তাওহীদ হল ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাকে অন্যান্য মা‘বূদ থেকে একক গণ্য করা। আর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা বলতে সার্বিক জীবনে ইখলাছের সাথে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত প্রতিষ্ঠা করা এবং গায়রুল্লাহর দাসত্বকে পুরোপুরি বর্জন করা। উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য কর্তব্য।
কেননা তাওহীদ ইসলামের সর্বপ্রথম বিষয় এবং তাওহীদই ইসলামের সর্বশেষ বিষয়। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দুনিয়াতে যত নবী-রাসূল আগমন করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য ছিল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা এবং সে দিকেই মানুষকে আহ্বান করা। আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ তাওহীদ বুঝাকে ফরয করেছেন।
দৃঢ়তার সাথে এর ঘোষণা দিয়েছেন এবং বলিষ্ঠ ভাষায় এর বর্ণনা দিয়েছেন। সাথে সাথে একথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাওহীদ ব্যতীত কোন ইবাদত কবুল হবে না। তাছাড়া তাওহীদই দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্যের পথে অগ্রসর হওয়ার সর্বপ্রথম সোপান। এ তাওহীদ যমীনে প্রতিষ্ঠিত থাকলে কল্যাণ হয়, আর না থাকলে বিশৃঙ্খলা, অনিষ্টতা ও বিপর্যয় দেখা দেয়। এজন্য প্রত্যেক মুসলিমের উপর তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় জানা অপরিহার্য কর্তব্য।
তাওহীদের পরিচয়
তাওহীদ (توحيد) শব্দটি আরবী। এটা (وَحَّدَ يُوَحِّدُ تَوْحِيْدًا) ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি।[১] এর আভিধানিক অর্থ جعل الشيء واحدا ‘কোন জিনিসকে একক হিসাবে নির্ধারণ করা’।[২]
তাওহীদ বলতে বুঝায় আল্লাহর যাবতীয় ছীফাতে কামালকে জানা ও মানা এবং একনিষ্ঠভাবে তারই ইবাদত করা। ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাকে একক গণ্য করা [৩] এবং তিনি ব্যতীত অন্যান্য মা‘বূদকে অস্বীকার করা।[৪]
অতএব তাওহীদ হল আল্লাহ তা‘আলাকে পূর্ণাঙ্গ গুণাবলিতে একক বলে জানা ও মানা এবং ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ করা।[৫]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, তিনিই আল্লাহ একক (ও অদ্বিতীয়)’ (সূরা আল-ইখলাছ : ১)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ ‘এবং তোমাদের মা‘বূদ একমাত্র আল্লাহ; সেই পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৩)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ‘এবং তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন বিষয়ে অংশীদার স্থাপন কর না’ (সূরা আন-নিসা : ৩৬)।
তাওহীদের প্রকারভেদ : তাওহীদকে মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরাম তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। যথা-
(১) তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ :
তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ হল আল্লাহর কর্মে আল্লাহকে একক গণ্য করা। [৬] আর তা হল আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টি, কর্তৃত্ব ও পরিচালনায় একক নির্ধারণ করা। আল্লাহ তা‘আলা আসমান যমীনের সকল সৃষ্টি, সৃষ্টিজীব ও বস্তুর একচ্ছত্র প্রতিপালক, স্রষ্টা মালিক ও পরিচালক। ইহকাল, পরকাল এবং বিচার দিবসের মালিক।
আদেশ, নিষেধ এবং হুকুমের একমাত্র অধিকারী। হেদায়াত ও আরোগ্যদানকারী এবং বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারকারী। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং সকল ক্ষমতার উৎস। তিনি হলেন সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক ও সংরক্ষক। এ বিশ্বাসকেই বলা হয় আল্লাহর প্রভুত্বের ক্ষেত্রে একত্বের ঘোষণা ও স্বীকৃতি প্রদান। আর এটিই তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ।
আল্লাহর কর্মে তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এ বিশ্বাস রাখা। যে ব্যক্তি তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহকে একক ইলাহ আল্লাহর জন্য স্বীকার করে এবং বিশ্বাস করে যে, সৃষ্টি, কর্তৃত্ব ও পরিচালনায় আল্লাহ একক এবং তিনি ব্যতীত কেউ তাঁর অংশীদার ও সমকক্ষ নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক’ (সূরা আল-ফাতিহা : ২)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَاللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ‘আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা’ (সূরা আয-যুমার : ৬২)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীনকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি স্বীয় আরশের উপর সমুন্নত হন, তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এমনভাবে যে, রাত্রি ও দিবস একে অন্যকে অনুসরণ করে চলে তড়িৎ গতিতে; সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি সবই তাঁর হুকুমের অনুগত। জেনে রেখো, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই, আর হুকুমের একমাত্র মালিক তিনিই, সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ হলেন বরকতময়’ (সূরা আল-আরা‘ফ : ৫৪)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ‘তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন’ (সূরা আস-সাজদাহ : ৫)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তাদের কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য আইন প্রণয়ন করে, যে বিষয়ে আল্লাহ অনুমতি দেননি? (ক্বিয়ামতের) ফায়ছালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে ফায়ছালা হয়েই যেত। নিশ্চয় সীমালংঘনকারীদের জন্য কঠোর শাস্তি বিদ্যমান’ (সূরা আশ-শূরা : ২১)।
(২) তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ :
তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ হল এককভাবে আল্লাহর ‘ইবাদত করা, তাঁর কোন শরীক নেই।[৭] আল্লাহ তা‘আলাকেই তাঁর সমগ্র সৃষ্টি জগতের উপর উলূহিয়্যাত এবং ‘উবূদিয়্যাতের অধিকারী হিসাবে জানা এবং স্বীকার করা আর যাবতীয় ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ করা। সাথে সাথে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ‘ইবাদতকে নিরঙ্কুশ করা [৮] এবং আল্লাহকেই ইবাদতের একমাত্র উপযুক্ত মনে করা’।[৯]
যাবতীয় ইবাদত, প্রার্থনা, দু‘আ, প্রত্যাশা, ভয়-ভীতি, আগ্রহ, ভরসা, প্রত্যাবর্তন, মানত, কুরবানী সবই পেশ করার জন্য আল্লাহকে একক গণ্য করা।[১০] অন্য কারো জন্য এগুলো না করা বা কাউকে এগুলোতে শরীক না করা। আর এই আদেশ দেয়ার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে সমস্ত নবী-রাসূলকে প্রেরণ করেছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর নিশ্চয় আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগূতকে বর্জন কর’ (সূরা আন-নাহল : ৩৬)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আমরা আপনার পূর্বে কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি তাঁর প্রতি এ অহী প্রেরণ ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত সত্য কোনো মা‘বূদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ২৫)।
আসলে মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করার মৌলিক উদ্দেশ্য হল, তারা যেন তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব করে এবং ইবাদতকে আল্লাহর জন্য বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠ করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আমি জ্বিন ও মানুষকে এজন্যে সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদত করবে’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তাদেরকে কেবল আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে’ (সূরা আত-তওবা : ৩১)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
তাদেরকে কেবল আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে’ (সূরা আল-বাইয়্যিনাহ : ৫)।
(৩) তাওহীদুল আসমা ওয়াছ ছিফাত :
আল্লাহ তা‘আলা শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ত্ব ও সৌন্দর্যের যাবতীয় গুণাবলীতে এক, একক এবং নিরঙ্কুশভাবে পূর্ণতার অধিকারী। এ ক্ষেত্রে কোনক্রমেই কেউ তাঁর অংশীদার হতে পারে না।
উপরিউক্ত ‘আক্বীদা পোষণ করার নামই হচ্ছে আসমা ওয়াছ ছিফাতের তাওহীদ। আল্লাহ তা‘আলার ‘আযমত এবং জালালাতের সাথে শোভনীয় ও সামঞ্জস্যশীল অনেক ইসম ও ছিফাত (নাম ও গুণাবলী)-এর অর্থ এবং হুকুম-আহকাম কুরআন ও সুন্নাহয় বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে আল্লাহ তাঁর নিজ সত্তার জন্য এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীগণ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁর (আল্লাহর) জন্য যেগুলোকে ইতিবাচক বলে ঘোষণা দিয়েছেন, সেগুলোকে ইতিবাচক হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।
এর কোন একটিকেও تحريف (পরিবর্তন) করা যাবে না, تعطيل (অস্বীকার ও বাতিল) করা যাবে না, تكييف (পদ্ধতি ও ধরন বর্ণনা) করা যাবে না এবং تمثيل (উদাহরণ, উপমা ও দৃষ্টান্ত পেশ) করা যাবে না। সাথে সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ফ আল্লাহর কামালিয়াতের ক্ষেত্রে যেসব দোষ-ক্রটিকে নেতিবাচক হিসাবে ঘোষণা করেছেন সেগুলোকে নেতিবাচক হিসাবেই গ্রহণ করতে হবে’[১১]।
আর আল্লাহ তা‘আলার জন্য এসব নাম ও গুণাবলীর সঠিক অর্থ ও তাৎপর্য স্বীকার করে নেয়া এবং সৃষ্টির মধ্যে এগুলোর প্রভাব ও চাহিদা অনুভব করা’।[১২] তাছাড়া কোন রকম পরিবর্তন, বর্জন ও সাদৃশ্যকরণ ছাড়াই কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী সাব্যস্ত করা ঈমানেরও অন্তর্ভুক্ত।[১৩] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৮০)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’ (সূরা আশ-শূরা : ১১)।
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার অর্থ
দ্বীন অর্থ তাওহীদ।[১৪] আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যবস্থার নাম দ্বীন (সূরা আলে ইমরান : ১৯)। ‘দ্বীন’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকার’।[১৫] আনুগত্য ও ‘ইবাদতের উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাসের নাম দ্বীন। যা তিনি সকল নবী-রাসূল এবং উম্মতের উপর ফরয করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহ (আলাইহিস সালাম)-কে। আর যা আমরা অহী করেছিলাম তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম আমরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম), মূসা (আলাইহিস সালাম) ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে, এই বলে যে, তোমরা এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে মতভেদ কর না’ (সূরা আশ-শূরা : ১৩)।
‘তোমরা এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর’ আয়াতের তাফসীরে আবূ জা‘ফর মুহাম্মাদ আত-ত্বাবারী (২২৪-৩১০ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য যা শরী‘আত নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ফরয করা হয়েছে সে অনুযায়ী আমল কর’।[১৬]
ইমাম কুরতুবী (৬০০-৬৭১ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘দ্বীন হল আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর আনুগত্য এবং রাসূলগণ ও আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করা।[১৭]
ইবনু কাছীর (৭০০-৭৭৪ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘দ্বীন হল সকল নবী-রাসূলগণ যা নিয়ে আগমন করেছেন। আর সেটা হল এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করা, যার কোন শরীক নেই’।[১৮]
আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী (১৩০৭-১৩৭৬ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘তোমরা দ্বীনের সকল মৌলিক নীতিমালা এবং শাখা-প্রশাখা বাস্তবায়ন কর’।[১৯]
অতএব তাওহীদ প্রতিষ্ঠার অর্থ হল সার্বিক জীবনে ইখলাছের সাথে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত প্রতিষ্ঠা করা এবং গায়রুল্লাহর দাসত্বকে পুরোপুরি বর্জন করা।
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায়
তাওহীদ ভিত্তিক জীবনই একমাত্র জীবন। মানুষ ব্যক্তি জীবনে যেমন তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করবে, তেমনিভাবে বৈষয়িক অর্থাৎ ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনকেও তাওহীদ ভিত্তিক গড়ে তুলবে। তবেই তাওহীদ প্রতিষ্ঠাকারী ব্যক্তির জন্য রয়েছে নিরাপত্তা ও শান্তি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘যারা ঈমান এনেছে এবং ঈমানকে জুলুম (শিরক)-এর সাথে মিশ্রিত করেনি, তাদের জন্যই রয়েছে শান্তি ও নিরাপত্তা’ (সূরা আল-আন‘আম : ৮২)। হাদীসে এসেছে, উবাদা বিন ছামিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ফ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দান করল যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই।
তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। মুহাম্মাদ ফ তাঁর বান্দা ও রাসূল। ঈসা আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তিনি তাঁর এমন এক কালিমা, যা তিনি মারিয়াম ন-এর প্রতি প্রেরণ করেছেন এবং তিনি তাঁরই পক্ষ থেকে প্রেরিত রূহ। জান্নাত সত্য জাহান্নাম সত্য। সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত দান করবেন, তার আমল যাই হোক না কেন।[২০]
অতএব যে ব্যক্তি নিজেকে তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত করবে, সে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, শিরকে আকবার ও আছগার (বড় ও ছোট শিরক), আক্বীদা সংক্রান্ত যাবতীয় কথা, কাজ ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যাবতীয় বিদ‘আত ও পাপ পঙ্কিলতা থেকে তাওহীদকে পরিশুদ্ধ, পবিত্র ও নিষ্কুলুষ রাখা।
এটা করতে হবে যাবতীয় কথা, কাজ ও ইচ্ছার মধ্যে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ইখলাছ বা একনিষ্ঠতা প্রদর্শনের মাধ্যমে, মূল তাওহীদ পরিপন্থী বিষয় তথা শিরকে আকবার থেকে মুক্ত থাকার মাধ্যমে এবং পূর্ণাঙ্গ তাওহীদের পরিপন্থী তথা শিরকে আছগার ও যাবতীয় বিদ‘আত থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে।
তাওহীদকে কলুষিত করে তোলে, তার পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করে এবং তার সুফল লাভের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন ধরনের যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাওহীদকে পবিত্র করতে হবে। ঈমান, তাওহীদ এবং ইখলাছ দ্বারা যার হৃদয় ভরে যায়, আল্লাহ তা‘আলার যাবতীয় নির্দেশ মেনে নেয়, গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং গুনাহর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তাওহীদের ব্যাঘাত ঘটায় না, বর্ণিত এসব গুণাবলীর মাধ্যমে তাওহীদকে যে ব্যক্তি আঁকড়ে ধরে সে ব্যক্তিই বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করে স্বীয় মর্যাদাপূর্ণ স্থান বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিশেষ প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি পরিপূর্ণ ভয় থাকা। তাঁর উপর এমনভাবে ভরসা করা, যার ফলে কোন বিষয়েই তার অন্তর মাখলূক্বের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। অন্তর দ্বারা তার নিকট সম্মান ও মর্যাদা কামনা করে না। তার মুখ নিঃসৃত কোন কথা বা তার কোন অবস্থার দ্বারা মাখলূক্বের কাছে কিছুই চায় না বরং তার ভিতর ও বাহির, কথা ও কাজ, ভালবাসা ও ক্রোধ এবং তার সার্বিক অবস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং রাসূলুল্লাহ ফ-এর আনুগত্য করা।
এক্ষেত্রে মানুষ বিভিন্ন মর্যাদা ও স্তরের অধিকারী হয়ে থাকে। ‘আমল অনুযায়ী প্রত্যেকেরই মর্যাদা রয়েছে’। মনের আশা-আকাক্সক্ষা আর বাস্তবতা বর্জিত দাবির নাম তাওহীদের প্রতিষ্ঠা নয়। বরং তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত হয় অন্তরে এমন ঈমান আক্বীদা এবং ইহসানের মূল শিক্ষা বদ্ধমূল করার মাধ্যমে যা সুন্দর চরিত্র, মহৎ ও নেক কাজের দ্বারা সত্যে পরিণত হয়। এভাবে যে ব্যক্তি তাওহীদকে অন্তরে গেঁথে নিল সেই তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করল এবং বিনা হিসাবে জান্নাতের অধিকারী হল। তাওহীদ প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায়গুলো নিম্নরূপ:
১. কালিমা শাহাদত-এর স্বীকৃতি এবং তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য পোষণ করা
কালিমা শাহাদত-এর স্বীকৃতি এবং তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য পোষণ করা ছাড়া কখনোই তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত হবে না। হাদীসে এসেছে, ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু‘আয (রাযিয়াল্লাহু আনহু) -কে ইয়ামানে প্রেরণ করার সময় বলেন,
‘তুমি আহলে কিতাবের এক সম্প্রদায়ের নিকট গমন করছ। অতএব তাদের প্রতি তোমার প্রথম আহ্বান হবে- তারা যেন আল্লাহর একত্বকে মেনে নেয়। তারা তা মেনে নিলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ দিনে রাতে তাদের প্রতি পাঁচ বার সালাত ফরয করে দিয়েছেন’।[২১] অন্য বর্ণনাতে এসেছে, فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوْهُمْ إِلَيْهِ عِبَادَةُ اللهِ ‘অতএব তাদের প্রতি তোমার প্রথম আহ্বান হবে আল্লাহর ইবাদতের’।[২২] অন্য বর্ণনাতে এসেছে,
‘তুমি তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে তারা যেন সাক্ষ্য দিয়ে বলে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’।[২৩]
উপরিউক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, এখানে ইবাদত (عِبَادَةُ اللهِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হল তাওহীদ। আর তাওহীদ দ্বারা উদ্দেশ্য হল শাহাদাতাইনের স্বীকৃতি এবং যখন তারা আল্লাহকে জেনে নিবে অর্থাৎ তাওহীদকে জেনে নিবে। এখানে জানার (فَإِذَا عَرَفُوْا) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো স্বীকৃতি এবং আনুগত্য।[২৪]
আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী (১৩০৭-১৩৭৬ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘তাওহীদ প্রতিষ্ঠা বলতে শাহাদাতাইন অর্থাৎ ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ তথা আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং ‘মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল’ এই দুই কালিমার যাবতীয় রুকন ও শর্তসহ বাস্তবায়ন করাকে বুঝায়।[২৫] ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’-এর শর্তসমূহ নিম্নরূপ :
(ক) العلم আল-ইলম (জ্ঞান) : এমনভাবে কালিমার অর্থ জানা যাতে ‘না’ বাচক ও ‘হ্যাঁ’ বাচকের অজ্ঞতা বিদূরিত হয়। ‘না’ বাচক হল আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্যদের ইবাদতকে অস্বীকার করা এবং ‘হ্যাঁ’ বাচক হল ইবাদতকে আল্লাহর জন্য একক ও একনিষ্ঠ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ‘অতএব জেনে রাখো, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই’ (সূরা মুহাম্মাদ : ১৯)। হাদীসে এসেছে,
ওছমান ইবনু আফ্ফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনে বুঝে এই বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই, সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।[২৬
(খ) اليقين আল-ইয়াক্বীন (দৃঢ় বিশ্বাস) : দৃঢ় বিশ্বাস হল সন্দেহ, সংশয়, দ্বিধা-দ্বন্দের বিপরীত। অর্থাৎ কালিমাতুত তাওহীদ পাঠকারী দৃঢ় বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তা‘আলাই সত্য মা‘বূদ। এতে কোন সন্দেহ, অবিশ্বাস, অনুমান, ধারণা ও অনিশ্চয়তা থাকবে না। কেননা اليقين (দৃঢ় বিশ্বাস) হল জ্ঞানের পূর্ণতা এবং পরিপূর্ণতা।
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا ‘মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান এনেছে তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১৫)।
হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। যে এ বিষয় দু’টির প্রতি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[২৭]
[ইনশাআল্লাহ চলবে]
- আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
এম.ফিল গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[১] মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দুল ওয়াহহাব ইবনু ‘আলী আল-ইয়ামানী, আল-ক্বাওলুল মুফীদ ফী আদিল্লাতিত তাওহীদ (বৈরূত : দারু ইবনি হাযম, ১৪২৭ হি.) পৃ. ৭১।
[২] মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উছায়মীন, মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, তাহক্বীক্ব : ফাহদ ইবনু নাছির ইবনু ইবরাহীম আস-সুলাইমান, ১ম খ- (রিয়াদ : দারুল ওয়াত্বান, দারুছ ছুরায়্যা, ১৪১৩ হি.), পৃ. ১৯।
[৩] ছালিহ ইবনু ফাওযান ইবনু আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান, ই‘আনাতুল মুসতাফীদ বিশারহি কিতাবিত তাওহীদ, ১ম খণ্ড (বৈরূত : মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ১৪২৩ হি.), ১ম খ-, পৃ. ২৪।
[৪] আবুল ফুযাইল নাসিরুদ্দীন আন-নু‘আইমী, আল-জামে‘ঊল মুফীদ লি-দুরুসি তা‘আল্লুমিত তাওহীদ (রিয়াদ : মাকতাবাতু আনওয়ারিত তাওহীদ, ১৪৩২ হি.), পৃ. ৬১।
[৫] ‘আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী, আল ক্বাওলুস সাদীদ ফী মাক্বাসীদিত তাওহীদ (রিয়াদ : দারুত সাবাত, ১৪২৫ হি.) পৃ. ৪২।
[৬] আল-ক্বাওলুল মুফীদ ফী আদিল্লাতিত তাওহীদ, পৃ. ৭৭।
[৭] ইমাম ইবনু আবিল ইয্ আল-হানাফী, শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া, অনুবাদ : শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী, ১ম খণ্ড (রাজশাহী : মাকতাবুস সুন্নাহ, ২০১৭ খ্রি.), পৃ. ৮০।
[৮] আল-ক্বওলুস সাদীদ ফী মাক্বাসীদিত তাওহীদ, পৃ. ৪২।
[৯] আল-ক্বওলুল মুফীদ ফী কিতাবিত তাওহীদ (রিয়াদ : দারুল ‘আসিমা, তা.বি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৯।
[১০] আক্বীদাতুত তাওহীদ, পৃ. ৪২।
[১১] আল-ক্বাওলুস সাদীদ ফী মাক্বাসীদিত তাওহীদ, পৃ. ৪০; নুখবাতু মিনাল ওলামাই, কিতাবু উছূলিল ঈমান ফী যূইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খ- (সঊদী আরব : ওযারাতুশ শুয়ূনিল ইসলামিয়্যা ওয়াল আওক্বাফ ওয়াদ দা‘ওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ১৪২১ হি.), পৃ. ৯৮।
[১২] কিতাবু উছূলিল ঈমান ফী যূইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৮।
[১৩] ড. ছালিহ আল-ফাওযান, শারহুল ‘আক্বীদাহ আল ওয়াসিত্বীয়া, অনুবাদ : আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী (রাজশাহী : ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী, ২০১৫ খ্রি.) পৃ. ৩৩।
[১৪] আল-জামি‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১৬তম খণ্ড, পৃ. ১০।
[১৫] আবুল হুসাইন আহমাদ ইবনু ফারেস ইবনু যাকারিয়া, তাহক্বীক্ব : আব্দুস সালাম মুহাম্মাদ হারূন, মু‘জামু মাক্বাইসিল লুগাহ, ১ম খ- (বৈরূত : দারুল ফিকর, ৪র্থ সংস্করণ, ১৩৯৯ হি.), পৃ. ৩১৯; আলী ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী আল-জুরজানী, তাহক্বীক্ব : ইবরাহীম আবইয়ারী, আত-তা‘রীফাত, ১ম খ- (বৈরূত : দারুল কিতাবিল ‘আরাবী, ১৪০৫ হি.), পৃ. ১৪১।
[১৬] জামি‘ঊল বায়ান ফী তাফসীরিল কুরআন, ২০তম খণ্ড, পৃ. ৪৮১।
[১৭] আল-জামি‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১৬তম খণ্ড, পৃ. ১০।
[১৮] তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৯৪।
[১৯] তায়সীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরুল কালামিল মান্নান, পৃ. ৭৫৪।
[২০] সহীহ বুখারী, হা/৩৪৩৫।
[২১] সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭২।
[২২] সহীহ বুখারী, হা/১৪৫৮।
[২৩] সহীহ বুখারী, হা/১৪৯৬।
[২৪] ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শারহি সহীহিল বুখারী (বৈরূত : দারুল মা‘রেফা, ১৩৭৯ হি.), ১৩তম খণ্ড পৃ. ৩৫৪।
[২৫] আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী, আল-ক্বাওলুস সাদীদ আলা মাক্বাছিদি কিতাবিত তাওহীদ, পৃ. ৮৯।
[২৬] সহীহ মুসলিম, হা/২৬।
[২৭] সহীহ মুসলিম, হা/২৭।
কেননা তাওহীদ ইসলামের সর্বপ্রথম বিষয় এবং তাওহীদই ইসলামের সর্বশেষ বিষয়। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দুনিয়াতে যত নবী-রাসূল আগমন করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্য ছিল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা এবং সে দিকেই মানুষকে আহ্বান করা। আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ তাওহীদ বুঝাকে ফরয করেছেন।
দৃঢ়তার সাথে এর ঘোষণা দিয়েছেন এবং বলিষ্ঠ ভাষায় এর বর্ণনা দিয়েছেন। সাথে সাথে একথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাওহীদ ব্যতীত কোন ইবাদত কবুল হবে না। তাছাড়া তাওহীদই দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্যের পথে অগ্রসর হওয়ার সর্বপ্রথম সোপান। এ তাওহীদ যমীনে প্রতিষ্ঠিত থাকলে কল্যাণ হয়, আর না থাকলে বিশৃঙ্খলা, অনিষ্টতা ও বিপর্যয় দেখা দেয়। এজন্য প্রত্যেক মুসলিমের উপর তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায় জানা অপরিহার্য কর্তব্য।
তাওহীদের পরিচয়
তাওহীদ (توحيد) শব্দটি আরবী। এটা (وَحَّدَ يُوَحِّدُ تَوْحِيْدًا) ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি।[১] এর আভিধানিক অর্থ جعل الشيء واحدا ‘কোন জিনিসকে একক হিসাবে নির্ধারণ করা’।[২]
তাওহীদ বলতে বুঝায় আল্লাহর যাবতীয় ছীফাতে কামালকে জানা ও মানা এবং একনিষ্ঠভাবে তারই ইবাদত করা। ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাকে একক গণ্য করা [৩] এবং তিনি ব্যতীত অন্যান্য মা‘বূদকে অস্বীকার করা।[৪]
অতএব তাওহীদ হল আল্লাহ তা‘আলাকে পূর্ণাঙ্গ গুণাবলিতে একক বলে জানা ও মানা এবং ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ করা।[৫]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, তিনিই আল্লাহ একক (ও অদ্বিতীয়)’ (সূরা আল-ইখলাছ : ১)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ ‘এবং তোমাদের মা‘বূদ একমাত্র আল্লাহ; সেই পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৩)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ‘এবং তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন বিষয়ে অংশীদার স্থাপন কর না’ (সূরা আন-নিসা : ৩৬)।
তাওহীদের প্রকারভেদ : তাওহীদকে মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরাম তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। যথা-
(১) তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ :
তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ হল আল্লাহর কর্মে আল্লাহকে একক গণ্য করা। [৬] আর তা হল আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টি, কর্তৃত্ব ও পরিচালনায় একক নির্ধারণ করা। আল্লাহ তা‘আলা আসমান যমীনের সকল সৃষ্টি, সৃষ্টিজীব ও বস্তুর একচ্ছত্র প্রতিপালক, স্রষ্টা মালিক ও পরিচালক। ইহকাল, পরকাল এবং বিচার দিবসের মালিক।
আদেশ, নিষেধ এবং হুকুমের একমাত্র অধিকারী। হেদায়াত ও আরোগ্যদানকারী এবং বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারকারী। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং সকল ক্ষমতার উৎস। তিনি হলেন সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক ও সংরক্ষক। এ বিশ্বাসকেই বলা হয় আল্লাহর প্রভুত্বের ক্ষেত্রে একত্বের ঘোষণা ও স্বীকৃতি প্রদান। আর এটিই তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ।
আল্লাহর কর্মে তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এ বিশ্বাস রাখা। যে ব্যক্তি তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহকে একক ইলাহ আল্লাহর জন্য স্বীকার করে এবং বিশ্বাস করে যে, সৃষ্টি, কর্তৃত্ব ও পরিচালনায় আল্লাহ একক এবং তিনি ব্যতীত কেউ তাঁর অংশীদার ও সমকক্ষ নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক’ (সূরা আল-ফাতিহা : ২)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَاللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ‘আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা’ (সূরা আয-যুমার : ৬২)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
‘নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সেই আল্লাহ, যিনি আসমান ও যমীনকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি স্বীয় আরশের উপর সমুন্নত হন, তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এমনভাবে যে, রাত্রি ও দিবস একে অন্যকে অনুসরণ করে চলে তড়িৎ গতিতে; সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি সবই তাঁর হুকুমের অনুগত। জেনে রেখো, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই, আর হুকুমের একমাত্র মালিক তিনিই, সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ হলেন বরকতময়’ (সূরা আল-আরা‘ফ : ৫৪)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ‘তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন’ (সূরা আস-সাজদাহ : ৫)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
.أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘তাদের কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য আইন প্রণয়ন করে, যে বিষয়ে আল্লাহ অনুমতি দেননি? (ক্বিয়ামতের) ফায়ছালার ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে ফায়ছালা হয়েই যেত। নিশ্চয় সীমালংঘনকারীদের জন্য কঠোর শাস্তি বিদ্যমান’ (সূরা আশ-শূরা : ২১)।
(২) তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ :
তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ হল এককভাবে আল্লাহর ‘ইবাদত করা, তাঁর কোন শরীক নেই।[৭] আল্লাহ তা‘আলাকেই তাঁর সমগ্র সৃষ্টি জগতের উপর উলূহিয়্যাত এবং ‘উবূদিয়্যাতের অধিকারী হিসাবে জানা এবং স্বীকার করা আর যাবতীয় ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর একত্বের প্রমাণ করা। সাথে সাথে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ‘ইবাদতকে নিরঙ্কুশ করা [৮] এবং আল্লাহকেই ইবাদতের একমাত্র উপযুক্ত মনে করা’।[৯]
যাবতীয় ইবাদত, প্রার্থনা, দু‘আ, প্রত্যাশা, ভয়-ভীতি, আগ্রহ, ভরসা, প্রত্যাবর্তন, মানত, কুরবানী সবই পেশ করার জন্য আল্লাহকে একক গণ্য করা।[১০] অন্য কারো জন্য এগুলো না করা বা কাউকে এগুলোতে শরীক না করা। আর এই আদেশ দেয়ার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে সমস্ত নবী-রাসূলকে প্রেরণ করেছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
‘আর নিশ্চয় আমরা প্রত্যেক জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি এ নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগূতকে বর্জন কর’ (সূরা আন-নাহল : ৩৬)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
‘আমরা আপনার পূর্বে কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি তাঁর প্রতি এ অহী প্রেরণ ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত সত্য কোনো মা‘বূদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ২৫)।
আসলে মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করার মৌলিক উদ্দেশ্য হল, তারা যেন তাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব করে এবং ইবাদতকে আল্লাহর জন্য বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠ করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
‘আমি জ্বিন ও মানুষকে এজন্যে সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই ইবাদত করবে’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ
‘তাদেরকে কেবল আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে’ (সূরা আত-তওবা : ৩১)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
তাদেরকে কেবল আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তারা বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে’ (সূরা আল-বাইয়্যিনাহ : ৫)।
(৩) তাওহীদুল আসমা ওয়াছ ছিফাত :
আল্লাহ তা‘আলা শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ত্ব ও সৌন্দর্যের যাবতীয় গুণাবলীতে এক, একক এবং নিরঙ্কুশভাবে পূর্ণতার অধিকারী। এ ক্ষেত্রে কোনক্রমেই কেউ তাঁর অংশীদার হতে পারে না।
উপরিউক্ত ‘আক্বীদা পোষণ করার নামই হচ্ছে আসমা ওয়াছ ছিফাতের তাওহীদ। আল্লাহ তা‘আলার ‘আযমত এবং জালালাতের সাথে শোভনীয় ও সামঞ্জস্যশীল অনেক ইসম ও ছিফাত (নাম ও গুণাবলী)-এর অর্থ এবং হুকুম-আহকাম কুরআন ও সুন্নাহয় বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে আল্লাহ তাঁর নিজ সত্তার জন্য এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীগণ (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁর (আল্লাহর) জন্য যেগুলোকে ইতিবাচক বলে ঘোষণা দিয়েছেন, সেগুলোকে ইতিবাচক হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।
এর কোন একটিকেও تحريف (পরিবর্তন) করা যাবে না, تعطيل (অস্বীকার ও বাতিল) করা যাবে না, تكييف (পদ্ধতি ও ধরন বর্ণনা) করা যাবে না এবং تمثيل (উদাহরণ, উপমা ও দৃষ্টান্ত পেশ) করা যাবে না। সাথে সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ফ আল্লাহর কামালিয়াতের ক্ষেত্রে যেসব দোষ-ক্রটিকে নেতিবাচক হিসাবে ঘোষণা করেছেন সেগুলোকে নেতিবাচক হিসাবেই গ্রহণ করতে হবে’[১১]।
আর আল্লাহ তা‘আলার জন্য এসব নাম ও গুণাবলীর সঠিক অর্থ ও তাৎপর্য স্বীকার করে নেয়া এবং সৃষ্টির মধ্যে এগুলোর প্রভাব ও চাহিদা অনুভব করা’।[১২] তাছাড়া কোন রকম পরিবর্তন, বর্জন ও সাদৃশ্যকরণ ছাড়াই কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী সাব্যস্ত করা ঈমানেরও অন্তর্ভুক্ত।[১৩] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
‘আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামের মাধ্যমে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৮০)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ ‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা’ (সূরা আশ-শূরা : ১১)।
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার অর্থ
দ্বীন অর্থ তাওহীদ।[১৪] আল্লাহর মনোনীত জীবন ব্যবস্থার নাম দ্বীন (সূরা আলে ইমরান : ১৯)। ‘দ্বীন’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকার’।[১৫] আনুগত্য ও ‘ইবাদতের উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাসের নাম দ্বীন। যা তিনি সকল নবী-রাসূল এবং উম্মতের উপর ফরয করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّى بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَى وَعِيسَى أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ
‘তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহ (আলাইহিস সালাম)-কে। আর যা আমরা অহী করেছিলাম তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম আমরা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম), মূসা (আলাইহিস সালাম) ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কে, এই বলে যে, তোমরা এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে মতভেদ কর না’ (সূরা আশ-শূরা : ১৩)।
‘তোমরা এই দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর’ আয়াতের তাফসীরে আবূ জা‘ফর মুহাম্মাদ আত-ত্বাবারী (২২৪-৩১০ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য যা শরী‘আত নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ফরয করা হয়েছে সে অনুযায়ী আমল কর’।[১৬]
ইমাম কুরতুবী (৬০০-৬৭১ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘দ্বীন হল আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর আনুগত্য এবং রাসূলগণ ও আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করা।[১৭]
ইবনু কাছীর (৭০০-৭৭৪ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘দ্বীন হল সকল নবী-রাসূলগণ যা নিয়ে আগমন করেছেন। আর সেটা হল এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করা, যার কোন শরীক নেই’।[১৮]
আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী (১৩০৭-১৩৭৬ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘তোমরা দ্বীনের সকল মৌলিক নীতিমালা এবং শাখা-প্রশাখা বাস্তবায়ন কর’।[১৯]
অতএব তাওহীদ প্রতিষ্ঠার অর্থ হল সার্বিক জীবনে ইখলাছের সাথে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত প্রতিষ্ঠা করা এবং গায়রুল্লাহর দাসত্বকে পুরোপুরি বর্জন করা।
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার উপায়
তাওহীদ ভিত্তিক জীবনই একমাত্র জীবন। মানুষ ব্যক্তি জীবনে যেমন তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করবে, তেমনিভাবে বৈষয়িক অর্থাৎ ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নৈতিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনকেও তাওহীদ ভিত্তিক গড়ে তুলবে। তবেই তাওহীদ প্রতিষ্ঠাকারী ব্যক্তির জন্য রয়েছে নিরাপত্তা ও শান্তি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ
‘যারা ঈমান এনেছে এবং ঈমানকে জুলুম (শিরক)-এর সাথে মিশ্রিত করেনি, তাদের জন্যই রয়েছে শান্তি ও নিরাপত্তা’ (সূরা আল-আন‘আম : ৮২)। হাদীসে এসেছে, উবাদা বিন ছামিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ফ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দান করল যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই।
তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। মুহাম্মাদ ফ তাঁর বান্দা ও রাসূল। ঈসা আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তিনি তাঁর এমন এক কালিমা, যা তিনি মারিয়াম ন-এর প্রতি প্রেরণ করেছেন এবং তিনি তাঁরই পক্ষ থেকে প্রেরিত রূহ। জান্নাত সত্য জাহান্নাম সত্য। সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত দান করবেন, তার আমল যাই হোক না কেন।[২০]
অতএব যে ব্যক্তি নিজেকে তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত করবে, সে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, শিরকে আকবার ও আছগার (বড় ও ছোট শিরক), আক্বীদা সংক্রান্ত যাবতীয় কথা, কাজ ও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে যাবতীয় বিদ‘আত ও পাপ পঙ্কিলতা থেকে তাওহীদকে পরিশুদ্ধ, পবিত্র ও নিষ্কুলুষ রাখা।
এটা করতে হবে যাবতীয় কথা, কাজ ও ইচ্ছার মধ্যে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ইখলাছ বা একনিষ্ঠতা প্রদর্শনের মাধ্যমে, মূল তাওহীদ পরিপন্থী বিষয় তথা শিরকে আকবার থেকে মুক্ত থাকার মাধ্যমে এবং পূর্ণাঙ্গ তাওহীদের পরিপন্থী তথা শিরকে আছগার ও যাবতীয় বিদ‘আত থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে।
তাওহীদকে কলুষিত করে তোলে, তার পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করে এবং তার সুফল লাভের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন ধরনের যাবতীয় পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাওহীদকে পবিত্র করতে হবে। ঈমান, তাওহীদ এবং ইখলাছ দ্বারা যার হৃদয় ভরে যায়, আল্লাহ তা‘আলার যাবতীয় নির্দেশ মেনে নেয়, গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং গুনাহর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে তাওহীদের ব্যাঘাত ঘটায় না, বর্ণিত এসব গুণাবলীর মাধ্যমে তাওহীদকে যে ব্যক্তি আঁকড়ে ধরে সে ব্যক্তিই বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করে স্বীয় মর্যাদাপূর্ণ স্থান বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রবর্তী লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিশেষ প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি পরিপূর্ণ ভয় থাকা। তাঁর উপর এমনভাবে ভরসা করা, যার ফলে কোন বিষয়েই তার অন্তর মাখলূক্বের প্রতি আকৃষ্ট হয় না। অন্তর দ্বারা তার নিকট সম্মান ও মর্যাদা কামনা করে না। তার মুখ নিঃসৃত কোন কথা বা তার কোন অবস্থার দ্বারা মাখলূক্বের কাছে কিছুই চায় না বরং তার ভিতর ও বাহির, কথা ও কাজ, ভালবাসা ও ক্রোধ এবং তার সার্বিক অবস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন এবং রাসূলুল্লাহ ফ-এর আনুগত্য করা।
এক্ষেত্রে মানুষ বিভিন্ন মর্যাদা ও স্তরের অধিকারী হয়ে থাকে। ‘আমল অনুযায়ী প্রত্যেকেরই মর্যাদা রয়েছে’। মনের আশা-আকাক্সক্ষা আর বাস্তবতা বর্জিত দাবির নাম তাওহীদের প্রতিষ্ঠা নয়। বরং তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত হয় অন্তরে এমন ঈমান আক্বীদা এবং ইহসানের মূল শিক্ষা বদ্ধমূল করার মাধ্যমে যা সুন্দর চরিত্র, মহৎ ও নেক কাজের দ্বারা সত্যে পরিণত হয়। এভাবে যে ব্যক্তি তাওহীদকে অন্তরে গেঁথে নিল সেই তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করল এবং বিনা হিসাবে জান্নাতের অধিকারী হল। তাওহীদ প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায়গুলো নিম্নরূপ:
১. কালিমা শাহাদত-এর স্বীকৃতি এবং তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য পোষণ করা
কালিমা শাহাদত-এর স্বীকৃতি এবং তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য পোষণ করা ছাড়া কখনোই তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত হবে না। হাদীসে এসেছে, ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু‘আয (রাযিয়াল্লাহু আনহু) -কে ইয়ামানে প্রেরণ করার সময় বলেন,
إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوْهُمْ إِلَى أَنْ يُوَحِّدُوا اللهَ تَعَالَى فَإِذَا عَرَفُوْا ذَلِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِىْ يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ
‘তুমি আহলে কিতাবের এক সম্প্রদায়ের নিকট গমন করছ। অতএব তাদের প্রতি তোমার প্রথম আহ্বান হবে- তারা যেন আল্লাহর একত্বকে মেনে নেয়। তারা তা মেনে নিলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ দিনে রাতে তাদের প্রতি পাঁচ বার সালাত ফরয করে দিয়েছেন’।[২১] অন্য বর্ণনাতে এসেছে, فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوْهُمْ إِلَيْهِ عِبَادَةُ اللهِ ‘অতএব তাদের প্রতি তোমার প্রথম আহ্বান হবে আল্লাহর ইবাদতের’।[২২] অন্য বর্ণনাতে এসেছে,
فَادْعُهُمْ إِلَى أَنْ يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ
‘তুমি তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দিবে তারা যেন সাক্ষ্য দিয়ে বলে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’।[২৩]
উপরিউক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনু হাজার আসক্বালানী (৭৭৩-৮৫২ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, এখানে ইবাদত (عِبَادَةُ اللهِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হল তাওহীদ। আর তাওহীদ দ্বারা উদ্দেশ্য হল শাহাদাতাইনের স্বীকৃতি এবং যখন তারা আল্লাহকে জেনে নিবে অর্থাৎ তাওহীদকে জেনে নিবে। এখানে জানার (فَإِذَا عَرَفُوْا) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো স্বীকৃতি এবং আনুগত্য।[২৪]
আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী (১৩০৭-১৩৭৬ হি.) (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘তাওহীদ প্রতিষ্ঠা বলতে শাহাদাতাইন অর্থাৎ ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ তথা আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং ‘মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল’ এই দুই কালিমার যাবতীয় রুকন ও শর্তসহ বাস্তবায়ন করাকে বুঝায়।[২৫] ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’-এর শর্তসমূহ নিম্নরূপ :
(ক) العلم আল-ইলম (জ্ঞান) : এমনভাবে কালিমার অর্থ জানা যাতে ‘না’ বাচক ও ‘হ্যাঁ’ বাচকের অজ্ঞতা বিদূরিত হয়। ‘না’ বাচক হল আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্যদের ইবাদতকে অস্বীকার করা এবং ‘হ্যাঁ’ বাচক হল ইবাদতকে আল্লাহর জন্য একক ও একনিষ্ঠ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ‘অতএব জেনে রাখো, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই’ (সূরা মুহাম্মাদ : ১৯)। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُثْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ
ওছমান ইবনু আফ্ফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জেনে বুঝে এই বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই, সে ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।[২৬
(খ) اليقين আল-ইয়াক্বীন (দৃঢ় বিশ্বাস) : দৃঢ় বিশ্বাস হল সন্দেহ, সংশয়, দ্বিধা-দ্বন্দের বিপরীত। অর্থাৎ কালিমাতুত তাওহীদ পাঠকারী দৃঢ় বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তা‘আলাই সত্য মা‘বূদ। এতে কোন সন্দেহ, অবিশ্বাস, অনুমান, ধারণা ও অনিশ্চয়তা থাকবে না। কেননা اليقين (দৃঢ় বিশ্বাস) হল জ্ঞানের পূর্ণতা এবং পরিপূর্ণতা।
আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেন, إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا ‘মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান এনেছে তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১৫)।
হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّىْ رَسُوْلُ اللهِ لَا يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيْهِمَا إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ
‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। যে এ বিষয় দু’টির প্রতি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[২৭]
[ইনশাআল্লাহ চলবে]
- আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
এম.ফিল গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[১] মুহাম্মাদ ইবনু ‘আব্দুল ওয়াহহাব ইবনু ‘আলী আল-ইয়ামানী, আল-ক্বাওলুল মুফীদ ফী আদিল্লাতিত তাওহীদ (বৈরূত : দারু ইবনি হাযম, ১৪২৭ হি.) পৃ. ৭১।
[২] মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ ইবনু মুহাম্মাদ আল-উছায়মীন, মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, তাহক্বীক্ব : ফাহদ ইবনু নাছির ইবনু ইবরাহীম আস-সুলাইমান, ১ম খ- (রিয়াদ : দারুল ওয়াত্বান, দারুছ ছুরায়্যা, ১৪১৩ হি.), পৃ. ১৯।
[৩] ছালিহ ইবনু ফাওযান ইবনু আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান, ই‘আনাতুল মুসতাফীদ বিশারহি কিতাবিত তাওহীদ, ১ম খণ্ড (বৈরূত : মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ১৪২৩ হি.), ১ম খ-, পৃ. ২৪।
[৪] আবুল ফুযাইল নাসিরুদ্দীন আন-নু‘আইমী, আল-জামে‘ঊল মুফীদ লি-দুরুসি তা‘আল্লুমিত তাওহীদ (রিয়াদ : মাকতাবাতু আনওয়ারিত তাওহীদ, ১৪৩২ হি.), পৃ. ৬১।
[৫] ‘আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী, আল ক্বাওলুস সাদীদ ফী মাক্বাসীদিত তাওহীদ (রিয়াদ : দারুত সাবাত, ১৪২৫ হি.) পৃ. ৪২।
[৬] আল-ক্বাওলুল মুফীদ ফী আদিল্লাতিত তাওহীদ, পৃ. ৭৭।
[৭] ইমাম ইবনু আবিল ইয্ আল-হানাফী, শারহুল আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া, অনুবাদ : শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী, ১ম খণ্ড (রাজশাহী : মাকতাবুস সুন্নাহ, ২০১৭ খ্রি.), পৃ. ৮০।
[৮] আল-ক্বওলুস সাদীদ ফী মাক্বাসীদিত তাওহীদ, পৃ. ৪২।
[৯] আল-ক্বওলুল মুফীদ ফী কিতাবিত তাওহীদ (রিয়াদ : দারুল ‘আসিমা, তা.বি.), ১ম খণ্ড, পৃ. ৯।
[১০] আক্বীদাতুত তাওহীদ, পৃ. ৪২।
[১১] আল-ক্বাওলুস সাদীদ ফী মাক্বাসীদিত তাওহীদ, পৃ. ৪০; নুখবাতু মিনাল ওলামাই, কিতাবু উছূলিল ঈমান ফী যূইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খ- (সঊদী আরব : ওযারাতুশ শুয়ূনিল ইসলামিয়্যা ওয়াল আওক্বাফ ওয়াদ দা‘ওয়াতি ওয়াল ইরশাদ, ১৪২১ হি.), পৃ. ৯৮।
[১২] কিতাবু উছূলিল ঈমান ফী যূইল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৯৮।
[১৩] ড. ছালিহ আল-ফাওযান, শারহুল ‘আক্বীদাহ আল ওয়াসিত্বীয়া, অনুবাদ : আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী (রাজশাহী : ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী, ২০১৫ খ্রি.) পৃ. ৩৩।
[১৪] আল-জামি‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১৬তম খণ্ড, পৃ. ১০।
[১৫] আবুল হুসাইন আহমাদ ইবনু ফারেস ইবনু যাকারিয়া, তাহক্বীক্ব : আব্দুস সালাম মুহাম্মাদ হারূন, মু‘জামু মাক্বাইসিল লুগাহ, ১ম খ- (বৈরূত : দারুল ফিকর, ৪র্থ সংস্করণ, ১৩৯৯ হি.), পৃ. ৩১৯; আলী ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী আল-জুরজানী, তাহক্বীক্ব : ইবরাহীম আবইয়ারী, আত-তা‘রীফাত, ১ম খ- (বৈরূত : দারুল কিতাবিল ‘আরাবী, ১৪০৫ হি.), পৃ. ১৪১।
[১৬] জামি‘ঊল বায়ান ফী তাফসীরিল কুরআন, ২০তম খণ্ড, পৃ. ৪৮১।
[১৭] আল-জামি‘ঊ লি আহকামিল কুরআন, ১৬তম খণ্ড, পৃ. ১০।
[১৮] তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৯৪।
[১৯] তায়সীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরুল কালামিল মান্নান, পৃ. ৭৫৪।
[২০] সহীহ বুখারী, হা/৩৪৩৫।
[২১] সহীহ বুখারী, হা/৭৩৭২।
[২২] সহীহ বুখারী, হা/১৪৫৮।
[২৩] সহীহ বুখারী, হা/১৪৯৬।
[২৪] ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শারহি সহীহিল বুখারী (বৈরূত : দারুল মা‘রেফা, ১৩৭৯ হি.), ১৩তম খণ্ড পৃ. ৩৫৪।
[২৫] আব্দুর রহমান ইবনু নাছির আস-সা‘আদী, আল-ক্বাওলুস সাদীদ আলা মাক্বাছিদি কিতাবিত তাওহীদ, পৃ. ৮৯।
[২৬] সহীহ মুসলিম, হা/২৬।
[২৭] সহীহ মুসলিম, হা/২৭।