সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Joynal Bin Tofajjal

দাজ্জালের অনুসারী বিষয়ে বক্তা আদনানের বাতিল কথাবার্তা

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Threads
344
Comments
479
Solutions
1
Reactions
4,752
Credits
3,262
কেয়ামতের প্রাক্কালে দাজ্জালের আবির্ভাব হলে কারা তার অনুসরণ করবে, তা সহিহ হাদিসে বিবৃত হয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ সহিহ হাদিসের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যেয়ে এরকম গায়েবি বিষয়ে মস্তিকপ্রসূত মত ব্যক্ত করেছে এবং দাজ্জালের এমন অনুসারীদের কথা বলেছে, যা সহিহ হাদিসে আসেনি। এরকম বিপথগামী লোকদের অন্যতম বক্তা আবু ত্বহা আদনান। তার এরকম কয়েকটি বক্তব্যের নমুনা আমরা পেশ করছি।

এক. বক্তা আবু ত্বহা আদনান বলেছে, “এই যে, ফেমিনিস্ট রেভ্যুলেশন ইজ ক্রিয়েটেড বাই দাজ্জাল। দাজ্জালের যারা ফলোয়ার্স আছে, এরা এই ফেমিনিস্ট রেভ্যুলেশন ক্রিয়েট করেছে।” [দেখুন: https://youtu.be/OqgK5gxwR70 (৩৮:০২ মিনিট থেকে ৩৮:১৬ মিনিট)]

কাছাকাছি কথা বক্তা আদনান আরেকটি বক্তব্যেও বলেছে। আবু ত্বহা আদনান সেখানে বলেছে, “সব নারীবাদী, এদেশে যত নারীবাদী আছে, সেকুলারিজম, এই নারীবাদীরা বেশিরভাগই দাজ্জালের এজেন্ট। নিজ হাতে দাজ্জাল ট্রেনিং দিয়ে এদেরকে তৈরি করেছে।” [দেখুন: https://youtu.be/ikRrLAjDTmQ (১:২৮ মিনিট থেকে ২:০৩ মিনিট)]

পর্যালোচনা: মুসনাদে আহমাদের একটি হাদিসে (হা: ৫৩৫৩) এসেছে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জাল ‘মার্রিকানা’ নামক এক ঢালু উপত্যকায় অবতরণ করবে। তখন তার দিকে যারা ধাবিত হবে, তাদের অধিকাংশই হবে নারী। তখন পুরুষরা দাজ্জালের কাছে চলে যাওয়ার ভয়ে নিজের স্ত্রী, মা, কন্যা, বোন ও ফুপুদের রশি দিয়ে বেঁধে রাখবে।” ইমাম আহমাদ শাকির রাহিমাহুল্লাহ তাঁর তাহকিকে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। [দেখুন: শাকির কৃত তাখরিজুল মুসনাদ, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৯০] কিন্তু হাদিসের বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ বিন ইসহাক একজন মুদাল্লিস বর্ণনাকারী হয়ে ‘আন’ শব্দে হাদিস বর্ণনা করায় হাদিসশাস্ত্রের স্বীকৃত মূলনীতি অনুযায়ী ইমাম হাইসামি ও ইমাম আলবানি রাহিমাহুল্লাহ হাদিসটিকে ত্রুটিযুক্ত বলেছেন। [দেখুন: হাইসামি কৃত মাজমাউয যাওয়ায়িদ, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৪৭৩; আলবানি কৃত কিসসাতুল মাসিহিদ দাজ্জাল, পৃষ্ঠা: ৮৮]

মুসনাদু আহমাদের মুহাক্কিক শুয়াইব আল-আরনাউত রাহিমাহুল্লাহও একই কারণে হাদিসটিকে ‘জইফ’ আখ্যা দিয়েছেন। [দেখুন: আরনাউতের তাহকিককৃত মুসনাদু আহমাদ, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ২৫৫; মুআসসাসাতুর রিসালা কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

তবে মুসনাদু আহমাদের অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, نِعْمَتِ الْأَرْضُ الْمَدِينَةُ، إِذَا خَرَجَ الدَّجَّالُ عَلَى كُلِّ نَقْبٍ مِنْ أَنْقَابِهَا مَلَكٌ، لَا يَدْخُلُهَا، فَإِذَا كَانَ كَذَلِكَ، رَجَفَتْ الْمَدِينَةُ بِأَهْلِهَا ثَلَاثَ رَجَفَاتٍ، لَا يَبْقَى مُنَافِقٌ، وَلَا مُنَافِقَةٌ إِلَّا خَرَجَ إِلَيْهِ، وَأَكْثَرُ مَنْ يَخْرُجُ إِلَيْهِ النِّسَاءُ “মদিনা বড়োই উত্তম ভূখণ্ড। যখন দাজ্জালের আবির্ভাব হবে, তখন মদিনার প্রতিটি গিরিপথে একজন করে ফেরেশতা মোতায়েন থাকবে। ফলে সে মদিনায় ঢুকতে পারবে না। যখন এরূপ অবস্থা হবে, তখন মদিনা তার অধিবাসীদের নিয়ে তিনবার প্রকম্পিত হবে। ফলে এমন কোনো মুনাফেক পুরুষ ও নারী থাকবে না, যে তার দিকে ধাবিত হবে না। দাজ্জালের কাছে যারা চলে যাবে তাদের অধিকাংশই হবে নারী।” [মুসনাদু আহমাদ, হা: ১৪১১২; সিলসিলা সহিহা, হা: ৩০৮১; সনদ: সহিহ]

কিন্তু দেখুন, হাদিসের কোথাও নারীবাদীদের কোথা বলা হয়নি। নারীবাদী যেমন একজন নারী হতে পারে, আবার নারীবাদী একজন পুরুষও হতে পারে। নারীদের অধিকাংশই দাজ্জালের অনুসারী হবে – হাদিসটি বর্তমান যুগের নারীবাদীদের ওপর প্রয়োগ করা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। কারণ এখনও দাজ্জালের আবির্ভাব হয়নি। হাদিসের ভাষ্য মোতাবেক নারীরা তখন দাজ্জালের অনুসরণ করবে, যখন তার আগমন ঘটবে, তার আগে নয়। এক্ষেত্রেও আবু ত্বহা আদনানের কথা বাতিল প্রমাণিত হলো।

দুই. আবু ত্বহা আদনান আরেক বক্তব্যে বলেছে, “এই মাস্টারমাইন্ড বিশ্বটাকে শাসন করতে চায়। আর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনও সেটা, সে সেটা করবে। সে এখানে সফল হবে, কেউ তাকে ঠেকাতে পারবে না। তার অনুসরণ করবে ইহুদিরা, তার অনুসরণ করবে নারীরা, এবং এমনকিছু মানুষ যারা একচোখা, একচোখ দিয়ে দেখে, যাদের ভিতরের কোনো ইন্টারনাল লাইটস নাই।” [দেখুন: https://youtu.be/hEBD6kmxO2s (১৩:৪৮ মিনিট থেকে ১৪:০৯ মিনিট)]

পর্যালোচনা: দাজ্জাল এই বিশ্ব শাসন করবে, এ কথা নবিজি বলেননি। দাজ্জাল বিষয়ক কোনো সহিহ হাদিসে এরকম বিষয় পাওয়া যায় না। সুতরাং এ কথা নবিজির নামে মিথ্যাচার হিসেবে বিবেচিত হবে। উপরন্তু হাদিসে এর উল্টোটা পাওয়া যায় যে, দাজ্জাল মক্কা-মদিনায় ঢুকতেই পারবে না। [সহিহুল বুখারি, হা: ১৮৮১; সহিহ মুসলিম, হা: ২৯৪৩] অন্য বর্ণনায় এসেছে, দাজ্জাল চারটি মসজিদে ঢুকতে পারবে না; যথা: মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুন নববি, মাসজিদুত তুর এবং মাসজিদুল আকসা। [মুসনাদু আহমাদ, হা: ২৩৬৮৫; সনদ: সহিহ (তাহকিক: শুয়াইব আরনাউত)]
তবে হ্যাঁ, দাজ্জাল এই বিশ্ব শাসন করবে, এটা ইহুদিদের কনসেপ্ট। ইহুদিদের কনসেপ্ট কুরআন-সুন্নাহর বিনা দলিলে নবিজির নামে চালিয়ে দেওয়া গর্হিত অপরাধ। [এটা যে ইহুদিদের আকিদা তা জানতে দেখুন: দুরুসুশ শাইখ ইসমায়িল আল-মুকাদ্দাম, ৮ নং দারসের ট্রান্সক্রিপ্ট, পৃষ্ঠা: ১০]

এরপর ইন্টারনাল লাইট নেই এমন একচোখা লোকেরা দাজ্জালের অনুসারী হবে, এটা আবু ত্বহা আদনান কোত্থেকে পেয়েছে আল্লাহ ভালো জানেন। দাজ্জালের অনুসারীদের ব্যাপারে আমাদের উলামাদের কেউ এমন হাদিস নিয়ে আসেননি, যেখানে বলা হয়েছে, একচোখা লোকেরা দাজ্জালের অনুসারী হবে। কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল ছাড়া এরকম গায়েবি বিষয়ে কথা বলা কোনোভাবেই বৈধ নয়। [দাজ্জালের অনুসারীদের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা দেখুন: ইমাম আলবানি বিরচিত কিসসাতুল মাসিহিদ দাজ্জাল (সম্পূর্ণ বই), ইমাম হামুদ আত-তুওয়াইজিরি বিরচিত ইতহাফুল জামাআহ বিমা জাআ ফিল ফিতানি ওয়াল মালাহিমি ওয়া আশরাতিস সাআহ, খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ১৪০-১৪৬; শাইখ ইউসুফ আল-ওয়াবিল বিরচিত আশরাতুস সাআহ, পৃষ্ঠা: ৩১১-৩১২; ড. মুহাম্মাদ বিন গায়িস কৃত আহাদিসু আশরাতিস সাআতি ওয়া ফিকহুহা, পৃষ্ঠা: ৫১৯-৫২১; ড. খালিদ বিন নাসির আল-গামিদি কৃত আশরাতুস সাআহ ফি মুসনাদি আহমাদ ওয়া যাওয়ায়িদিস সহিহাইন, পৃষ্ঠা: ৪৮০-৪৮৩]

তিন. আবু ত্বহা আদনান অন্য বক্তব্যে সুদখোর, মদের লাইসেন্সদাতা এবং গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালাকারী ব্যক্তিবর্গকে ‘দাজ্জালের অনুসারী’ বলেছে। [দেখুন: https://youtu.be/j7xQTQG2hMA (১ মিনিট ২০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড)]

পর্যালোচনা: এটাও শরিয়তের দলিল ব্যতিরেকে গায়েবি বিষয়ে মন্তব্যের আওতাভুক্ত। কারণ দাজ্জালের অনুসারীদের ব্যাপারে এমন হাদিস পাওয়া যায় না। [প্রাগুক্ত]

চার. আবু ত্বহা আদনান আরেক বক্তব্যে জানিয়েছে, মহাকাশে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের প্রযুক্তিগত আধিপত্য এবং টেক-টেরোরিজমের মাধ্যমে মানুষের সেলফোন থেকে ডাটা চুরি করা প্রভৃতির পেছনে দাজ্জালের হাত রয়েছে। যেহেতু হাদিসে বলা হয়েছে, অধিকাংশ লোক দাজ্জালের অনুসারী হবে, সেহেতু বক্তা আদনান এটা মনে করেন যে, এসবকিছুর পেছনে দাজ্জাল রয়েছে। [দ্রষ্টব্য: https://youtu.be/FLx7i81qd94 (৪২:০৪ মিনিট থেকে ৪৩:৩৪ মিনিট)]

কাছাকাছি কথা একই বক্তব্যের ভিন্ন জায়গায় বলেছে আবু ত্বহা আদনান। তার মতে বর্তমান ইসরাইলের পেছনে আছে দাজ্জাল। [দেখুন: https://youtu.be/FLx7i81qd94 (৩০:০২ মিনিট থেকে ৩০:১৭ মিনিট)]

পর্যালোচনা: এগুলোও দলিলবিহীন কথা এবং হাদিসের অপব্যাখ্যা। বিনা দলিলে হাদিসের প্রকাশ্য অর্থ থেকে ভিন্ন অর্থে ব্যাখ্যা করা যে না-জায়েজ, তা ইতঃপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও অধিকাংশ মানুষ দাজ্জালের অনুসারী হবে, এমন কথা সহিহ হাদিসে পাওয়া যায় না। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
·
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায়:
আবু ত্বহা আদনান দাজ্জাল বিষয়ে অনেক আলোচনা করলেও দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে ফালতু কথা না বলে দলিলভিত্তিক আলোচনা করেছে, এমনটি আমাদের চোখে পড়েনি। এজন্য জরুরি বিবেচনায় দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায় আমরা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যথা:

১. ইসলামকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে করা। ইমান ও ইলমের মাধ্যমে নিজেকে অস্ত্রসজ্জিত করা। বিশেষ করে আল্লাহর নাম ও গুণাবলি সংক্রান্ত জ্ঞান এবং আকিদার অন্যান্য মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা। কারণ হাদিসে বলা হয়েছে, দাজ্জালের কপালে লিখিত ‘কাফির’ লেখা কেবল মুসলিমরা পড়তে পারবে। [সহিহ মুসলিম, হা: ২৯৩৩ ও ২৯৩৭] আর বিশুদ্ধ আকিদার জ্ঞান যত বেশি হবে, মুমিনের ইমানও ততবেশি মজবুত হবে। আর মুমিনরা নিজেদের ইমানের শক্তি অনুযায়ী দাজ্জালকে চিনতে পারবে। যার ইমান যত বেশি হবে, সে তত ভালো চিনবে।

২. সুরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করা। কারণ হাদিসে এসেছে, যে সুরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। [সহিহ মুসলিম, হা: ৮০৯; কুরআনের ফজিলত অধ্যায় (৭); পরিচ্ছেদ: ১২]

৩. নামাজের শেষ বৈঠকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ (শেষ) তাশাহহুদ সম্পন্ন করবে, তখন সে যেন আল্লাহর নিকট চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে।” [সহিহ মুসলিম, হা: ৫৮৮; মসজিদ ও নামাজের স্থানসমূহ অধ্যায় (৫); পরিচ্ছেদ: ২৫]

সেই চারটি জিনিস থেকে আশ্রয় চাওয়ার দোয়াটি নিম্নরূপ—
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
“উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নাম, ওয়া আউযুবিকা মিন আযাবিল কবর, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জাল, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি জাহান্নামের আজাব থেকে, আশ্রয় চাইছি কবরের আজাব থেকে, শরণ চাইছি মাসিহুদ দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং পানা প্রার্থনা করছি জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে।” [সহিহ বুখারি, হা: ১৩৭৭; সহিহ মুসলিম, হা: ৫৮৮; আবু দাউদ, হা: ১৫৪২; শব্দাবলি আবু দাউদের]

৪. দাজ্জালের আবির্ভাব হলে তার থেকে দূরে থাকা। কারণ হাদিসে বলা হয়েছে, নিজেকে মুমিন ভেবে কতক মানুষ তার কাছে গেলে দাজ্জালের কাছে থাকা সংশয়ের কারণে তার অনুসারী হয়ে যাবে! [আবু দাউদ, হা: ৪৩১৯; সনদ: সহিহ]

আল্লাহ আমাদেরকে মাসিহুদ দাজ্জালের ফিতনা থেকে হেফাজত করুন এবং বড়ো দাজ্জাল আগমনের পূর্বে বিদাতি ও মিথ্যুক দায়িদের মধ্যে যারা ছোটো দাজ্জাল হিসেবে এসেছে এবং আগামীতে আসতে থাকবে তাদের ফিতনা থেকেও হেফাজত করুন। আমিন।

কারণ মনে রাখা দরকার, দাজ্জালের ফিতনা সবচেয়ে বড়ো ফিতনা হলেও নিকটবর্তিতার বিবেচনায় আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল বাদে অন্য ফিতনাকে বেশি ভয় পেয়েছেন। কেননা দাজ্জালের আগমনের আগেই এসব ফিতনার ব্যাপক আগমন ঘটবে। সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, غَيْرُ الدَّجَّالِ أَخْوَفُنِي عَلَيْكُمْ “দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের ব্যাপারে অন্যান্য জিনিসকে আমার আরও বেশি ভয় হয়।” [সহিহ মুসলিম, হা: ২৯৩৭; বিভিন্ন ফিতনা ও কেয়ামতের আলামত অধ্যায় (৫৪); পরিচ্ছেদ: ২০]

ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৬৭৬ হি.) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ومِنهُ أخْوَفُ ما أخافُ عَلى أُمَّتِي الأئِمَّةَ المُضِلُّونَ، مَعْناهُ أنَّ الأشْياءَ الَّتِي أخافُها عَلى أُمَّتِي أحَقُّها بِأنْ تُخافَ الأئِمَّةُ المُضِلُّونَ “এর আওতাভুক্ত হবে এই হাদিস— আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয় করি ভ্রষ্টকারী ইমামদেরকে। অর্থাৎ আমি যেসব বিষয়কে আমার উম্মতের ব্যাপারে ভয় করি, সেসবের মধ্যে ভয় করার সর্বাধিক উপযুক্ত পথভ্রষ্টকারী ইমামরা।” [নববি কৃত আল-মিনহাজ শারহু মুসলিম, খণ্ড: ১৮; পৃষ্ঠা: ৬৪]

ইমাম নববির উল্লিখিত হাদিসটি বিশুদ্ধ। [দেখুন: আলবানি কৃত সহিহুল জামি, হা: ১৫৫১; সিলসিলা সহিহা, হা: ১৫৮২] আর হাদিসে উল্লিখিত পথভ্রষ্টকারী ইমামবর্গ বলতে উদ্দেশ্য— নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী শাসকবর্গ এবং পথভ্রষ্টকারী আলেম-ওলামা। [দেখুন: ইমাম ইবনু উসাইমিন কৃত মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িল, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ৪৭৭] এদের ব্যাপারে আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।


লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।​
 
Last edited:

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
688
Comments
1,210
Solutions
17
Reactions
6,576
Credits
5,358
জাযাকাল্লাহু খাইরান
 
Top