সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Abu Abdullah

মুস্তাহাযাহ তথা অস্বাভাবিক রক্তস্রাবে আক্রান্ত নারীর বিভিন্ন অবস্থা

Abu Abdullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Uploader
Salafi User
LV
15
 
Awards
24
Credit
8,731
অনবরত রক্ত প্রবাহিত হয় এমন নারীর অবস্থা তিন প্রকার:

১. ইস্তেহাযাহ অর্থাৎ অনবরত রক্ত প্রবাহ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে তার প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঋতুস্রাবের অভ্যাস ছিল। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে পূর্ব নির্ধারিত সময় পর্যন্ত প্রবাহমান রক্তকে হায়েয হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এর ওপর হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পরের রক্তস্রাবকে ইস্তেহাযাহ গণ্য করে তার নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে। যেমন, একজন নারীর প্রতি মাসের প্রথম দিকে ছয় দিন করে রক্তস্রাব হয়ে থাকে। এখন হঠাৎ করে দেখা গেল যে, ঐ নারীর অবিরাম রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, তাহলে তখন প্রতি মাসের প্রথম ছয় দিনে প্রবাহিত রক্তকে হায়েয হিসেবে গণ্য করে বাকীটাকে ইস্তেহাযাহ হিসেবে ধরে নিতে হবে। কেননা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস দ্বারা তাই প্রমাণিত হয়। হাদীসটি হচ্ছে:

«أنَّ فَاطِمَةَ بِنْتِ أبِيْ حُبَيْشٍ قَالَتْ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! إنِّيْ أسْتَحَاضُ فَلاَ أطْهُرُ أفَأدَعُ الصَّلاَةَ؟ قَالَ: لاَ إنَّ ذَلِكَ عِرْقٌ وَلَكِنْ دَعِيْ الصَّلاَةَ قَدْرَ الْأيَّامِ الَّتِيْ كُنْتِ تَحِيْضِيْنَ فِيْهَا ثُمَّ اغْتَسِلِيْ وَصَلِّي»​

“ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার অবিরাম রক্তস্রাব হচ্ছে যার কারণে আমি পবিত্র হতে পারছি না। এমতাবস্থায় আমি কি সালাত ছেড়ে দেব? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, এটি রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত। তবে হ্যাঁ, সাধারণতঃ অন্যান্য মাসে যতদিন তুমি ঋতুবতী থাকতে ততদিন সালাত থেকে বিরত থাক তারপর গোসল করে সালাত আদায় কর।”[1]

আর সহীহ মুসলিমে আছে:

«أنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِأمِّ حَبِيْبَةَ بِنْتِ جَحْشٍ: امْكُثِيْ قَدرَ مَا كَانَتْ تَحْبِسُكِ حَيْضَتُكِ ثُمَّ اغْتَسِلِيْ وَصَلِّي»​

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হাবীবা বিনতে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছিলেন: তুমি ঐ পরিমাণ সময় অপেক্ষা কর যে পরিমাণ সময় সাধারণতঃ ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাক। অতঃপর গোসল করে সালাত আদায় কর।”

এ থেকে বুঝা গেল যে, মুস্তাহাযাহ অর্থাৎ অবিরাম রক্তস্রাব হয় এমন নারী ঐ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করবে এবং সালাত থেকে বিরত থাকবে যে পরিমাণ সময় সে সাধারণতঃ ঋতুস্রাবে আক্রান্ত থাকত। তারপর গোসল করে সালাত আদায় করতে থাকবে এবং রক্তের কারণে সালাত আদায়ে মনে কোনো রকম দ্বিধা রাখবে না।

২. ইস্তেহাযাহ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে আক্রান্ত নারীর ঋতুস্রাবের কোনো নির্দিষ্ট সময়-সীমা নেই। অর্থাৎ জীবনে এটাই তার প্রথম রক্তস্রাব। এমতাবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত প্রবাহিত রক্তে কালো বর্ণ অথবা গাঢ়তা কিংবা কোনো গন্ধ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী হবে। অন্যথায় ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য করে তার নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে। যেমন, একজন নারী জীবনে প্রথম লজ্জাস্থানে রক্ত দেখলো এবং সে রক্তকে দশদিন পর্যন্ত কালো দেখেছে এবং মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোতে লাল দেখেছে। অথবা দশদিন পর্যন্ত গাঢ় ও ঘন ছিল এবং মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোতে পাতলা ছিল। অথবা দশদিন পর্যন্ত তার মধ্যে গন্ধ ছিল এবং তার পরে কোনো গন্ধই থাকে নাই, তাহলে প্রথম দৃষ্টান্তে প্রবাহমান রক্ত কালো বর্ণ থাকা পর্যন্ত, দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে গাঢ়তা থাকা পর্যন্ত এবং তৃতীয় দৃষ্টান্তে গন্ধ থাকা পর্যন্ত হায়েয হিসেবে গণ্য হবে এবং এর পর হতে ইস্তেহাযাহ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ হাদীসে বর্ণিত আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন:

«إذَا كَانَ دَمُ الْحَيْضَةِ فَإنَّهُ أسْوَدُ يُعْرَفُ فَإذَا كَانَ ذَلِكَ فَأمْسِكِيْ عَنِ الصَّلاَة فَإذَا كَانَ الْآخَرُ فَتَوَضَّئِيْ وَصَلِّيْ فَإنَّمَا هُوَ عِرْقٌ»​

“যখন হায়েযের রক্ত দেখা দিবে তখন তা কালো বর্ণের হবে যা চেনা যায়। সুতরাং কালো বর্ণের রক্ত দেখা দিলে সালাত থেকে বিরত থাক। আর কালো ছাড়া অন্য কোনো বর্ণ দেখা দিলে অযু করে সালাত আদায় কর। কেননা তা রগ থেকে বের হয়ে আসা রক্ত।”[2]

প্রকাশ থাকে যে, উক্ত হাদীসের সনদ ও মূল উদ্ধৃতিতে কিছু অসুবিধা থাকলেও ওলামায়ে কেরাম এর ওপর আমল করেছেন এবং অধিকাংশ নারী জাতির নিয়মিত অভ্যাসের দিকে লক্ষ্য করে হাদীসখানার ওপর আমল করাই উত্তম।

৩. মুস্তাহাযাহ নারীর পূর্বে ঋতুস্রাবের না কোনো নির্দিষ্ট সময়-সীমা আছে না ইস্তেহাযাহ ও হায়েযের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী কোনো চিহ্ন আছে। অর্থাৎ জীবনে এটাই তার প্রথম রক্তস্রাব এবং রক্ত একাধারে অবিরাম বের হচ্ছে। প্রবাহমান রক্ত পুরোটাই এক ধরনের অথবা বিভিন্ন রকমের যেটাকে হায়েয হিসেবে গণ্য করা সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় অধিকাংশ নারীর ঋতুস্রাবের সময়-সীমা অনুযায়ী আমল করতে হবে। অর্থাৎ অবিরাম রক্তস্রাব আরম্ভ হওয়ার পর থেকে প্রতি মাসে ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের নিয়ম-নীতি কার্যকরী হবে। তারপর ইস্তেহাযার হুকুম পালন করতে হবে। যেমন, একজন মেয়ের মাসের ৫ তারিখে রক্ত প্রবাহ আরম্ভ হয়েছে এবং জীবনে এটাই তার প্রথম। রক্ত বিরতিহীনভাবে বের হচ্ছে এতে হায়েযের কোনো চিহ্ন নেই। রং ও গন্ধ ইত্যাদি দিয়ে পার্থক্য করারও কোনো সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় প্রতি মাসের ৫ তারিখ থেকে ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের হুকুম পালন করতে হবে। কারণ হামনাহ বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহা এ ব্যাপারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরণাপন্ন হয়ে বলেছিলেন:

«يَا رَسُوْلَ اللهِ! إنِّيْ أسْتَحَاضُ حَيْضَةً كَبِيْرَةً شَدِيْدَةً فَمَا تَرَى فِيْهَا؟ قَدْ مَنَعَتْنِيْ الصَّلاَةَ وَالصِّيَام فَقَالَ: أنْعَتُ لَكِ أصِفُ لَكِ اسْتِعْمَالَ الْكُرْسُفَ (وَهُوَ الْقُطْن) تَضَعِيْنَهُ عَلَى الْفَرْج فَإنَّهُ يُذْهِبُ الدَّمَ قَالَتْ: هُوَ أكْثَرُ مِنْ ذَلِكَ. وَفِيْهِ قَالَ: إنَّمَا هَذَا رَكْضَةٌ مِنْ رَكَضَاتِ الشَّيْطَانِ فَتَحِيْضِيْ سِتَّةَ أيَّامٍ أوْ سَبْعَةً فِيْ عِلْمِ اللهِ تَعَالَى ثُمَّ اغْتَسِلِيْ حَتَّى إذَا رَأَيْتِ أنَّكِ قَدْ طَهُرْتِ وَاسْتَيْقَنْتِ فَصَلِّيْ أرْبَعًا وَعِشْرِيْنَ أوْ ثَلاَثًا وَعِشْرِيْنَ لَيْلَةً وَأيَّامَهَا وَصُوْمِي»​

“হে আল্লাহর রাসূল! আমার তো অনেক দীর্ঘ সময় ধরে খুব বেশি পরিমাণে রক্তস্রাব হচ্ছে। এ অবস্থায় আপনার মতামত কী? এটা তো আমার সালাত ও সাওম আদায়ের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমি তোমাকে যোনীতে তুলা ব্যবহার করার পর পরামর্শ দিচ্ছি, তুলা রক্ত টেনে নিবে। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন যে, আমার প্রবাহিত রক্ত তার চেয়েও বেশি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এটা শয়তানের একটা খোঁচা মাত্র। আপাততঃ তুমি ছয় অথবা সাত দিন হায়েযের হুকুম পালন করে চল। তারপর ভালো করে গোসল কর। যখন তুমি মনে করবে যে, তুমি পবিত্রতা অর্জন করেছ তখন ২৪ দিন অথবা ২৩ দিন সালাত ও সাওম আদায় করতে থাক।”[3]

স্মরণ রাখতে হবে যে, উল্লিখিত হাদীসে ছয় অথবা সাত দিনের কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, এটাকে ইচ্ছামত গ্রহণ করবে। মূলত একটা সমাধান দেওয়ার উদ্দেশ্যেই ইজতিহাদ করে এরকম বলা হয়েছে। সুতরাং রক্তস্রাবে আক্রান্ত নারীর অবস্থা ও বয়স ইত্যাদির সঙ্গে পূর্ণ সামঞ্জস্য ও সংগতি রেখে হায়েযের সময় নির্দিষ্ট করবে তা যদি ছয় দিন হয় তাহলে ছয় দিন এবং সাত দিন হলে সাতই ধার্য করবে।

মুস্তাহাযার সদৃশ নারীর অবস্থার বিবরণ:

জরায়ূতে অথবা জরায়ূর আশে-পাশে অপারেশন করার কারণে যদি লজ্জাস্থান দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয় তাহলে তখন দুই অবস্থায় দুই প্রকার হুকুম পালন করতে হবে:

১. এ ব্যাপারে যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, অস্ত্রোপচারের পর আর কোনো ঋতুস্রাবের সম্ভাবনা নেই অথবা অপারেশনের মাধ্যমে এমনভাবে গর্ভাশয়ের পথকে বন্ধ করা হয়েছে যে, আর কোনো প্রকার রক্ত সেখান থেকে বের হবে না, তাহলে এই নারীর ক্ষেত্রে মুস্তাহাযার হুকুম প্রযোজ্য হবে না এবং তার হুকুম ঐ মহিলার হুকুমের মতো হবে যে ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পর পুনরায় লজ্জাস্থানে হলুদ অথবা মাটি বর্ণের রক্ত অথবা স্যাঁতসেঁতে কিছু দেখতে পেল। সুতরাং এমতাবস্থায় সালাত-সাওম ছেড়ে দেবে না, সহবাসও নিষিদ্ধ নয় এবং এ রক্তের কারণে গোসল করাও ওয়াজিব নয়। তবে সালাতের সময় রক্তটাকে পরিষ্কার করা এবং কাপড়ের কোনো টুকরা দিয়ে লজ্জাস্থানে পট্টি বাঁধা আবশ্যক যেন রক্ত বের হতে না পারে। অতঃপর সালাতের অযু করবে।

স্মরণ রাখতে হবে যে, উল্লিখিত অবস্থায় পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পরেই অযু করবে, আর নফল সালাতের ক্ষেত্রে সালাতের ইচ্ছা করার সময় অযু করবে।

২. অস্ত্রোপচারের পর আর ঋতুস্রাব আসবে না এ ব্যাপারে যদি নিশ্চয়তা না থাকে বরং আসারই সম্ভাবনা থাকে তাহলে মুস্তাহাযাহ নারীর মতো হুকুম পালন করতে হবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেছিলেন:

«إنَّمَا ذَلِكَ عِرْق وَلَيْسَ بِالْحَيْضَة فَإذَا أقْبَلَتِ الْحَيْضَةُ فَاتْرُكِيْ الصَّلاَةَ»​

“এটি হায়েয নয় বরং একটি শিরা নিসৃত রক্ত। সুতরাং যখন হায়েয আসবে তখন সালাত থেকে বিরত থাক।”

এ থেকে সাব্যস্ত হলো যে, মুস্তাহাযাহ নারীর হুকুম কেবলমাত্র সেই মহিলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে যার ঋতুস্রাব হওয়ার বা বন্ধ হওয়ার উভয় সম্ভাবনা রয়েছে। পক্ষান্তরে যে সকল মহিলার ঋতুস্রাবের সম্ভাবনা নেই তাদের লজ্জাস্থান থেকে প্রবাহিত রক্ত রগের রক্ত হিসেবে পরিগণিত হবে।

নারীর প্রাকৃতিক রক্তস্রাব
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদ: মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​


[1] সহীহ বুখারী।
[2] এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম নাসাঈ বর্ণনা করেছেন এবং ইবন হিব্বান ও হাকেম বিশুদ্ধ বলে মতামত দিয়েছেন।
[3] হাদীসটি ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ সহীহ বলেছেন এবং ইমাম বুখারী থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি হাসান বলেছেন।
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
13,033Threads
Total Messages
16,593Comments
Total Members
3,420Members
Latest Messages
MinarLatest member
Top