সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

সালাত পুরুষেরা কি চুল বেধে সালাত আদায় করতে পারবে?

shipa

Inquisitive

Q&A Master
Salafi User
Threads
347
Comments
400
Reactions
1,880
Credits
2,402
প্রশ্ন: হাদীসে এসেছে রাসূল ﷺ চুল বেঁধে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। আমার প্রশ্ন হল এই নিষেধাজ্ঞা কি নারী পুরুষ সবার জন্য প্রযোজ্য নাকি শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য? সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর: সালাতে চুল বেঁধে রাখা নিষিদ্ধ উক্ত বিধান শুধুমাত্র পুরুষের জন্য খাছ,মহিলাদের জন্য নয়।মহিলারা অন্য সময়ের ন্যায় সালাত আদায় করার সময়ও পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করে অর্থাৎ মহিলাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত (এমনকি অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে দু পায়ের পিঠ সহ) ঢাকা আবশ্যক।শুধুমাত্র মুখমণ্ডল ও দু হাতের কব্জি পর্যন্ত খোলা রাখা জায়েজ যদি কোন নন মাহরাম দেখার সম্ভাবনা না থাকে। অন্যথায় এগুলোও ঢাকা জরুরি।কারন জমহুর আলেমের মতে,সতর ঢাকা সালাত শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। সেটি পুরুষের ক্ষেত্রে হোক অথবা নারীর ক্ষেত্রে হোক।যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন নারী এমন অবস্থায় সালাত আদায় করে যে,তার সতরের কোন একটি অংশ যেমন পায়ের গোছা, পায়ের পাতা, মাথা বা মাথার কিয়দাংশ প্রকাশ হয়ে গেছে তাহলে তা সহীহ হবে না কিন্তু যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে কোন নারীর শরীরের কিছু অংশ যেমন- গলা, চুল বা ঘাড় উন্মুক্ত হয়ে যায় যেমন- ‘কেউ নামাযের রুকুতে ছিলেন, এর মধ্যে তীব্র বাতাসে কাপড় সরে গেল এবং তাৎক্ষণিকভাবে সে কাপড় ঠিক করে নেয়’ তাহলে বিশুদ্ধ মতে তার সালাত বাতিল হবেনা।(সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬ ইমাম উসাইমিন শরহে আল-শরহুল মুমতি,২/৭৫ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১০৪৬)
.
তাই মহিলাদের ক্ষেত্রে সালাত আদায়ের সময় তার পর্দা রক্ষার সুবিধার্থে তাদের চুল পিছনে বেণী বা খোঁপাবদ্ধ রাখতে পারে। এটা মেয়েদের পর্দা রক্ষা এবং সালাতে খুশূ-খুযূ বজায় রাখার সহায়ক। তবে তাদের খোঁপা উটের কুঁজোর মত (كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ) করে মাথার উপরে বাঁধা যাবে না। যেমনভাবে প্রাচীন যুগে মিসরীয় নারীরা বাঁধত।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জাহান্নামীদের মধ্যে দু’টি এমন দল হবে যাদেরকে আমি দেখতে পাব না, কিন্তু তাদের একদল লোকের হাতে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে। যা দিয়ে তারা লোকেদেরকে অনৈতিকভাবে মারধর করবে। আর দ্বিতীয় দলটি হবে ঐ সমস্ত মহিলারা, যারা কাপড় পরবে অথচ উলঙ্গের ন্যায় দেখা যাবে এবং তারা স্বদিচ্ছায় পুরুষদের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুলের খোঁপা বুখতী উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ দূর-দূরান্ত হতে পাওয়া যাবে।(সহীহ মুসলিম হা/২১২৮,সহীহ আল জামি‘হা/৩৭৯৯,সহীহ আত তারগীব হা/২০৪৪)
.
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা)‘আলিমগণ বলেছেন,সালাতে মেয়েরা চুল বেণী বা খোপা করে রাখবে। কারণ মেয়েদের চুল সতরের অন্তর্ভুক্ত। যা ঢেকে রাখা ওয়াজিব। মেয়েদের চুল যাতে বাইরে বের হয়ে না যায় সেদিকে যেমন সতর্ক দৃষ্টি রাখবে, তেমনি তাদের চুলের খোপা যেন উটের কুঁজের মত উঁচু হয়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৭/১২৭;ইমাম আলবানী, সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর টেপ নং ৫৩৪)
.
অপরদিকে পুরুষের জন্য মাথার চুল বাঁধা সালাত এবং সালাতের বাহিরে সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ।তবে অধিকাংশ আলেমদের মতামত অনুযায়ী এই নিষেধাজ্ঞা অর্থ হল,
মাখরুহ বা অপছন্দনীয়। যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুফাসসিরকুল শিরোমণি, উম্মাহ’র শ্রেষ্ঠ ‘ইলমী ব্যক্তিত্ব, সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) [মৃত: ৬৮ হি.] বলেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে শরীরের সাতটি হাড়; যথা কপাল, দু’ হাত, দু’ হাঁটু, দু’ পায়ের পাতার অগ্রভাগের সাহায্যে সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর কাপড়, দাড়ি ও চুল একত্রিত করে বেঁধে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।(সহীহ বুখারী হা/৮১২,সহীহ মুসলিম হা/৪৯০,সহীহ আল জামি‘,হা/১৩৬৯) উক্ত হাদীসের শেষাংশে যে বলা হয়েছে وَلاَ نَكْفِتَ الثِّيَابَ وَالشَّعَرَ ‘এবং আমরা যেন সিজদাকালে আমাদের কাপড় ও চুল গুটিয়ে না নেই’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা ৮৮৭;ঐ,
বঙ্গানুবাদ হা/৮২৭ ‘সিজদা ও তার মাহাত্ম্য’ অনুচ্ছেদ;
নায়লুল আওত্বার ৩/২২ পৃঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই নিষেধাজ্ঞা না জানার কারণে অনেক পুরুষ মুছল্লী সালাতের সময়ে তাদের মাথার চুল বেঁধে নিতেন। একদা ইবনু আববাস (রাঃ) জনৈক বদরী সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিছ (রাঃ) এর চুল খুলে দেন (ইবনু মাজাহ হা/৮৬১ সহীহ আবুদাঊদ হা/৬৪৬ নায়লুল আওত্বার ৩/২৩৫;সদন সহীহ)
.
উপরোক্ত দুটি আলোকে ইমাম শাওকানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: আল-ইরাকী বলেছেন: এই বিধান শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য, মহিলাদের জন্য নয়,কেননা তাদের চুলও সতরের অন্তর্ভুক্ত, যা সালাত অবস্থায় ঢেকে রাখা ওয়াজিব। এছাড়াও খোঁপা বা বেণী খোলার মধ্যে তার জন্য বাড়তি কষ্ট ও ঝামেলা রয়েছে। অথচ রাসূল (ﷺ) মেয়েদেরকে ফরয গোসলের মত গুরুত্বপূর্ণ সময়েও খোঁপা বা বেণী না খোলার অনুমতি দিয়েছেন নায়লুল আওত্বার ৩/২৩৬-২৩৭ ‘পুরুষের জন্য চুল বাঁধা অবস্থায় সালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৯১৩০০) আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়্যাহ বলা হয়েছে, আহালুল আলেমগনের সর্বসম্মতভাবে একমত যে, সালাতের সময় চুল বেঁধে রাখা মাকরূহ। পিঠে বেঁধে যা বোঝায় তা হল নারীদের মতো মাথার চারপাশে বেণী জড়িয়ে রাখা বা চুল জড়ো করে মাথার পিছনে বেঁধে দেওয়া। এটা মাকরূহ কিন্তু যদি কেউ এভাবে নামায পড়ে তাহলেও তার নামায সহীহ(আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়্যাহ,খন্ড;২৬ পৃ;১০৯)

শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন, আলেমগণ সর্বসম্মতিক্রমে একমত যে,হাতা বা কাপড় গুটিয়ে, চুল বেঁধে বা পাগড়ির নিচে চুল বেঁধে ইত্যাদি দিয়ে সালাত আদায় করা জায়েয নয়। আলেমদের ঐকমত্য অনুসারে এগুলি সবই জায়েজ নয় এবং নিরুৎসাহিত হওয়ার অর্থে এটি মাকরূহ অর্থাৎ সঠিক নয়।কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি এমন নামায পড়ে তবে সে কিছু ভুল করেছে তবে তার নামায সহীহ।(ইমাম নববী শরহে মুসলিম,২০৯ মির‘আত ৩/২০৭ ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-১৯১৩০০) তিনি আরো বলেছেন, জমহূর বিদ্বানগণ বলেন, ‘পুরুষের জন্য মাথার চুল বাঁধা কেবল ছালাতের সময় নয় বরং সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। ইমাম নববী বলেন, এভাবেই ছাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য বিদ্বানগণ থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং এটাই সঠিক’
(মির‘আত ৩/২০৭ হা/৮৯৪-এর ব্যাখ্যা)।

ইমাম আল-গাজালী (রহ.) বলেন:পুরুষের চুল বেঁধে নামাজ পড়া উচিত নয়। এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য।(ইহইয়া' উলূম আদ-দ্বীন খন্ড,১ পৃ;২৫৬) বিগত শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,এটা প্রকাশ্য বা স্পষ্ট যে, সিজদাকালে চুল খুলে দেওয়ার নির্দেশ শুধুমাত্র পুরুষের জন্য খাছ, মহিলাদের জন্য নয়(সিফাতু সালাতিন নবী পৃঃ ১২৫)। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন।(মহান আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী।

উপস্থাপনায় জুয়েল মাহমুদ সালাফি
 
Top