উওর দিয়েছেন- ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোনো কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু তুলে নেয় সে যেন তার ওপর দুইজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রাখে, তারপর সে যেন তা গোপন না করে, পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করে, তারপর যদি তার মালিক আসে, তবে সে সেটার অধিকারী। আর যদি মালিক না আসে, তবে সেটা আল্লাহর সম্পদ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।’ (ইবনে হিব্বান : ৪৮৯৪)।
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে কেউ কোনো পথহারা প্রাণীকে আশ্রয় দেবে, সে নিজেই ভ্রষ্ট লোক বলে বিবেচিত হবে, যতক্ষণ না সে তা প্রচার করে দেয়।’ (মুসলিম : ১৭২৫)।
ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়- ‘কুড়ানো বস্তু বলতে বোঝায়, এমন সম্পত্তি যা তার মালিক থেকে পড়ে গেছে, আর অন্য কেউ তা কুড়িয়ে নিয়েছে। অথবা এমন বস্তু যা কোনো ব্যক্তি পড়ে থাকতে দেখে কুড়িয়ে নিয়েছে এবং আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছে। (ফাতহুল কাদির)।
মৌলিকভাবে কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু চার ধরনের-
১. মালিকানাবিহীন অবস্থায় প্রাপ্ত কোনো বস্তু স্বর্ণ, রৌপ্য ও সামগ্রী।
২. কুড়িয়ে পাওয়া মানবসন্তান। যাকে সাধারণত কেউ খাওয়া-পরা দেয়ার ভয়ে কিংবা সন্দেহযুক্ত সন্তান হওয়ায় অপমানের ভয়ে কোথাও ফেলে গেছে, সেটা যে পাবে সে তাকে লালন-পালন করবে।
৩. চতুষ্পদ জন্তু, যেমন- উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি।
৪. খাদ্যজনিত বস্তু, যা রাস্তায় পাওয়া যাবে।
যে ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির মালামাল কুড়িয়ে পায় এবং মালিককে ফেরত দানের উদ্দেশ্যে নিজের তত্ত্বাবধানে রাখে তাহলে উদ্ধারকারীর ওপর নিম্নোক্ত দায়িত্বগুলো আরোপিত হবে-
১. উদ্ধারকারীর দায়িত্ব হচ্ছে প্রকৃত মালিকের কাছে কুড়ানো বস্তু পৌঁছে দেয়ার জন্য যথোপযুক্ত সময় পর্যন্ত ঘোষণা দিতে থাকা।
২. প্রাপ্ত দ্রব্য সম্পর্কে যথোপযুক্ত যতœ গ্রহণ করা উদ্ধারকারীর কর্তব্য। অবশ্য যুক্তিসঙ্গত যতœ নেয়ার পরও দ্রব্যের কোনো ক্ষতি হলে এ জন্য তাকে দায়ী করা যাবে না।
৩. প্রাপ্ত বস্তু আমানত হিসেবে থাকবে যখন উদ্ধারকারী এ মর্মে সাক্ষী রাখবে যে, সে হেফাজত করা এবং মালিককে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তা উঠিয়ে নিচ্ছে।
৪. যদি বস্তুটির মূল্য কম হয় তাহলে কিছুদিন ঘোষণা দেবে। পক্ষান্তরে বেশি হলে এক বছর ঘোষণা দেবে। আর মালিককে খুঁজে পাওয়া না গেলে তা সদকা করে দেবে।
৫. উদ্ধারকারীর কখনোই উচিত নয় প্রাপ্ত দ্রব্য নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা। তবে যদি নিরুপায় হয় তাহলে সে শরিয়ত নির্ধারিত পন্থায় ব্যবহার করতে পারবে।
৬. নিজের অনুরূপ দ্রব্যের সঙ্গে কখনোই কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুর মিশ্রণ করা উদ্ধারকারীর উচিত নয়।
৭. উদ্ধারকারী যদি আদালতের নির্দেশ ছাড়া তার রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ ব্যয় করে তাহলে সে স্বেচ্ছাদানকারী হবে।
৮. প্রকৃত মালিককে পাওয়ার পর যুক্তিসঙ্গত পারিশ্রমিক প্রাপ্তিসাপেক্ষে ওই দ্রব্য প্রত্যর্পণ করাও উদ্ধারকারীর দায়িত্ব।
৯. কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের যদি কোনো বৃদ্ধি বা লাভ হয় তবে তাও প্রকৃত মালিককে প্রদান করতে হবে।
১০. কুড়ানো বস্তু বিক্রি করা হলে নিজ পাওনা বাদে অবশিষ্ট অর্থ প্রকৃত মালিককে দিতে হবে। (হেদায়া)।
যদি বস্তুটির মূল্য ১০ দিরহামের কম হয়, তাহলে কয়েকদিন ঘোষণা দেবে (এখানে কয়েক দিন অর্থ আদালত যে ক’দিন সমীচীন মনে করেন) অথবা ব্যক্তি তার বিবেক অনুসারে তা যথেষ্ট মনে করে। (দ্র. মারগিনানী, হিদায়া : ২/৪১৭।) পক্ষান্তরে ১০ দিরহাম বা তার বেশি হলে এক বছর ঘোষণা দেবে। তবে কুড়ানো বস্তু সংক্রান্ত ঘোষণাটি এমন স্থানে হতে হবে, যেখানে ঘোষণা দিলে তা মালিকের কাছে পৌঁছবে বলে সমূহ ধারণা হয়। বিশেষ করে যেখানে বস্তুটি কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে ঘোষণা দেয়া উত্তম। কারণ সাধারণত সম্পদ হারানোর পর সম্পদের মালিক সেখানেই খুঁজে থাকে, যেখানে সে তা হারায়। তারপর মানুষের সম্মিলনস্থলে যেমন- বাজার, মসজিদের দরজা; যখন মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হন, তবে মসজিদের ভেতরে ঘোষণা করা বৈধ নয়। কেননা মসজিদ ইবাদতের জন্য তৈরি হয়েছে; কুড়ানো বিষয়ের ঘোষণার জন্য নয়। আর যদি মরুভূমি বা বিস্তীর্ণ মাঠে কোনো বস্তু পাওয়া যায় তবে তা নিকটস্থ লোকালয়ে প্রচার ও ঘোষণা করতে হবে। (ইবনে কুদামা : আল মুগনি)।
যদি কুড়ানো বস্তু এমন প্রকৃতির হয় যে, মালিক তা খোঁজ করবে না, যেমন দানা বা ডালিমের খোসা (ঢ়ড়সবমৎধহধঃব ংশরহং), তাহলে তা ফেলে রেখে যাওয়া মুবাহ (যে কাজ ফরজ, হারাম, মানদুব এবং মাকরূহ নয়, তাকে মুবাহ বা বৈধ বলে)। এমনকি ঘোষণা করা ছাড়াই তা দ্বারা উপকৃত হওয়া বৈধ হবে।
গাড়িতে কারো কিছু পেলে কী করবেন?
গাড়ি এক্সিডেন্ট হলে বা লঞ্চ ডুবলে আমাদের দেশে সাধারণত যা ঘটে তা হলো, স্বার্থান্বেষী কিছু লোক এসে মানুষকে উদ্ধারের পরিবর্তে মানুষের মাল-সামানা কুড়াতে থাকে। গনীমতের মালের মতো সব কুড়িয়ে নিয়ে একদিকে কেটে পড়ে। এসব মানুষ গহনার লোভে এক্সিডেন্টের কারণে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত দুর্বল অসহায় মেয়েদের কান ছিড়তেও কুণ্ঠাবোধ করে না।
তাদের অনেকে আবার দরদি সেজে এগিয়ে আসে। মোবাইল, টাকা-পয়সা যা পায় সব হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে নিজে গ্রহণ করার নিয়তে এসব ধরাই হারাম।
এছাড়া গাড়ির যাত্রীরাও অনেক সময় গাড়িতে অনেক কিছু ফেলে যায়। কেউ ছাতা, কেউ বা ব্যাগ/বেনিটি ব্যাগ ভুলে রেখে যায়। আবার কখনো মানিব্যাগ, মোবাইল ইত্যাদিও গাড়িতে পড়ে যায়। তো এসবক্ষেত্রে মালিকের কাছে বা মালিকের গার্ডিয়ানের কাছে পৌঁছানোর নিয়তে এসব মাল উঠালে সেটা বৈধ হবে, এক্ষেত্রে বিষয়টা নির্ভরযোগ্য কাউকে জানিয়ে রাখবে যে আমি এই ধরণের এই পরিমান মাল পেয়েছি বা কুড়িয়েছি, যাতে কারো সন্দেহ অবশিষ্ট না থাকে।
যে কাউকে বিষয়টা খুলে বলবে না, এতে কোন ভুয়া দাবিদার মাল পর্যন্ত চলে আসতে পারে। এরপর এ মাল থেকে দায়মুক্ত হতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বনের প্রয়োজন হয়। যেমন, প্রথমেই ওই মালকে তার মালিকের নিকট পৌঁছানোর জন্য সার্বিক ব্যবস্থা নিতে হয়। এ উদ্দেশ্যে জিনিসটির মান অনুযায়ী মোটামোটি বা ব্যাপক ঘোষণার ব্যবস্থা করতে হয়। এ দায়িত্ব যে কুড়ালো সে নিজেও নিতে পারে, অথবা নির্ভরযোগ্য কাউকে দায়িত্ব দিয়েও এ কাজ করানো যায়। যেমন থানায় জিডি করে সব মাল তাদের দায়িত্বে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। অথবা যে কোচ থেকে মাল পাওয়া গেছে তাদের কেন্দ্রিয় কাউন্টারে তা জমা করে দিয়ে গণমাধ্যমে তাদের ঠিকানা প্রচার করে দিলে সহজেই উক্ত মাল তার মালিকের কাছে পৌঁছে যাবে।
মালের দায়িত্বশীল মালের মান অনুপাতে এক বছর অর্থাৎ ‘খাজনা অনুযায়ী বাজনা’ হিসেবে নিজের কাছে হেফাজত করবে। যদি কখনো এমন হয় যে কুড়ানো মাল হলো দ্রুত পঁচনশীল কোন জিনিস, যেমন ফল, ফলাদি তা মালিকের প্রতি সওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে গরীবকে দান করে দিবে। নিজে গরীব হলে নিজেও নিতে পারবে।
মালের সংরক্ষণ ও প্রচারণা খরচ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে করবে, এবং এ খরচ মালের মালিক বহন করবে। তাকে কখনো না পাওয়া গেলে উক্ত মাল বিক্রি করে প্রশাসন সংরক্ষণকারীর খরচ পরিশোধ করবে। আর যদি প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই এ মালের সংরক্ষণ ও প্রচারণা বাবদ খরচ করে থাকে তাহলে উক্ত খরচ তার নিজের পক্ষ থেকে মালিকের প্রতি দয়া হিসেবে বিবেচিত হবে, প্রশাসন থেকে বা ঐ মাল বিক্রি করে তার খরচ উদ্ধার করতে পারবে না।
এভাবে প্রচারণার পরও যদি মালিকের সন্ধান না মিলে তাহলে যেমনটি বলা হলো, মালিকের প্রতি সওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে গরীবকে দান করে দিবে। নিজে গরীব হলে নিজেও নিতে পারবে। তবে এভাবে দান করে দেওয়ার পরে যদি মালের মালিক এসে মাল তালাশ করে তাহলে তাকে দানের কথা বলে বুঝিয়ে দিবে। মানতে না চাইলে তাকে ক্ষতিপূরণ যতটুকু দিয়ে সম্ভব সন্তুষ্ট করতে হবে; প্রয়োজনে সম্পূর্ণ মালের বিনিময় আদায় করে হলেও। পূর্বের দান তখন নিজের পক্ষ থেকে বিবেচিত হবে। সূত্র : মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৪/১৬১, আল বাহরুর রায়েক ৫/২৬০
অন্যের গাছের নীচে পড়ে থাকা ফল অনুমতি না নিয়ে কুড়িয়ে খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ অনুমতি নিয়ে খাওয়া যাবে। অনুমতি দেওয়ার মতো কাউকে না পেলে, ক্ষুধা নিবৃত্ত হওয়া পর্যন্ত উক্ত ফল খাওয়া যাবে। কিন্তু বহন করে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন কোন ছাগপালের নিকট আসবে (তখন দুধ পানের উদ্দেশ্যে) তার মনিবের অনুমতি নিবে। যদি সেখানে কেউ না থাকে, তাহ’লে তিনবার আওয়ায দিবে। অতঃপর উত্তর পেলে তার নিকট থেকে অনুমতি নিবে। আর যদি কেউ উত্তর না দেয়, তাহলে দুধ দোহন করবে ও পান করবে। কিন্তু বহন করে নিয়ে যাবে না’ (আবুদাঊদ হা/২৬১৯; মিশকাত হা/২৯৫৩) ।
এর দ্বারা বুঝা যায় যে, ক্ষুধার্ত ব্যক্তি ক্ষুধা নিবারণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খেতে পারবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোনো কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু তুলে নেয় সে যেন তার ওপর দুইজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রাখে, তারপর সে যেন তা গোপন না করে, পরিবর্তন-পরিবর্ধন না করে, তারপর যদি তার মালিক আসে, তবে সে সেটার অধিকারী। আর যদি মালিক না আসে, তবে সেটা আল্লাহর সম্পদ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।’ (ইবনে হিব্বান : ৪৮৯৪)।
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে কেউ কোনো পথহারা প্রাণীকে আশ্রয় দেবে, সে নিজেই ভ্রষ্ট লোক বলে বিবেচিত হবে, যতক্ষণ না সে তা প্রচার করে দেয়।’ (মুসলিম : ১৭২৫)।
ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়- ‘কুড়ানো বস্তু বলতে বোঝায়, এমন সম্পত্তি যা তার মালিক থেকে পড়ে গেছে, আর অন্য কেউ তা কুড়িয়ে নিয়েছে। অথবা এমন বস্তু যা কোনো ব্যক্তি পড়ে থাকতে দেখে কুড়িয়ে নিয়েছে এবং আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছে। (ফাতহুল কাদির)।
মৌলিকভাবে কুড়িয়ে পাওয়া বস্তু চার ধরনের-
১. মালিকানাবিহীন অবস্থায় প্রাপ্ত কোনো বস্তু স্বর্ণ, রৌপ্য ও সামগ্রী।
২. কুড়িয়ে পাওয়া মানবসন্তান। যাকে সাধারণত কেউ খাওয়া-পরা দেয়ার ভয়ে কিংবা সন্দেহযুক্ত সন্তান হওয়ায় অপমানের ভয়ে কোথাও ফেলে গেছে, সেটা যে পাবে সে তাকে লালন-পালন করবে।
৩. চতুষ্পদ জন্তু, যেমন- উট, গরু, ছাগল ইত্যাদি।
৪. খাদ্যজনিত বস্তু, যা রাস্তায় পাওয়া যাবে।
যে ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির মালামাল কুড়িয়ে পায় এবং মালিককে ফেরত দানের উদ্দেশ্যে নিজের তত্ত্বাবধানে রাখে তাহলে উদ্ধারকারীর ওপর নিম্নোক্ত দায়িত্বগুলো আরোপিত হবে-
১. উদ্ধারকারীর দায়িত্ব হচ্ছে প্রকৃত মালিকের কাছে কুড়ানো বস্তু পৌঁছে দেয়ার জন্য যথোপযুক্ত সময় পর্যন্ত ঘোষণা দিতে থাকা।
২. প্রাপ্ত দ্রব্য সম্পর্কে যথোপযুক্ত যতœ গ্রহণ করা উদ্ধারকারীর কর্তব্য। অবশ্য যুক্তিসঙ্গত যতœ নেয়ার পরও দ্রব্যের কোনো ক্ষতি হলে এ জন্য তাকে দায়ী করা যাবে না।
৩. প্রাপ্ত বস্তু আমানত হিসেবে থাকবে যখন উদ্ধারকারী এ মর্মে সাক্ষী রাখবে যে, সে হেফাজত করা এবং মালিককে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তা উঠিয়ে নিচ্ছে।
৪. যদি বস্তুটির মূল্য কম হয় তাহলে কিছুদিন ঘোষণা দেবে। পক্ষান্তরে বেশি হলে এক বছর ঘোষণা দেবে। আর মালিককে খুঁজে পাওয়া না গেলে তা সদকা করে দেবে।
৫. উদ্ধারকারীর কখনোই উচিত নয় প্রাপ্ত দ্রব্য নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করা। তবে যদি নিরুপায় হয় তাহলে সে শরিয়ত নির্ধারিত পন্থায় ব্যবহার করতে পারবে।
৬. নিজের অনুরূপ দ্রব্যের সঙ্গে কখনোই কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুর মিশ্রণ করা উদ্ধারকারীর উচিত নয়।
৭. উদ্ধারকারী যদি আদালতের নির্দেশ ছাড়া তার রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ ব্যয় করে তাহলে সে স্বেচ্ছাদানকারী হবে।
৮. প্রকৃত মালিককে পাওয়ার পর যুক্তিসঙ্গত পারিশ্রমিক প্রাপ্তিসাপেক্ষে ওই দ্রব্য প্রত্যর্পণ করাও উদ্ধারকারীর দায়িত্ব।
৯. কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসের যদি কোনো বৃদ্ধি বা লাভ হয় তবে তাও প্রকৃত মালিককে প্রদান করতে হবে।
১০. কুড়ানো বস্তু বিক্রি করা হলে নিজ পাওনা বাদে অবশিষ্ট অর্থ প্রকৃত মালিককে দিতে হবে। (হেদায়া)।
যদি বস্তুটির মূল্য ১০ দিরহামের কম হয়, তাহলে কয়েকদিন ঘোষণা দেবে (এখানে কয়েক দিন অর্থ আদালত যে ক’দিন সমীচীন মনে করেন) অথবা ব্যক্তি তার বিবেক অনুসারে তা যথেষ্ট মনে করে। (দ্র. মারগিনানী, হিদায়া : ২/৪১৭।) পক্ষান্তরে ১০ দিরহাম বা তার বেশি হলে এক বছর ঘোষণা দেবে। তবে কুড়ানো বস্তু সংক্রান্ত ঘোষণাটি এমন স্থানে হতে হবে, যেখানে ঘোষণা দিলে তা মালিকের কাছে পৌঁছবে বলে সমূহ ধারণা হয়। বিশেষ করে যেখানে বস্তুটি কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে ঘোষণা দেয়া উত্তম। কারণ সাধারণত সম্পদ হারানোর পর সম্পদের মালিক সেখানেই খুঁজে থাকে, যেখানে সে তা হারায়। তারপর মানুষের সম্মিলনস্থলে যেমন- বাজার, মসজিদের দরজা; যখন মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বের হন, তবে মসজিদের ভেতরে ঘোষণা করা বৈধ নয়। কেননা মসজিদ ইবাদতের জন্য তৈরি হয়েছে; কুড়ানো বিষয়ের ঘোষণার জন্য নয়। আর যদি মরুভূমি বা বিস্তীর্ণ মাঠে কোনো বস্তু পাওয়া যায় তবে তা নিকটস্থ লোকালয়ে প্রচার ও ঘোষণা করতে হবে। (ইবনে কুদামা : আল মুগনি)।
যদি কুড়ানো বস্তু এমন প্রকৃতির হয় যে, মালিক তা খোঁজ করবে না, যেমন দানা বা ডালিমের খোসা (ঢ়ড়সবমৎধহধঃব ংশরহং), তাহলে তা ফেলে রেখে যাওয়া মুবাহ (যে কাজ ফরজ, হারাম, মানদুব এবং মাকরূহ নয়, তাকে মুবাহ বা বৈধ বলে)। এমনকি ঘোষণা করা ছাড়াই তা দ্বারা উপকৃত হওয়া বৈধ হবে।
গাড়িতে কারো কিছু পেলে কী করবেন?
গাড়ি এক্সিডেন্ট হলে বা লঞ্চ ডুবলে আমাদের দেশে সাধারণত যা ঘটে তা হলো, স্বার্থান্বেষী কিছু লোক এসে মানুষকে উদ্ধারের পরিবর্তে মানুষের মাল-সামানা কুড়াতে থাকে। গনীমতের মালের মতো সব কুড়িয়ে নিয়ে একদিকে কেটে পড়ে। এসব মানুষ গহনার লোভে এক্সিডেন্টের কারণে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত দুর্বল অসহায় মেয়েদের কান ছিড়তেও কুণ্ঠাবোধ করে না।
তাদের অনেকে আবার দরদি সেজে এগিয়ে আসে। মোবাইল, টাকা-পয়সা যা পায় সব হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে নিজে গ্রহণ করার নিয়তে এসব ধরাই হারাম।
এছাড়া গাড়ির যাত্রীরাও অনেক সময় গাড়িতে অনেক কিছু ফেলে যায়। কেউ ছাতা, কেউ বা ব্যাগ/বেনিটি ব্যাগ ভুলে রেখে যায়। আবার কখনো মানিব্যাগ, মোবাইল ইত্যাদিও গাড়িতে পড়ে যায়। তো এসবক্ষেত্রে মালিকের কাছে বা মালিকের গার্ডিয়ানের কাছে পৌঁছানোর নিয়তে এসব মাল উঠালে সেটা বৈধ হবে, এক্ষেত্রে বিষয়টা নির্ভরযোগ্য কাউকে জানিয়ে রাখবে যে আমি এই ধরণের এই পরিমান মাল পেয়েছি বা কুড়িয়েছি, যাতে কারো সন্দেহ অবশিষ্ট না থাকে।
যে কাউকে বিষয়টা খুলে বলবে না, এতে কোন ভুয়া দাবিদার মাল পর্যন্ত চলে আসতে পারে। এরপর এ মাল থেকে দায়মুক্ত হতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বনের প্রয়োজন হয়। যেমন, প্রথমেই ওই মালকে তার মালিকের নিকট পৌঁছানোর জন্য সার্বিক ব্যবস্থা নিতে হয়। এ উদ্দেশ্যে জিনিসটির মান অনুযায়ী মোটামোটি বা ব্যাপক ঘোষণার ব্যবস্থা করতে হয়। এ দায়িত্ব যে কুড়ালো সে নিজেও নিতে পারে, অথবা নির্ভরযোগ্য কাউকে দায়িত্ব দিয়েও এ কাজ করানো যায়। যেমন থানায় জিডি করে সব মাল তাদের দায়িত্বে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। অথবা যে কোচ থেকে মাল পাওয়া গেছে তাদের কেন্দ্রিয় কাউন্টারে তা জমা করে দিয়ে গণমাধ্যমে তাদের ঠিকানা প্রচার করে দিলে সহজেই উক্ত মাল তার মালিকের কাছে পৌঁছে যাবে।
মালের দায়িত্বশীল মালের মান অনুপাতে এক বছর অর্থাৎ ‘খাজনা অনুযায়ী বাজনা’ হিসেবে নিজের কাছে হেফাজত করবে। যদি কখনো এমন হয় যে কুড়ানো মাল হলো দ্রুত পঁচনশীল কোন জিনিস, যেমন ফল, ফলাদি তা মালিকের প্রতি সওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে গরীবকে দান করে দিবে। নিজে গরীব হলে নিজেও নিতে পারবে।
মালের সংরক্ষণ ও প্রচারণা খরচ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে করবে, এবং এ খরচ মালের মালিক বহন করবে। তাকে কখনো না পাওয়া গেলে উক্ত মাল বিক্রি করে প্রশাসন সংরক্ষণকারীর খরচ পরিশোধ করবে। আর যদি প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই এ মালের সংরক্ষণ ও প্রচারণা বাবদ খরচ করে থাকে তাহলে উক্ত খরচ তার নিজের পক্ষ থেকে মালিকের প্রতি দয়া হিসেবে বিবেচিত হবে, প্রশাসন থেকে বা ঐ মাল বিক্রি করে তার খরচ উদ্ধার করতে পারবে না।
এভাবে প্রচারণার পরও যদি মালিকের সন্ধান না মিলে তাহলে যেমনটি বলা হলো, মালিকের প্রতি সওয়াব পৌঁছানোর নিয়তে গরীবকে দান করে দিবে। নিজে গরীব হলে নিজেও নিতে পারবে। তবে এভাবে দান করে দেওয়ার পরে যদি মালের মালিক এসে মাল তালাশ করে তাহলে তাকে দানের কথা বলে বুঝিয়ে দিবে। মানতে না চাইলে তাকে ক্ষতিপূরণ যতটুকু দিয়ে সম্ভব সন্তুষ্ট করতে হবে; প্রয়োজনে সম্পূর্ণ মালের বিনিময় আদায় করে হলেও। পূর্বের দান তখন নিজের পক্ষ থেকে বিবেচিত হবে। সূত্র : মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৪/১৬১, আল বাহরুর রায়েক ৫/২৬০
অন্যের গাছের নীচে পড়ে থাকা ফল অনুমতি না নিয়ে কুড়িয়ে খাওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ অনুমতি নিয়ে খাওয়া যাবে। অনুমতি দেওয়ার মতো কাউকে না পেলে, ক্ষুধা নিবৃত্ত হওয়া পর্যন্ত উক্ত ফল খাওয়া যাবে। কিন্তু বহন করে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন কোন ছাগপালের নিকট আসবে (তখন দুধ পানের উদ্দেশ্যে) তার মনিবের অনুমতি নিবে। যদি সেখানে কেউ না থাকে, তাহ’লে তিনবার আওয়ায দিবে। অতঃপর উত্তর পেলে তার নিকট থেকে অনুমতি নিবে। আর যদি কেউ উত্তর না দেয়, তাহলে দুধ দোহন করবে ও পান করবে। কিন্তু বহন করে নিয়ে যাবে না’ (আবুদাঊদ হা/২৬১৯; মিশকাত হা/২৯৫৩) ।
এর দ্বারা বুঝা যায় যে, ক্ষুধার্ত ব্যক্তি ক্ষুধা নিবারণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু খেতে পারবে।