Habib Bin Tofajjal

প্রবন্ধ দর্শন-কালামশাস্ত্রের নিন্দায় ইমামগণের বক্তব্য┊কালামীদের পরিচয় - পর্ব ৪

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
Q&A Master
Salafi User
LV
17
 
Awards
33
Credit
15,475
সালাফে সালেহীন ইমামগণ ‘ইলমুল কালাম' দর্শনশাস্ত্র বা 'ইলমুল মানতিক' তর্কশাস্ত্রের নিন্দা করে গিয়েছেন। যেমন, ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ'র পুত্র হাম্মাদ বলেন: এক শুক্রবারে আবু হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) আমার হাত ধরে মসজিদে প্রবেশ করেন।.... তিনি দীন (আকীদাহ) বিষয়ে বিতর্কে (কালাম চর্চায়) লিপ্ত একদল মানুষের নিকট দিয়ে গমন করেন এবং আমাকে বলেন: বেটা! যে ব্যক্তি এ শাস্ত্রে পারদর্শিতা অর্জন করবে সে যিনদীক (ধর্মত্যাগী ও ধর্ম অবমাননাকারী) বলে আখ্যায়িত হবে এবং ইসলামের পরিমণ্ডল থেকে বহির্ভূত বলে গণ্য হবে।

এভাবে সে এমন অবস্থায় পৌঁছাবে যে, তার দ্বারা কোনো কল্যাণ সাধিত হবে না।...হাম্মাদ ইবন আবী হানীফা বলেন: আমি এরূপ বিতর্কের বিষয়ে খুবই আগ্রহী ছিলাম। শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর এ কথার পরে আমি এ জাতীয় বিতর্ককে পরিত্যাগ করি ।

ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ'র ছাত্র নূহ ইবন আবী মারইয়াম বলেন: “আমি আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহকে বললাম: মানুষেরা ইলমুল কালামে (স্রষ্টার অস্তিত্ব, অনাদিত্ব ও বিশেষণ প্রমাণে) 'আরদ্ব' (অমৌল-পরনির্ভর) 'জিসম' (দেহ) ইত্যাদি বিষয়ক আলোচনা উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর বিষয়ে আপনার মত কী?

তিনি বলেন: এগুলো দার্শনিকদের কথাবার্তা। তোমার দায়িত্ব হাদীসের ওপর নির্ভর করা এবং পূর্ববর্তীদের (সাহাবী-তাবেয়ীদের) তরীকা অনুসরণ করা। সাবধান! সকল নব- উদ্ভাবিত বিষয় বর্জন করবে; কারণ তা বিদ'আত।”

ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহ'র ছাত্রগণও ইলমুল কালাম চর্চা নিষেধ করতে থাকেন। ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহ (১৮৯ হি.) তাঁর ছাত্র ইলমুল কালামের বিশেষজ্ঞ ও মু'তাযিলী পণ্ডিত বিশর আল-মাররীসী (২১৮ হি.)-কে বলেন: “কালামের জ্ঞানই হলো প্রকৃত অজ্ঞতা আর কালাম সম্পর্কে অজ্ঞতাই হলো প্রকৃত জ্ঞান। ইলমুল কালামে সুখ্যাতির অর্থ তাকে যিনদীক বা অবিশ্বাসী-ধর্মত্যাগী বলা হবে।”

ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেন: “যে ব্যক্তি ইলমুল কালাম শিক্ষা করবে সে যিনদীকে পরিণত হবে।”

ইমাম শাফে'য়ী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ২০৪ হি.) বলেন “যারা ইলমুল কালাম চর্চা করে তাদের বিষয়ে আমার আদেশ এই যে, তাদেরকে খেজুরের ডাল ও জুতা দিয়ে পেটাতে হবে, এভাবে মহল্লায় মহল্লায় ও গোত্র-গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে ঘুরিয়ে বেড়াতে হবে এবং বলতে হবে: যারা কুরআন ও সুন্নাহ ছেড়ে ইলমুল কালামে মনোনিবেশ করে তাদের এ শাস্তি।”(১)

এভাবে প্রসিদ্ধ চার মুজতাহিদ ইমাম এবং দ্বিতীয়-তৃতীয় হিজরী শতকের সকল প্রসিদ্ধ আলেম, ইমাম, ফকীহ ও মুহাদ্দিস অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ইলমুল কালামের নিন্দা করেছেন।

পরবর্তী যুগে ইমাম আবু হানীফা ও অন্যান্য ইমামের অনুসারী অনেক আলেম আহলুস সুন্নাতের আকীদাহ ব্যাখ্যার জন্য ইলমুল কালাম চর্চা করেছেন। বিভ্রান্ত ফিরকাসমূহের বিভ্রান্তির উত্তর প্রদানের প্রয়োজনেই তারা ইলমুল কালামের পরিভাষা ও পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন বলে তারা উল্লেখ করেছেন। তবে তারা ইলমুল কালামের 'দার্শনিক অপছায়া’ থেকে বের হতে পারেননি। তাদের আলোচনায় সর্বদা কুরআন, হাদীস বা ওহীর বক্তব্যের চেয়ে যুক্তি-তর্ক ও দর্শন প্রাধান্য পেয়েছে।

ইমামগণ বা সালাফে সালেহীনের আকীদাহ চর্চা ওহী নির্ভর, বিশেষত হাদীস ও ‘আছার' বা সাহাবীগণের বক্তব্য নির্ভর। পক্ষান্তরে ইলমুল কালাম ‘আক্কল' অর্থাৎ জ্ঞানেন্দ্ৰিয়, বোধশক্তি বা বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি ও দর্শননির্ভর।

- আল-ফাতওয়া আল-হামাউইয়্যাহ আল-কুবরা

১। আল-ফিকহুল আকবর, বঙ্গানুবাদ, পৃ. ২৭৫-২৭৬।
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
12,902Threads
Total Messages
16,403Comments
Total Members
3,337Members
Latest Messages
Emon11Latest member
Top