সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Mohammad Shafin

আকিদা • আল্লাহর জন্য হদ্দ বা সীমা সাব্যস্ত করা বা না করার মাসআলা •

Mohammad Shafin

Salafi

Salafi User
Threads
27
Comments
40
Reactions
390
Credits
192
প্রথমেই আমাদেরকে কিছু বিষয় খোলাসা করতে হবে, তা হচ্ছে:

১. হদ্দ আল্লাহর কোনো সিফাত বা গুণ নয়।
২. হদ্দ শব্দটি সালাফগণের কেউই আল্লাহর জন্য ব্যবহার করেননি।
৩. হদ্দ শব্দটি কুরআন ও সুন্নাহর কোথাও সাব্যস্ত করা হয়নি, আবার অসাব্যস্তও করা হয়নি।
৪. মতভেদটি হচ্ছে, আল্লাহর জন্য ‘হদ্দ’ বা সীমা শব্দ ব্যবহার করা যাবে কি না? এটা দিয়ে আল্লাহর সম্পর্কে কোনো সংবাদ দেয়া যাবে কি না?

তাই সঠিক কথা হচ্ছে, ‘হদ’ বা ‘সীমাবদ্ধ’ এ শব্দটি একটি ‘মুজমাল’ বা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ সংক্ষিপ্ত শব্দ। কখনও কখনও তা দ্বারা বিশুদ্ধ অর্থ গ্রহণ করা যায়, আবার তা দ্বারা বাতিল অর্থও গ্রহন করা যায়। এজন্য ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ থেকে এটা বলা সাব্যস্ত হওয়াও প্রমাণিত, আবার অসাব্যস্ত হওয়াও প্রমাণিত। আর জাহমিয়্যারা সর্বদা বলে ‘তার কোনো সীমা’ নেই। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এটা অস্বীকার করা যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক’, আল্লাহ তা‘আলা জগতের উপরে। কারণ তাদের মতে এটা বললে তাঁর জন্য হদ্দ বা সীমা নির্ধারণ হয়ে যায়।

হদ্দ শব্দটি ব্যবহারের কারণ হচ্ছে জাহমিয়া ও মু‘আত্তিলা সম্প্রদায় আল্লাহর জন্য সর্বোর্ধ্ব থাকার গুণটি অস্বীকার করলো, তখন কোনো কোনো আহলুস সুন্নাত সে উর্ধ্ব ও উপরকে বুঝানোর জন্য ‘দিক’ শব্দটি ব্যবহার করে। অনুরূপভাবে যখন জাহমিয়ারা আল্লাহ ও তার সৃষ্টির মাঝে পার্থক্য করা অস্বীকার করলো, তখন কোনো কোনো আহলুস সুন্নাত সে পার্থক্য করার জন্য ‘হদ্দ’ শব্দটি ব্যবহার করে।

এজন্য শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, “এ শব্দটি দিয়ে আমরা কুরআন ও সুন্নায় না আসা অতিরিক্ত কোনো গুণ সাব্যস্ত করছি না, বরং এর দ্বারা মহান আল্লাহর অস্তিত্বকে সৃষ্টির সাথে মিশিয়ে দেয়ার যে অপচেষ্টা বাতিলপন্থী, আল্লাহর সিফাত অস্বীকারকারী গোষ্ঠীর লোকেরা করেছে আমরা সেটাকে খণ্ডন করে মহান আল্লাহর আলাদা অস্তিত্ব সাব্যস্ত করাকে বুঝিয়েছি। [ইবন তাইমিয়া, বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৩/৪৮]

সালাফদের মধ্যে যারা হদ্দ বা সীমা সাব্যস্ত করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন,

১. ইমাম উসমান ইবন সা‘ঈদ আদ-দারেমী।
২. ইমাম ইবনুল মুবারক। [বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ১/৪৪৩]
৩. ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল।
৪. ইমাম ইসহাক্ব ইবন রাহওয়াইহি
৫. ইমাম আবুল হাসান আদ-দিশতী।
৬. ইয়াহইয়া ইবন ‘আম্মার আস-সিজিস্তানী। প্রমুখ।

তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার এমন সীমা আছে যার দ্বারা সৃষ্টিকুল থেকে আলাদা। তাঁর মাঝে ও সৃষ্টিকুলের মাঝে ভিন্নতা ও পৃথকতা রয়েছে। তিনি সৃষ্টিকুলের সাথে মিলে মিশে নেই। বরং তাঁর কাছে নির্দেশ উঠে ও তাঁর থেকে নাযিল হয়। আর তাঁর জন্য আগমন করা ও আসা বিশুদ্ধ ইত্যাদি গুণাবলী, যা আল্লাহ ও বান্দার মাঝে পৃথকতা সাব্যস্ত করছে। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এ হিসাবে হদ্দ বা সীমা হচ্ছে, এমন কিছু গুণাবলী ও পরিমাণ সাব্যস্ত করা, যা দিয়ে অন্য বস্তু থেকে আলাদা হওয়া প্রমাণিত হবে। বস্তুত কুরআন ও সুন্নাহ এটার উপর প্রমাণবহ যে, আল্লাহ তা‘আলার এমন হদ্দ বা সীমা রয়েছে যার মাধ্যমে তিনি সৃষ্টিকুল থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং তিনি সকল মুহদাস বা নতুন কিছু থেকে পৃথক গুণে গুণান্বিত। তাহলে এ অর্থে আল্লাহর জন্য হদ্দ সাব্যস্ত করা অবশ্যই বিশুদ্ধ।

তাছাড়া, আরেকটি অর্থেও হদ্দ সাব্যস্ত করা বিশুদ্ধ; তা হচ্ছে, আল্লাহর নিজের যাত ও সিফাত সংক্রান্ত বিষয়। তাঁর অবশ্যই সীমা রয়েছে, কিন্তু তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না। এ হিসাবেও হদ্দ সাব্যস্ত করা না জায়েয হবে না। যেমনটি ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর দারউত তা‘আরুদ্ব ও বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ গ্রন্থদ্বয়ে সাব্যস্ত করেছেন।

অনুরূপভাবে স্থান হিসাবেও হদ্দ সাব্যস্ত করা যাবে। কারণ আল্লাহ জানিয়েছেন যে, তিনি আরশের উপর রয়েছেন। আর আরশ অবশ্যই একটি স্থান। সুতরাং জাহমিয়ারা সেটা অস্বীকার করার জন্য হদ্দ বা মাকান ব্যবহারের দোষ তুলে ধরলেও আমরা তা ব্যবহার থেকে বিরত হবো না। যেমনটি ইমাম উসমান ইবন সা‘ঈদ আদ-দারেমী বলেছেন। দেখুন, নাক্বদ্বুদ দারেমী আলা বিশর আল-মিররীসী পৃ. ২২৩-২২৪। অনুরূপ মাজমূ‘ ফাতাওয়া ও রাসায়িলি ইবন উসাইমীন ৭/১৯৩।

আর যারা হদ্দ বা সীমা সাব্যস্ত করেননি, তাদের মধ্যে রয়েছেন,

১. ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল। হাম্বল ও ইসহাকের বর্ণনায়।
২. ইমাম ত্বাহাউই।
৩. ইমাম আবু সুলাইমান আল-খাত্তাবী।
৪. ইমাম আবু নসর আস-সাজযী।

তবে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহান আল্লাহকে জ্ঞান ও আয়ত্ত্ব করতে অসমর্থ হওয়া। তাঁকে কারও জ্ঞান ও চোখ কোনোভাবেই আয়ত্ত্ব করতে পারবে না।

তাছাড়া তাঁর গুণের প্রকৃত স্বরূপও কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। এটা সৃষ্টির পক্ষে অসম্ভব বিষয়।
অনুরূপভাবে কেউ যেন রাব্বুল আলামীনের আকার-আকৃতি নির্ধারণ না করে বসে।

উপরোক্ত তিনটি কারণে তারা হদ্দ সাব্যস্ত করতে নিষেধ করে থাকেন।

কিন্তু জাহমিয়্যাহ ও তাদের অনুসারীরা হদ্দ শব্দটি ব্যবহার করতে নিষেধ করার মাধ্যমে কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে। যা পুরোপুরিই বাতিল:

এক. স্রষ্টাকে সৃষ্টি থেকে আলাদা না করা।
দুই. স্রষ্টাকে জগতের ভেতরেও নয় বাইরেও নয় এটা সাব্যস্ত করা।
তিন. স্রষ্টার আরশের উপর উঠাকে অস্বীকার করা।
চার. স্রষ্টা কর্তৃক নিকটতম আসমানে নেমে আসাকে অস্বীকার করা।
পাঁচ. স্রষ্টা কর্তৃক হাশরের মাঠে আগমনকে অস্বীকার করা।
ছয়. স্রষ্টাকে আখেরাতে দেখতে পাওয়া অস্বীকার করা। ইত্যাদি।

এসবই বাতিলপন্থীদের শব্দের অসৎ ব্যবহার। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন।

সুতরাং কেউ যদি হদ্দ শব্দটি আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা যাবে কি না তা জিজ্ঞেস করে তাকে প্রশ্ন করা হবে, তার কাছে হদ্দ শব্দটির অর্থ কী? তার ব্যক্ত করা অর্থ অনুযায়ী তাকে জবাব দেয়া হবে। সুতরাং এক কথায় উত্তর চলবে না।

বিস্তারিত দেখা যেতে পারে,
১. রাদ্দু ইমাম আদ-দারেমী আলা বিশর আল-মিররীসী পৃ. ২৩।
২. ইবন তাইমিয়্যাহ, নাক্বদুত তা’সীস ১/৪২৬-৪৪৬; ২/১৭০-১৭২।
৩. ইবনুল কাইয়্যেম, মুখতাসারুস সাওয়া‘য়িক ১/১৭৩।
৪. ইবন আবিল ইয্য আল-হানাফী, শারহুল আকীদাহ আত-ত্বাহাওয়িয়্যাহ ১/২৬৩।



- ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া حفظه الله​
 
Last edited by a moderator:

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
688
Comments
1,213
Solutions
17
Reactions
6,600
Credits
5,406
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।
জাযাকাল্লাহু খাইরান
 

Abu Yousuf Raiyan Salafi

Salafi

Salafi User
Threads
0
Comments
1
Reactions
3
Credits
1
প্রথমেই আমাদেরকে কিছু বিষয় খোলাসা করতে হবে, তা হচ্ছে:

১. হদ্দ আল্লাহর কোনো সিফাত বা গুণ নয়।
২. হদ্দ শব্দটি সালাফগণের কেউই আল্লাহর জন্য ব্যবহার করেননি।
৩. হদ্দ শব্দটি কুরআন ও সুন্নাহর কোথাও সাব্যস্ত করা হয়নি, আবার অসাব্যস্তও করা হয়নি।
৪. মতভেদটি হচ্ছে, আল্লাহর জন্য ‘হদ্দ’ বা সীমা শব্দ ব্যবহার করা যাবে কি না? এটা দিয়ে আল্লাহর সম্পর্কে কোনো সংবাদ দেয়া যাবে কি না?

তাই সঠিক কথা হচ্ছে, ‘হদ’ বা ‘সীমাবদ্ধ’ এ শব্দটি একটি ‘মুজমাল’ বা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ সংক্ষিপ্ত শব্দ। কখনও কখনও তা দ্বারা বিশুদ্ধ অর্থ গ্রহণ করা যায়, আবার তা দ্বারা বাতিল অর্থও গ্রহন করা যায়। এজন্য ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ থেকে এটা বলা সাব্যস্ত হওয়াও প্রমাণিত, আবার অসাব্যস্ত হওয়াও প্রমাণিত। আর জাহমিয়্যারা সর্বদা বলে ‘তার কোনো সীমা’ নেই। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এটা অস্বীকার করা যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক’, আল্লাহ তা‘আলা জগতের উপরে। কারণ তাদের মতে এটা বললে তাঁর জন্য হদ্দ বা সীমা নির্ধারণ হয়ে যায়।

হদ্দ শব্দটি ব্যবহারের কারণ হচ্ছে জাহমিয়া ও মু‘আত্তিলা সম্প্রদায় আল্লাহর জন্য সর্বোর্ধ্ব থাকার গুণটি অস্বীকার করলো, তখন কোনো কোনো আহলুস সুন্নাত সে উর্ধ্ব ও উপরকে বুঝানোর জন্য ‘দিক’ শব্দটি ব্যবহার করে। অনুরূপভাবে যখন জাহমিয়ারা আল্লাহ ও তার সৃষ্টির মাঝে পার্থক্য করা অস্বীকার করলো, তখন কোনো কোনো আহলুস সুন্নাত সে পার্থক্য করার জন্য ‘হদ্দ’ শব্দটি ব্যবহার করে।

এজন্য শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, “এ শব্দটি দিয়ে আমরা কুরআন ও সুন্নায় না আসা অতিরিক্ত কোনো গুণ সাব্যস্ত করছি না, বরং এর দ্বারা মহান আল্লাহর অস্তিত্বকে সৃষ্টির সাথে মিশিয়ে দেয়ার যে অপচেষ্টা বাতিলপন্থী, আল্লাহর সিফাত অস্বীকারকারী গোষ্ঠীর লোকেরা করেছে আমরা সেটাকে খণ্ডন করে মহান আল্লাহর আলাদা অস্তিত্ব সাব্যস্ত করাকে বুঝিয়েছি। [ইবন তাইমিয়া, বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৩/৪৮]

সালাফদের মধ্যে যারা হদ্দ বা সীমা সাব্যস্ত করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন,

১. ইমাম উসমান ইবন সা‘ঈদ আদ-দারেমী।
২. ইমাম ইবনুল মুবারক। [বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ১/৪৪৩]
৩. ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল।
৪. ইমাম ইসহাক্ব ইবন রাহওয়াইহি
৫. ইমাম আবুল হাসান আদ-দিশতী।
৬. ইয়াহইয়া ইবন ‘আম্মার আস-সিজিস্তানী। প্রমুখ।

তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার এমন সীমা আছে যার দ্বারা সৃষ্টিকুল থেকে আলাদা। তাঁর মাঝে ও সৃষ্টিকুলের মাঝে ভিন্নতা ও পৃথকতা রয়েছে। তিনি সৃষ্টিকুলের সাথে মিলে মিশে নেই। বরং তাঁর কাছে নির্দেশ উঠে ও তাঁর থেকে নাযিল হয়। আর তাঁর জন্য আগমন করা ও আসা বিশুদ্ধ ইত্যাদি গুণাবলী, যা আল্লাহ ও বান্দার মাঝে পৃথকতা সাব্যস্ত করছে। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এ হিসাবে হদ্দ বা সীমা হচ্ছে, এমন কিছু গুণাবলী ও পরিমাণ সাব্যস্ত করা, যা দিয়ে অন্য বস্তু থেকে আলাদা হওয়া প্রমাণিত হবে। বস্তুত কুরআন ও সুন্নাহ এটার উপর প্রমাণবহ যে, আল্লাহ তা‘আলার এমন হদ্দ বা সীমা রয়েছে যার মাধ্যমে তিনি সৃষ্টিকুল থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং তিনি সকল মুহদাস বা নতুন কিছু থেকে পৃথক গুণে গুণান্বিত। তাহলে এ অর্থে আল্লাহর জন্য হদ্দ সাব্যস্ত করা অবশ্যই বিশুদ্ধ।

তাছাড়া, আরেকটি অর্থেও হদ্দ সাব্যস্ত করা বিশুদ্ধ; তা হচ্ছে, আল্লাহর নিজের যাত ও সিফাত সংক্রান্ত বিষয়। তাঁর অবশ্যই সীমা রয়েছে, কিন্তু তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না। এ হিসাবেও হদ্দ সাব্যস্ত করা না জায়েয হবে না। যেমনটি ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর দারউত তা‘আরুদ্ব ও বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ গ্রন্থদ্বয়ে সাব্যস্ত করেছেন।

অনুরূপভাবে স্থান হিসাবেও হদ্দ সাব্যস্ত করা যাবে। কারণ আল্লাহ জানিয়েছেন যে, তিনি আরশের উপর রয়েছেন। আর আরশ অবশ্যই একটি স্থান। সুতরাং জাহমিয়ারা সেটা অস্বীকার করার জন্য হদ্দ বা মাকান ব্যবহারের দোষ তুলে ধরলেও আমরা তা ব্যবহার থেকে বিরত হবো না। যেমনটি ইমাম উসমান ইবন সা‘ঈদ আদ-দারেমী বলেছেন। দেখুন, নাক্বদ্বুদ দারেমী আলা বিশর আল-মিররীসী পৃ. ২২৩-২২৪। অনুরূপ মাজমূ‘ ফাতাওয়া ও রাসায়িলি ইবন উসাইমীন ৭/১৯৩।

আর যারা হদ্দ বা সীমা সাব্যস্ত করেননি, তাদের মধ্যে রয়েছেন,

১. ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল। হাম্বল ও ইসহাকের বর্ণনায়।
২. ইমাম ত্বাহাউই।
৩. ইমাম আবু সুলাইমান আল-খাত্তাবী।
৪. ইমাম আবু নসর আস-সাজযী।

তবে তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহান আল্লাহকে জ্ঞান ও আয়ত্ত্ব করতে অসমর্থ হওয়া। তাঁকে কারও জ্ঞান ও চোখ কোনোভাবেই আয়ত্ত্ব করতে পারবে না।

তাছাড়া তাঁর গুণের প্রকৃত স্বরূপও কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। এটা সৃষ্টির পক্ষে অসম্ভব বিষয়।
অনুরূপভাবে কেউ যেন রাব্বুল আলামীনের আকার-আকৃতি নির্ধারণ না করে বসে।

উপরোক্ত তিনটি কারণে তারা হদ্দ সাব্যস্ত করতে নিষেধ করে থাকেন।

কিন্তু জাহমিয়্যাহ ও তাদের অনুসারীরা হদ্দ শব্দটি ব্যবহার করতে নিষেধ করার মাধ্যমে কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে। যা পুরোপুরিই বাতিল:

এক. স্রষ্টাকে সৃষ্টি থেকে আলাদা না করা।
দুই. স্রষ্টাকে জগতের ভেতরেও নয় বাইরেও নয় এটা সাব্যস্ত করা।
তিন. স্রষ্টার আরশের উপর উঠাকে অস্বীকার করা।
চার. স্রষ্টা কর্তৃক নিকটতম আসমানে নেমে আসাকে অস্বীকার করা।
পাঁচ. স্রষ্টা কর্তৃক হাশরের মাঠে আগমনকে অস্বীকার করা।
ছয়. স্রষ্টাকে আখেরাতে দেখতে পাওয়া অস্বীকার করা। ইত্যাদি।

এসবই বাতিলপন্থীদের শব্দের অসৎ ব্যবহার। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন।

সুতরাং কেউ যদি হদ্দ শব্দটি আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা যাবে কি না তা জিজ্ঞেস করে তাকে প্রশ্ন করা হবে, তার কাছে হদ্দ শব্দটির অর্থ কী? তার ব্যক্ত করা অর্থ অনুযায়ী তাকে জবাব দেয়া হবে। সুতরাং এক কথায় উত্তর চলবে না।

বিস্তারিত দেখা যেতে পারে,
১. রাদ্দু ইমাম আদ-দারেমী আলা বিশর আল-মিররীসী পৃ. ২৩।
২. ইবন তাইমিয়্যাহ, নাক্বদুত তা’সীস ১/৪২৬-৪৪৬; ২/১৭০-১৭২।
৩. ইবনুল কাইয়্যেম, মুখতাসারুস সাওয়া‘য়িক ১/১৭৩।
৪. ইবন আবিল ইয্য আল-হানাফী, শারহুল আকীদাহ আত-ত্বাহাওয়িয়্যাহ ১/২৬৩।



- ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া حفظه الله​
Mohammad ShafinJazakallah Khairan Ya Fadhilatus Shaykh
 
Top