- Joined
- Jul 24, 2023
- Threads
- 520
- Comments
- 533
- Reactions
- 5,567
- Thread Author
- #1
অল্পে তুষ্ট থাকার উপায় :
অল্পে তুষ্টির মাধ্যমে আত্মিক সুখ অনুভূত হয়, জীবনজুড়ে নেমে আসে প্রশান্তির ফল্গুধারা। রিযিক হয় বরকতপূর্ণ। হৃদয়ে থাকে না অধিক পাওয়ার তৃষ্ণা এবং না পাওয়ার আক্ষেপ। অল্পে তুষ্টির গুণে মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর হয়ে যায়। হৃদয়ে সঞ্চারিত হয় তাওয়াক্কুলের আবেশ। অল্পে তুষ্টি দুনিয়া ও আখেরাতে প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনে। সেকারণ সাহাবায়ে কেরাম অল্পে তুষ্ট জীবন গঠনের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাতে বায়‘আত গ্রহণ করেছিলেন।[1] নিমেণ অল্পে তুষ্ট জীবন গঠনের কিছু উপায় উল্লেখ করা হ’ল।-
১.তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করা :
ঈমানের একটি অপরিহার্য অংশ হ’ল তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস। বিশ্বাস দুর্বল হ’লে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন অল্পে তুষ্ট থাকা কষ্টকর হয়ে যায় এবং ঈমানের স্বাদ আস্বাদনও দুরূহ হয়ে পড়ে। অসুস্থ ও দুর্বল শরীরে যেমন জীবনের স্বাদ লাভ করা যায় না, তেমনি দুর্বল ঈমান নিয়ে অল্পে তুষ্টির স্বাদ আস্বাদন করা যায় না। তাই বান্দাকে এই মর্মে দৃঢ় বিশ্বাসী হ’তে হয় যে, তার রূযী জন্মের আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে। সে জীবনে যা পায়নি, কখনো তা পাওয়ার ছিল না। আর যা সে পেয়েছে, তা কখনো হারানোর ছিল না। অর্থাৎ আল্লাহ তার ভাগ্যে যা কিছু নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা-ই সে পেয়েছে, পাচ্ছে এবং পাবে। তার রিযিকের সর্বশেষ দানাটি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘কোন প্রাণীই তার জন্য নির্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না। যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছুটা বিলম্ব হয়’।[2]
অর্থাৎ মানব জীবনের যাবতীয় বিষয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাক্বদীর অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তাক্বদীরে যা আছে, মানুষ চাইলেও তা ঘটবে এবং না চাইলেও তা ঘটবে। তাই অল্প রিযিক, দুঃখ-কষ্ট, বালা-মুছীবত সবকিছু তাক্বদীরেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যারা এর উপর সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তাদের ঈমান পূর্ণ করে দেন।
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্টির মাধ্যমে তার হৃদয়কে পূর্ণ করে, আল্লাহ তার বক্ষকে প্রাচুর্য, নিরাপত্তা ও অল্পে তুষ্টি দিয়ে ভরে দেন’।[3]
আবূবকর শিবলী (রহঃ) বলেন,
‘তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্ট না থাকার কারণে হৃদয় সংকুচিত হয়ে যায়’।[4]
সুতরাং অল্পে তুষ্ট থাকার জন্য বান্দার হৃদয়ে এই দৃঢ় বিশ্বাস প্রোথিত থাকতে হবে যে, আমাদের জীবনে রিযিকসহ যাবতীয় বিষয়ে আল্লাহর ইচ্ছা ও অনিচ্ছাই কার্যকর হয়।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,
‘সকল কল্যাণের মূল হ’ল তোমার একথা জানা যে, আল্লাহ যা চান, তা-ই হয়। আর তিনি যা চান না, তা হয় না’।[5]
তাক্বদীরের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে মানুষ অল্পে তুষ্ট থাকতে পারে। দুনিয়ার সকল বিপদ-আপদকে সে সহজভাবে নিতে পারে। পরম সুখে আল্লাহকে স্মরণ করতে এবং তাঁর ইবাদতে নিমগ্ন হ’তে পারে।
২. সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা :
শিশু যেমন মায়ের কোলে নিশ্চিন্ত থাকে, বান্দা তেমনি আল্লাহর উপর ভরসা করে নির্ভার থাকে। মা কখনো কখনো তার সন্তাকে আদর করে উপরে ছুঁড়ে দেয়, আবার কোলে নেয়। কিন্তু উপরের দিকে ছুঁড়ে দিলে সন্তান কখনো হতাশ হয় না; বরং আনন্দ পেয়ে হাসে। কারণ সে জানে- তার মা তাকে আবার বুকে তুলে নিবে। আল্লাহর কাছে বান্দার অবস্থান অনেকটা সেই শিশু সন্তানের মত। দারিদ্রে্যর কষ্ট, রিযিকের স্বল্পতা, বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট সব কিছুতেই বান্দা আল্লাহর উপর ভরসা করে নিশ্চিন্ত হয়। কেননা সে জানে আল্লাহর সব ফায়ছালার অন্তরালে কল্যাণ নিহিত আছে। ফলে সে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর উপর ভরসা করেই অল্পে তুষ্ট থাকে।
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,
‘প্রত্যেক ব্যক্তিই তার নিজের পদচিহ্ন মাড়াবে, নির্ধারিত রিযিক ভক্ষণ করবে, জীবনের নির্ধারিত সীমায় উপনীত হবে এবং মৃত্যু তার জীবনাবসান ঘটাবে। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি তার রিযিক থেকে পলায়ন করে, রিযিক তার পিছনে পিছনে ছুটবে এবং তার নাগাল পেয়ে যাবে। যেমনভাবে কেউ মৃত্যু থেকে পলায়ন করলে মৃত্যু তাকে পাকড়াও করে’।[6]
একদিন জনৈক ব্যক্তি হাতিম আ‘ছাম (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করেন,
‘আপনি আপনার জীবন কিভাবে পরিচালনা করেন? তিনি বললেন,
‘আললাহর উপরে ভরসার ভিত্তিতে। অতঃপর তিনি বলেন, চারটি বিষয়ের উপর আমার জীবনাচরণের ভিত্তি নির্মাণ করেছি। তা হ’ল, (১) আমি জানি আমার জন্য বরাদ্দ রিযিক আমি ব্যতীত অন্য কেউ খেতে পারবে না। তাই সে ব্যাপারে আমি আত্মিক প্রশান্তি লাভ করি। (২) আমি জানি যে, আমি ছাড়া আমার আমল অন্য কেউ করে দিবে না। তাই আমি সৎ আমলে ব্যস্ত থাকি। (৩) আমি জানি মৃত্যু আমার নিকট হঠাৎ চলে আসবে, তাই আমি দ্রুততার সাথে পরকালীন পাথেয় সঞ্চয় করি। (৪) আমি জানি আমি যেখানেই থাকি না কেন, কখনোই আমি আল্লাহর দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতে পারব না। তাই সবসময় আমি তাঁকে লজ্জা করি’।[7]
আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন,
‘তাওয়াক্কুল হ’ল সৃষ্টির প্রতি হতাশার দৃষ্টিতে তাকানোর পথকে বন্ধ করে দেওয়া’।[8]
সুতরাং বান্দা যখন হতাশা ও কামনার দৃষ্টিকে অবনত করে নিজের যতটুকু আছে ততটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তখন সে আল্লাহর প্রতি ভরসা করার অদৃশ্য শক্তি লাভ করবে। আর এই তাওয়াক্কুলের পথ ধরে সে অল্পে তুষ্টির মনযিলে পৌঁছে যাবে।
৩. নিম্ন পর্যায়ের মানুষের দিকে তাকানো :
অল্পে তুষ্ট থাকার অন্যতম একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে নিজের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের লোকদের দিকে তাকানো। সেটা হ’তে পারে ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব, দেহ সৌষ্ঠব, গাড়ি-বাড়ি, মান-মর্যাদা, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
‘আমরা তাদের ধনিক শ্রেণীকে যে বিলাসোপকরণ সমূহ দান করেছি, তুমি সেদিকে চোখ তুলে তাকাবে না। আর তাদের ব্যাপারে তুমি দুশ্চিন্তা করো না। ঈমানদারগণের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনত রাখ’ (হিজর ১৫/৮৮)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উম্মতকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,
‘যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তিকে দেখে যাকে ধন-সম্পদ এবং স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে তার উপরে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চাইতে নিমণমানের ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করে’।[9]
অন্যত্র তিনি বলেন,
‘তোমরা নিজেদের অপেক্ষা নিমণ স্তরের লোকের প্রতি তাকাও। তোমাদের চাইতে উচ্চ পর্যায়ের লোকদের দিকে তাকিয়ো না। তাহ’লে এটাই হবে তোমাদের উপরে আল্লাহর নে‘মতকে অবজ্ঞা না করার উপযুক্ত মাধ্যম’।[10]
ইবনু জারীর ত্বাবারী (রহঃ) বলেন,
‘এই হাদীস যাবতীয় কল্যাণকে একত্রিত করেছে। কেননা বান্দা যখন প্রাচুর্য-সমৃদ্ধিতে তার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের কোন ব্যক্তির দিকে তাকায়, তখন তার অন্তর সেটাকে পাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠে। ফলে সে নিজের অবস্থাকে খুবই নগণ্য মনে করে এবং প্রাচুর্য বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করতে থাকে। আর সে যখন নিজের চেয়ে নিমণ পর্যায়ের লোকের দিকে তাকায়, তখন তার প্রতি আল্লাহর নে‘মতগুলি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে তার মন-প্রাণ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় প্রণত হয়’।[11]
সুতরাং অল্পে তুষ্টির স্বাদ আস্বাদনের জন্য নিজেদের চেয়ে নিমণ শ্রেণীর মানুষের দিকে তাকানো উচিত। মধ্যবিত্ত কোন পরিবারের সদস্য যদি ধনী লোকের গাড়ি-বাড়ির দিকে তাকায়, তাহ’লে সে কখনো অল্পে তুষ্ট থাকতে পারবে না। কিন্তু সে যদি ফুটপাথে শুয়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষের দিকে তাকায়, তাহ’লে মনে সান্ত্বনা খুঁজে পাবে। কুঁড়েঘরে বসবাসকারী যদি বন্যা কবলিত ভিটেমাটি হারা মানুষের দিকে তাকায়, তাহ’লে অল্পে তুষ্ট থাকা তার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। এভাবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিচের দিকে তাকানোর মাধ্যমে পরিতুষ্ট থাকার চেষ্টা করতে হবে। নইলে নিজেদের অজান্তেই অশান্তির ঘেরাটোপে মানুষ অাঁটকে যাবে। তাই আসুন! আমরা অল্প তুষ্ট থাকতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দিন! আমীন!!
৪. আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করা :
আল্লাহর দাসত্ব করার জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যাদের যিন্দেগী আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপর থাকে, আল্লাহ তাদেরকে অপরিমেয় রিযিক দান করেন এবং অল্পে তুষ্টির গুণ দ্বারা তাদের হৃদয়কে পূর্ণ করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন,
‘আমি জিন ও ইনসানকে কেবলমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)।
মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য সময় বের করে নাও, তাহ’লে আমি তোমার হৃদয়কে অভাবমুক্তি দ্বারা পূর্ণ করে দিব এবং তোমার দু’হাতকে রিযিক দিয়ে ভরে দিব। হে আদম সন্তান! আমার থেকে দূরে সরে যেও না, তবে আমি তোমার হৃদয়কে দরিদ্রতা দিয়ে ভরে দিব এবং তোমার হাতকে ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেব’।[12]
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরাম বলেন, ‘যখন অন্তর অভাবমুক্ত হয়ে যায়, তখন মানুষ আর কোন কিছুর প্রতি মুখাপেক্ষী থাকে না। কেননা এই অভাবমুক্তি হ’ল অন্তরের অভাবমুক্তি। ফলে মানুষ যদি রিক্তহস্ত-দরিদ্রও হয়ে যায়, আর তার অন্তর যদি অভাবমুক্ত থাকে, তাহ’লে সে মনে করে যে, সে অনেক কিছুর মালিক। আর এটা তার কাছে থাকা সমুদয় সহায়-সম্পদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর। আর আল্লাহ যদি তার অন্তরকে গরীব ও অভাবী করে দেন, তাহ’লে মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ধনী লোক হওয়া সত্ত্বেও সে নিজেকে একজন দরিদ্র মানুষ ভাবতে থাকে। কেননা সে মনে করে তার সম্পদ খুব শীঘ্রই নিঃশেষ হয়ে যাবে’।[13] সুতরাং যারা যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে আত্মনিয়োগ করতে পারবে, আল্লাহ তার হৃদয় থেকে রিযিকের দুশ্চিন্তা দূরীভূত করে দিবেন এবং অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
৫. আখেরাতমুখী জীবন গঠন করা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা :
দুনিয়া একটি ক্ষণস্থায়ী ঠিকানা। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে উপনীত হ’লে বা কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত হ’লে মানুষ কিছুটা বুঝতে পারে যে, পার্থিব জীবন এবং দুনিয়া কেন্দ্রিক আমাদের স্বপ্ন-আশা কতটা মূল্যহীন। এখানে ঈমান ও আমলের মাধ্যমে আখেরাতে মুক্তি পাওয়া মুমিন বান্দার প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে। কিন্তু জীবন যখন দুনিয়ামুখী হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন এর মোহে ডুবে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে এবং পার্থিব যৎসামান্য সামগ্রীতে পরিতুষ্ট থাকা দুরূহ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে যারা আখেরাতমুখী জীবন গঠন করে, আল্লাহ তাদের স্বল্প জীবিকায় প্রভূত বরকত দান করেন। ফলে দুনিয়ার কোন কিছুর জন্য তাদের মনে কোন আক্ষেপ থাকে না এবং হৃদয়-মন অল্পে তুষ্ট থাকে। আর আখেরাতমুখী জীবন যাপনের অর্থ হ’ল- সাধ্যানুযায়ী শরী‘আতের বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালন করে সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্তত থাকা। কেউ যদি নিজের মধ্যে মৃত্যুর ভাবনা সর্বদা জাগরুক রাখতে পারে যে, আজকের দিনটাই হয়ত আমার শেষ দিন, আজকে অথবা আগামী কালই হয়ত আমি মরে যাব, তাহ’লে দুনিয়ার মোহে সে ডুবে থাকবে না। সহায়-সম্পদের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সে কখনোই চিন্তা-ভাবনা করবে না; বরং অল্পে তুষ্ট থেকে সাধ্য অনুযায়ী পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ে ব্যস্ত থাকবে।
আল্লাহ বলেন,
‘যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল কামনা করে আমরা তার জন্য তার ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু আখেরাতে তার জন্য কোন অংশ থাকবে না’ (শূরা ৪২/২০)।
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, তুমি এমনভাবে দুনিয়াবী জীবন পরিচালনা কর, যেন আগামীকালই তোমার মৃত্যু হবে’।[14]
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন,
‘আল্লাহ আখেরাতের নিয়তের উপর ভিত্তি করে বান্দাকে স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী পার্থিব সামগ্রী প্রদান করবেন। কিন্তু দুনিয়ার নিয়তে তিনি দুনিয়া ছাড়া আর কিছুই দেন না’।[15] ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, ‘দেহ ও মনের প্রশান্তির উপায় হচ্ছে দুনিয়াবিমুখ হয়ে সাধা-সিধে আখেরাতমুখী জীবন যাপন করা’।[16]
হাসান বাছরী (রহঃ) যুবকদেরকে উপদেশ দিয়ে বলতেন,
‘হে যুব সমাজ! অবশ্যই তোমরা আখেরাতের সন্ধানে নিয়োজিত থাকবে। কেননা বহু আখেরাত অনুসন্ধানীকে আমি দেখেছি যে, সে আখেরাতের সাথে পার্থিব কল্যাণও লাভ করেছে। আর আমি কখনো দুনিয়া অনুসন্ধানী এমন কাউকে দেখিনি, যে দুনিয়ার সাথে আখেরাতের কল্যাণ হাছিল করতে পেরেছে’।[17]
মানুষ যখন দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের কথা চিন্তা করে মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করবে এবং যেকোন সময়ে আল্লাহর ডাকে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্ত্তত থাকবে, তখন দুনিয়ার ঠুনকো স্বার্থকে সে আদৌ পরওয়া করবে না; বরং আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ে সদা সচেষ্ট থাকবে। তার সম্পদ কতটুকু থাকল কি থাকল না, এ নিয়ে কখনো পেরেশান হবে না। বরং অল্পে তুষ্ট থেকে জান্নাতের চির শান্তির ঠিকানায় রবের সাক্ষাতের জন্য সদা উন্মুখ থাকবে।
বিশর ইবনুল হারেছ (রহঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালোবাসে, সে কখনো মৃত্যুকে পসন্দ করে না। আর যে ব্যক্তি দুনিয়া বিমুখ হয়, সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করতে ভালোবাসে’।[18]
আওন ইবনু আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন,
‘যে ব্যক্তি আখেরাত তালাশ করে, তার রিযিক কখনো হাতছাড়া হয় না’।[19]
৬. দীর্ঘ আশা-আকাঙক্ষা না করা :
অধিক পাওয়ার আকাঙ্খা ও দীর্ঘ আশা অল্পে তুষ্ট জীবন যাপনে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক। মানুষের আশা-আকাঙ্খা যত দীর্ঘ হয়, তার অল্পে তুষ্ট থাকার পথ ততটাই রুদ্ধ হয়ে যায়। আমরা কত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করি, কত স্বপ্ন দেখি যেন আমরা আরো অনেক দিন বেঁচে থাকব। কিন্তু আমরা ভেবে দেখি না যে, এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুদীর্ঘ আশা-আকাঙ্ক্ষা আমাদেরকে মৃত্যু থেকে গাফেল রাখে এবং আখেরাত বিমুখ করে তোলে। আল্লাহ বলেন,
‘ছাড় ওদেরকে। ওরা খানা-পিনা করতে থাকুক আর দুনিয়া ভোগ করতে থাকুক। আশা-আকাঙ্ক্ষা ওদেরকে ভুলিয়ে রাখুক। অতঃপর শীঘ্র ওরা জানতে পারবে’ (হিজ্র ১৫/৩)।
আব্দুর রহমান সা‘দী (রহঃ) বলেন, এই আয়াতে দুনিয়াদারদের ধমক দেওয়া হয়েছে। কেননা দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকা ও দীর্ঘ আশার কারণে মানুষ আখেরাত থেকে বিমুখ হয়ে পড়ে’।[20]
হাসান বছরী (রাঃ) বলেন,
‘বান্দা যখন দীর্ঘ আশা করে, তখন তার আমল খারাপ হয়ে যায়’।[SUP][SUP][21][/SUP][/SUP]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার এক সফরে হাজাত সেরে পানি না পেয়ে তায়াম্মুম করলেন। ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আর একটু সামনে গেলেই তো পানি পাওয়া যেত। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন,
‘আমি কিভাবে জানব যে, (মৃত্যু আসার পূর্বে) আমি সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারব কি-না?’।[22]
অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) এতটুকুও নিশ্চিত ছিলেন না যে, আগামী সালাত পর্যন্ত বা পানির নিকটে পৌঁছা পর্যন্ত তিনি বেঁচে থাকবেন।[23]
এজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-কে উপদেশ দিয়ে বলেন,
‘তুমি দুনিয়াতে একজন অপরিচিত ব্যক্তি অথবা পথিকের মত হয়ে থাকো’। এরপর থেকে ইবনু ওমর (রাঃ) বলতেন,
‘সন্ধ্যা হ’লে তুমি সকালের আশা করো না এবং সকাল হ’লে তুমি সন্ধ্যার আশা করো না। অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তুমি তোমার সুস্থতাকে এবং মৃত্যু আসার আগে তুমি তোমার জীবনকে কাজে লাগাও’।[24]
অথচ আমরা অহর্নিশ ছুটে চলেছি আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। মৃত্যু সম্পর্কে আমরা একেবারেই উদাসীন। পার্থিব আশার চোরাবালিতে ডুবে গেছে আমাদের যিন্দেগী। ফলে ইবাদতগুলো হয়ে গেছে রূহশূন্য, সেখানে আর অল্পে তুষ্টির আবাদ হয় না। অথচ বল্গাহীন আকাঙক্ষার লাগাম টেনে ধরে আমরা আমাদের আমলকে সুন্দর করতে পারতাম এবং অল্পে তুষ্ট থেকে আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয় করতে পারতাম।
মালেক ইবনু মিগওয়াল বাজালী (রহঃ) বলেন,
‘যে আশা কম করে, খানা-পিনা ও পোষাক পরিচ্ছদে তার জীবন সাধা-সিধে হয়ে থাকে’।[25]
হাতেম আল-আ‘ছাম (রহঃ) বলেন,
‘প্রত্যেক জিনিসের একটা সৌন্দর্য আছে। ইবাদতের সৌন্দর্য হ’ল আল্লাহভীতি। আর আল্লাহভীতির আলামত হ’ল পার্থিব আশা-আকাঙক্ষা হ্রাস করা’।[26]
সালমান ফারেসী (রাঃ) বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোককে দেখলে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই- (১) সেই ব্যক্তি, যে দীর্ঘ আশা-আকাঙ্খা করে, কিন্তু মৃত্যুকে নিয়ে মোটেও চিন্তা করে না। অথচ মৃত্যু তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, (২) মৃত্যু থেকে গাফেল ব্যক্তি, অথচ তার মৃত্যুর পরেই ক্বিয়ামত শুরু হয়ে যাবে, (৩) সেই ব্যক্তি, যে গাল ভরে হাসে, কিন্তু সে জানে না যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট নাকি রাগান্বিত’।[27]
আবুল লায়েছ সামারকান্দী (রহঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পার্থিব আশা-আকাঙ্খা কম করে, মহান আল্লাহ তাকে চারভাবে সম্মানিত করেন, (১) তাকে আল্লাহর অনুগত্যে অবিচলতা দান করেন। (২) তার পার্থিব দুশ্চিন্তা হ্রাস করে দেন। (৩) স্বল্প উপার্জনের উপর সন্তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব দান করেন এবং তার অন্তরকে আলোকিত করে দেন। আর চারটি কাজের মাধ্যমে অন্তর আলোকিত হয়, (১) আহার করার সময় কিছু অংশ খালি রাখা (২) নেককার মানুষের সাহচর্যে থাকা (৩) কৃত পাপের কথা স্মরণ করে বার বার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং (৪) পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষা হ্রাস করা অথবা একবারে মিটিয়ে দেওয়া’।[SUP][SUP][28][/SUP][/SUP] সুতরাং আমরা যদি দীর্ঘ আশা না করে আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয়ে সদা নিয়োজিত থাকি, মহান আল্লাহ দুনিয়াতে আমাদেরকে অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব দান করবেন এবং আখেরাতে উপহার দিবেন প্রশান্তিময় জান্নাত।
৭. সম্পদ জমানোর চিন্তা-ভাবনা পরিত্যাগ করা :
যার মধ্যে টাকা-পয়সা জমানোর এবং ব্যাংক-ব্যালেন্স করার প্রবণতা থাকে, সে খুব কমই অল্পে তুষ্ট থাকতে পারে। কেননা সম্পদ পুঞ্জিভূত করার মানসিকতা সবসময় তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। প্রয়োজনের চেয়ে অধিক সম্পদ তার হস্তগত হ’লেও সে খুশি থাকতে পারে না। সেকারণ ইসলাম মানুষকে সবসময় সম্পদ সঞ্চয়ের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে এবং দান-ছাদাক্বাহ করতে উৎসাহিত করেছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অসুস্থ বেলাল (রাঃ)-কে দেখেতে গেলেন। বেলাল (রাঃ)-এর কাছে এক স্ত্তপ খেজুর দেখে রাসূল (ﷺ) বললেন,
‘বেলাল! এসব কি?’ বেলাল বললেন,
‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এটা আমি আগামীকালের জন্য জমা করে রেখেছি’। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন,
‘তুমি কি কাল ক্বিয়ামতের দিনে এর থেকে জাহান্নামের তাপ অনুভবের ভয় করছ না? বেলাল! এসব তুমি দান করে দাও। আরশের মালিকের কাছে ভুখা-নাঙ্গা থাকার ভয় করো না’।[29]
এর কারণ হ’ল- সম্পদ সঞ্চয়ের কারণে অধিকাংশ সময় মানুষ ভবিষ্যতের জন্য সেই সম্পদের উপরেই ভরসা করে থাকে। আল্লাহর প্রতি তার ভরসা শিথিল হয়ে যায়।
ছাহেবে মির‘আত (রহঃ) বলেন, শয়তান সবসময় মানুষকে দারিদ্রের ভয় দেখায়। সেজন্য দারিদ্রের ভয়ে সম্পদ জমা করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে স্বাভাবিক প্রয়োজনে সম্পদ সঞ্চয় করা জায়েয।[30]
সুতরাং মানুষ যদি ভবিষ্যতের ব্যাপারটি আল্লাহর উপর ন্যস্ত করে মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করার মানসিকতা পরিহার করতে পারে, তাহ’লে অল্পে তুষ্ট থাকা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
৮. লোভ ত্যাগ করা ও অন্যের সম্পদ থেকে নির্মোহ থাকা :
মানুষের জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব অনস্বীকার্য। এদেরকে ভালো কাজে নিয়োজিত না রাখলে ব্যক্তির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে। ষড়রিপুর অন্যতম হ’ল লোভ। অল্পে তুষ্ট জীবন গঠনের জন্য লোভ পরিহার করা আবশ্যক। কেননা লোভ-লালসা দ্বীন-দুনিয়া উভয়ের জন্য হুমকি স্বরূপ। যা ইহকাল ও পরকালে মানুষকে অধঃপতনের অতল তলে নিক্ষেপ করে।
আল্লাহ বলেন,
‘শরীকদের অনেকে (এভাবে) একে অপরের প্রতি যুলুম করে থাকে’ (ছোয়াদ ৩৮/২৪)।
এই আয়াতে একে অন্যের প্রতি বাড়াবাড়ি করার অর্থ হ’ল দুনিয়াতে অধিক সম্পদ লাভের প্রতি প্রলুব্ধ হওয়া, যা তাকে দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে এবং অল্পে তুষ্ট থাকতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।[31]
কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘দু’টি ক্ষুধার্ত বাঘকে ছাগলের পালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হ’লে যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কোন ব্যক্তির ধন-সম্পদ ও মর্যাদার লোভ এর চেয়ে বেশি তার দ্বীনের ক্ষতি করে থাকে’।[32]
সম্পদের লোভ ক্ষতিকর এজন্য যে, এটা মানুষের মধ্যে এক প্রকার অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা তাকে প্রবৃত্তির অনুসরণের দিকে ঠেলে দেয় এবং দুনিয়ার সুখ-সম্ভারে মত্ত হওয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে। ফলে সে ব্যক্তি নে‘মতের মধ্যে ডুবে থাকা পসন্দ করে। কখনো তার কামনা এতই প্রবল হয়ে ওঠে যে, সে যদি হালাল উপায়ে তা অর্জন করতে না পারে, তাহ’লে সন্দেহজনক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যা তাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে দেয়। আর আভিজাত্য বা সুনাম অর্জনের লোভ ক্ষতিকর এজন্য যে, মানুষ এই সুনাম অর্জনের জন্যই সম্পদ ব্যয় করে, যা গোপন শিরকের অর্ন্তভুক্ত।[33]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
‘লোভ-লালসা মূর্খদের হৃদয়গুলোকে অস্থির করে তোলে, আশার মায়াজালে বন্দী করে এবং জীবনকে বিষিয়ে তোলে’।[34]
সুতরাং নিজের জীবনকে নিয়ে পরিতুষ্ট থাকার জন্য লোভ-লালসা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। আর লোভ পরিহার করার অর্থ হ’ল অন্যের সম্পদ থেকে নিজেকে নির্মোহ রাখা। একদিন মিম্বারে দাঁড়িয়ে ওমর (রাঃ) বললেন,
‘নিশ্চয়ই লোভ এক প্রকার দরিদ্রতা এবং নির্লোভ থাকা এক প্রকার ধনাঢ্যতা। যখন কেউ মানুষের ধনৈশ্বর্য থেকে নির্মোহ থাকে এবং অল্পে তুষ্ট থাকে, তখন সে তাদের থেকে অভামুক্ত হয়ে যায়’।[35]
৯. বিলাসী জীবন পরিহার করা :
বিলাসী জীবন মানুষকে বস্ত্তবাদী করে তোলে এবং তাকে কখনো অল্পে তুষ্ট থাকতে দেয় না। সেকারণ নবী-রাসূল এবং যুগ-যুগান্তরে তাঁদের সনিষ্ঠ অনুসারীগণ বিলাসী জীবনকে অপসন্দ করেছেন এবং অনাড়ম্বর সাধা-সিধে জীবন যাপনকে বেছে নিয়েছেন। কেননা মানুষ যখন বস্ত্তবাদী হয়ে পড়ে এবং পার্থিব জীবন উপভোগে মনোনিবেশ করে তখন তার হৃদয় থেকে অল্পেতুষ্টি বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর বাস্তবতা হ’ল- মানুষ যতই ক্ষমতাশালী ও বিত্তবান হোক না কেন, তার বিলাসী জীবন বেশি দিন টেকসই হয় না। তাই দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত সফরে গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে সামান্য কষ্ট স্বীকার করে আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য পাথেয় সঞ্চয় করাই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। দুনিয়াতে মানুষ যতই সুখে-শান্তিতে বসবাস করুক না কেন, আখেরাতের তুলনায় তা একেবারেই মূল্যহীন। এটা উপলব্ধি করার জন্য একটি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য থেকে দুনিয়ার সর্বাধিক সুখী ও বিলাসী জীবন যাপন করেছে, এমন লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে জাহান্নামের আগুনে চুবিয়ে উঠানো হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো আরাম-আয়েশ দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে? সে বলবে, না, আল্লাহর কসম, হে আমার রব! অতঃপর জান্নাতবাসীদের মধ্য থেকে এমন এক লোককে উপস্থিত করা হবে, যে দুনিয়াতে সবচাইতে দুঃখী ও অভাবী ছিল। তাকে এক মুহূর্তের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে আবার বের করা হবে। তারপর জিজ্ঞেস করা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো দুঃখ-কষ্ট দেখেছ এবং তুমি কি কখনো বিপদাপদের মুখোমুখী হয়েছ? সে বলবে, না আল্লাহর কসম, হে আমার রব! আমি কখনো দুঃখ-কষ্টে পতিত হইনি। আর কখনো কোন কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি’।[36]
আল্লাহর ইবাদত থেকে গাফেল হয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত হওয়া জাহান্নামী ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ مُتْرَفِينَ، ‘ইতিপূর্বে তারা ছিল ভোগ-বিলাসে মত্ত’ (ওয়াক্বি‘য়াহ ৫৬/৪৫)।
ইমাম ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা যেসমস্ত দুনিয়াবী নে’মত সমূহ থেকে আমাদের দূরে রেখেছেন, সেগুলো আমাদেরকে প্রদত্ত নে‘মত থেকে অধিক উত্তম। কেননা আল্লাহ তার নবী (ﷺ)-এর জন্য পার্থিব ভোগ-বিলাসকে অপসন্দ করেছেন। সুতরাং আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবীর জন্য অপসন্দনীয় (ভোগ-বিলাসপূর্ণ) জীবনের চেয়ে তাঁর জন্য পসন্দনীয় (ভোগ-বিলাসহীন) জীবনই আমার নিকটে অধিকতর প্রিয়।[37] সুতরাং বলা যায়, সাধা-সিধে জীবন যাপনই অল্পে তুষ্ট জীবন গঠনের জন্য অধিকতর উপযোগী। তাই বিলাসী জীবন পরিহার করে অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্থ হওয়া বুদ্ধিমান মুমিনের কর্তব্য।
১০. কুরআন অনুধাবন করা :
সাধারণভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং তা অনুধাবন করা এক নয়। অর্থ না বুঝে কুরআন তেলাওয়াতে অশেষ নেকী অর্জিত হ’লেও, কেবল তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে কুরআন নাযিল হয়নি; বরং তা অনুধাবন করে উপদেশ হাছিল করা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন। কুরআন অনুধাবনের মাধ্যমে জীবনজুড়ে বরকত নাযিল হয়। অধিকাংশ মানুষ কুরআন তেলাওয়াত করেও তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে না, কেবল অনুধাবন না করার কারণে। সেকারণ বান্দার কর্তব্য হ’ল বোঝার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করা। আল্লাহ বলেন,
‘এটি এক বরকতমন্ডিত কিতাব, যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি। যাতে লোকেরা এর আয়াত সমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (ছোয়াদ ৩৮/২৯)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
‘আর এই কিতাব (কুরআন) আমরা নাযিল করেছি যা বরকতমন্ডিত। সুতরাং এটির (আদেশ সমূহ) অনুসরণ কর এবং (নিষেধ সমূহে) ভয় কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হ’তে পার’ (আন‘আম ৬/১৫৫)।
ইমাম শাওক্বানী বরকতময় কুরআনের ব্যাখ্যায় বলেন,
‘মুবারক অর্থ হ’ল কুরআনের প্রভূত বরকত, যার মধ্যে দ্বীন ও দুনিয়ার সকল কল্যাণ অর্ন্তভুক্ত’।[38]
সুতরাং যারা কুরআন অনুধাবন করে আল্লাহর ভয়ে ভীত হবে এবং এর হালাল-হারাম, আদেশ-নিষেধ যথাযথভাবে মেনে চলবে, তারা জীবন ও জীবিকার সর্বক্ষেত্রে রহমত ও বরকত প্রাপ্ত হবে।[39]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যারা কুরআন অনুধাবনের মাধ্যমে এর বিধি-বিধানের হেফাযত করবে, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ দান করবেন। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে তাদের জীবন ও জীবিকা সংকুচিত করে দিবেন।[40]
কুরআনের মাধ্যমে বরকত লাভের প্রমাণ হাদীসেও মওজূদ আছে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘তোমরা সূরা বাক্বারাহ তেলাওয়াত কর। কেননা তা গ্রহণ করাতে রয়েছে বরকত এবং বর্জন করায় রয়েছে পরিতাপ’।[41]
এখানে কুরআন গ্রহণ করার অর্থ হ’ল,
‘নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা, এর মর্ম অনুধাবন করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা’।[42]
১১. রিযিক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করা :
আল্লাহর প্রতি যার ভরসা কম, সে রিযিক নিয়ে সবচেয়ে বেশি পেরেশান থাকে। যে যত বেশী রিযিকের দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে, তার পক্ষে অল্পে তুষ্ট থাকা তত বেশী সহজ হবে। কিন্তু শয়তান সবসময় মানুষকে রিযিক সংকোচনের ভয় দেখায় ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উৎকণ্ঠিত করে তোলে। আবূ যার গিফারী (রাঃ) বলেন, ‘মানুষ যদি কুরআনের একটি আয়াতকে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরতে পারত, তাহ’লে এই আয়াতটাই তার জন্য যথেষ্ট হ’ত। অতঃপর তিনি তেলাওয়াত করেন,
‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন, আর তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক প্রদান করেন’ (ত্বালাক্ব ৬৫/২-৩)।[43]
সেজন্য সালাফে ছালেহীন কখনো রিযিকের দুশ্চিন্তাকে প্রশ্রয় দিতেন না। আবূ আব্দুর রহমান আল-উমারী (রহঃ) নিজেকে ভৎর্সনা করে বলতেন, ‘আমি যখন মায়ের পেটে ছিলাম, তখন আমাকে রিযিক দেওয়া হয়েছে। সেই অবস্থায় আমার কোন চেষ্টা ছাড়াই রিযিক আমার মুখে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি যখন বড় হ’লাম এবং আমরা রবকে চিনলাম। তখন তাঁর সম্পর্কে আমার ধারণা খারাপ হয়ে গেল। জগতে আমার চেয়ে কি আর কোন নিকৃষ্ট বান্দা থাকতে পারে?’[44] একবার উসাইদ আল-ফাযারী (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল- مِنْ أَيْنَ تَعِيشُ؟ ‘আপনার জীবিকার উৎস কী?’ তখন তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ! যেই আল্লাহ বানর-শূকরকে রূযী দিয়ে থাকেন, তিনি কি আবূ উসাইদের রূযীর ব্যবস্থা করবেন না? তারপর তিনি কবিতা আবৃত্তি করে বলেন,
إِنَّ الْمَقَادِيرَ لا تُنَاوِلُهَا الأَوْهَامُ + لُطْفًا وَلا تَرَاهَا الْعُيُوْنُ
سَيَجْرِي عَلَيْكَ مَا قَدَّرَ اللهُ + وَيَأْتِيكَ رِزْقُكَ الْمَضْمُونُ
‘নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তা তাক্বদীরকে অনুগ্রহের যোগান দিতে পারে না এবং চক্ষুসমূহ ভাগ্যকে দেখতে পায় না। আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তা বাস্তবায়ন হবেই। তোমার বরাদ্দ রিযিক তোমার কাছে আসবেই’।[45]
আইয়্যুব ইবনু ওয়ায়েল (রহঃ) বলেন,
‘তুমি রিযিকের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ো না; বরং তোমার চিন্তা-ভাবনাকে মৃত্যুর জন্য নির্ধারণ করে রাখ’।
ফুযাইল ইবনু ইয়ায (রহঃ) বলেন,
‘আমি কখনো রিযিকের জন্য দুশ্চিন্তা করিনি। আমার রবের সন্তুষ্টি লাভের পরে আমার রিযিকের জন্য তাঁর সামনে পেরেশান হ’তে আমি লজ্জাবোধ করি’।[46]
১২. নবী-রাসূল ও সালাফদের জীবনী অধ্যয়ন করা :
আদর্শ জীবন গঠনের জন্য নবী-রাসূলগণের জীবন অধ্যয়ন করা আবশ্যক। কেননা তাঁরাই পৃথিবীবাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।
আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে’ (আহযাব ৩৩/২১)।
আর সালাফে ছালেহীন ছিলেন নবীদের সনিষ্ঠ অনুসারী। পরবর্তী প্রজন্ম তাদের রচিত পথ ধরেই সফলতা ও মুক্তির মনযিলে পৌঁছাতে পারে। আল্লাহ বলেন,
‘মুমিনদের মধ্যে অনেকে আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। আর তারা তাদের অঙ্গীকার আদৌ পরিবর্তন করেনি’ (আহযাব ৩৩/২৩)।
শাক্বীফ ইবনে ইবরাহীম বলখী (রহঃ) বলেন, আমরা একদিন আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ)-কে বললাম, ‘আপনি তো আমাদের সাথেই সালাত আদায় করেন। কিন্তু আমাদের সাথে বসেন না কেন?’ তখন তিনি বললেন, ‘আমি ফিরে গিয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের সাথে বসে কথা বলি’। আমরা বললাম, ‘সাহাবী-তাবেঈদের আপনি কোথায় পেলেন’। তিনি বললেন, ‘আমি ফিরে গিয়ে ইলম চর্চায় মনোনিবেশ করি। তখন তাদের কথা ও কর্মের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তোমাদের সাথে বসে আমি কি করব? তোমরা তো বসেই মানুষের দোষ চর্চা করা শুরু কর’।[47] নাঈম ইবনে হাম্মাদ বলেন, ইবনুল মুবারক (রহঃ) অধিকাংশ সময় নিজ বাড়িতে অবস্থান করতেন। তাকে বলা হ’ল, আপনি সবসময় বাড়িতে বসে থাকেন, এতে কি একাকীত্ব অনুভব করেন না? জবাবে তিনি বললেন, আমি তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে থাকি, এককীত্ব অনুভব করব কিভাবে? [48]
নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ অল্পে তুষ্ট ব্যক্তি। আর তার পরে সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈনে ইযাম, তাবা তাবে‘ঈন ও তৎপরবর্তী নেককার বান্দাগণ ছিলেন রাসূল (ﷺ)-এর জীবনাদর্শের মাধ্যমে সর্বাধিক প্রভাবিত ও আলোকিত। তাই তাদের জীবন দর্শন জানতে হ’লে তাদের জীবনী অধ্যয়ন আবশ্যক। যারা নবী-রাসূল ও সৎকর্মশীল সালাফদের জীবনালেখ্য যত বেশী চর্চা করবে, তাদের জীবন তত বেশী আল্লাহমুখী হবে এবং অল্পে তুষ্টির আলোয় উদ্ভাসিত হবে।
১৩. আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করা :
আল্লাহর তাওফীক্ব ছাড়া বান্দা কোন কিছু লাভ করতে পারে না। তাই বান্দার কর্তব্য হ’ল অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অল্পে তুষ্ট থাকার জন্য এই দো‘আটি পড়তেন,
‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের পরিবারকে জীবনধারণোপযোগী রিযিক প্রদান করুন’।[49] অপর বর্ণনায় রয়েছে,
‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের পরিবারকে প্রয়োজন মাফিক রিযিক প্রদান করুন’।[50]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর কাছে দো‘আ করে বলতেন,
‘হে আল্লাহ! আমাকে যে রিযিক দিয়েছেন, তাতে আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন এবং বরকত দান করুন। আর আমার না পাওয়া প্রত্যেক রিযিকের বিনিময়ে আমাকে উত্তম পারিতোষিক দান করুন’।[51]
অপর একটি বর্ণনায় শুধু প্রথম অংশটুকু এসেছে যে,
‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে রিযিক দিয়েছেন, তাতে আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন’।[52]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আচরিত আদর্শের সনিষ্ঠ অনুসারী সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈনে ইযাম এবং সালাফে ছালেহীন অল্পে তুষ্ট জীবন লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন মর্মে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। এই দো‘আ সাধারণভাবে হ’তে পারে, আবার সালাতের মাধ্যমেও হ’তে পারে। যেমন মাইমূন ইবনু মেহরান (রাঃ) বলেন,
‘যদি কোন ব্যক্তি কোন রাজার দারস্থ হয় এবং রাজা তাকে নাগালের বাইরে রাখে, তাহ’লে সে যেন দয়াময় আল্লাহর দরবারে হাযির হয়। কেননা তাঁর রহমতের দরজা সবসময় খোলা থাকে। অতঃপর দুই রাক‘আত সালাত আদায় করে তাঁর কাছে নিজের প্রয়োজন কামনা করে’।[53]
উপসংহার :
অল্পে তুষ্ট থাকা হৃদয়ের ইবাদত। লোভ-লালসার লাগাম টেনে যারা এই ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতে পারে, তাদের হৃদয় পরিতৃপ্ত হয়। জীবন-জীবিকায় নেমে আসে অফুরন্ত বরকতের ধারা। সময়ের ব্যবধানে শত দুঃখ-কষ্ট ও অপূর্ণতায় তাদের কোন আক্ষেপ থাকে না। সুতরাং অল্পে তুষ্ট জীবন আল্লাহর রহমত স্বরূপ, যার সোপান পেরিয়ে দুনিয়াবী শান্তি ও পরকালীন মুক্তির সম্ভাবনা নিশ্চিত হয়। পক্ষান্তরে পরিতুষ্টহীন জীবন আযাব স্বরূপ, যা ইবাদতের আগ্রহ নষ্ট করে দেয় এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি ডেকে আনে। সুতরাং যিন্দেগীর এই সংক্ষিপ্ত সফরে অল্পে তুষ্ট থেকে আখেরাতের শান্তিময় জীবনের প্রস্ত্ততি নেওয়াই বুদ্ধিমান মুমিনের কর্তব্য। মহান আল্লাহ আমাদেরকে অল্পে তুষ্ট থেকে তাঁর রেযামন্দি হাছিলের তাওফীক্ব দান করুন এবং পরকালে জান্নাতুল ফেরদাঊস দানে ধন্য করুন- আমীন!
[1]. মুসলিম হা/১০৪৩; আবূদাঊদ হা/১৬৪২; নাসাঈ হা/৪০৬।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/২১৪৪; সহীহুত তারগীব হা/১৬৯৮, সনদ সহীহ।
[3]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ২/২০২।
[4]. ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা (বৈরূত: দারুল কুতুবিল-ইলমিয়াহ, ১ম মুদ্রণ, ১৪০৮হি./১৯৮৭খ্রি.) ২/৩৯৬।
[5]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ: ৯৭।
[6]. ইবনু আবিদ্দুনয়া, আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৩৯।
[7]. শামসুদ্দীন যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১১/৪৮৫; ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ২/৩৪০।
[8]. ইবনুল জাওযী, আত-তাবছিরাহ ১/১২২।
[9]. বুখারী হা/৬৪৯০; ইবনু হিববান হা/ ৭১২; মিশকাত হা/৫২৪২।
[10]. মুসলিম হা/২৯৬৩; মিশকাত হা/৫২৪২।
[11]. কাযী ইয়ায, ইকমালুল মু‘লিম বিফাওয়ায়িদিল মুসলিম, মুহাক্কিক্ব: ড. ইয়াহইয়া ইসমাঈল (মিসর: দারুল অফা, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৯হি./১৯৯৮খ্রি.) ৮/৫১৫।
[12]. ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/৫০০; মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৭৯২৬; সহীহুত তারগীব হা/৩১৬৫, সনদ সহীহ।
[13]. আহমাদ হুত্বাইবাহ, শারহুত তারগীব ওয়াত তারহীব (মাকতাবা শামেলা যাহাবিয়্যা) ৪/৪৫।
[14]. তাফসীরে কুরতুবী ১৬/১৬।
[15]. শাওক্বানী, তাফসীরে ফাৎহুল ক্বাদীর ৪/৬১১।
[16]. ইবনুল মুবারক, আয্-যুহদু ওয়ার রাক্বায়েক্ব, পৃ: ২১০; ইবনু আবীদ্দুনইয়া, আয্-যুহ্দ, পৃ: ১০৭।
[17]. বায়হাক্বী, আয-যুহ্দুল কাবীর, পৃ: ৬৫।
[18]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১০/৪৭৬।
[19]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৬৬।
[20]. তাফসীরে সা‘দী, পৃ: ৪২৯।
[21]. শানক্বীতী, তাফসীরে আযওয়াউল বায়ান ২/২৫৩।
[22]. আহমাদ হা/২৬১৪; সহীহাহ্ হা/২৬২৯, সনদ হাসান।
[23]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৮/৪৯০।
[24]. বুখারী হা/৬৪১৬; তিরমিযী হা/২৩৩৩; মিশকাত হা/১৬০৪।
[25]. ইবনু আবীদ্দুনইয়া, ক্বিছারুল আমাল )বৈরূত: দারু ইবনু হাযম, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ১৪১৭হি./১৯৯৭খ্রি.) পৃ: ৪৪।
[26]. আব্দুল কারীম কুশাইরী, আর-রিসালাতুল কুশাইরিয়্যাহ, মুহাক্কিক্ব: ড. আব্দুল হালীম মাহমূদ ও ড. মাহমূদ বিন শরীফ (কায়রো: দারুল মা‘আরেফ, তাবি) ১/২৫৪
[27]. গাযালী, ইহয়াউ ‘উলূমিদ্দীন ৪/৪৫৪; মিফতাহুল আফকার ১/১৩০।
[28]. আবুল লায়েছ সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ: ২২৫।
[29]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১০২৪; সহীহুত তারগীব হা/৯২২; মিশকাত হা/১৮৮৫।
[30]. মির‘আতুল মাফাতীহ ৬/১৩৭।
[31]. আব্দুল ক্বাদের আল-‘আনী, বায়ানুল মা‘আনী ১/৩০১।
[32]. তিরমিযী হা/২৩৭৬; সহীহুত তারগীব হা/১৭১০; মিশকাত হা/৫১৮১।
[33]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/৩৯।
[34]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক ৫৩/১৪১; মাওসূ‘আতুল আখলাক্ব আল-ইসলামিয়্যাহ ২/৩১০।
[35]. ইহ্য়াউ ‘উলূমিদ্দীন ৪/২০০; ওয়াক্বি‘, আয্-যুহ্দ, পৃ:৪২৬।
[36]. মুসলিম হা/২৮০৭; মিশকাত হা/৫৬৬৯।
[37]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ৬/২৭৭; ইবনুল ক্বাইয়িম, উদ্দাতুছ ছাবেরীন, পৃ: ১৩২।
[38]. তাফসীরে ফাৎহুল ক্বাদীর ২/২০৫।
[39]. তাফসীরে ক্বাসেমী ৪/৫৪২; রূহুল মা‘নী ৪/২০৯; ছাফওয়াতুত তাফাসীর ১/৩৯৮।
[40]. ছা‘আলাবী, আল-জাওয়াহিরুল হাস্সান (তাফসীরে ছা‘আলাবী) ৪/৭২।
[41]. মুসলিম হা/৮০৪; দারেমী হা/ ৩৪৩৪; মিশকাত হা/২১২০।
[42]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৪/১৪৬১।
[43]. তাফসীরে কুরতুবী ১৮/১৬০।
[44]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৫৫।
[45]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৫৪।
[46]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৫৩।
[47]. খত্বীব বাগদাদী, তাকয়ীদুল ইলম (বৈরূত: ইহয়াউস সুন্নাহ আন-নববিয়্যাহ, তাবি) পৃ. ১২৬; ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ৩/৩২৪।
[48]. ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ৩/৩২৪।
[49]. মুসলিম হা/১০৫৫; ইবনু মাজাহ হা/৪১৩৯; মিশকাত হা/৫১৬৪।
[50]. সহীহ ইবনু হিববান হা/৬৩৪৩; শু‘আইব আরনাঊত্ব, সনদ সহীহ।
[51]. মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৩৩৬০; ইমাম হাকেম ও ইমাম যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আলবানী হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪২।
[52]. ইবনু আল্লান, আল-ফুতূহাতুর রাববানিয়্যাহ ‘আলাল আযকার আন-নাবাবিয়্যাহ ৪/৩৮৩; ইবনু হাজার, হাদীস হাসান।
[53]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ পৃ:৭২।
অল্পে তুষ্টির মাধ্যমে আত্মিক সুখ অনুভূত হয়, জীবনজুড়ে নেমে আসে প্রশান্তির ফল্গুধারা। রিযিক হয় বরকতপূর্ণ। হৃদয়ে থাকে না অধিক পাওয়ার তৃষ্ণা এবং না পাওয়ার আক্ষেপ। অল্পে তুষ্টির গুণে মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর হয়ে যায়। হৃদয়ে সঞ্চারিত হয় তাওয়াক্কুলের আবেশ। অল্পে তুষ্টি দুনিয়া ও আখেরাতে প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনে। সেকারণ সাহাবায়ে কেরাম অল্পে তুষ্ট জীবন গঠনের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাতে বায়‘আত গ্রহণ করেছিলেন।[1] নিমেণ অল্পে তুষ্ট জীবন গঠনের কিছু উপায় উল্লেখ করা হ’ল।-
১.তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করা :
ঈমানের একটি অপরিহার্য অংশ হ’ল তাক্বদীরের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস। বিশ্বাস দুর্বল হ’লে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন অল্পে তুষ্ট থাকা কষ্টকর হয়ে যায় এবং ঈমানের স্বাদ আস্বাদনও দুরূহ হয়ে পড়ে। অসুস্থ ও দুর্বল শরীরে যেমন জীবনের স্বাদ লাভ করা যায় না, তেমনি দুর্বল ঈমান নিয়ে অল্পে তুষ্টির স্বাদ আস্বাদন করা যায় না। তাই বান্দাকে এই মর্মে দৃঢ় বিশ্বাসী হ’তে হয় যে, তার রূযী জন্মের আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে। সে জীবনে যা পায়নি, কখনো তা পাওয়ার ছিল না। আর যা সে পেয়েছে, তা কখনো হারানোর ছিল না। অর্থাৎ আল্লাহ তার ভাগ্যে যা কিছু নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা-ই সে পেয়েছে, পাচ্ছে এবং পাবে। তার রিযিকের সর্বশেষ দানাটি গ্রহণ না করা পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ نَفْسًا لَنْ تَمُوْتَ حَتَّى تَسْتَوْفِيَ رِزْقَهَا وَإِنْ أَبْطَأَ عَنْهَا،
‘কোন প্রাণীই তার জন্য নির্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না। যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছুটা বিলম্ব হয়’।[2]
অর্থাৎ মানব জীবনের যাবতীয় বিষয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাক্বদীর অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তাক্বদীরে যা আছে, মানুষ চাইলেও তা ঘটবে এবং না চাইলেও তা ঘটবে। তাই অল্প রিযিক, দুঃখ-কষ্ট, বালা-মুছীবত সবকিছু তাক্বদীরেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যারা এর উপর সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তাদের ঈমান পূর্ণ করে দেন।
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,
أَنَّ مَنْ مَلَأَ قَلْبَهُ مِنَ الرِّضَا بِالْقَدَرِ: مَلَأَ اللهُ صَدْرَهُ غِنًى وَأَمْنًا وَقَنَاعَةً،
‘যে ব্যক্তি তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্টির মাধ্যমে তার হৃদয়কে পূর্ণ করে, আল্লাহ তার বক্ষকে প্রাচুর্য, নিরাপত্তা ও অল্পে তুষ্টি দিয়ে ভরে দেন’।[3]
আবূবকর শিবলী (রহঃ) বলেন,
ضِيقُ الصَّدْرِ لِتَرْكِ الرِّضَا بِالْقَضَاءِ،
‘তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্ট না থাকার কারণে হৃদয় সংকুচিত হয়ে যায়’।[4]
সুতরাং অল্পে তুষ্ট থাকার জন্য বান্দার হৃদয়ে এই দৃঢ় বিশ্বাস প্রোথিত থাকতে হবে যে, আমাদের জীবনে রিযিকসহ যাবতীয় বিষয়ে আল্লাহর ইচ্ছা ও অনিচ্ছাই কার্যকর হয়।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,
أساس كل خير أَن تعلم أَن مَا شَاءَ الله كَانَ وَمَا لم يَشَأْ لم يكن،
‘সকল কল্যাণের মূল হ’ল তোমার একথা জানা যে, আল্লাহ যা চান, তা-ই হয়। আর তিনি যা চান না, তা হয় না’।[5]
তাক্বদীরের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে মানুষ অল্পে তুষ্ট থাকতে পারে। দুনিয়ার সকল বিপদ-আপদকে সে সহজভাবে নিতে পারে। পরম সুখে আল্লাহকে স্মরণ করতে এবং তাঁর ইবাদতে নিমগ্ন হ’তে পারে।
২. সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা :
শিশু যেমন মায়ের কোলে নিশ্চিন্ত থাকে, বান্দা তেমনি আল্লাহর উপর ভরসা করে নির্ভার থাকে। মা কখনো কখনো তার সন্তাকে আদর করে উপরে ছুঁড়ে দেয়, আবার কোলে নেয়। কিন্তু উপরের দিকে ছুঁড়ে দিলে সন্তান কখনো হতাশ হয় না; বরং আনন্দ পেয়ে হাসে। কারণ সে জানে- তার মা তাকে আবার বুকে তুলে নিবে। আল্লাহর কাছে বান্দার অবস্থান অনেকটা সেই শিশু সন্তানের মত। দারিদ্রে্যর কষ্ট, রিযিকের স্বল্পতা, বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট সব কিছুতেই বান্দা আল্লাহর উপর ভরসা করে নিশ্চিন্ত হয়। কেননা সে জানে আল্লাহর সব ফায়ছালার অন্তরালে কল্যাণ নিহিত আছে। ফলে সে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর উপর ভরসা করেই অল্পে তুষ্ট থাকে।
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,
مَا مِنِ امْرِئٍ إِلا وَلَهُ أَثَرٌ هُوَ وَاطِؤهُ، وَرِزْقٌ هُوَ آكِلُهُ، وَأَجَلٌ هُوَ بَالِغُهُ، وَحَتْفٌ هُوَ قَاتِلُهُ، حَتَّى لَوْ أَنَّ رَجُلا هَرَبَ مِنْ رِزْقِهِ لاتَّبَعَهُ حَتَّى يُدْرِكَهُ، كَمَا أَنَّ الْمَوْتَ مُدْرِكٌ مَنْ هَرَبَ مِنْهُ،
‘প্রত্যেক ব্যক্তিই তার নিজের পদচিহ্ন মাড়াবে, নির্ধারিত রিযিক ভক্ষণ করবে, জীবনের নির্ধারিত সীমায় উপনীত হবে এবং মৃত্যু তার জীবনাবসান ঘটাবে। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি তার রিযিক থেকে পলায়ন করে, রিযিক তার পিছনে পিছনে ছুটবে এবং তার নাগাল পেয়ে যাবে। যেমনভাবে কেউ মৃত্যু থেকে পলায়ন করলে মৃত্যু তাকে পাকড়াও করে’।[6]
একদিন জনৈক ব্যক্তি হাতিম আ‘ছাম (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করেন,
عَلَى ما بَنَيْتَ أَمْرَكَ؟
‘আপনি আপনার জীবন কিভাবে পরিচালনা করেন? তিনি বললেন,
عَلَى التَّوَكُّلِ عَلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، ثُمَّ قَالَ: بَنَيْتُ أَمْرِي عَلَى أَرْبَعِ خِصَالٍ: عَلِمْتُ أَنَّ رِزْقِي لا يَأْكُلُهُ غَيْرِي، فَاطْمَأَنَّتْ بِهِ نَفْسِيْ، وَعَلِمْتُ أَنَّ عَمَلِي لا يَعْمَلُهُ أَحَدٌ غَيْرِي، فأنا مشغول به، وَعَلِمْتُ أَنَّ الْمَوْتَ يَأْتِينِي بَغْتَةً، فَأَنَا أُبَادِرُهُ، وَعَلِمْتُ أَنِّي لا أَخْلُو مِنْ عَيْنِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ حَيْثُ كُنْتُ، فَأَنَا مُسْتَحْيٍ مِنْهُ أَبَدًا،
‘আললাহর উপরে ভরসার ভিত্তিতে। অতঃপর তিনি বলেন, চারটি বিষয়ের উপর আমার জীবনাচরণের ভিত্তি নির্মাণ করেছি। তা হ’ল, (১) আমি জানি আমার জন্য বরাদ্দ রিযিক আমি ব্যতীত অন্য কেউ খেতে পারবে না। তাই সে ব্যাপারে আমি আত্মিক প্রশান্তি লাভ করি। (২) আমি জানি যে, আমি ছাড়া আমার আমল অন্য কেউ করে দিবে না। তাই আমি সৎ আমলে ব্যস্ত থাকি। (৩) আমি জানি মৃত্যু আমার নিকট হঠাৎ চলে আসবে, তাই আমি দ্রুততার সাথে পরকালীন পাথেয় সঞ্চয় করি। (৪) আমি জানি আমি যেখানেই থাকি না কেন, কখনোই আমি আল্লাহর দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতে পারব না। তাই সবসময় আমি তাঁকে লজ্জা করি’।[7]
আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন,
التَّوَكُّل: هُوَ قَطْعُ الاسْتِشْرَافِ بِالْيَأْسِ مِنَ الْخَلْقِ،
‘তাওয়াক্কুল হ’ল সৃষ্টির প্রতি হতাশার দৃষ্টিতে তাকানোর পথকে বন্ধ করে দেওয়া’।[8]
সুতরাং বান্দা যখন হতাশা ও কামনার দৃষ্টিকে অবনত করে নিজের যতটুকু আছে ততটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, তখন সে আল্লাহর প্রতি ভরসা করার অদৃশ্য শক্তি লাভ করবে। আর এই তাওয়াক্কুলের পথ ধরে সে অল্পে তুষ্টির মনযিলে পৌঁছে যাবে।
৩. নিম্ন পর্যায়ের মানুষের দিকে তাকানো :
অল্পে তুষ্ট থাকার অন্যতম একটি কার্যকর উপায় হচ্ছে নিজের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের লোকদের দিকে তাকানো। সেটা হ’তে পারে ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব, দেহ সৌষ্ঠব, গাড়ি-বাড়ি, মান-মর্যাদা, ক্ষমতা-প্রতিপত্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিয়ে বলেন,
لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ-
‘আমরা তাদের ধনিক শ্রেণীকে যে বিলাসোপকরণ সমূহ দান করেছি, তুমি সেদিকে চোখ তুলে তাকাবে না। আর তাদের ব্যাপারে তুমি দুশ্চিন্তা করো না। ঈমানদারগণের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনত রাখ’ (হিজর ১৫/৮৮)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উম্মতকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,
إِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ فِى الْمَالِ وَالْخَلْقِ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْهُ،
‘যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তিকে দেখে যাকে ধন-সম্পদ এবং স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে তার উপরে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চাইতে নিমণমানের ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করে’।[9]
অন্যত্র তিনি বলেন,
انْظُرُوا إِلَى مَنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ، وَلَا تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ، فَهُوَ أَجْدَرُ أَنْ لَا تَزْدَرُوا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ،
‘তোমরা নিজেদের অপেক্ষা নিমণ স্তরের লোকের প্রতি তাকাও। তোমাদের চাইতে উচ্চ পর্যায়ের লোকদের দিকে তাকিয়ো না। তাহ’লে এটাই হবে তোমাদের উপরে আল্লাহর নে‘মতকে অবজ্ঞা না করার উপযুক্ত মাধ্যম’।[10]
ইবনু জারীর ত্বাবারী (রহঃ) বলেন,
هذا حديث جامع للخير؛ لأن العبد إذا رأى من فوقه فى الخير طالت نفسه باللحاق به، واستقصر حاله التى هو عليها، واجتهد فى الزيادة. وإذا نظر فى دنياه إلى من دونه تبين نعم الله عليه، فألزم نفسه الشكر،
‘এই হাদীস যাবতীয় কল্যাণকে একত্রিত করেছে। কেননা বান্দা যখন প্রাচুর্য-সমৃদ্ধিতে তার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের কোন ব্যক্তির দিকে তাকায়, তখন তার অন্তর সেটাকে পাওয়ার জন্য আকাঙ্ক্ষী হয়ে উঠে। ফলে সে নিজের অবস্থাকে খুবই নগণ্য মনে করে এবং প্রাচুর্য বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করতে থাকে। আর সে যখন নিজের চেয়ে নিমণ পর্যায়ের লোকের দিকে তাকায়, তখন তার প্রতি আল্লাহর নে‘মতগুলি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে তার মন-প্রাণ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় প্রণত হয়’।[11]
সুতরাং অল্পে তুষ্টির স্বাদ আস্বাদনের জন্য নিজেদের চেয়ে নিমণ শ্রেণীর মানুষের দিকে তাকানো উচিত। মধ্যবিত্ত কোন পরিবারের সদস্য যদি ধনী লোকের গাড়ি-বাড়ির দিকে তাকায়, তাহ’লে সে কখনো অল্পে তুষ্ট থাকতে পারবে না। কিন্তু সে যদি ফুটপাথে শুয়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষের দিকে তাকায়, তাহ’লে মনে সান্ত্বনা খুঁজে পাবে। কুঁড়েঘরে বসবাসকারী যদি বন্যা কবলিত ভিটেমাটি হারা মানুষের দিকে তাকায়, তাহ’লে অল্পে তুষ্ট থাকা তার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। এভাবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিচের দিকে তাকানোর মাধ্যমে পরিতুষ্ট থাকার চেষ্টা করতে হবে। নইলে নিজেদের অজান্তেই অশান্তির ঘেরাটোপে মানুষ অাঁটকে যাবে। তাই আসুন! আমরা অল্প তুষ্ট থাকতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দিন! আমীন!!
৪. আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করা :
আল্লাহর দাসত্ব করার জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যাদের যিন্দেগী আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠায় তৎপর থাকে, আল্লাহ তাদেরকে অপরিমেয় রিযিক দান করেন এবং অল্পে তুষ্টির গুণ দ্বারা তাদের হৃদয়কে পূর্ণ করে দেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ،
‘আমি জিন ও ইনসানকে কেবলমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)।
মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِي أَمْلَأْ قَلْبَكَ غِنًى وَأَمْلَأْ يَدَيْكَ رِزْقًا، يَا ابْنَ آدَمَ لَا تَبَاعَدْ مِنِّي فَأَمْلَأْ قَلْبَكَ فَقْرًا وَأَمْلَأْ يَدَيْكَ شُغْلًا،
‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য সময় বের করে নাও, তাহ’লে আমি তোমার হৃদয়কে অভাবমুক্তি দ্বারা পূর্ণ করে দিব এবং তোমার দু’হাতকে রিযিক দিয়ে ভরে দিব। হে আদম সন্তান! আমার থেকে দূরে সরে যেও না, তবে আমি তোমার হৃদয়কে দরিদ্রতা দিয়ে ভরে দিব এবং তোমার হাতকে ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেব’।[12]
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ওলামায়ে কেরাম বলেন, ‘যখন অন্তর অভাবমুক্ত হয়ে যায়, তখন মানুষ আর কোন কিছুর প্রতি মুখাপেক্ষী থাকে না। কেননা এই অভাবমুক্তি হ’ল অন্তরের অভাবমুক্তি। ফলে মানুষ যদি রিক্তহস্ত-দরিদ্রও হয়ে যায়, আর তার অন্তর যদি অভাবমুক্ত থাকে, তাহ’লে সে মনে করে যে, সে অনেক কিছুর মালিক। আর এটা তার কাছে থাকা সমুদয় সহায়-সম্পদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর। আর আল্লাহ যদি তার অন্তরকে গরীব ও অভাবী করে দেন, তাহ’লে মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ধনী লোক হওয়া সত্ত্বেও সে নিজেকে একজন দরিদ্র মানুষ ভাবতে থাকে। কেননা সে মনে করে তার সম্পদ খুব শীঘ্রই নিঃশেষ হয়ে যাবে’।[13] সুতরাং যারা যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে আত্মনিয়োগ করতে পারবে, আল্লাহ তার হৃদয় থেকে রিযিকের দুশ্চিন্তা দূরীভূত করে দিবেন এবং অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
৫. আখেরাতমুখী জীবন গঠন করা ও মৃত্যুকে স্মরণ করা :
দুনিয়া একটি ক্ষণস্থায়ী ঠিকানা। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে উপনীত হ’লে বা কোন কঠিন রোগে আক্রান্ত হ’লে মানুষ কিছুটা বুঝতে পারে যে, পার্থিব জীবন এবং দুনিয়া কেন্দ্রিক আমাদের স্বপ্ন-আশা কতটা মূল্যহীন। এখানে ঈমান ও আমলের মাধ্যমে আখেরাতে মুক্তি পাওয়া মুমিন বান্দার প্রধান লক্ষ্য হয়ে থাকে। কিন্তু জীবন যখন দুনিয়ামুখী হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন এর মোহে ডুবে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে এবং পার্থিব যৎসামান্য সামগ্রীতে পরিতুষ্ট থাকা দুরূহ হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে যারা আখেরাতমুখী জীবন গঠন করে, আল্লাহ তাদের স্বল্প জীবিকায় প্রভূত বরকত দান করেন। ফলে দুনিয়ার কোন কিছুর জন্য তাদের মনে কোন আক্ষেপ থাকে না এবং হৃদয়-মন অল্পে তুষ্ট থাকে। আর আখেরাতমুখী জীবন যাপনের অর্থ হ’ল- সাধ্যানুযায়ী শরী‘আতের বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালন করে সর্বদা মৃত্যুর জন্য প্রস্ত্তত থাকা। কেউ যদি নিজের মধ্যে মৃত্যুর ভাবনা সর্বদা জাগরুক রাখতে পারে যে, আজকের দিনটাই হয়ত আমার শেষ দিন, আজকে অথবা আগামী কালই হয়ত আমি মরে যাব, তাহ’লে দুনিয়ার মোহে সে ডুবে থাকবে না। সহায়-সম্পদের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সে কখনোই চিন্তা-ভাবনা করবে না; বরং অল্পে তুষ্ট থেকে সাধ্য অনুযায়ী পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ে ব্যস্ত থাকবে।
আল্লাহ বলেন,
مَنْ كَانَ يُرِيْدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ،
‘যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল কামনা করে আমরা তার জন্য তার ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু আখেরাতে তার জন্য কোন অংশ থাকবে না’ (শূরা ৪২/২০)।
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, তুমি এমনভাবে দুনিয়াবী জীবন পরিচালনা কর, যেন আগামীকালই তোমার মৃত্যু হবে’।[14]
আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন,
إن الله يعطي على نية الآخرة ما شاء من أمر الدنيا، ولا يعطي على نية الدنيا إلا الدنيا،
‘আল্লাহ আখেরাতের নিয়তের উপর ভিত্তি করে বান্দাকে স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী পার্থিব সামগ্রী প্রদান করবেন। কিন্তু দুনিয়ার নিয়তে তিনি দুনিয়া ছাড়া আর কিছুই দেন না’।[15] ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, ‘দেহ ও মনের প্রশান্তির উপায় হচ্ছে দুনিয়াবিমুখ হয়ে সাধা-সিধে আখেরাতমুখী জীবন যাপন করা’।[16]
হাসান বাছরী (রহঃ) যুবকদেরকে উপদেশ দিয়ে বলতেন,
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، عَلَيْكُمْ بِالْآخِرَةِ فَاطْلُبُوْهَا؛ فَكَثِيْرًا رَأَيْنَا مَنْ طَلَبَ الْآخِرَةَ فَأَدْرَكَهَا مَعَ الدُّنْيَا، وَمَا رَأَيْنَا أَحَدًا طَلَبَ الدُّنْيَا فَأَدْرَكَ الْآخِرَةَ مَعَ الدُّنْيَا،
‘হে যুব সমাজ! অবশ্যই তোমরা আখেরাতের সন্ধানে নিয়োজিত থাকবে। কেননা বহু আখেরাত অনুসন্ধানীকে আমি দেখেছি যে, সে আখেরাতের সাথে পার্থিব কল্যাণও লাভ করেছে। আর আমি কখনো দুনিয়া অনুসন্ধানী এমন কাউকে দেখিনি, যে দুনিয়ার সাথে আখেরাতের কল্যাণ হাছিল করতে পেরেছে’।[17]
মানুষ যখন দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের কথা চিন্তা করে মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করবে এবং যেকোন সময়ে আল্লাহর ডাকে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্ত্তত থাকবে, তখন দুনিয়ার ঠুনকো স্বার্থকে সে আদৌ পরওয়া করবে না; বরং আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ে সদা সচেষ্ট থাকবে। তার সম্পদ কতটুকু থাকল কি থাকল না, এ নিয়ে কখনো পেরেশান হবে না। বরং অল্পে তুষ্ট থেকে জান্নাতের চির শান্তির ঠিকানায় রবের সাক্ষাতের জন্য সদা উন্মুখ থাকবে।
বিশর ইবনুল হারেছ (রহঃ) বলেন,
لَيْسَ أَحَدٌ يُحِبُّ الدُّنْيَا إِلاَّ لَـمْ يُحِبَّ الـمَوْتَ، وَمَنْ زَهِدَ فِيْهَا، أَحَبَّ لِقَاءَ مَوْلاَهُ،
‘যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালোবাসে, সে কখনো মৃত্যুকে পসন্দ করে না। আর যে ব্যক্তি দুনিয়া বিমুখ হয়, সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করতে ভালোবাসে’।[18]
আওন ইবনু আব্দুল্লাহ (রহঃ) বলেন,
مَنْ طَلَبَ الآخِرَةَ لَمْ يَفُتْهُ رِزْقُهُ،
‘যে ব্যক্তি আখেরাত তালাশ করে, তার রিযিক কখনো হাতছাড়া হয় না’।[19]
৬. দীর্ঘ আশা-আকাঙক্ষা না করা :
অধিক পাওয়ার আকাঙ্খা ও দীর্ঘ আশা অল্পে তুষ্ট জীবন যাপনে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক। মানুষের আশা-আকাঙ্খা যত দীর্ঘ হয়, তার অল্পে তুষ্ট থাকার পথ ততটাই রুদ্ধ হয়ে যায়। আমরা কত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করি, কত স্বপ্ন দেখি যেন আমরা আরো অনেক দিন বেঁচে থাকব। কিন্তু আমরা ভেবে দেখি না যে, এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুদীর্ঘ আশা-আকাঙ্ক্ষা আমাদেরকে মৃত্যু থেকে গাফেল রাখে এবং আখেরাত বিমুখ করে তোলে। আল্লাহ বলেন,
ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ،
‘ছাড় ওদেরকে। ওরা খানা-পিনা করতে থাকুক আর দুনিয়া ভোগ করতে থাকুক। আশা-আকাঙ্ক্ষা ওদেরকে ভুলিয়ে রাখুক। অতঃপর শীঘ্র ওরা জানতে পারবে’ (হিজ্র ১৫/৩)।
আব্দুর রহমান সা‘দী (রহঃ) বলেন, এই আয়াতে দুনিয়াদারদের ধমক দেওয়া হয়েছে। কেননা দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকা ও দীর্ঘ আশার কারণে মানুষ আখেরাত থেকে বিমুখ হয়ে পড়ে’।[20]
হাসান বছরী (রাঃ) বলেন,
ما أطال عبد الأمل إلا أساء العمل،
‘বান্দা যখন দীর্ঘ আশা করে, তখন তার আমল খারাপ হয়ে যায়’।[SUP][SUP][21][/SUP][/SUP]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার এক সফরে হাজাত সেরে পানি না পেয়ে তায়াম্মুম করলেন। ইবনু আববাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আর একটু সামনে গেলেই তো পানি পাওয়া যেত। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন,
مَا يُدْرِينِي لَعَلِّي لَا أَبْلُغُهُ،
‘আমি কিভাবে জানব যে, (মৃত্যু আসার পূর্বে) আমি সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারব কি-না?’।[22]
অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) এতটুকুও নিশ্চিত ছিলেন না যে, আগামী সালাত পর্যন্ত বা পানির নিকটে পৌঁছা পর্যন্ত তিনি বেঁচে থাকবেন।[23]
এজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-কে উপদেশ দিয়ে বলেন,
كُنْ فِى الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ، أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ،
‘তুমি দুনিয়াতে একজন অপরিচিত ব্যক্তি অথবা পথিকের মত হয়ে থাকো’। এরপর থেকে ইবনু ওমর (রাঃ) বলতেন,
إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الْمَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ،
‘সন্ধ্যা হ’লে তুমি সকালের আশা করো না এবং সকাল হ’লে তুমি সন্ধ্যার আশা করো না। অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তুমি তোমার সুস্থতাকে এবং মৃত্যু আসার আগে তুমি তোমার জীবনকে কাজে লাগাও’।[24]
অথচ আমরা অহর্নিশ ছুটে চলেছি আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। মৃত্যু সম্পর্কে আমরা একেবারেই উদাসীন। পার্থিব আশার চোরাবালিতে ডুবে গেছে আমাদের যিন্দেগী। ফলে ইবাদতগুলো হয়ে গেছে রূহশূন্য, সেখানে আর অল্পে তুষ্টির আবাদ হয় না। অথচ বল্গাহীন আকাঙক্ষার লাগাম টেনে ধরে আমরা আমাদের আমলকে সুন্দর করতে পারতাম এবং অল্পে তুষ্ট থেকে আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয় করতে পারতাম।
মালেক ইবনু মিগওয়াল বাজালী (রহঃ) বলেন,
مَنْ قَصَرَ أَمَلُهُ هَانَ عَلَيْهِ عَيْشُهُ فِي الْمَطَاعِمِ وَالْمَلَابِسِ،
‘যে আশা কম করে, খানা-পিনা ও পোষাক পরিচ্ছদে তার জীবন সাধা-সিধে হয়ে থাকে’।[25]
হাতেম আল-আ‘ছাম (রহঃ) বলেন,
لكل شَيْء زينة وزينة العبادة الخوف وعلامة الخوف قصر الأمل،
‘প্রত্যেক জিনিসের একটা সৌন্দর্য আছে। ইবাদতের সৌন্দর্য হ’ল আল্লাহভীতি। আর আল্লাহভীতির আলামত হ’ল পার্থিব আশা-আকাঙক্ষা হ্রাস করা’।[26]
সালমান ফারেসী (রাঃ) বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোককে দেখলে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই- (১) সেই ব্যক্তি, যে দীর্ঘ আশা-আকাঙ্খা করে, কিন্তু মৃত্যুকে নিয়ে মোটেও চিন্তা করে না। অথচ মৃত্যু তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, (২) মৃত্যু থেকে গাফেল ব্যক্তি, অথচ তার মৃত্যুর পরেই ক্বিয়ামত শুরু হয়ে যাবে, (৩) সেই ব্যক্তি, যে গাল ভরে হাসে, কিন্তু সে জানে না যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট নাকি রাগান্বিত’।[27]
আবুল লায়েছ সামারকান্দী (রহঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পার্থিব আশা-আকাঙ্খা কম করে, মহান আল্লাহ তাকে চারভাবে সম্মানিত করেন, (১) তাকে আল্লাহর অনুগত্যে অবিচলতা দান করেন। (২) তার পার্থিব দুশ্চিন্তা হ্রাস করে দেন। (৩) স্বল্প উপার্জনের উপর সন্তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব দান করেন এবং তার অন্তরকে আলোকিত করে দেন। আর চারটি কাজের মাধ্যমে অন্তর আলোকিত হয়, (১) আহার করার সময় কিছু অংশ খালি রাখা (২) নেককার মানুষের সাহচর্যে থাকা (৩) কৃত পাপের কথা স্মরণ করে বার বার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং (৪) পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষা হ্রাস করা অথবা একবারে মিটিয়ে দেওয়া’।[SUP][SUP][28][/SUP][/SUP] সুতরাং আমরা যদি দীর্ঘ আশা না করে আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয়ে সদা নিয়োজিত থাকি, মহান আল্লাহ দুনিয়াতে আমাদেরকে অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব দান করবেন এবং আখেরাতে উপহার দিবেন প্রশান্তিময় জান্নাত।
৭. সম্পদ জমানোর চিন্তা-ভাবনা পরিত্যাগ করা :
যার মধ্যে টাকা-পয়সা জমানোর এবং ব্যাংক-ব্যালেন্স করার প্রবণতা থাকে, সে খুব কমই অল্পে তুষ্ট থাকতে পারে। কেননা সম্পদ পুঞ্জিভূত করার মানসিকতা সবসময় তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। প্রয়োজনের চেয়ে অধিক সম্পদ তার হস্তগত হ’লেও সে খুশি থাকতে পারে না। সেকারণ ইসলাম মানুষকে সবসময় সম্পদ সঞ্চয়ের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে এবং দান-ছাদাক্বাহ করতে উৎসাহিত করেছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অসুস্থ বেলাল (রাঃ)-কে দেখেতে গেলেন। বেলাল (রাঃ)-এর কাছে এক স্ত্তপ খেজুর দেখে রাসূল (ﷺ) বললেন,
مَا هَذَا يَا بِلَالُ؟
‘বেলাল! এসব কি?’ বেলাল বললেন,
شَيْءٌ ادَّخَرْتُهُ لِغَدٍ،
‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এটা আমি আগামীকালের জন্য জমা করে রেখেছি’। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন,
أَمَا تَخْشَى أَنْ تَرَى لَهُ غَدًا بخارا فِي نَار جَهَنَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْفِقْ بِلَالُ وَلَا تَخْشَ مِنْ ذِي الْعَرْشِ إِقْلَالًا،
‘তুমি কি কাল ক্বিয়ামতের দিনে এর থেকে জাহান্নামের তাপ অনুভবের ভয় করছ না? বেলাল! এসব তুমি দান করে দাও। আরশের মালিকের কাছে ভুখা-নাঙ্গা থাকার ভয় করো না’।[29]
এর কারণ হ’ল- সম্পদ সঞ্চয়ের কারণে অধিকাংশ সময় মানুষ ভবিষ্যতের জন্য সেই সম্পদের উপরেই ভরসা করে থাকে। আল্লাহর প্রতি তার ভরসা শিথিল হয়ে যায়।
ছাহেবে মির‘আত (রহঃ) বলেন, শয়তান সবসময় মানুষকে দারিদ্রের ভয় দেখায়। সেজন্য দারিদ্রের ভয়ে সম্পদ জমা করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে স্বাভাবিক প্রয়োজনে সম্পদ সঞ্চয় করা জায়েয।[30]
সুতরাং মানুষ যদি ভবিষ্যতের ব্যাপারটি আল্লাহর উপর ন্যস্ত করে মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করার মানসিকতা পরিহার করতে পারে, তাহ’লে অল্পে তুষ্ট থাকা তার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
৮. লোভ ত্যাগ করা ও অন্যের সম্পদ থেকে নির্মোহ থাকা :
মানুষের জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব অনস্বীকার্য। এদেরকে ভালো কাজে নিয়োজিত না রাখলে ব্যক্তির ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে। ষড়রিপুর অন্যতম হ’ল লোভ। অল্পে তুষ্ট জীবন গঠনের জন্য লোভ পরিহার করা আবশ্যক। কেননা লোভ-লালসা দ্বীন-দুনিয়া উভয়ের জন্য হুমকি স্বরূপ। যা ইহকাল ও পরকালে মানুষকে অধঃপতনের অতল তলে নিক্ষেপ করে।
আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنْ الْخُلَطَاء لَيَبْغِي بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ،
‘শরীকদের অনেকে (এভাবে) একে অপরের প্রতি যুলুম করে থাকে’ (ছোয়াদ ৩৮/২৪)।
এই আয়াতে একে অন্যের প্রতি বাড়াবাড়ি করার অর্থ হ’ল দুনিয়াতে অধিক সম্পদ লাভের প্রতি প্রলুব্ধ হওয়া, যা তাকে দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে এবং অল্পে তুষ্ট থাকতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।[31]
কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلَا فِي غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الـمَرْءِ عَلَى الـمَالِ وَالشَّرَفِ لِدِينِهِ،
‘দু’টি ক্ষুধার্ত বাঘকে ছাগলের পালের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হ’লে যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কোন ব্যক্তির ধন-সম্পদ ও মর্যাদার লোভ এর চেয়ে বেশি তার দ্বীনের ক্ষতি করে থাকে’।[32]
সম্পদের লোভ ক্ষতিকর এজন্য যে, এটা মানুষের মধ্যে এক প্রকার অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা তাকে প্রবৃত্তির অনুসরণের দিকে ঠেলে দেয় এবং দুনিয়ার সুখ-সম্ভারে মত্ত হওয়ার প্রতি আকৃষ্ট করে। ফলে সে ব্যক্তি নে‘মতের মধ্যে ডুবে থাকা পসন্দ করে। কখনো তার কামনা এতই প্রবল হয়ে ওঠে যে, সে যদি হালাল উপায়ে তা অর্জন করতে না পারে, তাহ’লে সন্দেহজনক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যা তাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে দেয়। আর আভিজাত্য বা সুনাম অর্জনের লোভ ক্ষতিকর এজন্য যে, মানুষ এই সুনাম অর্জনের জন্যই সম্পদ ব্যয় করে, যা গোপন শিরকের অর্ন্তভুক্ত।[33]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
قلوب الجهال تستفزها الأطماع، وترتهن بالمنى، وتستغلق،
‘লোভ-লালসা মূর্খদের হৃদয়গুলোকে অস্থির করে তোলে, আশার মায়াজালে বন্দী করে এবং জীবনকে বিষিয়ে তোলে’।[34]
সুতরাং নিজের জীবনকে নিয়ে পরিতুষ্ট থাকার জন্য লোভ-লালসা থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। আর লোভ পরিহার করার অর্থ হ’ল অন্যের সম্পদ থেকে নিজেকে নির্মোহ রাখা। একদিন মিম্বারে দাঁড়িয়ে ওমর (রাঃ) বললেন,
إن الطمع فقر واليأس غنى وإنه من يئس عما في أيدي الناس وقنع استغنى عنهم،
‘নিশ্চয়ই লোভ এক প্রকার দরিদ্রতা এবং নির্লোভ থাকা এক প্রকার ধনাঢ্যতা। যখন কেউ মানুষের ধনৈশ্বর্য থেকে নির্মোহ থাকে এবং অল্পে তুষ্ট থাকে, তখন সে তাদের থেকে অভামুক্ত হয়ে যায়’।[35]
৯. বিলাসী জীবন পরিহার করা :
বিলাসী জীবন মানুষকে বস্ত্তবাদী করে তোলে এবং তাকে কখনো অল্পে তুষ্ট থাকতে দেয় না। সেকারণ নবী-রাসূল এবং যুগ-যুগান্তরে তাঁদের সনিষ্ঠ অনুসারীগণ বিলাসী জীবনকে অপসন্দ করেছেন এবং অনাড়ম্বর সাধা-সিধে জীবন যাপনকে বেছে নিয়েছেন। কেননা মানুষ যখন বস্ত্তবাদী হয়ে পড়ে এবং পার্থিব জীবন উপভোগে মনোনিবেশ করে তখন তার হৃদয় থেকে অল্পেতুষ্টি বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর বাস্তবতা হ’ল- মানুষ যতই ক্ষমতাশালী ও বিত্তবান হোক না কেন, তার বিলাসী জীবন বেশি দিন টেকসই হয় না। তাই দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত সফরে গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে সামান্য কষ্ট স্বীকার করে আখেরাতের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির জন্য পাথেয় সঞ্চয় করাই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। দুনিয়াতে মানুষ যতই সুখে-শান্তিতে বসবাস করুক না কেন, আখেরাতের তুলনায় তা একেবারেই মূল্যহীন। এটা উপলব্ধি করার জন্য একটি হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য থেকে দুনিয়ার সর্বাধিক সুখী ও বিলাসী জীবন যাপন করেছে, এমন লোককে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে জাহান্নামের আগুনে চুবিয়ে উঠানো হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো আরাম-আয়েশ দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে? সে বলবে, না, আল্লাহর কসম, হে আমার রব! অতঃপর জান্নাতবাসীদের মধ্য থেকে এমন এক লোককে উপস্থিত করা হবে, যে দুনিয়াতে সবচাইতে দুঃখী ও অভাবী ছিল। তাকে এক মুহূর্তের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে আবার বের করা হবে। তারপর জিজ্ঞেস করা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো দুঃখ-কষ্ট দেখেছ এবং তুমি কি কখনো বিপদাপদের মুখোমুখী হয়েছ? সে বলবে, না আল্লাহর কসম, হে আমার রব! আমি কখনো দুঃখ-কষ্টে পতিত হইনি। আর কখনো কোন কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি’।[36]
আল্লাহর ইবাদত থেকে গাফেল হয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত হওয়া জাহান্নামী ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَلِكَ مُتْرَفِينَ، ‘ইতিপূর্বে তারা ছিল ভোগ-বিলাসে মত্ত’ (ওয়াক্বি‘য়াহ ৫৬/৪৫)।
ইমাম ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা যেসমস্ত দুনিয়াবী নে’মত সমূহ থেকে আমাদের দূরে রেখেছেন, সেগুলো আমাদেরকে প্রদত্ত নে‘মত থেকে অধিক উত্তম। কেননা আল্লাহ তার নবী (ﷺ)-এর জন্য পার্থিব ভোগ-বিলাসকে অপসন্দ করেছেন। সুতরাং আল্লাহ কর্তৃক তাঁর নবীর জন্য অপসন্দনীয় (ভোগ-বিলাসপূর্ণ) জীবনের চেয়ে তাঁর জন্য পসন্দনীয় (ভোগ-বিলাসহীন) জীবনই আমার নিকটে অধিকতর প্রিয়।[37] সুতরাং বলা যায়, সাধা-সিধে জীবন যাপনই অল্পে তুষ্ট জীবন গঠনের জন্য অধিকতর উপযোগী। তাই বিলাসী জীবন পরিহার করে অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্থ হওয়া বুদ্ধিমান মুমিনের কর্তব্য।
১০. কুরআন অনুধাবন করা :
সাধারণভাবে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং তা অনুধাবন করা এক নয়। অর্থ না বুঝে কুরআন তেলাওয়াতে অশেষ নেকী অর্জিত হ’লেও, কেবল তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে কুরআন নাযিল হয়নি; বরং তা অনুধাবন করে উপদেশ হাছিল করা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন। কুরআন অনুধাবনের মাধ্যমে জীবনজুড়ে বরকত নাযিল হয়। অধিকাংশ মানুষ কুরআন তেলাওয়াত করেও তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে না, কেবল অনুধাবন না করার কারণে। সেকারণ বান্দার কর্তব্য হ’ল বোঝার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করা। আল্লাহ বলেন,
كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ،
‘এটি এক বরকতমন্ডিত কিতাব, যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি। যাতে লোকেরা এর আয়াত সমূহ অনুধাবন করে এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে’ (ছোয়াদ ৩৮/২৯)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
وَهَذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ،
‘আর এই কিতাব (কুরআন) আমরা নাযিল করেছি যা বরকতমন্ডিত। সুতরাং এটির (আদেশ সমূহ) অনুসরণ কর এবং (নিষেধ সমূহে) ভয় কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হ’তে পার’ (আন‘আম ৬/১৫৫)।
ইমাম শাওক্বানী বরকতময় কুরআনের ব্যাখ্যায় বলেন,
المبارك هو كثير البركة لما هو مشةمل عليه من المنافع الدنيوية والدينية،
‘মুবারক অর্থ হ’ল কুরআনের প্রভূত বরকত, যার মধ্যে দ্বীন ও দুনিয়ার সকল কল্যাণ অর্ন্তভুক্ত’।[38]
সুতরাং যারা কুরআন অনুধাবন করে আল্লাহর ভয়ে ভীত হবে এবং এর হালাল-হারাম, আদেশ-নিষেধ যথাযথভাবে মেনে চলবে, তারা জীবন ও জীবিকার সর্বক্ষেত্রে রহমত ও বরকত প্রাপ্ত হবে।[39]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যারা কুরআন অনুধাবনের মাধ্যমে এর বিধি-বিধানের হেফাযত করবে, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ দান করবেন। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে তাদের জীবন ও জীবিকা সংকুচিত করে দিবেন।[40]
কুরআনের মাধ্যমে বরকত লাভের প্রমাণ হাদীসেও মওজূদ আছে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
اقْرَءُوا سُورَةَ الْبَقَرَة، فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ، وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ،
‘তোমরা সূরা বাক্বারাহ তেলাওয়াত কর। কেননা তা গ্রহণ করাতে রয়েছে বরকত এবং বর্জন করায় রয়েছে পরিতাপ’।[41]
এখানে কুরআন গ্রহণ করার অর্থ হ’ল,
الْمُوَاظَبَةُ عَلَى تِلَاوَتِهَا وَالتَّدَبُّرِ فِي مَعَانِيهَا وَالْعَمَلِ بِمَا فِيهَا،
‘নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা, এর মর্ম অনুধাবন করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা’।[42]
১১. রিযিক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করা :
আল্লাহর প্রতি যার ভরসা কম, সে রিযিক নিয়ে সবচেয়ে বেশি পেরেশান থাকে। যে যত বেশী রিযিকের দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে, তার পক্ষে অল্পে তুষ্ট থাকা তত বেশী সহজ হবে। কিন্তু শয়তান সবসময় মানুষকে রিযিক সংকোচনের ভয় দেখায় ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য উৎকণ্ঠিত করে তোলে। আবূ যার গিফারী (রাঃ) বলেন, ‘মানুষ যদি কুরআনের একটি আয়াতকে যথাযথভাবে আঁকড়ে ধরতে পারত, তাহ’লে এই আয়াতটাই তার জন্য যথেষ্ট হ’ত। অতঃপর তিনি তেলাওয়াত করেন,
وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ-
‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন, আর তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক প্রদান করেন’ (ত্বালাক্ব ৬৫/২-৩)।[43]
সেজন্য সালাফে ছালেহীন কখনো রিযিকের দুশ্চিন্তাকে প্রশ্রয় দিতেন না। আবূ আব্দুর রহমান আল-উমারী (রহঃ) নিজেকে ভৎর্সনা করে বলতেন, ‘আমি যখন মায়ের পেটে ছিলাম, তখন আমাকে রিযিক দেওয়া হয়েছে। সেই অবস্থায় আমার কোন চেষ্টা ছাড়াই রিযিক আমার মুখে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি যখন বড় হ’লাম এবং আমরা রবকে চিনলাম। তখন তাঁর সম্পর্কে আমার ধারণা খারাপ হয়ে গেল। জগতে আমার চেয়ে কি আর কোন নিকৃষ্ট বান্দা থাকতে পারে?’[44] একবার উসাইদ আল-ফাযারী (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল- مِنْ أَيْنَ تَعِيشُ؟ ‘আপনার জীবিকার উৎস কী?’ তখন তিনি আশ্চর্য হয়ে বললেন, আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ! যেই আল্লাহ বানর-শূকরকে রূযী দিয়ে থাকেন, তিনি কি আবূ উসাইদের রূযীর ব্যবস্থা করবেন না? তারপর তিনি কবিতা আবৃত্তি করে বলেন,
إِنَّ الْمَقَادِيرَ لا تُنَاوِلُهَا الأَوْهَامُ + لُطْفًا وَلا تَرَاهَا الْعُيُوْنُ
سَيَجْرِي عَلَيْكَ مَا قَدَّرَ اللهُ + وَيَأْتِيكَ رِزْقُكَ الْمَضْمُونُ
‘নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তা তাক্বদীরকে অনুগ্রহের যোগান দিতে পারে না এবং চক্ষুসমূহ ভাগ্যকে দেখতে পায় না। আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তা বাস্তবায়ন হবেই। তোমার বরাদ্দ রিযিক তোমার কাছে আসবেই’।[45]
আইয়্যুব ইবনু ওয়ায়েল (রহঃ) বলেন,
لا تَهْتَمَّ لِلرِّزْقِ، وَاجْعَلْ هَمَّكَ لِلْمَوْتِ
‘তুমি রিযিকের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ো না; বরং তোমার চিন্তা-ভাবনাকে মৃত্যুর জন্য নির্ধারণ করে রাখ’।
ফুযাইল ইবনু ইয়ায (রহঃ) বলেন,
مَا اهْتَمَمْتُ لِرِزْقٍ أَبَدًا، إِنِّي لأَسْتَحِي مِنْ رَبِّي أَنْ أَحْزَنَ لِرِزْقِي بَعْدَ رِضَائِه،
‘আমি কখনো রিযিকের জন্য দুশ্চিন্তা করিনি। আমার রবের সন্তুষ্টি লাভের পরে আমার রিযিকের জন্য তাঁর সামনে পেরেশান হ’তে আমি লজ্জাবোধ করি’।[46]
১২. নবী-রাসূল ও সালাফদের জীবনী অধ্যয়ন করা :
আদর্শ জীবন গঠনের জন্য নবী-রাসূলগণের জীবন অধ্যয়ন করা আবশ্যক। কেননা তাঁরাই পৃথিবীবাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।
আল্লাহ বলেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ،
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ নিহিত রয়েছে’ (আহযাব ৩৩/২১)।
আর সালাফে ছালেহীন ছিলেন নবীদের সনিষ্ঠ অনুসারী। পরবর্তী প্রজন্ম তাদের রচিত পথ ধরেই সফলতা ও মুক্তির মনযিলে পৌঁছাতে পারে। আল্লাহ বলেন,
مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا-
‘মুমিনদের মধ্যে অনেকে আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। আর তারা তাদের অঙ্গীকার আদৌ পরিবর্তন করেনি’ (আহযাব ৩৩/২৩)।
শাক্বীফ ইবনে ইবরাহীম বলখী (রহঃ) বলেন, আমরা একদিন আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ)-কে বললাম, ‘আপনি তো আমাদের সাথেই সালাত আদায় করেন। কিন্তু আমাদের সাথে বসেন না কেন?’ তখন তিনি বললেন, ‘আমি ফিরে গিয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের সাথে বসে কথা বলি’। আমরা বললাম, ‘সাহাবী-তাবেঈদের আপনি কোথায় পেলেন’। তিনি বললেন, ‘আমি ফিরে গিয়ে ইলম চর্চায় মনোনিবেশ করি। তখন তাদের কথা ও কর্মের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তোমাদের সাথে বসে আমি কি করব? তোমরা তো বসেই মানুষের দোষ চর্চা করা শুরু কর’।[47] নাঈম ইবনে হাম্মাদ বলেন, ইবনুল মুবারক (রহঃ) অধিকাংশ সময় নিজ বাড়িতে অবস্থান করতেন। তাকে বলা হ’ল, আপনি সবসময় বাড়িতে বসে থাকেন, এতে কি একাকীত্ব অনুভব করেন না? জবাবে তিনি বললেন, আমি তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে থাকি, এককীত্ব অনুভব করব কিভাবে? [48]
নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ অল্পে তুষ্ট ব্যক্তি। আর তার পরে সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈনে ইযাম, তাবা তাবে‘ঈন ও তৎপরবর্তী নেককার বান্দাগণ ছিলেন রাসূল (ﷺ)-এর জীবনাদর্শের মাধ্যমে সর্বাধিক প্রভাবিত ও আলোকিত। তাই তাদের জীবন দর্শন জানতে হ’লে তাদের জীবনী অধ্যয়ন আবশ্যক। যারা নবী-রাসূল ও সৎকর্মশীল সালাফদের জীবনালেখ্য যত বেশী চর্চা করবে, তাদের জীবন তত বেশী আল্লাহমুখী হবে এবং অল্পে তুষ্টির আলোয় উদ্ভাসিত হবে।
১৩. আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করা :
আল্লাহর তাওফীক্ব ছাড়া বান্দা কোন কিছু লাভ করতে পারে না। তাই বান্দার কর্তব্য হ’ল অল্পে তুষ্ট থাকার তাওফীক্ব চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অল্পে তুষ্ট থাকার জন্য এই দো‘আটি পড়তেন,
اللهُمَّ اجْعَلْ رِزْقَ آلِ مُحَمَّدٍ قُوتًا،
‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের পরিবারকে জীবনধারণোপযোগী রিযিক প্রদান করুন’।[49] অপর বর্ণনায় রয়েছে,
اللَّهُمَّ اجْعَلْ رِزْقَ آلِ مُحَمَّدٍ كَفَافًا،
‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের পরিবারকে প্রয়োজন মাফিক রিযিক প্রদান করুন’।[50]
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আল্লাহর কাছে দো‘আ করে বলতেন,
اللَّهُمَّ قَنِّعْنِي بِمَا رَزَقْتَنِي وَبَارِكْ لِي فِيهِ وَاخْلُفْ عَلَيَّ كُلَّ غَائِبَةٍ لِي بِخَيْرٍ،
‘হে আল্লাহ! আমাকে যে রিযিক দিয়েছেন, তাতে আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন এবং বরকত দান করুন। আর আমার না পাওয়া প্রত্যেক রিযিকের বিনিময়ে আমাকে উত্তম পারিতোষিক দান করুন’।[51]
অপর একটি বর্ণনায় শুধু প্রথম অংশটুকু এসেছে যে,
اللَّهمَّ قَنِّعْني بما رَزَقتَني،
‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে রিযিক দিয়েছেন, তাতে আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন’।[52]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আচরিত আদর্শের সনিষ্ঠ অনুসারী সাহাবায়ে কেরাম, তাবে‘ঈনে ইযাম এবং সালাফে ছালেহীন অল্পে তুষ্ট জীবন লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন মর্মে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। এই দো‘আ সাধারণভাবে হ’তে পারে, আবার সালাতের মাধ্যমেও হ’তে পারে। যেমন মাইমূন ইবনু মেহরান (রাঃ) বলেন,
إِذَا أَتَى رَجُلٌ بَابَ سُلْطَانٍ فَاحْتَجَبَ عَنْهُ، فَلْيَأْتِ بُيُوتَ الرَّحْمَنِ فَإِنَّهَا مُفَتَّحَةٌ فَلْيُصَلِّ رَكْعَتَيْنِ وَلْيَسْأَلْ حَاجَتَهُ،
‘যদি কোন ব্যক্তি কোন রাজার দারস্থ হয় এবং রাজা তাকে নাগালের বাইরে রাখে, তাহ’লে সে যেন দয়াময় আল্লাহর দরবারে হাযির হয়। কেননা তাঁর রহমতের দরজা সবসময় খোলা থাকে। অতঃপর দুই রাক‘আত সালাত আদায় করে তাঁর কাছে নিজের প্রয়োজন কামনা করে’।[53]
উপসংহার :
অল্পে তুষ্ট থাকা হৃদয়ের ইবাদত। লোভ-লালসার লাগাম টেনে যারা এই ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতে পারে, তাদের হৃদয় পরিতৃপ্ত হয়। জীবন-জীবিকায় নেমে আসে অফুরন্ত বরকতের ধারা। সময়ের ব্যবধানে শত দুঃখ-কষ্ট ও অপূর্ণতায় তাদের কোন আক্ষেপ থাকে না। সুতরাং অল্পে তুষ্ট জীবন আল্লাহর রহমত স্বরূপ, যার সোপান পেরিয়ে দুনিয়াবী শান্তি ও পরকালীন মুক্তির সম্ভাবনা নিশ্চিত হয়। পক্ষান্তরে পরিতুষ্টহীন জীবন আযাব স্বরূপ, যা ইবাদতের আগ্রহ নষ্ট করে দেয় এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি ডেকে আনে। সুতরাং যিন্দেগীর এই সংক্ষিপ্ত সফরে অল্পে তুষ্ট থেকে আখেরাতের শান্তিময় জীবনের প্রস্ত্ততি নেওয়াই বুদ্ধিমান মুমিনের কর্তব্য। মহান আল্লাহ আমাদেরকে অল্পে তুষ্ট থেকে তাঁর রেযামন্দি হাছিলের তাওফীক্ব দান করুন এবং পরকালে জান্নাতুল ফেরদাঊস দানে ধন্য করুন- আমীন!
[1]. মুসলিম হা/১০৪৩; আবূদাঊদ হা/১৬৪২; নাসাঈ হা/৪০৬।
[2]. ইবনু মাজাহ হা/২১৪৪; সহীহুত তারগীব হা/১৬৯৮, সনদ সহীহ।
[3]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ২/২০২।
[4]. ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ফাতাওয়াল কুবরা (বৈরূত: দারুল কুতুবিল-ইলমিয়াহ, ১ম মুদ্রণ, ১৪০৮হি./১৯৮৭খ্রি.) ২/৩৯৬।
[5]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ: ৯৭।
[6]. ইবনু আবিদ্দুনয়া, আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৩৯।
[7]. শামসুদ্দীন যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১১/৪৮৫; ইবনুল জাওযী, ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ২/৩৪০।
[8]. ইবনুল জাওযী, আত-তাবছিরাহ ১/১২২।
[9]. বুখারী হা/৬৪৯০; ইবনু হিববান হা/ ৭১২; মিশকাত হা/৫২৪২।
[10]. মুসলিম হা/২৯৬৩; মিশকাত হা/৫২৪২।
[11]. কাযী ইয়ায, ইকমালুল মু‘লিম বিফাওয়ায়িদিল মুসলিম, মুহাক্কিক্ব: ড. ইয়াহইয়া ইসমাঈল (মিসর: দারুল অফা, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৯হি./১৯৯৮খ্রি.) ৮/৫১৫।
[12]. ত্বাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/৫০০; মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৭৯২৬; সহীহুত তারগীব হা/৩১৬৫, সনদ সহীহ।
[13]. আহমাদ হুত্বাইবাহ, শারহুত তারগীব ওয়াত তারহীব (মাকতাবা শামেলা যাহাবিয়্যা) ৪/৪৫।
[14]. তাফসীরে কুরতুবী ১৬/১৬।
[15]. শাওক্বানী, তাফসীরে ফাৎহুল ক্বাদীর ৪/৬১১।
[16]. ইবনুল মুবারক, আয্-যুহদু ওয়ার রাক্বায়েক্ব, পৃ: ২১০; ইবনু আবীদ্দুনইয়া, আয্-যুহ্দ, পৃ: ১০৭।
[17]. বায়হাক্বী, আয-যুহ্দুল কাবীর, পৃ: ৬৫।
[18]. সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১০/৪৭৬।
[19]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৬৬।
[20]. তাফসীরে সা‘দী, পৃ: ৪২৯।
[21]. শানক্বীতী, তাফসীরে আযওয়াউল বায়ান ২/২৫৩।
[22]. আহমাদ হা/২৬১৪; সহীহাহ্ হা/২৬২৯, সনদ হাসান।
[23]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৮/৪৯০।
[24]. বুখারী হা/৬৪১৬; তিরমিযী হা/২৩৩৩; মিশকাত হা/১৬০৪।
[25]. ইবনু আবীদ্দুনইয়া, ক্বিছারুল আমাল )বৈরূত: দারু ইবনু হাযম, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ১৪১৭হি./১৯৯৭খ্রি.) পৃ: ৪৪।
[26]. আব্দুল কারীম কুশাইরী, আর-রিসালাতুল কুশাইরিয়্যাহ, মুহাক্কিক্ব: ড. আব্দুল হালীম মাহমূদ ও ড. মাহমূদ বিন শরীফ (কায়রো: দারুল মা‘আরেফ, তাবি) ১/২৫৪
[27]. গাযালী, ইহয়াউ ‘উলূমিদ্দীন ৪/৪৫৪; মিফতাহুল আফকার ১/১৩০।
[28]. আবুল লায়েছ সামারকান্দী, তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ: ২২৫।
[29]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/১০২৪; সহীহুত তারগীব হা/৯২২; মিশকাত হা/১৮৮৫।
[30]. মির‘আতুল মাফাতীহ ৬/১৩৭।
[31]. আব্দুল ক্বাদের আল-‘আনী, বায়ানুল মা‘আনী ১/৩০১।
[32]. তিরমিযী হা/২৩৭৬; সহীহুত তারগীব হা/১৭১০; মিশকাত হা/৫১৮১।
[33]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/৩৯।
[34]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক ৫৩/১৪১; মাওসূ‘আতুল আখলাক্ব আল-ইসলামিয়্যাহ ২/৩১০।
[35]. ইহ্য়াউ ‘উলূমিদ্দীন ৪/২০০; ওয়াক্বি‘, আয্-যুহ্দ, পৃ:৪২৬।
[36]. মুসলিম হা/২৮০৭; মিশকাত হা/৫৬৬৯।
[37]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ৬/২৭৭; ইবনুল ক্বাইয়িম, উদ্দাতুছ ছাবেরীন, পৃ: ১৩২।
[38]. তাফসীরে ফাৎহুল ক্বাদীর ২/২০৫।
[39]. তাফসীরে ক্বাসেমী ৪/৫৪২; রূহুল মা‘নী ৪/২০৯; ছাফওয়াতুত তাফাসীর ১/৩৯৮।
[40]. ছা‘আলাবী, আল-জাওয়াহিরুল হাস্সান (তাফসীরে ছা‘আলাবী) ৪/৭২।
[41]. মুসলিম হা/৮০৪; দারেমী হা/ ৩৪৩৪; মিশকাত হা/২১২০।
[42]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৪/১৪৬১।
[43]. তাফসীরে কুরতুবী ১৮/১৬০।
[44]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৫৫।
[45]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৫৪।
[46]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ, পৃ: ৫৩।
[47]. খত্বীব বাগদাদী, তাকয়ীদুল ইলম (বৈরূত: ইহয়াউস সুন্নাহ আন-নববিয়্যাহ, তাবি) পৃ. ১২৬; ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ৩/৩২৪।
[48]. ছিফাতুছ ছাফওয়াহ ৩/৩২৪।
[49]. মুসলিম হা/১০৫৫; ইবনু মাজাহ হা/৪১৩৯; মিশকাত হা/৫১৬৪।
[50]. সহীহ ইবনু হিববান হা/৬৩৪৩; শু‘আইব আরনাঊত্ব, সনদ সহীহ।
[51]. মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৩৩৬০; ইমাম হাকেম ও ইমাম যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আলবানী হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬০৪২।
[52]. ইবনু আল্লান, আল-ফুতূহাতুর রাববানিয়্যাহ ‘আলাল আযকার আন-নাবাবিয়্যাহ ৪/৩৮৩; ইবনু হাজার, হাদীস হাসান।
[53]. আল-ক্বানা‘আতু ওয়াত তা‘আফ্ফুফ পৃ:৭২।
আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
এম. এ (অধ্যয়নরত), আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এম. এ (অধ্যয়নরত), আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Last edited: