- Joined
- Jan 3, 2023
- Threads
- 647
- Comments
- 790
- Reactions
- 6,877
- Thread Author
- #1
সাধারণ মানুষ আলেমদের মতানৈক্যে কী করবে এব্যাপারে উলামাদের মাঝে বেশ ইখতিলাফ দেখা যায়। শায়েখ সাদ আশ শাছরী হাফিজাহুল্লাহ বিভিন্ন মাজহাবের বিশ্বস্ত কিতাব থেকে এব্যাপারে মোট নয়টা মতামত উল্লেখ করেছেন। [শাছরী; আত তাকলীদ ওয়া আহকামুহু, দ্র: ১৬২থেকে ১৭১ পৃ:] সাধারণ পাঠক একটু চিন্তার খোরাক পাবে এই আশায় আমি নয়টা কওলই উল্লেখ করছি। হ্যাঁ, মনে রাখবেন, প্রত্যেকটা কওলের পেছনে দলিল আছে। শায়েখ প্রত্যেকটি কওলের দলিলগুলো নিয়ে মুনাকাশা করেছেন। মতগুলো—
১. ইখতিলাফ দেখা দিলে সাধারণ মানুষ ইজতিহাদ করবে, এটা ইমাম আহমাদ এবং তাঁর আসহাবদের মত।
২. সে স্বাধীন, যেটা ইচ্ছা আমল করতে পারে, এটা আহমাদের আরেক রেওয়াত। শায়েখ শাছরী এটাকে জুমহুর উলামার মত বলেছেন। [খেয়াল রাখতে হবে, জুমহুর উমালার মত হলেই সেটা বেশি অগ্রাধিকারযোগ্য মত ব্যাপারটি এমন নয়, তবে বেশিরভাগ সময় জুমহুর হকের নিকটবর্তী হয়ে থাকে। শারহু উসুল মিন ইলমিল উসুল; উছায়মীন, পৃ. ৬২৪-৬২৫]
৩. সে প্রত্যেককে তার দলিল জিজ্ঞাসা করবে, এরপর মাসলাটিতে ইজতিহাদ করে, রাজেহ মতটি আমল করবে। এটা ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহর মত।
৪. কঠিন মতটাকে গ্রহণ করবে, এটা শাফেয়ী উলামাদের মত।
৫. সবচেয়ে সহজ মতটাকে গ্রহণ করবে। ইমাম ইবনে উছায়মীন রহিমাহুল্লাহ উল্লেখিত মতগুলোর এই মতটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, তাঁর দলিল হলো—الأصل براءة الذمة অর্থাৎ, আসল হলো মানুষ জিম্মা মুক্ত। এটা কাওয়াদে ফিকহের প্রসিদ্ধ একটি কায়াদা। **
৬. দুইজন মতানৈক্য করলে তৃতীয়জনকে জিজ্ঞাসা করবে, এক্ষেত্রে তৃতীয়জনের ফতোয়া আগের দুইজনের যার সাথে মিলবে তার মত ফলো করবে।
৭. সে দুইজনের কাছে আবার যেয়ে মতানৈক্যের ব্যাপারটা জানাবে, তারা যেটা ইখতিয়ার দিবে সেটা মানবে, যদি তারা তাদের দুইজনের একজনের মতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয় তাহলে সেটা মানবে, নচেৎ সে নির্বাচন করবে যেকোনো একটি মত।
৮. সর্বপ্রথম যে ফতোয়া দিয়েছে তার মতটাই মানবে।
৯. মাসলা যদি আল্লাহর হকের ব্যাপারে হয় তাহলে সহজটা গ্রহণ করবে, বান্দার হকের ব্যাপারে হলে, কঠিনটা মানবে।
শায়েখ অগ্রাধিকার দিয়েছেন—
এখানে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ বা ইস্তিহসান করা চলবে না; যেহেতু তার নিকট হুকুম জানার মাধ্যমগুলো নেই (অর্থাৎ, কুরআন-হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা, নাসেখ মানসুখ, উসুল ফিকহসহ আরো জ্ঞান হলো হুকুম জানার মাধ্যম)। [ইস্তিহসানের ব্যাখ্যা বাংলায় দেখুন: ড. আবূ বকর মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভিন্ন ফিকহের তুলনামূলক পর্যালোচনা; পৃ. ১৭২]
সাধারণ মানুষ উলামাদের মতানৈক্য দেখলে কী করবে সেটা উল্লেখ করতে গিয়ে শায়েখ শাছরী আরেক জায়গায় বলেছেন,
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
অনেকে মতানৈক্যের ব্যাপারে অন্তর সংকীর্ণ করে রাখেন, আসলে মতানৈক্য হওয়াটা খুবই উপযুক্ত। দেখুন শায়েখ যাকারিয়া লিখেছেন, “মোদ্দাকথা, ফুকাহায়ে কিরামের মতভেদ অহেতুক নয়; মজবুত বুনিয়াদের উপর তা প্রতিষ্ঠিত । একই বিষয়ে বিভিন্ন ফকীহ্ যে বিভিন্ন রায় দিয়েছেন, সেটাতে প্রত্যেকে আপন-আপন দলীল-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে পূর্ণ ব্যুৎপত্তির সঙ্গে যখন ফয়সালা দিয়েছেন, তখন তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ একটি অনিবার্য প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরের আলোচনা দ্বারাই বোঝা যায় যে, এ দাবি কতটা বাস্তব। কাজেই ফিকহী ইখতিলাফকে অবাঞ্ছিত বোঝা মনে না করে এর যথার্থ মূল্যায়ন করা উচিত। বস্তুত আমাদের ফুকাহায়ে কিরামের মতবিরোধ ইসলামী ফিকহের একক বৈশিষ্ট্য এবং এটা জ্ঞান জগতের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।” [বিভিন্ন ফিকহের তুলনামূলক পর্যালোচনা, পৃ. ১৭৬]
সোর্স: Abdur Rahman Mridha
১. ইখতিলাফ দেখা দিলে সাধারণ মানুষ ইজতিহাদ করবে, এটা ইমাম আহমাদ এবং তাঁর আসহাবদের মত।
২. সে স্বাধীন, যেটা ইচ্ছা আমল করতে পারে, এটা আহমাদের আরেক রেওয়াত। শায়েখ শাছরী এটাকে জুমহুর উলামার মত বলেছেন। [খেয়াল রাখতে হবে, জুমহুর উমালার মত হলেই সেটা বেশি অগ্রাধিকারযোগ্য মত ব্যাপারটি এমন নয়, তবে বেশিরভাগ সময় জুমহুর হকের নিকটবর্তী হয়ে থাকে। শারহু উসুল মিন ইলমিল উসুল; উছায়মীন, পৃ. ৬২৪-৬২৫]
৩. সে প্রত্যেককে তার দলিল জিজ্ঞাসা করবে, এরপর মাসলাটিতে ইজতিহাদ করে, রাজেহ মতটি আমল করবে। এটা ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহর মত।
৪. কঠিন মতটাকে গ্রহণ করবে, এটা শাফেয়ী উলামাদের মত।
৫. সবচেয়ে সহজ মতটাকে গ্রহণ করবে। ইমাম ইবনে উছায়মীন রহিমাহুল্লাহ উল্লেখিত মতগুলোর এই মতটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, তাঁর দলিল হলো—الأصل براءة الذمة অর্থাৎ, আসল হলো মানুষ জিম্মা মুক্ত। এটা কাওয়াদে ফিকহের প্রসিদ্ধ একটি কায়াদা। **
৬. দুইজন মতানৈক্য করলে তৃতীয়জনকে জিজ্ঞাসা করবে, এক্ষেত্রে তৃতীয়জনের ফতোয়া আগের দুইজনের যার সাথে মিলবে তার মত ফলো করবে।
৭. সে দুইজনের কাছে আবার যেয়ে মতানৈক্যের ব্যাপারটা জানাবে, তারা যেটা ইখতিয়ার দিবে সেটা মানবে, যদি তারা তাদের দুইজনের একজনের মতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয় তাহলে সেটা মানবে, নচেৎ সে নির্বাচন করবে যেকোনো একটি মত।
৮. সর্বপ্রথম যে ফতোয়া দিয়েছে তার মতটাই মানবে।
৯. মাসলা যদি আল্লাহর হকের ব্যাপারে হয় তাহলে সহজটা গ্রহণ করবে, বান্দার হকের ব্যাপারে হলে, কঠিনটা মানবে।
শায়েখ অগ্রাধিকার দিয়েছেন—
العامي مطالب باتباع شرع الله، فمتى غلب على ظنه أن قول مفت هو حكم الله وجب عليه العمل به . وسواء غلب على الظن بالكثرة أو بالأفضلية أو بالأدلة الشرعية فيتحتم عليه اتباعه . وليس له اتباع هواه، ولا الاستحسان إذ ليس لديه آلة لمعـرفـة الحكم.
সাধারণ মানুষ আল্লাহর শরিয়ত অনুসরণের ব্যাপারে আদিষ্ট। তাই কোন মুফতির ফতোয়ার ব্যাপারে যদি তার প্রবল ধারণা হয় যে, সেটা আল্লাহরই হুকুম, তাহলে তার জন্য সেটা অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক। প্রবল ধারণা হবে, মুফতির সংখ্যা অনুযায়ী অথবা তাদের মধ্যে প্রাধান্যতার ভিত্তিতে (অর্থাৎ, সে দেখবে তাদের কে ইলম এবং তাকওয়াই বেশি প্রাধান্যযোগ্য।) অথবা শরিয়তের দলিলের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে তার সেটাই (অর্থাৎ, প্রবল ধারণায় প্রাপ্ত মতকে) অনুসরণ করা আবশ্যক।এখানে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ বা ইস্তিহসান করা চলবে না; যেহেতু তার নিকট হুকুম জানার মাধ্যমগুলো নেই (অর্থাৎ, কুরআন-হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা, নাসেখ মানসুখ, উসুল ফিকহসহ আরো জ্ঞান হলো হুকুম জানার মাধ্যম)। [ইস্তিহসানের ব্যাখ্যা বাংলায় দেখুন: ড. আবূ বকর মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভিন্ন ফিকহের তুলনামূলক পর্যালোচনা; পৃ. ১৭২]
সাধারণ মানুষ উলামাদের মতানৈক্য দেখলে কী করবে সেটা উল্লেখ করতে গিয়ে শায়েখ শাছরী আরেক জায়গায় বলেছেন,
الواجب حينئذ أن يرجح بينهما، إما بأن يسأل عالماً ثالثاً فيعمل بقـول الأكثر وإما أن ينظر أيهما أعلم وأورع فيعمل بقـول الأعلم الورع.
তখন তার উপর আবশ্যক হলো, সে দুইটির একটিকে প্রাধান্য দিবে, সেটা তৃতীয় কোন আলেমকে জিজ্ঞাসা করে হতে পারে, সেক্ষত্রে অধিকাংশের মত অনুযায়ী আমল করবে। কিংবা সে দেখবে কে বেশি জ্ঞানী এবং তাকওয়াবান, সেক্ষেত্রে বেশি জ্ঞানী এবং তাকওয়াবানের কথা অনুযায়ী আমল করবে। [শারহু কাওয়াইদুল উসুল, পৃ. ৪৬৩-৬৪]ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
فَإذا تَرَجَّحَ عِنْدَ المُسْتَفْتِي أحَدُ القَوْلَيْنِ: إمّا لِرُجْحانِ دَلِيلِهِ بِحَسَبِ تَمْيِيزِهِ وإمّا لِكَوْنِ قائِلِهِ أعْلَمَ وأرْوَعَ: فَلَهُ ذَلِكَ وإنْ خالَفَ قَوْلُهُ المَذْهَبَ.
ফতোয়া জিজ্ঞাসাকারীর কাছে যদি দুইটি মতের একটি প্রাধান্য পায়—সেটা দলিলকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে হতে পারে অথবা মুফতির বেশি জ্ঞানবান ও বেশি তাকওয়াওয়ালা হওয়ার কারণে হতে পারে,—তাহলে সে ঐ প্রাধান্যযুক্ত মতটাই ফলো করবে, যদিও তার কথা মাজহাবের বিপরীত হয়। [মাজমু; পৃ:৩৩/১৬৮]অনেকে মতানৈক্যের ব্যাপারে অন্তর সংকীর্ণ করে রাখেন, আসলে মতানৈক্য হওয়াটা খুবই উপযুক্ত। দেখুন শায়েখ যাকারিয়া লিখেছেন, “মোদ্দাকথা, ফুকাহায়ে কিরামের মতভেদ অহেতুক নয়; মজবুত বুনিয়াদের উপর তা প্রতিষ্ঠিত । একই বিষয়ে বিভিন্ন ফকীহ্ যে বিভিন্ন রায় দিয়েছেন, সেটাতে প্রত্যেকে আপন-আপন দলীল-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে পূর্ণ ব্যুৎপত্তির সঙ্গে যখন ফয়সালা দিয়েছেন, তখন তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ একটি অনিবার্য প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরের আলোচনা দ্বারাই বোঝা যায় যে, এ দাবি কতটা বাস্তব। কাজেই ফিকহী ইখতিলাফকে অবাঞ্ছিত বোঝা মনে না করে এর যথার্থ মূল্যায়ন করা উচিত। বস্তুত আমাদের ফুকাহায়ে কিরামের মতবিরোধ ইসলামী ফিকহের একক বৈশিষ্ট্য এবং এটা জ্ঞান জগতের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।” [বিভিন্ন ফিকহের তুলনামূলক পর্যালোচনা, পৃ. ১৭৬]
সোর্স: Abdur Rahman Mridha