সাধারণ অর্থে “তাওহীদ” হচ্ছে: আল্লাহই একমাত্র রব -এ আকীদা পোষণ করে তাঁর জন্য ইবাদাতকে খালিস ও একনিষ্ঠ করা আর তাঁর সকল নামসমূহ ও সিফাতকে সাব্যস্ত করা। এ আলোকে তাওহীদ তিন প্রকার:
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ, তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ, তাওহীদুল আসমা ওয়াস্-সিফাত। এসব প্রকারের প্রত্যেকটিরই একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে যা আলোচনা করা প্রয়োজন, যাতে করে এ প্রকারগুলোর মধ্যে পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলাকে তাঁর কাজের ক্ষেত্রে একক বলে মেনে নেওয়া। যেমন, এ বিশ্বাস করা যে তিনিই সকল সৃষ্টিজগতের একমাত্র স্রষ্টা।
“আল্লাহ সকল কিছুর স্রষ্টা।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬২]
আর এ বিশ্বাস করা যে, তিনি সকল প্রাণী, সকল মানুষের ও অন্য সবকিছুর রিযিকদাতা।
“পৃথিবীতে এমন কোনো প্রাণী নেই যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপরে নেই।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৬]
আর এ বিশ্বাস করাও যে, তিনি সকল রাজত্বের মালিক, তিনি সমগ্র জাহানের পরিচালক। তিনি শাসনক্ষমতা প্রদান করেন, ক্ষমতাচ্যুত করেন, তিনি মান ইজ্জত দান করেন আবার অপমানও করেন। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। তিনি দিবস রজনীর পরিক্রমন ঘটান। তিনি জীবিত করেন, তিনি মৃত্যু দান করেন।
“বলুন, হে আল্লাহ, সার্বভৌম শক্তির মালিক! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব প্রদান করেন এবং যার নিকট হতে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা পরাক্রমশালী করেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনার হাতেই, নিশ্চয় আপনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আপনিই রাত্রিকে দিবসে পরিণত করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে পরিণত করেন। আপনি মৃত হতে জীবন্তের উদ্ভব ঘটান আবার জীবন্ত হতে মৃতের আবির্ভাব ঘটান। আর আপনি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান করেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২৬-২৭]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা রাজত্ব এবং শক্তির ক্ষেত্রে তাঁর কোনো শরীক অথবা সহযোগী থাকাকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেমনিভাবে তিনি সৃষ্টিকার্যে ও রিজিকপ্রদানের ক্ষেত্রেও তার কোনো শরীক নেই বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“এ হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে দেখাও যে, তিনি ছাড়া আর যারা রয়েছে তারা কি সৃষ্টি করেছে।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ১১]
তিনি আরো বলেন,
“কে এই সত্ত্বা যে তোমাদেরকে রিযিক প্রদান করছেন, যদি তিনি রিযিক প্রদান বন্ধ করে দেন?” [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ২১]
অন্যত্র তিনি সমগ্র সৃষ্টিজগতের ওপর তাঁর একক রুবুবিয়্যাতের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ২]
তিনি আরো বলেন,
“তোমাদের রব আল্লাহ, যিনি আকাশমণ্ডলী ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের ওপর উঠেছেন। তিনি দিবসকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাতে এদের একে অন্যকে দ্রুত গতিতে অনুসরণ করে, আর সূর্য-চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি তাঁরই আজ্ঞাধীন করে তিনি সৃষ্টি করেছেন। জেনে রাখো, সৃজন ও আদেশ তাঁরই। মহিমময় সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]
আল্লাহ সৃষ্টির সকলকে এমন স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা তাঁর রুবুবিয়্যাতের স্বীকৃতি প্রদান করে। এমনকি যে সকল মুশরিক ইবাদাতের ক্ষেত্রে তাঁর শরীক করত তারাও স্বীকার করত যে, তিনি একমাত্র রব। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“বল, কে সপ্ত আকাশ ও মহা আরশের রব? তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? তুমি জিজ্ঞাসা কর, তিনি কে যার হাতে সকল কিছুর কর্তৃত্ব, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার ওপর কোনো আশ্রয়দাতা নেই, যদি তোমরা জেনে থাকো? তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও তোমরা কেমন করে মোহগ্রস্ত হচ্ছো?” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৮৬-৮৯]
এ হচ্ছে সে তাওহীদ যার বিপরীত প্রান্তে বনী আদমের পরিচিত কোনো দলই এখনো পর্যন্ত যায় নি। বরং এ তাওহীদের প্রতি স্বীকৃতি দানের স্বভাবসূলভ তাড়না দিয়ে মানব হৃদয়কে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই জগতের অন্য কিছুর প্রতি স্বীকৃতি দানের চেয়ে তাওহীদকে স্বীকৃতি দানের তাড়না মানব হৃদয়ে স্বভাবতই অনেক বেশি অনুভূত হয়; যেমনটি আল্লাহর বাণীতে রাসূলগণের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে,
“তাদের রাসূলগণ বলেছিল যে, আল্লাহর ব্যাপারে কি কোনো সন্দেহ আছে যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা?” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১০]
আর যারা আল্লাহকে একমাত্র রব হিসেবে অস্বীকার করার মাধ্যমে তাকে না জানার ভান করেছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ফির‘আউন। অথচ প্রকৃত কথা হচ্ছে এই যে, সেও ভেতরে ভেতরে আল্লাহকে রব হিসেবে বিশ্বাস করত। যেমন, মূসা আলাইহিস সালাম তাকে বলেছিলেন,
“তিনি বলেছিলেন, তুমি তো অবশ্যই জানো এসব কিছু আসমানসমূহ ও যমীনের রব-ই নাযিল করেছেন।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০২]
আল্লাহ তার সম্পর্কে এবং তার জাতি সম্পর্কে বলেছেন,
“তারা অস্বীকার করেছে অথচ তাদের মন তার প্রতি বিশ্বাস রেখেছিল। এটা তারা করেছে অবিচার ও অহংকারবশত।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]
অনুরূপভাবে কমিউনিস্টদের মধ্য থেকে যারা আজ রবকে অস্বীকার করে তারা অহংকারবশতই প্রকাশ্যে তাঁকে অস্বীকার করে থাকে। তারা প্রকৃতপক্ষে গোপনে এ কথার স্বীকৃতি দেয় যে, যে কোনো অস্তিত্বশীল বস্তুর অবশ্যই একজন অস্তিত্বদানকারী রয়েছে এবং যে কোনো সৃষ্ট বস্তুরই একজন স্রষ্টা অবশ্যই রয়েছে। আর যে কোনো ক্রিয়ার একজন ক্রিয়াশীল রয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তারা কি কোনো কিছু ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে? নাকি তারাই স্রষ্টা? তারাই কি আসমানসমূহ ও যমীনকে সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ়বিশ্বাস স্থাপন করে না।” [সূরা আস-তূর, আয়াত: ৩৫-৩৬]
সমগ্র বিশ্বজগতের উপর-নিচ প্রতিটি অংশ নিয়ে চিন্তা করুন, আপনি দেখতে পাবেন একজন স্রষ্টা, একজন মালিকের অস্তিত্ব। সুতরাং বিবেক ও ফিতরাতের ক্ষেত্রে বিশ্বের স্রষ্টাকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করা মূলত জ্ঞানকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করারই নামান্তর। এতদুভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।[1]
আজ কমিউনিস্টরা রবের অস্তিত্ব অস্বীকার করার ব্যাপারে যে সুর উচ্চকিত করছে এটি তারা করছে শুধুই অহংকারবশত এবং বিবেক ও সঠিক চিন্তার ফলাফল এড়িয়ে গিয়ে। যারা এ অবস্থার মধ্যে রয়েছে তারা মূলত তাদের বিবেককে অকার্যকর করে দিয়েছে এবং বিবেকের প্রতি উপহাস করার দিকে মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে। কবি বলেন,
কীভাবে ইলাহকে অমান্য করা যায়? এবং অস্বীকারকারী কিভাবে তাকে অস্বীকার করতে পারে? অথচ প্রতিটি বস্তুতেই রয়েছে তাঁর নিদর্শন যা এ প্রমাণ বহন করছে যে তিনি একক।
[1] কেননা বিশুদ্ধ সায়েন্স বা জ্ঞান স্রষ্টার অস্তিত্বকে সাব্যস্ত করে।
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ, তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ, তাওহীদুল আসমা ওয়াস্-সিফাত। এসব প্রকারের প্রত্যেকটিরই একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে যা আলোচনা করা প্রয়োজন, যাতে করে এ প্রকারগুলোর মধ্যে পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়ে উঠে।
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ
তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলাকে তাঁর কাজের ক্ষেত্রে একক বলে মেনে নেওয়া। যেমন, এ বিশ্বাস করা যে তিনিই সকল সৃষ্টিজগতের একমাত্র স্রষ্টা।
﴿ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖ﴾
“আল্লাহ সকল কিছুর স্রষ্টা।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬২]
আর এ বিশ্বাস করা যে, তিনি সকল প্রাণী, সকল মানুষের ও অন্য সবকিছুর রিযিকদাতা।
﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا ﴾ [هود: ٦]
“পৃথিবীতে এমন কোনো প্রাণী নেই যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপরে নেই।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৬]
আর এ বিশ্বাস করাও যে, তিনি সকল রাজত্বের মালিক, তিনি সমগ্র জাহানের পরিচালক। তিনি শাসনক্ষমতা প্রদান করেন, ক্ষমতাচ্যুত করেন, তিনি মান ইজ্জত দান করেন আবার অপমানও করেন। তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। তিনি দিবস রজনীর পরিক্রমন ঘটান। তিনি জীবিত করেন, তিনি মৃত্যু দান করেন।
﴿قُلِ ٱللَّهُمَّ مَٰلِكَ ٱلۡمُلۡكِ تُؤۡتِي ٱلۡمُلۡكَ مَن تَشَآءُ وَتَنزِعُ ٱلۡمُلۡكَ مِمَّن تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَآءُۖ بِيَدِكَ ٱلۡخَيۡرُۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ٢٦ تُولِجُ ٱلَّيۡلَ فِي ٱلنَّهَارِ وَتُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِي ٱلَّيۡلِۖ وَتُخۡرِجُ ٱلۡحَيَّ مِنَ ٱلۡمَيِّتِ وَتُخۡرِجُ ٱلۡمَيِّتَ مِنَ ٱلۡحَيِّۖ وَتَرۡزُقُ مَن تَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٢٧﴾ [ال عمران: ٢٦، ٢٧]
“বলুন, হে আল্লাহ, সার্বভৌম শক্তির মালিক! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব প্রদান করেন এবং যার নিকট হতে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা পরাক্রমশালী করেন এবং যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনার হাতেই, নিশ্চয় আপনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আপনিই রাত্রিকে দিবসে পরিণত করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে পরিণত করেন। আপনি মৃত হতে জীবন্তের উদ্ভব ঘটান আবার জীবন্ত হতে মৃতের আবির্ভাব ঘটান। আর আপনি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবনোপকরণ দান করেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২৬-২৭]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা রাজত্ব এবং শক্তির ক্ষেত্রে তাঁর কোনো শরীক অথবা সহযোগী থাকাকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেমনিভাবে তিনি সৃষ্টিকার্যে ও রিজিকপ্রদানের ক্ষেত্রেও তার কোনো শরীক নেই বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿هَٰذَا خَلۡقُ ٱللَّهِ فَأَرُونِي مَاذَا خَلَقَ ٱلَّذِينَ مِن دُونِهِۦۚ ﴾ [لقمان: ١١]
“এ হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে দেখাও যে, তিনি ছাড়া আর যারা রয়েছে তারা কি সৃষ্টি করেছে।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ১১]
তিনি আরো বলেন,
﴿أَمَّنۡ هَٰذَا ٱلَّذِي يَرۡزُقُكُمۡ إِنۡ أَمۡسَكَ رِزۡقَهُ﴾ [الملك: ٢١]
“কে এই সত্ত্বা যে তোমাদেরকে রিযিক প্রদান করছেন, যদি তিনি রিযিক প্রদান বন্ধ করে দেন?” [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ২১]
অন্যত্র তিনি সমগ্র সৃষ্টিজগতের ওপর তাঁর একক রুবুবিয়্যাতের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢ ﴾ [الفاتحة: ٢]
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টিকুলের রব।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ২]
তিনি আরো বলেন,
﴿إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤ ﴾ [الاعراف]
“তোমাদের রব আল্লাহ, যিনি আকাশমণ্ডলী ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের ওপর উঠেছেন। তিনি দিবসকে রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাতে এদের একে অন্যকে দ্রুত গতিতে অনুসরণ করে, আর সূর্য-চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি তাঁরই আজ্ঞাধীন করে তিনি সৃষ্টি করেছেন। জেনে রাখো, সৃজন ও আদেশ তাঁরই। মহিমময় সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]
আল্লাহ সৃষ্টির সকলকে এমন স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা তাঁর রুবুবিয়্যাতের স্বীকৃতি প্রদান করে। এমনকি যে সকল মুশরিক ইবাদাতের ক্ষেত্রে তাঁর শরীক করত তারাও স্বীকার করত যে, তিনি একমাত্র রব। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ ٱلسَّبۡعِ وَرَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ ٨٦ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٨٧ قُلۡ مَنۢ بِيَدِهِۦ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيۡءٖ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيۡهِ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ٨٨ سَيَقُولُونَ لِلَّهِۚ قُلۡ فَأَنَّىٰ تُسۡحَرُونَ ٨٩ ﴾ [المؤمنون: ٨٦، ٨٩]
“বল, কে সপ্ত আকাশ ও মহা আরশের রব? তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? তুমি জিজ্ঞাসা কর, তিনি কে যার হাতে সকল কিছুর কর্তৃত্ব, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার ওপর কোনো আশ্রয়দাতা নেই, যদি তোমরা জেনে থাকো? তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও তোমরা কেমন করে মোহগ্রস্ত হচ্ছো?” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ৮৬-৮৯]
এ হচ্ছে সে তাওহীদ যার বিপরীত প্রান্তে বনী আদমের পরিচিত কোনো দলই এখনো পর্যন্ত যায় নি। বরং এ তাওহীদের প্রতি স্বীকৃতি দানের স্বভাবসূলভ তাড়না দিয়ে মানব হৃদয়কে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই জগতের অন্য কিছুর প্রতি স্বীকৃতি দানের চেয়ে তাওহীদকে স্বীকৃতি দানের তাড়না মানব হৃদয়ে স্বভাবতই অনেক বেশি অনুভূত হয়; যেমনটি আল্লাহর বাণীতে রাসূলগণের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে,
﴿۞قَالَتۡ رُسُلُهُمۡ أَفِي ٱللَّهِ شَكّٞ فَاطِرِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ﴾ [ابراهيم: ١٠]
“তাদের রাসূলগণ বলেছিল যে, আল্লাহর ব্যাপারে কি কোনো সন্দেহ আছে যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা?” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১০]
আর যারা আল্লাহকে একমাত্র রব হিসেবে অস্বীকার করার মাধ্যমে তাকে না জানার ভান করেছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ফির‘আউন। অথচ প্রকৃত কথা হচ্ছে এই যে, সেও ভেতরে ভেতরে আল্লাহকে রব হিসেবে বিশ্বাস করত। যেমন, মূসা আলাইহিস সালাম তাকে বলেছিলেন,
﴿قَالَ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ﴾ [الاسراء: ١٠٢]
“তিনি বলেছিলেন, তুমি তো অবশ্যই জানো এসব কিছু আসমানসমূহ ও যমীনের রব-ই নাযিল করেছেন।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১০২]
আল্লাহ তার সম্পর্কে এবং তার জাতি সম্পর্কে বলেছেন,
﴿وَجَحَدُواْ بِهَا وَٱسۡتَيۡقَنَتۡهَآ أَنفُسُهُمۡ ظُلۡمٗا وَعُلُوّٗاۚ﴾ [النمل: ١٤]
“তারা অস্বীকার করেছে অথচ তাদের মন তার প্রতি বিশ্বাস রেখেছিল। এটা তারা করেছে অবিচার ও অহংকারবশত।” [সূরা আন-নামল, আয়াত: ১৪]
অনুরূপভাবে কমিউনিস্টদের মধ্য থেকে যারা আজ রবকে অস্বীকার করে তারা অহংকারবশতই প্রকাশ্যে তাঁকে অস্বীকার করে থাকে। তারা প্রকৃতপক্ষে গোপনে এ কথার স্বীকৃতি দেয় যে, যে কোনো অস্তিত্বশীল বস্তুর অবশ্যই একজন অস্তিত্বদানকারী রয়েছে এবং যে কোনো সৃষ্ট বস্তুরই একজন স্রষ্টা অবশ্যই রয়েছে। আর যে কোনো ক্রিয়ার একজন ক্রিয়াশীল রয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَمۡ خُلِقُواْ مِنۡ غَيۡرِ شَيۡءٍ أَمۡ هُمُ ٱلۡخَٰلِقُونَ ٣٥ أَمۡ خَلَقُواْ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۚ بَل لَّا يُوقِنُونَ ٣٦ ﴾ [الطور: ٣٤، ٣٥]
“তারা কি কোনো কিছু ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে? নাকি তারাই স্রষ্টা? তারাই কি আসমানসমূহ ও যমীনকে সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ়বিশ্বাস স্থাপন করে না।” [সূরা আস-তূর, আয়াত: ৩৫-৩৬]
সমগ্র বিশ্বজগতের উপর-নিচ প্রতিটি অংশ নিয়ে চিন্তা করুন, আপনি দেখতে পাবেন একজন স্রষ্টা, একজন মালিকের অস্তিত্ব। সুতরাং বিবেক ও ফিতরাতের ক্ষেত্রে বিশ্বের স্রষ্টাকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করা মূলত জ্ঞানকে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করারই নামান্তর। এতদুভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।[1]
আজ কমিউনিস্টরা রবের অস্তিত্ব অস্বীকার করার ব্যাপারে যে সুর উচ্চকিত করছে এটি তারা করছে শুধুই অহংকারবশত এবং বিবেক ও সঠিক চিন্তার ফলাফল এড়িয়ে গিয়ে। যারা এ অবস্থার মধ্যে রয়েছে তারা মূলত তাদের বিবেককে অকার্যকর করে দিয়েছে এবং বিবেকের প্রতি উপহাস করার দিকে মানুষকে আহ্বান জানিয়েছে। কবি বলেন,
কীভাবে ইলাহকে অমান্য করা যায়? এবং অস্বীকারকারী কিভাবে তাকে অস্বীকার করতে পারে? অথচ প্রতিটি বস্তুতেই রয়েছে তাঁর নিদর্শন যা এ প্রমাণ বহন করছে যে তিনি একক।
তাওহীদ পরিচিতি
ড. সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ড. সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] কেননা বিশুদ্ধ সায়েন্স বা জ্ঞান স্রষ্টার অস্তিত্বকে সাব্যস্ত করে।