১২৮৪ হিজরির পূর্বে ৮ রাকাত তারাবী পড়া হয়নি মর্মে করা আরিফ বিন হাবিব এর দাবির জবাব

Joined
Jun 16, 2023
Threads
70
Comments
97
Reactions
1,076
১২৮৪ হিজরি তথা ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দের আগে কোথাও ৮ রাকাত তারাবী পড়া হয়নি?

গরিবের মুহাদ্দিস আরিফ বিন হাবিব দাবি করেছেন যে, ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দের আগে নাকি কোথাও তারাবি ৮ রাকাত পড়া হতো না। তার এই দাবির বিপক্ষে দেওবন্দের বই থেকে দলিল দিচ্ছি:

দেওবন্দের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রশিদ আহমেদ গাঙ্গুহীর জন্ম ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে আর মৃত্যু ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে। তার জীবনকালেই আট রাকাত তারাবীহ পড়ার প্রচলন ছিল। যা প্রমাণ করে ১৮৬৭ এর আগে আট রাকাত তারাবী প্রচলিত ছিল। যেমন তার ফতোয়ার বইয়ে এসেছে যে একজন তাকে আট রাকাত তারাবী নিয়ে প্রশ্ন করে বলেছে যে কিছু মানুষ ৮ রাকাত তারাবী পড়ছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় ১৮৬৭ সনের আগেই আহলুল হাদিসগণ ভারতে ৮ রাকাত তারাবী আদায় করে আসছেন -

প্রশ্ন: আট রাকাত তারাবী পড়া উত্তম নাকি নয়, যেমনটা কিছু মানুষ পড়ছে?

রাশিদ আহমেদ গাঙ্গুহির জবাব: যারা আট রাকাত পড়ছে তারা ফযিলতপূর্ণ সুন্নাত ত্যাগকারী। আল্লাহ ভালো জানেন।

جونماز تراویح کی آٹھ رکعت پڑھے

(سوال) آٹھ رکعت تراویح پڑھنا درست ہے یا نہیں جیسا کہ بعض آدمی پڑھتے ہیں۔
(جواب) جو لوگ آٹھ رکعت پڑھتے ہیں وہ تارک فضیلت سنت ہیں۔ فقط واللہ تعالیٰ اعلم ۔

فتاویٰ رشیدیہ صفحہ نمبر 392

ফাতাওয়ায়ে রাশিদীয়া, পৃষ্ঠা ৩৯২, স্ক্যান কপি কমেন্টে দ্রষ্টব্য

দেওবন্দের হুজ্জাতুল ইসলাম উপাধিতে পরিচিত কাসিম নানাতূবী (১৮৩২-১৮৮০ খ্রি:) কে তার ছাত্র সৈয়দ আহমদ হাসান আমরুহী ১২৮৮ হিজরি তথা ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে একটি চিঠি লিখে পাঠান। চিঠি লেখার কারণ ছিল তৎকালীন সময় আট রাকাত তারাবী পড়া প্রচলিত ছিল এবং বিশ রাকাত তারাবীকে অনেকে বিদআত বলছিল। তাই ছাত্রের সেই চিঠির জবাবে কাসিম নানাতূবী তারাবীহ নিয়ে বই লিখেছেন। তার বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন:

১২৮৮ হিজরি নববি সালে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আ'লিহি আফদালুস সালাতু ওয়াস সালাম) আমার প্রিয় গুণগ্রাহী, সৈয়দ বংশের সন্তান মৌলভী সৈয়দ আহমদ হাসান আমরুহী, যিনি আমার সাথে সনদের দিক থেকে সম্পৃক্ত , তিনি আমাকে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। এ চিঠির মূল উদ্দেশ্য ছিল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মধ্যে প্রচলিত বিশ রাকাত তারাবিহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা যে, এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা নাকি মুস্তাহাব। এ প্রশ্নের পেছনে কারণ হলো, বর্তমান সময়ে চারদিকে এমন হৈচৈ ও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে যে, বিশ রাকাতের মাসনূনিয়াত (সুন্নত হিসেবে স্বীকৃতি) প্রমাণিত নয়। এমনকি নববি সুন্নতের অনুসরণে আগ্রহী অনেকেই বিতর ব্যতীত বারো রাকাতের পরিবর্তে আট রাকাত আদায় করতে শুরু করেছেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিশ রাকাতকে বিদআত বলার পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। কেউ কেউ সরাসরি এ কথা প্রকাশ্যে বলে দিচ্ছেন, আবার কেউবা ইশারা-ইঙ্গিত ও গোপনীয়তার সহিত লুকিয়ে লুকিয়ে এ মত প্রকাশ করছেন।

سن بارہ سو اٹھاسی ہجری نبوی علیہ وعلی آلہ افضل صلوۃ و سلام میں میرے عزیز مجموعہ کمالات سلالہ سادات مولوی سید احمد حسن امروہی نے جو کہ راقم کے ساتھ تعلق استناد رکھتے ہیں ایک خط بھیجا جس سے مقصود بیس رکعت تراویح کے بارے میں جو اہل سنت والجماعۃ میں مرد ج
و معمول ہیں یہ دریافت کرنا تھا کہ یہ سنت مؤکدہ ہیں یا مستحب ۔ اور باعث اس استفسار کا وہ شور و غوغا ہے جو اس زمانہ میں اُن بیس رکعات کی مسنونیت ثابت نہ ہونے کے بارے میں چاروں طرف سے بلند ہو رہا ہے ۔ یہاں تک کہ اتباع سنت نبوی صلی اللہ علیہ وسلم کے بہت سے شائقین نے ہمیں رکھات میں بارہ رکعات سوائے وتر کم کر کے آٹھ رکعات کی طرح ڈالدی، بلکہ رفتہ رفتہ نوبت یہاں تک پہنچ گئی کہ بیس رکعات کے بدعت ہونے تک بات
بڑھ گئی۔ بعضوں نے صاف صاف کہ دیا اور بعضوں نے چھپے ہوئے راز کے طور پر اشارے اور کنایہ کے پردے میں چھپا لیا ۔

আনওয়ারুত তারাউয়ী ফী তাওদীহি মিসবাহিত তারাউয়ী, পৃষ্ঠা নং ৩০.



আশরাফ আলী থানভী এর নিকট দিল্লি থেকে একজন এসে জিজ্ঞাসা করেন তারাবী আট নাকি বিশ রাকাত, থানভী এটাও উল্লেখ্য করেছেন যে উক্ত প্রশ্নকারী নিজেকে হাদিসের অনুসারী তথা আহলে হাদিস বলে দাবি করতো:

দিল্লি থেকে এক নব্য মুজতাহিদ সাহেব আট রাকআত তারাবিহের কথা শুনে মাওলানা শেখ মুহাম্মদ সাহেবের নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁর মনে সন্দেহ ছিল যে তারাবিহ আদৌ আট রাকআত নাকি বিশ রাকআত। এই নব্য মুজতাহিদ সাহেব নিজেকে "আমিল বিল হাদিস" (হাদিসের অনুসারী) বলে দাবি করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "জনাব! হাদিসে তো আট রাকআতেরও উল্লেখ রয়েছে, তাহলে কেন তার উপর আমল করেন না? এভাবে আট রাকআতেও আমল করা যেত (অর্থাৎ, বিশ রাকআতের হাদিস ও আট রাকআতের হাদিস - উভয়ের উপরই আমল সম্ভব হতো)।"
মূল যুক্তি: "প্রকৃতপক্ষে, আট রাকআত আদায় করলে তো মানবীয় দিক থেকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। তাহলে আমরা কেন বিশ রাকআত পড়ব?"

আশরাফ আলী থানভির রচিত "তুহফা-ই-রমযান: ফাজায়েল ও মাসায়েল", পৃষ্ঠা ৯৯.

دہلی سے ایک نئے مجتہد صاحب آٹھ رکعت تراویح سن کر مولانا شیخ محمد صاحب کے پاس آئے تھے اور انہیں اس میں شک تھا کہ تراویح آٹھ ہیں یا ہیں۔ یہ نئے مجتہد اپنے کو عامل بالحدیث کہتے ہیں۔ کیوں صاحب! حدیث میں ہمیں بھی تو آئی ہیں ان پر کیوں نہیں عمل کیا؟ تا کہ اس کے ضمن میں آٹھ پر بھی عمل ہو جاتا (یعنی دونوں حدیثوں پر عمل ہو جاتا ہیں والی حدیث پر بھی اور آٹھ والی پر بھی)۔
اصل بات یہ ہے کہ نفس کو سہولت تو آٹھ ہی رکعت میں ہے تو ہمیں کیوں پڑھیں ۔

تحفہ رمضان فضائل ومَسائل , صفحہ نمبر 99

আশরাফ আলী থানভীর জন্ম ১৮৬৩ সালে। তাহলে আট রাকাত তারাবী ১৮৬৭ এর আগে প্রচলিত না হলে দিল্লি থেকে আহলে হাদিস এসে তাকে কীভাবে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো?

উপমহাদেশে প্রখ্যাত আহলে হাদিস বিদ্বান শাইখুল কুল ফিল কুল সাইয়্যেদ মিয়া নাযির হুসাইন মুহাদ্দিস দেহলভী (রাহিমাহুল্লাহ) এর সময়েই আহলে হাদিসগণ নিয়মিত আট রাকার তারাবীহ পড়ে আসছিলেন। যার প্রমাণ হিসেবে তার বই থেকে একটা ফতোয়া উল্লেখ্য করে দিচ্ছি, যেখানে একজন লোক তাকে প্রশ্ন করেছে তৎকালীন সময়ে প্রচলিত আট রাকাত তারাবী প্রসঙ্গে:

দ্বীনের উলামাগণ এই মাসআলায় কী মত রাখেন যে - তারাবী নামাযে রাকাত সংখ্যা রাসূল ﷺ এবং খুলাফায়ে রাশেদীন এর আমল অনুযায়ী কত রাকাত বলে প্রমাণিত আর আমাদের সময়ে কিছু মানুষ আট রাকাত পড়ার উপর সন্তুষ্ট আর কিছু মানুষ বিশ রাকাতের আমলকে অধিক সওয়াব মনে করছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ও তাঁর খুলাফায়ে রাশেদীনের (রা.) আমল ও বক্তব্য কী ছিল— তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করুন।

سوال۔ کیا فرماتے ہیں علمائے دین اس مسئلہ میں کہ کتنی رکعتیں نماز تراویح کی رسول اللہ صلی اللہ وسلم سے ثابت ہیں اور خلفائے راشدین کا کیا عمل رہا ہے اور فی زماننا بعض بعض آٹھ رکعت پر اکتفا کرتے ہیں اور بعض نے نہیں رکعت پر مداومت کرنے کو زیادہ ثواب جانا ہے، افعال و اقوال جو آپ کے اور آپ کے خلفا کے ہوں بیان فرمائیں۔

فتاوٰی نذیریہ جلد 1، صفہ 634

ফতোয়ায়ে নাযির‍্যিয়াহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৬৩৪

সাইয়্যেদ নাযির হুসাইন দেহলভী রাহিমাহুল্লাহ এর জন্ম ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে। উনার ফতোয়ার কিতাবে এসেছে একজন তাকে প্রচলিত ৮ রাকাত আমলকারীদের নিয়ে প্রশ্ন করছেন। এতে প্রমাণিত হয় ঐসময় ৮ ও ২০ উভয়ের উপর আমল ছিল।

ফাতিহে কাদিয়ান মাওলানা সানাউল্লাহ আমৃতসরী (রাহিমাহুল্লাহ) কে একজন প্রশ্ন করে:

আহলে হাদিসদের মসজিদে হানাফি লোকেরাও ইমামের পিছনে নামায পড়ে। হানাফিরা আহলে হাদিস ইমামের পিছনে আট রাকাত তারাবীহ আদায় করে বাকি ১২ রাকাত নিজেদের মাযহাব অনুযায়ী ঐ মসজিদে নিজেরা জামাতের সহিত পড়ে। আহলে হাদিসগণ কি তাদের মানা করতে পারবে?

سوال : اہلحدیث کی مسجد میں حنفی لوگ بھی امام کے ساتھ نماز پڑھتے ہیں احناف لوگ امام اهل الحدیث کے پیچھے آٹھ رکعت تراویح ادا کر کے باقی بارہ رکعت اپنے مذہب کے مطابق امام کے پیچھے اس مسجد میں باجماعت پڑھتے ہیں، کیا اہلحدیث ان کو منع كر سکتے ہیں؟

فتاویٰ ثنائیہ، جلد ١، صفحة ٥٨٦

ফাতাওয়ায়ে সানাউল্লাহ আমৃতসরী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৮৬

এই প্রশ্নকারীর বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে তৎকালীন যুগে তথা ১৮৬৭ সনের পূর্বেই আট রাকাত তারাবী ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত ছিল। কারণ আহলে হাদিস মসজিদে হানাফিগণ আহলে হাদিসদের পেছনে জামাতে ৮ রাকাত আদায় করে বাকি ১২ রাকাত নিজেরা আদায় করতো।

ফাতিহে কাদিয়ান সানাউল্লাহ আমৃতসরী (রাহিমাহুল্লাহ) ১৮৬৮ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তার ফতোয়ার কিতাবে প্রশ্নকারীর মতে তখনই আহলে হাদিসদের আলাদা মসজিদ এবং তাতে ৮ রাকাত তারাবী প্রচলন ছিল। যার মানে দাঁড়ায় ১৮৬৭ সনের পূর্ব থেকেই আহলে হাদিসগণ ভারতীয় উপমহাদেশে আট রাকাত তারাবী পড়ছেন।

এছাড়াও ভারতীয় উপমহাদেশ এবং খালিজ এ ভিন্নধর্মী বিভিন্ন দর্শনাথী এসেছে ইংরেজ আমলে। যাদের বইতেও আট রাকাত তারাবী আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন জন লেউইস তার বই Travels In Arabia তে লিখেছেন:

The Kaaba is opened only three times in
the year: on the 20th of the month of Ramadhan, on the 15th of Zulkade, and on the 10th of Moharram (or Ashour, as the Arabs call it). The opening takes place one hour after sun-rise, when the steps are wheeled up to the gate of the building: as soon as they touch the wall, immense crowds rush upon them, and in a moment fill the whole interior of the Kaaba. The steps are lined by the eunuchs of the mosque, who endeavour in vain to keep order, and whose sticks fall heavy upon those who do not drop a fee into their hands; many of the crowd, however,
are often unmercifully crushed. In the interior every visitor is to pray eight rikats, or make sixteen prostrations;

Travels in arabia by john Lewis, Page No 324.
.

সুতরাং এটা একটা ভুয়া দাবি যে ১২৮৪ হিজরির আগে পৃথিবীর কোথাও আট রাকাত পড়া হয়নি।

লেখা: সাফিন চৌধুরী
Telegram: t.me/ideologyofsalaf
 
Back
Top