প্রথমতঃ জান্নাতের সুসংবাদ:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার প্রস্থ আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না। এরাই তারা, যাদের প্রতিদান তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতসমূহ যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর আমলকারীদের প্রতিদান কতই না উত্তম!” [সূরা আলে-‘ইমরান: ১৩৩-১৩৭]
আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার ভোগ বিলাসিতার কথা আলোচনার পরে বলেছেন,
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
“আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরি করেছি যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন মানুষের অন্তর কখনো তা চিন্তা করেনি। তোমরা যদি চাও এ কথার সমর্থনে এ আয়াত তিলাওয়াত করতে পার।
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।” [সূরা আস-সাজদা, আয়াত: ১৭] [1]
সাহাল ইবন সা ‘দ আস-সা‘আদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতের এক সাওত তথা সামান্য চাবুক পরিমাণ জায়গা দুনিয়া ও এতে যা কিছু আছে তার চেয়ে অনেক উত্তম।” [2]
“এক সকাল বা এক বিকাল আল্লাহর রাস্তায় চলা দুনিয়া ও এর মধ্যবর্তী সব কিছুর চেয়ে উত্তম। তীরের দু’প্রান্তের দূরত্ব সমান বা কদম পরিমাণ জান্নাতের জায়গা দুনিয়া ও এর মধ্যবর্তী সব কিছুর চেয়ে উত্তম। জান্নাতের কোন নারী যদি দুনিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তবে দুনিয়াতে সব কিছু আলোকিত ও খুশবুতে মোহিত হয়ে যাবে। জান্নাতি নারীর ওড়না দুনিয়ার সব কিছুর চেয়ে উত্তম।” [3]
দ্বিতীয়ত: জাহান্নাম থেকে সতর্ক:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে সে অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ, তারা আল্লাহর নির্দেশের ব্যতিক্রম করে না, এবং তা-ই সম্পাদন করে, যা তাদের আদেশ করা হয়।” [সূরা আত্ব-তাহরীম: ৬]
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো, পরিবার পরিজনকে কল্যাণকর কাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করো, তাদেরকে শিক্ষা দাও ও আদব শিখাও, কল্যাণকর কাজে পরস্পর সহযোগিতা করো এবং তাদেরকে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করতে উপদেশ দাও। [4]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
“অতঃএব তোমরা সে আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৪]
“অতএব আমি তোমাদের সতর্ক করে দিয়েছি লেলিহান আগুন সম্পর্কে, তাতে নিতান্ত হতভাগা ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না; যে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।” [সূরা আল-লাইল, আয়াত: ১৪, ১৬]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এ আয়াত যখন নাযিল হয়
“আপনি আপনার নিকটাত্বীয়কে জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করুন।” [সূরা আশ-শু‘আরা: ২১৪] তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের সবাইকে ডেকে সমবেত করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে কা‘আব ইবন লুয়াই এর বংশধররা! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্না্মের আগুন থেকে মুক্ত করো। হে মুররা ইবন কা‘আবের বংশধররা! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্না্মের আগুন থেকে মুক্ত করো। হে আবদে শামসের বংশধররা! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করো। হে আবদে মুন্নাফের বংশধররা! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করো। হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশধররা! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করো। হে ফাতিমা! তুমি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করো। মনে রেখো! (ঈমান ব্যতীরেকে) আমি তোমাদের কোনো কাজে আসব না। তবে হ্যাঁ, তোমাদের সাথে আমার যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তা আমি অবশ্যই অটুট রাখবো। [5]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, বদর যুদ্ধের দিন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে চব্বিশজন কুরাইশ সর্দারের লাশ বদর প্রান্তরের একটি কদর্য আবর্জনপূর্ণ কূপে নিক্ষেপ করা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করলে সে স্থানের উপকন্ঠে তিনদিন অবস্থান করতেন। সে মতে বদর প্রান্তরে অবস্থানের পর তৃতীয় দিন তিনি তাঁর সাওয়ারী প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন, সাওয়ারী কষে বাঁধা হল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজে (কিছু দূর) এগিয়ে গেলেন। সাহাবাগণও তাঁর পেছনে পেছনে চলেছেন। তারা বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, কোন প্রয়োজনে (হয়ত) তিনি কোথাও যাচ্ছেন। অবশেষে তিনি ঐ কূপের কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কূঁপে নিক্ষিপ্ত ঐ নিহত ব্যক্তিদের নাম ও তাদের পিতার নাম ধরে এভাবে ডাকতে শুরু করলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন অনুভব করতে পারছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল-এর আনুগত্য তোমাদের জন্য পরম খুশীর বস্তু ছিল? আমাদের প্রতিপালক আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যা বলেছিলেন তোমরাও তা সত্য পেয়েছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, (এ কথা শুনে) ‘উমর আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি আত্মাহীন দেহগুলোকে সম্বোধন করে কি কথা বলছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, আমি যা বলছি তা তাদের তুলনায় তোমরা অধিক শ্রবণ করছ না। কাতাদা রহ. বলেন, আল্লাহ তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা শোনাতে) তাদের ধমকি, লাঞ্ছনা, দুঃখ-কষ্ট, আফসোস এবং লজ্জা দেওয়ার জন্য (সাময়িকভাবে) দেহে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। [6]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার ও উম্মতের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালিয়েছে, অতঃপর কীটপতঙ্গ উড়ে এসে তাতে পতিত হতে শুরু করল। অনুরূপভাবে আমি তোমাদের কোমর ধরে (আগুন থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি), তোমাদেরকে বলছি আগুন থেকে বাঁচো, আগুন থেকে বাঁচো, আর তোমরা জোরপূর্বক আগুনে পতিত হচ্ছো। [7]
[1] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪৪, মুসলিম, হাদীস নং ২৮২৪।
[2] বুখারী, হাদীস নং ২৭৯৬।
[3] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৬৭।
[4] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৩৯২, তাফসীরে বাগভী: ৪/৩৬৭।
[5] মুসলিম, হাদীস নং ২০৪।
[6] বুখারী, হাদীস নং ৩৯৭৬, মুসলিম, হাদীস নং ২৮৭৩-২৮৭৫।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٣٤ وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةً أَوۡ ظَلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ذَكَرُواْ ٱللَّهَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ لِذُنُوبِهِمۡ وَمَن يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمۡ يُصِرُّواْ عَلَىٰ مَا فَعَلُواْ وَهُمۡ يَعۡلَمُونَ ١٣٥ أُوْلَٰٓئِكَ جَزَآؤُهُم مَّغۡفِرَةٞ مِّن رَّبِّهِمۡ وَجَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَنِعۡمَ أَجۡرُ ٱلۡعَٰمِلِينَ ١٣٦ ﴾ [ال عمران: ١٣٣، ١٣٦]
“আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার প্রস্থ আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না। এরাই তারা, যাদের প্রতিদান তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতসমূহ যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর আমলকারীদের প্রতিদান কতই না উত্তম!” [সূরা আলে-‘ইমরান: ১৩৩-১৩৭]
আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার ভোগ বিলাসিতার কথা আলোচনার পরে বলেছেন,
﴿ ۞قُلۡ أَؤُنَبِّئُكُم بِخَيۡرٖ مِّن ذَٰلِكُمۡۖ لِلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ عِندَ رَبِّهِمۡ جَنَّٰتٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَأَزۡوَٰجٞ مُّطَهَّرَةٞ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ ١٥ ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ إِنَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ١٦ ٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلۡقَٰنِتِينَ وَٱلۡمُنفِقِينَ وَٱلۡمُسۡتَغۡفِرِينَ بِٱلۡأَسۡحَارِ ١٧ ﴾ [ال عمران: ١٥، ١٧]
“বল, আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও উত্তম বস্তুর সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অর্জন করে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর পবিত্র স্ত্রীগণ ও আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তুষ্টি’। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব, আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’। যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, আনুগত্যশীল ও ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনাকারী।” [আলে ইমরান: ১৫-১৭]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« يقول الله تعالى: أعددت لعبادي الصالحين ما لا عين رأت، ولا أذن سمعت، ولا خطر على قلب بشر، فاقرأوا إن شئتم: ﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧﴾ [السجدة: ١٧]
“আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস তৈরি করেছি যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন মানুষের অন্তর কখনো তা চিন্তা করেনি। তোমরা যদি চাও এ কথার সমর্থনে এ আয়াত তিলাওয়াত করতে পার।
﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧﴾ [السجدة: ١٧]
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ।” [সূরা আস-সাজদা, আয়াত: ১৭] [1]
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «مَوْضِعُ سَوْطٍ فِي الجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»
সাহাল ইবন সা ‘দ আস-সা‘আদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতের এক সাওত তথা সামান্য চাবুক পরিমাণ জায়গা দুনিয়া ও এতে যা কিছু আছে তার চেয়ে অনেক উত্তম।” [2]
وعن أنس يرفعه: «غَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَلَقَابُ قَوْسِ أَحَدِكُمْ، أَوْ مَوْضِعُ قَدَمٍ مِنَ الجَنَّةِ، خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ نِسَاءِ أَهْلِ الجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى الأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا، وَلَمَلَأَتْ مَا بَيْنَهُمَا رِيحًا، وَلَنَصِيفُهَا - يَعْنِي الخِمَارَ - خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»
“এক সকাল বা এক বিকাল আল্লাহর রাস্তায় চলা দুনিয়া ও এর মধ্যবর্তী সব কিছুর চেয়ে উত্তম। তীরের দু’প্রান্তের দূরত্ব সমান বা কদম পরিমাণ জান্নাতের জায়গা দুনিয়া ও এর মধ্যবর্তী সব কিছুর চেয়ে উত্তম। জান্নাতের কোন নারী যদি দুনিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করে তবে দুনিয়াতে সব কিছু আলোকিত ও খুশবুতে মোহিত হয়ে যাবে। জান্নাতি নারীর ওড়না দুনিয়ার সব কিছুর চেয়ে উত্তম।” [3]
দ্বিতীয়ত: জাহান্নাম থেকে সতর্ক:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦ ﴾ [التحريم: ٦]
“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে সে অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ, তারা আল্লাহর নির্দেশের ব্যতিক্রম করে না, এবং তা-ই সম্পাদন করে, যা তাদের আদেশ করা হয়।” [সূরা আত্ব-তাহরীম: ৬]
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো, পরিবার পরিজনকে কল্যাণকর কাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করো, তাদেরকে শিক্ষা দাও ও আদব শিখাও, কল্যাণকর কাজে পরস্পর সহযোগিতা করো এবং তাদেরকে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করতে উপদেশ দাও। [4]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿ فَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِي وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُۖ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ٢٤ ﴾ [البقرة: ٢٤]
“অতঃএব তোমরা সে আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর, যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৪]
﴿فَأَنذَرۡتُكُمۡ نَارٗا تَلَظَّىٰ ١٤ لَا يَصۡلَىٰهَآ إِلَّا ٱلۡأَشۡقَى ١٥ ٱلَّذِي كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ ١٦ ﴾ [الليل: ١٤، ١٦]
“অতএব আমি তোমাদের সতর্ক করে দিয়েছি লেলিহান আগুন সম্পর্কে, তাতে নিতান্ত হতভাগা ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না; যে অস্বীকার করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।” [সূরা আল-লাইল, আয়াত: ১৪, ১৬]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: لَمَّا أُنْزِلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ {وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ} [الشعراء: 214]، دَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُرَيْشًا، فَاجْتَمَعُوا فَعَمَّ وَخَصَّ، فَقَالَ: «يَا بَنِي كَعْبِ بْنِ لُؤَيٍّ، أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي مُرَّةَ بنِ كَعْبٍ، أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ، أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي عَبْدِ مَنَافٍ، أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي هَاشِمٍ، أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا فَاطِمَةُ، أَنْقِذِي نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ، فَإِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْئًا، غَيْرَ أَنَّ لَكُمْ رَحِمًا سَأَبُلُّهَا بِبَلَالِهَا»،
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এ আয়াত যখন নাযিল হয়
﴿ وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ٢١٤ ﴾ [الشعراء: ٢١٤]
“আপনি আপনার নিকটাত্বীয়কে জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করুন।” [সূরা আশ-শু‘আরা: ২১৪] তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের সবাইকে ডেকে সমবেত করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে কা‘আব ইবন লুয়াই এর বংশধররা! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্না্মের আগুন থেকে মুক্ত করো। হে মুররা ইবন কা‘আবের বংশধররা! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্না্মের আগুন থেকে মুক্ত করো। হে আবদে শামসের বংশধররা! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করো। হে আবদে মুন্নাফের বংশধররা! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করো। হে আব্দুল মুত্তালিবের বংশধররা! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করো। হে ফাতিমা! তুমি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করো। মনে রেখো! (ঈমান ব্যতীরেকে) আমি তোমাদের কোনো কাজে আসব না। তবে হ্যাঁ, তোমাদের সাথে আমার যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তা আমি অবশ্যই অটুট রাখবো। [5]
عن أنس، عَنْ أَبِي طَلْحَةَ، أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ يَوْمَ بَدْرٍ بِأَرْبَعَةٍ وَعِشْرِينَ رَجُلًا مِنْ صَنَادِيدِ قُرَيْشٍ، فَقُذِفُوا فِي طَوِيٍّ مِنْ أَطْوَاءِ بَدْرٍ خَبِيثٍ مُخْبِثٍ، وَكَانَ إِذَا ظَهَرَ عَلَى قَوْمٍ أَقَامَ بِالعَرْصَةِ ثَلاَثَ لَيَالٍ، فَلَمَّا كَانَ بِبَدْرٍ اليَوْمَ الثَّالِثَ أَمَرَ بِرَاحِلَتِهِ فَشُدَّ عَلَيْهَا رَحْلُهَا، ثُمَّ مَشَى وَاتَّبَعَهُ أَصْحَابُهُ، وَقَالُوا: مَا نُرَى يَنْطَلِقُ إِلَّا لِبَعْضِ حَاجَتِهِ، حَتَّى قَامَ عَلَى شَفَةِ الرَّكِيِّ، فَجَعَلَ يُنَادِيهِمْ بِأَسْمَائِهِمْ وَأَسْمَاءِ آبَائِهِمْ: «يَا فُلاَنُ بْنَ فُلاَنٍ، وَيَا فُلاَنُ بْنَ فُلاَنٍ، أَيَسُرُّكُمْ أَنَّكُمْ أَطَعْتُمُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ، فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا، فَهَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا؟» قَالَ: فَقَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا تُكَلِّمُ مِنْ أَجْسَادٍ لاَ أَرْوَاحَ لَهَا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ»، قَالَ قَتَادَةُ: أَحْيَاهُمُ اللَّهُ حَتَّى أَسْمَعَهُمْ، قَوْلَهُ تَوْبِيخًا وَتَصْغِيرًا وَنَقِيمَةً وَحَسْرَةً وَنَدَمًا
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, বদর যুদ্ধের দিন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে চব্বিশজন কুরাইশ সর্দারের লাশ বদর প্রান্তরের একটি কদর্য আবর্জনপূর্ণ কূপে নিক্ষেপ করা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করলে সে স্থানের উপকন্ঠে তিনদিন অবস্থান করতেন। সে মতে বদর প্রান্তরে অবস্থানের পর তৃতীয় দিন তিনি তাঁর সাওয়ারী প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন, সাওয়ারী কষে বাঁধা হল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজে (কিছু দূর) এগিয়ে গেলেন। সাহাবাগণও তাঁর পেছনে পেছনে চলেছেন। তারা বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, কোন প্রয়োজনে (হয়ত) তিনি কোথাও যাচ্ছেন। অবশেষে তিনি ঐ কূপের কিনারে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং কূঁপে নিক্ষিপ্ত ঐ নিহত ব্যক্তিদের নাম ও তাদের পিতার নাম ধরে এভাবে ডাকতে শুরু করলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক, হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন অনুভব করতে পারছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল-এর আনুগত্য তোমাদের জন্য পরম খুশীর বস্তু ছিল? আমাদের প্রতিপালক আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমরা তো তা সত্য পেয়েছি, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে যা বলেছিলেন তোমরাও তা সত্য পেয়েছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, (এ কথা শুনে) ‘উমর আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি আত্মাহীন দেহগুলোকে সম্বোধন করে কি কথা বলছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, আমি যা বলছি তা তাদের তুলনায় তোমরা অধিক শ্রবণ করছ না। কাতাদা রহ. বলেন, আল্লাহ তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথা শোনাতে) তাদের ধমকি, লাঞ্ছনা, দুঃখ-কষ্ট, আফসোস এবং লজ্জা দেওয়ার জন্য (সাময়িকভাবে) দেহে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। [6]
عَنْ أبي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَثَلِي كَمَثَلِ رَجُلٍ اسْتَوْقَدَ نَارًا، فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهَا جَعَلَ الْفَرَاشُ وَهَذِهِ الدَّوَابُّ الَّتِي فِي النَّارِ يَقَعْنَ فِيهَا، وَجَعَلَ يَحْجُزُهُنَّ وَيَغْلِبْنَهُ فَيَتَقَحَّمْنَ فِيهَا، قَالَ فَذَلِكُمْ مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ، أَنَا آخِذٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ، هَلُمَّ عَنِ النَّارِ، هَلُمَّ عَنِ النَّارِ فَتَغْلِبُونِي تَقَحَّمُونَ فِيهَا»
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার ও উম্মতের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালিয়েছে, অতঃপর কীটপতঙ্গ উড়ে এসে তাতে পতিত হতে শুরু করল। অনুরূপভাবে আমি তোমাদের কোমর ধরে (আগুন থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি), তোমাদেরকে বলছি আগুন থেকে বাঁচো, আগুন থেকে বাঁচো, আর তোমরা জোরপূর্বক আগুনে পতিত হচ্ছো। [7]
[1] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪৪, মুসলিম, হাদীস নং ২৮২৪।
[2] বুখারী, হাদীস নং ২৭৯৬।
[3] বুখারী, হাদীস নং ৬৫৬৭।
[4] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৩৯২, তাফসীরে বাগভী: ৪/৩৬৭।
[5] মুসলিম, হাদীস নং ২০৪।
[6] বুখারী, হাদীস নং ৩৯৭৬, মুসলিম, হাদীস নং ২৮৭৩-২৮৭৫।
[7] মুসলিম, হাদীস নং ২২৮৪।