সারসংক্ষেপ : ‘কুরআনী প্রবাদ হচ্ছে এমন সব আয়াত যাতে উপমার মাধ্যমে বলিষ্ঠ উপদেশ প্রদানের নিমিত্তে কোন ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনাকে বাস্তবমুখী ও মনোহারী চিত্রে চিত্রিত করা হয়েছে’। এই উপদেশদান বা হেদায়াতের নির্দেশনা প্রদানই কুরআনী প্রবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। মহান আল্লাহ নিজেও বলেছেন, ‘আমি এ কুরআনে মানুষের জন্য সর্ব প্রকার প্রবাদ উপস্থাপন করেছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে’। হেদায়াতের দিকটি বিবেচনা করেই এসব প্রবাদে যেকোন জটিল বিষয়কে অতিসহজ, অবোধগম্য বিষয়কে বোধগম্য এবং চিন্তার জগতে সীমাবদ্ধ বিষয়কে একেবারে বাস্তবমূখী চরিত্রে রূপায়ন করে তোলা হয়েছে। ধর্মীয় বিচারে যেমন এর উপকারিতা অসামান্য, তেমন সাহিত্যের বিচারেও তা অপরিসীম। ইমাম শাফেয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন যে, একজন মুজতাহিদের যেসব বিষয়ে জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক তন্মধ্যে প্রবাদ হচ্ছে অন্যতম। সমাজ জীবনে প্রবাদের এমন অনস্বীকার্য গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই প্রবাদ জ্ঞানী-গুণী, কবি-সাহিত্যিক, শিক্ষিত-অশিক্ষিত তথা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়। এজন্য অনেকেই কুরআনী প্রবাদ বিষয়ে পৃথকভাবে বহু গ্রন্থাদি রচনা করেছেন। আবার অনেকে যেমন তাদের গ্রন্থের বিরাট অংশ জুড়ে এপ্রবাদের আলোচনা করেছেন। তেমন অন্যরা এনিয়ে একাধিক নিবন্ধও লিখেছেন। বক্ষমান প্রবন্ধে এসব সংকলনের উপর পর্যালোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
আরবী ভাষা ও সাহিত্যে অলংকার শাস্ত্রের নাম হচ্ছে বালাগাত। বালাগাত বলতে বুঝায়, কোন বিশুদ্ধ বাক্যকে অবস্থার চাহিদা অনুযায়ী যথাযথভাবে প্রয়োগ করা।[১] এই অর্থে প্রবাদ বা মাছালই এমন বাক্য যা বালাগাত হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য হতে পারে। এ দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যারাই বালাগাত নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা গবেষণা করেছেন তারাই প্রবাদকে মূখ্য আলোচ্য হিসাবে গ্রহণ করেছেন। সংগত কারণেই ইসলামী প্রবাদ তথা কুরআনী প্রবাদ, হাদীসে বর্ণিত প্রবাদ, সাহাবীদের প্রবাদ, তাবেঈদের প্রবাদ তাদের দৃষ্টি এড়ায়নি। বরং তারা প্রত্যেকেই এ নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন। তাদের গ্রন্থসমূহে ইসলামী প্রবাদ সংকলণ করে গেছেন।
বালাগাতের প্রশ্নে কুরআনী প্রবাদ পর্যাপ্ত ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় এক সময়ে তা জ্ঞানের পৃথক ও স্বয়ং সম্পূর্ণ শাখা হিসাবে রূপ লাভ করেছে। ফল স্বরূপ, এই নতুন শাখায় নতুনভাবে একাধিক সংকলনও রচিত হয়। কবে এ কাজটি প্রথম শুরু হয়েছিল তার দিন-ক্ষণ বলা কঠিন। তবে এটুকু বলা যায় যে, আব্বাসী যুগের (১৩৩-৬৫৬ হি.) প্রথম দিকেই শুরু হয়েছিল। কুরআনী প্রবাদ সংকলন বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যাবে যে, কুরআনী প্রবাদের উপর যেমন পৃথক গ্রন্থাদি রচিত হয়েছে তেমন অসংখ্য প্রবন্ধও লিখিত হয়েছে। আবার এমন অনেক গ্রন্থ আছে যাতে কুরআনী প্রবাদের উপরে কমবেশী আলোচনা স্থান পেয়েছে। আমরা এখন এসব সংকলন নিয়ে কিছু আলোচনা পর্যালোচনা পেশ করব। আলোচনার সময় সংকলনসমূহের রচনাকালের (ক্ষেত্র বিশেষে প্রকাশকালের) ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করা হবে।
কুরআনী প্রবাদ
যে কোন জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক-বাহক হচ্ছে তাদের প্রবাদ-প্রবচন। ‘প্র’ অর্থ বিশেষ এবং ‘বাদ’ অর্থ বচন বা কথা। অর্থাৎ বিশেষ কথা বা বিশেষ অর্থপূর্ণ বাক্য।[২] মূল ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কোন ঘটনার বর্ণনায় যে সব বাক্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাকেই প্রবাদ বলে।[৩] কুরআনী প্রবাদ বলতে বুঝায় এমন সব আয়াত যাতে উপমার মাধ্যমে বলিষ্ঠ উপদেশ প্রদানের নিমিত্তে কোন ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনাকে বাস্তবমুখী ও মনোহারী চিত্রে চিত্রিত করা হয়েছে।[৪]
প্রবাদের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমাজ-সংসারে এর বহুল প্রচলন ও সর্বজন গ্রাহ্যতা। মানুষ ও মানুষের জীবন এর মূল উপজীব্য। প্রত্যহের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা এর মূল ভিত্তি।[৫] ব্যবহারিক মূলে বিচার্য বলেই এর উপযোগিতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে। বস্তুত জীবনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত বলে প্রবাদ সমাজ-সংসারের এক নিখুঁত প্রতিচ্ছবি।[৬] উদাহরণস্বরূপ, মহান আল্লাহ বলেন,
‘মহান আল্লাহ অবিশ্বাসীদের (শেষ পরিনতির) সাদৃশ্য স্বরূপ নূহ (আলাইহিস সালাম) ও লূত্ব (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রীদেরকে প্রবাদরূপে পেশ করেছেন: তারা দু’জনই ছিল আমার (আল্লাহর) দু’জন পূণ্যবান বান্দার অধীনে (স্ত্রী হিসাবে) কিন্তু তারা উভয়েই (আল্লাহর প্রতি ঈমান না এনে) সে দু’জনের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল। সুতরাং এদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে তারা কোনক্রমেই রক্ষা করতে পারল না। বরং নির্দেশ হলো, যারা যারা দোযখে প্রবেশ করছে তোমরাও তাদের সাথে প্রবেশ কর’ (সূরা আত-তাহরীম : ১০)।
এ প্রবাদের মর্মকথা হচ্ছে এই যে, ঈমানী দায়-দায়িত্ব পালন তথা পরকালীন মুক্তি লাভের জন্য প্রতিটি মানুষকে একান্ত ব্যক্তিগতভাবেই উদ্যোগী হতে হবে। এ দায়িত্ব পালনে যে অস্বীকৃতি জানাবে পরকালের শাস্তি থেকে তার কোনই নিস্তার নেই। এমনকি এক্ষেত্রে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাথে তার বিশেষ কোন ঘনিষ্ট সর্ম্পকও সেদিন কোনই কাজে আসবে না। এমনিভাবে ইহকালেও মানুষের সফলতা বা বিফলতা, সুনাম বা দুর্নাম নির্ভর করে তার নিজের কৃতকর্মের উপরই। আর এক্ষেত্রে কুখ্যাতি বা দুর্নামের জন্য চিরায়ত প্রতীকরূপে প্রবাদ ব্যক্তিত্ব হয়ে আছে নূহ (আলাইহিস সালাম) এবং লূত্ব (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রীদ্বয়।
আমরা যদি গভীর দৃষ্টিতে দেখি তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারব যে, কুরআনী প্রবাদে বহুমূখী উপকারিতা আছে। তম্মেধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে :
ক. উপমেয় বস্তুর অবস্থা বা বাস্তবতাকে পাঠক বা শ্রোতার মনে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা।
খ. উপমিত বস্তুর প্রতি পাঠক বা শ্রোতার উৎসাহ সৃষ্টি করা।
গ. উপমিত বস্তুর প্রসংশা বা দুর্নাম করা।
ঘ. কোন বিষয়ের উপর অকাট্য দলীল সাব্যস্ত করা।
ঙ. চিন্তাবিদদের সামনে গবেষণার দ্বার উম্মুক্ত করা।
চ. বক্তৃতাকে দৃঢ় ও প্রাণবন্ত করা।[৭]
ইত্যাকার নানাবিধ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান আছে কুরআনী প্রবাদে। এদিকে ইঙ্গিত করেই মহান আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয় আমি মানুষের জন্য সবধরণের প্রবাদমালা বর্ণনা করেছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে’ (সূরা যুমার : ২৭)। তিনি আরো বলেছেন,
‘এবং ঐ সমস্ত প্রবাদ মানবজাতির সামনে পেশ করেছি এজন্য যে, তারা যেন (সঠিক পথের সন্ধানে বা সত্য উদঘাটনে) চিন্তা-ভাবনা করতে পারে’ (সূরা হাশর : ২১)।
ফলকথা হচ্ছে এই যে, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কুরআনী প্রবাদ সাধারণ প্রবাদের মত মনে হলেও তা সাধারণ প্রবাদ নয়। বরং কুরআনী প্রবাদ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বিশেষায়িত দৃষ্টান্তমূলক আয়াত বা উক্তি। যা বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র, সমহিমায় ভাস্বর এবং অন্যান্য প্রবাদের সাথে অভিন্ন থেকেও ভিন্নতর।
কুরআনী প্রবাদের উপর রচিত গ্রন্থসমূহ
কুরআনী প্রবাদের উপরে পৃথকভাবে ছোটবড় মিলে পঁচিশের অধিক গ্রন্থ রচিত হয়েছে।[৮] এর মধ্যে যেগুলো সবিশেষ উল্লেখযোগ্য আমরা এখানে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
১. ‘আমছালুল কুরআন’ (أمثال القرآن )
গ্রন্থটি রচনা করেন ইবন জুনায়েদ কাওয়ারীরী (মৃ. ২৯৮ হি.)। এ গন্থে কুরআনী প্রবাদসমূহ উল্লেখপূর্বক এ সবের মর্মকথা, প্রায়োগিক উপযুক্ততা, বাস্তব প্রতিফলন ও জীবনঘনিষ্ট ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[৯] প্রাচীন এবং আধুনিক অনেক লেখক ও গবেষক গন্থটির কথা নিজ নিজ লেখায় উল্লেখ করেছেন। তবে এর প্রকাশনা বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি।[১০] লেখকের নাম জুনায়েদ ইবন মুহাম্মদ ইবন জুনায়েদ আল-কাওয়ারীরী। তার জন্ম বাগদাদে হলেও তার পরিবারের মূল ছিল ইরাকের নাহাওন্দ অঞ্চলে। তিনি ২৯৮ হি. বাগদাদেই মৃত্যুবরণ করেন। তদানিন্তন সময়ের প্রচলিত ও প্রয়োজনীয় সব বিদ্যায় তিনি পারদর্শিতা লাভ করেছিলেন। তিনি তাহাজ্জুদ গোজার ব্যক্তি হিসাবে সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলসহ অনেকের নিকট থেকে হাদীসও বর্ণনা করেছেন।[১১]
২. ‘আল আমছাল মিনাল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ’ ( الأمثال من الكتاب والسنة )
গ্রন্থটি রচনা করেছেন জনাব আল-হাকিম আত-তিরমিযী (মৃ.৩২০ হি.)। এ গ্রন্থে লেখক কুরআনী প্রবাদ এবং হাদীসে ব্যবহৃত প্রবাদসমূহ ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করেছেন। গ্রন্থটি আকারে বেশ বড়। কায়রোর মুনিরিয়া প্রেস থেকে ১৩৯৫ হি. মুহাম্মাদ আলী আল-বাজাভীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থকার মুহাম্মদ ইবন আলী ইবন হাসান ইবন বিশর আবু আব্দুল্লাহ আল-হাকীম আত-তিরমিযী ইরানের তিরমিয শহরে হিজরী ২য় শতকের প্রথমার্ধে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৯০ বছর বয়সে ৩২০ হি. মৃত্যুবরণ করেন।[১২] তিনি ছিলেন ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক, সূফী ও ধর্মতত্ত্ব বিশারদ। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে আছে- নাওয়াদিরুল উসূল ফী আহাদীসির রাসূল, আল-ফুরুক, গার্সূল মুওয়াহ্হিদীন, আল-মানাহী, আল-মাসাইলুল মাকনূনাহ ইত্যাদি।[১৩]
৩. ‘আমছালুল কুরআন’ ( أمثال القرآن )
গ্রন্থটি রচনা করেছেন আবু আব্দুল্লাহ নিফ্তাওয়াইহ (মৃ. ৩২৩ হি.)। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। যে কোন কারণেই হোক এটি প্রকাশ লাভ করতে পারেনি। তবে গ্রন্থটির কথা অতি গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন সর্বজনাব ঐতিহাসিক ইয়াকূত আল হামাভী[১৪] এবং বহু গ্রন্থ প্রণেতা ইমাম সুয়ূতী।[১৫] গ্রন্থকার আবু আব্দুল্লাহ ইবরাহীম ইবন আরাফা আন নিফতাওয়াইহ কুফা ও বসরার মধ্যেবর্তী স্থানে অবস্থিত ‘ওয়াসিত’ শহরে ২৪৪ হি. জন্মগ্রহণ করেন এবং বাগদাদে ৩২৩ হি. মৃত্যুবরণ করেন।[১৬] তিনি নাহু (আরবী ব্যাকরণ) শাস্ত্রের বড় পণ্ডিত ছিলেন। তিনি ইলমে হাদীসেও বুৎপত্তি লাভ করেছিলেন। মতাদর্শের দিক থেকে তিনি ইমাম দাউদ জাহেরীকে সমর্থন করতেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে আছে- কিতাবুত তারীখ, কিতাবুল ওয়াযারা, কিতাবুল আমছাল ইত্যাদি।[১৭]
৪. ‘আমছালুল কুরআন (أمثال القرآن)
গ্রন্থটি রচনা করেছেন ইবন জুনায়েদ ইসকাফী (মৃ.৩৮১ হি.)। এ গ্রন্থটি কখনো প্রকাশিত হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি। তবে প্রাচীন এবং আধুনিক লেখক ও গবেষকগণের প্রায় সবাই গ্রন্থটির কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।[১৮] ‘আত-তাহবীর ফী মু’জামিল কাবীর’-এর লেখক আব্দুল কারীম সাম‘আনী এই ইবন জুনায়েদ ইসকাফীর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন যে, তিনি হলেন, মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ ইবন আব্দুল অহিদ ইবন আহমাদ ইবন জুনায়েদ আল-ইসকাফী আল-জুনায়দী। তিনি ইস্পাহানের অধিবাসী ছিলেন। জুনায়দী বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত মুহাদ্দিছ আবু আব্দুল্লাহ কাসিম ইবন ফযল ছাকাফীর সুযোগ্য ছাত্র ছিলেন।[১৯] এখানে তার জন্ম-মৃত্যুর কোন দিন-তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। তবে ‘মাবাহিছ ফিত-তাজভীদ’ গ্রন্থে আব্দুল কাদের বাদান্জাকীর বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ৩৮১ হি. মৃত্যুবরণ করেছেন।[২০] ‘গায়াতুন নিহায়া’ গন্থের লেখক ইবন জাযরী বলেছেন যে, তিনি একজন ইলমে কিরাতের বিখ্যাত ইমাম ছিলেন।[২১]
৫. ‘আমছালুল কুরআন’ (أمثال القرآن)
গ্রন্থটি রচনা করেছেন ইবন হুসাইন নিশাপুরী (মৃ.৩৮১হি./৯৯১হি.)। ‘আমছালুল কুরআন’ নামে নিশাপুরীর এগ্রন্থটি কুরআনী প্রবাদ বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।[২২] বিশেষ করে গ্রন্থকারের লেখা ভূমিকাটি থেকে পরবর্তী আলেমগণ বেশ উপকৃত হয়েছেন। যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে গ্রন্থটি প্রকাশ লাভ করতে পারেনি। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরবর্তীতে যারা আলোচনা করেছেন তারা সবাই তার নিকট ঋণী। গ্রন্থকারের নাম হচ্ছে মুহাম্মদ ইবন হুসায়ন আস-সুলামী আন-নিশাপুরী। তার জন্ম তারিখ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তার মৃত্যু হয়েছে ৩৮১হি./৯৯১ইং সনে।[২৩]
৬. ‘আমছালুল কুরআন’ ( أمثال القرآن )
গ্রন্থকার আবুল হাসান মাওয়ার্দী (মৃ.৪৫০হি.)। কুরআনী প্রবাদ বিষয়ে গ্রন্থটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গ্রন্থকারের লেখা ভূমিকাটি থেকে পরবর্তী পণ্ডিতগণ বেশ উপকৃত হয়েছেন। যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে গ্রন্থটি প্রকাশ লাভ করতে পারেনি। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরবর্তীতে যারা আলোচনা করেছেন তারা সবাই তার নিকট ঋণী। ইমাম সুয়ূতী তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল ইতকান ফী উলূমিল কুরআন’-এ বেশ গুরুত্বের সাথেই আলোচ্য গ্রন্থটির উল্লেখ করেছেন।[২৪] তিনি প্রবাদ সম্পর্কে কথা শুরু করতেই বলেন :
‘কুরআনী প্রবাদ বিষয়ে পৃথকভাবে গ্রন্থ রচনা করেছেন ইমাম আবুল হাসান মাওয়ার্দী।’[২৫] এরপর ইমাম সুয়ূতী কুরআনী প্রবাদের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে যেয়ে উমাম মাওয়ার্দীর একটি বিখ্যাত উক্তি উল্লেখ করেন, তিনি বলেছেন,
‘কুরআনী জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হচ্ছে কুরআনী প্রবাদ। আর লোকেরা সে সম্পর্কে একেবারেই বেখবর-ভ্রুক্ষেপহীন’।[২৬] গ্রন্থকার আবুল হাসান আলী ইবন মুহাম্মদ ইবন হাবীব আল-মাওয়ার্দী ইরাকের বসরা শহরে ৩৬৪ হি. জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৪৫০ হি. বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বিচারক হিসাবে সমসাময়িককালে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। মুসলিম সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে বিচারক হিসাবে তিনি সুখ্যাতি লাভ করেন। আব্বাসী খলীফা ‘আল-কায়েম বি আমরিল্লাহ’ এর সময়ে (৪২২-৪৬৭ হি.) তিনি প্রধান বিচারপতির পদ অলংকৃত করেছিলেন। তার অমর কীর্তির মধ্যে আছে - আদাবুদ দ্বীন ওয়াদ দুনিয়া, আল-আহকামুস সুলতানিয়্যা, ফী সিয়াসাতিল হুকুমাত এবং আল হাভী (বৃহদাকারের বিশ খণ্ডে বিভক্ত ফিকহী কিতাব) ইত্যাদি।[২৭]
৭. ‘আমছালুল কুরআন’ (أمثال القرآن)
এগ্রন্থটি রচনা করেন আল-খীমী (মৃ.৬৪২হি./১২৪৪ই)। কুরআনী প্রবাদ বিষয়ে গ্রন্থটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে গ্রন্থটি প্রকাশ লাভ করতে পারেনি। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরবর্তীতে যারা আলোচনা করেছেন তারা সবাই তার নিকট ঋণী।[২৮] গ্রন্থকারের পূর্ণ নাম হচ্ছে আবূ তালিব মুহাম্মদ ইবন আলী ইবন আল-খীমী। খীমী তার উপাধী। এউপাধীতেই তিনি অধিক পরিচিত। তিনি ৬৪২/১২৪৪ সনে মৃত্যুবরণ করেন।[২৯]
তথ্যসূত্র :
[১]. আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব : সম্পাদনা পরিষদ (দেওবন্দ : রশীদিয়া কুতুবখানা, ১৯৬৯ ইং) ধাতুমূল বা-লাম-গাইন) দ্র.।
[২]. হায়াৎ মামুদ, ড.(সম্পাদক) : বিশুদ্ধ ভাষা শিক্ষা (ঢাকা : দি অ্যাটলাস পাবলিশিং হাউস, ৪র্থ সংস্করণ, ২০১২ ইং) পৃ. ৩৬৬।
[৩]. মাজমাঊল আমছাল : মায়দনী, আবুল ফযল (কায়রো : সাআদা প্রকাশনী, ১৯৫৯ইং) ভূমিকা দ্র.; বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস : মাহবুবুল আলম, অধ্যাপক (ঢাকা: সত্য প্রকাশনী, ৫ম সংস্করণ, ১৯৯৪ইং) পৃ. ২৬৭; লোক সাহিত্যে ধাঁধা ও প্রবাদ : দীন মুহাম্মদ, ড. কাজী (ঢাকা: আধুনিক প্রকাশনী , ১৯৮৭ ইং) পৃ. ৭।
[৪]. আল-ইতকান ফী উলূমিল কুরআন : সুয়ূতী, জালালুদ্দীন (কায়রো: হালবী, ১৯৫১ ইং), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৩১; আল-কাশশাফ : যমখশরী, মাহমুদ ইবন ওমর (দক্ষিণ হায়দ্রাবাদ : উছমানীয়া প্রকাশনী, ১৯৬২ ইং), ১ম খ-, পৃ. ১৪৯।।
[৫]. আল-আমছাল ফিন্নাছরিল আরাবিয়্যিল কাদীম: আবেদীন, ড. আব্দুল মজীদ (কায়রো: মিসরী সংস্করণ, ১৯৮৯ইং), পৃ. ৮৫; বাংলা প্রবাদ পরিচিতি : পাঠান, হানিফ (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১৯৭৬ইং), পৃ. ১-৩।
[৬]. আল-আমছালুল আরাবিয়া: কাতামিশ, ড. আ. মজীদ (দামেশক: দারুল ফিকর, ১৯৮৮ ইং) ভূমিকা দ্র.।
[৭]. আল-আমছালুল আরাবিয়া, পৃ. ১৪৩-১৫২; বালাগাতুল কুরআন : হুসাইন, মুহাম্মদ খিযির (দামেস্ক : তাআবুনিয়া প্রকাশনী, ১৯৮১ইং), পৃ. ২৬-৩৭।
[৮]. আল-আমছালুল কুরআনিয়াতুল কিয়াসিয়া : জার্বু, ড. আব্দুল্লাহ (অপ্রকাশিত পি-এইচ.ডি.থিসিস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদীনা মুনাওয়ারা, ১৪১৯হি.) ভূমিকা দ্র. ; আরবী প্রবাদ সাহিত্য : সিদ্দিকী, ড. সাইফুল ইসলাম (ঢাকা: ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ২০০২ইং.) পৃ. ১১০-১৮৮, ৩৫০-৩৭৮।
[৯]. আরবী প্রবাদ সাহিত্য , পৃ. ৩৫২।
[১০]. প্রাগুক্ত।
[১১]. তাবাকাতুল হানাবিলা : ইবন আবু ইয়ালা, মুহাম্মদ (বৈরূত : দারুল মা‘রিফা , তাবি), ১ম খণ্ড. পৃ. ১২৫।
[১২]. আল-আ‘লাম : যারাকলী, খায়রুদ্দীন (বৈরূত : দারুল কিতাবিল আরাবী, ১৯৬৯ইং.), ২য় খণ্ড, পৃ. ২৬৫।
[১৩]. প্রাগুক্ত।
[১৪]. মু’হামুল উদাবা : ইয়াকুত আল-হামাভী : উদ্ধৃত- আরবী প্রবাদ সাহিত্য,পৃ. ৩৫৩।
[১৫]. বুগ্ইয়াতুল ওয়াআত : সুয়ূতী, জালালুদ্দীন (বৈরূত : আল-মাকতাবাতুল হাদিছা , তাবি), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪২৯।
[১৬]. আল-আ‘লাম, ৬ষ্ঠ, পৃ. ৪৬।
[১৭]. প্রাগুক্ত।
[১৮]. আরবী প্রবাদ সাহিত্য, পৃ. ৩৫৩; আত-তারবিয়্যাতু বি-যারবিল আমছাল : নাহলাভী, আব্দুর রহমান (দামেশক, দারুল ফিকর, ১৯৯৮ ইং), ১ম খণ্ড. পৃ. ৪।
[১৯]. alwarraq.com - Domain Name For Sale | Dan.com, সূচী নং ৬৬৬ (আবু আব্দুল্লাহ আল জুনায়দী)।
[২০]. প্রাগুক্ত।
[২১]. alwarraq.com - Domain Name For Sale | Dan.com, গায়াতুন নিহায়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬১।
[২২]. আরবী প্রবাদ সাহিত্য, পৃ. ৩৫৩।
[২৩]. প্রাগুক্ত।
[২৪]. কায়রো : হালবী, ১৯৫১ইং) খ. ১, পৃ. ১৫১।
[২৫]. প্রাগুক্ত।
[২৬]. প্রাগুক্ত।
[২৭]. আল আ‘লাম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩২৭; তারীখু বাগদাদ : আল খতীব, আবু বকর (বৈরূত : দারুর ফিকর, ১৯৮২ ইং), ১২তম খণ্ড, পৃ. ১০২; আল-কামিল ফিত্তারীখ : ইবন আছীর, ইজ্জুদ্দীন আলী (বৈরূত : দারু সাদির, ১৯৬৫ ইং) খ. ৯, পৃ. ৬৫১; ওয়াফিয়াতুল আ’ইয়ান : ইবন খাল্লিকান, আবুল আব্বাস (বৈরূত : দারু সাদির , ১৯৭৭ ইং), খণ্ড. ৩, পৃ. ২৪২ ; মিজানুল ই’তিদাল : যাহাবী, শামসুদ্দীন (কায়রো : দারুল কুতুবিল মিসরিয়া, ১৯৬৩ ইং), খ. ৩, পৃ. ১৫৫; তাবাকাতুস সুবকী : সুবকী, তাজুদ্দীন (বৈরূত : দারুল হিজরা, ২য় সংস্করণ, ১৪১৩ হি.), খণ্ড. ৫, পৃ. ২৬৭ ; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ইবন কাছীর, ইমাদুদ্দীন (বৈরূত : দারুল ফিকর , ১৯৭৯ ইং), খণ্ড. ১২, পৃ. ৮০ ; লিসানুল মিযান : আসকালানী, ইবন হাজার (কায়রো : দারুল মাআরিফ, ১৯৮৬ ইং), খ. ৪, পৃ. ২৬০ ; তাবাকাতুল মুফাসসিরীন : সুয়ূতী, জালালুদ্দীন ( কায়রো : ওয়াহাবা লাইব্রেরী, ১৩৬৯ হি.), খণ্ড. ১, পৃ. ২৫ ; কাশফুয যুনূন : হাজী খলীফা, মুস্তফা (তেহরান : ইসলামিয়া লাইব্রেরী , ১৩৮৭ হি.), খণ্ড. ১, পৃ. ১৯ ।
[২৮]. আরবী প্রবাদ সাহিত্য, পৃ. ৩৫২।
[২৯]. প্রাগুক্ত।
ভূমিকা
আরবী ভাষা ও সাহিত্যে অলংকার শাস্ত্রের নাম হচ্ছে বালাগাত। বালাগাত বলতে বুঝায়, কোন বিশুদ্ধ বাক্যকে অবস্থার চাহিদা অনুযায়ী যথাযথভাবে প্রয়োগ করা।[১] এই অর্থে প্রবাদ বা মাছালই এমন বাক্য যা বালাগাত হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য হতে পারে। এ দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যারাই বালাগাত নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা গবেষণা করেছেন তারাই প্রবাদকে মূখ্য আলোচ্য হিসাবে গ্রহণ করেছেন। সংগত কারণেই ইসলামী প্রবাদ তথা কুরআনী প্রবাদ, হাদীসে বর্ণিত প্রবাদ, সাহাবীদের প্রবাদ, তাবেঈদের প্রবাদ তাদের দৃষ্টি এড়ায়নি। বরং তারা প্রত্যেকেই এ নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন। তাদের গ্রন্থসমূহে ইসলামী প্রবাদ সংকলণ করে গেছেন।
বালাগাতের প্রশ্নে কুরআনী প্রবাদ পর্যাপ্ত ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় এক সময়ে তা জ্ঞানের পৃথক ও স্বয়ং সম্পূর্ণ শাখা হিসাবে রূপ লাভ করেছে। ফল স্বরূপ, এই নতুন শাখায় নতুনভাবে একাধিক সংকলনও রচিত হয়। কবে এ কাজটি প্রথম শুরু হয়েছিল তার দিন-ক্ষণ বলা কঠিন। তবে এটুকু বলা যায় যে, আব্বাসী যুগের (১৩৩-৬৫৬ হি.) প্রথম দিকেই শুরু হয়েছিল। কুরআনী প্রবাদ সংকলন বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যাবে যে, কুরআনী প্রবাদের উপর যেমন পৃথক গ্রন্থাদি রচিত হয়েছে তেমন অসংখ্য প্রবন্ধও লিখিত হয়েছে। আবার এমন অনেক গ্রন্থ আছে যাতে কুরআনী প্রবাদের উপরে কমবেশী আলোচনা স্থান পেয়েছে। আমরা এখন এসব সংকলন নিয়ে কিছু আলোচনা পর্যালোচনা পেশ করব। আলোচনার সময় সংকলনসমূহের রচনাকালের (ক্ষেত্র বিশেষে প্রকাশকালের) ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করা হবে।
কুরআনী প্রবাদ
যে কোন জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক-বাহক হচ্ছে তাদের প্রবাদ-প্রবচন। ‘প্র’ অর্থ বিশেষ এবং ‘বাদ’ অর্থ বচন বা কথা। অর্থাৎ বিশেষ কথা বা বিশেষ অর্থপূর্ণ বাক্য।[২] মূল ঘটনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কোন ঘটনার বর্ণনায় যে সব বাক্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাকেই প্রবাদ বলে।[৩] কুরআনী প্রবাদ বলতে বুঝায় এমন সব আয়াত যাতে উপমার মাধ্যমে বলিষ্ঠ উপদেশ প্রদানের নিমিত্তে কোন ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনাকে বাস্তবমুখী ও মনোহারী চিত্রে চিত্রিত করা হয়েছে।[৪]
প্রবাদের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমাজ-সংসারে এর বহুল প্রচলন ও সর্বজন গ্রাহ্যতা। মানুষ ও মানুষের জীবন এর মূল উপজীব্য। প্রত্যহের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা এর মূল ভিত্তি।[৫] ব্যবহারিক মূলে বিচার্য বলেই এর উপযোগিতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে। বস্তুত জীবনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত বলে প্রবাদ সমাজ-সংসারের এক নিখুঁত প্রতিচ্ছবি।[৬] উদাহরণস্বরূপ, মহান আল্লাহ বলেন,
ضَرَبَ اللّٰہُ مَثَلًا لِّلَّذِیۡنَ کَفَرُوا امۡرَاَتَ نُوۡحٍ وَّ امۡرَاَتَ لُوۡطٍ ؕ کَانَتَا تَحۡتَ عَبۡدَیۡنِ مِنۡ عِبَادِنَا صَالِحَیۡنِ فَخَانَتٰہُمَا فَلَمۡ یُغۡنِیَا عَنۡہُمَا مِنَ اللّٰہِ شَیۡئًا وَّ قِیۡلَ ادۡخُلَا النَّارَ مَعَ الدّٰخِلِیۡنَ
‘মহান আল্লাহ অবিশ্বাসীদের (শেষ পরিনতির) সাদৃশ্য স্বরূপ নূহ (আলাইহিস সালাম) ও লূত্ব (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রীদেরকে প্রবাদরূপে পেশ করেছেন: তারা দু’জনই ছিল আমার (আল্লাহর) দু’জন পূণ্যবান বান্দার অধীনে (স্ত্রী হিসাবে) কিন্তু তারা উভয়েই (আল্লাহর প্রতি ঈমান না এনে) সে দু’জনের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল। সুতরাং এদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে তারা কোনক্রমেই রক্ষা করতে পারল না। বরং নির্দেশ হলো, যারা যারা দোযখে প্রবেশ করছে তোমরাও তাদের সাথে প্রবেশ কর’ (সূরা আত-তাহরীম : ১০)।
এ প্রবাদের মর্মকথা হচ্ছে এই যে, ঈমানী দায়-দায়িত্ব পালন তথা পরকালীন মুক্তি লাভের জন্য প্রতিটি মানুষকে একান্ত ব্যক্তিগতভাবেই উদ্যোগী হতে হবে। এ দায়িত্ব পালনে যে অস্বীকৃতি জানাবে পরকালের শাস্তি থেকে তার কোনই নিস্তার নেই। এমনকি এক্ষেত্রে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাথে তার বিশেষ কোন ঘনিষ্ট সর্ম্পকও সেদিন কোনই কাজে আসবে না। এমনিভাবে ইহকালেও মানুষের সফলতা বা বিফলতা, সুনাম বা দুর্নাম নির্ভর করে তার নিজের কৃতকর্মের উপরই। আর এক্ষেত্রে কুখ্যাতি বা দুর্নামের জন্য চিরায়ত প্রতীকরূপে প্রবাদ ব্যক্তিত্ব হয়ে আছে নূহ (আলাইহিস সালাম) এবং লূত্ব (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রীদ্বয়।
আমরা যদি গভীর দৃষ্টিতে দেখি তাহলে খুব সহজেই বুঝতে পারব যে, কুরআনী প্রবাদে বহুমূখী উপকারিতা আছে। তম্মেধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে :
ক. উপমেয় বস্তুর অবস্থা বা বাস্তবতাকে পাঠক বা শ্রোতার মনে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা।
খ. উপমিত বস্তুর প্রতি পাঠক বা শ্রোতার উৎসাহ সৃষ্টি করা।
গ. উপমিত বস্তুর প্রসংশা বা দুর্নাম করা।
ঘ. কোন বিষয়ের উপর অকাট্য দলীল সাব্যস্ত করা।
ঙ. চিন্তাবিদদের সামনে গবেষণার দ্বার উম্মুক্ত করা।
চ. বক্তৃতাকে দৃঢ় ও প্রাণবন্ত করা।[৭]
ইত্যাকার নানাবিধ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান আছে কুরআনী প্রবাদে। এদিকে ইঙ্গিত করেই মহান আল্লাহ বলেন,
وَ لَقَدۡ ضَرَبۡنَا لِلنَّاسِ فِیۡ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنِ مِنۡ کُلِّ مَثَلٍ لَّعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ
‘নিশ্চয় আমি মানুষের জন্য সবধরণের প্রবাদমালা বর্ণনা করেছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে’ (সূরা যুমার : ২৭)। তিনি আরো বলেছেন,
وَ تِلۡکَ الۡاَمۡثَالُ نَضۡرِبُہَا لِلنَّاسِ لَعَلَّہُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ
‘এবং ঐ সমস্ত প্রবাদ মানবজাতির সামনে পেশ করেছি এজন্য যে, তারা যেন (সঠিক পথের সন্ধানে বা সত্য উদঘাটনে) চিন্তা-ভাবনা করতে পারে’ (সূরা হাশর : ২১)।
ফলকথা হচ্ছে এই যে, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কুরআনী প্রবাদ সাধারণ প্রবাদের মত মনে হলেও তা সাধারণ প্রবাদ নয়। বরং কুরআনী প্রবাদ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বিশেষায়িত দৃষ্টান্তমূলক আয়াত বা উক্তি। যা বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র, সমহিমায় ভাস্বর এবং অন্যান্য প্রবাদের সাথে অভিন্ন থেকেও ভিন্নতর।
কুরআনী প্রবাদের উপর রচিত গ্রন্থসমূহ
কুরআনী প্রবাদের উপরে পৃথকভাবে ছোটবড় মিলে পঁচিশের অধিক গ্রন্থ রচিত হয়েছে।[৮] এর মধ্যে যেগুলো সবিশেষ উল্লেখযোগ্য আমরা এখানে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
১. ‘আমছালুল কুরআন’ (أمثال القرآن )
গ্রন্থটি রচনা করেন ইবন জুনায়েদ কাওয়ারীরী (মৃ. ২৯৮ হি.)। এ গন্থে কুরআনী প্রবাদসমূহ উল্লেখপূর্বক এ সবের মর্মকথা, প্রায়োগিক উপযুক্ততা, বাস্তব প্রতিফলন ও জীবনঘনিষ্ট ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[৯] প্রাচীন এবং আধুনিক অনেক লেখক ও গবেষক গন্থটির কথা নিজ নিজ লেখায় উল্লেখ করেছেন। তবে এর প্রকাশনা বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি।[১০] লেখকের নাম জুনায়েদ ইবন মুহাম্মদ ইবন জুনায়েদ আল-কাওয়ারীরী। তার জন্ম বাগদাদে হলেও তার পরিবারের মূল ছিল ইরাকের নাহাওন্দ অঞ্চলে। তিনি ২৯৮ হি. বাগদাদেই মৃত্যুবরণ করেন। তদানিন্তন সময়ের প্রচলিত ও প্রয়োজনীয় সব বিদ্যায় তিনি পারদর্শিতা লাভ করেছিলেন। তিনি তাহাজ্জুদ গোজার ব্যক্তি হিসাবে সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলসহ অনেকের নিকট থেকে হাদীসও বর্ণনা করেছেন।[১১]
২. ‘আল আমছাল মিনাল কিতাবি ওয়াস সুন্নাহ’ ( الأمثال من الكتاب والسنة )
গ্রন্থটি রচনা করেছেন জনাব আল-হাকিম আত-তিরমিযী (মৃ.৩২০ হি.)। এ গ্রন্থে লেখক কুরআনী প্রবাদ এবং হাদীসে ব্যবহৃত প্রবাদসমূহ ব্যাখ্যাসহ উল্লেখ করেছেন। গ্রন্থটি আকারে বেশ বড়। কায়রোর মুনিরিয়া প্রেস থেকে ১৩৯৫ হি. মুহাম্মাদ আলী আল-বাজাভীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থকার মুহাম্মদ ইবন আলী ইবন হাসান ইবন বিশর আবু আব্দুল্লাহ আল-হাকীম আত-তিরমিযী ইরানের তিরমিয শহরে হিজরী ২য় শতকের প্রথমার্ধে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৯০ বছর বয়সে ৩২০ হি. মৃত্যুবরণ করেন।[১২] তিনি ছিলেন ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক, সূফী ও ধর্মতত্ত্ব বিশারদ। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে আছে- নাওয়াদিরুল উসূল ফী আহাদীসির রাসূল, আল-ফুরুক, গার্সূল মুওয়াহ্হিদীন, আল-মানাহী, আল-মাসাইলুল মাকনূনাহ ইত্যাদি।[১৩]
৩. ‘আমছালুল কুরআন’ ( أمثال القرآن )
গ্রন্থটি রচনা করেছেন আবু আব্দুল্লাহ নিফ্তাওয়াইহ (মৃ. ৩২৩ হি.)। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। যে কোন কারণেই হোক এটি প্রকাশ লাভ করতে পারেনি। তবে গ্রন্থটির কথা অতি গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন সর্বজনাব ঐতিহাসিক ইয়াকূত আল হামাভী[১৪] এবং বহু গ্রন্থ প্রণেতা ইমাম সুয়ূতী।[১৫] গ্রন্থকার আবু আব্দুল্লাহ ইবরাহীম ইবন আরাফা আন নিফতাওয়াইহ কুফা ও বসরার মধ্যেবর্তী স্থানে অবস্থিত ‘ওয়াসিত’ শহরে ২৪৪ হি. জন্মগ্রহণ করেন এবং বাগদাদে ৩২৩ হি. মৃত্যুবরণ করেন।[১৬] তিনি নাহু (আরবী ব্যাকরণ) শাস্ত্রের বড় পণ্ডিত ছিলেন। তিনি ইলমে হাদীসেও বুৎপত্তি লাভ করেছিলেন। মতাদর্শের দিক থেকে তিনি ইমাম দাউদ জাহেরীকে সমর্থন করতেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে আছে- কিতাবুত তারীখ, কিতাবুল ওয়াযারা, কিতাবুল আমছাল ইত্যাদি।[১৭]
৪. ‘আমছালুল কুরআন (أمثال القرآن)
গ্রন্থটি রচনা করেছেন ইবন জুনায়েদ ইসকাফী (মৃ.৩৮১ হি.)। এ গ্রন্থটি কখনো প্রকাশিত হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি। তবে প্রাচীন এবং আধুনিক লেখক ও গবেষকগণের প্রায় সবাই গ্রন্থটির কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।[১৮] ‘আত-তাহবীর ফী মু’জামিল কাবীর’-এর লেখক আব্দুল কারীম সাম‘আনী এই ইবন জুনায়েদ ইসকাফীর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন যে, তিনি হলেন, মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ ইবন আব্দুল অহিদ ইবন আহমাদ ইবন জুনায়েদ আল-ইসকাফী আল-জুনায়দী। তিনি ইস্পাহানের অধিবাসী ছিলেন। জুনায়দী বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত মুহাদ্দিছ আবু আব্দুল্লাহ কাসিম ইবন ফযল ছাকাফীর সুযোগ্য ছাত্র ছিলেন।[১৯] এখানে তার জন্ম-মৃত্যুর কোন দিন-তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। তবে ‘মাবাহিছ ফিত-তাজভীদ’ গ্রন্থে আব্দুল কাদের বাদান্জাকীর বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ৩৮১ হি. মৃত্যুবরণ করেছেন।[২০] ‘গায়াতুন নিহায়া’ গন্থের লেখক ইবন জাযরী বলেছেন যে, তিনি একজন ইলমে কিরাতের বিখ্যাত ইমাম ছিলেন।[২১]
৫. ‘আমছালুল কুরআন’ (أمثال القرآن)
গ্রন্থটি রচনা করেছেন ইবন হুসাইন নিশাপুরী (মৃ.৩৮১হি./৯৯১হি.)। ‘আমছালুল কুরআন’ নামে নিশাপুরীর এগ্রন্থটি কুরআনী প্রবাদ বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।[২২] বিশেষ করে গ্রন্থকারের লেখা ভূমিকাটি থেকে পরবর্তী আলেমগণ বেশ উপকৃত হয়েছেন। যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে গ্রন্থটি প্রকাশ লাভ করতে পারেনি। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরবর্তীতে যারা আলোচনা করেছেন তারা সবাই তার নিকট ঋণী। গ্রন্থকারের নাম হচ্ছে মুহাম্মদ ইবন হুসায়ন আস-সুলামী আন-নিশাপুরী। তার জন্ম তারিখ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তার মৃত্যু হয়েছে ৩৮১হি./৯৯১ইং সনে।[২৩]
৬. ‘আমছালুল কুরআন’ ( أمثال القرآن )
গ্রন্থকার আবুল হাসান মাওয়ার্দী (মৃ.৪৫০হি.)। কুরআনী প্রবাদ বিষয়ে গ্রন্থটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গ্রন্থকারের লেখা ভূমিকাটি থেকে পরবর্তী পণ্ডিতগণ বেশ উপকৃত হয়েছেন। যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে গ্রন্থটি প্রকাশ লাভ করতে পারেনি। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরবর্তীতে যারা আলোচনা করেছেন তারা সবাই তার নিকট ঋণী। ইমাম সুয়ূতী তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আল ইতকান ফী উলূমিল কুরআন’-এ বেশ গুরুত্বের সাথেই আলোচ্য গ্রন্থটির উল্লেখ করেছেন।[২৪] তিনি প্রবাদ সম্পর্কে কথা শুরু করতেই বলেন :
أفرده بالتصنيف الامام أبو الحسن الماوردى
‘কুরআনী প্রবাদ বিষয়ে পৃথকভাবে গ্রন্থ রচনা করেছেন ইমাম আবুল হাসান মাওয়ার্দী।’[২৫] এরপর ইমাম সুয়ূতী কুরআনী প্রবাদের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে যেয়ে উমাম মাওয়ার্দীর একটি বিখ্যাত উক্তি উল্লেখ করেন, তিনি বলেছেন,
من أعظم علم القرآن علم أمثاله والناس فى غفلة عنه
‘কুরআনী জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হচ্ছে কুরআনী প্রবাদ। আর লোকেরা সে সম্পর্কে একেবারেই বেখবর-ভ্রুক্ষেপহীন’।[২৬] গ্রন্থকার আবুল হাসান আলী ইবন মুহাম্মদ ইবন হাবীব আল-মাওয়ার্দী ইরাকের বসরা শহরে ৩৬৪ হি. জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৪৫০ হি. বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বিচারক হিসাবে সমসাময়িককালে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। মুসলিম সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে বিচারক হিসাবে তিনি সুখ্যাতি লাভ করেন। আব্বাসী খলীফা ‘আল-কায়েম বি আমরিল্লাহ’ এর সময়ে (৪২২-৪৬৭ হি.) তিনি প্রধান বিচারপতির পদ অলংকৃত করেছিলেন। তার অমর কীর্তির মধ্যে আছে - আদাবুদ দ্বীন ওয়াদ দুনিয়া, আল-আহকামুস সুলতানিয়্যা, ফী সিয়াসাতিল হুকুমাত এবং আল হাভী (বৃহদাকারের বিশ খণ্ডে বিভক্ত ফিকহী কিতাব) ইত্যাদি।[২৭]
৭. ‘আমছালুল কুরআন’ (أمثال القرآن)
এগ্রন্থটি রচনা করেন আল-খীমী (মৃ.৬৪২হি./১২৪৪ই)। কুরআনী প্রবাদ বিষয়ে গ্রন্থটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথভাবে সংরক্ষণের অভাবে গ্রন্থটি প্রকাশ লাভ করতে পারেনি। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরবর্তীতে যারা আলোচনা করেছেন তারা সবাই তার নিকট ঋণী।[২৮] গ্রন্থকারের পূর্ণ নাম হচ্ছে আবূ তালিব মুহাম্মদ ইবন আলী ইবন আল-খীমী। খীমী তার উপাধী। এউপাধীতেই তিনি অধিক পরিচিত। তিনি ৬৪২/১২৪৪ সনে মৃত্যুবরণ করেন।[২৯]
তথ্যসূত্র :
[১]. আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব : সম্পাদনা পরিষদ (দেওবন্দ : রশীদিয়া কুতুবখানা, ১৯৬৯ ইং) ধাতুমূল বা-লাম-গাইন) দ্র.।
[২]. হায়াৎ মামুদ, ড.(সম্পাদক) : বিশুদ্ধ ভাষা শিক্ষা (ঢাকা : দি অ্যাটলাস পাবলিশিং হাউস, ৪র্থ সংস্করণ, ২০১২ ইং) পৃ. ৩৬৬।
[৩]. মাজমাঊল আমছাল : মায়দনী, আবুল ফযল (কায়রো : সাআদা প্রকাশনী, ১৯৫৯ইং) ভূমিকা দ্র.; বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস : মাহবুবুল আলম, অধ্যাপক (ঢাকা: সত্য প্রকাশনী, ৫ম সংস্করণ, ১৯৯৪ইং) পৃ. ২৬৭; লোক সাহিত্যে ধাঁধা ও প্রবাদ : দীন মুহাম্মদ, ড. কাজী (ঢাকা: আধুনিক প্রকাশনী , ১৯৮৭ ইং) পৃ. ৭।
[৪]. আল-ইতকান ফী উলূমিল কুরআন : সুয়ূতী, জালালুদ্দীন (কায়রো: হালবী, ১৯৫১ ইং), ২য় খণ্ড, পৃ. ১৩১; আল-কাশশাফ : যমখশরী, মাহমুদ ইবন ওমর (দক্ষিণ হায়দ্রাবাদ : উছমানীয়া প্রকাশনী, ১৯৬২ ইং), ১ম খ-, পৃ. ১৪৯।।
[৫]. আল-আমছাল ফিন্নাছরিল আরাবিয়্যিল কাদীম: আবেদীন, ড. আব্দুল মজীদ (কায়রো: মিসরী সংস্করণ, ১৯৮৯ইং), পৃ. ৮৫; বাংলা প্রবাদ পরিচিতি : পাঠান, হানিফ (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১৯৭৬ইং), পৃ. ১-৩।
[৬]. আল-আমছালুল আরাবিয়া: কাতামিশ, ড. আ. মজীদ (দামেশক: দারুল ফিকর, ১৯৮৮ ইং) ভূমিকা দ্র.।
[৭]. আল-আমছালুল আরাবিয়া, পৃ. ১৪৩-১৫২; বালাগাতুল কুরআন : হুসাইন, মুহাম্মদ খিযির (দামেস্ক : তাআবুনিয়া প্রকাশনী, ১৯৮১ইং), পৃ. ২৬-৩৭।
[৮]. আল-আমছালুল কুরআনিয়াতুল কিয়াসিয়া : জার্বু, ড. আব্দুল্লাহ (অপ্রকাশিত পি-এইচ.ডি.থিসিস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদীনা মুনাওয়ারা, ১৪১৯হি.) ভূমিকা দ্র. ; আরবী প্রবাদ সাহিত্য : সিদ্দিকী, ড. সাইফুল ইসলাম (ঢাকা: ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ২০০২ইং.) পৃ. ১১০-১৮৮, ৩৫০-৩৭৮।
[৯]. আরবী প্রবাদ সাহিত্য , পৃ. ৩৫২।
[১০]. প্রাগুক্ত।
[১১]. তাবাকাতুল হানাবিলা : ইবন আবু ইয়ালা, মুহাম্মদ (বৈরূত : দারুল মা‘রিফা , তাবি), ১ম খণ্ড. পৃ. ১২৫।
[১২]. আল-আ‘লাম : যারাকলী, খায়রুদ্দীন (বৈরূত : দারুল কিতাবিল আরাবী, ১৯৬৯ইং.), ২য় খণ্ড, পৃ. ২৬৫।
[১৩]. প্রাগুক্ত।
[১৪]. মু’হামুল উদাবা : ইয়াকুত আল-হামাভী : উদ্ধৃত- আরবী প্রবাদ সাহিত্য,পৃ. ৩৫৩।
[১৫]. বুগ্ইয়াতুল ওয়াআত : সুয়ূতী, জালালুদ্দীন (বৈরূত : আল-মাকতাবাতুল হাদিছা , তাবি), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪২৯।
[১৬]. আল-আ‘লাম, ৬ষ্ঠ, পৃ. ৪৬।
[১৭]. প্রাগুক্ত।
[১৮]. আরবী প্রবাদ সাহিত্য, পৃ. ৩৫৩; আত-তারবিয়্যাতু বি-যারবিল আমছাল : নাহলাভী, আব্দুর রহমান (দামেশক, দারুল ফিকর, ১৯৯৮ ইং), ১ম খণ্ড. পৃ. ৪।
[১৯]. alwarraq.com - Domain Name For Sale | Dan.com, সূচী নং ৬৬৬ (আবু আব্দুল্লাহ আল জুনায়দী)।
[২০]. প্রাগুক্ত।
[২১]. alwarraq.com - Domain Name For Sale | Dan.com, গায়াতুন নিহায়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬১।
[২২]. আরবী প্রবাদ সাহিত্য, পৃ. ৩৫৩।
[২৩]. প্রাগুক্ত।
[২৪]. কায়রো : হালবী, ১৯৫১ইং) খ. ১, পৃ. ১৫১।
[২৫]. প্রাগুক্ত।
[২৬]. প্রাগুক্ত।
[২৭]. আল আ‘লাম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩২৭; তারীখু বাগদাদ : আল খতীব, আবু বকর (বৈরূত : দারুর ফিকর, ১৯৮২ ইং), ১২তম খণ্ড, পৃ. ১০২; আল-কামিল ফিত্তারীখ : ইবন আছীর, ইজ্জুদ্দীন আলী (বৈরূত : দারু সাদির, ১৯৬৫ ইং) খ. ৯, পৃ. ৬৫১; ওয়াফিয়াতুল আ’ইয়ান : ইবন খাল্লিকান, আবুল আব্বাস (বৈরূত : দারু সাদির , ১৯৭৭ ইং), খণ্ড. ৩, পৃ. ২৪২ ; মিজানুল ই’তিদাল : যাহাবী, শামসুদ্দীন (কায়রো : দারুল কুতুবিল মিসরিয়া, ১৯৬৩ ইং), খ. ৩, পৃ. ১৫৫; তাবাকাতুস সুবকী : সুবকী, তাজুদ্দীন (বৈরূত : দারুল হিজরা, ২য় সংস্করণ, ১৪১৩ হি.), খণ্ড. ৫, পৃ. ২৬৭ ; আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ইবন কাছীর, ইমাদুদ্দীন (বৈরূত : দারুল ফিকর , ১৯৭৯ ইং), খণ্ড. ১২, পৃ. ৮০ ; লিসানুল মিযান : আসকালানী, ইবন হাজার (কায়রো : দারুল মাআরিফ, ১৯৮৬ ইং), খ. ৪, পৃ. ২৬০ ; তাবাকাতুল মুফাসসিরীন : সুয়ূতী, জালালুদ্দীন ( কায়রো : ওয়াহাবা লাইব্রেরী, ১৩৬৯ হি.), খণ্ড. ১, পৃ. ২৫ ; কাশফুয যুনূন : হাজী খলীফা, মুস্তফা (তেহরান : ইসলামিয়া লাইব্রেরী , ১৩৮৭ হি.), খণ্ড. ১, পৃ. ১৯ ।
[২৮]. আরবী প্রবাদ সাহিত্য, পৃ. ৩৫২।
[২৯]. প্রাগুক্ত।
প্রফেসর ড. লোকমান হোসাইন
Last edited: