সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

অন্যান্য দান-সদকার আদবসমূহ

Md Rahul Khan

Well-known member

Threads
13
Comments
47
Reactions
173
Credits
223
দান-সদকার ৩০টি আদব

নিম্নে সাধারণ নফল দান-সদকার ৩০টি আদব উপস্থাপন করা হলো:

১. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান করা। এতে মানুষের প্রশংসা কুড়ানো বা দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ জড়িত থাকা যাবে না। অন্যথায় তা রিয়া হিসেবে গণ্য হবে এবং দানের সওয়াব নষ্ট হয়ে যাবে।

২. পবিত্র উপার্জন থেকে দান করা। কেননা আল্লাহ নিজে পবিত্র। তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছুই গ্রহণ করেন না।

৩. নিয়মিত দান করা যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। কেননা নিয়মিত আমল আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় যদিও তা কম হয়।

৪. সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা-কমবেশি যাই হোক না কেন। অল্প দানকে তুচ্ছ ভাবা উচিত নয়।

৫. প্রশস্ত মন ও উদার চিত্তে সওয়াবের নিয়তে দান করা।

৬. রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় অভাবীদেরকে দান করার সওয়াব দ্বিগুণ: দান ও আত্মীয়তা রক্ষার সওয়াব।

৭. আত্মীয়দের বাইরে দানের ক্ষেত্রে ঐ প্রতিবেশী বেশি হকদার যার ঘরের দরজা অধিক সন্নিকটে।

৮. এরপর বেশি দূরবর্তী ও অনাত্মীয় অভাবীকে অগ্রাধিকার দেওয়া। (যদিও বিশেষ প্রয়োজনে ও জরুরি ক্ষেত্রে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি নয়।)

৯. গোপনে দান করা উত্তম। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এমনভাবে গোপনে দান করতে হবে যে, যেন ডান হাত দান করলে বাম হাত জানতে না পারে। এভাবে গোপনে দানকারীকে মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দান করবেন। তবে কেউ তাকে দান করতে দেখলে উৎসাহিত হবে বা অন্যরাও এগিয়ে আসবে এই নিয়তে প্রকাশ্যে দান করা জায়েজ আছে।

১০. আর্থিক সহায়তা পেলে কোনও অমুসলিম ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হবে বা কোন পাপাচারে লিপ্ত ব্যক্তি পাপাচার থেকে ফিরে আসবে এমন সম্ভাবনা থাকলে তাকে দান করা জায়েজ।

১১. যদি জানা যায়, যাকে দান করা হবে তার হাতে অর্থ গেলে সে তা হারাম ও গুনাহের কাজে ব্যয় করবে তাহলে তাকে দান করা জায়েজ নাই।

১২. বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য পূরণের নিয়তে, মানত হিসেবে অথবা সাধারণভাবে উন্নয়ন কল্পে কবর-মাজার ইত্যাদিতে দান করা জায়েজ নাই। তবে গোরস্তানের প্রাচীর নির্মাণ বা তা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনে দান করা জায়েজ আছে।

১৩. কোন মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ইত্যাদি বিধর্মীদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে অথবা বিধর্মীদের ধর্মীয় কাজে দান করা জায়েজ নয়। কেননা ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম বাতিল ও ভ্রান্ত।

১৪. ঐ সব প্রতিষ্ঠানে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা উচিৎ, যেখানে সালাফে-সালেহিনের আকিদা-মানহাজ এবং তাওহিদ-সুন্নাহ ভিত্তিক দ্বীনী ইলম (জ্ঞান) শিক্ষা দেওয়া হয়।

১৫. যে সব প্রতিষ্ঠানে শিরক-বিদআত শেখান হয় সেগুলোতে দান করা হারাম। কারণ তাতে শিরক-বিদআত চর্চা ও প্রচার-প্রসারে সহায়তা করা হয়।

১৬. কোনও বিদআতি অনুষ্ঠান-যেমন: মিলাদ, চল্লিশা, মৃত্যু বার্ষিকী, কুলখানি, শবে বরাত, শবে মেরাজ, ওরশ মাহফিল, তাজিয়া মিছিল, আশুরার লাঠি খেলা ইত্যাদিতে দান করা জায়েজ নাই।

১৭. বিলাতিদের ওয়াজ মাহফিলে দান করা বা তাতে কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা জায়েজ নয়। কেননা তা বিদআত প্রচার-প্রসারের সহায়তার শামিল।

১৮. হারাম কার্যক্রম ও অপসংস্কৃতি মূলক অনুষ্ঠানে অর্থ দান করা জায়েজ নয়।

১৯. দান করার পর খোটা দেওয়া হারাম। এতে দানের সওয়াব নষ্ট হয়ে যায়।

২০. দান করার পর তা ফিরিয়ে নেওয়া হারাম।

২১. পিতা যদি তার জীবদ্দশায় তার সন্তানদেরকে কোনও অর্থ-সম্পত্তি হেবা (দান) করে তাহলে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকলকে সমপরিমাণ দেওয়া জরুরি। তাদের মধ্যে কমবেশি করা জায়েজ নেই। কোনও পিতা অজ্ঞতা বশতঃ এমনটি করে থাকলে জানার পর তাদের নিকট থেকে তা ফিরেয়ে নেওয়া জায়েজ।

২২. নিজের প্রিয় জিনিস দান করা অধিক সওয়াবের।

২৩. পিতামাতা বা অন্য যেকোনো মৃত মুসলিমদের পক্ষ থেকে দান-সদকা করা জায়েজ। এতে তারা কবরে থেকেও সওয়াব লাভ করে ইনশাআল্লাহ। এ ক্ষেত্রে এমন জিনিস দান করা উত্তম যা দ্বারা মানুষ দীর্ঘদিন উপকৃত হয়। যেমন: জায়গা-জমি ওয়াকফ করা, মসজিদ ও মাদরাসা নির্মাণ, টিউবওয়েলের ব্যবস্থা, দরিদ্র দ্বীনী শিক্ষার্থীদের জন্য বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা, পোশাক, বই-পুস্তক ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। এগুলো সব সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত।

২৪. সারা বছর যে কোনও সময় দান করা যায়। তবে রমজান মাসে অধিক পরিমাণে দান করা সুন্নত। কারণ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে 'প্রবহমান বাতাস'-এর চেয়ে অধিকা পরিমাণে দান করতেন।

২৫. সুস্থ-সবল অবস্থায় যখন সম্পদের প্রতি আকর্ষণ থাকে তখনকার দান আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় একান্ত মুমূর্ষু অবস্থায় জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দানের চেয়ে।

২৬. মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় মুমূর্ষু ব্যক্তির জন্য এক তৃতীয়াংশের অতিরিক্ত দানের ওসিয়ত করা জায়েজ নয়। এ অবস্থায় কেউ যদি তার ধন-সম্পদ সব কিছু অথবা অঢেল পরিমাণ সম্পদ দান করার ওসিয়ত করে যায় তাহলে তার মধ্যে কেবল এক তৃতীয়াংশ কার্যকর হবে। বাকিটা তার ওয়ারিশদের মাঝে যথানিয়মে বণ্টিত হবে।

২৭. সমাজের অভাবী লোকদের খোঁজ নিয়ে তাদের বাড়িতে দানের সামগ্রী গোপনে পৌঁছিয়ে দেওয়া উত্তম। কারণ এ শ্রেণীর মানুষেরা অভাবে কষ্ট পায় কিন্তু চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারে না।

২৮. যাকে দান করা হবে তার প্রতি স্নেহ ও মমতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তার গায়ে হাত বুলিয়ে দেওয়ায় কোন আপত্তি নাই যদি তাকে স্পর্শ করা জায়েজ হয়। সুতরাং কোনও নন মাহরাম (যার সাথে স্থায়ীভাবে বিবাহ নিষিদ্ধ) গরিব-অসহায় নারীর গায়ে স্পর্শ করা জায়েজ নয়।

২৯. অনেকে টাকা-পয়সা দান করার সময় তাতে চুমু খায় ও কপালে লাগায়। এটা কুসংস্কার পূর্ণ কাজ।

৩০. কেউ যদি আপনার অভাব-অনটনের কথা বলে সাহায্য/ভিক্ষা চায় আর তাকে সত্যিই অভাবী মনে হয় তাহলে তাকে যথাসম্ভব দান করার চেষ্টা করা উচিৎ-চাই সাধারণ দান-সদকা হোক অথবা জাকাত হোক। আর যদি জানা যায়, সে অভাবী নয় বা সে ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে তাহলে তাকে ভিক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কেবল তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে তার দেওয়া নিয়ামত থেকে মানব কল্যাণে এবং দ্বীনের খেদমতে অর্থ-সম্পদ খরচ করার তওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।



উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
 
COMMENTS ARE BELOW
Top