‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ জবরদখলকারী শাসকের অনুগত্যের ক্ষেত্রে ইমামু আহলিস সুন্নাহর অবস্থান

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Top Active User
Threads
759
Comments
896
Reactions
8,232
Credits
4,006
শাসক সংশোধনের ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা রয়েছে, আবার শাসককে হটানোর ক্ষেত্রেও কিছু শর্ত রয়েছে। কুফুরী সুস্পষ্ট হওয়া ও তাঁর সামনে দলীল পেশ করা, ক্ষমতা থাকা, ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশি হওয়া, উত্তম শাসক স্থলাভিষিক্ত করা ইত্যাদি অন্যতম শর্ত। শর্ত পূরণ ছাড়াই হুটহাট করে খুরুজ করা বৈধ নয়। কথা হচ্ছে শাসকের আক্বীদাহ পচা হলে, সালাফীরা সেসব আক্বীদাহর বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে, এখানে শাসকের নাম মেনশন করা কিংবা বিদ্রোহ করা জরুরি না। যেমন: ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ্) মু‘তাযিলী আক্বীদাহর বিরুদ্ধে বলেছেন, কিন্তু মু‘তাযিলী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি। সালাফীরাও বর্তমান যুগের শাসকদের ভুয়ো ‘আক্বীদাহর বিরুদ্ধে কথা বলে থাকেন, তাদের ভুলকে ভুল বলে জানেন, তাদের যুলমকে যুলম বলে জানেন, কিন্তু বিদ্রোহ করেন না। বিদ্রোহ সিরিয়া কিংবা লিবিয়াতে শুধু রক্তপাতই ঘটিয়েছে, শান্তি আনতে পারেনি। অথচ দুটো দেশের শাসকই কাফির, জমহুর উলামায়ে-কেরাম এদেরকে তাকফীর করা সত্ত্বেও বিদ্রোহ করতে নিষেধ করেছিলেন। আজকের পরিস্থিতি দেখে কারোই একথা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে কোনটা উত্তম ছিল --- বিদ্রোহ নাকি আনুগত্য।

যালিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন, "ইসলামী শরিয়ার একটি মূলনীতি হচ্ছে, “মন্দকে মন্দতর দিয়ে প্রতিরোধ করা যাবে না। বরং যা দিয়ে মন্দকে নির্মূল করা যাবে, কিংবা কমানো যাবে তা দিয়ে মন্দকে প্রতিরোধ করতে হবে”। তাই যে শাসক সুস্পষ্ট কুফুরীতে লিপ্ত তাকে যারা ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় তাদের যদি এমন সক্ষমতা থাকে যা দিয়ে তারা তাকে পদচ্যুত করতে পারবে, তার বদলে একজন ভাল ও নেককার শাসক বসাতে পারবে এবং এর ফলে মুসলমানদের মধ্যে বড় ধরনের কোন বিশৃংখলা তৈরী হবে না, এ শাসকের অনিষ্টের চেয়ে বড় কোন অনিষ্টের শিকার হবে না— তাহলে এতে কোন বাধা নেই। পক্ষান্তরে, এ বিদ্রোহের মাধ্যমে যদি বড় ধরনের বিশৃংখলা তৈরী হয়, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, নিরপরাধ মানুষ যুলম ও গুপ্তহত্যার শিকার হয়- ইত্যাদি তাহলে বিদ্রোহ করা জায়েয হবে না। বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে, শাসকের ভাল নির্দেশের আনুগত্য করতে হবে। শাসককে উপদেশ দিতে হবে, ভাল কাজ করার দিকে ডাকতে হবে। মন্দকে কমানো ও ভালকে বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এটাই সরল পথ; যে পথ অনুসরণ করা কর্তব্য। কারণ এ পথে মুসলমানদের জন্য সাধারণ কল্যাণ নিহিত; এ-পথে ক্ষতির দিক কম, কল্যাণের দিক বেশি; এ পথে আরও বড় অকল্যাণ থেকে মুসলমানদের নিরাপত্তা নিহিত আছে।"--- [১]।

এখন অনেকেই জোর করে ক্ষমতাসীন হওয়া, মুতাগাল্লিব বা জবরদখলকারী শাসকের ক্ষেত্রে দ্বিধান্বিত হয়ে যান। এমন শাসকের ক্ষেত্রে কি করণীয় সে প্রসঙ্গে ইমামু আহলিস সুন্নাহ আহমাদ বিন হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ্) [মৃত: ২৪১ হি.] বলেছেন ---

ومن خرج على إمام من أئمة المسلمين، وقد كان الناس اجتمعوا عليه، وأقروا له بالخلافة، بأي وجه كان بالرضا أو الغلبة فقد شق هذا الخارج عصا المسلمين وخالف الآثار عن رسول الله ﷺ فإن مات الخارج عليه مات ميتة جاهلية، ولا يحل قتال السلطان ولا الخروج عليه لأحد من الناس، فمن فعل ذلك فهو مبتدع على غير السنة والطريق.

"যে ব্যক্তি মুসলিমদের কোনো শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যেই শাসকের ব্যাপারে জনগণ সম্মিলিত হয়েছে এবং তাকে শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, আর সে যে পন্থায়ই শাসক হোক না কেন—সবাই তার প্রতি সম্মত থাকুক, বা সে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করুক—তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী ব্যক্তি মুসলিমদের ঐক্যের লাঠি ভেঙে ফেলল এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণিত হাদীসের বিরোধিতা করল। এই বিদ্রোহকারী যদি এ অবস্থায় মারা যায়, তাহলে তার মৃত্যু জাহেলী মৃত্যু হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রকৃতপক্ষে শাসকের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া এবং শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা কোনো মানুষের জন্যই জায়েজ নয়। যে ব্যক্তি তা করে, সে সুন্নাহ ও সঠিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত বিদ‘আতী।"--- [২]।

ইমাম হাসান আল -বাসরী (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন, "সত্যিকার আলিমরা ফিতনার সময় সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন, পক্ষান্তরে যাহিলরা ফিতনাকে আরো বাড়িয়ে তোলে।" এখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন পথে হাঁটবেন। যাহিলদের পথে নাকি আলিমদের পথে। আহলুস সুন্নাহর উলামায়ে-কেরামের পরামর্শ নিবেন নাকি কথিত বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ, মাওলানাদের দেখানো পথে পা বাড়াবেন। যাইহোক, আজকের শাসক ও শাসিত শ্রেণীর হাল-অবস্থা দেখে বড্ড চমৎকার কিছু কথা বলেছেন প্রিয় শাইখ ড. সালিহ আস-সালেহ (হাফিযাহুল্লাহ)। তিনি (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ❛আল্লাহ্‌র জ্ঞান তার বৈশিষ্ট্যসমূহের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি তাঁর হিকমাহ অনুসারে প্রতিটি জিনিসকে তার নিজ জায়গায় বসান, যেখানে যেটা উপযুক্ত হয় সেই অনুযায়ী। আল্লাহ্ তা’আলা'র জ্ঞানের এক মহান উদ্দেশ্য রয়েছে যা ত্রুটি-বিচ্যুতির ঊর্ধ্বে। আর তাদের কথা যদি বলতে হয় যারা “মুক্তি”-এর পথ বের করতে তাড়াহুড়া করে, এবং যারা শাসকদেরকে বিতাড়িত করাকেই তাদের সমস্যার সমাধান বলে মনে করে, তারা অসুখের লক্ষণকে অসুখ ভেবে ভুল করছে। শুধুমাত্র শাসকদেরকে সমস্যার কারণ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে; যেখানে তারা (শাসকরা) হচ্ছে শুধুমাত্র লক্ষণ। সত্যিকারের অসুখ হল শাসিত শ্রেণীর ভেতর। এজন্যই, সমাধানে পৌঁছানোর সকল প্রচেষ্টা হওয়া উচিৎ যারা শাসিত হচ্ছে তাদেরকে কেন্দ্র করে। শাসিতদের আমল প্রতিফলিত হয় তাদের উপর ক্ষমতাপ্রাপ্ত শাসকদের আমলের মধ্যে। যেখানে লোকেরাই প্রস্তুত নয় এবং তারা আল্লাহ্‌র দ্বীন থেকে বহু দূরে সরে গিয়েছে, তখন আপনি তাদের শাসক হিসাবে কাকে প্রত্যাশা করবেন?"--- [৩]।

পরিশেষে দু'আ করি, আল্লাহ তা'আলা যালিমদের যুলম থেকে মাযলুমদের রক্ষা করুন, আমাদের সবরশক্তি বৃদ্ধি করুন, যুবসমাজকে যাবতীয় ফিতনা থেকে হিফাযত করে আল্লাহর দ্বীনের দিকে ফিরে আসার তাউফীক দান করুন - আমীন।


লেখনিঃ- Akhtar Bin Amir

তথ্যসূত্র:
১. --- [মাজমু'ঊ ফাতাওয়া ইবনু বায : ৮/২০২]।
২. --- [শারহু উসূলি ই‘তিক্বাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামা‘আহ; আসার নং: ৩১৭; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৫৮]।
৩.---[Blame Ourselves or Blame the Rulers?]
 

Share this page