কবর থেকে উঠে মানবমন্ডলী এই যমীনে সমবেত হবে।[8]
যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘লোকদেরকে ক্বিয়ামতের দিন সাদা ধবধবে রুটির ন্যায় যমীনের ওপর একত্রিত করা হবে। সেখানে কারো কোন বিশেষ নিদর্শন থাকবে না’।[9]
দ্বিতীয়তঃ যারা আক্বীদাগত মুনাফিক, তারা কাফের-মুশরিকদের মত পুলছিরাতে পৌঁছার আগেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। কর্মগত মুনাফিকরা পুলছিরাত পর্যন্ত পৌঁছার পরেও তাদের নূর ছিনিয়ে নেওয়ার কারণে তারা পার হ’তে পারবে না। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘(ক্বিয়ামতের দিন) মুনাফিক হোক বা মুমিন হোক প্রত্যেক মানুষকেই নূর প্রদান করা হবে। তারপর তারা এর অনুসরণ করবে। জাহান্নামের পুলের উপর থাকবে কাঁটাযুক্ত লৌহ শলাকা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সেগুলো পাকড়াও করবে। অতঃপর মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে। আর মুমিনগণ মুক্তি পাবেন..’।[10]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
‘মানুষ যখন অন্ধকারে থাকবে, আল্লাহ তখন (তাদের কাছে) নূর প্রেরণ করবেন। মুমিনরা নূর দেখে সেদিকে ধাবিত হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এই নূরই হবে তাদের জানণাতে যাওয়ার দলীল’।[11]
ইমাম ইবনু আবিল ইয আল-হানাফী (রহঃ) বলেন,
‘এই অন্ধকারের স্থানে মুনাফিকরা মুমিনদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে। মুমিনরা সামনে অগ্রসর হবে, কিন্তু মুনাফিকরা তাদের থেকে পেছনে পড়ে থাকবে। তাদের মাঝে প্রাচীর দিয়ে মুমিনদের থেকে পৃথক করা হবে এবং মুমিনদের নিকটে আসতে বাধা দেওয়া হবে’।[12]
যেমন আল্লাহ বলেন,
‘যেদিন মুনাফিক পুরুষ ও নারীরা ঈমানদারগণকে বলবে, তোমরা একটু থামো, তোমাদের থেকে কিছু আলো নিয়ে নিই। তখন বলা হবে, পিছনে ফিরে যাও! সেখানে আলোর সন্ধান কর। অতঃপর উভয়ের মাঝে প্রাচীর দাঁড় করানো হবে। যাতে একটা দরজা থাকবে। যার ভিতরের দিকে থাকবে রহমত ও বাইরের দিকে থাকবে আযাব’ (হাদীদ ৫৭/১৩)।
অত্র আয়াতে আক্বীদাগত মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়নি; বরং আমলগত মুনাফিকদের বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর ইবাদতে গাফলতি করত এবং ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করত।[13]
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,
‘তারা যখন পুলছিরাতের মাঝামাঝিতে চলে আসবে নেফাক্বীর ঝড়ো বাতাস তাদের নূর উড়িয়ে নিয়ে যাবে এবং তাদের হাতে থাকা প্রদীপ নিভিয়ে দিবে। ফলে তারা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং পুলছিরাত পার হতে সক্ষম হবে না। এমতাবস্থায় ঈমানদার ও তাদের মাঝে এক দরজা বিশিষ্ট একটি প্রাচীর দাঁড় করানো হবে’।[14]
আর
(তোমরা পিছনে ফিরে যাও! সেখানে আলোর সন্ধান কর)-এর ব্যাখ্যায় ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে,
‘তোমরা দুনিয়ায় ফিরে যাও এবং ঈমানের নূর নিয়ে এসো, যার মাধ্যমে তোমরা মুমিনদের মতো পুলছিরাত পার হয়ে যেতে পার’।[15] তিনি আরো বলেন, পুলছিরাত-পূর্ব অন্ধকার জগতে নূর বণ্টনের সময় মুনাফিকদেরকে বাহ্যিক কিছু আলো দান করা হবে। যেমনভাবে তারা দুনিয়াতে বাহ্যিকভাবে নামমাত্র ঈমান এনেছিল। ফলে পুলছিরাতের কাছে এসে তাদের নূর নিভে যাবে। কিন্তু যারা উপকারী জ্ঞান ও সৎকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে দুনিয়াতে নূর সংগ্রহ করেছিল, তাদের নূর নিভবে না; বরং তারা সেই ঈমান-আমলের আলো দিয়ে পার হয়ে যাবেন।[16]
সুতরাং উল্লেখিত আলোচনা থেকে জানা গেল যে, আক্বীদাগত মুনাফিক্বরা যেহেতু চিরস্থায়ী জাহান্নামী, তাই তারা বড় কাফের-মুশরিকদের সাথে আগেই জাহান্নামে নিপতিত হবে। তবে যারা কর্মগত মুনাফিক, তারা পুলছিরাতে উঠলেও মারাত্মক কবীরা গোনাহগার হিসাবে সেখান থেকে জাহান্নামে পড়ে যাবে।
পুলছিরাতে মুমিন-মুসলিমদের অবস্থা :
ঈমান ও আমলের তারতম্য অনুযায়ী পুলছিরাতে মুমিন-মুসলিমদের অবস্থা তিন রকম হবে। নিমেণ তা বর্ণিত হ’ল-
(১) নিরাপদে অতিক্রমকারী :
যারা তাওহীদপন্থী, পূর্ণ ঈমানদার, সৎকর্মশীল, কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত, মৃত্যুর আগে খালেছ তওবাকারী- তারা নিরাপদে আগুনের তাপ ও স্পর্শ অনুভব না করেই পুলছিরাত পার হয়ে যাবেন। দুনিয়াতে নেক আমলে যিনি যত অগ্রগামী ছিলেন, পুলছিরাতে তার গতিও হবে সেইরূপ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘মানুষ তার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে। কতক মুসলিম নিরাপদে তার (পুলছিরাতের) উপর দিয়ে অতিক্রম করবে...’।[17]
তিনি আরো বলেন,
‘আগুনের উপর দিয়ে লোকজন অতিক্রম করবে। তারা তাদের আমল অনুপাতে অতিক্রম করতে থাকবে। তাদের প্রথম দল বিদ্যুৎ চমকানোর মতো দ্রুত বেগে পার হয়ে যাবে। পরবর্তী দলটি বাতাসের বেগে, তারপর দ্রুতগামী ঘোড়ার বেগে, তারপর উষ্ট্রারোহীর বেগে, তারপর মানুষের দৌড়ের গতিতে, তারপর হেঁটে চলার গতিতে অতিক্রম করবে’।[18]
তাছাড়া দুনিয়াতে যেসব মুমিন বান্দা রোগ-শোক, অপবাদ-নিন্দা ও বিপদাপদে কষ্ট পেয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন সেই কষ্টের প্রতিদান স্বরূপ তাদেরকে পুলছিরাতের কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয়ই যাদের জন্য পূর্ব থেকেই আমাদের নিকট কল্যাণ নির্ধারিত হয়েছে, তারা জাহান্নাম হ’তে দূরে থাকবে’ (আম্বিয়া ২১/১০১)। এই আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদ (রহঃ) বলেন,
‘মুমিন ব্যক্তি দুনিয়াতে যে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল, তার বিনিময়ে তিনি জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবেন। আগুন থেকে বাঁচার জন্য এই জ্বর (রোগ) মুমিনের পরম সৌভাগ্যের বিষয়, ফলে তিনি জাহান্নামে পতিত হবেন না’।[19]
একবার আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে এক জ্বরাক্রান্ত রোগীকে দেখতে গেলেন। তিনি রোগীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘সুসংবাদ গ্রহণ করো! কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘এটা (রোগ) আমার আগুন, যা আমি দুনিয়াতে আমার মুমিন বান্দার উপর চাপিয়ে দেই, যাতে এটা আখেরাতের আগুনের পরিপূরক হয়ে যায়’।[20] অন্যত্র তিনি বলেন,
‘জ্বর প্রত্যেক মুমিনের জন্য জাহান্নামের একটি অংশ’।[21]
ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন,
‘দুনিয়াতেই যদি মুমিন বান্দাকে তার পাপ-তাপ থেকে পরিচ্ছন্ন করে দেওয়া হয়, তবে সে ক্বিয়ামতের দিন পুলছিরাত অতিক্রমের সময় জাহান্নামের উত্তাপ অনুভব করবে না। কেননা পুলছিরাতের উপর পাপের পরিমাণ অনুযায়ী মানুষ আগুনের তাপ অনুভব করবে। ফলে দুনিয়াতে যাকে গুনাহ থেকে পাক-পবিত্র করা হবে, সে ক্ষিপ্র বিদ্যুৎ ও বাতাসের গতিতে পুলছিরাত পার হয়ে যাবে। সে আগুনের উত্তাপের কিছুই টের পাবে না এবং এর উষ্ণতাও অনুভব করবে না’।[22]
(২) ক্ষত-বিক্ষত হয়ে অক্রিমকারী :
তাওহীদপন্থী মুসলিমদের মধ্যে যারা পাপাচারে লিপ্ত হয়েছিল, তারা তাদের পাপের পরিমাণ অনুযায়ী পুলছিরাতে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘পুলছিরাত জাহান্নামের দুই তীরের সাথে যুক্ত থাকবে। তাতে থাকবে সা‘দান বৃক্ষের কাঁটা সদৃশ কাঁটাসমূহ। মানুষকে তার উপর দিয়ে অতিক্রম করতে বলা হবে। তাদের কতক ব্যক্তি কাঁটার অাঁচড় খেয়ে ক্ষত-বিক্ষত হবে, তারপর নাজাত পাবে..’।[23]
এই দলের লোকদের ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বলেন,
‘এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হবে তারাই, যারা পাপ কাজ করেছে এবং বিভিন্ন ধরনের ভুল-ত্রুটি করেছে। পুলছিরাতের আঁকড়া তাদেরকে আক্রমণ করবে, ফলে তাদের শরীর ক্ষত-বিক্ষত হবে। অতঃপর তারা তাদের পার্থিব জীবনের প্রেরিত নেক আমলের কারণে আল্লাহর দয়ায় মুক্তি পেয়ে যাবে’।[24]
ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন, ‘দুনিয়াতে ঈমান ও নেক আমলই হ’ল ছিরাতে মুস্তাক্বীম বা সরল পথ, যেই পথে চলতে ও অবিচল থাকতে আল্লাহ বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই পথের হেদায়াত লাভের জন্য দো‘আ করতে বলেছেন। সুতরাং দুনিয়াতে যারা প্রকাশ্যে এবং গোপনে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের উপর অটল থাকতে পারবে, তারাই জাহান্নামের উপর নির্মিত পুলছিরাতে দৃঢ় পদে চলতে পারবে। আর যারা পার্থিব জীবনে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের উপর অটল থাকতে পারবে না; বরং প্রবৃত্তিপরায়ণতা ও সংশয়ের ফেৎনায় নিপতিত হবে, তাদের ফেৎনায় পতিত হওয়ার মাত্রা অনুযায়ী পুলছিরাতের কাঁটা ও আংটা তাদেরকে ক্ষত-বিক্ষত করবে। যেমনভাবে হাদীসে এসেছে,
‘পুলছিরাতের কাঁটা হবে সা‘দান বৃক্ষের কাঁটার মতোই। তবে সেগুলো কত বিরাট ও প্রকান্ড হবে, তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। কাঁটাগুলো মানুষকে তাদের আমল অনুযায়ী পাকড়াও করবে। তাদের মধ্যে মুমিন ব্যক্তি তার আমলের মাধ্যমে রক্ষা পাবে, আর কেউ শাস্তি ভোগ করে নাজাত পাবে’ (মুসলিম হা/১৮২)।[25]
(৩) জাহান্নামে পতিত :
পুলছিরাত অতিক্রমকারীদের মাঝে বড় দলটি তাদের পাপের কারণে আটকে যাবে এবং জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘পুলছিরাত জাহান্নামের দুই তীরের সাথে যুক্ত থাকবে। মানুষকে তার উপর দিয়ে অতিক্রম করতে বলা হবে।...কতক ব্যক্তি সেখানে আটকে যাবে এবং মুখ থুবড়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’।[26]
নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে মুনাফিকী থেকে রক্ষা করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার শরীরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য একজন ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে, তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের পুলছিরাতের উপর আটকে রাখবেন, যতক্ষণ না সে কথিত অপবাদ থেকে বের হয়ে আসে’।[27]
যেমন জিহবার পাপ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘হে মু‘আয! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধুমাত্র জিহবার উপার্জনের কারণেই অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[28]
এভাবে যারা দুনিয়াতে নানা রকমের কবীরা গুনাহে লিপ্ত ছিল, তারা সেই পাপগুলোর কারণে পিছলে পড়ে যাবে জাহান্নামে। যেমন লোক দেখানো শহীদ, ক্বারী ও দানশীলকে পুলছিরাতের উপর থেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[29]
অনুরূপভাবে পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপ, দাইয়ূছ, হত্যাকারী, অপবাদ দানকারী, নিয়মিত জামা‘আতে সালাতের প্রথম কাতার পরিত্যাগকারী, যুদ্ধের মাঠ থেকে পলায়নকারী, ছবি অংকনকারী, প্রতিবেশীকে কষ্ট দানকারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানকারী, পর্দাহীনা নারী, গীবতকারী, সম্পদ আত্মসাৎকারী, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণকারী, সূদখোর-ঘুষখোর, হারাম উপার্জনকারী, খেয়ানত কারীসহ প্রভৃতি কবীরা গুনাহে লিপ্ত যারা মৃত্যুর আগে খালেছ তওবা করতে পারেনি- তারা তাদের এ সকল পাপের কারণে পুলছিরাত থেকে ছিটকে পড়ে যাবে। অতঃপর তাদের পাপের পরিমাণ অনুযায়ী তারা জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে।
এজন্য সালাফে ছালেহীন পুলছিরাতকে খুবই ভয় পেতেন। তাদের দুশ্চিন্তার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এই পুলছিরাত। বিশর ইবনে মানছূর বলেন, একবার আতা সুলাইমী (রহঃ)-কে খুবই পেরেশান মনে হচ্ছিল। আমি তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
‘হায়! মুত্যু আমার কাঁধে উপনীত হয়েছে, কবর হবে আমার গৃহ, ক্বিয়ামতের ময়দানে হবে আমার অবস্থান, জাহান্নামের সেতু হবে আমরা রাস্তা। আমি জানি না আমার রব (সেইদিন) আমার সাথে কিরূপ আচরণ করবেন’।[30]
আবূ মূসা (রহঃ) যখন বাড়ির বাইরে যেতেন, স্বীয় স্ত্রীকে এই উপদেশ দিতেন যে,
‘পরকালের সফরের জন্য তোমার আসবাবপত্র প্রস্ত্তত করে নাও। কেননা জাহান্নামের সেতু পারাপারের জন্য কোন খেয়াঘাটের ব্যবস্থা নেই’।[31]
সর্বপ্রথমে ও সর্বশেষে পুলছিরাত অতিক্রমকারী :
মুহাম্মাদ (ﷺ) সর্বপ্রথম পুলছিরাত অতিক্রম করবেন। আর উম্মত সমূহের মধ্যে উম্মতে মুহাম্মাদী সর্বপ্রথম তা পার হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘অতঃপর জাহান্নামের দুই পার্শ্বদেশে পুলছিরাত স্থাপন করা হবে। অতঃপর আমাকে সর্বপ্রথম আমার উম্মতকে সাথে নিয়ে পার হয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে’।[32] অন্যত্র তিনি বলেন,
‘আমি ও আমার উম্মত সর্বপ্রথম (পুলছিরাত) পার হব’।[33]
আর উম্মতে মুহাম্মাদীর মাঝে গরীব মুহাজিরগণ (فقراء المهاجرين) সর্বপ্রথম জাহান্নামের সেতু পার হয়ে যাবেন।[34]
আর সর্বশেষে পুলছিরাত অতিক্রমকারীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘সর্বশেষে যে লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে পুলছিরাতের ওপর চলতে থাকবে, একবার মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে এবং আরেকবার আগুন তাকে জ্বালিয়ে দেবে। অতঃপর যখন (এ অবস্থায়) সে জাহান্নামের সীমানা অতিক্রম করে আসবে, তখন জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে বলবে,
‘বড়ই কল্যাণময় সেই মহান সত্তা! যিনি আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দান করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এমন কিছু দান করেছেন, যা আগের ও পিছনের কোন লোককেই তা প্রদান করেননি’।[35]
অর্থাৎ সর্বশেষে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেয়ে পুলছিরাত পার হওয়ার পরে তার মনে হবে যে, আল্লাহ তাকে এই ভীতিকর পুলছিরাত পার হওয়ার তাওফীক দিয়ে যে অনুগ্রহ করেছেন পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন মানুষের প্রতিই তিনি সেই অনুগ্রহ করেননি। সুবহানাল্লাহ! তাই তো মহান আল্লাহ পুলছিরাত পার হওয়াকে মহা সাফল্য হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,
‘অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম হবে। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)।
পুলছিরাতে ঈমানের আলো :
পুলছিরাত হচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন এক ভয়ঙ্কর সেতু। সেখানে আলো ছাড়া পার হওয়া সম্ভব হবে না। দুনিয়াতে যার ঈমান ও আমল যত মযবূত ছিল, পুলছিরাত পারাপারের জন্য তিনি তত বেশী আলোপ্রাপ্ত হবেন। আর যার যত বেশী আলো হবে, তিনি তত দ্রুতগতিতে পুলছিরাত পার হয়ে যাবেন। মুমিনদের প্রথম দল এত বেশী আলো প্রাপ্ত হবেন যে, উজ্জ্বলতায় তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার চাঁদের মত ঝলমল করতে থাকবে। রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘মুনাফিক কি মুমিন, প্রতিটি মানুষকেই নূর প্রদান করা হবে। তারপর তারা এর অনুসরণ করবে। অতঃপর (পুলছিরাতে) মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে। আর মুমিনগণ নাজাত পাবেন। প্রথম দল মুক্তি পাবে। তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারা হবে সত্তর হাযার। তাদের কোন হিসাবই নেয়া হবে না। তারপর আরেক দল আসবে, তাদের মুখমন্ডল হবে আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত প্রদীপ্ত’।[36]
অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন বলবেন, ‘তোমরা মাথা উঠাও। অতঃপর তারা মাথা উঠালে তাদের আমল অনুপাতে নূর প্রদান করা হবে। তাদের কেউ এমনও থাকবে যাদের বড় পাহাড়সম নূর প্রদান করা হবে যার আলোতে তারা চলবে। আবার কাউকে তা অপেক্ষা ছোট নূর প্রদান করা হবে। আবার খেজুর গাছ সমতুল্য নূর কারো ডান হাতে প্রদান করা হবে। আবার কাউকে তা অপেক্ষা ছোট নূর প্রদান করা হবে। অবশেষে একজনকে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলীতে নূর প্রদান করা হবে। যা একবার প্রজ্জ্বলিত হবে আরেকবার নিভে যাবে। যখন আলোকিত হবে তখন সে পা উঠাবে এবং নির্বাপিত হ’লে দাঁড়িয়ে যাবে। সেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাদের সামনে অবস্থান করবেন। অতঃপর জাহান্নামের উপর পুলছিরাত নির্মাণ করা হবে, যা পিচ্ছিল ও তরবারী অপেক্ষা ধারালো। এরপর বলা হবে, তোমরা অতিক্রম করো। তারা নিজেদের নূর অনুযায়ী অতিক্রম করবে। যার বৃদ্ধাঙ্গুলিতে আলো প্রদান করা হবে সে মুখমন্ডল, পা ও হাতের উপর ভর করে অতিক্রম করতে যাবে। এক সময় সে এক পায়ের ভরে ঝুলে যাবে এবং জাহান্নামের আগুনের প্রভাব অনুভব করবে। এভাবে চলতে চলতে সে নাজাত পেয়ে যাবে। নাজাত প্রাপ্তির পর সে বলবে,
‘সেই আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাকে এমন আলো দিয়েছেন যা আমার দেখার পর অন্য কাউকে প্রদান করেননি’।[37]
পুলছিরাত এত ভয়ংকর হবে যে, মুমিনরা নূর লাভ করার পরেও আরো নূর প্রাপ্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাবে। আল্লাহ বলেন,
‘তাদের জ্যোতি তাদের সামনে ও ডাইনে ছুটাছুটি করবে। তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর উপরে সর্ব শক্তিমান’ (তাহরীম ৬৬/৮)।
আল্লাহ বলেন,
‘বস্ত্ততঃ আল্লাহ যাকে আলো দেন না, তার কোন আলো থাকে না’ (নূর ২৪/৪০)।
মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন,
‘জাহান্নামের সেতুকে পিছনে না ফেলা পর্যন্ত মুমিন বান্দার হৃদয় প্রশান্ত হবে না এবং তার ভয়ও দূর হবে না’।[38]
পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে আকুল প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের ঈমান ও আমলে বরকত দান করেন। দুনিয়াতে ঈমানের পথে অবিচল রেখে পরকালে পুলছিরাত পার হওয়ার পাথেয় হিসাবে পরিপূর্ণ নূর দান করেন। কেননা সেই দিন যার নূর থাকবে না, জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার কোন গত্যন্তর থাকবে না। আমরা যেন নূরপ্রাপ্ত হয়ে নিরাপদে পুলছিরাত পার হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি, আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
[1]. বুখারী হা/৭৪৩৯; মুসলিম হা/১৮৩।
[2]. ইবনু রজব হাম্বলী, আত-তাখবীফু মিনান নার, পৃ. ২২৭।
[3]. ওছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন, ২/৪৮৩।
[4]. ত্বাবারী, জামে‘উল বায়ান (তাফসীরে ত্বাবারী) ১৮/২৩৮; আল-আমীন আশ-শানক্বীতী, তাফসীরে আযওয়াউল বায়ান ৮/৬১।
[5]. তাফসীরে কুরতুবী ১১/১৪১; শাওক্বানী, ফাৎহুল ক্বাদীর ৩/৪০৮।
[6]. মুসলিম হা/২৭৯১।
[7]. মুসলিম হা/৩১৫।
[8]. তাফসীরে কুরতুবী ৯/৩৮৩।
[9]. মুসলিম হা/২৭৯০; মিশকাত হা/৫৫৩২।
[10]. মুসলিম হা/১৯১; আহমাদ হা/১৪৭৬৩।
[11]. ফাৎহুল ক্বাদীর ৫/২০৫।
[12]. ইবনু আবিল ইয আল-হানাফী, শারহুল আক্বীদা আত-ত্বাহাবিইয়াহ, পৃ. ৪১৪।
[13]. আবুস সঊদ আল-ইমাদী, ইরশাদুল আক্বলিস সালীম (তাফসীরে আবিস সা‘ঊদ), ২/২৪৬।
[14]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন, ১/৩৬৪।
[15]. ইবনুল ক্বাইয়িম, তুহফাতুল মাওলূদ, পৃ. ৩০৯।
[16]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ইজতিমা‘উল জুয়ূশিল ইসলামিয়াহ, ২/৮০।
[17]. আহমাদ হা/১১০৮১; ইবনে মাজাহ হা/৪২৮০, সনদ সহীহ।
[18]. তিরমিযী হা/৩১৫৯; সহীহাহ হা/৩১১, সনদ সহীহ।
[19]. তাফসীরে কুরতুবী ১১/১৩৮।
[20]. ইবনু মাজাহ হা/৩৪৭০; সিলসিলা সহীহাহ হা/৫৫৭;
[21]. মুসনাদে বায্যার হা/১৮২১; সহীহুত তারগীব হা/৩৪৪৭; সহীহাহ হা/১৮২১; সহীহুল জামে‘ হা/৩১৮৭, সনদ সহীহ।
[22]. ইবনু রজব হাম্বলী, লাত্বায়েফুল মা‘আরেফ, পৃ. ৩২৫।
[23]. আহমাদ হা/১১০৮১; ইবনে মাজাহ হা/৪২৮০, সনদ সহীহ।
[24]. আল-মাওসূ‘আতুল আক্বাদিয়াহ ৫/১৪।
[25]. ইবনু রজব হাম্বলী, আত-তাখবীফু মিনান নার, পৃ. ২৪০।
[26]. আহমাদ হা/১১০৮১; ইবনে মাজাহ হা/৪২৮০, সনদ সহীহ।
[27]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮৩; মিশকাত হা/৪৯৮৬, সনদ হাসান।
[28]. তিরমিযী হা/২৬১৬; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৩ সনদ সহীহ।
[29]. মুসলিম হা/১৯০৫; তিরমিযী হা/২৩৮২; নাসাঈ হা/৩১৩৭।
[30]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ২/১৯৩।
[31]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, ক্বাছরুল আমাল, পৃ. ১০৯।
[32]. বুখারী হা/৮০৬; মিশকাত হা/৫৫৮১।
[33]. ইবনু আবী আছেম, আস-সুন্নাহ ১/২৮৪; যিলালুল জান্নাত হা/৬৩৪; আলবানী সনদটিকে মুসলিমের শর্তে জাইয়িদ বলেছেন।
[34]. মুসলিম হা/৩১৫।
[35]. আহমাদ হা/৩৭১৪; মুসলিম হা/১৮৭; মিশকাত হা/৫৫৮২।
[36]. মুসলিম হা/১৯১; আহমাদ হা/১৪৭৬৩।
[37]. হাকেম হা/৩৪২৪; সহীহুত তারগীব হা/৩৫৯১, ৩৭০৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮৩৫২।
[38]. আর-রিসালাতুল কুশায়রিয়াহ ১/২৫৩।
ক্বিয়ামতের দিন কাফের ও মুশরিকরা পুলছিরাতে ওঠার আগেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। কারণ পুলছিরাত অতিক্রমের বিষয়টি কেবল তাদের জন্যই প্রযোজ্য হবে যারা মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। যেমন আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা কি ক্বিয়ামতের দিন আমাদের রবের দর্শন লাভ করব? তিনি বললেন,هَلْ تُضَارُونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ وَالقَمَرِ إِذَا كَانَتْ صَحْوًا؟ ‘মেঘহীন আকাশে চন্দ্র ও সূর্যকে দেখতে তোমাদের অসুবিধা হয় কি?’ আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, সেদিন তোমাদের রবকে দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হবে না। এতটুকু ব্যতীত যতটুকু সূর্য দেখার সময় পেয়ে থাক। সেদিন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেন, যারা যে জিনিসের ইবাদত করতে, তারা সে জিনিসের কাছে গমন কর। এরপর যারা ক্রুশপূজারী ছিল, তারা যাবে তাদের ক্রুশের কাছে। মূর্তিপূজারীরা যাবে তাদের মূর্তির সঙ্গে। সকলেই তাদের উপাস্যের সঙ্গে যাবে। বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীরা। নেককার ও বদকার সকলেই এবং আহলে কিতাবের কতক লোকও থাকবে। অতঃপর জাহান্নামকে আনা হবে। সেটি তখন থাকবে মরীচিকার মত। ইহুদীদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা উত্তরে বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র উযায়ের-এর ইবাদত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। কারণ আল্লাহর কোন স্ত্রী নেই এবং তাঁর কোন সন্তানও নেই। এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই, আমাদেরকে পানি পান করান। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা পানি পান কর। এরপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হ’তে থাকবে।
তারপর নাছারাদেরকে বলা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর পুত্র মসীহের ইবাদত করতাম। তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কোন স্ত্রীও ছিল না, সন্তানও ছিল না। এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমাদের ইচ্ছা আপনি আমাদেরকে পানি পান করতে দিন। তাদেরকে উত্তর দেয়া হবে, তোমরা পান কর। তারপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হ’তে থাকবে। অবশেষে বাকী থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীগণ। তাদের নেককার ও বদকার সকলেই। তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হবে, কোন্ জিনিস তোমাদেরকে আটকে রেখেছে? অথচ অন্যরা তো চলে গেছে। তারা বলবে, আমরা তো সেদিন তাদের থেকে আলাদা রয়েছি, যেদিন আজকের চেয়ে তাদের অধিক প্রয়োজন ছিল।
আমরা একজন ঘোষণাকারীকে এ ঘোষণাটি দিতে শুনেছি যে, যারা যাদের ইবাদত করত তারা যেন ওদের সঙ্গে যায়। আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের রবের। নবী করীম (ﷺ) বলেন, এরপর মহাক্ষমতাশালী আল্লাহ তাদের কাছে আসবেন। এবার তিনি সেই আকৃতিতে আসবেন না, যেভাবে ঈমানদারগণ তাঁকে প্রথমে দেখেছিল। এসে তিনি ঘোষণা দিবেন, আমি তোমাদের রব, সবাই তখন বলে উঠবে আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আর সেদিন নবীগণ ছাড়া তাঁর সঙ্গে কেউ কথা বলতে পারবে না। আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমাদের এবং তাঁর মাঝখানে পরিচয়ের জন্য কোন আলামত আছে কি? তারা বলবে, পায়ের নলা। তখন আল্লাহ তাঁর পায়ের নলা উন্মুক্ত করে দিবেন। এই দেখে ঈমানদারগণ সবাই সিজদায় পড়ে যাবে। বাকী থাকবে তারা, যারা লোক-দেখানো এবং লোক-শোনানোর জন্য সিজদা করেছিল। তবে তারা সিজদার মনোভাব নিয়ে সিজদা করার জন্য যাবে, কিন্তু তাদের মেরুদন্ড কাঠের তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে। এরপর তাদের জন্য জাহান্নামের উপর পুল স্থাপন করা হবে..’।[1] অত্র হাদীস দ্বারা বোঝা যাচ্ছে পুলছিরাত স্থাপনের আগেই কাফের-মুশরিকরা জাহান্নামে নিপতিত হবে।
ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন, ‘এই হাদীসে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, আহলে কিতাবের মধ্যে যারা আল্লাহ ব্যতীত উযায়ের ও মাসীহকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, তারা পুলছিরাত স্থাপনের আগেই মুশরিকদের সাথে মিলিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর মুশরিকদের মধ্যে যারা মূর্তি, সূর্য, চন্দ্র এবং অন্য কোন কিছুর পূজা করত, তারা দুনিয়ায় পূজিত তাদের উপাস্যদের (?) সাথে প্রথমেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
يَقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُودُ-
‘ক্বিয়ামতের দিন সে তার সম্প্রদায়ের লোকদের আগে আগে থাকবে ও তাদেরকে জাহান্নামে পৌঁছে দিবে। আর সেটা হবে অতীব নিকৃষ্ট স্থান যেখানে তারা উপনীত হবে’ (হূদ ১১/৯)।[2]
শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-ওছায়মীন (রহঃ) বলেন,
أما الكفار الخُلَّصُ فإنهم لا يصعدون على هذا الصراط ولا يمرون عليه، بل يذهب بهم إلى جهنم قبل أن يصعدوا هذا الصراط، ويذهبون إلى جهنم ورداً، إنما يصعده المؤمنون فقط، لكن من كان له ذنوب لم تغفر فإنه قد يقع في نار جهنم، ويعذب بحسب أعماله،
‘যারা প্রকৃত কাফের তারা পুলছিরাতে উঠবে না এবং তা অতিক্রমও করবে না; বরং পুলছিরাতে ওঠার আগেই তাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা জাহান্নামের দিকে ধাবিত হবে দলে দলে। কেবল মুমিনরাই পুলছিরাতে আরোহণ করবে। তবে যার পাপরাশি ক্ষমা করা হয়নি, সে জাহান্নামের আগুনে পড়ে যাবে এবং তাকে তার কর্ম অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে’।[3]
তবে একদল আলেম মত প্রকাশ করেছেন যে, কাফের-মুশরিকরাও পুলছিরাত পার হওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা এটা পার হ’তে পারবে না; বরং সেখান থেকে জাহান্নামে পতিত হবে। যেহেতু আল্লাহ বলেছেন,
وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا، ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِيْنَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِيْنَ فِيْهَا جِثِيًّا-
‘আর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে সেখানে পৌঁছবে না। এটা তোমার পালনকর্তার অমোঘ সিদ্ধান্ত। অতঃপর আমরা মুত্তাক্বীদের মুক্তি দেব এবং সীমালংঘনকারীদের তার মধ্যে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব’ (মারিয়াম ১৯/৭১-৭২)।
ইমাম ত্বাবারী (রহঃ) সহ কতিপয় মুফাস্সিরের মতে, অত্র আয়াতে ‘যালিম’ বলতে মুশরিকদের বুঝানো হয়েছে।[4] তবে ইমাম কুরতুবী সহ অন্যান্য মুফাসসিরের মতে, ‘যালেম’ বলতে কবীরা গোনাহগার মুসলিমদের বুঝানো হয়েছে।[5] সুতরাং উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা হাদীস থেকে গ্রহণ করলে প্রথম মতটিই সঠিক ও অগ্রগণ্য হিসাবে প্রতিভাত হয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বিভিন্ন হাদীসে প্রায় ত্রিশটির মত কবীরা গুনাহের বর্ণনা এসেছে, যে পাপগুলোর কারণে সেই পাপী ব্যক্তি পুলছিরাত থেকে পিছলে জাহান্নামে পড়ে যাবে। তবে এ ব্যাপারে আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
পুলছিরাতে মুনাফিকদের অবস্থা :
পুলছিরাতে মুনাফিকদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ বলেছেন,
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ-
‘যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং পরিবর্তিত হবে আকাশমন্ডলী। আর মানুষ মহা পরাক্রমশালী একক আল্লাহর সম্মুখে দন্ডায়মান হবে’ (ইবরাহীম ১৪/৪৮)। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, মানুষ তখন কোথায় থাকবে? উত্তরে তিনি বললেন, عَلَى الصِّرَاطِ ‘পুলছিরাতের উপর থাকবে’।[6] এক ইহুদী ঠিক একই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে করেছিল, কিন্তু তার জবাবে তিনি বলেছিলেন,
هُمْ فِي الظُّلْمَةِ دُونَ الْجِسْرِ
‘তারা অন্ধকারের মধ্যে থাকবে, পুলছিরাতে নয়’।[7]
দুইভাবে অত্র হাদীসের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রথমত, দুনিয়ার আকাশ-যমীন ধবংসের পর মহান আল্লাহ ভিন্নভাবে নতুন আকাশ-যমীন সৃষ্টি করবেন। কবর থেকে উঠে মানবমন্ডলী এই যমীনে সমবেত হবে।[8]
যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
يُحْشَرُ النّاسُ يَومَ القِيامَةِ على أرْضٍ بَيْضاءَ عَفْراءَ، كَقُرْصَةِ النَّقِيِّ، ليسَ فيها عَلَمٌ لأَحَدٍ،
‘লোকদেরকে ক্বিয়ামতের দিন সাদা ধবধবে রুটির ন্যায় যমীনের ওপর একত্রিত করা হবে। সেখানে কারো কোন বিশেষ নিদর্শন থাকবে না’।[9]
দ্বিতীয়তঃ যারা আক্বীদাগত মুনাফিক, তারা কাফের-মুশরিকদের মত পুলছিরাতে পৌঁছার আগেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। কর্মগত মুনাফিকরা পুলছিরাত পর্যন্ত পৌঁছার পরেও তাদের নূর ছিনিয়ে নেওয়ার কারণে তারা পার হ’তে পারবে না। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
وَيُعْطَى كُلُّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ مُنَافِقًا، أَوْ مُؤْمِنًا نُورًا، ثُمَّ يَتَّبِعُونَهُ وَعَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ كَلَالِيبُ وَحَسَكٌ، تَأْخُذُ مَنْ شَاءَ اللهُ، ثُمَّ يُطْفَأُ نُورُ الْمُنَافِقِينَ، ثُمَّ يَنْجُو الْمُؤْمِنُونَ،
‘(ক্বিয়ামতের দিন) মুনাফিক হোক বা মুমিন হোক প্রত্যেক মানুষকেই নূর প্রদান করা হবে। তারপর তারা এর অনুসরণ করবে। জাহান্নামের পুলের উপর থাকবে কাঁটাযুক্ত লৌহ শলাকা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সেগুলো পাকড়াও করবে। অতঃপর মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে। আর মুমিনগণ মুক্তি পাবেন..’।[10]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
بينما الناس في ظلمة إذ بعث الله نورا، فلما رأى المؤمنون النور توجهوا نحوه، وكان النور دليلهم من الله إلى الجنة،
‘মানুষ যখন অন্ধকারে থাকবে, আল্লাহ তখন (তাদের কাছে) নূর প্রেরণ করবেন। মুমিনরা নূর দেখে সেদিকে ধাবিত হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এই নূরই হবে তাদের জানণাতে যাওয়ার দলীল’।[11]
ইমাম ইবনু আবিল ইয আল-হানাফী (রহঃ) বলেন,
وَفِي هَذَا الْمَوْضِعِ يَفْتَرِقُ الْمُنَافِقُونَ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ، وَيَتَخَلَّفُونَ عَنْهُمْ، وَيَسْبِقُهُمُ الْمُؤْمِنُونَ، وَيُحَالُ بَيْنَهُمْ بِسُورٍ يَمْنَعُهُمْ مِنَ الْوُصُولِ إِلَيْهِمْ،
‘এই অন্ধকারের স্থানে মুনাফিকরা মুমিনদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে। মুমিনরা সামনে অগ্রসর হবে, কিন্তু মুনাফিকরা তাদের থেকে পেছনে পড়ে থাকবে। তাদের মাঝে প্রাচীর দিয়ে মুমিনদের থেকে পৃথক করা হবে এবং মুমিনদের নিকটে আসতে বাধা দেওয়া হবে’।[12]
যেমন আল্লাহ বলেন,
يَوْمَ يَقُولُ الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ لِلَّذِينَ آمَنُوا انْظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِنْ نُورِكُمْ قِيلَ ارْجِعُوا وَرَاءَكُمْ فَالْتَمِسُوا نُورًا فَضُرِبَ بَيْنَهُمْ بِسُورٍ لَهُ بَابٌ بَاطِنُهُ فِيهِ الرَّحْمَةُ وَظَاهِرُهُ مِنْ قِبَلِهِ الْعَذَابُ-
‘যেদিন মুনাফিক পুরুষ ও নারীরা ঈমানদারগণকে বলবে, তোমরা একটু থামো, তোমাদের থেকে কিছু আলো নিয়ে নিই। তখন বলা হবে, পিছনে ফিরে যাও! সেখানে আলোর সন্ধান কর। অতঃপর উভয়ের মাঝে প্রাচীর দাঁড় করানো হবে। যাতে একটা দরজা থাকবে। যার ভিতরের দিকে থাকবে রহমত ও বাইরের দিকে থাকবে আযাব’ (হাদীদ ৫৭/১৩)।
অত্র আয়াতে আক্বীদাগত মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়নি; বরং আমলগত মুনাফিকদের বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহর ইবাদতে গাফলতি করত এবং ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করত।[13]
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,
فَلَمَّا تَوَسَّطُوا الْجِسْرَ عَصَفَتْ عَلَى أَنْوَارِهِمْ أَهْوِيَةُ النِّفَاقِ، فَأَطْفَأَتْ مَا بِأَيْدِيهِمْ مِنَ الْمَصَابِيحِ، فَوَقَفُوا حَيَارَى لَا يَسْتَطِيعُونَ الْمُرُورَ، فَضُرِبَ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ أَهْلِ الْإِيمَانِ بِسُورٍ لَهُ بَابٌ،
‘তারা যখন পুলছিরাতের মাঝামাঝিতে চলে আসবে নেফাক্বীর ঝড়ো বাতাস তাদের নূর উড়িয়ে নিয়ে যাবে এবং তাদের হাতে থাকা প্রদীপ নিভিয়ে দিবে। ফলে তারা কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে এবং পুলছিরাত পার হতে সক্ষম হবে না। এমতাবস্থায় ঈমানদার ও তাদের মাঝে এক দরজা বিশিষ্ট একটি প্রাচীর দাঁড় করানো হবে’।[14]
আর
ارْجِعُوا وَرَاءَكُمْ فَالْتَمِسُوْا نُوْرًا
(তোমরা পিছনে ফিরে যাও! সেখানে আলোর সন্ধান কর)-এর ব্যাখ্যায় ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে,
ارْجعُوا إِلَى الدُّنْيَا فَخُذُوا من الْإِيمَان نورا تجوزون بِهِ كَمَا فعل الْمُؤْمِنُونَ،
‘তোমরা দুনিয়ায় ফিরে যাও এবং ঈমানের নূর নিয়ে এসো, যার মাধ্যমে তোমরা মুমিনদের মতো পুলছিরাত পার হয়ে যেতে পার’।[15] তিনি আরো বলেন, পুলছিরাত-পূর্ব অন্ধকার জগতে নূর বণ্টনের সময় মুনাফিকদেরকে বাহ্যিক কিছু আলো দান করা হবে। যেমনভাবে তারা দুনিয়াতে বাহ্যিকভাবে নামমাত্র ঈমান এনেছিল। ফলে পুলছিরাতের কাছে এসে তাদের নূর নিভে যাবে। কিন্তু যারা উপকারী জ্ঞান ও সৎকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে দুনিয়াতে নূর সংগ্রহ করেছিল, তাদের নূর নিভবে না; বরং তারা সেই ঈমান-আমলের আলো দিয়ে পার হয়ে যাবেন।[16]
সুতরাং উল্লেখিত আলোচনা থেকে জানা গেল যে, আক্বীদাগত মুনাফিক্বরা যেহেতু চিরস্থায়ী জাহান্নামী, তাই তারা বড় কাফের-মুশরিকদের সাথে আগেই জাহান্নামে নিপতিত হবে। তবে যারা কর্মগত মুনাফিক, তারা পুলছিরাতে উঠলেও মারাত্মক কবীরা গোনাহগার হিসাবে সেখান থেকে জাহান্নামে পড়ে যাবে।
পুলছিরাতে মুমিন-মুসলিমদের অবস্থা :
ঈমান ও আমলের তারতম্য অনুযায়ী পুলছিরাতে মুমিন-মুসলিমদের অবস্থা তিন রকম হবে। নিমেণ তা বর্ণিত হ’ল-
(১) নিরাপদে অতিক্রমকারী :
যারা তাওহীদপন্থী, পূর্ণ ঈমানদার, সৎকর্মশীল, কবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত, মৃত্যুর আগে খালেছ তওবাকারী- তারা নিরাপদে আগুনের তাপ ও স্পর্শ অনুভব না করেই পুলছিরাত পার হয়ে যাবেন। দুনিয়াতে নেক আমলে যিনি যত অগ্রগামী ছিলেন, পুলছিরাতে তার গতিও হবে সেইরূপ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
ثُمَّ يَسْتَجِيزُ النَّاسُ، فَنَاجٍ مُسَلَّمٌ،
‘মানুষ তার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে। কতক মুসলিম নিরাপদে তার (পুলছিরাতের) উপর দিয়ে অতিক্রম করবে...’।[17]
তিনি আরো বলেন,
يَرِدُ النَّاسُ النَّارَ ثُمَّ يَصْدُرُوْنَ مِنْهَا بِأَعْمَالِهِمْ، فَأَوَّلُهُمْ كَلَمْحِ البَرْقِ، ثُمَّ كَالرِّيحِ، ثُمَّ كَحُضْرِ الفَرَسِ، ثُمَّ كَالرَّاكِبِ فِي رَحْلِهِ، ثُمَّ كَشَدِّ الرَّجُلِ، ثُمَّ كَمَشْيِهِ،
‘আগুনের উপর দিয়ে লোকজন অতিক্রম করবে। তারা তাদের আমল অনুপাতে অতিক্রম করতে থাকবে। তাদের প্রথম দল বিদ্যুৎ চমকানোর মতো দ্রুত বেগে পার হয়ে যাবে। পরবর্তী দলটি বাতাসের বেগে, তারপর দ্রুতগামী ঘোড়ার বেগে, তারপর উষ্ট্রারোহীর বেগে, তারপর মানুষের দৌড়ের গতিতে, তারপর হেঁটে চলার গতিতে অতিক্রম করবে’।[18]
তাছাড়া দুনিয়াতে যেসব মুমিন বান্দা রোগ-শোক, অপবাদ-নিন্দা ও বিপদাপদে কষ্ট পেয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন সেই কষ্টের প্রতিদান স্বরূপ তাদেরকে পুলছিরাতের কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ سَبَقَتْ لَهُمْ مِنَّا الْحُسْنَى أُولَئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ،
‘নিশ্চয়ই যাদের জন্য পূর্ব থেকেই আমাদের নিকট কল্যাণ নির্ধারিত হয়েছে, তারা জাহান্নাম হ’তে দূরে থাকবে’ (আম্বিয়া ২১/১০১)। এই আয়াতের তাফসীরে মুজাহিদ (রহঃ) বলেন,
ورود المؤمنين النار هو الحمى التي تصيب المؤمن في دار الدنيا، وهي حظ المؤمن من النار فلا يردها،
‘মুমিন ব্যক্তি দুনিয়াতে যে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল, তার বিনিময়ে তিনি জাহান্নাম থেকে দূরে থাকবেন। আগুন থেকে বাঁচার জন্য এই জ্বর (রোগ) মুমিনের পরম সৌভাগ্যের বিষয়, ফলে তিনি জাহান্নামে পতিত হবেন না’।[19]
একবার আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে এক জ্বরাক্রান্ত রোগীকে দেখতে গেলেন। তিনি রোগীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
أَبْشِرْ فَإِنَّ اللهَ يَقُولُ: هِيَ نَارِي أُسَلِّطُهَا عَلَى عَبْدِي الْمُؤْمِنِ فِي الدُّنْيَا، لِتَكُوْنَ حَظَّهُ مِنَ النَّارِ، فِي الْآخِرَةِ،
‘সুসংবাদ গ্রহণ করো! কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘এটা (রোগ) আমার আগুন, যা আমি দুনিয়াতে আমার মুমিন বান্দার উপর চাপিয়ে দেই, যাতে এটা আখেরাতের আগুনের পরিপূরক হয়ে যায়’।[20] অন্যত্র তিনি বলেন,
الْحُمَّى حَظُّ كُلِّ مُؤْمِنٍ مِنَ النَّارِ
‘জ্বর প্রত্যেক মুমিনের জন্য জাহান্নামের একটি অংশ’।[21]
ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন,
إذا طُهِّرَ الـمُؤمِنُ من ذُنوبِه في الدُّنيا لَم يَجِد حَرَّ النَّارِ إذا مَرَّ عليها يَومَ القيامةِ؛ لأنَّ وِجدانَ النَّاسِ لَحرِّها عِندَ الـمُرورِ عليها بحَسَبِ ذُنوبِهم، فمَن طُهِّرَ من الذُّنوبِ ونُقِّي منها في الدُّنيا جازَ على الصِّراطِ كالبَرقِ الخاطِفِ والرِّيحِ ولَم يَجِد شَيئًا من حَرِّ النَّارِ ولَم يُحِسَّ بها،
‘দুনিয়াতেই যদি মুমিন বান্দাকে তার পাপ-তাপ থেকে পরিচ্ছন্ন করে দেওয়া হয়, তবে সে ক্বিয়ামতের দিন পুলছিরাত অতিক্রমের সময় জাহান্নামের উত্তাপ অনুভব করবে না। কেননা পুলছিরাতের উপর পাপের পরিমাণ অনুযায়ী মানুষ আগুনের তাপ অনুভব করবে। ফলে দুনিয়াতে যাকে গুনাহ থেকে পাক-পবিত্র করা হবে, সে ক্ষিপ্র বিদ্যুৎ ও বাতাসের গতিতে পুলছিরাত পার হয়ে যাবে। সে আগুনের উত্তাপের কিছুই টের পাবে না এবং এর উষ্ণতাও অনুভব করবে না’।[22]
(২) ক্ষত-বিক্ষত হয়ে অক্রিমকারী :
তাওহীদপন্থী মুসলিমদের মধ্যে যারা পাপাচারে লিপ্ত হয়েছিল, তারা তাদের পাপের পরিমাণ অনুযায়ী পুলছিরাতে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
يُوضَعُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ جَهَنَّمَ، عَلَى حَسَكٍ كَحَسَكِ السَّعْدَانِ، ثُمَّ يَسْتَجِيزُ النَّاسُ،..وَمَخْدُوجٌ بِهِ، ثُمَّ نَاجٍ،
‘পুলছিরাত জাহান্নামের দুই তীরের সাথে যুক্ত থাকবে। তাতে থাকবে সা‘দান বৃক্ষের কাঁটা সদৃশ কাঁটাসমূহ। মানুষকে তার উপর দিয়ে অতিক্রম করতে বলা হবে। তাদের কতক ব্যক্তি কাঁটার অাঁচড় খেয়ে ক্ষত-বিক্ষত হবে, তারপর নাজাত পাবে..’।[23]
এই দলের লোকদের ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বলেন,
الناس من هذا الصنف هم الذين اجترحوا السيئات واكتسبوا الخطايا، فتخطفهم الكلاليب، فتجرح أجسادهم، ثم ينجون بفضل رحمة الله ثم بما قدموه من طاعات في الحياة الدنيا،
‘এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হবে তারাই, যারা পাপ কাজ করেছে এবং বিভিন্ন ধরনের ভুল-ত্রুটি করেছে। পুলছিরাতের আঁকড়া তাদেরকে আক্রমণ করবে, ফলে তাদের শরীর ক্ষত-বিক্ষত হবে। অতঃপর তারা তাদের পার্থিব জীবনের প্রেরিত নেক আমলের কারণে আল্লাহর দয়ায় মুক্তি পেয়ে যাবে’।[24]
ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেন, ‘দুনিয়াতে ঈমান ও নেক আমলই হ’ল ছিরাতে মুস্তাক্বীম বা সরল পথ, যেই পথে চলতে ও অবিচল থাকতে আল্লাহ বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই পথের হেদায়াত লাভের জন্য দো‘আ করতে বলেছেন। সুতরাং দুনিয়াতে যারা প্রকাশ্যে এবং গোপনে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের উপর অটল থাকতে পারবে, তারাই জাহান্নামের উপর নির্মিত পুলছিরাতে দৃঢ় পদে চলতে পারবে। আর যারা পার্থিব জীবনে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের উপর অটল থাকতে পারবে না; বরং প্রবৃত্তিপরায়ণতা ও সংশয়ের ফেৎনায় নিপতিত হবে, তাদের ফেৎনায় পতিত হওয়ার মাত্রা অনুযায়ী পুলছিরাতের কাঁটা ও আংটা তাদেরকে ক্ষত-বিক্ষত করবে। যেমনভাবে হাদীসে এসেছে,
إِنَّهَا مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَانِ غَيْرَ أَنَّهُ لَا يَعْلَمُ مَا قَدْرُ عِظَمِهَا إِلَّا اللهُ، تَخْطَفُ النَّاسَ بِأَعْمَالِهِمْ، فَمِنْهُمُ الْمُؤْمِنُ بَقِيَ بِعَمَلِهِ، وَمِنْهُمُ الْمُجَازَى حَتَّى يُنَجَّى،
‘পুলছিরাতের কাঁটা হবে সা‘দান বৃক্ষের কাঁটার মতোই। তবে সেগুলো কত বিরাট ও প্রকান্ড হবে, তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। কাঁটাগুলো মানুষকে তাদের আমল অনুযায়ী পাকড়াও করবে। তাদের মধ্যে মুমিন ব্যক্তি তার আমলের মাধ্যমে রক্ষা পাবে, আর কেউ শাস্তি ভোগ করে নাজাত পাবে’ (মুসলিম হা/১৮২)।[25]
(৩) জাহান্নামে পতিত :
পুলছিরাত অতিক্রমকারীদের মাঝে বড় দলটি তাদের পাপের কারণে আটকে যাবে এবং জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
يُوضَعُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ جَهَنَّمَ، ثُمَّ يَسْتَجِيزُ النَّاسُ،...وَمُحْتَبَسٌ بِهِ، وَمَنْكُوسٌ فِيهَا،
‘পুলছিরাত জাহান্নামের দুই তীরের সাথে যুক্ত থাকবে। মানুষকে তার উপর দিয়ে অতিক্রম করতে বলা হবে।...কতক ব্যক্তি সেখানে আটকে যাবে এবং মুখ থুবড়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’।[26]
নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ حَمَى مُؤْمِنًا مِنْ مُنَافِقٍ، بَعَثَ اللهُ مَلَكًا يَحْمِي لَحْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ نَارِ جَهَنَّمَ، وَمَنْ رَمَى مُسْلِمًا بِشَيْءٍ يُرِيْدُ شَيْنَهُ بِهِ، حَبَسَهُ اللهُ عَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ حَتَّى يَخْرُجَ مِمَّا قَالَ،
‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে মুনাফিকী থেকে রক্ষা করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার শরীরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষার জন্য একজন ফেরেশতা প্রেরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাকে দোষারোপ করবে, তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের পুলছিরাতের উপর আটকে রাখবেন, যতক্ষণ না সে কথিত অপবাদ থেকে বের হয়ে আসে’।[27]
যেমন জিহবার পাপ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ، وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوْهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ،
‘হে মু‘আয! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধুমাত্র জিহবার উপার্জনের কারণেই অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[28]
এভাবে যারা দুনিয়াতে নানা রকমের কবীরা গুনাহে লিপ্ত ছিল, তারা সেই পাপগুলোর কারণে পিছলে পড়ে যাবে জাহান্নামে। যেমন লোক দেখানো শহীদ, ক্বারী ও দানশীলকে পুলছিরাতের উপর থেকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[29]
অনুরূপভাবে পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপ, দাইয়ূছ, হত্যাকারী, অপবাদ দানকারী, নিয়মিত জামা‘আতে সালাতের প্রথম কাতার পরিত্যাগকারী, যুদ্ধের মাঠ থেকে পলায়নকারী, ছবি অংকনকারী, প্রতিবেশীকে কষ্ট দানকারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানকারী, পর্দাহীনা নারী, গীবতকারী, সম্পদ আত্মসাৎকারী, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণকারী, সূদখোর-ঘুষখোর, হারাম উপার্জনকারী, খেয়ানত কারীসহ প্রভৃতি কবীরা গুনাহে লিপ্ত যারা মৃত্যুর আগে খালেছ তওবা করতে পারেনি- তারা তাদের এ সকল পাপের কারণে পুলছিরাত থেকে ছিটকে পড়ে যাবে। অতঃপর তাদের পাপের পরিমাণ অনুযায়ী তারা জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে।
এজন্য সালাফে ছালেহীন পুলছিরাতকে খুবই ভয় পেতেন। তাদের দুশ্চিন্তার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এই পুলছিরাত। বিশর ইবনে মানছূর বলেন, একবার আতা সুলাইমী (রহঃ)-কে খুবই পেরেশান মনে হচ্ছিল। আমি তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
وَيْحَكَ الْمَوْتُ فِي عُنُقِي، وَالْقَبْرُ بَيْتِي، وَفِي الْقِيَامَةِ مَوْقِفِي، وَعَلَى جِسْرِ جَهَنَّمَ طَرِيقِي، وَرَبِّي لَا أَدْرِي مَاذَا يَصْنَعُ بِي،
‘হায়! মুত্যু আমার কাঁধে উপনীত হয়েছে, কবর হবে আমার গৃহ, ক্বিয়ামতের ময়দানে হবে আমার অবস্থান, জাহান্নামের সেতু হবে আমরা রাস্তা। আমি জানি না আমার রব (সেইদিন) আমার সাথে কিরূপ আচরণ করবেন’।[30]
আবূ মূসা (রহঃ) যখন বাড়ির বাইরে যেতেন, স্বীয় স্ত্রীকে এই উপদেশ দিতেন যে,
شُدِّي رَحْلَك، فَلَيْسَ عَلَى جَسْرِ جَهَنَّمَ مَعْبَرٌ،
‘পরকালের সফরের জন্য তোমার আসবাবপত্র প্রস্ত্তত করে নাও। কেননা জাহান্নামের সেতু পারাপারের জন্য কোন খেয়াঘাটের ব্যবস্থা নেই’।[31]
সর্বপ্রথমে ও সর্বশেষে পুলছিরাত অতিক্রমকারী :
মুহাম্মাদ (ﷺ) সর্বপ্রথম পুলছিরাত অতিক্রম করবেন। আর উম্মত সমূহের মধ্যে উম্মতে মুহাম্মাদী সর্বপ্রথম তা পার হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
فَيُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَانَىْ جَهَنَّمَ، فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يَجُوزُ مِنَ الرُّسُلِ بِأُمَّتِهِ،
‘অতঃপর জাহান্নামের দুই পার্শ্বদেশে পুলছিরাত স্থাপন করা হবে। অতঃপর আমাকে সর্বপ্রথম আমার উম্মতকে সাথে নিয়ে পার হয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে’।[32] অন্যত্র তিনি বলেন,
فَأَكُوْنُ أَنَا وَأُمَّتِيْ أَوَّلَ مَنْ يَمُرُّ،
‘আমি ও আমার উম্মত সর্বপ্রথম (পুলছিরাত) পার হব’।[33]
আর উম্মতে মুহাম্মাদীর মাঝে গরীব মুহাজিরগণ (فقراء المهاجرين) সর্বপ্রথম জাহান্নামের সেতু পার হয়ে যাবেন।[34]
আর সর্বশেষে পুলছিরাত অতিক্রমকারীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘সর্বশেষে যে লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে পুলছিরাতের ওপর চলতে থাকবে, একবার মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে এবং আরেকবার আগুন তাকে জ্বালিয়ে দেবে। অতঃপর যখন (এ অবস্থায়) সে জাহান্নামের সীমানা অতিক্রম করে আসবে, তখন জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে বলবে,
تَبَارَكَ الَّذِي نَجَّانِي مِنْكِ لَقَدْ أَعْطَانِي اللهُ شَيْئًا مَا أَعْطَاهُ أَحَدًا مِنَ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ،
‘বড়ই কল্যাণময় সেই মহান সত্তা! যিনি আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দান করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এমন কিছু দান করেছেন, যা আগের ও পিছনের কোন লোককেই তা প্রদান করেননি’।[35]
অর্থাৎ সর্বশেষে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেয়ে পুলছিরাত পার হওয়ার পরে তার মনে হবে যে, আল্লাহ তাকে এই ভীতিকর পুলছিরাত পার হওয়ার তাওফীক দিয়ে যে অনুগ্রহ করেছেন পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন মানুষের প্রতিই তিনি সেই অনুগ্রহ করেননি। সুবহানাল্লাহ! তাই তো মহান আল্লাহ পুলছিরাত পার হওয়াকে মহা সাফল্য হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,
فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ-
‘অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম হবে। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়’ (আলে ইমরান ৩/১৮৫)।
পুলছিরাতে ঈমানের আলো :
পুলছিরাত হচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন এক ভয়ঙ্কর সেতু। সেখানে আলো ছাড়া পার হওয়া সম্ভব হবে না। দুনিয়াতে যার ঈমান ও আমল যত মযবূত ছিল, পুলছিরাত পারাপারের জন্য তিনি তত বেশী আলোপ্রাপ্ত হবেন। আর যার যত বেশী আলো হবে, তিনি তত দ্রুতগতিতে পুলছিরাত পার হয়ে যাবেন। মুমিনদের প্রথম দল এত বেশী আলো প্রাপ্ত হবেন যে, উজ্জ্বলতায় তাদের চেহারাগুলো পূর্ণিমার চাঁদের মত ঝলমল করতে থাকবে। রাসূল (ﷺ) বলেন,
وَيُعْطَى كُلُّ إِنْسَانٍ مِنْهُمْ مُنَافِقًا، أَوْ مُؤْمِنًا نُوْرًا، ثُمَّ يَتَّبِعُونَهُ ...ثُمَّ يُطْفَأُ نُورُ الْمُنَافِقِيْنَ، ثُمَّ يَنْجُو الْمُؤْمِنُوْنَ، فَتَنْجُو أَوَّلُ زُمْرَةٍ وُجُوْهُهُمْ كَالْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ سَبْعُوْنَ أَلْفًا لَا يُحَاسَبُوْنَ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ كَأَضْوَأِ نَجْمٍ فِي السَّمَاءِ،
‘মুনাফিক কি মুমিন, প্রতিটি মানুষকেই নূর প্রদান করা হবে। তারপর তারা এর অনুসরণ করবে। অতঃপর (পুলছিরাতে) মুনাফিকদের নূর নিভে যাবে। আর মুমিনগণ নাজাত পাবেন। প্রথম দল মুক্তি পাবে। তাদের চেহারা হবে পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারা হবে সত্তর হাযার। তাদের কোন হিসাবই নেয়া হবে না। তারপর আরেক দল আসবে, তাদের মুখমন্ডল হবে আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত প্রদীপ্ত’।[36]
অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন বলবেন, ‘তোমরা মাথা উঠাও। অতঃপর তারা মাথা উঠালে তাদের আমল অনুপাতে নূর প্রদান করা হবে। তাদের কেউ এমনও থাকবে যাদের বড় পাহাড়সম নূর প্রদান করা হবে যার আলোতে তারা চলবে। আবার কাউকে তা অপেক্ষা ছোট নূর প্রদান করা হবে। আবার খেজুর গাছ সমতুল্য নূর কারো ডান হাতে প্রদান করা হবে। আবার কাউকে তা অপেক্ষা ছোট নূর প্রদান করা হবে। অবশেষে একজনকে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলীতে নূর প্রদান করা হবে। যা একবার প্রজ্জ্বলিত হবে আরেকবার নিভে যাবে। যখন আলোকিত হবে তখন সে পা উঠাবে এবং নির্বাপিত হ’লে দাঁড়িয়ে যাবে। সেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাদের সামনে অবস্থান করবেন। অতঃপর জাহান্নামের উপর পুলছিরাত নির্মাণ করা হবে, যা পিচ্ছিল ও তরবারী অপেক্ষা ধারালো। এরপর বলা হবে, তোমরা অতিক্রম করো। তারা নিজেদের নূর অনুযায়ী অতিক্রম করবে। যার বৃদ্ধাঙ্গুলিতে আলো প্রদান করা হবে সে মুখমন্ডল, পা ও হাতের উপর ভর করে অতিক্রম করতে যাবে। এক সময় সে এক পায়ের ভরে ঝুলে যাবে এবং জাহান্নামের আগুনের প্রভাব অনুভব করবে। এভাবে চলতে চলতে সে নাজাত পেয়ে যাবে। নাজাত প্রাপ্তির পর সে বলবে,
الْحَمْدُ لِلَّهِ لَقَدْ أَعْطَانِي اللهُ مَا لَمْ يُعْطِ أَحَدًا أَنْ نَجَّانِيْ مِنْهَا بَعْدَ إِذْ رَأَيْتُهَا،
‘সেই আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাকে এমন আলো দিয়েছেন যা আমার দেখার পর অন্য কাউকে প্রদান করেননি’।[37]
পুলছিরাত এত ভয়ংকর হবে যে, মুমিনরা নূর লাভ করার পরেও আরো নূর প্রাপ্ত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাবে। আল্লাহ বলেন,
نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ،
‘তাদের জ্যোতি তাদের সামনে ও ডাইনে ছুটাছুটি করবে। তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদের ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর উপরে সর্ব শক্তিমান’ (তাহরীম ৬৬/৮)।
আল্লাহ বলেন,
وَمَنْ لَمْ يَجْعَلِ اللهُ لَهُ نُوْرًا فَمَا لَهُ مِنْ نُورٍ
‘বস্ত্ততঃ আল্লাহ যাকে আলো দেন না, তার কোন আলো থাকে না’ (নূর ২৪/৪০)।
মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন,
إِن المؤمن لا يطمئن قلبه ولا تسكن روعته حَتَّى يخلف جسر جهنم وراءه،
‘জাহান্নামের সেতুকে পিছনে না ফেলা পর্যন্ত মুমিন বান্দার হৃদয় প্রশান্ত হবে না এবং তার ভয়ও দূর হবে না’।[38]
পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে আকুল প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের ঈমান ও আমলে বরকত দান করেন। দুনিয়াতে ঈমানের পথে অবিচল রেখে পরকালে পুলছিরাত পার হওয়ার পাথেয় হিসাবে পরিপূর্ণ নূর দান করেন। কেননা সেই দিন যার নূর থাকবে না, জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া ছাড়া তার কোন গত্যন্তর থাকবে না। আমরা যেন নূরপ্রাপ্ত হয়ে নিরাপদে পুলছিরাত পার হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি, আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
[1]. বুখারী হা/৭৪৩৯; মুসলিম হা/১৮৩।
[2]. ইবনু রজব হাম্বলী, আত-তাখবীফু মিনান নার, পৃ. ২২৭।
[3]. ওছায়মীন, শারহু রিয়াযিছ ছালেহীন, ২/৪৮৩।
[4]. ত্বাবারী, জামে‘উল বায়ান (তাফসীরে ত্বাবারী) ১৮/২৩৮; আল-আমীন আশ-শানক্বীতী, তাফসীরে আযওয়াউল বায়ান ৮/৬১।
[5]. তাফসীরে কুরতুবী ১১/১৪১; শাওক্বানী, ফাৎহুল ক্বাদীর ৩/৪০৮।
[6]. মুসলিম হা/২৭৯১।
[7]. মুসলিম হা/৩১৫।
[8]. তাফসীরে কুরতুবী ৯/৩৮৩।
[9]. মুসলিম হা/২৭৯০; মিশকাত হা/৫৫৩২।
[10]. মুসলিম হা/১৯১; আহমাদ হা/১৪৭৬৩।
[11]. ফাৎহুল ক্বাদীর ৫/২০৫।
[12]. ইবনু আবিল ইয আল-হানাফী, শারহুল আক্বীদা আত-ত্বাহাবিইয়াহ, পৃ. ৪১৪।
[13]. আবুস সঊদ আল-ইমাদী, ইরশাদুল আক্বলিস সালীম (তাফসীরে আবিস সা‘ঊদ), ২/২৪৬।
[14]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন, ১/৩৬৪।
[15]. ইবনুল ক্বাইয়িম, তুহফাতুল মাওলূদ, পৃ. ৩০৯।
[16]. ইবনুল ক্বাইয়িম, ইজতিমা‘উল জুয়ূশিল ইসলামিয়াহ, ২/৮০।
[17]. আহমাদ হা/১১০৮১; ইবনে মাজাহ হা/৪২৮০, সনদ সহীহ।
[18]. তিরমিযী হা/৩১৫৯; সহীহাহ হা/৩১১, সনদ সহীহ।
[19]. তাফসীরে কুরতুবী ১১/১৩৮।
[20]. ইবনু মাজাহ হা/৩৪৭০; সিলসিলা সহীহাহ হা/৫৫৭;
[21]. মুসনাদে বায্যার হা/১৮২১; সহীহুত তারগীব হা/৩৪৪৭; সহীহাহ হা/১৮২১; সহীহুল জামে‘ হা/৩১৮৭, সনদ সহীহ।
[22]. ইবনু রজব হাম্বলী, লাত্বায়েফুল মা‘আরেফ, পৃ. ৩২৫।
[23]. আহমাদ হা/১১০৮১; ইবনে মাজাহ হা/৪২৮০, সনদ সহীহ।
[24]. আল-মাওসূ‘আতুল আক্বাদিয়াহ ৫/১৪।
[25]. ইবনু রজব হাম্বলী, আত-তাখবীফু মিনান নার, পৃ. ২৪০।
[26]. আহমাদ হা/১১০৮১; ইবনে মাজাহ হা/৪২৮০, সনদ সহীহ।
[27]. আবূদাঊদ হা/৪৮৮৩; মিশকাত হা/৪৯৮৬, সনদ হাসান।
[28]. তিরমিযী হা/২৬১৬; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৩ সনদ সহীহ।
[29]. মুসলিম হা/১৯০৫; তিরমিযী হা/২৩৮২; নাসাঈ হা/৩১৩৭।
[30]. ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়া ২/১৯৩।
[31]. ইবনু আবিদ্দুনিয়া, ক্বাছরুল আমাল, পৃ. ১০৯।
[32]. বুখারী হা/৮০৬; মিশকাত হা/৫৫৮১।
[33]. ইবনু আবী আছেম, আস-সুন্নাহ ১/২৮৪; যিলালুল জান্নাত হা/৬৩৪; আলবানী সনদটিকে মুসলিমের শর্তে জাইয়িদ বলেছেন।
[34]. মুসলিম হা/৩১৫।
[35]. আহমাদ হা/৩৭১৪; মুসলিম হা/১৮৭; মিশকাত হা/৫৫৮২।
[36]. মুসলিম হা/১৯১; আহমাদ হা/১৪৭৬৩।
[37]. হাকেম হা/৩৪২৪; সহীহুত তারগীব হা/৩৫৯১, ৩৭০৪; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৮৩৫২।
[38]. আর-রিসালাতুল কুশায়রিয়াহ ১/২৫৩।
-আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এম.এ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Last edited: