ভ্রান্তি নিরসন ‘প্রত্যেক বিষয় আমরা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি’

Abu Umar

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Joined
Nov 25, 2022
Threads
665
Comments
1,233
Solutions
17
Reactions
7,655
প্রশ্ন ২: জনাব! আহলে কুরআন (অর্থাৎ যারা কেবল কুরআন মানার দাবী করে, হাদীস মানে না) যুক্তি দেয় যে, আল্লাহ বলেছেন, وَكُلَّ شَىْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيْلاً ‘প্রত্যেক বিষয় আমরা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি’ (ইসরা ১৭/১২)। তিনি আরও বলেন, وَمَا فَرَّطْنَا فِى الْكِتَابِ مِنْ شَيْئٍ ‘আমরা এই কিতাবে কোন কিছুই লিখতে ছাড়িনি’ (আন‘আম ৬/৩৮)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِنَّ هذا القرآنَ طَرفُه بيد اللهِ وطرفُه بِأَيدِيْكم، فَتَمَسَّكُوْا بِهِ، فَإِنَّكُمْ لَنْ تَضِلُّوا وَلَنْ تَهْلِكُوْا بَعْدَهُ أَبَدًا- আঁকড়ে ধর। কেননা তোমরা এরপরে আর পথভ্রষ্ট হবে না এবং কখনোই ধ্বংস হবে না’।[1] আপনার পর্যালোচনা কামনা করছি।

উত্তর: প্রথমতঃ وَمَا فَرَّطْنَا فِى الْكِتَابِ مِنْ شَيْئٍ ‘আমরা এই কিতাবে কোন কিছুই লিখতে ছাড়িনি’ এখানে ‘এই কিতাবে’ অর্থ ‘লওহে মাহফূয’ (اللوح المحفوظ)। কুরআনুল কারীম নয়। অতঃপর وَكُلَّ شَىْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيْلاً ‘প্রত্যেক বিষয় আমরা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি’- যখন আপনারা এটাকে কুরআনের সঙ্গে যুক্ত করবেন, যার বর্ণনা পূর্বে চলে গেছে (অর্থাৎ আহলে কুরআন হওয়ার দাবী), তখন এর পূর্ণ অর্থ হবে এই যে, আল্লাহ প্রত্যেক বিষয় খোলাছা করে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে অন্য সংযুক্তি সহকারে। কেননা আপনারা জানেন যে, ব্যাখ্যা অনেক সময় ‘সংক্ষিপ্ত’ (بالإجمال) হয়ে থাকে সাধারণ মূলনীতি সমূহ নির্ধারণের মাধ্যমে। যার অধীনে বহু শাখা-প্রশাখা থাকে, যা গণনা করে শেষ করা যায় না। বিজ্ঞ শরী‘আত প্রণেতার পক্ষ হ’তে ঐসব শাখা-প্রশাখার জন্য স্পষ্ট মূলনীতি সমূহ দান করায় কুরআনের আয়াতের মর্ম প্রকাশিত হয়েছে। অতঃপর ব্যাখ্যা অনেক সময় ‘বিস্তারিত’ (بالتفصيل) হয়। আলোচ্য আয়াতের এরূপ অর্থের দিকেই মস্তিষ্ক দ্রুত ধাবিত হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,مَا تَرَكْتُ شَيْئًا مِمَّا أَمَرَكُمُ اللهُ بِهِ إِلاَّ وَقَدْ أَمَرْتُكُمْ بِهِ وَلاَتَرَكْتُ شَيْئًا مِمَّا نَهَاكُمُ اللهُ عَنْهُ إِلاَّ وَقَدْ نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ- ছাড়িনি এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যা কিছু নিষেধ করেছেন, তার কোন কিছুই আমি তোমাদের নিষেধ করতে ছাড়িনি’।[2]

এক্ষণে ‘বিস্তারিত’ কখনো মূলনীতি সমূহের মাধ্যমে হয়, যার অধীনে বহু শাখা-প্রশাখা থাকে এবং কখনো ইবাদাত ও আহকামের খুঁটিনাটি বর্ণনার মাধ্যমে হয়। যাতে কোন মূলনীতির দিকে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এক্ষণে যেসব মূলনীতির অধীনে বহু শাখা-প্রশাখা রয়েছে, যার মাধ্যমে ইসলামের বিরাটত্ব ও বিধান রচনার গন্ডির ব্যাপকতা স্পষ্ট হয়, সেইসব ‘সংক্ষিপ্ত মূলনীতির’ (القواعد الإجمالية) কয়েকটি দৃষ্টান্ত স্বরূপ পেশ করা হ’ল। যেমন-

(১) لاضَررَ ولاضِرَارَ ‘ক্ষতি নয়, ক্ষতি করা নয়।[3]

(২) كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وكُلُّ خَمْرٍ حَرَامٌ ‘প্রত্যেক মাদক বস্ত্ত মদ এবং প্রত্যেক মদ হারাম’।[4]

(৩) كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ ‘প্রত্যেক বিদ‘আত ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’।[5]

এই সকল মূলনীতি কোন কিছুকে ছেড়ে দেয়নি। যেমন প্রথমটি ব্যক্তিগত ক্ষতি এবং আর্থিক ক্ষতি সবকিছুকে শামিল করে। দ্বিতীয়টি মাদকতা সংশ্লিষ্ট সবকিছুকে শামিল করে। চাই সে মাদক আঙ্গুর থেকে হউক- যা খুবই প্রসিদ্ধ, চাই গম বা অন্য কোন উপাদান থেকে তৈরী হৌক। যতক্ষণ তা মাদক থাকবে, ততক্ষণ তা হারাম থাকবে। অনুরূপভাবে তৃতীয় মূলনীতিটি এত বেশী সংখ্যক বিদ‘আতকে শামিল করে, যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। তবুও খুবই সংক্ষিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও হাদীসটি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে যে, ‘প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম’। এটা হ’ল বিস্তারিত ব্যাখ্যা। কিন্তু সেটা এসেছে মূলনীতি আকারে। অতঃপর বিস্তারিত বিধান সমূহ, যা আপনারা জানেন, যার অধিকাংশ হাদীসে একটি একটি করে উল্লেখিত হয়েছে এবং কখনো কুরআনেও বর্ণিত হয়েছে। যেমন উত্তরাধিকার বণ্টন নীতিমালা (নিসা ৪/১১-১২)।

অতঃপর প্রশ্নে যে হাদীসটির কথা বলা হয়েছে, হাদীসটি সহীহ। তার উপরে আমাদের সাধ্যমত আমল করা উচিত। একই মর্মে আরেকটি হাদীস এসেছে, যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا، كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ رَسُوْلِهِ، ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত ছেড়ে যাচ্ছি। কখনোই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, যতদিন এ দু’টি বস্ত্তকে তোমরা আঁকড়ে ধরে থাকবে। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ’।[6] এক্ষণে আল্লাহর রজ্জু ধারণ- যা আমাদের হাতে রয়েছে- তা হ’ল সুন্নাহর উপরে আমল করা, যা কুরআনুল কারীমের বিস্তারিত ব্যাখ্যাকারী।


মূল: মুহাম্মাদ নাছেরুদ্দীন আলবানী (রাহি.)
অনুবাদ: মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব​



[1]. সহীহ তারগীব ১/৯৩/৩৫; ত্বাবারাণী, সহীহ ইবনু হিববান।
[2]. ইবনু খুযায়মাহ, হা/১০০; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৮০৩।
[3]. মুওয়াত্ত্বা, ইবনু মাজাহ, সহীহুল জামে‘ হা/৭৫১৭।
[4]. আবুদাউদ হা/৩৬৭৯; ইরওয়াউল গালীল ৮/৪০/২৩৭৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৩৮।
[5]. সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/৯২/৩৪; আলবানী, ছালাতুত তারাবীহ পৃঃ ৭৫; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১; নাসাঈ হা/১৫৭৯।
[6]. মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৮৬।
 
Back
Top