সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

হৃদয়কে হিংসামুক্ত রাখার উপায় সমূহ

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
689
Comments
1,221
Solutions
17
Reactions
6,829
Credits
5,490
আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা: হিংসা হ’ল শয়তানী আমল। শয়তান সর্বদা মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। তাই তার হাত থেকে বাঁচার জন্য শয়তানের প্রতি তীব্র ঘৃণা থাকা এবং তার বিরুদ্ধে প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকা আবশ্যক। অতএব যখনই কারু প্রতি হিংসার উদ্রেক হয়, তখনই আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রজীম বলে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবে এবং বাম দিকে তিনবার থুক মারবে।[1] আল্লাহ বলেন,
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
‘অতঃপর শয়তান যখনই তোমাকে কুমন্ত্রণা দেয়, তখনই তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (হামীম সাজদাহ ৪১/৩৬)।

হিংসার বুদ্বুদ হৃদয়ে উত্থিত হওয়ার সাথে সাথে তা মুছে ফেলা এবং অন্যদিকে মন দেওয়া। কেননা এটি মনের মধ্যে গোপনে আসে ও দ্বীনকে শেষ করে দেয়। যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন,
دَبَّ إِلَيْكُمْ دَاءُ الأُمَمِ قَبْلَكُمُ الْحَسَدُ وَالْبَغْضَاءُ هِىَ الْحَالِقَةُ لاَ أَقُولُ تَحْلِقُ الشَّعْرَ وَلَكِنْ تَحْلِقُ الدِّينَ- وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لاَ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَفَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِمَا يُثَبِّتُ ذَاكُمْ لَكُمْ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ
‘তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের রোগ তোমাদের মধ্যে গোপনে প্রবেশ করবে। আর তা হ’ল হিংসা ও বিদ্বেষ, যা সবকিছুর মুন্ডনকারী। আমি বলছি না, চুল মুন্ডনকারী। বরং তা হবে দ্বীনকে মুন্ডনকারী। যার হাতে আমার জীবন তার কসম করে বলছি, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না ঈমান আনবে। আর তোমরা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না পরস্পরকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের খবর দিব না, কোন বস্ত্ত তোমাদের মধ্যে ভালবাসাকে দৃঢ় করবে? তোমরা পরস্পরে বেশী বেশী সালাম কর’।[2] আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
إِيَّاكُمْ وَسُوءَ ذَاتِ الْبَيْنِ فَإِنَّهَا الْحَالِقَةُ- قَالَ أَبُو عِيسَى يَعْنِى الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ
‘তোমরা পারস্পরিক বিদ্বেষের মন্দ হ’তে বেঁচে থাক। কেননা এটি দ্বীনের মুন্ডনকারী’।[3]

তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহ বান্দাকে নে‘মত দেন তাকে পরীক্ষার জন্য। মুমিন এতে খুশী হয় ও শুকরিয়া আদায় করে। সে বিপদে ধৈর্য ধারণ করে এবং এর উত্তম প্রতিদান কামনা করে। কিন্তু কাফির-মুনাফিক এতে ক্রুদ্ধ হয় এবং অন্যকে হিংসা করে। আল্লাহ বলেন,
أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَةَ رَبِّكَ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُم مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُم بَعْضاً سُخْرِيّاً وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
‘তারা কি তোমার প্রতিপালকের রহমত বণ্টন করে? আমরাই পার্থিব জীবনে তাদের জীবিকা বণ্টন করি এবং তাদেরকে একে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নীত করি। যাতে তারা পরস্পরে কাজ নিতে পারে। আর তারা যা জমা করে, তার চাইতে তোমার প্রতিপালকের রহমত অনেক উত্তম’ (যুখরুফ ৪৩/৩২)।

আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলা : যত কষ্টই হৌক বা যত কঠিনই হৌক, আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে নিয়ে হিংসা থেকে নিবৃত্ত হওয়া আবশ্যক। আল্লাহ বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا
‘আমার রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর। আর যা থেকে নিষেধ করেন, তা বর্জন কর’ (হাশর ৫৯/৭)। তিনি আরো বলেন,
وَمَن يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ
‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর সেটাই হ’ল মহা সফলতা’ (নিসা ৪/১৩)। কেননা আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা মেনে নিয়ে তার রহমত লাভ করা পার্থিব সকল কিছুর চাইতে উত্তম। আল্লাহ বলেন,
هُنَالِكَ الْوَلاَيَةُ لِلَّهِ الْحَقِّ هُوَ خَيْرٌ ثَوَاباً وَخَيْرٌ عُقْباً
‘সবকিছুর অভিভাবকত্ব আল্লাহর। যিনি সত্য। পুরস্কার দানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ’ (কাহফ ১৮/৪৪)।

হিংসার জ্বলন সম্পর্কে চিন্তা করা : হিংসুক ব্যক্তি হিংসার আগুনে নিজেই জ্বলে মরে এবং সে কেবল নিজেকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তার অন্তরে সুখ বলে কিছু থাকে না। সর্বদা অন্যের ধ্বংস চিন্তায় বিভোর থাকায় নিজেকেই সে ধ্বংস করে ফেলে। সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তা তাকে দৈহিক ও মানসিক রোগীতে পরিণত করে। কোন ব্যাপারেই সে স্বাভাবিক ও সুন্দর সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আশপাশের সবাইকে সে তার শত্রু ভাবতে থাকে। হিংসায় বুঁদ হওয়ার ফলে সে সর্বদা অস্বাভাবিক আচরণ করে। আল্লাহ বলেন,
وَلاَ يَحِيقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ إِلاَّ بِأَهْلِهِ
‘কুট চক্রান্ত কেবল তার মালিককেই পরিবেষ্টন করে থাকে’ (ফাত্বির ৩৫/৪৩)। তিনি বলেন,
قُلْ مُوْتُوْا بِغَيْظِكُمْ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ
‘(হে নবী) তুমি বল, তোমরা নিজেদের আক্রোশে জ্বলে-পুড়ে মরো। আল্লাহ অন্তরের বিষয়ে সম্যক অবগত’ (আলে ইমরান ৩/১১৯)। এভাবে হিংসায় যে কোন ফায়েদা নেই সেটা চিন্তা করলে মানুষ এই নোংরা স্বভাব থেকে ফিরে আসবে।

লোকে তাকে ঘৃণা করে, এটা উপলব্ধি করা : হিংসা ভিতরের বস্ত্ত। যা দেখা যায় না। কিন্তু সেটি প্রকাশ পায় মানুষের কর্মে ও আচরণে। যেমন আল্লাহ বলেন,
قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ
‘তাদের মুখ দিয়ে বিদ্বেষ প্রকাশ পায়। আর যা তাদের বুকের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, তা আরও অনেক বেশী’ (আলে ইমরান ৩/১১৮)। অতএব হিংসুক ব্যক্তি যত দ্রুত তার প্রতি মানুষের ঘৃণা বুঝতে পারবে, সে তত দ্রুত ফিরে আসবে।

আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হিংসা বর্জন করা : যখন মানুষ জানবে যে, হিংসায় জাহান্নাম ও তা পরিত্যাগে জান্নাত, তখন সে চিরস্থায়ী জান্নাত পাওয়ার আশায় ক্ষণস্থায়ী তুচ্ছ বস্ত্ত পরিত্যাগ করবে। আল্লাহ বলেন,
وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى- فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى
‘আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি হ’তে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাত তার ঠিকানা হবে’ (নাযে‘আত ৭৯/৪০-৪১)। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ
‘যা তোমার উপকারে আসবে, সেদিকে তুমি প্রলুব্ধ হও’।[4]

সকল কাজের বিনিময় আল্লাহর নিকটে কামনা করা : মুসলমানকে আল্লাহর পথে সংগ্রামে পরস্পরকে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় থাকতে বলা হয়েছে (ছফ ৬১/৪)। এটা কেবল তখনই সম্ভব, যখন হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত মনে আমরা পরস্পরকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারব এবং এর বিনিময় স্রেফ আল্লাহর নিকটে কামনা করব। যেমন প্রত্যেক নবী বলেছেন,
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ
‘আমি তোমাদের কাছে কোনরূপ বিনিময় চাই না। আমার বিনিময় তো কেবল বিশ্বপালক আল্লাহর নিকটেই রয়েছে’ (শো‘আরা ২৬/১০৯, ১২৭. ১৪৫, ১৬৪, ১৮০)।

এছাড়া নিম্নোক্ত দো‘আটি পড়া আবশ্যক। যা আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদীকে শিখিয়ে দিয়েছেন,
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيْمَانِ وَلاَ تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلاَّ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوْفٌ رَحِيْمٌ
‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ও আমাদের সেইসব ভাইকে তুমি ক্ষমা কর, যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর তুমি আমাদের অন্তরে মুমিনদের বিরুদ্ধে কোনরূপ বিদ্বেষ সঞ্চার করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয়ই তুমি স্নেহশীল ও দয়াবান’ (হাশর ৫৯/১০)।

- প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব​



[1]. মুসলিম হা/২২০৩; মিশকাত হা/৭৭, ঈমান অধ্যায় ‘মনের খটকা’ অনুচ্ছেদ।
[2]. তিরমিযী হা/২৫১০, মিশকাত হা/৫০৩৯, হাদীস হাসান।
[3]. তিরমিযী হা/২৫০৮; মিশকাত হা/৫০৪১।
[4]. মুসলিম হা/২৬৬৪, মিশকাত হা/৫২৯৮।
 
Top