- Joined
- Apr 20, 2023
- Threads
- 6
- Comments
- 10
- Reactions
- 86
- Thread Author
- #1
সুখ কী?
সুখ একটি মানবিক অনুভূতি। সুখ মনের একটি অবস্থা বা অনুভূতি যা ভালোবাসা, তৃপ্তি, আনন্দ বা উচ্ছ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। (উইকিপিডিয়া)আমরা সাধারণত মনে করি যে, যদি কারও কাছে জীবন যাপনের জন্য ভালো বাসস্থান,ভালো গাড়ি, বেশি ধন সম্পদ বা ব্যাংক ব্যালেন্স ইত্যাদি থাকে তাহলেই সে সুখী।
আবার কেউ কেউ মনে করে প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজ ইচ্ছা মতো জীবন যাপন করতে পারলেই সে সুখী, যদিও এ ধারণা ঠিক নয় কারণ চোর যদি সবসময় চুরি করে নিজকে সুখী মনে করে,ঘুষখোর যদি ঘুষ খেয়ে নিজেকে সুখী মনে করে অনুরূপভাবে যদি হত্যাকারী যদি হত্যা করে নিজেকে সুখী মনে করে তাহলে কি এ ধরায় সুখ বলে কোনো জিনিস থাকবে বা আসবে?
তাছাড়া কেউ কেউ মনে করে যে, মানুষের কাছে টাকা থাকলেই সুখী কিন্তু এই ধারণাটাও ঠিক নয় কারণ এরকম শত শত উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে যে, অঢেল টাকা থাকা সত্বেও নিজের জীবনকে সুখময় বানাতে পারেনি।তবে এটাকে একটা সহায়ক ও মাধ্যম মানা যেতে পারে।
তবে প্রকৃত সুখ-শান্তি রয়েছে আল্লাহ্র স্বরণে ও তার আদেশ-নিষেধ পালনে ও নবীﷺএর অনুসরণে।
আসুন এবার আমরা সুখী হওয়ার কিছু ইসলামী দেখি!
১.আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাসের পর সারাজীবন নেক আমল করে যেতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ.
মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, অবশ্যই আমরা তাকে পবিত্র জীবন।(সুরা নাহল 97)
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুফাসসিরের মতে এখানে ‘হায়াতে তাইয়্যেবা’ বলতে দুনিয়ার পবিত্র ও আনন্দময় জীবন বোঝানো হয়েছে।
সুখময় জীবনের অর্থ এটাও নয় যে, একজন মুমিনের জীবনে কোনোরকমের দুঃখ-কষ্ট, অসুখ-বিসুখ আসবে না বরং এগুলো আসলেও একজন মুমিন ইমান-ইসলামের উপর টিকে থাকবে, অল্পেতুষ্টি জীবন যাপনে অভ্যস্ত হবে আর এসবের বিনিময়ে আখেরাতের সুমহান, চিরস্থায়ী নিয়ামতের আশাবাদী হবে।তখন তার জীবন সুখময় হয়ে যায়।(তাফসীরে যাকারিয়া)
অপর দিকে যদি কেউ আল্লাহ্র স্বরণ থেকে দূরে থাকে তার জীবন সুখময় হতে পারে না।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِى فَإِنَّ لَهُۥ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُۥ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ أَعْمَىٰ.
‘আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত। (সুরা ত্বহা ১২৪)
তাদের দুনিয়ার জীবন সংকীর্ণ হবে। তাদের কাছ থেকে অল্পে তুষ্টির গুণ ছিনিয়ে নেয়া হবে এবং সাংসারিক লোভ-লালসা বাড়িয়ে দেয়া হবে যা তাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলবে। ফলে তাদের কাছে যত অর্থ-সম্পাদই সঞ্চিত হোক না কেন, আন্তরিক শান্তি তাদের ভাগ্যে জুটবে না। সদা-সর্বদা সম্পদ বৃদ্ধি করার চিন্তা এবং ক্ষতির আশঙ্কা তাদেরকে অস্থির করে তুলবে। কেননা সুখ-শান্তি অন্তরের স্থিরতা ও নিশ্চিন্ততার মাধ্যমেই অর্জিত হয়; শুধু প্রাচুর্য্যে নয়।(তাফসীরে যাকারিয়া)
২.আখেরাত কে মূল উদ্দেশ্য বানাতে হবে।
আমরা এই দুনিয়াতে হালাল ভাবে যাই করি না কেন এর মাধ্যমে সর্বদা পরকালের জীবনকে সুখময় করার ভাবনা রাখতে হবে তাহলে এই জীবনটাও সুখময় হবে ইন শা আল্লাহ্।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ.
যে কেউ আখিরাতের ফসল কামনা করে তার জন্য আমরা তার ফসল বাড়িয়ে দেই এবং যে কেউ দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমরা তাকে তা থেকে কিছু দেই। আর আখেরাতে তার জন্য কিছুই থাকবে না। (সুরা শুরা ২০)
অতএব একজন মুমিনের উচিত আখেরাতমুখী হওয়া।যে আখেরাতমুখী হবে সে দুনিয়া ও আখিরাত সব জায়গায় আনন্দে থাকবে।
৩.তাক্বওয়া বা আল্লাহ্ভীতি।
আমরা যদি আল্লাহ্ কে ভয় করে এবং তার আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালনা করি তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের উত্তরণের পথ বের করে দিবে আমাদের কাজ-কর্ম কে সহজ করে দিবে আর
মহান আল্লাহ বলেন
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا
আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন। (সূরা আত-ত্বলাক্ব ০২)
وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مِنۡ أَمۡرِهِۦ يُسۡرٗا
আর যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ্ তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন। (সূরা আত-ত্বলাক্ব ০৪)
৪.আল্লাহ্র উপর ভরসা করা।
আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখতে হবে। যখনই কোনো কাজের জন্য দৃঢ় সংকল্প করবো তখনই আল্লাহ্র উপর ভরসা করবো যখন আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে তখন ইন শা আল্লাহ্ জীবন সুখময় হয়ে যাবে।
ভরসার এর অর্থ এই নয় যে, আমরা হাত-পা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকবো বরং প্রথমে মাধ্যম গ্রহণ করতে হবে দিয়ে ভরসা করবে হবে।যেমনটা নবীﷺ সাহাবীদের ভরসা করতে শিখিয়েছেন।
এক সাহাবী করেন হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার উঁটকে ছেড়ে দিয়ে ভরসা করবো না বেঁধে রেখে? তার জিজ্ঞাসার উত্তরে নবীﷺ বলেছিলেনঃ
اعقِلها وتوكَّلْ.
সেটাকে বাঁধো এবং ভরসা করো।(তিরমিযী ২৫১৭ সূত্র হাসান)
অতএব আমাদেরকে নবীﷺএর মতো ভরসা করতে হবে, সাহাবীদের মতো ভরসা করতে হবে এবং ভরসা করার মতো ভরসা করতে হবে সফলকাম হতে পারা যাবে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ.
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট।(তা-ত্বলাক্ব ০৩)
নবীﷺ যথার্থ রূপে আল্লাহ্র উপর ভরসা করার উপমা দিয়ে বলেনঃ
لو أنَّكُمْ تَتَوكَّلُونَ علَى اللهِ حقَّ توكُّله لرزقَكم كما يرْزقُ الطَّيرَ، تغدوا خِماصًا وتَرُوحُ بِطانًا.
যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহর উপর ভরসা করতে, তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে পাখির মত রিযিক দান করতেন। ভোরবেলা পাখিরা খালিপেটে (বাসা থেকে) বের হয়ে যায় এবং সন্ধ্যাবেলা উদর পূর্তি করে (বাসায়) ফিরে আসে।(ইবনে মাজাহ্ ৪১৬৪ সূত্র স্বহীহ, বাংলা হাদীস অ্যাপ)
৫.সন্তুষ্ট থাকা।
আমরা সাধারণত নিজের উপর আল্লাহ্র প্রদত্ত অনুগ্রহ লক্ষ্য করি না।অন্যের উপর বেশি লক্ষ্য করে থাকি বলেই আমরা খুব বেশি অসন্তুষ্ট থাকি।
অথচ উচিত ছিল যে আমরা সদা সর্বদা পার্থিব বিষয়ে আমাদের থেকে নিচে যারা আছে তাদের লক্ষ্য করি।যাতে করে বুঝতে পারি যে আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছে এবং নিজে সন্তুষ্ট থাকতে পারি।
যেমনটা নবীﷺ বলেছেনঃ
انْظُرُوا إِلَى مَنْ هو أَسفَل مِنْكُمْ وَلا تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوقَكُم؛ فهُوَ أَجْدَرُ أَن لا تَزْدَرُوا نعمةَ اللَّه عَلَيْكُمْ.
তোমরা তোমাদের চেয়ে কম সম্পদশালী মানুষদের প্রতি (পার্থিব ব্যাপারে) দৃষ্টি দিও, তোমাদের চেয়ে ধনশালী মানুষদের দিকে নয়। এতে করে তোমাদেরকে আল্লাহ তা'আলার দেয়া নি’আমাতসমূহ নগণ্য মনে হবে না।(তিরমিযী ২৫১৩ সূত্র স্বহীহ, বাংলা হাদীস অ্যাপ)
অনুরূপভাবে আমরা যদি এই হাদীসের উপর গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করি তাহলে বুঝতে পারবো যে আমরা কতো সুখে আছি।
নবীﷺ বলেনঃ
مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ آمِنًا فِي سِرْبِهِ ، مُعَافًى فِي جَسَدِهِ ، عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ ، فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا.
তোমাদের মধ্যে যে লোক পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয়, সুস্থ শরীরে দিনাতিপাত করে এবং তার নিকট সারা দিনের খোরাকী থাকে তবে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াটাই একত্র করা হলো।(তিরমিযী ২৩৪৬ সূত্র হাসান)
তাছাড়া একজন মু'মিনের জন্য উচিত নয় যে, সে ভবিষ্যত নিয়ে খুব বেশি বিস্তারিত ভাবে চিন্তা ভাবনা করবে আর হতাশে ভুগতে থাকবে বরং ভবিষ্যতের জন্য চেষ্টা করতে হবে আর বর্তমানে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এটা না হলে সুখী হওয়া সম্ভব নয়।
এর একটা উদাহরণ দিলে জিনিসটা বেশি স্পষ্ট হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ্।
এক ছেলে মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসে তাই সে তার পিতার কাছে আবেদন করে মিষ্টি খেতে চায় তখন তার পিতা তাকে কিছু মিষ্টি এনে দিয়েছে। যখন সে মিষ্টিগুলো খেতে বসে তখন সে খুব কাঁদতে শুরু করেছে আর খাচ্ছে ইতিমধ্যে তার পিতা জিজ্ঞেস করে তুমি তো মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসো তাহলে কাঁদছো কেন? উত্তরে বললো যে, আমি মিষ্টি খেতে ভালবাসি আর আপনার কাছে এগুলো আবেদন করে পেলাম কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে যে, এগুলো খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে আর মিষ্টি আমার কাছে থাকবে না বলেই আমি কাঁদছি। তখন তার পিতা বললো ধুর! এরকম বোকামি করলে হয়? তোমার কাছে এখন যা আছে তা তো আনন্দ সহকারে খাও তারপর না হয় আবার চাইবে তখন আমি আবার দিবো! কিন্তু তুমি এরকম ভাবে ভবিষ্যত নিয়ে কাঁদলে হবে??
এই উদাহরণ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
৬.ভাগ্যের প্রতি রাযি থাকা।
একজন প্রকৃত মু'মিনের উপর এটা অপরিহার্য বিষয় যে, সে তাক্বদীর তথা ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাস করে জীবন যাপন করবে।যেহেতু মুমিনদের জীবনের প্রতিটি সংঘটিত বিষয় আগে থেকেই লিখা থাকে। যখন সে এটা বিশ্বাস করে চলবে তখন তার দুঃখ কষ্ট বেশি হবে না এবং ধৈর্য্য ধারণ করার ক্ষমতা পেয়ে যাবে আর তখনই জীবন সুখময় হয়ে যাবে।
*مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍۢ فِى ٱلْأَرْضِ وَلَا فِىٓ أَنفُسِكُمْ إِلَّا فِى كِتَٰبٍۢ مِّن قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَآ ۚ
لِّكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ.*
لِّكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ.*
যমীনে বা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয়ই আসে তা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই আমরা তা কিতাবে লিপিবদ্ধ রেখেছি...
এটা এ জন্যে যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তার জন্য আনন্দিত না হও। (সূরা হাদীদ ২২-২৩)
নবীﷺ বলেছেন।
إن أصابَك شيءٌ فلا تقلْ : لو أني فعلتُ لكانَ كذا وكذا ، ولكن قلْ قدَّرَ اللهُ وما شاءَ فعلَ فإن لو تفتحُ عملَ الشيطان.
যদি তোমার কোন কাজে (চাই তা দীন সম্পর্কীয় হোক বা দুনিয়াবি ব্যাপারে হোক) কিছু ক্ষতি সাধিত হয় তখন তুমি এভাবে বলো না- “যদি আমি কাজটি এভাবে এভাবে করতাম তাহলে আমার এই এই ভালো হত।” বরং বলল, আল্লাহ এটাই ভাগ্যে রেখেছিলেন, আর তিনি যা চান তাই করেন।কেননা (لَوْ) তথা “যদি” শব্দটি শয়তানের কাজের পথকে খুলে দেয়। (মিশকাত ৫২৯৮ সূত্র স্বহীহ)
৭.ধৈর্য্য ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
একজন প্রকৃত মু'মিনের বিপদের সময় ধৈর্য্য ধারণ করা এবং খুশির সময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য যা একজন মু'মিনের জীবনকে সুখময় করার বড় মাধ্যম।
এ প্রসঙ্গে নবীﷺ বলেছেনঃ
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ.
মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সকল কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মু’মিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর-গুজার করে আর অস্বচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসীবাতে আক্রান্ত হলে সবর করে, প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর।(স্বহীহ মুসলিম ৭৩৯০)
৮.মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর করা।
আমরা যদি আমাদের জীবনকে সুখময় করতে চাই তাহলে একা একা সুখী থাকার চেষ্টা করলে হবে না বরং নিজের পাশাপাশি নিজের আত্মীয় স্বজন, অন্য মুসলিম ভাইয়ের আপদ বিপদেও বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতে হবে তাহলেই আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের সাহায্য করবে তখন সুখময় জীবন পাওয়া যাবে।
নবীﷺ বলেছেনঃ
ومن يسَّرَ على مُعسرٍ في الدُّنيا يسَّرَ اللَّهُ عليهِ في الدُّنيا والآخرةِ ، واللَّهُ في عونِ العَبدِ ، ما كانَ العَبدُ في عونِ أخيهِ.
যে লোক কোন দুঃস্থ লোকের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুরবস্থা দূর করবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাই এর সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন।(মুসলিম ৬৭৪৬)
৯.স্বলাত আদায় করা।
সফলকাম ও সুখময় জীবনের একটা বড় মাধ্যম হচ্ছে স্বলাত যার মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করা যায়।
যখন বান্দা আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করে তখন আল্লাহ্ তা'আলা তাকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে।
আল্লাহ্ তা'আলা স্বলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করে বলেছে।
وَٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ...
আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। (সূরা বাকারাহ্ ৪৫)
অনুরূপভাবে নবীﷺএর উপর কোনো দুঃখ-কষ্ট আসলে তিনি স্বলাতে দাড়িয়ে যেতেন।
كان النبي ﷺ إذا حزَبه أمرٌ صلَّى.
যখন নবীﷺএর উপর কোনো সমস্যা বা বিপদ আপতিত হতো তখন স্বলাতে দাড়িয়ে যেতেন।(মিশকাত ১২৭৬ সূত্র হাসান)
১০.তওবা ও ইস্তেগফার।
জীবনেকে সুখময় করতে হলে গুনাহ্ থেকে ফিরে এসে বেশি বেশি ইস্তেগফার তথা ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। ইস্তেগফার করলে যেমন পরকালে বদলা পাওয়া যাবে ঠিক তেমনি ইহকালেও এর অসীম বদলা পাওয়া যাবে।
একবার এক ব্যক্তি হাসান বাসরীর মজলিসে অনাবৃষ্টির অভিযোগ করলে তিনি বললেন, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। অপর এক ব্যক্তি দারিদ্রের অভিযোগ করলো। তৃতীয় এক ব্যক্তি বললো, আমার কোন ছেলেমেয়ে নেই। চতুর্থ এক ব্যক্তি বললো, আমার ফসলের মাঠে ফলন খুব কম হচ্ছে। তিনি সবাইকে একই জবাব দিলেন। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। লোকেরা বললো, কি ব্যাপার যে, আপনি প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগের একই প্রতিকার বলে দিচ্ছেন? তখন তিনি সূরা নূহের ১০-১২ নং আয়াতগুলো পাঠ করে শুনালেন। [দেখুন: ইবন কাসীর; কুরতুবী। সূত্র তাফসীরে যাকারিয়া]
অতএব জীবনের বদ্ধ দুয়ারগুলো খোলার জন্য আপনার হাতে একটা চাবি আছে। সেই চাবির নামই হলো "ইস্তেগফার" চাবিটা ব্যবহার করে নিজের শেষ সম্বল গুছিয়ে নেওয়ার জন্য আজ থেকেই তৎপর হয়ে পড়তে হবে। "আসতাগফিরুল্লাহ্" শব্দটাকে বানিয়ে নিতে হবে জীবনের নিত্যসঙ্গী।(লেখক আরিফ আযাদ)
শেষ কথা হলো এই যে, জীবনে সুখী থাকা সমুদ্রের সাঁতার শিখার মতো যেটা খুব সহজে সম্ভব নয় এর জন্য চেষ্টা করতে হবে। ঠিক তেমনি সুখী হতে হলে বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকেও চেষ্টা করতে হবে। আর এটা বিশ্বাস রাখতে হবে যে, জীবনে দুঃখ-কষ্ট আসবে এটাই বাস্তব এই পৃথিবীতে কেউ শতভাগ সুখী হতে পারে না তবে তুলনামূলক বেশি হতে পারে। যেমনটা শাঈখ ইবন উসাইমীন রহঃ বলেছেন রিয়াযুস স্বলেহীন এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে,
والإنسان في هذه الدنيا لا يمكن أن يبقى مسرورًا دائما ،بل هو يومًا يُسَرُّ ويومًا يُحزَن ،ويوما يأتيه شيء ويوماً لا يأتيه.
এ ধরায় একজন মানুষ সর্বদা খুশি থাকবে এটা অসম্ভব, বরং এক দিন খুশি থাকলে অপর দিন দুঃখিত থাকতে পারে এটাই স্বাভাবিক, একদিন তার কাছে কিছু আসলে অপর দিন নাও আসতে পারে। (রিয়াযুস স্বলেহীন ইবনে উসাইমীন রহঃ ১/২৪৩)
তবে এর জন্য মুমিনরা বেশি চিন্তিত হবে না বিচলিত হবে না কারন তাদের ব্যাপারটা খুবই আশ্চর্য এবং তাদের প্রত্যেকটা ব্যপারই কল্যাণকর। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকর-গুজার করে আর দুঃখ-কষ্টে আক্রান্ত হলে সবর করে,আর প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর।
আল্লাহ্ তা'আলা যেন আমাদের সবাইকে তার দেওয়া বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করার তাওফীক দান করেন আর আমাদের জীবনকে সুখময় করেন। আমীন।
- তাওহীদুর রহমান সালাফী।
ফারেগ জামিয়া সালাফিয়া বেনারস, ভারত।
Last edited by a moderator: