If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য, সালাত ও সালাম বর্ষিত হৌক সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল সাইয়েদুনা মুহাম্মাদ (ﷺ), তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাথীবৃন্দের উপর।
পর সমাচার এই যে, আমি আপনার নিকট এমন একটি পত্র লিখছি, যাতে হেদায়াত বা উপদেশমূলক তেমন কোন কথা লিখতে পারিনি। তাই এর দ্বারা আপনি মনে করবেন না যে, একমাত্র এতেই হেদায়াত রয়েছে।
যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যেহেতু এটা রাসূল (ﷺ) থেকে অনুসৃত শিষ্টাচার স্বরূপ। সুতরাং এ পত্রটিকে আপনি আপনার জ্ঞান দ্বারা অনুধাবন করবেন, বারবার এটি পাঠ করবেন এবং এর প্রতি মনোযোগী হবেন। অতঃপর হৃদয় দিয়ে তা অনুধাবন করবেন। আর এ পত্রটি পাঠ করার সময় আপনি যেন অমনোযোগী না হন। কেননা এতে আছে দুনিয়াবী কল্যাণ ও পরকালে আল্লাহর উত্তম প্রতিদান। মহান আল্লাহর নিকট আমার ও আপনার জন্য তাওফীক কামনা করছি।
আপনি আপনার নফসকে মৃত্যুর যন্ত্রণা ও তার বিপদাপদের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। আর স্মরণ করুন সেদিনের কথা, মৃত্যুর পর যেদিন আপনি আপনার প্রভুর সম্মুখে হাশরের ময়দানে দন্ডায়মান হবেন। অতঃপর হিসাব নেয়া হবে এবং হিসাব-নিকাশের পর আপনার চিরস্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত হবে। যে কাজের মাধ্যমে ঐ দিনের দুর্বিষহ অবস্থা আপনার জন্য সহজ হবে তার জন্য আপনি প্রস্ত্ততি গ্রহণ করুন। আপনি যদি আল্লাহর লা‘নতপ্রাপ্তদেরকে এবং তাদের প্রতি আপতিত আযাবের ভয়াবহতা, তাদের প্রতি আল্লাহর কঠিন প্রতিশোধ দেখতেন এবং কুৎসিত চেহারা, দীর্ঘ চিন্তা ও জাহান্নামের নিম্নস্তরে উপুড় হয়ে তাদের ওলটপালট সহ জাহান্নামে তাদের আর্তচিৎকার ও হাহাকার যদি আপনি শুনতেন তাহ’লে পরকালের ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝতে পারতেন। সেদিন তারা কোনকিছু শুনতে পাবে না এবং দেখতেও পাবে না। তারা শুধু আফসোস ও ধ্বংস কামনা করবে। ঐসকল দুঃখ-কষ্টের চেয়ে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় কষ্টকর বিষয় হ’ল, মহান আল্লাহ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন। তাদের সকল আশা-আকাংখা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। দীর্ঘ দুঃখ-কষ্ট ও চিন্তার পর আল্লাহ তাদেরকে এই কথার মাধ্যমে জওয়াব দিবেন যে, قَالَ اخْسَئُوا فِيهَا وَلاَ تُكَلِّمُونِ ‘আল্লাহ বলবেন, এখানেই তোমরা ধিকৃত অবস্থায় পড়ে থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না’ (মুমিনূন ২৩/১০৮)।
দুনিয়ার এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নেই যার মাধ্যমে আপনি জাহান্নামের শাস্তি ও তার ভয়াবহতা থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা চাইবেন না। যদি দুনিয়ার সকল মানুষের যাবতীয়
ধন-সম্পদকে আপনার নাজাতের জন্য পেশ করেন তবে তা নিতান্তই তুচ্ছ বলে গণ্য হবে।
যদি আপনি আল্লাহর আনুগত্যকারী ব্যক্তিদের ও তাদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহ, আল্লাহর নৈকট্যের সাথে সাথে আল্লাহর নিকট তাদের মর্যাদা, উজ্জ্বল নূরানী চেহারা ও দেহ, স্থায়ী নে‘মতের কারণে তাদের আনন্দ, আল্লাহর নিকট তাদের ভাল অবস্থান ও তাদের প্রতি আল্লাহর সুদৃষ্টি যদি আপনি দেখতেন, তাহ’লে দুনিয়ার বিষয়গুলো আপনার কাছে ছোট মনে হ’ত। অবশ্যই আপনার দৃষ্টিতে ঐ বড় বিষয়টিও নগণ্য মনে হ’ত, যে বড় বিষয়ের বিনিময়ে আল্লাহর নিকটে আপনি ছোট বিষয় কামনা করছেন। আর অবশ্যই আপনার দৃষ্টিতে ঐ বড় বিষয়টিও ছোট মনে হ’ত, যে বড় বিষয়ের বিনিময়ে দুনিয়াতে আপনি ছোট কিছু কামনা করছেন। অতএব বিভ্রান্ত না হয়ে আপনার প্রবৃত্তিকে সতর্ক করুন এবং বিপদ আসার পূর্বেই আপনি আন্তরিকভাবে তৎপর হৌন। তাহ’লে মৃত্যুকালীন যে বিপদ আসবে তাকে আপনি ভয় পাবেন না। আপনি আপনার প্রবৃত্তির সাথে ধীর-স্থিরভাবে বিতর্ক করুন, তাহ’লে আল্লাহর রহমতে আপনার নফসের জন্য যা উপকারী তা করতে বা যা ক্ষতিকর তা প্রতিহত করতে সক্ষম হবেন। মহান আল্লাহর হিসাব গ্রহণের পূ©র্বই কুচক্রসমূহকে আপনার আত্মা থেকে বিরত রাখুন, নতুবা আপনি তার থেকে অপসন্দনীয় বিষয় সমূহ প্রতিরোধ করতে এবং উপকারী কাজ করতে সক্ষম হবেন না। আর তখন আপনি আপনার নফসের জন্য কোন দলীল ও ওযর পেশ করতে পারবেন না। ফলে তার ক্ষতিকারিতা আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে।
আপনার ইবাদতের জন্য দিন ও রাতের একটি অংশ নির্ধারণ করুন। আপনি দিন-রাতে ১২ রাক‘আত নফল সালাত আদায় করবেন এবং প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতিহা সহ আপনার পসন্দ অনুযায়ী কুরআন তেলাওয়াত করবেন। ইচ্ছা করলে এগুলো এক সালামে আদায় করতে পারেন, অথবা পৃথক সালামে সালাতগুলো আদায় করবেন। কেননা আমার নিকট রাসূল (ﷺ) এর হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন, مَنْ صَلَّى اثْنَتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِى يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ بُنِىَ لَهُ بِهِنَّ بَيْتٌ فِى الْجَنَّةِ- ‘যে ব্যক্তি দিনে-রাতে ১২ রাক‘আত (নফল) সালাত আদায় করবে, মহান আল্লাহ জান্নাতে এর বিনিময়ে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করবেন’।[1] আপনি রাত্রি বেলায় কুরআনের কিছু অংশ দ্বারা ৮ রাক‘আত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করবেন। প্রতি রাক‘আতে এর হকগুলো আদায় করবেন। রুকূ-সিজদার হক আদায়ের জন্য যা যা প্রয়োজন, তা যথাযথভাবে আদায় করবেন। রাতের সালাত অবশ্যই দুই দুই রাক‘আত করে আদায় করবেন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি রাতে ৮ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। এছাড়া ৩ রাক‘আত বিতর সালাত আদায় করতেন। প্রত্যেক ২ রাক‘আত পর তিনি সালাম ফিরাতেন’।[2]
প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ তিন দিন নফল ছিয়াম পালন করবেন। কেননা নবী করীম (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেছেন, ذَلِكَ صِيَامُ الدَّهْرِ ‘এটা সারা বছর ছিয়াম রাখার সমতুল্য’।[3]
যখন একবছর পূর্ণ হবে, তখন আপনারা পবিত্র মাল থেকে যাকাত আদায় করবেন। যাকাত ফরয হওয়ার পর আর কাল-বিলম্ব করবেন না। আল্লাহ যাকে যাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন, তাকেই প্রদান করবেন।
আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ- ‘ছাদাক্বাসমূহ কেবল (আট শ্রেণীর) লোকের জন্য। ফকীর, অভাবগ্রস্ত, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তি, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্য (যাদের পাথেয় হারিয়ে যায় বা শেষ হয়ে যায়)। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (তওবা ৯/৬০)।
আপনার পূত-পবিত্র সম্পদ দ্বারা পবিত্র হজ্জব্রত পালন করবেন। কেননা আল্লাহ পবিত্র মাল ভিন্ন কবুল করেন না।[4] আল্লাহ বলেন,وَاذْكُرُوا اللهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى- ‘আর তোমরা (মিনায়) গণিত দিনগুলিতে আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যে ব্যক্তি ব্যস্ততা বশে দু’দিনেই (মক্কায়) ফিরে আসে, তার জন্য কোন গোনাহ নেই। আর যে ব্যক্তি দেরী করে, তারও কোন গোনাহ নেই যে ব্যক্তি সংযম অবলম্বন করে’ (বাক্বারাহ ২/২০৩)। উভয় অবস্থাতেই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
আপনি আল্লাহর আনুগত্যের আদেশ করবেন এবং তাঁর উদ্দেশ্যেই কাউকে ভালবাসবেন। আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে সর্বদা দূরে থাকবেন। তাঁর উদ্দেশ্যেই কাউকে ঘৃণা করবেন।
আল্লাহ যাদেরকে আপনার অধীনস্ত করে দিয়েছেন, তাদের প্রতি সদাচরণ করুন[5] এবং তাদের উপর আপনার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
যাকে শিষ্টাচার শিক্ষা দান এবং যার সকল কাজের দেখাশুনা করা আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য, আপনি তাকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিন। কেননা রাসূল (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি ফযল ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলেছেন,لاَ تَرْفَعِ الْعَصَا عَنْ أَهْلِكَ، وَأَخِفْهُمْ فِي اللهِ عَزَّ وَجَلَّ- ‘তোমার পরিবার থেকে শিষ্টাচারের লাঠিকে উঠিয়ে নিও না, তাদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাও’।[6] মানুষের নিকট আত্মসমর্পণ করবেন না। বরং তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন।
আপনি মানুষকে ছোট মনে করবেন না। তাদের জন্য আপনার অনুগ্রহের ডানা বিছিয়ে দিন। কেননা নবী করীম (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর নবী নূহ (আঃ) মৃত্যুকালে স্বীয় পুত্রকে অছিয়ত করে বলেন, আমি একটি অছিয়তের মাধ্যমে তোমাকে দু’টি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি ও দু’টি বিষয়ে নিষেধ করে যাচ্ছি। নির্দেশ হ’ল তুমি বলবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। কেননা আসমান ও যমীনের সবকিছু যদি এক পাল্লায় রাখা হয় এবং এটিকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয়, তাহ’লে এটিই ভারী সাব্যস্ত হবে। সাত আসমান ও সাত যমীন যদি একটি জটিল গ্রন্থির রূপ ধারণ করে তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ তা ভেঙ্গে দিবে। কেননা এটি সকল বস্ত্তর তাসবীহ ও সালাত এবং এর মাধ্যমেই সকল সৃষ্টিকে রূযী দেওয়া হয়।
আর আমি তোমাকে নিষেধ করে যাচ্ছি দু’টি বস্ত্ত থেকে : শিরক ও অহংকার। বলা হ’ল বা বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আললাহর রাসূল! শিরক তো আমরা বুঝলাম। কিন্তু অহংকার কী? আমাদের কারো যদি সুন্দর পোষাক থাকে আর সে তা পরিধান করে। তবে এতে কী অহংকার হবে? তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহলে আমাদের কোন ব্যক্তির যদি এক জোড়া সুন্দর জুতা থাকে এবং এর দু’টি সুন্দর ফিতা থাকে। তা কী অহংকারের আওতায় পড়বে? তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহলে আমাদের কোন ব্যক্তির যদি একটি বাহন জন্তু থাকে যার উপর সে আরোহণ করে। তাতে কী অহংকার হবে? তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহলে আমাদের কারো বন্ধু-বান্ধব রয়েছে যাদের সাথে সে ওঠা-বসা করে? এতে কী অহংকার হবে? তিনি বললেন, না। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তাহলে অহংকার কী?। তিনি বললেন, অহংকার হ’ল, سفه الحق و غمص الناس সত্যকে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে হেয় জ্ঞান করা’।[7]
গর্ব ও অহংকার থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা মহান আল্লাহ এই দু’টি বস্ত্তকে ভালবাসেন না। জনৈক বিদ্বান থেকে আমার নিকট একটি হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি (ﷺ) বলেন,يُحْشَرُ الْمُتَكَبِّرُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَمْثَالَ الذَّرِّ فِى صُوَرِ الرِّجَالِ يَغْشَاهُمُ الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ... ‘ক্বিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে ক্ষুদ্র পিপড়ার ন্যায় মানুষের রূপে সমবেত করা হবে। তাদেরকে চারদিক হতে অপমান ও লাঞ্ছনা ছেয়ে ফেলবে।..[8]
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না, তার কাছে আপনার কোন বিষয়কেই নিরাপদ মনে করবেন না। কেননা আমার নিকট ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বাণী পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন, وَشَاوِرْ فِي أَمْرِكَ الَّذِينَ يَخَافُونَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ ‘যে কোন কাজের ব্যাপারে আপনি মুত্তাক্বীদের সাথে পরামর্শ করবেন’।[9] অসৎ সঙ্গী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের থেকে আপনি সতর্ক থাকবেন। কেননা নবী করীম (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন,مَا مِنْ نَبِيٍّ وَلاَ خَلِيفَةٍ أَوْ قَالَ مَا مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ وَلَهُ بِطَانَتَانِ بِطَانَةٌ تَأْمُرُهُ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَاهُ عَنْ الْمُنْكَرِ وَبِطَانَةٌ لاَ تَأْلُوهُ خَبَالاً وَمَنْ وُقِيَ شَرَّ بِطَانَةِ السُّوءِ فَقَدْ وُقِيَ- ‘নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিটি নবী ও খলীফাকেই দু’জন করে সাথী দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। তন্মধ্যে একজন তাঁকে ভাল কাজের নির্দেশ দেয় ও খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করে এবং অন্যজন তাঁর সর্বনাশ করতে বিন্দুমাত্রও ত্রুটি করে না। সুতরাং যে ব্যক্তি মন্দ সাথীর কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে পারল, সে নিরাপদ থাকল’।[10] সুতরাং মুত্তাক্বী ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবেন এবং মেহমানকে সম্মান করবেন। কেননা মেহমানকে সম্মান করা আপনার নৈতিক দায়িত্ব।
সৎ কাজের মাধ্যমে আপনারা প্রতিবেশীর হক আদায় করবেন। তাদেরকে কষ্ট দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। কেননা নবী করীম (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন, مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান প্রদর্শন করে’।[11]
ভাল কথা বলবেন, অন্যথা চুপ থাকবেন। কেননা নবী করীম (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন,مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا، أَوْ لِيَصْمُتْ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে’।[12] অতিরিক্ত কথা-বার্তা থেকে আপনি বিরত থাকবেন। কেননা নবী (ﷺ) অতিরিক্ত কথা বলা থেকে সতর্ক করেছেন।[13]
বন্ধুকে সম্মান করুন এবং আপনার সাথে বন্ধুত্বের কারণে তাকে তার বিনিময় প্রদান করুন। কেননা আমার কাছে নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন,وَمَنْ آتَى إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فَادْعُوا لَهُ حَتَّى تَعْلَمُوا أَنْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ- ‘যে ব্যক্তি তোমাদের কোন উপকার করল, তোমরা তাকে উত্তম বিনিময় প্রদান কর। সক্ষম না হ’লে অন্ততঃপক্ষে তার জন্য দো‘আ কর। যাতে সে বুঝতে পারে যে, তোমরা তাকে উপযুক্ত উপঢৌকন প্রদান করেছ’।[14]
আপনি অবশ্যই অপরের সাথে রাগ করা থেকে বিরত থাকবেন। এ মর্মে আমার কাছে হাদীস পৌঁছেছে যে, জনৈক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! অল্পকথায় আমাকে অছিয়ত করুন। যাতে আমি তা স্মরণে রাখতে পারি। তিনি বললেন, لاَ تَغْضَبْ ‘তুমি রাগ করো না’।[15]
যেকোন ভাল কাজের নির্দেশ দানের পূর্বেই আপনি নিজে তার প্রতি আমল করবেন এবং কোন অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করার পূর্বেই নিজে তা পরিত্যাগ করবেন। সকল অসার কাজকে পরিহার করুন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন,مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ ‘কোন ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হ’ল, অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা’।[16]
আপনার সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে আপনি সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। যে আপনার প্রতি যুলুম করেছে তাকে ক্ষমা করুন এবং যে ব্যক্তি আপনাকে বঞ্চিত করেছে তাকে প্রদান করুন।
আপনি অতিরিক্ত হাসি-তামাশা থেকে বিরত থাকুন। কেননা এটা বোকামীর দিকে আহবান করে ও চেহারার উজ্জ্বলতা ও মুমিনের দীপ্তিকে নষ্ট করে। এ মর্মে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে,كَانَ ضَحِكُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم- إِلاَّ تَبَسُّمًا- ‘নবী (ﷺ) মুচকি হাসতেন’।[17]
আপনার ব্যক্তিত্বকে নিন্দনীয় করবে, এমন বিষয়ে রসিকতা করবেন না। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন,إِنِّي لَأَمْزَحُ، وَلاَ أَقُولُ إِلاَّ حَقًّا ‘আমি রসিকতা করি। তবে সত্য বৈ বলি না’।[18]
যাকে আপনি নিষেধ করেছেন, আপনি তার বিরুদ্ধাচরণ করবেন না। সংক্ষেপে কথা বলুন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন ‘একমাত্র এ জিহবার অনিষ্টের কারণেই মানুষদেরকে অধোমুখী করে জাহান্নামের হুতাশনে নিক্ষেপ করা হবে’।[19]
অহংকারবশতঃ আপনি মানুষকে অবজ্ঞা করবেন না। তাদের জন্য আপনার বিনয়ের বাহুকে অবনমিত রাখবেন। কেননা আমার নিকট রাসূল (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন,حُرِّمَ عَلَى النَّارِ كُلُّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ سَهْلٍ قَرِيبٍ مِنَ النَّاسِ ‘প্রত্যেক নম্র-ভদ্র, সহজ-সরল, বিপদে মানুষের পাশে
দাঁড়ানো ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম করা হয়েছে।[20]
প্রকাশ্যে যে আমলগুলো করা আপনার জন্য শোভনীয় নয় তা গোপনে করার জন্য রেখে দিন। আপনি এমন সব কর্মকান্ড থেকে বেঁচে থাকুন, যাতে আপনার দুনিয়া ও দ্বীনদারীর ব্যাপারে অপবাদ আরোপ করার ভয় করেন।
আপনার যাবতীয় প্রয়োজনের কথা মানুষের নিকট পেশ করা কমিয়ে দিন। কেননা এটা হ’ল হীনকর ও অপমানজনক কাজ। আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, لاَ تَسْأَلِ النَّاسَ شَيْئاً ‘তুমি মানুষের নিকট থেকে কিছুই চেয়ো না’।[21]
আপনার বাড়ী অথবা মসজিদ যেন আপনার মজলিস হয়। আপনি যরূরী প্রয়োজন ব্যতীত বাড়ী থেকে বের হবেন না। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেছেন,ست مجالس المؤمن ضامن على الله تعالى ما كان في شيء منها في مسجد جماعة وعند مريض أو في جنازة أو في بيته أو عند إمام مقسط يعزره ويوقره أو في مشهد جهاد ‘ছয় শ্রেণীর বৈঠকে মুমিন আল্লাহর যিম্মাদারীতে থাকে। (১) মসজিদে জামা‘আতের মজলিসে (২) রোগীর সেবায় (৩) জানাযায় (৪) নিজ গৃহে (৫) ন্যায়নিষ্ঠ শাসকের নিকটে, যে তাকে সদুপদেশ দেয় ও সম্মান করে (৬) জিহাদের ময়দানে।[22]
আপনি আপনার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করুন। কেননা এটা আপনার প্রতিপালকের সন্তুষ্টি[23] ও আপনার পরিবারের ভালবাসা অর্জনের কারণ, সম্পদ বৃদ্ধির উপায় এবং আপনার দীর্ঘায়ু লাভ করার পন্থা। কেননা আমার নিকটে বিজ্ঞ কতিপয় সাহাবীর হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) উক্ত কথাগুলো বলেছেন।[24]
সাধারণ মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলুন। মানুষকে গালি দেওয়া ও তাদের গীবত করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلاَ تَجَسَّسُوا وَلاَ يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পসন্দ করবে? তোমরা তা অপসন্দই করে থাক। আর তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু’ (হুজুরাত ৪৯/১২)।
অশ্লীলতা থেকে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ফাসেক ব্যক্তিদের মজলিসে বসা ও নীচু স্বভাবের মানুষের সাথে কথা বলা থেকে সতর্ক থাকবেন। নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) বলেছেন,الْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতির উপর হয়ে থাকে। অতএব দেখ সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে’।[25]
আপনি ইয়াতীমদের প্রতি দয়া-অনুকম্পা ও সম্মান প্রদর্শন করুন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন, أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ وَلِغَيْرِهِ كَهَاتَيْنِ فِى الْجَنَّةِ ‘আমি ও ইয়াতীমের অভিভাবক, তার বা অন্যের, জান্নাতে পাশাপাশি থাকব এই দু’টি আঙ্গুলের মত। এসময় তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলী দু’টি পাশাপাশি রেখে ইশারা করেন।[26]
আপনি মুসাফিরের হককে যথাযথভাবে আদায় করুন এবং এ বিষয়ে আল্লাহর অছিয়তকে হেফাযত করুন। কেননা আমার নিকট একথা পৌঁছেছে যে, সর্বপ্রথম যিনি মেহমানদের মেহমানদারী করেন, তিনি হলেন ইবরাহীম (আঃ)।[27]
মাযলূমকে সাধ্যমত সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করুন। যালেমের হাত চেপে ধরে যুলুম থেকে তাকে বাধা প্রদান করুন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন,مَنْ مَشَى مع مظلومٍ حتى يُثَبِّتَ له حقَّه ثَبَّتَ الله قدمَه يومَ تَزولُ الأقدامُ ‘যে ব্যক্তি মাযলূমের অধিকার আদায়ের নিমিত্তে তার সাথে চলবে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাকে দৃঢ়পদ রাখবেন, যেদিন পদসমূহ পিছলে যাবে’।[28]
আপনি প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সত্যকে পরিত্যাগ করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা আমার নিকট আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন,إِنَّمَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ اثْنَتَيْنِ: طُولَ الْأَمَلِ، وَاتِّبَاعَ الْهَوَى، فَإِنَّ طُولَ الْأَمَلِ يُنْسِي الْآخِرَةَ، وَإِنَّ اتِّبَاعَ الْهَوَى يَصُدُّ عَنِ الْحَقِّ- ‘আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিসের ভয় করি। এক. দীর্ঘ আকাংখা, দুই. কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ। কেননা দীর্ঘ আকাংখা পরকালকে ভুলিয়ে দেয়। আর কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ মানুষকে সত্য পথ থেকে বিরত রাখে’।[29]
আপনি স্বউদ্যোগী হয়ে মানুষের প্রতি ন্যায়বিচার করুন এবং অপরের সম্পদ বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা করবেন না। আল্লাহর হারামকৃত বিষয় থেকে আপনি আপনার দৃষ্টিকে সংযত রাখুন। কেননা আমার নিকট রাসূল (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি আলী (রাঃ)-কে বলেন,لاَ تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ- ‘চোখের উপর চোখ পড়ে গেলে তুমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকো না। কেননা প্রথম দৃষ্টি তোমার, দ্বিতীয় দৃষ্টি তোমার নয় (বরং শয়তানের)’।[30]
আপনি হারাম ভক্ষণ ও হারাম পোষাক পরিধান থেকে বেঁচে থাকুন। কেননা এগুলোর স্বাদ শেষ হয়ে যাবে এবং মন্দ পরিণতি বাকী থাকবে। আর আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের তাই নির্দেশ দিয়েছেন, যা তাঁর রাসূলগণকে শিক্ষা দিয়েছিলেন । মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ- ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত হ’তে আহার কর এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, সব বিষয়ে আমি অবগত’ (মুমিনূন ২৩/৫১)। আর আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন,مَنْ أَكَلَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ أَكْلَةً فَإِنَّ اللهَ يُطْعِمُهُ مِثْلَهَا مِنْ جَهَنَّمَ وَمَنْ كُسِىَ ثَوْبًا بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ فَإِنَّ اللهَ يَكْسُوهُ مِثْلَهُ مِنْ
جَهَنَّمَ وَمَنْ قَامَ بِرَجُلٍ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ فَإِنَّ اللهَ يَقُومُ بِهِ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-‘যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করার মাধ্যমে কোন লোকমা ভক্ষণ করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সে ব্যক্তিকে ঐ পরিমাণ লোকমা জাহান্নাম হ’তে ভক্ষণ করাবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করার মাধ্যমে (অপমানের) পোষাক পরিধান করবে, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের বস্ত্র পরিধান করাবেন। আর যে নিজেকে শ্রুতি ও রিয়ার স্থানে উপনীত করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে এ ধরনের অপমানজনক স্থানে দাঁড় করাবেন’।[31]
যে ব্যক্তি আপনার নিকট ওযর পেশ করেছে এবং আপনার অপসন্দনীয় বিষয় থেকে ফিরে এসেছে আপনি তার ওযর গ্রহণ করুন। আপনি যাদের সাথে মিশেন, তাদের চাইতে আপনার হাত (দাতার হাত) উপরে রাখবেন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন, الْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى ‘দাতার হাত গ্রহীতার হাত অপেক্ষা উত্তম’।[32] (সূত্র : আহমাদ যাকী ছাফওয়াত, জামহারাতু রাসাইলিল ‘আরাব ৪/৪০৩-৪০৯)।
এটি কেবল চিঠিটির একাংশ
পর সমাচার এই যে, আমি আপনার নিকট এমন একটি পত্র লিখছি, যাতে হেদায়াত বা উপদেশমূলক তেমন কোন কথা লিখতে পারিনি। তাই এর দ্বারা আপনি মনে করবেন না যে, একমাত্র এতেই হেদায়াত রয়েছে।
যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যেহেতু এটা রাসূল (ﷺ) থেকে অনুসৃত শিষ্টাচার স্বরূপ। সুতরাং এ পত্রটিকে আপনি আপনার জ্ঞান দ্বারা অনুধাবন করবেন, বারবার এটি পাঠ করবেন এবং এর প্রতি মনোযোগী হবেন। অতঃপর হৃদয় দিয়ে তা অনুধাবন করবেন। আর এ পত্রটি পাঠ করার সময় আপনি যেন অমনোযোগী না হন। কেননা এতে আছে দুনিয়াবী কল্যাণ ও পরকালে আল্লাহর উত্তম প্রতিদান। মহান আল্লাহর নিকট আমার ও আপনার জন্য তাওফীক কামনা করছি।
আপনি আপনার নফসকে মৃত্যুর যন্ত্রণা ও তার বিপদাপদের কথা স্মরণ করিয়ে দিন। আর স্মরণ করুন সেদিনের কথা, মৃত্যুর পর যেদিন আপনি আপনার প্রভুর সম্মুখে হাশরের ময়দানে দন্ডায়মান হবেন। অতঃপর হিসাব নেয়া হবে এবং হিসাব-নিকাশের পর আপনার চিরস্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত হবে। যে কাজের মাধ্যমে ঐ দিনের দুর্বিষহ অবস্থা আপনার জন্য সহজ হবে তার জন্য আপনি প্রস্ত্ততি গ্রহণ করুন। আপনি যদি আল্লাহর লা‘নতপ্রাপ্তদেরকে এবং তাদের প্রতি আপতিত আযাবের ভয়াবহতা, তাদের প্রতি আল্লাহর কঠিন প্রতিশোধ দেখতেন এবং কুৎসিত চেহারা, দীর্ঘ চিন্তা ও জাহান্নামের নিম্নস্তরে উপুড় হয়ে তাদের ওলটপালট সহ জাহান্নামে তাদের আর্তচিৎকার ও হাহাকার যদি আপনি শুনতেন তাহ’লে পরকালের ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝতে পারতেন। সেদিন তারা কোনকিছু শুনতে পাবে না এবং দেখতেও পাবে না। তারা শুধু আফসোস ও ধ্বংস কামনা করবে। ঐসকল দুঃখ-কষ্টের চেয়ে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় কষ্টকর বিষয় হ’ল, মহান আল্লাহ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন। তাদের সকল আশা-আকাংখা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। দীর্ঘ দুঃখ-কষ্ট ও চিন্তার পর আল্লাহ তাদেরকে এই কথার মাধ্যমে জওয়াব দিবেন যে, قَالَ اخْسَئُوا فِيهَا وَلاَ تُكَلِّمُونِ ‘আল্লাহ বলবেন, এখানেই তোমরা ধিকৃত অবস্থায় পড়ে থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না’ (মুমিনূন ২৩/১০৮)।
দুনিয়ার এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নেই যার মাধ্যমে আপনি জাহান্নামের শাস্তি ও তার ভয়াবহতা থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা চাইবেন না। যদি দুনিয়ার সকল মানুষের যাবতীয়
ধন-সম্পদকে আপনার নাজাতের জন্য পেশ করেন তবে তা নিতান্তই তুচ্ছ বলে গণ্য হবে।
যদি আপনি আল্লাহর আনুগত্যকারী ব্যক্তিদের ও তাদের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহ, আল্লাহর নৈকট্যের সাথে সাথে আল্লাহর নিকট তাদের মর্যাদা, উজ্জ্বল নূরানী চেহারা ও দেহ, স্থায়ী নে‘মতের কারণে তাদের আনন্দ, আল্লাহর নিকট তাদের ভাল অবস্থান ও তাদের প্রতি আল্লাহর সুদৃষ্টি যদি আপনি দেখতেন, তাহ’লে দুনিয়ার বিষয়গুলো আপনার কাছে ছোট মনে হ’ত। অবশ্যই আপনার দৃষ্টিতে ঐ বড় বিষয়টিও নগণ্য মনে হ’ত, যে বড় বিষয়ের বিনিময়ে আল্লাহর নিকটে আপনি ছোট বিষয় কামনা করছেন। আর অবশ্যই আপনার দৃষ্টিতে ঐ বড় বিষয়টিও ছোট মনে হ’ত, যে বড় বিষয়ের বিনিময়ে দুনিয়াতে আপনি ছোট কিছু কামনা করছেন। অতএব বিভ্রান্ত না হয়ে আপনার প্রবৃত্তিকে সতর্ক করুন এবং বিপদ আসার পূর্বেই আপনি আন্তরিকভাবে তৎপর হৌন। তাহ’লে মৃত্যুকালীন যে বিপদ আসবে তাকে আপনি ভয় পাবেন না। আপনি আপনার প্রবৃত্তির সাথে ধীর-স্থিরভাবে বিতর্ক করুন, তাহ’লে আল্লাহর রহমতে আপনার নফসের জন্য যা উপকারী তা করতে বা যা ক্ষতিকর তা প্রতিহত করতে সক্ষম হবেন। মহান আল্লাহর হিসাব গ্রহণের পূ©র্বই কুচক্রসমূহকে আপনার আত্মা থেকে বিরত রাখুন, নতুবা আপনি তার থেকে অপসন্দনীয় বিষয় সমূহ প্রতিরোধ করতে এবং উপকারী কাজ করতে সক্ষম হবেন না। আর তখন আপনি আপনার নফসের জন্য কোন দলীল ও ওযর পেশ করতে পারবেন না। ফলে তার ক্ষতিকারিতা আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে।
আপনার ইবাদতের জন্য দিন ও রাতের একটি অংশ নির্ধারণ করুন। আপনি দিন-রাতে ১২ রাক‘আত নফল সালাত আদায় করবেন এবং প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতিহা সহ আপনার পসন্দ অনুযায়ী কুরআন তেলাওয়াত করবেন। ইচ্ছা করলে এগুলো এক সালামে আদায় করতে পারেন, অথবা পৃথক সালামে সালাতগুলো আদায় করবেন। কেননা আমার নিকট রাসূল (ﷺ) এর হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন, مَنْ صَلَّى اثْنَتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِى يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ بُنِىَ لَهُ بِهِنَّ بَيْتٌ فِى الْجَنَّةِ- ‘যে ব্যক্তি দিনে-রাতে ১২ রাক‘আত (নফল) সালাত আদায় করবে, মহান আল্লাহ জান্নাতে এর বিনিময়ে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করবেন’।[1] আপনি রাত্রি বেলায় কুরআনের কিছু অংশ দ্বারা ৮ রাক‘আত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করবেন। প্রতি রাক‘আতে এর হকগুলো আদায় করবেন। রুকূ-সিজদার হক আদায়ের জন্য যা যা প্রয়োজন, তা যথাযথভাবে আদায় করবেন। রাতের সালাত অবশ্যই দুই দুই রাক‘আত করে আদায় করবেন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি রাতে ৮ রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। এছাড়া ৩ রাক‘আত বিতর সালাত আদায় করতেন। প্রত্যেক ২ রাক‘আত পর তিনি সালাম ফিরাতেন’।[2]
প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ তিন দিন নফল ছিয়াম পালন করবেন। কেননা নবী করীম (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেছেন, ذَلِكَ صِيَامُ الدَّهْرِ ‘এটা সারা বছর ছিয়াম রাখার সমতুল্য’।[3]
যখন একবছর পূর্ণ হবে, তখন আপনারা পবিত্র মাল থেকে যাকাত আদায় করবেন। যাকাত ফরয হওয়ার পর আর কাল-বিলম্ব করবেন না। আল্লাহ যাকে যাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন, তাকেই প্রদান করবেন।
আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ- ‘ছাদাক্বাসমূহ কেবল (আট শ্রেণীর) লোকের জন্য। ফকীর, অভাবগ্রস্ত, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তি, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্য (যাদের পাথেয় হারিয়ে যায় বা শেষ হয়ে যায়)। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (তওবা ৯/৬০)।
আপনার পূত-পবিত্র সম্পদ দ্বারা পবিত্র হজ্জব্রত পালন করবেন। কেননা আল্লাহ পবিত্র মাল ভিন্ন কবুল করেন না।[4] আল্লাহ বলেন,وَاذْكُرُوا اللهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلاَ إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى- ‘আর তোমরা (মিনায়) গণিত দিনগুলিতে আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যে ব্যক্তি ব্যস্ততা বশে দু’দিনেই (মক্কায়) ফিরে আসে, তার জন্য কোন গোনাহ নেই। আর যে ব্যক্তি দেরী করে, তারও কোন গোনাহ নেই যে ব্যক্তি সংযম অবলম্বন করে’ (বাক্বারাহ ২/২০৩)। উভয় অবস্থাতেই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
আপনি আল্লাহর আনুগত্যের আদেশ করবেন এবং তাঁর উদ্দেশ্যেই কাউকে ভালবাসবেন। আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে সর্বদা দূরে থাকবেন। তাঁর উদ্দেশ্যেই কাউকে ঘৃণা করবেন।
আল্লাহ যাদেরকে আপনার অধীনস্ত করে দিয়েছেন, তাদের প্রতি সদাচরণ করুন[5] এবং তাদের উপর আপনার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
যাকে শিষ্টাচার শিক্ষা দান এবং যার সকল কাজের দেখাশুনা করা আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য, আপনি তাকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিন। কেননা রাসূল (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি ফযল ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলেছেন,لاَ تَرْفَعِ الْعَصَا عَنْ أَهْلِكَ، وَأَخِفْهُمْ فِي اللهِ عَزَّ وَجَلَّ- ‘তোমার পরিবার থেকে শিষ্টাচারের লাঠিকে উঠিয়ে নিও না, তাদেরকে আল্লাহর ভয় দেখাও’।[6] মানুষের নিকট আত্মসমর্পণ করবেন না। বরং তাদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি দিকনির্দেশনা প্রদান করবেন।
আপনি মানুষকে ছোট মনে করবেন না। তাদের জন্য আপনার অনুগ্রহের ডানা বিছিয়ে দিন। কেননা নবী করীম (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর নবী নূহ (আঃ) মৃত্যুকালে স্বীয় পুত্রকে অছিয়ত করে বলেন, আমি একটি অছিয়তের মাধ্যমে তোমাকে দু’টি বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি ও দু’টি বিষয়ে নিষেধ করে যাচ্ছি। নির্দেশ হ’ল তুমি বলবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। কেননা আসমান ও যমীনের সবকিছু যদি এক পাল্লায় রাখা হয় এবং এটিকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয়, তাহ’লে এটিই ভারী সাব্যস্ত হবে। সাত আসমান ও সাত যমীন যদি একটি জটিল গ্রন্থির রূপ ধারণ করে তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ তা ভেঙ্গে দিবে। কেননা এটি সকল বস্ত্তর তাসবীহ ও সালাত এবং এর মাধ্যমেই সকল সৃষ্টিকে রূযী দেওয়া হয়।
আর আমি তোমাকে নিষেধ করে যাচ্ছি দু’টি বস্ত্ত থেকে : শিরক ও অহংকার। বলা হ’ল বা বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আললাহর রাসূল! শিরক তো আমরা বুঝলাম। কিন্তু অহংকার কী? আমাদের কারো যদি সুন্দর পোষাক থাকে আর সে তা পরিধান করে। তবে এতে কী অহংকার হবে? তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহলে আমাদের কোন ব্যক্তির যদি এক জোড়া সুন্দর জুতা থাকে এবং এর দু’টি সুন্দর ফিতা থাকে। তা কী অহংকারের আওতায় পড়বে? তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহলে আমাদের কোন ব্যক্তির যদি একটি বাহন জন্তু থাকে যার উপর সে আরোহণ করে। তাতে কী অহংকার হবে? তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহলে আমাদের কারো বন্ধু-বান্ধব রয়েছে যাদের সাথে সে ওঠা-বসা করে? এতে কী অহংকার হবে? তিনি বললেন, না। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তাহলে অহংকার কী?। তিনি বললেন, অহংকার হ’ল, سفه الحق و غمص الناس সত্যকে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে হেয় জ্ঞান করা’।[7]
গর্ব ও অহংকার থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা মহান আল্লাহ এই দু’টি বস্ত্তকে ভালবাসেন না। জনৈক বিদ্বান থেকে আমার নিকট একটি হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি (ﷺ) বলেন,يُحْشَرُ الْمُتَكَبِّرُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَمْثَالَ الذَّرِّ فِى صُوَرِ الرِّجَالِ يَغْشَاهُمُ الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ... ‘ক্বিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে ক্ষুদ্র পিপড়ার ন্যায় মানুষের রূপে সমবেত করা হবে। তাদেরকে চারদিক হতে অপমান ও লাঞ্ছনা ছেয়ে ফেলবে।..[8]
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে না, তার কাছে আপনার কোন বিষয়কেই নিরাপদ মনে করবেন না। কেননা আমার নিকট ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বাণী পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন, وَشَاوِرْ فِي أَمْرِكَ الَّذِينَ يَخَافُونَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ ‘যে কোন কাজের ব্যাপারে আপনি মুত্তাক্বীদের সাথে পরামর্শ করবেন’।[9] অসৎ সঙ্গী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের থেকে আপনি সতর্ক থাকবেন। কেননা নবী করীম (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন,مَا مِنْ نَبِيٍّ وَلاَ خَلِيفَةٍ أَوْ قَالَ مَا مِنْ نَبِيٍّ إِلاَّ وَلَهُ بِطَانَتَانِ بِطَانَةٌ تَأْمُرُهُ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَاهُ عَنْ الْمُنْكَرِ وَبِطَانَةٌ لاَ تَأْلُوهُ خَبَالاً وَمَنْ وُقِيَ شَرَّ بِطَانَةِ السُّوءِ فَقَدْ وُقِيَ- ‘নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিটি নবী ও খলীফাকেই দু’জন করে সাথী দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। তন্মধ্যে একজন তাঁকে ভাল কাজের নির্দেশ দেয় ও খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করে এবং অন্যজন তাঁর সর্বনাশ করতে বিন্দুমাত্রও ত্রুটি করে না। সুতরাং যে ব্যক্তি মন্দ সাথীর কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে পারল, সে নিরাপদ থাকল’।[10] সুতরাং মুত্তাক্বী ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবেন এবং মেহমানকে সম্মান করবেন। কেননা মেহমানকে সম্মান করা আপনার নৈতিক দায়িত্ব।
সৎ কাজের মাধ্যমে আপনারা প্রতিবেশীর হক আদায় করবেন। তাদেরকে কষ্ট দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন। কেননা নবী করীম (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন, مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান প্রদর্শন করে’।[11]
ভাল কথা বলবেন, অন্যথা চুপ থাকবেন। কেননা নবী করীম (ﷺ) থেকে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন,مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا، أَوْ لِيَصْمُتْ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে’।[12] অতিরিক্ত কথা-বার্তা থেকে আপনি বিরত থাকবেন। কেননা নবী (ﷺ) অতিরিক্ত কথা বলা থেকে সতর্ক করেছেন।[13]
বন্ধুকে সম্মান করুন এবং আপনার সাথে বন্ধুত্বের কারণে তাকে তার বিনিময় প্রদান করুন। কেননা আমার কাছে নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন,وَمَنْ آتَى إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فَادْعُوا لَهُ حَتَّى تَعْلَمُوا أَنْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ- ‘যে ব্যক্তি তোমাদের কোন উপকার করল, তোমরা তাকে উত্তম বিনিময় প্রদান কর। সক্ষম না হ’লে অন্ততঃপক্ষে তার জন্য দো‘আ কর। যাতে সে বুঝতে পারে যে, তোমরা তাকে উপযুক্ত উপঢৌকন প্রদান করেছ’।[14]
আপনি অবশ্যই অপরের সাথে রাগ করা থেকে বিরত থাকবেন। এ মর্মে আমার কাছে হাদীস পৌঁছেছে যে, জনৈক ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! অল্পকথায় আমাকে অছিয়ত করুন। যাতে আমি তা স্মরণে রাখতে পারি। তিনি বললেন, لاَ تَغْضَبْ ‘তুমি রাগ করো না’।[15]
যেকোন ভাল কাজের নির্দেশ দানের পূর্বেই আপনি নিজে তার প্রতি আমল করবেন এবং কোন অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করার পূর্বেই নিজে তা পরিত্যাগ করবেন। সকল অসার কাজকে পরিহার করুন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন,مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ ‘কোন ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হ’ল, অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা’।[16]
আপনার সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে আপনি সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। যে আপনার প্রতি যুলুম করেছে তাকে ক্ষমা করুন এবং যে ব্যক্তি আপনাকে বঞ্চিত করেছে তাকে প্রদান করুন।
আপনি অতিরিক্ত হাসি-তামাশা থেকে বিরত থাকুন। কেননা এটা বোকামীর দিকে আহবান করে ও চেহারার উজ্জ্বলতা ও মুমিনের দীপ্তিকে নষ্ট করে। এ মর্মে আমার নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে,كَانَ ضَحِكُ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم- إِلاَّ تَبَسُّمًا- ‘নবী (ﷺ) মুচকি হাসতেন’।[17]
আপনার ব্যক্তিত্বকে নিন্দনীয় করবে, এমন বিষয়ে রসিকতা করবেন না। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেন,إِنِّي لَأَمْزَحُ، وَلاَ أَقُولُ إِلاَّ حَقًّا ‘আমি রসিকতা করি। তবে সত্য বৈ বলি না’।[18]
যাকে আপনি নিষেধ করেছেন, আপনি তার বিরুদ্ধাচরণ করবেন না। সংক্ষেপে কথা বলুন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন ‘একমাত্র এ জিহবার অনিষ্টের কারণেই মানুষদেরকে অধোমুখী করে জাহান্নামের হুতাশনে নিক্ষেপ করা হবে’।[19]
অহংকারবশতঃ আপনি মানুষকে অবজ্ঞা করবেন না। তাদের জন্য আপনার বিনয়ের বাহুকে অবনমিত রাখবেন। কেননা আমার নিকট রাসূল (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন,حُرِّمَ عَلَى النَّارِ كُلُّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ سَهْلٍ قَرِيبٍ مِنَ النَّاسِ ‘প্রত্যেক নম্র-ভদ্র, সহজ-সরল, বিপদে মানুষের পাশে
দাঁড়ানো ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম করা হয়েছে।[20]
প্রকাশ্যে যে আমলগুলো করা আপনার জন্য শোভনীয় নয় তা গোপনে করার জন্য রেখে দিন। আপনি এমন সব কর্মকান্ড থেকে বেঁচে থাকুন, যাতে আপনার দুনিয়া ও দ্বীনদারীর ব্যাপারে অপবাদ আরোপ করার ভয় করেন।
আপনার যাবতীয় প্রয়োজনের কথা মানুষের নিকট পেশ করা কমিয়ে দিন। কেননা এটা হ’ল হীনকর ও অপমানজনক কাজ। আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, لاَ تَسْأَلِ النَّاسَ شَيْئاً ‘তুমি মানুষের নিকট থেকে কিছুই চেয়ো না’।[21]
আপনার বাড়ী অথবা মসজিদ যেন আপনার মজলিস হয়। আপনি যরূরী প্রয়োজন ব্যতীত বাড়ী থেকে বের হবেন না। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, তিনি বলেছেন,ست مجالس المؤمن ضامن على الله تعالى ما كان في شيء منها في مسجد جماعة وعند مريض أو في جنازة أو في بيته أو عند إمام مقسط يعزره ويوقره أو في مشهد جهاد ‘ছয় শ্রেণীর বৈঠকে মুমিন আল্লাহর যিম্মাদারীতে থাকে। (১) মসজিদে জামা‘আতের মজলিসে (২) রোগীর সেবায় (৩) জানাযায় (৪) নিজ গৃহে (৫) ন্যায়নিষ্ঠ শাসকের নিকটে, যে তাকে সদুপদেশ দেয় ও সম্মান করে (৬) জিহাদের ময়দানে।[22]
আপনি আপনার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করুন। কেননা এটা আপনার প্রতিপালকের সন্তুষ্টি[23] ও আপনার পরিবারের ভালবাসা অর্জনের কারণ, সম্পদ বৃদ্ধির উপায় এবং আপনার দীর্ঘায়ু লাভ করার পন্থা। কেননা আমার নিকটে বিজ্ঞ কতিপয় সাহাবীর হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) উক্ত কথাগুলো বলেছেন।[24]
সাধারণ মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলুন। মানুষকে গালি দেওয়া ও তাদের গীবত করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلاَ تَجَسَّسُوا وَلاَ يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পসন্দ করবে? তোমরা তা অপসন্দই করে থাক। আর তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ অধিক তওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু’ (হুজুরাত ৪৯/১২)।
অশ্লীলতা থেকে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ফাসেক ব্যক্তিদের মজলিসে বসা ও নীচু স্বভাবের মানুষের সাথে কথা বলা থেকে সতর্ক থাকবেন। নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) বলেছেন,الْمَرْءُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ فَلْيَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতির উপর হয়ে থাকে। অতএব দেখ সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে’।[25]
আপনি ইয়াতীমদের প্রতি দয়া-অনুকম্পা ও সম্মান প্রদর্শন করুন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন, أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ وَلِغَيْرِهِ كَهَاتَيْنِ فِى الْجَنَّةِ ‘আমি ও ইয়াতীমের অভিভাবক, তার বা অন্যের, জান্নাতে পাশাপাশি থাকব এই দু’টি আঙ্গুলের মত। এসময় তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলী দু’টি পাশাপাশি রেখে ইশারা করেন।[26]
আপনি মুসাফিরের হককে যথাযথভাবে আদায় করুন এবং এ বিষয়ে আল্লাহর অছিয়তকে হেফাযত করুন। কেননা আমার নিকট একথা পৌঁছেছে যে, সর্বপ্রথম যিনি মেহমানদের মেহমানদারী করেন, তিনি হলেন ইবরাহীম (আঃ)।[27]
মাযলূমকে সাধ্যমত সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করুন। যালেমের হাত চেপে ধরে যুলুম থেকে তাকে বাধা প্রদান করুন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন,مَنْ مَشَى مع مظلومٍ حتى يُثَبِّتَ له حقَّه ثَبَّتَ الله قدمَه يومَ تَزولُ الأقدامُ ‘যে ব্যক্তি মাযলূমের অধিকার আদায়ের নিমিত্তে তার সাথে চলবে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাকে দৃঢ়পদ রাখবেন, যেদিন পদসমূহ পিছলে যাবে’।[28]
আপনি প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সত্যকে পরিত্যাগ করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা আমার নিকট আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন,إِنَّمَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ اثْنَتَيْنِ: طُولَ الْأَمَلِ، وَاتِّبَاعَ الْهَوَى، فَإِنَّ طُولَ الْأَمَلِ يُنْسِي الْآخِرَةَ، وَإِنَّ اتِّبَاعَ الْهَوَى يَصُدُّ عَنِ الْحَقِّ- ‘আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিসের ভয় করি। এক. দীর্ঘ আকাংখা, দুই. কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ। কেননা দীর্ঘ আকাংখা পরকালকে ভুলিয়ে দেয়। আর কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ মানুষকে সত্য পথ থেকে বিরত রাখে’।[29]
আপনি স্বউদ্যোগী হয়ে মানুষের প্রতি ন্যায়বিচার করুন এবং অপরের সম্পদ বুঝিয়ে দিতে টালবাহানা করবেন না। আল্লাহর হারামকৃত বিষয় থেকে আপনি আপনার দৃষ্টিকে সংযত রাখুন। কেননা আমার নিকট রাসূল (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি আলী (রাঃ)-কে বলেন,لاَ تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ- ‘চোখের উপর চোখ পড়ে গেলে তুমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকো না। কেননা প্রথম দৃষ্টি তোমার, দ্বিতীয় দৃষ্টি তোমার নয় (বরং শয়তানের)’।[30]
আপনি হারাম ভক্ষণ ও হারাম পোষাক পরিধান থেকে বেঁচে থাকুন। কেননা এগুলোর স্বাদ শেষ হয়ে যাবে এবং মন্দ পরিণতি বাকী থাকবে। আর আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের তাই নির্দেশ দিয়েছেন, যা তাঁর রাসূলগণকে শিক্ষা দিয়েছিলেন । মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ- ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত হ’তে আহার কর এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, সব বিষয়ে আমি অবগত’ (মুমিনূন ২৩/৫১)। আর আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন,مَنْ أَكَلَ بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ أَكْلَةً فَإِنَّ اللهَ يُطْعِمُهُ مِثْلَهَا مِنْ جَهَنَّمَ وَمَنْ كُسِىَ ثَوْبًا بِرَجُلٍ مُسْلِمٍ فَإِنَّ اللهَ يَكْسُوهُ مِثْلَهُ مِنْ
جَهَنَّمَ وَمَنْ قَامَ بِرَجُلٍ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ فَإِنَّ اللهَ يَقُومُ بِهِ مَقَامَ سُمْعَةٍ وَرِيَاءٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ-‘যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করার মাধ্যমে কোন লোকমা ভক্ষণ করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সে ব্যক্তিকে ঐ পরিমাণ লোকমা জাহান্নাম হ’তে ভক্ষণ করাবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করার মাধ্যমে (অপমানের) পোষাক পরিধান করবে, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের বস্ত্র পরিধান করাবেন। আর যে নিজেকে শ্রুতি ও রিয়ার স্থানে উপনীত করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে এ ধরনের অপমানজনক স্থানে দাঁড় করাবেন’।[31]
যে ব্যক্তি আপনার নিকট ওযর পেশ করেছে এবং আপনার অপসন্দনীয় বিষয় থেকে ফিরে এসেছে আপনি তার ওযর গ্রহণ করুন। আপনি যাদের সাথে মিশেন, তাদের চাইতে আপনার হাত (দাতার হাত) উপরে রাখবেন। কেননা আমার নিকট নবী (ﷺ) থেকে হাদীস পৌঁছেছে যে, নিশ্চয় তিনি বলেন, الْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى ‘দাতার হাত গ্রহীতার হাত অপেক্ষা উত্তম’।[32] (সূত্র : আহমাদ যাকী ছাফওয়াত, জামহারাতু রাসাইলিল ‘আরাব ৪/৪০৩-৪০৯)।
এটি কেবল চিঠিটির একাংশ
- ইহসান ইলাহী যহীর।
[1]. মুসলিম হা/৭২৮; আবুদাঊদ হা/১২৫০।
[2]. বুখারী হা/১১৪৭; মুসলিম হা/৭৩৬-৩৮; মিশকাত হা/১১৮৮।
[3]. বুখারী হা/১৯৭৫; মুসলিম হা/১১৫৯।
[4]. মুসলিম হা/১০১৫; মিশকাত হা/২৭৬০।
[5]. বুখারী হা/৩০।
[6]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৮।
[7]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৪৮; আহমাদ হা/৬৫৮৩; ছহীহাহ হা/১৩৪।
[8]. তিরমিযী হা/২৪৯২, মিশকাত হা/৫১১২।
[9]. বায়হাক্বী, শো‘আব হা/৯৪৪২।
[10]. আহমাদ হা/৭৮৭৪; তিরমিযী হা/২৩৬৯।
[11]. বুখারী হা/৬০১৯; মুসলিম হা/৪৭; মিশকাত হা/৪২৪৩।
[12]. বুখারী হা/৬৪৭৫; মুসলিম হা/৪৭; মিশকাত হা/৪২৪৩।
[13]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৩০৮।
[14]. নাসাঈ হা/২৫৬৭; আবুদাঊদ হা/৫১০৯; মিশকাত হা/১৯৪৩।
[15]. আহমাদ হা/১৬০০৬; বুখারী হা/৬১১৬; মিশকাত হা/৫১০৪।
[16]. তিরমিযী হা/২৩১৮; মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৩৩৫২; মিশকাত হা/৪৮৩৯।
[17]. তিরমিযী হা/৩৬৪২; মিশকাত হা/৫৭৯৬।
[18]. মাজ‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩১০৬; ছহীহুল জামে‘ হা/২৪৯৪।
[19]. আহমাদ হা/২২১১৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪১২।
[20]. আহমাদ হা/৩৯৩৮, মিশকাত হা/৫০৮৪, ছহীহুল জামে‘ হা/৩১৩৫।
[21]. ইবনু মাজাহ হা/১৮৩৭, মিশকাত হা/১৮৫৪।
[22]. মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/২০৩৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩২৮।
[23]. মুসলিম হা/২৫৫৫।
[24]. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৮১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৬৮।
[25]. আহমাদ হা/৮০১৫; তিরমিযী হা/২৩৭৮; আবুদাঊদ হা/৪৮৩৩; মিশকাত হা/৫০১৯; ছহীহাহ হা/৯২৭।
[26]. বুখারী হা/৫৩০৪, ৬০০৫; আবুদাঊদ হা/৫১৫০ মিশকাত হা/৪৯৫২।
[27]. বায়হাক্বী, শো‘আব হা/৮৬৪১, ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪৫১, সনদ হাসান।
[28]. ছহীহ আত-তারগীব ২/৩৫৮, হাসান লিগায়রিহি।
[29]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৬৩৬; ফৎহুল বারী ১১/২৩৬।
[30]. তিরমিযী হা/২৭৭৭; আবুদাঊদ হা/২১৪৯; হাকেম হা/২৭৮৮; মিশকাত হা/৩১১০।
[31]. আবুদাঊদ হা/৪৮৮১; মিশকাত হা/৫০৪৭।
[32]. বুখারী হা/১৪২৯; মুসলিম হা/১০৩৩; মিশকাত হা/১৮৪৩।
[2]. বুখারী হা/১১৪৭; মুসলিম হা/৭৩৬-৩৮; মিশকাত হা/১১৮৮।
[3]. বুখারী হা/১৯৭৫; মুসলিম হা/১১৫৯।
[4]. মুসলিম হা/১০১৫; মিশকাত হা/২৭৬০।
[5]. বুখারী হা/৩০।
[6]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৮।
[7]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৫৪৮; আহমাদ হা/৬৫৮৩; ছহীহাহ হা/১৩৪।
[8]. তিরমিযী হা/২৪৯২, মিশকাত হা/৫১১২।
[9]. বায়হাক্বী, শো‘আব হা/৯৪৪২।
[10]. আহমাদ হা/৭৮৭৪; তিরমিযী হা/২৩৬৯।
[11]. বুখারী হা/৬০১৯; মুসলিম হা/৪৭; মিশকাত হা/৪২৪৩।
[12]. বুখারী হা/৬৪৭৫; মুসলিম হা/৪৭; মিশকাত হা/৪২৪৩।
[13]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১৩০৮।
[14]. নাসাঈ হা/২৫৬৭; আবুদাঊদ হা/৫১০৯; মিশকাত হা/১৯৪৩।
[15]. আহমাদ হা/১৬০০৬; বুখারী হা/৬১১৬; মিশকাত হা/৫১০৪।
[16]. তিরমিযী হা/২৩১৮; মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৩৩৫২; মিশকাত হা/৪৮৩৯।
[17]. তিরমিযী হা/৩৬৪২; মিশকাত হা/৫৭৯৬।
[18]. মাজ‘উয যাওয়ায়েদ হা/১৩১০৬; ছহীহুল জামে‘ হা/২৪৯৪।
[19]. আহমাদ হা/২২১১৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪১২।
[20]. আহমাদ হা/৩৯৩৮, মিশকাত হা/৫০৮৪, ছহীহুল জামে‘ হা/৩১৩৫।
[21]. ইবনু মাজাহ হা/১৮৩৭, মিশকাত হা/১৮৫৪।
[22]. মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/২০৩৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩২৮।
[23]. মুসলিম হা/২৫৫৫।
[24]. মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৮১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৬৮।
[25]. আহমাদ হা/৮০১৫; তিরমিযী হা/২৩৭৮; আবুদাঊদ হা/৪৮৩৩; মিশকাত হা/৫০১৯; ছহীহাহ হা/৯২৭।
[26]. বুখারী হা/৫৩০৪, ৬০০৫; আবুদাঊদ হা/৫১৫০ মিশকাত হা/৪৯৫২।
[27]. বায়হাক্বী, শো‘আব হা/৮৬৪১, ছহীহুল জামে‘ হা/৪৪৫১, সনদ হাসান।
[28]. ছহীহ আত-তারগীব ২/৩৫৮, হাসান লিগায়রিহি।
[29]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫৬৩৬; ফৎহুল বারী ১১/২৩৬।
[30]. তিরমিযী হা/২৭৭৭; আবুদাঊদ হা/২১৪৯; হাকেম হা/২৭৮৮; মিশকাত হা/৩১১০।
[31]. আবুদাঊদ হা/৪৮৮১; মিশকাত হা/৫০৪৭।
[32]. বুখারী হা/১৪২৯; মুসলিম হা/১০৩৩; মিশকাত হা/১৮৪৩।