কুরআন মাজীদের উপর বিদ‘আতের আবরণ: পর্ব ২
(২) কুরআন দিয়ে তাবীযের ব্যবসা :
দেশের অধিকাংশ প্রকাশনী কুরআনের শুরুতে বা শেষে তাবীযের নকশা সংযুক্ত করে কুরআন ছাপিয়েছে। আর বিদ‘আতী খত্বীব ও মোল্লারা এই তাবীয দিয়ে ব্যবসা করছে এবং মানুষকে ধোঁকা দেয়। মসজিদের ইমাম ও খত্বীবরা হারাম উপার্জন করে থাকে। এমনিতেই তাবীয বাঁধা শিরক। অন্যদিকে পবিত্র কুরআনকে ব্যবসার মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে এবং এই অপবিত্র আবর্জনাকে কুরআনের সাথে সংযুক্ত করেছে আরো জঘন্য অপরাধ। এজন্য ঈমান-আমল সবই নষ্ট বাতিল হয়ে যাবে। শরীরে তাবীয থাকা অবস্থায় ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাতসহ কোন ইবাদতই কবুল হবে না। এই অবস্থায় মারা গেলে শিরককারী হিসাবে আল্লাহর ক্ষমাও পাবে না। অথচ এই তাবীযকে কুরআনের নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। নিম্নের হাদীছগুলো বুঝার অনুরোধ করছি-
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ৎ أَقْبَلَ إِلَيْهِ رَهْطٌ فَبَايَعَ تِسْعَةً وَأَمْسَكَ عَنْ وَاحِدٍ فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ بَايَعْتَ تِسْعَةً وَتَرَكْتَ هَذَا قَالَ إِنَّ عَلَيْهِ تَمِيْمَةً فَأَدْخَلَ يَدَهُ فَقَطَعَهَا فَبَايَعَهُ وَقَالَ مَنْ عَلَّقَ تَمِيْمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ
উক্ববা বিন আমের আল-জুহানী বলেন, একদা রাসূল (ﷺ)-এর কাছে একটি কাফেলা আগমন করল। অতঃপর তিনি নয়জনকে বায়‘আত করালেন আর একজনকে বাদ দিলেন। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! নয়জনকে বায়‘আত করালেন আর একে ছেড়ে দিলেন কেন? রাসূল (ﷺ) বললেন, তার শরীরে তাবীয বাঁধা আছে। অতঃপর লোকটি শরীরের ভিতরে হাত দিয়ে তাবীয ছিঁড়ে ফেলল। তারপর রাসূল (ﷺ) তাকে বায়‘আত করালেন এবং বললেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয বাঁধল সে শিরক করল’।[আহমাদ হা/১৭৪৫৮; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৯২।]
উক্ত হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে শরীরে তাবীয বেঁধে রাখা অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। ইসলাম গ্রহণ করারও সুযোগ থাকে না। অন্য হাদীছে রাসূল (ﷺ) বলেন, إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ ‘নিশ্চয় ঝাড়ফুঁক করা, তাবীয বাঁধা, যাদুটোনা শিরক’।[আবুদাঊদ হা/৩৮৮৩; মিশকাত হা/৪৫৫২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৫৩, ৮ম খণ্ড, পৃঃ ২৭২-২৭৩, ‘চিকিৎসা ও মন্ত্র’ অনুচ্ছেদ।] রাসূল (ﷺ) আরো বলেন, لاَ يُبْقَيَنَّ فِى رَقَبَةِ بَعِيرٍ قِلاَدَةٌ مِنْ وَتَرٍ وَلاَ قِلاَدَةٌ إِلاَّ قُطِعَتْ ‘কোন উটের গলায় যদি মালা বা বালা জাতীয় কিছু থাকে, তাহলে তা কেটে ফেলতে হবে’।[ছহীহ বুখারী হা/৩০০৫।] তিনি আরো বলেন,
أَنَّهُ مَنْ عَقَدَ لِحْيَتَهُ أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا أَوْ اسْتَنْجَى بِرَجِيعِ دَابَّةٍ أَوْ عَظْمٍ، فَإِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْهُ بَرِيءٌ
‘যে ব্যক্তি তার দাড়িতে গিঁঠ দিল বা পেচিয়ে রাখল অথবা সূতার মালা পরিধান করল অথবা পশুর মল বা হাড্ডি দিয়ে ইস্তিনজা করল, মুহাম্মাদ (ﷺ) তার জিম্মাদারী থেকে মুক্ত’।[আবুদাঊদ হা/৩; মিশকাত হা/৩৫১।] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عِيْسَى بْنِ حَمْزَةَ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ عُكَيْمٍ وَبِهِ حُمْرَةٌ فَقُلْتُ أَلَا تُعَلِّقُ تَمِيْمَةً؟ فَقَالَ نَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنْ ذَلِكَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ৎ مَنْ تَعَلَّقَ شَيْئًا وُكِلَ إِلَيْهِ
ঈসা বিন হামযা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি একদা আব্দুল্লাহ বিন উকাইম-এর কাছে গেলাম। তখন তার শরীরের লাল রঙের তাবীয বাঁধা ছিল। আমি বললাম, তুমি তাবীয বেঁধে রেখেছ? আমরা আল্লাহর কাছে এটা থেকে পরিত্রাণ চাচ্ছি। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শরীরে কোনকিছু বাঁধবে, তাকে সে দিকেই সোপর্দ করা হবে’। অর্থাৎ আল্লাহর নিরাপত্তা থেকে সে বেরিয়ে যাবে।[তিরমিযী হা/২০৭২; সনদ হাসান, ছহীহ তারগীব হা/৩৪৫৬; মিশকাত হা/৪৫৫৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৫৭, ৮ম খণ্ড, পৃঃ ২৭৪।]
উল্লেখ্য যে, কুরআনের আয়াত ও হাদীছে বর্ণিত দু‘আ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা শরী‘আত সম্মত। এছাড়া শিরক মিশ্রিত কোন মন্ত্র দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা হারাম।[ছহীহ মুসলিম হা/২২০০, ২/২২৪ পৃঃ, ‘সালাম’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২২; মিশকাত হা/৪৫৩০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৩১, ৮ম খণ্ড, পৃঃ ২৬৭।] রাসূল (ﷺ) সূরা ফাতেহা, সূরা ফালাক্ব, নাস প্রভৃতি সূরা ও আয়াত দ্বারা ফুঁক দিয়েছেন, শরীর মাসাহ করেছেন এবং ক্ষতস্থান হলে তাতে থুথু দিয়েছেন।[ছহীহ বুখারী হা/৫৭৩৫-৫৭৩৭, ২/৮৫৪ পৃঃ, ‘চিকিৎসা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২, ৩৩, ৩৪।]