‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

Asking আসরের নামাজ কয় রাকাত

Solution

১. আসরের নামাজ কত রাকাত​

আসরের নামাজ মোট ৮ রাকাত; তার মধ্যে ৪ রাকাত ফরজ। ফরজ নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কেউ যদি মাঝে মধ্যে জামাতে উপস্থিত হতে সক্ষম না হয় তবে বাড়িতেই একাকী পড়তে পারে। এবং ফরজের পূর্বে ৪ রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ; যেটি পড়লে অনেক ফজিলত রয়েছে কিন্তু না পড়লে কোন গুনাহ নেই।


২. আসরের নামাজের সময়​

বস্তুর মূল ছায়ার এক গুণ হওয়ার পর হতে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং দুই গুণ হলে শেষ হয়। তবে সূর্যাস্তের প্রাক্কালের রক্তিম সময় পর্যন্ত আসর পড়া জায়েয আছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩)

৩. আসরের নামাজের নিয়ম সংক্ষিপ্ত​

(১) তাকবীরে তাহরীমা : ওযূ করার পর ছালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা শেষে বুকে বাঁধবে। এ সময়...

ChatGPT

Ask me anything!

Threads
0
Comments
224
Solutions
10
Reactions
46
Credits
123
আসরের নামাজ তিন রাকাত হয়। এটি শরিয়তের আদেশে নিয়মিতভাবে পড়া হয়। আসরের নামাজের নিয়ম একটি প্রতিছায়া যা অনুশীলন করতে পারেন:

1. প্রথম রাকাতের পূর্বে তাহারাত ও নিয়াত করতে হবে। তাহারাতে অবশ্যই তিএন ফিঁস্তায়িল হওয়া উচিত। তাহারাত পড়তে কিছু দিক দিয়ে তাহামম করে সমাপ্ত করতে হবে। পরে অভিমুখ হয়ে নিয়াত করতে হবে এবং অস্থা মেয়ায়াল করতে হবে।

2. প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পদ পড়ে তাহারাত পড়তে হবে। পরে রুকুতে যাবেন, যেখানে আসরের সকল রাকাতে রুকু আছে। এরপর রুকন থেকে উঠে আপনার দৈব পর্যাপ্ত সম্যক অস্থানে থাকা পাবেন। এখানে সবচেয়ে বেশি সময় অতিক্রম করা একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ।

3. এখন পূর্ববর্তীর মতো দুটি সূরা ফাতিহাহও পড়তে হবে, তবে রুকুনে এক বার তাহাফাযিল একটি আরকান পড়ে হা সমবায় পরে আকায়াত করতে হবে।

4. এই শেষ রাকাতে একটি সূরা ফাতিহাহ পড়তে হবে এবং তাহাতে পড়া উচিত। এবারে অস্থগা মেয়াল করে আসীর সমমাপ্ত করতে হবে।

এইভাবে তালিকাভুক্ত নামাজেই আসরের নামাজ ২ রাকাত থেকে ৩ রাকাতে গুড হয়। বছরের মধ্যে কিছু দিনমাত্র ২ রাকাত আসর নামাজ হয়। সাধারণত অর্ধ সকাল থেকে অর্ধ বিকাল পর্যন্ত আসরের নামাজ পড়া হয়। তবে শরীয়তের কয়েকটি কারণ চাইলে আসরের নামাজ ২ রাকাত হতে পারে। প্রতিটি রাকাতের নিচে একটি পদ আলাদা করায় হলেও মোট রাকাতের সংখ্যা এরপরেই নির্ধারিত হবে। এক্ষেত্রে প্রমান পড়ুন তথাপিয় বইয়ে।
 

Shams uz-zaman

Active member

Threads
26
Comments
32
Reactions
258
Credits
493
ভুল উত্তর
 

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
Threads
745
Comments
997
Solutions
19
Reactions
10,253
Credits
6,301

১. আসরের নামাজ কত রাকাত​

আসরের নামাজ মোট ৮ রাকাত; তার মধ্যে ৪ রাকাত ফরজ। ফরজ নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কেউ যদি মাঝে মধ্যে জামাতে উপস্থিত হতে সক্ষম না হয় তবে বাড়িতেই একাকী পড়তে পারে। এবং ফরজের পূর্বে ৪ রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ; যেটি পড়লে অনেক ফজিলত রয়েছে কিন্তু না পড়লে কোন গুনাহ নেই।


২. আসরের নামাজের সময়​

বস্তুর মূল ছায়ার এক গুণ হওয়ার পর হতে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং দুই গুণ হলে শেষ হয়। তবে সূর্যাস্তের প্রাক্কালের রক্তিম সময় পর্যন্ত আসর পড়া জায়েয আছে। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩)

৩. আসরের নামাজের নিয়ম সংক্ষিপ্ত​

(১) তাকবীরে তাহরীমা : ওযূ করার পর ছালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা শেষে বুকে বাঁধবে। এ সময় বাম হাতের উপরে ডান হাত কনুই বরাবর রাখবে অথবা বাম কব্জির উপরে ডান কব্জি রেখে বুকের উপর হাত বাঁধবে। অতঃপর সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্রচিত্তে ছানা পাঠের মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদত সালাতের শুভ সূচনা করবে।

(২) সূরায়ে ফাতিহা পাঠ : দোয়ায়ে ইস্তেফতাহ বা ছানা’ পড়ে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করবে এবং অন্যান্য রাকাতে আউযুবিল্লাহ বাদে কেবল বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পড়বে। জেহরী সালাত হলে সূরায়ে ফাতিহা শেষে সশব্দে আমীন’ বলবে।


(৩) কিরাআত : সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম কিংবা একাকী মুছল্লী হলে প্রথম দু’রাকআতে কুরআনের অন্য কোন সূরা বা কিছু আয়াত তিলাওয়াত করবে। কিন্তু মুক্তাদী হলে জেহরী সালাতে চুপে চুপে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে ও ইমামের কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তবে যোহর ও আসরের সালাতে ইমাম মুক্তাদী সকলে প্রথম দুই রাকাতে সূরায়ে ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে এবং শেষের দুই রাকাতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে।

(৪) রুকু : কেরাত শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দু হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফউল ইয়াদায়েন করে রুকুতে যাবে। এ সময় হাঁটুর উপরে দু’হাতে ভর দিয়ে পা, হাত, পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে এবং রুকুর দোয়া ‘সুবহা-না রব্বিয়াল আযীম’ (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান) কমপক্ষে তিনবার পড়বে।


(৫) ক্বওমা : অতঃপর রুকু থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবে। এ সময় দু’হাত কিবলামুখী খাড়া রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবে ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ তার কথা শােনেন, যে তার প্রশংসা করে)। অতঃপর কওমার দোয়া ’রব্বানা লাকাল হামদ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা) অথবা ‘রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাসীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়) একবার পড়বে। ক্বওমার জন্য অন্য দোয়াও রয়েছে।​

(৬) সিজদা : ক্বওমার দোয়া পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দুই হাটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও বেশি বেশি সিজদার দোয়া পড়বে। এ সময় দু’হাত কিবলামুখী করে মাথার দু’পাশে কাধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে। কনুই ও বগল ফাঁকা থাকবে। হাঁটুতে বা মাটিতে ঠেস দিবে না। সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সােজা থাকবে। যেন নীচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাকা থাকে। সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় স্থিরভাবে বসে দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দোয়া পড়বে। অতঃপর আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও সিজদার দোআ পড়বে। রুকু ও সিজদায় কুরআনী দোআ পড়বে না। ২য় ও ৪র্থ রাকআতে দাঁড়াবার প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসবে। একে ‘জালসায়ে ইস্তিরাহাত’ বা ‘স্বস্তির বৈঠক’ বলে। অতঃপর মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে।

(৭) বৈঠক : ২য় রাকাত শেষে বৈঠকে বসবে। যদি ১ম বৈঠক হয়, তবে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ে ৩য় রাকাতের জন্য উঠে যাবে। আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরুদ শরীফ, দো’আয়ে মাছূরাহ ও সম্ভব হলে বেশি বেশি করে অন্য দোয়া পড়বে। ১ম বৈঠকে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে এবং শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে বাম নিতম্বের উপরে বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে। এ সময় ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো ক্বিবলামুখী করবে। বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত শাহাদাত অঙ্গুলি নাড়িয়ে ইশারা করতে থাকবে। মুসল্লির নজর ইশারার বাইরে যাবে না।

(৮) দোয়ায়ে মাছূরাহ শেষে প্রথমে ডানে ও পরে বামে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ (আল্লাহর পক্ষ হতে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক!) বলে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবে।

আসরের নামাজ কত রাকাত ও আসরের নামাজের নিয়ম. আসরের নামাজ কয় রাকাত. আছরের নামাজ কত রাকাত​

৪. আসরের নামাজের নিয়ম বিস্তারিত​

৪.১. আসরের নামাজের নিয়ত​

নিয়ত অর্থ সংকল্প। সালাতের শুরুতে নিয়ত করা অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, সকল কাজ নিয়তের উপরে নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই-ই পাবে, যার জন্য সে নিয়ত করবে। (সহীহ বুখারী ও মিশকাত -এর ১ম হাদীছ) অতএব সালাতের জন্য ওযু করে পবিত্র হয়ে পরিচ্ছন্ন পোশাক ও দেহ-মন নিয়ে কা’বা গৃহ পানে মুখ ফিরিয়ে মনে মনে সালাতের দৃঢ় সংকল্প করে স্বীয় প্রভুর সন্তুষ্টি কামনায় তার সম্মুখে বিনম্র চিত্তে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। মুখে নিয়ত পাঠের প্রচলিত রেওয়াজটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সালাতে এর কোন স্থান নেই। অনেকে সালাত শুরুর আগেই জায়নামাজের দোয়া মনে করে ইন্নী ওয়াজ্জাহতু…পড়েন। এই রেওয়াজটি সুন্নাতের বরখেলাপ। মূলত জায়নামাজের দোয়া বলে কিছু নেই।

৪.২. তাকবীরে তাহরীমা​

ওযু করার পর ছালাতের সংকল্প করে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে দুই হাতের আংগুল সমূহ ক্বিবলামুখী খাড়াভাবে কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে দুনিয়াবী সবকিছুকে হারাম করে দিয়ে স্বীয় প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করে বলবে ‘আল্লা-হু আকবার’ (আল্লাহ সবার চেয়ে বড়)। অতঃপর বাম হাতের উপর ডান হাত বুকের উপরে বেঁধে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সম্মুখে নিবেদিত চিত্তে সিজদার স্থান বরাবর দৃষ্টি রেখে দন্ডায়মান হবে।

ওয়ায়েল বিন হুজুর (রাঃ) বলেন,

আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে সালাত আদায় করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে, তিনি বাম হাতের উপরে ডান হাত স্বীয় বুকের উপর রাখলেন।

ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৪৭৯; আবুদাউদ হা/৭৫৫, ইবনু মাসঊদ হতে; ঐ, হা/৭৫৯

৪.৩. ছানা​

ছানা অর্থ প্রশংসা। এটা মূলতঃ দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ বা ছালাত শুরুর দো’আ; বুকে জোড় হাত বেঁধে সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে বিনম্র চিত্তে নিম্নোক্ত দোআর মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদতের শুভ সূচনা করবে।

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী ওয়া বায়না খাত্বা-ইয়া-ইয়া, কামা বা‘আদতা বায়নাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিবি। আল্লা-হুম্মা নাককিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া, কামা ইউনাককৃাছ সাওবুল আব ইয়াযু মিনাদ দানাসি। আল্লা হুম্মাগসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিল মা-য়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি’।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমার ও আমার গুনাহ সমূহের মধ্যে এমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে পরিচ্ছন্ন করুন গুনাহ সমূহ হতে, যেমন পরিচ্ছন্ন করা হয় সাদা কাপড় ময়লা হতে। হে আল্লাহ, আপনি আমার গুনাহ সমূহকে ধুয়ে সাফ করে দিন পানি দ্বারা, বরফ দ্বারা ও শিশির দ্বারা।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮১২ তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।

একে ‘ছানা বা দোয়ায়ে ইস্তেফতাহ বলা হয়। ছানার জন্য অন্য দো’আও রয়েছে। তবে এই দো’আটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ।

৪.৪. সূরায়ে ফাতিহা পাঠ​

দোয়ায়ে ইস্তেফতাহ বা ছানা’ পড়ে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহ সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে এবং অন্যান্য রাকাতে কেবল বিসমিল্লাহ বলবে। জেহরী সালাত হলে সূরায়ে ফাতিহা শেষে সশব্দে আমীন’ বলবে।

৪.৫. কিরাআত​

সূরায়ে ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম কিংবা একাকী মুছল্লী হলে প্রথম দু’রাকআতে কুরআনের অন্য কোন সূরা বা কিছু আয়াত তিলাওয়াত করবে। কিন্তু মুক্তাদী হলে জেহরী সালাতে চুপে চুপে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে ও ইমামের ক্বিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তবে যোহর ও আসরের ছালাতে ইমাম মুক্তাদী সকলে প্রথম দু’রাকআতে সূরায়ে ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে এবং শেষের দুই রাকাতে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করবে।

৪.৬. রুকু​

কিরাআত শেষে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে দু হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উঠিয়ে ‘রাফউল ইয়াদায়েন করে রুকুতে যাবে। এ সময় হাঁটুর উপরে দুই হাতে ভর দিয়ে পা, হাত, পিঠ ও মাথা সোজা রাখবে এবং রুকুর দো’আ পড়বে।

রুকুর দো’আ : সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’ (মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি মহান) কমপক্ষে তিনবার পড়বে।

৪.৭. কওমা​

অতঃপর রুকু থেকে উঠে সোজা ও সুস্থিরভাবে দাঁড়াবে। এ সময় দু’হাত কিবলামুখী খাড়া রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবে ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ তার কথা শোনেন, যে তার প্রশংসা করে)। অতঃপর ‘কওমা’র দো’আ একবার পড়বে।

কওমার দোয়া : রাব্বানা লাকাল হামদ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা)। অথবা পড়বে- রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়)। কওমার জন্য অন্য দোয়াও রয়েছে।

৪.৮. সিজদা​

কওমার দো’আ পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দুই হাটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও বেশি বেশি দুআ পড়বে। এ সময় দু’হাত কিবলামুখী করে মাথার দুই পাশে কাধ বা কান বরাবর মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে। কনুই ও বগল ফাঁকা থাকবে। হাঁটুতে বা মাটিতে ঠেস দিবে না। সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সোজা থাকবে। যেন নিচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মতো ফাঁকা থাকে। সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় স্থির ভাবে বসে দোয়া পড়বে। অতঃপর আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও দোয়া পড়বে। রুকু ও সিজদায় কুরআনী দু’আ পড়বে না। ২য় ও ৪র্থ রাকাতে দাঁড়ানোর প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসবে। একে ‘জালসায়ে ইস্তিরাহাত’ বা ‘স্বস্তির বৈঠক’ বলে। অতঃপর মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে।

সিজদার দো’আ : (সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা) অর্থ ‘মহাপবিত্র আমার প্রতিপালক যিনি সর্বোচ্চ। কমপক্ষে তিনবার পড়বে। রুকু ও সিজদার অন্য দো’আও রয়েছে।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো’আ : উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লী ওয়ারহানী ওয়াজ বুরনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আফিনী ওয়ারঝুকুনী। অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রুযী দান করুন।

তিরমিযী হা/২৮৪; ইবনু মাজাহ হা/৮৯৮; আবু দাউদ হা/৮৫০

৪.৯. বৈঠক​

দুই রাকাত পড়ার পর বৈঠক করতে হবে। বৈঠকে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দো’আয়ে মাছূরাহ ও সম্ভব হলে বেশি বেশি করে অন্য দোয়া পড়বে। শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে বাম নিতম্বের উপরে বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে। এ সময় ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করবে। বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে এবং ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ রেখে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত শাহাদাত অঙ্গুলি নাড়িয়ে ইশারা করতে থাকবে। মুসল্লির নজর ইশারার বাইরে যাবে না।

৪.৯.১. তাশাহ্হুদ (আত্তাহিইয়া-তু):​

উচ্চারণ : আত্তাহিইয়া-তু লিল্লা-হি ওয়াছ ছালাওয়া-তু ওয়াত্ ত্বাইয়িবা-তু আসসালা-মু আলায়কা আইয়ুহান নাবিইয়ু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আসসালামু আলায়না ওয়া আলা ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লিহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।। অনুবাদ : যাবতীয় সম্মান, যাবতীয় উপাসনা ও যাবতীয় পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি সমূহ নাযিল হোক। শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাগণের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল (বুঃ মুঃ)।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯ ‘ছালাত অধ্যায়-৪, ‘তাশাহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫

৪.৯.২. দরূদ :​

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছাল্লে আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লায়তা ‘আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আ-লে মুহাম্মাদিন কামা বা-রতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে । নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে, যেমন আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।

মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯১৯

৪.৯.৩. দো’আয়ে মাছূরাহ :​

মাছুরা অর্থ হাদিসে বর্ণিত। সেই হিসাবে হাদীসে বর্ণিত সকল দো’আই মাসুরা। কেবলমাত্র একটি দোয়া নয়। তবে নিম্নের দোয়াটিই এদেশে ‘দো’আয়ে মাছূরাহ’ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাক্সী যুলমান কাছীরাও অলা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।

অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপর অসংখ্য যুলুম করেছি। ঐসব গুনাহ মাফ করার কেউ নেই আপনি ব্যতীত। অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।

মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৪২ ‘তাশাহহুদে দো’আ অনুচ্ছেদ-১৭; বুখারী হা/৮৩৪ আযান অধ্যায়-২, সালামের পূর্বে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৪৯।

তাশাহুদের শেষে নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করার জন্য বিশেষভাবে তাকীদ এসেছে –

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিন ‘আযা-বি জাহান্নামা ওয়া আ’ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল কাবরি, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহি দাজ্জা-লি, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামা-তি। অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করছি জাহান্নামের আযাব হতে, কবরের আযাব হতে, দাজ্জালের ফিতনা হতে এবং জীবন ও মৃত্যু কালীন ফিতনা হতে।

মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪০-৪১

তাশাহুদ ও সালামের মধ্যেকার দো’আ সমূহের শেষে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নিম্নের দো’আ পড়তেন :​

(১) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখশারতু, ওয়ামা আসরারতু অমা আ লানতু, ওয়ামা আসরাফতু, ওয়া মা আংতা আলামু বিহী মিন্নি; আংতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আংতাল মুয়াখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বাপর গোপন ও প্রকাশ্য সকল গোনাহ মাফ কর (এবং মাফ কর ঐসব গোনাহ) যাতে আমি বাড়াবাড়ি করেছি এবং ঐসব গুনাহ যে বিষয়ে তুমি আমার চাইতে বেশী জানাে। তুমি অগ্র পশ্চাতের মালিক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।

মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘তাকবীরের পরে কি পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।

(২) আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’ঊযু বিকা মিনান্না-র’

(হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি)।

আবু দাউদ হা/৭৯৩, ‘ছালাত অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১২৮; সহীহ ইবনে হিব্বান হা/৮৬৫

তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে দো’আ বিষয়ে জ্ঞাতব্য: রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাশাহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন দো’আ পড়তেন।

মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১; নববী, রিয়াদুস সালেহীন ‘জিকির’ অধ্যায় হা/১৪২৪।

ইবনু মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত তাশাহহুদে (অর্থাৎ আত্তাহিয়াতু)এর শেষে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর দো’আ সমূহের মধ্যে যে দো’আ সে পসন্দ করে, তা করবে।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯; মিরআত হা/৯১৫, ৩/২৩৫।

এ কথার ব্যাখ্যায় বিদ্বান গণের মধ্যে একদল বলেছেন, এ সময় গোনাহ নেই এবং আদবের খেলাফ নয়, দুনিয়া ও আখেরাতের এমন সকল প্রকার দুআ করা যাবে। পক্ষান্তরে অন্যদল বলেছেন, কুরআন হাদীসে বর্ণিত দো’আ সমূহের মাধ্যমেই কেবল প্রার্থনা করতে হবে। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমাদের এই ছালাতে মানুষের সাধারণ কথাবার্তা বলা চলে না। এটি কেবল তাসবিহ, তাকবির ও কুরআন পাঠ মাত্র।

মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৭৮​

বর্ণিত উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য এটাই হতে পারে যে, অন্যের উদ্দেশ্যে নয় এবং আদবের খেলাফ নয়, আল্লাহর নিকট এমন সকল দো’আ করা যাবে। তবে সালাতের পুরা অনুষ্ঠানটিই যেহেতু আরবী ভাষায়, সেহেতু অনারবদের জন্য নিজেদের তৈরী করা আরবীতে প্রার্থনা করা নিরাপদ নয়। দ্বিতীয়ত: সর্বাবস্থায় সকলের জন্য হাদীছের দুআ পাঠ করাই উত্তম। কিন্তু যখন দো’আ জানা থাকে না, তখন তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে প্রচলিত দো’আয়ে মাছূরাহ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু…) শেষে নিম্নের দোআটির ন্যায় যে কোন একটা সারগর্ভ দোয়া পাঠ করা, যা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রয়ােজনকে শামিল করে। আনাস (রাঃ) বলেন, এ দোয়াটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় পড়তেন।

আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়াফিল আ-খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আযা-বান্না-র। অথবা আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া ..।

হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দাও ও আখেরাতে মঙ্গল দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও।

বুখারী হাদিস নং ৪৫২২

এ সময় দুনিয়াবী চাহিদার বিষয় গুলো নিয়তের মধ্যে শামিল করবে। কেননা আল্লাহ বান্দার অন্তরের খবর রাখেন ও তার হৃদয়ের কান্না শুনেন। দোয়ার সময় নির্দিষ্টভাবে কোন বিষয়ে নাম না করাই ভাল। কেননা ভবিষ্যতে বান্দার কিসে মঙ্গল আছে, সেটা আল্লাহ ভালো জানেন।

৪.১০. সালাম​

দো’আয়ে মাছূরাহ শেষে প্রথমে ডানে ও পরে বামে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ (আল্লাহর পক্ষ হতে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক!) বলে সালাম ফিরাবে। প্রথম সালামের শেষে ‘ওয়া বারাকাতুহু’ (এবং তার বরকত সমূহ) যোগ করা যেতে পারে। এভাবে সালাত সমাপ্ত করে প্রথমে সরবে একবার ‘আল্লা-হু আকবর’ (আল্লাহ সবার বড়) ও তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি) বলে নিম্নের দুআ সমূহ এবং অন্যান্য দো’আ পাঠ করবে। এ সময় ইমাম হলে ডানে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবে। অতঃপর সকলে নিম্নের দো’আ সহ অন্যান্য দো’আ পাঠ করবে।

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আন্তাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।

অনুবাদ : হে আল্লাহ আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক।

আসরের নামাজ​

৫. আসরের নামাজের দোয়া​

৫.১. সালাতে দোয়ার স্থান সমূহ​

(১) ছানা বা দোয়ায়ে ইস্তেফতাহ, যা ‘আল্লা-হুম্মা বা-এদ বায়নী’ দিয়ে শুরু হয়

(২) শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল সূরায়ে ফাতিহার মধ্যে আলহামদুলিল্লাহ’ ও ‘ইহদিনাছ ছিরা-তাল মুস্তাকিম

(৩) রুকুতে ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা…

(৪) রুকূ হ’তে উঠার পর কৃওমার দো’আ রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ হামদান কাছীরান… বা অন্য দোয়া সমূহ।

(৫) সিজদাতেও সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা’… বা অন্য দো’আ সমূহ।

(৬) দুই সিজদার মাঝে বসে ‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী…’ বলে ৬টি বিষয়ের প্রার্থনা।

(৭) শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে দো’আয়ে মাছূরাহ সহ বিভিন্ন দুআ পড়া।

(৮) কওমাতে দাঁড়িয়ে দো’আয়ে কুনূতের মাধ্যমে দীর্ঘ দো’আ করার সুযোগ।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সিজদার সময় বান্দা তার প্রভূর সর্বাধিক নিকটে পৌছে যায়; অতএব ঐ সময় তোমরা সাধ্যমত বেশি বেশি দুআ কর। (মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪)

অন্য হাদিসে এসেছে যে, তিনি শেষ বৈঠকে তাশাহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে বেশি বেশি দোয়া করতেন। (মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩)

সালাম ফিরানোর পরে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার মুনাজাত বা গোপন আলাপের সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। অতএব সালাম ফিরানোর আগেই যাবতীয় দুআ শেষ করা উচিত, সালাম ফিরানোর পরে নয়। এক্ষণে যদি কেউ মুছল্লীদের নিকটে কোন ব্যাপারে বিশেষভাবে দোয়া চান, তবে তিনি আগেই সেটা নিজে অথবা ইমামের মাধ্যমে সকলকে অবহিত করবেন। যাতে মুসল্লিগণ স্ব স্ব দো’আর নিয়তের মধ্যে তাকেও শামিল করতে পারেন।

৫.২. আসরের নামাজের পর আমল​

১. আল্লা-হু আকবার (একবার সরবে)। আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৫৯, ৯৬১ ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।

২. আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু, ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রাকতা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক। এটুকু পড়েই ইমাম উঠে যেতে পারেন।

মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬০

৩. লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর; লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ (উচ্চস্বরে)। (মিশকাত হা/৯৬৩) আল্লা-হুম্মা আ ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনে ‘ইবা-দাতিকা। আল্লা-হুম্মা লা মা-নে আ লেমা আ ত্বাইতা অলা মু ত্বিয়া লেমা মানা তা অলা ইয়াফা’উ যাল জাদ্দি মিকাল জাদু।

অর্থ : নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত, যিনি একক ও শরীক বিহীন। তাঁরই জন্য সকল রাজত্ব ও তারই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী। নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি, আল্লাহ ব্যতীত। (মিশকাত হা/৯৬৩) ‘হে আল্লাহ! আপনাকে স্মরণ করার জন্য, আপনার শুকরিয়া আদায় করার জন্য এবং আপনার সুন্দর ইবাদত করার জন্য আমাকে সাহায্য করুন। (মিশকাত হা/৯৪৯) ‘হে আল্লাহ! আপনি যা দিতে চান, তা রোধ করার কেউ নেই এবং আপনি যা রোধ করেন, তা দেওয়ার কেউ নেই। কোন সম্পদশালী ব্যক্তির সম্পদ কোন উপকার করতে পারে না আপনার রহমত ব্যতীত। (মিশকাত হা/৯৬২)

৪. রাযীতু বিললা-হে রববাঁও ওয়া বিল ইসলা মে দীনাঁও ওয়া বিমুহাম্মাদিন্ নাবিইয়া।​

অর্থ: আমি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম আল্লাহর উপরে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামের উপরে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদের উপরে নবী হিসাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এই দুআ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (আবু দাউদ হা/১৫২৯)

৫. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আউযুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আউযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুরে; ওয়া আউজুবিকা মিন ফিৎনাতিদ দুন্‌ইয়া ওয়া ‘আযা-বিল ক্বাবরে।

অর্থঃ হে আল্লাহ! (১) আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি ভীরুতা হতে (২) আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা হতে (৩) আশ্রয় প্রার্থনা করছি নিকৃষ্টতম বয়স হতে; এবং (৪) আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুনিয়ার ফিতনা হতে ও (৫) কবরের আযাব হতে। (বুখারী, মিশকাত হা/৯৬৪)

৬. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালে ওয়াল জুবনে ওয়াল বুখলে ওয়া যালাইদ দায়নে ওয়া গালাবাতির রিজাল।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-বেদনা হতে, অক্ষমতা ও অলসতা হতে; ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের জবরদস্তি হতে। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৫৮)

৭. সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী আদাদা খালক্বিহী ওয়া রিযা নাফসিহী ওয়া জিনাতা ‘আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহ (৩ বার)। অর্থ : মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তার জন্য। তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমপরিমাণ, তার সত্তার সন্তুষ্টির সমপরিমাণ এবং তাঁর আরশের ওজন ও মহিমাময় বাক্য সমূহের ব্যাপ্তি সমপরিমাণ। (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০১)

৮. ইয়া মুকাল্লিবাল কুনূবে ছাব্বিত কালবী ‘আলা দ্বীনিকা, আল্লা-হুম্মা মুছারিরফল কুলুবে ছাররিফ কুলুবানা ‘আলা ত্বোয়া-আতিকা।

অর্থ : হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখ। হে অন্তর সমূহের রূপান্তরকারী! আমাদের অন্তর সমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/১০২)

৯. আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনী মিনান্ না-র (৩ বার)।​

অর্থ : হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দাও! (তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৪৭৮)

১০. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত তুকা ওয়াল ‘আফাফা ওয়াল গিণা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সুপথের নির্দেশনা, পরহেযগারিতা, পবিত্রতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি। (মুসলিম, মিশকাত হা/২৪৮৪)

১১. সুবহা-নাল্লা-হ (৩৩ বার)। আলহাম্দুলিল্লা-হ (৩৩ বার)। আল্লাহু আকবার (৩৩ বার)। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর (১ বার) / অথবা আল্লাহু আকবার (৩৪ বার)।

অর্থ : পবিত্রতাময় আল্লাহ। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। নেই কোন উপাস্য এক আল্লাহ ব্যতীত; তার কোন শরীক নেই। তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব ও তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা; তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী। (মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৬, ৯৬৭)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর উক্ত দো’আ পাঠ করবে, তার সকল গুনাহ মাফ করা হবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়। (মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৭)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি আয়েশা ও ফাতেমা (রাঃ)-কে বলেন, তোমরা এ দুআটি প্রত্যেক সালাতের শেষে এবং শয়নকালে পড়বে। এটাই তোমাদের জন্য একজন খাদেমের চাইতে উত্তম হবে। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৮৭-৮৮)

১২. সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্লা-হিল আযীম। অথবা সকালে ও সন্ধ্যায় ১০০ বার করে সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ পড়বে।

অর্থ : মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তার জন্য। মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি মহান।

এই দো’আ পাঠের ফলে তার সকল গুনাহ ঝরে যাবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই দো’আ সম্পর্কে বলেন যে, দু’টি কালেমা রয়েছে, যা রহমানের নিকট খুবই প্রিয়, যবানে বলতে খুবই হালকা এবং মীযানের পাল্লায় খুবই ভারী। তা হ’ল সুবহা-নাল্লাহি….। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২২৯৬-৯৮)

ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর জগদ্বিখ্যাত কিতাব ছহীহুল বুখারী উপরোক্ত হাদীস ও দোয়ার মাধ্যমে শেষ করেছেন।

১৩. আয়াতুল কুরসী :​

আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম। লা তা’খুযুহু সেনাতু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিসসামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আর্য। মান যাল্লাযী ইয়াশফা উ ইনদাহু ইল্লা বি ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইইম মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ; ওয়াসে’আ কুরসিইয়ুহুস সামা ওয়া-তে ওয়াল আর; ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজু হুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়ূল আজীম (বাক্বারাহ ২/২৫৫)।

অর্থ : আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তার হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হ’তে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাকে মোটেও শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক ফরয ছালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাধা থাকে না মৃত্যু ব্যতীত’ (নাসাঈ)। শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হিফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযুক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে না পারে’ (বুখারী)। (নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২; মিশকাত হা/৯৭৪)

১৪. আল্লা-হুম্মাফিনী বেহালা-লেকা ‘আন হারা-মেকা ওয়া আগনিনী বিফাদলীকা ‘আম্মান সেওয়া-কা।​

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হারাম ছাড়া হালাল দ্বারা যথেষ্ট করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন! রাসূল (ছাঃ) বলেন, এই দো’আর ফলে পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণ মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন। (তিরমিযী, বায়হাক্বী (দাওয়াতুল কাবীর), মিশকাত হা/২৪৪৯)

১৫. আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ : আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তার দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি।

এই দো’আ পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়। (তিরমিযী, আবু দাউদ, মিশকাত হা/২৩৫৩)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দৈনিক ১০০ করে বার তওবা করতেন। (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রত্যেক সালাতের শেষে সূরা ফালাক’ ও ‘নাস’ পড়ার নির্দেশ দিতেন। (মিশকাত হা/৯৬৯)

তিনি প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার সময় সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে দু’হাতে ফুক দিয়ে মাথা ও চেহারাসহ সাধ্যপক্ষে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। তিনি এটি তিনবার করতেন। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২১৩২)।

৫.৩. মুনাজাত​

মুনাজাত অর্থ পরস্পরে গোপনে কথা বলা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন সালাতে রত থাকে, তখন সে তার প্রভুর সাথে মুনাজাত করে অর্থাৎ গােপনে কথা বলে। (বুখারী (দিল্লী ছাপা) ১/৭৬ পৃঃ; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭১০) তাই ছালাত কোন ধ্যান (Meditation) নয়, বরং আল্লাহর কাছে বান্দার সরাসরি ক্ষমা চাওয়া ও প্রার্থনা নিবেদনের নাম। দুনিয়ার কাউকে যা বলা যায় না, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে বান্দা তাই-ই বলে। আল্লাহ স্বীয় বান্দার চোখের ভাষা বোঝেন ও হৃদয়ের কান্না শুনেন। আল্লাহ বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (মুমিন/গাফির ৪০/৬০)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, দো‘আ হল ইবাদত। (মিশকাত হা/২২৩০) অতএব দোয়ার পদ্ধতি সুন্নাত মোতাবেক হতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কোন পদ্ধতিতে দো’আ করেছেন, আমাদেরকে সেটা দেখতে হবে। তিনি যেভাবে প্রার্থনা করেছেন, আমাদেরকে সেভাবেই প্রার্থনা করতে হবে। তার রেখে যাওয়া পদ্ধতি ছেড়ে অন্য পদ্ধতিতে দো’আ করলে তা কবুল হওয়ার বদলে গােনাহ হওয়ারই সম্ভাবনা বেশী থাকবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের মধ্যেই দো’আ করেছেন।

তাকবীরে তাহরীমার পর থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সালাতের সময়কাল। (মিশকাত হা/৩১২) ছালাতের এই নিরিবিলি সময়ে বান্দা স্বীয় প্রভুর সাথে মুনাজাত করে। ‘ছালাত’ অর্থ দো’আ, ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি। ছানা’ হ’তে সালাম ফিরানাের আগ পর্যন্ত ছালাতের সর্বত্র কেবল দো‘আ আর দোয়া। অর্থ বুঝে পড়লে উক্ত দো‘আগুলির বাইরে বান্দার আর তেমন কিছুই চাওয়ার থাকে না। তবুও সালাম ফিরানাের পরে একাকী দো‘আ করার প্রশস্ত সুযােগ রয়েছে। তখন ইচ্ছামত যে কোন ভাষায় যে কোন বৈধ দোয়া করা যায়।

৫.৪. ফরয সালাত বাদে সম্মিলিত দো’আ​

ফরয সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে ইমামের সরবে দো’আ পাঠ ও মুক্তাদীদের সশব্দে আমীন ‘আমীন’ বলার প্রচলিত প্রথাটি দ্বীনের মধ্যে একটি নতুন সৃষ্টি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম হতে এর পক্ষে সহীহ বা যঈফ সনদে কোন দলীল নেই। বলা আবশ্যক যে, আজও মক্কা-মদিনার দুই হারামের মসজিদে উক্ত প্রথার কোন অস্তিত্ব নেই।

৫.৫. প্রচলিত সম্মিলিত দুআর ক্ষতিকর দিক সমূহ​

(১) এটি সুন্নাত বিরোধী আমল। অতএব তা যত মিষ্ট ও সুন্দর মনে হোক না কেন সূরায়ে কাহফ-এর ১০৩-৪ নং আয়াতের মর্ম অনুযায়ী ঐ ব্যক্তির ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

(২) এর ফলে মুছল্লী স্বীয় ছালাতের চাইতে সালাতের বাইরের বিষয় অর্থাৎ প্রচলিত মুনাজাতকেই বেশী গুরুত্ব দেয়। আর এজন্যেই বর্তমানে মানুষ ফরয সালাতের চাইতে মুনাজাতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এবং আখেরী মুনাজাত নামক বিদআতী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেশি আগ্রহ বোধ করছে ও দলে দলে সেখানে ভিড় জমাচ্ছে।

(৩) এর মন্দ পরিণতিতে একজন মুছল্লী সারা জীবন ছালাত আদায় করেও কোন কিছুর অর্থ শিখে না। বরং সালাত শেষে ইমামের মোনাজাতের মুখাপেক্ষী থাকে।

(৪) ইমাম আরবী মুনাজাতে কী বললেন সে কিছুই বুঝতে পারে না। ওদিকে নিজেও কিছু বলতে পারে না। এর পূর্বে ছালাতের মধ্যে সে যে দো‘আগুলাে পড়েছে, অর্থ না জানার কারণে সেখানেও সে অন্তর ঢেলে দিতে পারেনি। ফলে জীবনভর ঐ মুসল্লির অবস্থা থাকে না ঘরকা না ঘাটকা।

(৫) মুসল্লির মনের কথা ইমাম সাহেবের অজানা থাকার ফলে মুসল্লির কেবল ‘আমীন’ বলাই সার হয়।

(৬) ইমাম ছাহেবের দীর্ঘক্ষণ ধরে আরবী-উর্দুবাংলায় বা অন্য ভাষায় করুণ সুরের মুনাজাতের মাধ্যমে শ্রোতা ও মুছল্লীদের মন জয় করা অন্যতম উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ফলে ‘রিয়া’ ও ‘শ্রুতি’-র কবীরা গােনাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ‘রিয়া’-কে হাদিসে ছোট শিরক’ বলা হয়েছে। (আহমাদ, মিশকাত হা/৫৩৩৪) যার ফলে ইমাম ছাহেবের সমস্ত নেকী বরবাদ হয়ে যাওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।

৫.৬. একাকী দু’হাত তুলে দো’আ​

ছালাতের বাইরে যে কোন সময়ে বান্দা তার প্রভুর নিকটে যে কোন ভাষায় দো’আ করবে; তবে হাদীছের দো’আই উত্তম। বান্দা হাত তুলে একাকী নিরিবিলি কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তার হাত খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (আবু দাউদ, মিশকাত হা/২২৪৪) খােলা দুই হস্ততালু একত্রিত করে চেহারা বরাবর সামনে রেখে দুআ করবে। (আবু দাউদ হা/১৪৮৬-৮৭, ৮৯) দোয়া শেষে মুখ মাসেহ করার হাদিস যঈফ। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/২২৪৩, ৪৫, ২২৫৫) বরং উঠানাে অবস্থায় দোয়া শেষে হাত ছেড়ে দেবে।

(১) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় উম্মতের জন্য আল্লাহর নিকট হাত উঠিয়ে একাকী কেঁদে কেঁদে দো’আ করেছেন। (মুসলিম হা/৪৯৯)

(২) বদরের যুদ্ধের দিন তিনি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকটে একাকী হাত তুলে কাতর কণ্ঠে দো’আ করেছিলেন। (মুসলিম হা/৪৫৮৮)

(৩) বনু জাযীমা গোত্রের কিছু লোক ভুলক্রমে নিহত হওয়ায় মর্মাহত হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একাকী দুবার হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চেয়েছিলেন। (বুখারী, মিশকাত হা/৩৯৭৬)

(৪) আওতাস যুদ্ধে আবু মূসা আশআরী (রাঃ)-এর নিহত ভাতিজা দলনেতা আবু ‘আমের আশআরী (রাঃ)-এর জন্য ওযু করে দু’হাত তুলে একাকী দো’আ করেছিলেন। (বুখারী হা/৪৩২৩)

(৫) তিনি দাওস কওমের হেদায়েতের জন্য কিবলামুখী হয়ে একাকী দু’হাত তুলে দো’আ করেছেন। (বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬১১)

(৬) হজ্জ ও ওমরাহ কালে সাঈ করার সময় সাফা পাহাড়ে উঠে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে দু’হাত তুলে দোয়া করা। (আবু দাউদ হা/১৮৭২; মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫)

(৭) আরাফার ময়দানে একাকী দু’হাত তুলে দো’আ করা। (নাসাঈ হা/৩০১১)​

(৮) ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর একটু দূরে সরে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুলে দোয়া করা। (বুখারী হা/১৭৫১-৫৩)

(৯) মুসাফির অবস্থায় হাত তুলে দোয়া করা। (মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০)

তাছাড়া জুমা ও ঈদায়নের খুতবায় বা অন্যান্য সভা ও সম্মেলনে একজন দো’আ করলে অন্যেরা (দু’হাত তােলা ছাড়াই) কেবল আমীন’ বলবেন। (ছহীহ আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৬১) এমনকি একজন দোয়া করলে অন্যজন সেই সাথে ‘আমীন’ বলতে পারেন। উল্লেখ্য যে, দোয়ার জন্য সর্বদা অজু করা, কিবলামুখী হওয়া এবং দু’হাত তােলা শর্ত নয়। বরং বান্দা যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করবে। যেমন খানাপিনা, পেশাব পায়খানা, বাড়ীতে ও সফরে সর্বদা বিভিন্ন দো’আ করা হয়ে থাকে। আর আল্লাহ যে কোন সময় যে কোন অবস্থায় তাঁকে আহ্বান করার জন্য বান্দার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। (বাক্বারাহ ২/১৮৬, মুমিন/গাফের ৪০/৬০; বুখারী ‘দো’আ সমূহ’ অধ্যায়-৮০, অনুচ্ছেদ-২৪)

৫.৭. কুরআনী দো’আ​

রুকু ও সিজদাতে কুরআনী দো’আ পড়া নিষেধ আছে। (মিশকাত হাদিস ৮৭৩) তবে মর্ম ঠিক রেখে সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনে পড়া যাবে। যেমন রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া … (বাক্বারাহ ২/২০১)-এর স্থলে আল্লা-হুম্মা রব্বানা আতিনা অথবা আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্ইয়া …বলা। (বুখারী হা/৪৫২২) অবশ্য শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে কুরআনী দো‘আ সহ ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক সকল প্রকার দো’আ পাঠ করা যাবে।
 
Solution

Share this page