ইবাদাত হচ্ছে ওহী নির্ভর। এ কথার অর্থ হলো: আল-কুরআন ও সুন্নাহ’র দলীল ছাড়া ইবাদাতের কোনো কিছুই শরী‘আতসিদ্ধ নয়। আর যা শরী‘আতসিদ্ধ নয় তা বিদ‘আত ও প্রত্যাখ্যাত বলেই গণ্য হয়। যেমন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করে যার ওপর আমাদের নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।”[1] অর্থাৎ তার সেই আমলটি তার উপরেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হয় না বরং এ আমল করে সে গুনাহগার হয়। কেননা এ আমলটি তখন পাপ ও নাফরমানি হিসেবে সাব্যস্ত হয় এবং তা আনুগত্য ও ইবাদাত বলে বিবেচিত হয় না। সুতরাং শরী‘আত সম্মত ইবাদাত পালনের বিশুদ্ধ পদ্ধতি হচ্ছে - অলসতা ও উপেক্ষা এবং বাড়াবাড়ি ও গোঁড়ামি করার মাঝামাঝি একটি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন,
“সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ তাতে স্থির থাকো এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারাও স্থির থাকুক। আর তোমরা সীমা লঙ্ঘন করো না।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১১২]
এ আয়াতে ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে একটি বিশুদ্ধ পন্থার দিক-নির্দেশনা রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে ন্যায় পথে ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে স্থির থাকা। যার মধ্যে কোনো বাড়াবাড়িও নেই, কোনো কমতিও নেই। সীমালঙ্ঘন হচ্ছে বাড়াবাড়ি ও গোঁড়ামির মাধ্যমে সীমা অতিক্রম করা। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারলেন যে, তাঁর তিনজন সাহাবী নিজেদের আমলের মধ্যে কমতি আছে বলে মনে করল, যেমন তাদের একজন বললেন, আমি রোযা রেখে যাব এবং রোযা ভাংবো না। আরেকজন বললেন, আমি সালাত পড়ব এবং কোনো শয়ন করবো না। তৃতীয় ব্যক্তি বললেন, আমি নারীদেরকে বিবাহ করবো না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আর আমি সাওমও রাখব এবং সাওম ভাঙ্গবো, মেয়েদেরকে বিবাহ করব। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।”[2]
এখন দু’ ধরনের লোক দেখতে পাওয়া যায় যারা ইবাদাতের ক্ষেত্রে দুটো পরস্পর বিরোধী মতের ওপর রয়েছে।
প্রথম দল: তারা ইবাদাতের অর্থ নির্ণয়ে ত্রুটি সৃষ্টি করেছে এবং ইবাদাত আদায়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ অবহেলা ও গাফলতি প্রদর্শন করেছে। এমনকি তারা বহু ইবাদাতকে অকার্যকর করে দিয়েছে আর ইবাদাতকে তারা কয়েকটি নির্দিষ্ট আমলের ওপর এবং বিশেষ বিশেষ অল্প কিছু নিদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছে, যা শুধুমাত্র মসজিদে আদায় করা হয়। আর ঘরে, অফিসে, ব্যবসায় কেন্দ্রে, রাস্তায়, মু‘আমালাতের ক্ষেত্রে, রাজনীতিতে, বিবাদ-বিসম্বাদে, ফায়সালার ক্ষেত্রে ও জীবনের আরো অন্যান্য ক্ষেত্রে ইবাদাত করার কোনো সুযোগই তাদের কাছে নেই। এটি সত্যি যে, মসজিদের বিরাট ফযিলত ও মর্যাদা রয়েছে এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে আদায় করাটা ওয়াজিব। কিন্তু ইবাদাত মসজিদের ভিতরে ও মসজিদের বাইরে মুসলিম জীবনের পুরোটাকেই শামিল করে।
দ্বিতীয় দল: ইবাদাতের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেছে। তারা মুস্তাহাব পর্যায়ের ইবাদাতগুলোকে ওয়াজিবের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারা অনেক মুবাহকে হারাম করে দিয়েছে এবং যারা তাদের নিয়ম নীতির খেলাফ করে তাদেরকে তারা বিভ্রান্ত ও ভুল পথে আছে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এভাবে ইবাদাতের পুরো অর্থকে তারা ভ্রান্তভাবে পাল্টে দিয়েছে। অথচ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শই হচ্ছে সর্বোত্তম আদর্শ এবং ইবাদাতের ক্ষেত্রে নতুন অবিষ্কৃত সব কিছুই হচ্ছে সবচেয়ে মন্দ ও নিকৃষ্ট।
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৯০, ৭৬৬৬।
[2] হাদীসটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
«مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ»
“যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করে যার ওপর আমাদের নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।”[1] অর্থাৎ তার সেই আমলটি তার উপরেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হয় না বরং এ আমল করে সে গুনাহগার হয়। কেননা এ আমলটি তখন পাপ ও নাফরমানি হিসেবে সাব্যস্ত হয় এবং তা আনুগত্য ও ইবাদাত বলে বিবেচিত হয় না। সুতরাং শরী‘আত সম্মত ইবাদাত পালনের বিশুদ্ধ পদ্ধতি হচ্ছে - অলসতা ও উপেক্ষা এবং বাড়াবাড়ি ও গোঁড়ামি করার মাঝামাঝি একটি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন,
﴿فَٱسۡتَقِمۡ كَمَآ أُمِرۡتَ وَمَن تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطۡغَوۡاْۚ ﴾ [هود: ١١٢]
“সুতরাং তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ তাতে স্থির থাকো এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তারাও স্থির থাকুক। আর তোমরা সীমা লঙ্ঘন করো না।” [সূরা হূদ, আয়াত: ১১২]
এ আয়াতে ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে একটি বিশুদ্ধ পন্থার দিক-নির্দেশনা রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে ন্যায় পথে ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে স্থির থাকা। যার মধ্যে কোনো বাড়াবাড়িও নেই, কোনো কমতিও নেই। সীমালঙ্ঘন হচ্ছে বাড়াবাড়ি ও গোঁড়ামির মাধ্যমে সীমা অতিক্রম করা। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারলেন যে, তাঁর তিনজন সাহাবী নিজেদের আমলের মধ্যে কমতি আছে বলে মনে করল, যেমন তাদের একজন বললেন, আমি রোযা রেখে যাব এবং রোযা ভাংবো না। আরেকজন বললেন, আমি সালাত পড়ব এবং কোনো শয়ন করবো না। তৃতীয় ব্যক্তি বললেন, আমি নারীদেরকে বিবাহ করবো না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আর আমি সাওমও রাখব এবং সাওম ভাঙ্গবো, মেয়েদেরকে বিবাহ করব। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।”[2]
এখন দু’ ধরনের লোক দেখতে পাওয়া যায় যারা ইবাদাতের ক্ষেত্রে দুটো পরস্পর বিরোধী মতের ওপর রয়েছে।
প্রথম দল: তারা ইবাদাতের অর্থ নির্ণয়ে ত্রুটি সৃষ্টি করেছে এবং ইবাদাত আদায়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ অবহেলা ও গাফলতি প্রদর্শন করেছে। এমনকি তারা বহু ইবাদাতকে অকার্যকর করে দিয়েছে আর ইবাদাতকে তারা কয়েকটি নির্দিষ্ট আমলের ওপর এবং বিশেষ বিশেষ অল্প কিছু নিদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছে, যা শুধুমাত্র মসজিদে আদায় করা হয়। আর ঘরে, অফিসে, ব্যবসায় কেন্দ্রে, রাস্তায়, মু‘আমালাতের ক্ষেত্রে, রাজনীতিতে, বিবাদ-বিসম্বাদে, ফায়সালার ক্ষেত্রে ও জীবনের আরো অন্যান্য ক্ষেত্রে ইবাদাত করার কোনো সুযোগই তাদের কাছে নেই। এটি সত্যি যে, মসজিদের বিরাট ফযিলত ও মর্যাদা রয়েছে এবং পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে আদায় করাটা ওয়াজিব। কিন্তু ইবাদাত মসজিদের ভিতরে ও মসজিদের বাইরে মুসলিম জীবনের পুরোটাকেই শামিল করে।
দ্বিতীয় দল: ইবাদাতের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেছে। তারা মুস্তাহাব পর্যায়ের ইবাদাতগুলোকে ওয়াজিবের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তারা অনেক মুবাহকে হারাম করে দিয়েছে এবং যারা তাদের নিয়ম নীতির খেলাফ করে তাদেরকে তারা বিভ্রান্ত ও ভুল পথে আছে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এভাবে ইবাদাতের পুরো অর্থকে তারা ভ্রান্তভাবে পাল্টে দিয়েছে। অথচ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শই হচ্ছে সর্বোত্তম আদর্শ এবং ইবাদাতের ক্ষেত্রে নতুন অবিষ্কৃত সব কিছুই হচ্ছে সবচেয়ে মন্দ ও নিকৃষ্ট।
তাওহীদ পরিচিতি
ড. সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ড. সালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদ: ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৯০, ৭৬৬৬।
[2] হাদীসটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।