প্রশ্ন:
ক) পুরুষদের ৪টি বিয়ে করা তো জায়েজ। কিন্তু তা কি সুন্নত?
খ) কোনও স্ত্রী যদি চায় তার সাথে বিয়ের পর স্বামী আর বিয়ে না করুক, সে জন্য কি জোর করে বলতে পারবে?
গ) কিংবা বিয়ের কাবিনে কি উল্লেখ করা যাবে যে, প্রথম স্ত্রীর মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আরেক বিয়ে করতে পারবে না?
উত্তর:
ক. একাধিক বিয়ে করা সুন্নত নাকি শুধু মুবাহ (বৈধ)-এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের বিভিন্ন ধরণের অভিমত পাওয়া যায়। যেমন:
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
النص يقتضي أنها سنة، أقل الأحوال أنها سنة: فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ [النساء:3] أمر، لكن بشرط العدل، والاستقامة.
وأما إذا خاف ألا يعدل لقلة ماله، أو لشيء يعرفه من نفسه من الضعف؛ فلا يتزوج إلا واحدة
“নস (কুরআনের আয়াত)-এর দাবি অনুযায়ী তা সুন্নত। এর সর্বনিম্ন অবস্থা হল, এটি সুন্নত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ
“অত:এব মহিলাদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত।” [সূরা নিসা: ৩] এটি নির্দেশ। তবে শর্ত হল, ন্যায্যতা ও সততা প্রতিষ্ঠা করা। আর কেউ যদি অর্থের অভাব অথবা নিজের মধ্যে কোনও ধরণের দুর্বলতা সম্পর্কে জানে তাহলে সে একটার বেশি বিয়ে করবে না।” [binbaz]
সৌদি আরবের আরেক প্রখ্যাত আলেম শাইখ নাসের আল বাররাক কে প্রশ্ন করা হয়, একাধিক বিয়ে করা সুন্নত নাকি মুবাহ? তিনি উত্তরে বলেন,
مباحٌ ومشروعٌ، معَ الحاجةِ يُشرَعُ التَّعدُّدُ
“প্রয়োজনে তা মুবাহ ও শরিয়ত অনুমোদিত।” [sh-albarrak]
একাধিক বিয়ে করা সুন্নত কি না এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি উত্তরে আরও বলেন,
لا؛ مِن الجائز، التعدُّد جائز فقط، ليس فيه فضيلة، هذا لأنّه حسب الدّاعي، مِن الناس مَن يحتاج إلى أكثر مِن زوجة: فينبغي له يُستحبُّ له أن يتزوّج أكثر ما دام يحتاج وأنّ الواحدة لا تكفيه أو لا تحصنه، أمّا إذا كان الزّوجة الواحدة يحصل بها المقصود: فلا نقول تزوّج أخرى، هذا أفضل، فضيلة الزّواج بالثّانية فضيلة، لا، ليس الزّواج بالثانية فضيلة، هذا أمر يعني يرجع إلى الحاجة وتحصيل مقصود النكاح.
“না, এটা জায়েজ। একাধিক বিয়ে করা কেবল জায়েজ। এতে বিশেষ কোনও ফজিলত নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী এর বিধান বর্তাবে। কারণ কিছু মানুষের একাধিক স্ত্রী প্রয়োজন। সুতরাং তার জন্য একাধিক বিয়ে করা মোস্তাহাব-যেহেতু তা তার প্রয়োজন এবং যেহেতু একজন স্ত্রী তার জন্য যথেষ্ট নয়, একজন স্ত্রী তাকে হেফাজত করে না। হ্যাঁ, যদি এক জন দ্বারাই তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে তাকে বলবো না যে, আরেকটা বিয়ে করা, এটাই উত্তম, দ্বিতীয় বিয়ে করা মর্যাদার কাজ। না, দ্বিতীয় বিয়েতে কোনও ফজিলত নেই। অর্থাৎ বিষয়টা মানুষের প্রয়োজন ও উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার উপর নির্ভরশীল।”
অন্য একদল আলেম বলেন, মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক বিয়ের বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ বিষয়টি মূল বিয়ের মতই। কখনো তা সুন্নত বা মোস্তাহাব, কখনো ওয়াজিব আবার কখনো তা হারাম।
ইসলামে মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে একাধিক বিয়ে করা অনুমোদিত। কারণ দুনিয়ার সকল মানুষের প্রয়োজন ও সমস্যা এক রকম নয়। তাই ইসলামে এর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা হল, ২ অথবা তিন অথবা চার। ইসলাম পূর্ব যুগে এর কোন সীমা-সংখ্যা ছিল না। ইসলাম এর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সুতরাং এক সাথে চারের অতিরিক্ত বিয়ে করা জায়েজ নাই।
◯ একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামীর প্রতি অবশ্য পালনীয় শর্ত:
একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলাম কঠিন শর্ত আরোপ করেছে। তা হল, স্বামীর জন্য আবশ্যক হল, তার সকল স্ত্রীর মাঝে ন্যায়-ইনসাফ ভিত্তিক আচরণ করা এবং সমতা রক্ষা করা। কেউ যদি মনে করে যে, সে এই শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হবে না তাহলে এক স্ত্রী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটির অধিক বিয়ে করো নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً
“আর যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না, তাহলে তোমাদের জন্য একটা স্ত্রী গ্রহণ করাই অনুমোদিত।” [সুরা নিসা: ৩]।
এ শর্ত পূরণে ব্যর্থ পুরুষদের জন্য হাদিসে আখিরাতে কঠিন খারাপ পরিণতির কথা বলা হয়েছে। যেমন: আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا، جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ
“যে ব্যক্তি দুই স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়লো, কিয়ামতের দিন সে পঙ্গু অবস্থায় উপস্থিত হবে।[সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: ৬/ বিয়ে, পরিচ্ছেদ: ৩৯. স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ পূর্ণ আচরণ করা]
উল্লেখ্য যে, এই সমতা রক্ষার বিষয়টি শরিয়ত সম্মত স্ত্রীর হক আদায়ের ক্ষেত্রে (যেমন: রাত্রি বণ্টন, ভরণ-পোষণ তথা খাবার, পোশাক, বাসস্থান ইত্যাদি)। আন্তরিক টান, যৌন বাসনা বা সহবাসের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা আবশ্যক নয়। কারণ অন্তরের আকর্ষণ ও ভালবাসার বিষয়টি মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। আর এটিই আল্লাহ তাআলার এই আয়াতের অর্থ-আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ
“তোমরা কখনও স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না যদিও তোমরা তা প্রত্যাশা করো।” [সূরা নিসা: ১২৯] (দেখুন: তাফসিরে ইবনে কাসির)
খ. বিয়ের সময় স্ত্রী যদি কাবিননামায় ‘১ম স্ত্রী মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বামী ২য় বিয়ে করতে পারবে না’ বলে শর্ত জুড়ে দেয় আর স্বামী যদি তাতে সম্মতি দেয় তাহলে এই শর্ত পালন করা স্বামীর জন্য অপরিহার্য। স্বামী তা লঙ্ঘন করলে স্ত্রীর বিয়ে ভঙ্গ করার অধিকার আছে। কারণ, হাদিসের আলোকে মুসলিম তার শর্ত পালনে বাধ্য। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
المسلمونَ على شروطِهم
“মুসলিমরা নিজেদের (চুক্তিপত্রের) শর্তসমূহ পালন করতে বাধ্য।” [সুনান আবু দাউদ-১৯/ বিচার ব্যবস্থা, পরিচ্ছেদ: ১২. সন্ধি স্থাপন। হাসান-শাইখ আলবানি]
তাছাড়া হাদিসে এসেছে, ওয়াদা রক্ষা না করা মুনাফেকির আলামত।
ইবনুল কুদামা বলেন,
" إذا اشترط لها أن لا يخرجها من دارها أو بلدها ، أو لا يسافر بها ، أو لا يتزوج عليها : فهذا يلزمه الوفاء به ، فإن لم يفعل فلها فسخ النكاح ، روي هذا عن عمر وسعد بن أبي وقاص وعمرو بن العاص رضي الله عنهم " .
انتهى باختصار من "المغني" (9/483)
“যদি স্ত্রী শর্তারোপ করে যে, স্বামী তাকে তার নিজ বাড়ি থেকে অথবা নিজ এলাকা থেকে বাইরে কোথাও নিয়ে যেতে পারবে না বা তাকে নিয়ে সফর করতে পারবে না অথবা তার উপর অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না তাহলে স্বামীর জন্য এই শর্ত পালন করা আবশ্যক। যদি সে তা না করে তাহলে স্ত্রীর অধিকার আছে, বিয়ে ভঙ্গ করার। এমনটি উমর রা., সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা., আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে।” [আল মুগনি থেকে সংক্ষেপায়িত, ৯/৪৮৩]
এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত থাকলেও এটিই অধিক বিশুদ্ধ অভিমত।
আধুনিক যুগের শাইখ সালেহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)ও এই মত গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বিয়েতে যে সকল শর্তারোপ করা শুদ্ধ সেগুলোর মধ্যে একটি হল, যদি সে স্বামীকে শর্ত দেয় যে, সে তার উপর অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। স্বামী যদি তা পালন করে তাহলে তো ঠিক আছে। কিন্তু তা না করলে তার অধিকার আছে বিয়ে ভঙ্গ করার। কারণ হাদিসে এসেছে,
أَحَقُّ الشُّرُوطِ أَنْ تُوفُوا بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوجَ
“শর্তসমূহের মধ্যে যা পূর্ণ করার সর্বাধিক দাবী রাখে তা হল, সেই শর্ত যার দ্বারা তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ।” [মুসলিম ১৬/৭ হাদিস নাম্বার: ১৪১৮]
গ. বিয়ের পূর্বে ‘২য় বিয়ে করা যাবে না’ মর্মে কোন শর্ত না থাকলে স্বামীকে তার প্রয়োজনে ২য় বিয়ে করতে বাধা দেয়া স্ত্রীর চরম অন্যায় এবং স্বামীকে মহান আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার পালনে হস্তক্ষেপের শামিল। এ ক্ষেত্রে স্বামী বিপথে গিয়ে অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হলে উভয়েই গুনাহগার হবে। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, নিজেকে পবিত্র রাখা।
আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
ক) পুরুষদের ৪টি বিয়ে করা তো জায়েজ। কিন্তু তা কি সুন্নত?
খ) কোনও স্ত্রী যদি চায় তার সাথে বিয়ের পর স্বামী আর বিয়ে না করুক, সে জন্য কি জোর করে বলতে পারবে?
গ) কিংবা বিয়ের কাবিনে কি উল্লেখ করা যাবে যে, প্রথম স্ত্রীর মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আরেক বিয়ে করতে পারবে না?
উত্তর:
ক. একাধিক বিয়ে করা সুন্নত নাকি শুধু মুবাহ (বৈধ)-এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের বিভিন্ন ধরণের অভিমত পাওয়া যায়। যেমন:
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
النص يقتضي أنها سنة، أقل الأحوال أنها سنة: فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ [النساء:3] أمر، لكن بشرط العدل، والاستقامة.
وأما إذا خاف ألا يعدل لقلة ماله، أو لشيء يعرفه من نفسه من الضعف؛ فلا يتزوج إلا واحدة
“নস (কুরআনের আয়াত)-এর দাবি অনুযায়ী তা সুন্নত। এর সর্বনিম্ন অবস্থা হল, এটি সুন্নত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ
“অত:এব মহিলাদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত।” [সূরা নিসা: ৩] এটি নির্দেশ। তবে শর্ত হল, ন্যায্যতা ও সততা প্রতিষ্ঠা করা। আর কেউ যদি অর্থের অভাব অথবা নিজের মধ্যে কোনও ধরণের দুর্বলতা সম্পর্কে জানে তাহলে সে একটার বেশি বিয়ে করবে না।” [binbaz]
সৌদি আরবের আরেক প্রখ্যাত আলেম শাইখ নাসের আল বাররাক কে প্রশ্ন করা হয়, একাধিক বিয়ে করা সুন্নত নাকি মুবাহ? তিনি উত্তরে বলেন,
مباحٌ ومشروعٌ، معَ الحاجةِ يُشرَعُ التَّعدُّدُ
“প্রয়োজনে তা মুবাহ ও শরিয়ত অনুমোদিত।” [sh-albarrak]
একাধিক বিয়ে করা সুন্নত কি না এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি উত্তরে আরও বলেন,
لا؛ مِن الجائز، التعدُّد جائز فقط، ليس فيه فضيلة، هذا لأنّه حسب الدّاعي، مِن الناس مَن يحتاج إلى أكثر مِن زوجة: فينبغي له يُستحبُّ له أن يتزوّج أكثر ما دام يحتاج وأنّ الواحدة لا تكفيه أو لا تحصنه، أمّا إذا كان الزّوجة الواحدة يحصل بها المقصود: فلا نقول تزوّج أخرى، هذا أفضل، فضيلة الزّواج بالثّانية فضيلة، لا، ليس الزّواج بالثانية فضيلة، هذا أمر يعني يرجع إلى الحاجة وتحصيل مقصود النكاح.
“না, এটা জায়েজ। একাধিক বিয়ে করা কেবল জায়েজ। এতে বিশেষ কোনও ফজিলত নেই। প্রয়োজন অনুযায়ী এর বিধান বর্তাবে। কারণ কিছু মানুষের একাধিক স্ত্রী প্রয়োজন। সুতরাং তার জন্য একাধিক বিয়ে করা মোস্তাহাব-যেহেতু তা তার প্রয়োজন এবং যেহেতু একজন স্ত্রী তার জন্য যথেষ্ট নয়, একজন স্ত্রী তাকে হেফাজত করে না। হ্যাঁ, যদি এক জন দ্বারাই তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে তাকে বলবো না যে, আরেকটা বিয়ে করা, এটাই উত্তম, দ্বিতীয় বিয়ে করা মর্যাদার কাজ। না, দ্বিতীয় বিয়েতে কোনও ফজিলত নেই। অর্থাৎ বিষয়টা মানুষের প্রয়োজন ও উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার উপর নির্ভরশীল।”
অন্য একদল আলেম বলেন, মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক বিয়ের বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ বিষয়টি মূল বিয়ের মতই। কখনো তা সুন্নত বা মোস্তাহাব, কখনো ওয়াজিব আবার কখনো তা হারাম।
ইসলামে মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে একাধিক বিয়ে করা অনুমোদিত। কারণ দুনিয়ার সকল মানুষের প্রয়োজন ও সমস্যা এক রকম নয়। তাই ইসলামে এর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা হল, ২ অথবা তিন অথবা চার। ইসলাম পূর্ব যুগে এর কোন সীমা-সংখ্যা ছিল না। ইসলাম এর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সুতরাং এক সাথে চারের অতিরিক্ত বিয়ে করা জায়েজ নাই।
◯ একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামীর প্রতি অবশ্য পালনীয় শর্ত:
একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলাম কঠিন শর্ত আরোপ করেছে। তা হল, স্বামীর জন্য আবশ্যক হল, তার সকল স্ত্রীর মাঝে ন্যায়-ইনসাফ ভিত্তিক আচরণ করা এবং সমতা রক্ষা করা। কেউ যদি মনে করে যে, সে এই শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হবে না তাহলে এক স্ত্রী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটির অধিক বিয়ে করো নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً
“আর যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না, তাহলে তোমাদের জন্য একটা স্ত্রী গ্রহণ করাই অনুমোদিত।” [সুরা নিসা: ৩]।
এ শর্ত পূরণে ব্যর্থ পুরুষদের জন্য হাদিসে আখিরাতে কঠিন খারাপ পরিণতির কথা বলা হয়েছে। যেমন: আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ فَمَالَ إِلَى إِحْدَاهُمَا، جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّهُ مَائِلٌ
“যে ব্যক্তি দুই স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়লো, কিয়ামতের দিন সে পঙ্গু অবস্থায় উপস্থিত হবে।[সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: ৬/ বিয়ে, পরিচ্ছেদ: ৩৯. স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ পূর্ণ আচরণ করা]
উল্লেখ্য যে, এই সমতা রক্ষার বিষয়টি শরিয়ত সম্মত স্ত্রীর হক আদায়ের ক্ষেত্রে (যেমন: রাত্রি বণ্টন, ভরণ-পোষণ তথা খাবার, পোশাক, বাসস্থান ইত্যাদি)। আন্তরিক টান, যৌন বাসনা বা সহবাসের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা আবশ্যক নয়। কারণ অন্তরের আকর্ষণ ও ভালবাসার বিষয়টি মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। আর এটিই আল্লাহ তাআলার এই আয়াতের অর্থ-আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ
“তোমরা কখনও স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না যদিও তোমরা তা প্রত্যাশা করো।” [সূরা নিসা: ১২৯] (দেখুন: তাফসিরে ইবনে কাসির)
খ. বিয়ের সময় স্ত্রী যদি কাবিননামায় ‘১ম স্ত্রী মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বামী ২য় বিয়ে করতে পারবে না’ বলে শর্ত জুড়ে দেয় আর স্বামী যদি তাতে সম্মতি দেয় তাহলে এই শর্ত পালন করা স্বামীর জন্য অপরিহার্য। স্বামী তা লঙ্ঘন করলে স্ত্রীর বিয়ে ভঙ্গ করার অধিকার আছে। কারণ, হাদিসের আলোকে মুসলিম তার শর্ত পালনে বাধ্য। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
المسلمونَ على شروطِهم
“মুসলিমরা নিজেদের (চুক্তিপত্রের) শর্তসমূহ পালন করতে বাধ্য।” [সুনান আবু দাউদ-১৯/ বিচার ব্যবস্থা, পরিচ্ছেদ: ১২. সন্ধি স্থাপন। হাসান-শাইখ আলবানি]
তাছাড়া হাদিসে এসেছে, ওয়াদা রক্ষা না করা মুনাফেকির আলামত।
ইবনুল কুদামা বলেন,
" إذا اشترط لها أن لا يخرجها من دارها أو بلدها ، أو لا يسافر بها ، أو لا يتزوج عليها : فهذا يلزمه الوفاء به ، فإن لم يفعل فلها فسخ النكاح ، روي هذا عن عمر وسعد بن أبي وقاص وعمرو بن العاص رضي الله عنهم " .
انتهى باختصار من "المغني" (9/483)
“যদি স্ত্রী শর্তারোপ করে যে, স্বামী তাকে তার নিজ বাড়ি থেকে অথবা নিজ এলাকা থেকে বাইরে কোথাও নিয়ে যেতে পারবে না বা তাকে নিয়ে সফর করতে পারবে না অথবা তার উপর অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না তাহলে স্বামীর জন্য এই শর্ত পালন করা আবশ্যক। যদি সে তা না করে তাহলে স্ত্রীর অধিকার আছে, বিয়ে ভঙ্গ করার। এমনটি উমর রা., সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা., আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে।” [আল মুগনি থেকে সংক্ষেপায়িত, ৯/৪৮৩]
এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত থাকলেও এটিই অধিক বিশুদ্ধ অভিমত।
আধুনিক যুগের শাইখ সালেহ আল ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)ও এই মত গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বিয়েতে যে সকল শর্তারোপ করা শুদ্ধ সেগুলোর মধ্যে একটি হল, যদি সে স্বামীকে শর্ত দেয় যে, সে তার উপর অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। স্বামী যদি তা পালন করে তাহলে তো ঠিক আছে। কিন্তু তা না করলে তার অধিকার আছে বিয়ে ভঙ্গ করার। কারণ হাদিসে এসেছে,
أَحَقُّ الشُّرُوطِ أَنْ تُوفُوا بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوجَ
“শর্তসমূহের মধ্যে যা পূর্ণ করার সর্বাধিক দাবী রাখে তা হল, সেই শর্ত যার দ্বারা তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ।” [মুসলিম ১৬/৭ হাদিস নাম্বার: ১৪১৮]
গ. বিয়ের পূর্বে ‘২য় বিয়ে করা যাবে না’ মর্মে কোন শর্ত না থাকলে স্বামীকে তার প্রয়োজনে ২য় বিয়ে করতে বাধা দেয়া স্ত্রীর চরম অন্যায় এবং স্বামীকে মহান আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার পালনে হস্তক্ষেপের শামিল। এ ক্ষেত্রে স্বামী বিপথে গিয়ে অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হলে উভয়েই গুনাহগার হবে। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, নিজেকে পবিত্র রাখা।
আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল