সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Joynal Bin Tofajjal

যারা কুরআনকে মাখলুক বলে তাদের জবাব

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
LV
16
 
Awards
30
Credit
4,479
যারা কুরআনকে মাখলুক বলে তাদের জবাব:

اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ​
প্রত্যেক জিনিসের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ’’ এ কথার মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করে মুতাযেলা বলেছে যে, كل شيئ এর মধ্যে যে عموم (ব্যাপকতা) রয়েছে কুরআনও তার অন্তর্ভুক্ত। তাই কুরআনও সৃষ্টি। এটি অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়। মুতাযেলারা كل (প্রত্যেক) শব্দের ব্যাপকতার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার কালাম বা কুরআনকে ঢুকিয়ে দিয়ে খুবই নিকৃষ্ট কাজ করেছে।

আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তারা বান্দাদের কর্মসমূহ আল্লাহর সৃষ্টিসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলেও তারা তাকে كل (প্রত্যেক) শব্দের ব্যাপকতার অন্তর্ভুক্ত মনে করে না। তারা এ ব্যাপারে বলে যে, বান্দারাই তাদের সকল কর্মের স্রষ্টা। আল্লাহ তা‘আলা এগুলো সৃষ্টি করেন না। তারা كل (প্রত্যেক) শব্দের ব্যাপকতা থেকে বান্দার আমলসমূহ বের করে দিয়ে আল্লাহর কালামকে তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে। অথচ আল্লাহর কালাম আল্লাহর সিফাত সমূহেরই অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তা‘আলার কালাম ও কথা বলা বিশেষণের মাধ্যমে সবকিছু সৃষ্টি হয় এবং তার আদেশেই সবকিছু সংঘটিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

‘‘তিনি সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজী সৃষ্টি করেছেন। সবাই তার নির্দেশের আনুগত। জেনে রাখো, সৃষ্টি তারই এবং নির্দেশও তার। আল্লাহ বড়ই বরকতের অধিকারী। তিনি সমগ্র সৃষ্টির মালিক ও প্রতিপালক’’। (সূরা আরাফ: ৫৩)

এখানে আল্লাহর সৃষ্টি ও আদেশের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। আল্লাহর আদেশ যদি তার সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে অন্য একটি আদেশের মাধ্যমে তা সৃষ্টি হওয়া আবশ্যক হয়। তা আবার আরেকটি আদেশ দ্বারা সৃষ্টি হওয়া আবশ্যক হয়। এভাবে আবশ্যক হতেই থাকবে, যার কোনো শেষ নেই। এতে তাসালসুল বা সূচনাহীন সৃষ্টির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকা আবশ্যক হয়। আর এটি সম্পূর্ণ বাতিল। তাদের এ বাতিল কথা থেকে আবশ্যক হয় যে, আল্লাহ তা‘আলার সকল সিফাতই মাখলুক। তার ইলম, কুদরত ইত্যাদি সকল সিফাতই মাখলুক। এরূপ বিশ্বাস করা সুস্পষ্ট কুফুরী।

সুতরাং اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ‘‘প্রত্যেক জিনিসের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ’’ এ কথার মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করে যদি বলা হয় আল্লাহর ইলম একটি জিনিস, তার কুদরত একটি জিনিস এবং তার হায়াতও একটি জিনিস। এগুলো كل (প্রত্যেক) শব্দের ব্যাপকতার মধ্যে শামিল। অতএব এক সময় এগুলোর অস্তিত্ব ছিল না। পরে সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ কথার বহু উর্ধ্বে।

যে কালাম অন্যের দ্বারা প্রকাশিত হয় কিংবা তা থেকে যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের সাথে প্রতিষ্ঠিত, তা কিভাবে আল্লাহর কালাম হতে পারে? যদি তা আল্লাহরই কালাম হয়ে থাকে, তাহলে তিনি জড়বস্তুর মধ্যে যে কালাম সৃষ্টি করেছেন, তাও আল্লাহর কালাম হওয়া আবশ্যক হয়। অনুরূপ প্রাণীজগতের মধ্যে যে কালাম সৃষ্টি করেছেন, তাও আল্লাহ তা‘আলার কালাম হওয়া আবশ্যক হয়। তখন نطق এবং أنطق এর মধ্যে আর কোনো পার্থক্য থাকে না। অথচ কিয়ামতের দিন মানুষের চামড়া বলবে,

أَنْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ ‘‘তারা তাদের শরীরের চামড়াসমূহকে বলবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা জবাব দেবে, আল্লাহই আমাদের বাকশক্তি দান করেছেন যিনি প্রতিটি বস্তুকে বাকশক্তি দান করেছেন’’। এখানে বলা হয়নি যে, نطق الله (আল্লাহ কথা বলেছেন)।

সুতরাং যদি বলা হয় যে, আল্লাহ তা‘আলার কালাম বলতে ঐ কালাম উদ্দেশ্য, যা তিনি অন্যের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন তাহলে তার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, তিনি সৃষ্টির মধ্যে যেসব কালাম সৃষ্টি করেছেন, তা সবই আল্লাহর কালাম। চাই সেটি মিথ্যা অথবা কুফুরী কিংবা ঠাট্ট্রা-বিদ্রম্নপের কথা হোক। আল্লাহ তা‘আলা এর বহু উর্ধ্বে। সর্বেশ্বরবাদে বিশ্বাসী লোকেরা সবকিছুর কথাকেই আল্লাহর কথা মনে করে। ইবনে আরাবী বলেন,

وَكُلُّ كَلَامٍ فِي الْوُجُودِ كَلَامُهُ... سَوَاءٌ عَلَيْنَا نَثْرُهُ وَنِظَامُهُ

‘‘সৃষ্টির মধ্যে যত কালাম রয়েছে, তা সবই আল্লাহর কালাম। মানুষ গদ্য আকারে কিংবা পদ্য আকারে যা কিছু বলে, সবই আমাদের নিকট এক রকম। অর্থাৎ সবই আল্লাহর কালাম। (নাউযুবিল্লাহ)

ইবনে আরাবীর এ কথা থেকে আবশ্যক হয় যে, যে সৃষ্টি কথা বলে এবং যা বলে তার কথাই আল্লাহর কথা এবং সেই আল্লাহ। সে হিসাবে ফেরাউনের কথাও আল্লাহর কথা এবং ফেরাউন নিজেও আল্লাহ। (নাউযুবিল্লাহ)

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাফের ইবনে আরাবীর এ কথার মধ্যে গোমরাহী ছাড়া অন্য কিছু নেই। সঠিক কথা হলো কালাম দু’প্রকার। সৃষ্টির কালাম ও স্রষ্টার কালাম। সৃষ্টির সমস্ত কালাম আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে গণ্য। আর স্রষ্টার কালাম সৃষ্টি নয়; বরং তা তার সিফাত।

কাউকে যদি এমন বিশেষণে বিশেষিত করা হয়, যা অন্যের সাথে প্রতিষ্ঠিত, তাহলে চোখ ওয়ালা মানুষকে অন্ধ বলা ঠিক আছে। কেননা অন্যের মধ্যে অন্ধত্ব বিদ্যমান রয়েছে এবং অন্ধকেও চোখ ওয়ালা বলা সঠিক। কারণ অন্যের মধ্যে তো দৃষ্টিশক্তি রয়েছে। সেই সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলাকে ঐসব গুণে গুণান্বিত করাও সঠিক হবে, যা তিনি অন্যের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। যেমন বিভিন্ন সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন রং, গন্ধ, স্বাদ, লম্বা, খাটো ইত্যাদি সৃষ্টি করেছেন। এগুলো যেহেতু সৃষ্টির বিশেষণ তাই আল্লাহর মধ্যেও তা থাকা আবশ্যক। কারণ তিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন। নাউযুবিল্লাহ

অনুরূপ জবাবের মাধ্যমে ইমাম আব্দুল আযীয মক্কী মুতাযেলা ইমাম বিশর আল মুরাইসীকে মামুনের সামনে অনুষ্ঠিত বিতর্কে পরাজিত করেছেন। আব্দুল আযীয মক্কী প্রথমে শর্ত করেছিলেন যে, কুরআনের আয়াত দ্বারাই কেবল দলীল পেশ করা হবে। বিশর খলীফা মামুনকে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার নিকট থেকে কুরআনের দলীল পেশ করার দাবি প্রত্যাহার করা হোক। কুরআনের দলীল বাদ দিয়ে অন্যান্য দলীল দ্বারা বিতর্ক করা হোক। বিশর দৃঢ়তার সাথে আরো বলল, ইমাম আব্দুল আযীয যদি কুরআনের দলীল পেশের দাবি পরিত্যাগ না করেন, তাহলে পরাজয় স্বীকার করে এখনই কুরআনকে মাখলুক বলে স্বীকার করুক। অন্যথায় আমার রক্ত হালাল হয়ে যাবে। অতঃপর আব্দুল আযীয বললেন, আমার পক্ষে কুরআনকে মাখলুক বলা অসম্ভব এবং যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে বিতর্ক করতে অক্ষমতা প্রকাশ করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং আমি তোমাকে প্রথম প্রশ্ন করবো? না কি তুমি আমাকে প্রশ্ন করবে? সে বলল, তুমি প্রথমে প্রশ্ন করো। আব্দুল আযীয বলেন, বিশর মনে করেছিল, আমি তাকে কোনো প্রশ্নই করতে পারবো না। যাই হোক আমি বললাম, এ ব্যাপারে তোমাকে অবশ্যই তিনটি কথার যে কোনো একটি কথা স্বীকার করতে হবে।

(১) তোমাকে স্বীকার করতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের মধ্যে কুরআন সৃষ্টি করেছেন (অথচ আমি মনে করি এটি আল্লাহর কালাম) অথবা

(২) তিনি এটিকে স্বনির্ভর করে সৃষ্টি করেছেন অথবা

(৩) তিনি এটিকে অন্যের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। বিশর এ কথার সরাসরি জবাব না দিয়ে পাশ কেটে গেল এবং বলল, আমি বলছি, আল্লাহ তা‘আলা অন্যসব বস্তুর মতই এটি সৃষ্টি করেছেন।

এবার মামুন আব্দুল আযীযকে বললেন, তুমি এ মাস‘আলার ব্যাখ্যা করো এবং বিশরকে ছাড়ো। কারণ তার জবাব নিঃশেষ হয়ে গেছে। আব্দুল আযীয বললেন, সে যদি বলে আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের মধ্যে কালাম সৃষ্টি করেছেন, তাহলে এটি অসম্ভব। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কোনো সৃষ্ট বস্তুর মহল বা স্থান হতে পারেন না। অর্থাৎ সৃষ্টি তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারে না এবং আল্লাহর সত্তার মধ্যে কোনো সৃষ্ট জিনিস নেই। আর যদি বলে আল্লাহ তা‘আলা অন্যের মধ্যে কালাম সৃষ্টি করেছেন, তাহলে বিবেক-বুদ্ধির যুক্তির দাবিতে আবশ্যক হয় যে, তিনি সৃষ্টির মধ্যে যেসব কালাম সৃষ্টি করেছেন, তা সবই তার কালাম। এটিও অসম্ভব। কেননা এ কথা যে বলবে, তার উপর এটি স্বীকার করাও আবশ্যক যে, প্রত্যেক সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা যেসব কালাম সৃষ্টি করেছেন, তা আল্লাহরই কালাম। আর যদি বলে যে, কালাম একটি স্বনির্ভর বস্তু এবং এটি নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল, তাহলে তাও অসম্ভব। কেননা কথক ছাড়া কথার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেমন ইচ্ছুক ছাড়া ইচ্ছার কোনো অস্তিত্ব নেই এবং আলেম ছাড়া ইলমের কোনো অস্তিত্ব নেই। সুতরাং এমন কোনো স্বনির্ভর কালাম নেই, যা নিজে নিজেই কথা বলে। যখন উপরোক্ত সকল দিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, আল্লাহর কালাম সৃষ্টি, তখন জানা গেল যে, তা আল্লাহর সিফাত। আব্দুল আযীয আলমক্কী রহিমাহুল্লাহ তার কিতাব আলহায়দাতে এ বিষয়ে যা উল্লেখ করেছেন, সংক্ষিপ্তভাবে তা এখানেই শেষ হলো।

كل (প্রত্যেক) শব্দের মধ্যে যে ব্যাপকতা রয়েছে, তা প্রত্যেক স্থান অনুপাতেই মূল্যায়ন হবে এবং বিভিন্ন আলামত দ্বারা তা জানা যাবে। আপনি কি আল্লাহ তা‘আলার এ বাণীর প্রতি লক্ষ্য করেন নি,

تُدَمِّرُ كُلَّ شَيْءٍ بِأَمْرِ رَبِّهَا فَأَصْبَحُوا لَا يُرَىٰ إِلَّا مَسَاكِنُهُمْ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْقَوْمَ الْمُجْرِمِينَ

‘‘বাতাস তার রবের নির্দেশে প্রতিটি বস্তুকে ধ্বংস করে ফেললো। অবশেষে তাদের এ অবস্থা দাঁড়ালো যে, তাদের বসবাসের স্থান ছাড়া সেখানে আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হতো না। এভাবেই আমি অপরাধীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি’’। (সূরা আহকাফ: ২৫)

এখানে তাদের বাড়িঘরগুলো প্রত্যেক জিনিসের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তা كل شيئএর ব্যাপকতার আওতাভুক্ত হয়নি, যেগুলোকে বাতাস ধ্বংস করে দিয়েছিল। সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে যা ধ্বংস করা সম্ভব এবং যা ধ্বংস করা দরকার كل شيئ দ্বারা কেবল তা ধ্বংস করা উদ্দেশ্য। আল্লাহ তা‘আলা সাবার রাণী বিলকিস সম্পর্কে বলেন,

وَأُوتِيَتْ مِن كُلِّ شَيْءٍ ‘‘তাকে সবকিছুই দান করা হয়েছে’’ (সূরা নামল:২৩)। রাজাদের যা কিছু প্রয়োজন হয় এখানে كُلِّ شَيْء দ্বারা তা উদ্দেশ্য। ব্যাপকার্থ বোধক শব্দগুলো যে ব্যাপকার্থ প্রকাশ করে, কথার আলামত ও বর্ণনা প্রসঙ্গ দ্বারা উক্ত ব্যাপকতাকে সীমাবদ্ধ করা হয়ে থাকে। এখানে হুদহুদ পাখির উদ্দেশ্য হলো, রাজ্য পরিচালনার জন্য যা কিছু প্রয়োজন সাবার রাণীর কাছে তা পরিপূর্ণ রূপেই ছিল এবং তার রাজত্বকে পরিপূর্ণ করার জন্য অন্য কিছুর প্রয়োজন ছিল না। এ রকম দৃষ্টান্ত আরো অনেক রয়েছে।

সুতরাং اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ‘‘প্রত্যেক জিনিসের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ’’ (সূরা রাদ:১৬) এ কথার অর্থ হলো প্রত্যেক সৃষ্ট বস্তুর স্রষ্টা। আল্লাহ ছাড়া যেসব বস্তু রয়েছে, তা সবই সৃষ্টি। বান্দাদের কর্মসমূহও নিঃসন্দেহে এর মধ্যে শামিল। এ ব্যাপকতার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার সত্তা শামিল নয়। আর তার সিফাতসমূহও তার সত্তার বাহিরের আলাদা কোনো জিনিস নয়। কেননা তিনিই পূর্ণ গুণ দ্বারা বিশেষিত। এ সিফাতগুলো তার পবিত্র সত্তার সাথেই যুক্ত। সিফাতগুলো তার সত্তা থেকে আলাদা হিসাবে কল্পনা করা অসম্ভব। ইতিপূর্বে শাইখের উক্তি:

مَا زَالَ بِصِفَاتِهِ قَدِيمًا قَبْلَ خَلِقِهِ

‘‘সৃষ্টি করার বহু পূর্ব থেকেই তিনি তার অনাদি গুণাবলীসহ শ্বাশ্বত সত্তা হিসাবে বিদ্যমান রয়েছেন, -এ অংশের ব্যাখ্যা করার সময় উক্ত অর্থের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এমনকি কুরআনকে সৃষ্টি হিসাবে সাব্যস্ত করার জন্য তারা যে আয়াত দিয়ে দলীল দিয়েছে, তাই তাদের কথার বিরুদ্ধে দলীল হিসাবে পেশযোগ্য। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী:

اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ ‘‘প্রত্যেক জিনিসের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ’’ যদি মাখলুক হয়, তাহলে তা কুরআন মাখলুক হওয়ার পক্ষে দলীল হতে পারে না। কুরআনকে মাখলুক বলার পক্ষে তাদের আরেকটি দলীল হলো,

إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

‘‘আমি এ কিতাবকে অবতীর্ণ করেছি কুরআন রূপে আরবী ভাষায়, যাতে তোমরা তা বুঝতে পারো’’। (সূরা যুখরুফ: ৩)

এভাবে দলীল গ্রহণ করা সম্পূর্ণ বাতিল। কেননা جعل শব্দটি যখন সৃষ্টি করা অর্থে ব্যবহৃত হয়, তখন এটি মাত্র মাফউল একটি চায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ

‘‘তিনি অন্ধকার ও আলো সৃষ্টি করেছেন’’। (সূরা আনআম: ১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ

‘‘আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম প্রত্যেকটি প্রাণীকে। এরপরও কি তারা ঈমান আনয়ন করবেনা?’’। (সূরা আম্বীয়া: ৩০) একই সূরায় এর পরের আয়াতে দু’টিতে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَجَعَلْنَا فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ وَجَعَلْنَا السَّمَاءَ سَقْفًا مَّحْفُوظًا وَهُمْ عَنْ آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ

‘‘আর আমি পৃথিবীতে পাহাড় বসিয়ে দিয়েছি, যাতে সে তাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং তার মধ্যে চওড়া পথ তৈরি করে দিয়েছি, হয়তো লোকেরা নিজেদের পথ জেনে নেবে। আর আমি আকাশকে করেছি একটি সুরক্ষিত ছাদ, কিন্তু তারা এমন যে, এ নিদর্শনাবলীর প্রতি দৃষ্টিই দেয় না’’। (সূরা আম্বীয়া: ৩১-৩২)

আর جعل শব্দটি যখন দু’টি مفعول চায় তখন উহা সৃষ্টি করা অর্থে ব্যবহৃত হয়না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَا تَنقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللَّهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلًا

‘‘এবং নিজেদের কসম দৃঢ় করার পর আবার তা ভেঙ্গে ফেলো না যখন তোমরা আল্লাহকে নিজের উপর সাক্ষী বানিয়ে নিয়েছো’’। (সূরা নাহাল: ৯১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَلَا تَجْعَلُوا اللَّهَ عُرْضَةً لِّأَيْمَانِكُمْ

‘‘তোমরা শপথ বাক্য উচ্চারণ করার জন্য আল্লাহর নাম ব্যবহার করো না’’। (সূরা বাকারা: ২২৪)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآنَ عِضِينَ

‘‘যারা কুরআনকে খন্ডবিখন্ড করে ফেলে’’। (সূরা হিজির: ৯১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَّحْسُورًا

‘‘নিজের হাত গলায় বেঁধে রেখো না এবং তাকে একেবারে খোলাও ছেড়ে দিয়ো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে যাবে’’। (সূরা বানী ইসরাঈল: ২৯) আল্লাহ তা‘আলা একই সূরার ৩৯ নং আয়াতে বলেন,

وَلَا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ فَتُلْقَىٰ فِي جَهَنَّمَ مَلُومًا مَّدْحُورًا

‘‘আল্লাহর সাথে অন্য কোনো মাবুদ স্থির করে নিয়ো না, অন্যথায় তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে নিন্দিত এবং সব রকমের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত অবস্থায়’’। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَجَعَلُوا الْمَلَائِكَةَ الَّذِينَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمَٰنِ إِنَاثًا أَشَهِدُوا خَلْقَهُمْ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْأَلُونَ

‘‘এরা দয়াময় আল্লাহর খাস বান্দা ফেরেশতাদেরকে নারী গণ্য করেছে। এদের সৃষ্টির সময় কি তারা উপস্থিত ছিল? এদের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করে নেয়া হবে এবং সে জন্য এদেরকে জবাবদিহি করতে হবে’’। (সূরা যুখরুফ: ১৯) অনুরূপ আয়াত আরো অনেক রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا

‘‘আমি এ কিতাবকে অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায়, (সূরা যুখরুফ: ৩) -এর ক্ষেত্রেও একই কথা। তারা আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

نُودِيَ مِن شَاطِئِ الْوَادِ الْأَيْمَنِ فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ أَن يَا مُوسَىٰ إِنِّي أَنَا اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

‘‘পবিত্র ভূখন্ডে মূসার ডান দিকের একটি বৃক্ষ থেকে আহবান এলো, হে মূসা! আমি আল্লাহ, সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রভু’’, (সূরা কাসাস:৩০) -এ আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করে বলে থাকে, আল্লাহ তা‘আলা গাছের মধ্যে কালাম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর মুসা আলাইহিস সালাম তা শুনেছেন। কিন্তু তারা আয়াতের শুরু ও শেষের কথাগুলো থেকে অন্ধ হয়ে গেছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা শুরুতে বলেছেন,

فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ مِن شَاطِئِ الْوَادِ الْأَيْمَنِ

‘‘মুসা আলাইহিস সালাম যখন সেখানে আসলেন তখন মুসার ডান দিকের উপত্যকার কিনারা থেকে আহবান এলো’’ (সূরা কাসাস:৩০)। দূর থেকে যে আহবান আসে তাকে কালাম বলা হয়। উপত্যকার কিনারা থেকে মুসা আলাইহিস সালাম আহবান শুনতে পেলেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فِي الْبُقْعَةِ الْمُبَارَكَةِ مِنَ الشَّجَرَةِ ‘‘পবিত্র ভূখণ্ড-র বৃক্ষ থেকে’’ (সূরা কাসাস:৩০)। অর্থাৎ পবিত্র ভূখণ্ড-র গাছের নিকট থেকে আহবান এসেছিল। যেমন বলা হয়,سمعت كلام زيد من البيت ‘‘ঘর থেকে যায়েদের কথা শুনেছি’’। অর্থাৎ ঘর থেকে কথার সূচনা হয়েছে। এমন নয় যে, ঘর কথা বলেছে। মুসা আলাইহিস সালাম গাছ থেকে যে আহবান শুনেছেন, তা যদি গাছের মধ্যে সৃষ্টি করা কথা হয়ে থাকে, তাহলে গাছই এ কথা বলেছে হিসাবে ধরে নেয়া আবশ্যক হবে যে,

يَا مُوسَىٰ إِنِّي أَنَا اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

‘‘হে মূসা! আমি আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রভু’’ (সূরা কাসাস:৩০)। সৃষ্টিজগতের প্রভু ছাড়া অন্য কারো কি এ কথা বলার অধিকার আছে যে, আমি আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টির প্রভু? এ কথা যদি আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে বের হতো, তাহলে ফেরাউনের এ কথাও সত্য হওয়া আবশ্যক হয়,

أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى ‘‘আমি তোমাদের মহান প্রভু’’ (সূরা নাযিয়াত:২৪)। কেননা তাদের মতে উভয় কথার প্রত্যেকটিই সৃষ্টি এবং তার কায়েল (বক্তা) আল্লাহ নন। তবে তারা তাদের বাতিল মূলনীতির ভিত্তিতে উভয় কথার মধ্যে পার্থক্য করেছে। মুসা যা শুনেছেন, তা আল্লাহ তা‘আলা গাছের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন এবং ফেরাউন যা বলেছে, তা সে নিজেই সৃষ্টি করেছে। সুতরাং তারা আল্লাহর কালামের বিকৃতি করেছে, তাকে পরিবর্তন করেছে এবং বিশ্বাস করেছে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য স্রষ্টা রয়েছে। বান্দাদের কাজ-কর্মের সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা করার সময় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসবে ইনশাআল্লাহ। যদি বলা হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা তো বলেছেন,

إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ

‘‘এটা একজন সম্মানিত রাসূলের বাণী’’। (সূরা হাক্কাহ:৪০, সূরা তাকবীর: ১৯)

এখান থেকে বুঝা যায় যে, একজন রসূলই কুরআন তৈরী করেছে। তিনি সম্ভবত জিবরীল অথবা মুহাম্মাদ। এর জবাব হলো, রসূল শব্দটি পরিচিত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত রেসালাতের প্রচারক ছিলেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা এ কথা বলেননি যে, এটি একজন ফেরেশতার বাণী কিংবা একজন নাবীর বাণী।

সুতরাং জানা যাচ্ছে যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা যে রেসালাত দিয়ে পাঠিয়েছেন, তিনি তা প্রচার করেছেন। এমনটি নয় যে, তিনি নিজের পক্ষ হতে কুর‘আন তৈরী করেছেন। এক আয়াতে রসূল দ্বারা জিবরীল উদ্দেশ্য। অন্য আয়াতে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য। মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং জিবরীলের দিকে রেসালাতের সম্বন্ধ করার কারণে পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, রসূলগণের দায়িত্ব ছিল কেবল পৌঁছিয়ে দেয়া। কেননা একজন ইহা তৈরী করার অর্থ হলো অন্যের দ্বারা তা তৈরী হওয়া অসম্ভব। সুতরাং যেহেতু উভয়ের দিকে রেসালাতের সম্বন্ধ করা হয়েছে, তাতে বুঝা গেল, কারো দ্বারাই তা তৈরী হয়নি। সেই সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: رسول أمين ‘‘আমানতদার রসূল’’ এটি প্রমাণ করে যে, তাকে যে কালামের তাবলীগ করার জন্য পাঠানো হয়েছে, তিনি তাতে বৃদ্ধি করেন না কিংবা তা থেকে কোনো কিছু কমান না। বরং তাকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে, তিনি তাতে বিশ্বস্ত। প্রেরকের পক্ষ হতে তিনি তা পৌঁছিয়ে দিয়েছেন।

যারা বলে, কুরআন মানুষের কালাম, তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা কাফের বলেছেন। মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষ। সুতরাং যারা কুরআনকে মুহাম্মাদের কালাম বলবে কিংবা এ কথা বলবে যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটি তৈরী করেছেন, সে কুফুরী করল। যারা বলবে কুরআন মানুষের কালাম অথবা জিনের কালাম কিংবা ফেরেশতার কথা তাদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। অর্থাৎ তারা সকলেই কাফের। যে কথা বলে তা তারই কালাম হয়। যে ব্যক্তি বক্তার কাছ থেকে শুনে অন্যের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়, তাকে উক্ত কালামের প্রবক্তা বলা হয় না। সুতরাং যে ব্যক্তি কাউকে যখন বলতে শুনবে,

قِفَا نَبْكِ مِنْ ذِكْرَى حَبِيبٍ وَمُنْزِلِ ‘‘হে বন্ধুদ্বয়! থামো, আমার প্রেমিক ও তার বাড়িঘরের কথা স্মরণ করে আমরা একটু কেঁদে নেই’’ তখন সে বলবে, এটি হলো ইমরুল কায়েসের কবিতা। এমনি যে ব্যক্তি কাউকে যখন বলতে শুনবে,

إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى

‘‘প্রতিটি আমল কবুল হওয়া বা না হওয়া নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে যার নিয়ত সে করে’’ তখন সে বলবে, এটি নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কালাম। ঠিক তেমনি সে যখন কাউকে বলতে শুনবে,

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

তখন বলবে এটি আল্লাহর কালাম। যখন তার জানা থাকবে, সে এ কথাই বলবে। আর যদি জানা না থাকে, তাহলে বলবে, আমি জানি না এটি কার কালাম? কেউ যদি তার কথার প্রতিবাদ করে, তাহলে সে মিথ্যুক বলে গণ্য হবে। এ জন্যই কেউ যদি অন্যকে কোনো কবিতার ছন্দ কিংবা পদ্যাংশ পাঠ করতে শুনে তখন তাকে জিজ্ঞাসা করে, এটি কার কথা? এটি কি তোমার রচিত কথা? না অন্য কারো? .... ইত্যাদি।
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
12,902Threads
Total Messages
16,403Comments
Total Members
3,337Members
Latest Messages
Emon11Latest member
Top