নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বহু সংখ্যক হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে যেগুলো এ বিষয়ের দলিল বহন করে যে, দু'আর ক্ষেত্রে হাত উত্তোলন করা সুন্নাহ (তবে বিশেষ কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র আছে যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৌখিকভাবে দু'আ করেছেন কিন্তু হাত উত্তোলন করেন নি)। তবে দু'আ শেষে দুই হাতের অবস্থান কিরূপ হবে সেই বিষয়ে কিছু হাদিসে বলা আছে: তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু'আ শেষে তাঁর দু হাত দিয়ে মুখমণ্ডলে হাত বুলাতেন বা মাসাহ করতেন। এ সম্পর্কিত হাদিসগুলো নিয়ে মুহাদ্দিসদের মধ্যে ইখতিলাফ (মতপার্থক্য) আছে। কেউ কেউ বলেছেন: হাদিসগুলো হাসান পর্যায়ের এবং আমলযোগ্য, অপরপক্ষে অন্য আলিমগণ বলেছেন: হাদিসগুলোর সনদ ত্রুটিযুক্ত এবং দ্বয়িফ (দুর্বল) এবং তাদের দৃষ্টিতে, এ হাদিসগুলো আমলযোগ্য নয়। এই অনুচ্ছেদে যারা হাদিসগুলো আমলযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন এবং দু'আ শেষে দু হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসাহ করার পক্ষে মত পোষণ করেছেন, তাদের কওল এবং ফাতাওয়া সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো :
১. ইমাম আবু নু'য়াইম ওয়াহাব ইবন কায়সান বলেন, আমি ইবন উমার এবং ইবন যুবায়েরকে দেখেছি। তারা দুজন দু'আ করতেন এবং দু'আ শেষে তাদের হাতের তালু দিয়ে মুখমণ্ডলে হাত বুলাতেন। [আদাবুল মুফরাদ, ২০৯, হাদিয়াতুল মুসলিমিন গ্রন্থে মাওলানা যুবায়ের আলী যাঈ হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
২. ইমাম মা'মার ইবন রাশিদ (১৫৪ হিজরি) দু'আর সময় বুক বরাবর তার দু হাত উত্তোলন করতেন এবং তারপর মুখমণ্ডলের উপর হাত বুলাতেন। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, ৩/১২৩,, ৫০০৩, সহিহ সনদ]
৩. ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহ দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ করা সম্পর্কিত হাদিসগুলোর উপর আমল করাকে মুস্তাহাব গণ্য করতেন। [মুখতাসার কিয়ামুল লাইল, ইমাম আল মারওয়াযি, পৃষ্ঠা ৩০৪]
৪. ইমাম মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল মারওয়াযি অধ্যায়ের নাম দিয়েছেন- " দু'আ থেকে ফারেগ হয়ে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসাহ করা"। তারপর তিনি উল্লেখ করেছেন, ইমাম হাসান আল বাসরি এই আমলটি করতেন এবং ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহ এই সম্পর্কিত হাদিসগুলোর উপর আমল করাকে পছন্দ করতেন৷ [কিয়ামুল লাইল বই]
৫. ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল এর ছাত্র ইসহাক ইবন মানসুর আল কাওসাজ বলেন, "নিশ্চয়ই দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ করা মুস্তাহাব" [কিতাবুল মাসাইল, পৃষ্ঠা ৮২০]
৬. ইমাম আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ বলেন, আমার পিতা (আহমদ ইবন হাম্বল) দু'আ কুনুত পাঠের সময় হাত উত্তোলন এবং তা দিয়ে মুখমণ্ডল মাসাহ করার বিষয়ে বলেছেন, "তা (হাত) দিয়ে মুখমণ্ডল মাসাহ করাতে কোনো অসুবিধা নেই "। [বাদা'য়িউল ফাওয়াইদ, ইবনুল কায়্যিম, ৪/১১৩]
৭. শাইখ ইবন বায তার মৃত্যুর কয়েক মাস আগে পূর্বের মত থেকে ফিরে আসেন। উনাকে দু'আ শেষে মুখমণ্ডলে হাত দিয়ে মাসাহ করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেন, " এ ব্যাপারে হুকুম হলো - এটি মুস্তাহাব, যেমনটা হাফিয (ইবন হাজার) তার বুলুগ গ্রন্থের যিকর ও দু'আ সম্পর্কিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। আর এটাই হলো বুলুগুল মারাম কিতাবের সর্বশেষ অধ্যায়। এখানে উল্লেখ আছে, এ বিষয়ে বেশ কিছু হাদিস এসেছে যেগুলো সামষ্টিকভাবে প্রমাণ করে যে, এ হাদিসটি হাসান। আল্লাহ তা'আলা সকলকে তাওফিক দান করুন ৷ " [মাজমু' আল ফাতাওয়া ওয়াল মাকালাত, ইবন বায, ২৬/১৪৮]
৮. মাওলানা যুবায়ের আলী যাঈ বলেন, " এটি সম্পূর্ণভাবে সঠিক কোনো ব্যক্তির জন্য দু'আ শেষে মুখমণ্ডল হাত দিয়ে মাসাহ করা। শ্রদ্ধাভাজন তাবেঈ ইমাম আবু নু'য়াইম ওয়াহাব ইবন কায়সান বলেন, আমি ইবন উমার এবং ইবন যুবায়েরকে দেখেছি। তারা দুজন দু'আ করতেন এবং দু'আ শেষে তাদের হাতের তালু দিয়ে মুখমণ্ডলে হাত বুলাতেন। এই আছারটির কতিপয় লোকের যে জারহ বা সমালোচনা আছে তা প্রত্যাখ্যাত কারণ এটি অধিকাংশ মুহাক্কিকের তাসহিহ (সহিহ সাব্যস্তকরণ) এর খিলাফ। ইমাম মা'মার ইবন রাশিদ (১৫৪ হিজরি) দু'আর সময় বুক বরাবর তার দু হাত উত্তোলন করতেন এবং তারপর মুখমণ্ডলের উপর হাত বুলাতেন। ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহ দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ করা সম্পর্কিত হাদিসগুলোর উপর আমল করাকে মুস্তাহাব গণ্য করতেন। [তাহকিকি ইসলাহি অওর ইল্মি মাকালাত, যুবায়ের আলী যাঈ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৬৮]
৯. মাওলানা ইরশাদুল হক আছারী তার মাক্বালাত গ্রন্থে দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ সংক্রান্ত হাদিসগুলোর বিস্তারিত পর্যালোচনা শেষে বলেছেন: যদি কেউ এই আমল করে তাহলে সেটা বিদ'আত হবে না।
১০. শাইখ ইবন উসাইমিন বলেন, "আলিমগণ এই মাস'আলায় ইখতিলাফ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, যে ব্যক্তি হাত উত্তোলন করে দু'আ করবে তার জন্য আদব হলো দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ করা। তারা ১ টি দ্বয়িফ হাদিসের ভিত্তিতে এই আমল করে, কিন্তু ইবন হাজার বলেছেন: এই হাদিসটির অনেকগুলো সনদ আছে যাদের একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে। অতএব, এগুলো হাদিসটিকে হাসান লি গাইরিহি এর স্তরে উন্নীত করে। ইবন তাইমিয়্যাহ দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ করাকে বিদ'আত হিসেবে গণ্য করেছেন এবং তার মতে, হাদিসটি দ্বয়িফ। কিন্তু আমার মতে, যে ব্যক্তি মুখমণ্ডল মাসাহ করবে সে দোষী নয় এবং যে ব্যক্তি মুখমণ্ডল মাসাহ করবে না তাকেও জোর করানোর কিছু নেই। " [নুরুন আলাদ দারব, ৬৩৪৭]
১. ইমাম আবু নু'য়াইম ওয়াহাব ইবন কায়সান বলেন, আমি ইবন উমার এবং ইবন যুবায়েরকে দেখেছি। তারা দুজন দু'আ করতেন এবং দু'আ শেষে তাদের হাতের তালু দিয়ে মুখমণ্ডলে হাত বুলাতেন। [আদাবুল মুফরাদ, ২০৯, হাদিয়াতুল মুসলিমিন গ্রন্থে মাওলানা যুবায়ের আলী যাঈ হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
২. ইমাম মা'মার ইবন রাশিদ (১৫৪ হিজরি) দু'আর সময় বুক বরাবর তার দু হাত উত্তোলন করতেন এবং তারপর মুখমণ্ডলের উপর হাত বুলাতেন। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, ৩/১২৩,, ৫০০৩, সহিহ সনদ]
৩. ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহ দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ করা সম্পর্কিত হাদিসগুলোর উপর আমল করাকে মুস্তাহাব গণ্য করতেন। [মুখতাসার কিয়ামুল লাইল, ইমাম আল মারওয়াযি, পৃষ্ঠা ৩০৪]
৪. ইমাম মুহাম্মাদ ইবন নাসর আল মারওয়াযি অধ্যায়ের নাম দিয়েছেন- " দু'আ থেকে ফারেগ হয়ে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মাসাহ করা"। তারপর তিনি উল্লেখ করেছেন, ইমাম হাসান আল বাসরি এই আমলটি করতেন এবং ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহ এই সম্পর্কিত হাদিসগুলোর উপর আমল করাকে পছন্দ করতেন৷ [কিয়ামুল লাইল বই]
৫. ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল এর ছাত্র ইসহাক ইবন মানসুর আল কাওসাজ বলেন, "নিশ্চয়ই দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ করা মুস্তাহাব" [কিতাবুল মাসাইল, পৃষ্ঠা ৮২০]
৬. ইমাম আব্দুল্লাহ ইবন আহমদ বলেন, আমার পিতা (আহমদ ইবন হাম্বল) দু'আ কুনুত পাঠের সময় হাত উত্তোলন এবং তা দিয়ে মুখমণ্ডল মাসাহ করার বিষয়ে বলেছেন, "তা (হাত) দিয়ে মুখমণ্ডল মাসাহ করাতে কোনো অসুবিধা নেই "। [বাদা'য়িউল ফাওয়াইদ, ইবনুল কায়্যিম, ৪/১১৩]
৭. শাইখ ইবন বায তার মৃত্যুর কয়েক মাস আগে পূর্বের মত থেকে ফিরে আসেন। উনাকে দু'আ শেষে মুখমণ্ডলে হাত দিয়ে মাসাহ করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেন, " এ ব্যাপারে হুকুম হলো - এটি মুস্তাহাব, যেমনটা হাফিয (ইবন হাজার) তার বুলুগ গ্রন্থের যিকর ও দু'আ সম্পর্কিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। আর এটাই হলো বুলুগুল মারাম কিতাবের সর্বশেষ অধ্যায়। এখানে উল্লেখ আছে, এ বিষয়ে বেশ কিছু হাদিস এসেছে যেগুলো সামষ্টিকভাবে প্রমাণ করে যে, এ হাদিসটি হাসান। আল্লাহ তা'আলা সকলকে তাওফিক দান করুন ৷ " [মাজমু' আল ফাতাওয়া ওয়াল মাকালাত, ইবন বায, ২৬/১৪৮]
৮. মাওলানা যুবায়ের আলী যাঈ বলেন, " এটি সম্পূর্ণভাবে সঠিক কোনো ব্যক্তির জন্য দু'আ শেষে মুখমণ্ডল হাত দিয়ে মাসাহ করা। শ্রদ্ধাভাজন তাবেঈ ইমাম আবু নু'য়াইম ওয়াহাব ইবন কায়সান বলেন, আমি ইবন উমার এবং ইবন যুবায়েরকে দেখেছি। তারা দুজন দু'আ করতেন এবং দু'আ শেষে তাদের হাতের তালু দিয়ে মুখমণ্ডলে হাত বুলাতেন। এই আছারটির কতিপয় লোকের যে জারহ বা সমালোচনা আছে তা প্রত্যাখ্যাত কারণ এটি অধিকাংশ মুহাক্কিকের তাসহিহ (সহিহ সাব্যস্তকরণ) এর খিলাফ। ইমাম মা'মার ইবন রাশিদ (১৫৪ হিজরি) দু'আর সময় বুক বরাবর তার দু হাত উত্তোলন করতেন এবং তারপর মুখমণ্ডলের উপর হাত বুলাতেন। ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়াইহ দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ করা সম্পর্কিত হাদিসগুলোর উপর আমল করাকে মুস্তাহাব গণ্য করতেন। [তাহকিকি ইসলাহি অওর ইল্মি মাকালাত, যুবায়ের আলী যাঈ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৬৮]
৯. মাওলানা ইরশাদুল হক আছারী তার মাক্বালাত গ্রন্থে দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ সংক্রান্ত হাদিসগুলোর বিস্তারিত পর্যালোচনা শেষে বলেছেন: যদি কেউ এই আমল করে তাহলে সেটা বিদ'আত হবে না।
১০. শাইখ ইবন উসাইমিন বলেন, "আলিমগণ এই মাস'আলায় ইখতিলাফ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, যে ব্যক্তি হাত উত্তোলন করে দু'আ করবে তার জন্য আদব হলো দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ করা। তারা ১ টি দ্বয়িফ হাদিসের ভিত্তিতে এই আমল করে, কিন্তু ইবন হাজার বলেছেন: এই হাদিসটির অনেকগুলো সনদ আছে যাদের একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে। অতএব, এগুলো হাদিসটিকে হাসান লি গাইরিহি এর স্তরে উন্নীত করে। ইবন তাইমিয়্যাহ দু'আ শেষে মুখমণ্ডল মাসাহ করাকে বিদ'আত হিসেবে গণ্য করেছেন এবং তার মতে, হাদিসটি দ্বয়িফ। কিন্তু আমার মতে, যে ব্যক্তি মুখমণ্ডল মাসাহ করবে সে দোষী নয় এবং যে ব্যক্তি মুখমণ্ডল মাসাহ করবে না তাকেও জোর করানোর কিছু নেই। " [নুরুন আলাদ দারব, ৬৩৪৭]