পুরুষের ঠোঁটের নিচে এবং থুতনির উপরের অংশে গজানো চুল কাটা যাবে কিনা এটি নিয়ে আহালুল আলেমগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। একদল আলেম বলেন; ঠোটের নীচে যে দাড়ির মত লোম গজায়, সেগুলো দাড়ির অন্তর্ভুক্ত নয়। অপরদিকে আরেক দল আলেম বলেন, এগুলো দাড়ির অন্তর্ভূক্ত। যারা এটাকে দাড়ি মনে করে তারা একে দাড়ি কাটার মতই গুনাহ মনে করে। যেমন: ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন- এটি কাটা যাবেনা এটি কাটা হারাম। (হাশিয়াতুল আদাইউ; ২/৪৪৬)। ইমাম শাফিঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন- এটি কাটা মাখরুহ। (ইহইয়া উলুমিদ্দিন; ১/১৪৪, নাইলুল; আওতার; ১/১৩৮-১৩৯, ফায়জুল কদীর; ১/২৫৬)। হানাফী মাজহাবের আলেমগণ বলেছেন, এটি কাটা বিদআত ও মাকরূহ। (ফাতাওয়ে আলমগীরী; ৫/৩৫৮, ফাতাওয়ে শামী; ৬/৪০৭, কিতাবুল নাওয়াযিল; ১৫/ ৫৭২, ফাতাওয়ে মাহমুদিয়া; ৬/৩৮৫, দাঁড়ি আওর আম্বিয়াকে সুন্নাতে; ৫৩ , ফাতাওয়ে এহইয়া উলুম; ১/৩৪১)
পক্ষান্তরে যারা দাড়ির অন্তর্ভুক্ত মনে করে না তারা এগুলো কাটাকে নিষিদ্ধ মনে করেন না; আবার কাটাও উত্তম মনে করেন না। আরবি ভাষা অনুযায়ী বুঝা যায়, এটা দাড়ির অন্তর্ভুক্ত নয়। (লিসানুল আরব; ৫/২৪১, কমুসুল মুহীত; ১৭১৪)। কারণ দাড়িকে আরবিতে لحية বলা হয়। আর আরবি অভিধানগুলোতে দু গাল ও থুতনিতে গজানো পশমকে দাড়ি বলা হয়েছে। দাঁড়ির সংজ্ঞায় ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন; মুখমন্ডল গণ্ডদেশ অর্থাৎ ঊর্ধ্বগালে এবং থুতনিতে গজানো কেশকে দাঁড়ি বলা হয়। (ফাৎহুল বারী,১১তম খণ্ড পৃষ্ঠা: ৫৪২)। হাদীসে উক্ত দাড়ি কাটার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যা কাটা হারাম। হাদীসে এসেছে- আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন; ‘তোমরা গোঁফ অধিক ছোট করবে এবং দাড়ি ছেড়ে দিবে।(মুসনাদে আহমাদ হা/৭১৩২; সহীহুল জামে হা/৪৩৯২)। অন্য একটি হাদীসে এসেছে, ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে গোঁফ খাটো করতে এবং দাড়ি লম্বা করতে আদেশ করেছেন। (সহীহ মুসলিম হা/২৫৯; তিরমিযী হা/২৪৬৪; আবু দাউদ হা/৪১৯৯)। ইমাম ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন- পুরো দাড়ি মুন্ডন করা অঙ্গহানি, যা নাজায়েয হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, গোঁফ ছোট করা ও দাড়ি লম্বা করা ফরয হওয়ার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে। (ইবনু হাযম, মারাতিবুল ইজমা; ১/১৫৭ মারদাভী, আল-ফুরূ; ১/১৫১)
পক্ষান্তরে ঠোঁটের নিচে ও থুতনির উপরের অংশে গজানো পশমকে আরবিতে العنفقة বলা হয়। হাদীসে এ ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা আসে নি। কিন্তু একটি হাদীসে এসেছে, বৃদ্ধাবস্থাতেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঠোঁটের নিম্নভাগে উক্ত লোম ছিল। যার কিছু অংশ সাদা ছিল। আবু জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখেছি আর তাঁর নীচ ঠোঁটের নিন্মভাগে দাড়িতে সামান্য সাদা চুল দেখেছি। (সহীহ বুখারী হা/৩৫৪৫; সহীহ মুসলিম হা/২৩৪২)। ইমাম আবু বক্কার জাসসাস (রাহি) উল্লেখ করেছেন যে, ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণিত; মক্কা থেকে এক ব্যক্তি আসল। সে ওমর বিন আব্দুল আজিজ (রাহি)-এর কাছে (কোন বিষয়ে) সাক্ষ্য দিল। অথচ সে ঠোঁটের নিচের পশম উপড়াত, এবং দাঁড়ি ও মোচের আশপাশ ছাটত। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নাম কি? সে বলল, অমুক। তিনি তখন বললেন, বরং তোমার নাম উপড়ানোওয়ালা। এবং তাঁর সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করলেন। (জাসসাস, আহকামুল কুরআন, খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৬৯২)। ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, এটা বিদ‘আত। (ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন; ১/১৪৪)।
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, ঠোটের নিম্ন অংশে গজানো চুল মুন্ডন করা জায়েয নয়। কারণ এগুলো দাড়ির অংশ। (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/২৯; পৃষ্ঠা:৪৪)।
তবে সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] এবং শাইখ সালেহ আল ফাওয়ান (হাফিযাহুল্লাহ) সহ একদল ভাষাবিদরা মনে করেন, এগুলো দাড়ির অন্তর্ভুক্ত নয়। সমস্যা মনে হলে কাটা যাবে। তবে না কাটাই উত্তম।যেমন শাইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে ঠোঁটের নিচে যে লোম আছে সেগুলি কি খাটো করা যাবে নাকি যেরকম আছে সে রকম করে রাখবে? উত্তরে শাইখ বলেন,একে বলা হয় " আনফাকাহ" ( নিচের ঠোঁট ও চিবুকের মধ্যবর্তী ক্ষুদ্র কেশগুচ্ছ (নিমদাড়ি) । এটি দাড়ির অন্তর্ভুক্ত নয়। যদি এর দ্বারা কোনো ব্যক্তির ক্ষতি ( কষ্ট,অসুবিধা) না হয় , তাহলে এটি যেমন আছে তেমনই থাকবে।(মারদাভী, আল-ইনছাফ ১/১৩৪;ইমাম উসায়মীন লিকাউল বাবিল মাফতূহ সাক্ষাৎকার নং ৯/ প্রশ্ন:৬; লিসানুল আরব ৫/২৪১)।
পরিশেষে, প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, ঠোটের নীচে দাড়ির মত গজানো চুল কাটা যাবে কিনা এটি একটি মতভেদ পূর্ণ মাসয়ালা।সুতরাং মতানৈক্য থেকে বাঁচতে না কাটাই উত্তম বলে মনে হয়। কারণ, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- যে কাজে মনে সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে, সে কাজ পরিহার করে সংশয়-সন্দেহহীন কাজ করো। সত্য ও ন্যায়ের মধ্যে প্রশান্তি আছে,আর মিথ্যা ও অন্যায়ের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। (সুনানে নাসায়ী হা/৫৭১১, তিরমিযী হা/২৫১৮, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/২৩৪৮, সহীহ আত তারগীব হা/১৭৩৭)। (বাকিটা আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন)
উপস্থাপনায়,জুয়েল মাহমুদ সালাফি
পক্ষান্তরে যারা দাড়ির অন্তর্ভুক্ত মনে করে না তারা এগুলো কাটাকে নিষিদ্ধ মনে করেন না; আবার কাটাও উত্তম মনে করেন না। আরবি ভাষা অনুযায়ী বুঝা যায়, এটা দাড়ির অন্তর্ভুক্ত নয়। (লিসানুল আরব; ৫/২৪১, কমুসুল মুহীত; ১৭১৪)। কারণ দাড়িকে আরবিতে لحية বলা হয়। আর আরবি অভিধানগুলোতে দু গাল ও থুতনিতে গজানো পশমকে দাড়ি বলা হয়েছে। দাঁড়ির সংজ্ঞায় ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন; মুখমন্ডল গণ্ডদেশ অর্থাৎ ঊর্ধ্বগালে এবং থুতনিতে গজানো কেশকে দাঁড়ি বলা হয়। (ফাৎহুল বারী,১১তম খণ্ড পৃষ্ঠা: ৫৪২)। হাদীসে উক্ত দাড়ি কাটার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যা কাটা হারাম। হাদীসে এসেছে- আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন; ‘তোমরা গোঁফ অধিক ছোট করবে এবং দাড়ি ছেড়ে দিবে।(মুসনাদে আহমাদ হা/৭১৩২; সহীহুল জামে হা/৪৩৯২)। অন্য একটি হাদীসে এসেছে, ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে গোঁফ খাটো করতে এবং দাড়ি লম্বা করতে আদেশ করেছেন। (সহীহ মুসলিম হা/২৫৯; তিরমিযী হা/২৪৬৪; আবু দাউদ হা/৪১৯৯)। ইমাম ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন- পুরো দাড়ি মুন্ডন করা অঙ্গহানি, যা নাজায়েয হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, গোঁফ ছোট করা ও দাড়ি লম্বা করা ফরয হওয়ার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে। (ইবনু হাযম, মারাতিবুল ইজমা; ১/১৫৭ মারদাভী, আল-ফুরূ; ১/১৫১)
পক্ষান্তরে ঠোঁটের নিচে ও থুতনির উপরের অংশে গজানো পশমকে আরবিতে العنفقة বলা হয়। হাদীসে এ ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা আসে নি। কিন্তু একটি হাদীসে এসেছে, বৃদ্ধাবস্থাতেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঠোঁটের নিম্নভাগে উক্ত লোম ছিল। যার কিছু অংশ সাদা ছিল। আবু জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখেছি আর তাঁর নীচ ঠোঁটের নিন্মভাগে দাড়িতে সামান্য সাদা চুল দেখেছি। (সহীহ বুখারী হা/৩৫৪৫; সহীহ মুসলিম হা/২৩৪২)। ইমাম আবু বক্কার জাসসাস (রাহি) উল্লেখ করেছেন যে, ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণিত; মক্কা থেকে এক ব্যক্তি আসল। সে ওমর বিন আব্দুল আজিজ (রাহি)-এর কাছে (কোন বিষয়ে) সাক্ষ্য দিল। অথচ সে ঠোঁটের নিচের পশম উপড়াত, এবং দাঁড়ি ও মোচের আশপাশ ছাটত। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার নাম কি? সে বলল, অমুক। তিনি তখন বললেন, বরং তোমার নাম উপড়ানোওয়ালা। এবং তাঁর সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করলেন। (জাসসাস, আহকামুল কুরআন, খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৬৯২)। ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, এটা বিদ‘আত। (ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন; ১/১৪৪)।
বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, ঠোটের নিম্ন অংশে গজানো চুল মুন্ডন করা জায়েয নয়। কারণ এগুলো দাড়ির অংশ। (মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, খণ্ড/২৯; পৃষ্ঠা:৪৪)।
তবে সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] এবং শাইখ সালেহ আল ফাওয়ান (হাফিযাহুল্লাহ) সহ একদল ভাষাবিদরা মনে করেন, এগুলো দাড়ির অন্তর্ভুক্ত নয়। সমস্যা মনে হলে কাটা যাবে। তবে না কাটাই উত্তম।যেমন শাইখ উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে ঠোঁটের নিচে যে লোম আছে সেগুলি কি খাটো করা যাবে নাকি যেরকম আছে সে রকম করে রাখবে? উত্তরে শাইখ বলেন,একে বলা হয় " আনফাকাহ" ( নিচের ঠোঁট ও চিবুকের মধ্যবর্তী ক্ষুদ্র কেশগুচ্ছ (নিমদাড়ি) । এটি দাড়ির অন্তর্ভুক্ত নয়। যদি এর দ্বারা কোনো ব্যক্তির ক্ষতি ( কষ্ট,অসুবিধা) না হয় , তাহলে এটি যেমন আছে তেমনই থাকবে।(মারদাভী, আল-ইনছাফ ১/১৩৪;ইমাম উসায়মীন লিকাউল বাবিল মাফতূহ সাক্ষাৎকার নং ৯/ প্রশ্ন:৬; লিসানুল আরব ৫/২৪১)।
পরিশেষে, প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, ঠোটের নীচে দাড়ির মত গজানো চুল কাটা যাবে কিনা এটি একটি মতভেদ পূর্ণ মাসয়ালা।সুতরাং মতানৈক্য থেকে বাঁচতে না কাটাই উত্তম বলে মনে হয়। কারণ, রাসূল (ﷺ) বলেছেন- যে কাজে মনে সন্দেহ-সংশয়ের উদ্রেক করে, সে কাজ পরিহার করে সংশয়-সন্দেহহীন কাজ করো। সত্য ও ন্যায়ের মধ্যে প্রশান্তি আছে,আর মিথ্যা ও অন্যায়ের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। (সুনানে নাসায়ী হা/৫৭১১, তিরমিযী হা/২৫১৮, সহীহ ইবনু হিব্বান হা/২৩৪৮, সহীহ আত তারগীব হা/১৭৩৭)। (বাকিটা আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন)
উপস্থাপনায়,জুয়েল মাহমুদ সালাফি