প্রশ্নোত্তর ‘সেকুলারিজম’ এর আত্মপ্রকাশ

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Joined
Nov 1, 2022
Threads
4,877
Comments
4,360
Solutions
1
Reactions
61,926
খৃস্টীয় পাশ্চাত্য সমাজ একসময় ধর্মীয় দোদুল্যতায় ভূগছিল, যা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের উর্বর ভূমি ও অনুকূল পরিবেশ, তখন সেখানে ধর্মনিরপেক্ষ নামক বিষবৃক্ষটি জন্ম নেয় ও বেড়ে উঠে। ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া প্রসিদ্ধ বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে সর্বপ্রথম ফ্রান্সই ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের উপর রাষ্ট্রীয় কাঠামো দাঁড় করায়। এ মতবাদটি যদিও তার অভ্যন্তরে নাস্তিকতা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে দ্বীনকে দূরে সরিয়ে রাখা, এমনকি দ্বীনের সাথে শত্রুতা-বিদ্বেষ ও দ্বীন বিরোধিতা ইত্যাদি মারাত্মক চিন্তাধারা ও কর্মকাণ্ড লালন করত, তারপরও তখনকার সমাজে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের আত্মপ্রকাশ ও তার অনুশীলন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অদ্ভুত ছিল না, কারণ; প্রথমত: সে-সময় তাদের ঈসায়ী দ্বীন আল্লাহর নিখাদ ওহী ভিত্তিক ছিল না, যা আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল ঈসা ইবনে মারয়াম ‘আলাইহিস সালামের নিকট প্রেরণ করেছেন, বরং তাতে বিকৃতি ও মিথ্যার হাত অন্যায় হস্তক্ষেপ করেছিল, তাই তাদের দ্বীন ছিল বিকৃত, পরিবর্তিত, বর্ধিত ও হ্রাসকৃত, যা মানব কল্যাণের বিপরীত অবস্থান নিয়েছিল। এখানেই শেষ নয়, বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সাথেও তা ছিল সাংঘর্ষিক। সে-সময় ধর্মীয় দায়িত্ব আঞ্জাম দানকারী গির্জাগুলো তাদের সন্ন্যাসী ও সংসারবিরাগীদের বিকৃতি ও পরিবর্তনকে শুধু সমর্থন নয়, দ্বীন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল, যা পালন করা ও যার উপর অটল থাকা তখন প্রত্যেকের উপর ফরয ছিল। বৈজ্ঞানিক ও গবেষকদের বিরুদ্ধে গির্জায় অভিযোগ করা হয়, ফলে গির্জা তাদেরকে শাস্তি দেয়, কারণ তারা বিকৃত দ্বীনের বিপরীত আবিষ্কার করেছে, তাদেরকে যিন্দিক ও নাস্তিক বলে অপবাদ দেয়, অতঃপর তাদের অনেককে করা হয়েছে হত্যা, আবার অনেককে দেওয়া হয়েছে জ্বালিয়ে এবং তাদের বহুসংখ্যককে করা হয়েছে জেলে বন্দি। দ্বিতীয়ত -খৃস্টানদের ধর্মীয় মুখপাত্র- গির্জাগুলো অত্যাচারী বাদশাহদের সাথে অনৈতিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, তাদেরকে পবিত্র ও নিষ্পাপ সত্ত্বা হিসেবে আখ্যায়িত করে। তারা প্রজাদের উপর যে জুলম ও অত্যাচার করত, গির্জাগুলো সেগুলোর বৈধতা প্রদান করত। তাদের বিশ্বাস ছিল, এটাই প্রকৃত ধর্ম, যার শরণাপন্ন হওয়া ও যার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা সবার জন্য জরুরি। তাই মানুষ গির্জার জেলখানা ও তার অত্যাচার থেকে নিষ্কৃতির উপায় খুঁজে। তখন খৃস্টীয় দ্বীন থেকে বের হওয়া, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা, জীবন-ঘনিষ্ঠ সকল বিষয় যেমন রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও আদর্শ ইত্যাদি থেকে তাকে দূরে রাখা, বরং বিতাড়িত করা ব্যতীত মুক্তির কোনো উপায় ছিল না, কারণ তা জালেমদের পক্ষাবলম্বন ও বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। হায়! তাদের জন্য কতই না ভালো হত, যদি তারা সেই বিকৃত খৃস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করত, কিন্তু তারা সে বিকৃত খৃস্টান ধর্মের উপর বিরক্ত হয়ে সকল দ্বীনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ আত্মপ্রকাশ করে। খৃস্টীয় পাশ্চাত্য সমাজে এ জাতীয় ঘটনার আত্মপ্রকাশ আশ্চর্য কোনো বিষয় নয়, তবে ইসলামে তার কোনো সুযোগ নেই, বরং কল্পনা করাও অসম্ভব। কারণ ইসলামে রয়েছে আল্লাহর ওহী, যার অগ্র-পশ্চাৎ কোনো দিক থেকে বাতিল অনুপ্রবেশ করতে পারে না। এ দ্বীন বিকৃতি ও পরিবর্তন মুক্ত, তাতে কোনো বিষয় বৃদ্ধি কিংবা হ্রাস করা সম্ভব নয়, সে কাউকে পরোয়া করে না, হোক সে রাজা কিংবা প্রজা। সবাই তার শরীয়তের সামনে সমান। এ দ্বীন মানুষের প্রকৃত স্বার্থ সংরক্ষণকারী, এতে একটি বিধান নেই যা তাদের স্বার্থ পরিপন্থী। এ দ্বীন (ইসলাম) জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহ প্রদান করে। এতে প্রমাণিত এমন কোনো বিষয় নেই, যা বিজ্ঞানের প্রমাণিত বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক। অতএব দ্বীনে ইসলাম পুরোটাই সত্য, পুরো দ্বীনই কল্যাণ, পুরো দ্বীনই ন্যায় ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ থেকে আমরা বলতে পারি, পাশ্চাত্য সমাজে দ্বীনের প্রতি বিদ্বেষ ও অনীহা থেকে যে চিন্তা ও মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে, ইসলামী দেশে কখনো তা প্রকাশ পেত না, বরং মুসলিম দেশের কেউ তা শ্রবণও করত না, যদি না থাকত সংঘবদ্ধ স্নায়ুযুদ্ধ, যা ইসলামের নিষ্ক্রিয় ও নিষ্প্রভ হালতে ঈমান-শূন্য কতক অন্তর ও সুস্থ চিন্তা-শূন্য কিছু বিবেককে শিকার করতে সক্ষম হয়েছে। মুসলিম দেশে বসবাসকারী খৃস্টানরাও বিভিন্ন মিডিয়া ও প্রচার-যন্ত্রের সাহায্যে সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) মতবাদ আমদানি ও প্রসারের ক্ষেত্রে কম-যায়নি, তাদেরও রয়েছে বড় ভূমিকা ও ক্ষতিকর প্রভাব। অনুরূপ সেকুলারিজম প্রচারের ক্ষেত্রে মুসলিম শিক্ষানবিশরাও ভূমিকা রেখেছে প্রচুর, যারা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের জন্য পাশ্চাত্য দেশসমূহে গিয়েছিল। সেখানে তারা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ও তার আবিষ্কার দেখে ফেতনায় পতিত হয়, অতঃপর সে সকল দেশের প্রচলিত প্রথা, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আচার-আচরণ বাস্তবায়ন ও প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে নিজ দেশে ফিরে আসে। অতঃপর এক শ্রেণির লোক সে সব (বিদেশ ফেরৎ তথাকথিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধ্বজাধারী) লোকদের পেশ করা এ সব তথ্য ও নীতিগুলো গ্রহণযোগ্য হিসেবে লুফে নেয়, তাদের ধারণা এরাই উপকারী জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারক-বাহক ও সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। বস্তুত এসব বিদেশ ফেরৎ লোকদের দেখা অভ্যাস, প্রথা ও পদ্ধতি যেগুলো তারা খুব বড় ও মহত চিন্তাধারা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে তা এমন সমাজের-যার সাথে দ্বীনের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। এ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে আমরা মুসলিম দেশে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের অনুপ্রবেশ সম্পর্কে জানতে পারলাম, যা আমাদেরকে আরো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করে: এক. মুসলিম দেশে বাসকারী খৃস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা আমাদের জন্য ক্ষতিকর, তারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই তাদের সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, আল্লাহ তাদেরকে যে স্থানে রাখতে বলেছেন আমরা তাদেরকে সেখানেই রাখব। তাদেরকে মুসলিম দেশে সামান্যতম কর্তৃত্ব ও পরামর্শ প্রদানের সুযোগ দেব না। সকল মিডিয়া, প্রচারযন্ত্র ও গণমাধ্যমগুলোর দরজা তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য উন্মুক্ত করে রাখব না, বরং বন্ধ করে রাখব, যেন তারা মুসলিমদের মাঝে তাদের বিষ ছড়ানোর সুযোগ না পায়। কিন্তু এ কাজ করবে কে! অধিকন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান সেকুলারিজমের বিষ ছড়ানোর জন্য তাদেরকে বিভিন্ন পদ ও পদবী দিয়ে রেখেছে! আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট, তিনিই আমাদের অভিভাবক। দুই. শিক্ষানবিশদের বহির্বিশ্বে পাঠানোর ঝুঁকিও অনেক। তার পরিণতি ভয়াবহ। অনেক মুসলিম সন্তান এমন চেহারা ও অন্তর নিয়ে সেখান থেকে এসেছে যা নিয়ে সে সেখানে যায়নি। অতএব বস্তুগত জ্ঞান-বিজ্ঞানের জন্য সেখানে যাওয়া যখন ঝুঁকিপূর্ণ, তখন দ্বীনি ইলম শিখার জন্য সেখানে যাওয়া কিভাবে নিরাপদ, বিশেষ করে আরবি কিংবা ইসলামী বিষয়াদি শেখার জন্য?! আরবি কি আমাদের মুসলিমদের ভাষা, নাকি তাদের ভাষা?! কুরআনুল কারিম নাযিল হয়েছে আমাদের ভাষায়, না তাদের ভাষায়?[1]! এটা কি কখনো সম্ভব বা যুক্তি সঙ্গত যে, একজন মুসলিম ইসলামের সঠিক জ্ঞান ও শরীয়তের বিদ্যার্জন করবে এমন লোকদের থেকে, যারা কট্টর কাফের, ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণকারী?!
[1] লেখক আরাবি ভাষাভাষি, তার দেশের অনেক ছাত্র আরবি ভাষা শেখা ও তার উপর ডক্টরেট হাসিল করার জন্য অমুসলিম দেশে যায়, তাদের নিরুৎসাহিত করে তিনি এ কথা বলছেন। লেখকের সাথে সুর মিলিয়ে আমরাও আমাদের সন্তানদেরকে দ্বীনে ইসলাম শেখার জন্য সেখানে পাঠানোর ব্যাপারে সাবধান করতে পারি। সূত্র: ইসলামহাউজ.কম।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top