‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ দুনিয়ার মুহাব্বাত ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নারী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি। অতঃপর আজ যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই তা হচ্ছে। 'দুনিয়ার মুহাব্বাত ও মৃত্যুকে অপছন্দ' করা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মহান আল্লাহ আমাদেরকে যেমন দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন তেমনী দুনিয়া থেকে একদিন উঠিয়ে নিবেন। সুতরাং দুনিয়া আমাদের অস্থায়ী জায়গা। এখানে সল্প সময়ের জন্য আমাদের বিরতি। এই বিরতির মাঝে আমরা যা কিছু করি না কেন তার পরিপূর্ণ জবাবদেহী মহান আল্লাহর সামনে পেশ করতে হবে এবং কর্ম অনুযায়ী ফলাফলও ভোগ করতে হবে, মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

"সমস্ত জীবই মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণকারী এবং নিশ্চয়ই উত্থান দিবসে তোমাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে; অতএব যে কেউ অগ্নি হতে বিমুক্ত হয়েছে, ফলতঃ নিশ্চয়ই সে সফলকাম; আর পার্থিব জীবন প্রথারণার সম্পদ ছাড়া আর কিছুই নয়।” (সূরা আলে ইমরান ১৮৫)

সুতরাং বুঝে শুনে আমাদের দুনিয়ার পথ চলতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ দুনিয়াতে আমাদের জন্য অনেক এমন মোহনীয় বস্তু রেখেছেন যা পাওয়ার জন্য হৃদয় পাগলপারা হয়ে যাবে; এবং মনে হবে এই দুনিয়াই সব, এটাই চিরস্থায়ী জায়গা। চারিদিকে কি হচ্ছে কে মরছে, কাকে মারছে, কেন মারছে কোনই খবর থাকবেনা শুধু নিজে কিভাবে বড় হবে, সম্পদশালী হবে, বাড়ি-গাড়ী, প্রতাপ-প্রতিপত্তি নিয়েই মত্ত থাকবে। কখন যে শত্রু আক্রমণ করে বসবে, একাধারে সবাইকে খতম করবে কিন্তু সেইদিক কোন খেয়াল থাকবেনা। একসময় তার সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। কারণ সে দুনিয়া নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে অন্য কোন কিছু নিয়ে ভাব্বার কোন সময় ছিলনা। বিশেষ করে সে যে এ দুনিয়াতে মাত্র অল্প সময়ের মেহমান! ভুলে গিয়েছিল সে কথাটি, ভুলে গিয়েছিল সে তার প্রতি পালক মহান রাব্বুল আলামীনকে এমনকি মরণকেও ঘৃণা করতে শুরু করেছিল। ঠিক এই ধরণের একটি চিত্র প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অমিয় বানীতে ফুটে উঠেছে।

সাওবান (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খুব শীঘ্রই সমস্ত জাতী (গোমরাহ ও কুফ্ফার) তোমাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হবে যেমন খাবারের বড় পাত্রে সকলে খাওয়ার জন্য একত্রিত হয়। তখন একজন বললেন (ইয়া রাসূলুল্লাহ) আমরা কি সে সময় সংখ্যায় কম হব? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না! বরং সে সময় তোমাদের সংখ্যা হবে অনেক, কিন্তু তোমারা হবে বন্যায় ভেসে যাওয়া খড়-কুটার মত। মহান আল্লাহ শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয়-ডর উঠিয়ে নিবেন, আর তোমাদের অন্তরে দূর্বলতা নিক্ষেপ করবেন। একজন বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল ঐ দূর্বলতাটা কি? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দুনিয়ার মুহাব্বত ও মরণকে অপছন্দ করা। ইমাম আবু দাউদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

আমরা যদি মহান নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরোক্ত হাদীসের দিকে দৃষ্টি দেই তাহলে নিশ্চয় এটা স্পষ্ট যে, দুনিয়ার মহব্বাত ও মৃত্যুকে অপছন্দের কারণেই আমাদের সবকিছু থাকার পরেও কিছুই থাকবেনা। না থাকবে মান ইজ্জত, না প্রতাপ-প্রতিপত্তি, নিরাপত্তা ও প্রকৃত শান্তি ।

সুতরাং একজন মুমিনবান্দা যখন শারিরীক ভাবে সুস্থ থাকে, মানুষিক ভাবে প্রশান্তিতে থাকে, উপার্জনক্ষম হয়, যদিও তার তেমন বেশি কিছু সম্পদ নাও থাকে তথাপিও সে মনে করে সমস্ত পৃথিবী যেন তার পায়ের নিচে চলে এসেছে। যেমনটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিম্নের হাদীস থেকে উপলব্ধি করা যায়।

উম্মে দারদা বর্ণনা করেন আবী দারদা (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে তিনি বলেন; রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির সকাল হলো সুস্থ শরীরে, পরিবার সহ নিরাপত্তার সাথে এবং তার নিকট সে দিনের খাবারও রয়েছে; পক্ষান্তরে তাকে দুনিয়ার সমস্ত নেয়ামত দেওয়া হয়েছে। হাদীসটি বর্ণনা করেন ইবনে মাজাহ। কথা হচ্ছে, যদি কেও মনে করে সে চিরঞ্জীব মৃত্য তার ধারে কাছেও আসবে না ( যদিও তা কখনোও সম্ভব না ) তাহলে সে দুনিয়ার সাগরে এমন ভাবে হাবুডুবু খাবে যে কোন দিনও কুল-কিনারা পাবেনা। কারণ মহান আল্লাহ তার অন্তরকে দুনিয়ার মহব্বতের সাথে জুড়ে দিবেন। আর একটার পর একটা মুছিবতে পতিত হবে, শান্তি পাবেনা, এবং লোভ-লালসা এত বৃদ্ধি পাবে যে তা কখনো শেষ হবেনা, এমনকি তার এত আশা-আকাংখা হবে, যে এর শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেনা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন; রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়ার মহাব্বত পান করেছে, তার সাথে তিনটি বিষয় আঠালো ভাবে লেগে থাকবে। অশান্তি যা কখনো তাকে ছেড়ে যাবেনা, লোভ-লালসা যা কখনো শেষ হবেনা, আশা-আকংখা যা কখনো পূর্ণ হবেনা। ইমাম তাবরানী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

ফলে শুধু দুনিয়া আর দুনিয়া নিয়ে মত্ত থাকবে অন্য কোন ভালো কাজ করার সময় হবেনা এভাবেই একদিন মৃত্যু সামনে এসে হাজির হবে তখন বলবেঃ

যখন তাদের কাউরি মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় ফেরত পাঠান। যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা আমি পূর্বে করিনি; না এটা হবার নয়; এটা তার একটা উক্তি মাত্র; তাদের সামনে বারযখ থাকবে পুনরাত্থান দিবস পর্যন্ত।” সূরা মুমিনুন ৯৯-১০০ ।

শুধু এটি আশায় থাকবে বাস্তবে কোনদিন আর পৃথিবী নামক জায়গায় ফিরে আসবেনা। সুতরাং আসুন! আমরা দুনিয়াকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে পরকাল নিয়ে চিন্তা করি, কেননা পরকাল হচ্ছে চিরস্থায়ী এবং উত্তম জায়গা। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকো, অথচ আখেরাত (জীবন) উত্তম ও চিরস্থায়ী। সূরা আ'লা ১৬-১৭।

আর বেশি বেশি মরণকে স্বরণ করি, কেননা মরণ এমন একটি চিরসত্য যে সেভ আসবেই আর মুহুর্তের মধ্যে সকল আনন্দ আহলাদ ধুলোই মিটিয়ে দিবে। সে জন্যই মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বেশি বেশি মরণকে স্বরণ করার জন্য বলেছেন আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহ আনহু) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শাহওয়াত কর্তনকারী বস্তুকে অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশি বেশি স্বরণ কর। হাদীসটি ইমাম তিরমিযি বর্ণনা করেছেণ।

পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে দু'আ করি তিনি যেন আমাদেরকে মরণ ও পরকালকে স্বরণ করার তাওফিক দান করেন এবং দুনিয়াবী ফিত্না থেকে হেফাজত করেন এবং যতদিন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকব ততদিন যেন লোভ- লালসা ও দুনিয়াবী মোহ থেকে রক্ষা করেন আমীন আল্লাহুম্মা আমীন।
 

Share this page