সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Habib Bin Tofajjal

জীবনী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জীবনের কিছু বৈশিষ্ট্য, যা তাঁকে অন্যদের চেয়ে আলাদা ভাবে চিনিয়ে দেয়

  • Thread starter
মিরাজ

তায়েফ থেকে ফেরার পর এক রাত্রে আল্লাহর হুকুমে জিবরাইল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কা‘বা থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে গেলেন বুরাক নামের এক বাহনে করে। সেখানে তিনি সকল নবীদের ইমাম হিসাবে দু’রাকাত সালাত আদায় করেন। তারপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আসমানে উপরে। প্রতি আসমানে বিভিন্ন নবী রাসূলের সাথে তাঁর দেখা হয়। তারপর তাঁকে আল্লাহর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে মুহাম্মাদের উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দেওয়া হয়। তাঁকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়।

এমন এক সময় এ ঘটনাটি ঘটে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক চাচা আবু তালিব মারা গিয়েছেন এবং তার স্ত্রী খাদিজা মারা গিয়েছেন, মক্কাবাসীর অত্যাচার চরমে পৌঁছেছে। তায়েফবাসীর কাছেও তিনি কোনো রকম সাহায্য তো পানই না, বরং রক্তাক্ত, অপমানিত হয়েছেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসূলের জন্য মস্ত বড় এক অনুগ্রহ ছিল। যা তাঁর রাসূলের অন্তরকে প্রশান্ত ও শক্তিশালী করে তোলে।

পরদিন সকালে ঘটনাটি শুনে অনেকেরই দ্বিধা-দ্বন্দ দেখা দিল, অনেক মুসলিমই অবিশ্বাস করে কাফির হয়ে গেল। লোকেরা আবু বকরকে জিজ্ঞাসা করল: তুমি কি শুনেছ তোমার বন্ধু কি বলছে? সে বলছে যে সে গতরাতে কা‘বা থেকে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে গিয়েছে, সালাত আদায় করেছে, তারপর মক্কায় ফিরে এসেছে।

আবু বকর বললেন: উনি যদি একথা বলে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই তা সত্য। আমি তো এর চেয়েও আশ্চর্য বিষয় বিশ্বাস করি যে তাঁর উপর আল্লাহর কাছ থেকে ওহী আসে।

তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে ব্যাপারটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। যখন তিনি জানতে পারলেন যে সত্যিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ বাইতুল মুকাদ্দাস ও সেখান থেকে নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন, আবু বকর বললেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

“আবু বকর, তুমি সিদ্দীক।”

এভাবেই আবু বকর ‘সিদ্দীক’ হিসাবে খ্যাতি লাভ করলেন। নবী রাসূলদের পরেই সিদ্দীকের মর্যাদা। রাসূলুল্লাহ যদি কিছু বলে থাকেন, তবে তা সত্যি-আবু বকরের কথা থেকে আমরা হাদীসে যাচাইয়ের এই মূলনীতিটি পাই।

হিজরত

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত সকালে বা সন্ধ্যায় তাঁদের বাড়ীতে আসতেন। একদিন তিনি দুপুরে এলেন এমন একটা সময়ে যে বোঝা যাচ্ছিল গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। আবু বকর দরজা খুললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জানালেন যে আল্লাহ তাঁকে মদীনায় হিজরত করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবু বকর জিজ্ঞাসা করলেন: আমিও কি আপনার সাথে যেতে পারবো?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হ্যাঁ, তুমিও যেতে পারবে। আনন্দে আবু বকর কেঁদে ফেললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী হবেন এটাই ছিল তাঁর আনন্দ, অথচ হিজরতের কাজটি ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক, ধরা পড়লে অবধারিত মৃত্যু। আগেই আবু বকর হিজরতের জন্য দুটো উট তৈরী করে রেখেছিলেন। এ আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হিজরতের অনুমতি দেন নি, অপেক্ষা করতে বলেছিলেন।

সে রাতেই তাঁরা বেরিয়ে পড়লেন মদীনার পথে। মক্কার অদূরে সাওর পর্বতের গুহায় আশ্রয় নিলেন, সাথে ছিল আবু বকরের কন্যা আসমার বেঁধে দেওয়া কিছু খাবার।

তিনিদিন তাঁরা ঐ গুহায় থাকলেন। রাত্রে আবু বকরের ছেলে খাবার নিয়ে সেখানে যেতেন ও মক্কার সব খবর দিতেন। আবু বকরের রাখাল ভেড়ার পাল চরিয়ে রাত্রে ঐ পথে ফিরতো, পায়ের সব দাগ মুছে দিয়ে।

কুরাইশরা এ কয়দিন চারিদিকে তাঁদের খুঁজেছে, এক সময় তারা গুহার খুব কাছে এসে পড়ল। এমনটি নিচের দিক তাকালেই তাঁদের দেখে ফেলতো। আবু বকর চিন্তায় অস্থির হয়ে বললেন: আমাদের কিইবা করার আছে, আমরা মাত্র দুজন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, তুমি ভুল বলেছ, আমরা তিনজন, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।

সত্যিই তারা তাঁদের খুঁজে পেল না, ফিরে গেল। কুরআনে সূরা তওবার ৪০ নম্বর আয়াতে এই ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে আল্লাহ আবু বকরকে ‘সাহিব’ সাথী হিসাবে বর্ণনা করেছেন, বলেছেন যে তিনি হচ্ছেন ‘দুজনের দ্বিতীয়’।

এরপর তাঁরা একজন বিশ্বস্ত পথপ্রদর্শক নিয়ে যাত্রা করলেন মদীনার পথে। পথে কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে আবু বকর বলেছেন: ইনি আমর পথ প্রদর্শক। তাঁর এ কথায় কোনো ভুল ছিল না, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সকলের দুনিয়া ও আখিরাতের পথ প্রদর্শক।

হিজরতের দিনগুলোতে আবু বকর ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে- আবু বকরের দ্বীনের জ্ঞান ও বুঝ সকলের চেয়ে বেশি ও পূর্ণ হওয়ার কারণ এটাই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় সালাতের ইমামতি

মৃত্যুর পূর্বে চরম অসুস্থতার সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতের ইমামতি করতে পারেন নি, তখন তাঁর নির্দেশে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জামাতে সালাতের ইমামতি করেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরের সময়

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর সংবাদে সাহাবীগণ গভীর দুঃখ ও শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন।

ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘরে ছিলেন। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু জানাযার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খোলা তলোয়ার নিয়ে ঘুরছিলেন, বলছিলেন: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যান নি। তিনি ঈসা আলাইহিস সালামের মত তাঁর রবের কাছে গিয়েছেন এবং আবার ফিরে আসবেন। যারা তাঁকে মৃত বলবে, ফিরে এসে তিনি তাদের সবাইকে হত্যা করবেন।

কেউ কেউ মসজিদে বসে কাঁদছিলেন। মৃত্যুর খবর শুনে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে এলেন। তাঁর মুখের চাদর সরিয়ে কপালে চুমু দিলেন। বললেন: জীবনে এবং মৃত্যুতে আপনি অনুগ্রহপ্রাপ্ত। তারপর বাইরে এসে সব দেখে-শুনে সমবেত লোকদের বললেন: যদি কেউ মুহাম্মাদের ইবাদত করে থাক, তবে জেনে রাখ মুহাম্মাদ মারা গেছেন। আর যে লোক আল্লাহর ইবাদত করে সে যেন জেনে রাখে যে আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না।

তারপর তিনি সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করেন:

أَفَإِيْن مَّاتَ أَوۡ قُتِلَ ٱنقَلَبۡتُمۡ عَلَىٰٓ أَعۡقَٰبِكُمۡۚ وَمَن يَنقَلِبۡ عَلَىٰ عَقِبَيۡهِ [ال عمران: ١٤٤]

“যদি রাসূলুল্লাহ নিহত হয় বা মারা যায়, তাহলে তোমরা কি উল্টাপায়ে ফিরে যাবে?’’ [আলে ইমরান: ১৪৪]

লোকেরা তাঁর কথায় সম্বিত ফিরে পেল। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: আমি যখন আয়াতটি শুনলাম, হাঁটু ভেঙ্গে আমি মাটিতে বসে পড়লাম। আমি বুঝতে পারলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিই মারা গেছেন।

এভাবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর মত বিরাট একটি ঘটনার যে সংকট দেখা দিয়েছিল, আবু বকরের দৃঢ়তায় তার পরিসমাপ্তি ঘটে।
 
Last edited:

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
12,915Threads
Total Messages
16,416Comments
Total Members
3,345Members
Top